দেবরাজ ইন্দ্রের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ইন্দ্র আরও গভীরতর বনের পথে চললেন। ভয়ঙ্কর সে বন সাধারণ মানুষের অগম্য ছিল। নানারঙের ফুলে ফলে ছেয়ে ছিল গাছগুলো। বড় বড় গাছের নানা রঙের ফুলফলের ভারে নুয়ে আসা ডালগুলি পাখিদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছিল। হিংস্র পশুরা নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল সে বনে। অর্জুন সেই বনে প্রবেশ করামাত্র আকাশে গম্ভীর শঙ্খের শব্দ শোনা গেল আর পটহধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠল চারিপাশ। হঠাৎ মেঘের রাশি এসে ঘিরে ধরল যেন চারিদিক। অর্জুন মুগ্ধচোখে চেয়ে দেখলেন পর্বতের ঢাল বেয়ে তীব্র বেগে বয়ে চলেছে খরস্রোতা নদী। সে নদীর জল বৈদুর্যমণির মত নিটোল, স্বচ্ছ। তপস্যার জন্য এই জায়গাটিই সবচেয়ে পছন্দ হল তাঁর। তীব্র তপস্যায় ডুবে গেলেন তিনি। শুকনো পাতা, ফল আর শেষে শুধুমাত্র বাতাস হল তাঁর খাদ্য।
এ ভাবে তিনি ভয়ঙ্কর তপস্যা করতে লাগলেন। তাঁর তপস্যার তেজে সমস্ত দিক যেন ধোঁয়াটে হয়ে উঠলো। ঋষিরা অর্জুনের এই ভয়ঙ্কর তপস্যা দেখে ভীত হলেন। তাঁরা মহাদেবকে গিয়ে জানালেন। মহাদেব তাঁদের আশ্বস্ত করে ব্যাধের বেশ ধারণ করলেন। একহাতে পিনাকনামের ধনু আর অন্যহাতে বাণ নিয়ে আগুনবরণ কিরাত চললেন অর্জুনের খোঁজে। স্বয়ং উমাদেবী আর অন্যান্য স্ত্রীলোকেরা আর সাথে মহাদেবের ভূতেরাও সেই মতো বেশভূষা করে তাঁর সাথে চলল। অর্জুনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হল এক অদ্ভুত মুহূর্তে। তপস্যারত অর্জুন খেয়াল করলেন, তাঁর চারপাশটা হঠাত্ইর নিঃশব্দ হয়ে গেল। পাহাড়ী খরস্রোতা নদীর বেগে চলার শব্দ থেমে গেল, থেমে গেল পাখির ডাক। অর্জুন দেখলেন মূক নামের এক দানব শূকরের রূপ ধরে তাঁকে মারতে আসছে। প্রাণরক্ষার তাগিদে অর্জুন হাতে অস্ত্র তুলে নিলেন। সেই মুহূর্তে তাঁকে নিষেধ করলেন, ব্যাধবেশী মহাদেব। জলদগম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন, ‘হে তাপস! এই শূকরকে আমিই প্রথম মারবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছি। তাই তুমি একে আঘাত কোরোনা।’ অর্জুন সে কথায় কর্ণপাত না করে শূকরকে লক্ষ্য শরক্ষেপ করলেন। একই সঙ্গে কিরাত আর অর্জুনের বাণ সশব্দে এসে মূকদানবের গায়ে এসে বিঁধল। তারপর আরও আরও বাণ ধেয়ে এলে দানবকে লক্ষ্য করে। অতিভীষণ আকৃতি ধারণ করে মূকদানব মারা গেল। এতক্ষণে অর্জুনের দৃষ্টি পড়ল কিরাতের প্রতি। তিনি দেখলেন, সচরাচর যেমনটা দেখা যায়, তেমন নয় এ কিরাত। সোনার বরণ গায়ের রং আর তাকে ঘিরে রয়েছে অনেক নারী পুরুষ। কে ইনি? মনের কৌতূহল মনে চেপে রেখে অর্জুন বললেন, ‘হে সুবর্ণকান্তি পুরুষ! কে তুমি? এই ঘোর বনে স্ত্রীপরিবৃত হয়ে ভ্রমণ করছ, তোমার কি ভয় করছে না? কেনই বা আমার বধ্য শূকরটাকে বিদ্ধ করলে?’ অর্জুন উত্তরের অপেক্ষা না করে বলে চলেন, ‘মৃগয়ার নিয়ম লঙ্ঘন করেছো তুমি। আমি তোমায় বধ করব।’ ব্যাধ হাসতে হাসতে বলে উঠল, ‘এ বনে আমরা বাস করি। তাই এ বন আমার পরিচিত। তোমার শরীর সুখভোগে অভ্যস্ত, এ সহজেই বোঝা যাচ্ছে। জনহীন এ গভীর বনে তুমি কি জন্য এসেছো?’
এ ভাবে তিনি ভয়ঙ্কর তপস্যা করতে লাগলেন। তাঁর তপস্যার তেজে সমস্ত দিক যেন ধোঁয়াটে হয়ে উঠলো। ঋষিরা অর্জুনের এই ভয়ঙ্কর তপস্যা দেখে ভীত হলেন। তাঁরা মহাদেবকে গিয়ে জানালেন। মহাদেব তাঁদের আশ্বস্ত করে ব্যাধের বেশ ধারণ করলেন। একহাতে পিনাকনামের ধনু আর অন্যহাতে বাণ নিয়ে আগুনবরণ কিরাত চললেন অর্জুনের খোঁজে। স্বয়ং উমাদেবী আর অন্যান্য স্ত্রীলোকেরা আর সাথে মহাদেবের ভূতেরাও সেই মতো বেশভূষা করে তাঁর সাথে চলল। অর্জুনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হল এক অদ্ভুত মুহূর্তে। তপস্যারত অর্জুন খেয়াল করলেন, তাঁর চারপাশটা হঠাত্ইর নিঃশব্দ হয়ে গেল। পাহাড়ী খরস্রোতা নদীর বেগে চলার শব্দ থেমে গেল, থেমে গেল পাখির ডাক। অর্জুন দেখলেন মূক নামের এক দানব শূকরের রূপ ধরে তাঁকে মারতে আসছে। প্রাণরক্ষার তাগিদে অর্জুন হাতে অস্ত্র তুলে নিলেন। সেই মুহূর্তে তাঁকে নিষেধ করলেন, ব্যাধবেশী মহাদেব। জলদগম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন, ‘হে তাপস! এই শূকরকে আমিই প্রথম মারবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছি। তাই তুমি একে আঘাত কোরোনা।’ অর্জুন সে কথায় কর্ণপাত না করে শূকরকে লক্ষ্য শরক্ষেপ করলেন। একই সঙ্গে কিরাত আর অর্জুনের বাণ সশব্দে এসে মূকদানবের গায়ে এসে বিঁধল। তারপর আরও আরও বাণ ধেয়ে এলে দানবকে লক্ষ্য করে। অতিভীষণ আকৃতি ধারণ করে মূকদানব মারা গেল। এতক্ষণে অর্জুনের দৃষ্টি পড়ল কিরাতের প্রতি। তিনি দেখলেন, সচরাচর যেমনটা দেখা যায়, তেমন নয় এ কিরাত। সোনার বরণ গায়ের রং আর তাকে ঘিরে রয়েছে অনেক নারী পুরুষ। কে ইনি? মনের কৌতূহল মনে চেপে রেখে অর্জুন বললেন, ‘হে সুবর্ণকান্তি পুরুষ! কে তুমি? এই ঘোর বনে স্ত্রীপরিবৃত হয়ে ভ্রমণ করছ, তোমার কি ভয় করছে না? কেনই বা আমার বধ্য শূকরটাকে বিদ্ধ করলে?’ অর্জুন উত্তরের অপেক্ষা না করে বলে চলেন, ‘মৃগয়ার নিয়ম লঙ্ঘন করেছো তুমি। আমি তোমায় বধ করব।’ ব্যাধ হাসতে হাসতে বলে উঠল, ‘এ বনে আমরা বাস করি। তাই এ বন আমার পরিচিত। তোমার শরীর সুখভোগে অভ্যস্ত, এ সহজেই বোঝা যাচ্ছে। জনহীন এ গভীর বনে তুমি কি জন্য এসেছো?’
অর্জুন এ কথা শুনে ক্রুদ্ধ হলেন আর বলে উঠলেন, ‘তুমি জানো না যে কার সঙ্গে কথা বলছ।’ এই বলে অর্জুন ব্যাধের উদ্দেশ্যে অজস্র বাণ বর্ষণ করলেন। ব্যাধ তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হল না। বরং হাসতে হাসতে বলে উঠলো, ‘তোমার তূণে যত বাণ আছে সব নিক্ষেপ করো।’ অর্জুন এমন কথা শুনে মনে মনে বিচলিত হলেন কিন্তু মুখে সে ভাব ফুটে উঠতে দিলেন না। তিনি বাণবর্ষণ অব্যাহত রাখলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে অর্জুনের সমস্ত বাণবর্ষণ ব্যর্থ হল। একসময় সেই অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন পুরুষ অর্জুনের গাণ্ডীব ধরে ফেলল। অর্জুন অনন্যোপায় হয়ে কতকটা যেন যুদ্ধ শেষ করবার ইচ্ছাতেই তরবারি নিয়ে ব্যাধের দিকে ছুটে গিয়ে তার মাথায় আঘাত করলেন। সে আঘাতও বৃথা গেল। ব্যাধ অবিচলভাবে দাঁড়িয়ে মৃদু মৃদু হাসতে লাগল। এরপর অর্জুন বাহুযুদ্ধ শুরু করলেন। কিন্তু ব্যাধের সঙ্গে বাহুযুদ্ধে অর্জুন অচৈতন্য হয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ জ্ঞান ফিরলে ইষ্টদেব মহাদেবের মাটির মূর্তি তৈরি করে পুজো করতে বসলেন। পুজো শেষে অবাক হয়ে দেখলেন পুজোর সমস্ত ফুলের মালা ব্যাধের গলায় শোভা পাচ্ছে। তিনি বুঝলেন, এই ব্যাধ আর কেউ নন, স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব।
অর্জুন আনন্দে আভূমি নত হয়ে ইষ্টদেবকে প্রণাম করে স্তব করলেন। মহাদেব সন্তুষ্ট হয়ে অর্জুনকে আলিঙ্গন করলেন। আশীর্বাদ করলেন এই বলে, ‘অর্জুন! আমি তোমার বল আর উত্সারহ দেখে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছি। আমি স্পষ্টত দেখতে পাচ্ছি যে, আগামীদিনে তুমি সমস্ত শত্রুকে জয় করবে। এমনকি দেবতাদের চেয়েও বলবান হবে তুমি।’ অর্জুনের গাণ্ডীবধনু তাঁকেই ফিরিয়ে দিলেন দেবাদিদেব। তারপর তাঁকে বর প্রার্থনা করতে বললেন। অর্জুন কৃতাঞ্জলিপুটে বলে উঠলেন, ‘কাময়ে দিব্যমন্ত্রং তদ্ঘোরং পাশুপতং প্রভো!’ ‘হে দেব! আমায় দিব্য পাশুপত অস্ত্র প্রদান করুন। কৌরবদের সঙ্গে যুদ্ধে সেই অস্ত্র আমি শত্রুর প্রতি প্রয়োগ করব।’
মহাদেব বললেন, ‘অর্জুন! তুমিই এই অস্ত্রশিক্ষা করবার উপযুক্ত পাত্র। তাই এ অস্ত্রের প্রয়োগ তোমায় শেখাবো। কিন্তু তার আগে জেনে রেখো, ব্রহ্মশিরা পাশুপত অস্ত্র প্রয়োগ করলে তা নিষ্ফল হবে না কখনও। দেবতারাও এর প্রয়োগ জানেন না, মানুষ তো দূরের কথা। তাই তুমি হঠাৎ কোনও মানুষের ওপর এ অস্ত্র প্রয়োগ করবে না। যদি করো, তবে সমস্ত জগৎ ধ্বংস হবে।’ এই বলে মহাদেব অর্জুনকে মন্ত্র, সংকেত আর উপসংহারসহ পাশুপত অস্ত্রের ব্যবহার শিখিয়ে দিলেন। অর্জুন দেবদুর্লভ সে মহাশক্তি গ্রহণ করলেন। হঠাৎ বন পাহাড় সহ সমস্ত পৃথিবী যেন দুলে উঠলো। আকাশে হাজার হাজার শাঁখ, ভেরী দুন্দুভি বেজে উঠল। দেবতা দানবেরা অবাক হয়ে দেখলেন, এক অসামান্য মানুষ দেবদুর্লভ মহাশক্তির অধিকারী হলেন।
ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
অর্জুন আনন্দে আভূমি নত হয়ে ইষ্টদেবকে প্রণাম করে স্তব করলেন। মহাদেব সন্তুষ্ট হয়ে অর্জুনকে আলিঙ্গন করলেন। আশীর্বাদ করলেন এই বলে, ‘অর্জুন! আমি তোমার বল আর উত্সারহ দেখে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছি। আমি স্পষ্টত দেখতে পাচ্ছি যে, আগামীদিনে তুমি সমস্ত শত্রুকে জয় করবে। এমনকি দেবতাদের চেয়েও বলবান হবে তুমি।’ অর্জুনের গাণ্ডীবধনু তাঁকেই ফিরিয়ে দিলেন দেবাদিদেব। তারপর তাঁকে বর প্রার্থনা করতে বললেন। অর্জুন কৃতাঞ্জলিপুটে বলে উঠলেন, ‘কাময়ে দিব্যমন্ত্রং তদ্ঘোরং পাশুপতং প্রভো!’ ‘হে দেব! আমায় দিব্য পাশুপত অস্ত্র প্রদান করুন। কৌরবদের সঙ্গে যুদ্ধে সেই অস্ত্র আমি শত্রুর প্রতি প্রয়োগ করব।’
মহাদেব বললেন, ‘অর্জুন! তুমিই এই অস্ত্রশিক্ষা করবার উপযুক্ত পাত্র। তাই এ অস্ত্রের প্রয়োগ তোমায় শেখাবো। কিন্তু তার আগে জেনে রেখো, ব্রহ্মশিরা পাশুপত অস্ত্র প্রয়োগ করলে তা নিষ্ফল হবে না কখনও। দেবতারাও এর প্রয়োগ জানেন না, মানুষ তো দূরের কথা। তাই তুমি হঠাৎ কোনও মানুষের ওপর এ অস্ত্র প্রয়োগ করবে না। যদি করো, তবে সমস্ত জগৎ ধ্বংস হবে।’ এই বলে মহাদেব অর্জুনকে মন্ত্র, সংকেত আর উপসংহারসহ পাশুপত অস্ত্রের ব্যবহার শিখিয়ে দিলেন। অর্জুন দেবদুর্লভ সে মহাশক্তি গ্রহণ করলেন। হঠাৎ বন পাহাড় সহ সমস্ত পৃথিবী যেন দুলে উঠলো। আকাশে হাজার হাজার শাঁখ, ভেরী দুন্দুভি বেজে উঠল। দেবতা দানবেরা অবাক হয়ে দেখলেন, এক অসামান্য মানুষ দেবদুর্লভ মহাশক্তির অধিকারী হলেন।
ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে