ভগবান শ্রীনারায়ণকে রুক্মপুরে নিজের বাড়িতে দেখে গরুড় লজ্জায় একেবারে মুখ নিচু করে রইল। প্রণাম করে সে নারায়ণকে বললেন, হে ভগবন! আপনি সমুদ্রে মহাশয্যায় শেষনাগের উপর শুয়ে থাকেন আর সেই সমুদ্র আপনার আশ্রয় দিচ্ছে এই ভেবে একেবারে মদোন্মত্ত হয়ে গিয়েছে।
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি
পর্ব-৪২: রাজকোষে সঞ্চিত সোনা-রূপা-ধান্যাদি সবই প্রজাবর্গের, রাজার ব্যক্তিগত নয়
মহাভারতের অনুশাসন পর্বে এক মারাত্মক কথা বলা হয়েছে। পিতামহ ভীষ্ম সেখানে যুধিষ্ঠিরকে রাজনীতির উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেন, যে রাজা প্রজাকুলকে রক্ষা করে না অথচ তাদের থেকে ধনসম্পত্তি হরণের পাশাপাশি তাদের অধিকারও খর্ব করে সে রাজা আসলে রাজা নয়, সে সাক্ষাৎ কলি।
পর্ব-৪১: প্রতিকার না করেও রাজা যদি প্রজার দুঃখটুকুও শোনেন তাহলেও যথেষ্ট
দম্ভের বশে হাতি পাহাড়ের গায়ে দাঁত দিয়ে আঘাত করে তাকে ধ্বংস করতে চাইলেও পাহাড়ের কিছু মাত্র ক্ষতি হয় না, উল্টে সেই হাতিটিরই দাঁত ভেঙে যায়—সে পরাজিত হয়। তাই সমুদ্রের সঙ্গে লড়াই করবার মতো ক্ষমতা আমাদের মতন ক্ষুদ্র প্রাণীদের কারওই নেই। তাই আমাদের অভিমত হল বিনতার পুত্র বৈনতেয় গরুড়ের কাছে যাওয়া যাক।
পর্ব-৪০: দুর্বল বা অসহায়রা একত্র হলে তাঁরাই অজেয় হয়ে ওঠেন
অর্থশাস্ত্রে তিন রকম শক্তির কথা বলা হয়েছে—মন্ত্রশক্তি, প্রভুশক্তি আর উত্সাহশক্তি। রাজা যদি কোনও অলব্ধবস্তু বা অলব্ধভূমি লাভ করতে চান বা যে বস্তু বা ভূমিটি আগেই উনি লাভ করেছেন তাকে যদি যথাযথভাবে পালন করতে চান তবে প্রয়োজন মন্ত্রণাশক্তির, যা অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের মাধ্যমে লাভ করা যায়।
পর্ব-৩৯: বিপরীত পরিস্থিতিতে পালিয়ে যাওয়াটাও ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে টিকে থাকার উপায়
পাঠকদেরকে ভাগবতের পৌরাণিক উপাখ্যান স্মরণ করতে বলবো। কংসের মৃত্যুর পর তাঁর দুই বিধবা পত্নী অস্তি এবং প্রাপ্তি —দু’ জনে মগধে গিয়ে পিতা জরাসন্ধকে সমস্ত বার্তা জানালে জরাসন্ধ মথুরা আক্রমণ করলেন। প্রসঙ্গত, জেনে রাখাটা দরকার, যে সময়ে কৃষ্ণ জন্মেছিলেন সে সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতিটা কিন্তু একেবারেই তাঁর অনুকূলে ছিল না।
পর্ব-৩৮: যে শাসক বেশি কথা বলেন তাঁর পতন অনিবার্য
সময় প্রতিকূল হলেও ধৈর্য ত্যাগ করা উচিত নয়। কারণ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলে কখনো কখনও বিপদ-মুক্তির পথ বেরিয়েও আসে। সমুদ্রের মাঝে জাহাজ ভেঙ্গে গেলেও অভিযাত্রীরা কেউই কিন্তু সমুদ্র পার করবার আশা পরিত্যাগ করেন না।
পর্ব-৩৭: যুদ্ধ করার থেকে তা এড়িয়ে যাওয়াটাও রণনীতিরই বড় অঙ্গ
সাপ বিষ উদ্গার করে। কিন্তু সাপের বিষের মজাটা হল যার উপর সে বিষ-প্রয়োগ করে মৃত্যু শুধু তারই হয়। কিন্তু দুষ্ট ব্যক্তি বিষ প্রয়োগ করেন একজনের কানে কিন্তু পতন ঘটান অন্যজনের—এইটুকুই শুধু ব্যতিক্রম একজন সাপ আর একজন দুষ্টলোকের বিষপ্রয়োগের ক্ষেত্রে।
পর্ব-৩৬: শুদ্ধ স্বভাবের রাজাও পরিত্যাজ্য যদি তাঁর পার্শ্বচরেরা শকুনের মতো কুটিল হন
টাকা-পয়সার বিনিময়ে যে সেবকরা রাজার অধীনে [প্রতিরক্ষার] কাজ করেন, বলা যায় রাজা তাদের প্রাণটিকেও প্রায় কিনেই নেন। সেই কারণেই রাজনীতিবিদরাও মনে করেন রাজকার্যের প্রয়োজনে রাজা যদি তার সেবকদের প্রাণটিও গ্রহণ করেন তাহলেও নীতিগতভাবে সেটা খুব একটা অন্যায়ের হবে না।
পর্ব-৩৫: রাজা সবকিছু হাতে করে প্রজার মুখে তুলে দেবেন এমনটা ভাবার আর সময় নেই
মিত্রভেদ নদী তীরের কচি সবুজ ঘাস খেয়ে পশুরাজ মদোৎকটের আশ্রয়ে থেকে বন্যজীবন ভালোই দিন কাটছিল ক্রথনকের। কিন্তু সময় কখনও একরকম থাকে না। একদিন এক বিশাল হাতির সঙ্গে যুদ্ধ হল মদোৎকটের। প্রাণে বেঁচে গেলেও সেই হাতির তীক্ষ্ণ দাঁতের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে শয্যাশায়ী হল মদোৎকট আর সমস্যার শুরুও তখন থেকেই। ক্রমশ সে এমনই শক্তিহীন হয়ে গেল যে এক-পা হাঁটবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলল। শিকার ধরাও বন্ধ হয়ে গেল তার। ফলে কাক থেকে শুরু করে সিংহের অনুচর বাকি সব মাংসাশী প্রাণীরা সকলে খিদের জ্বালায় ছটফট করা শুরু করল— মন মেজাজ সকলেরই খারাপ।...
পর্ব-৩৪: রাজসহায়ে সুবিধা পাওয়া ব্যক্তিদের, রাজারই প্রয়োজনে বিপদের মুখে পড়তে হয়
সঞ্জীবক মনের দুঃখে দমনককে বলল, একটা বিষয় আমার কাছে একেবারে জলের মতো পরিষ্কার। আমার উপর স্বামী পিঙ্গলকের কৃপাদৃষ্টিটা যে আশেপাশে থাকা অনেকেই সহ্য করতে পারছেন না।
পর্ব-৩৩: রাজসেবায় পুরস্কার মিলতেও পারে, নাও মিলতে পারে! কিন্তু সামান্য বিচ্যুতি ঘটলে রাজরোষে মৃত্যু নিশ্চিত
চাকুরেদের জীবনটা যে কুকুরের থেকেও অধম সে কথা কিন্তু নানা ভাবে পঞ্চতন্ত্রের বিভিন্ন গল্পগুলোর মধ্যে আমরা পেয়েছি। অন্যের অধীনে থেকে চাকরি করার চেয়ে নিজের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য করাটাই যে অধিক লাভজনক সেটা পঞ্চতন্ত্রে বার বার বলা হয়েছে।
পর্ব-৩২: যাঁরা চাকরি করেন, তাঁদের জীবন একটি কুকুরের থেকেও কঠিন
রজক হল যিনি বস্ত্র রঞ্জিত করেন। ধোপাকে সংস্কৃত-ভাষায় রজক বলা হয়। জামাকাপড় ধুয়ে যিনি তাকে রং করেন তিনিই রজক। তার বাড়িতে সাদা কাপড় ধোয়ার জন্য বড় বড় নীলের ভাণ্ড ছিল। কুকুরের তাড়া খেয়ে সেই চণ্ডরব গিয়ে পড়ল সেই নীলের ভাণ্ডের মধ্যে।
পর্ব-৩১: উপদেশ দিয়েও কোনও ব্যক্তির স্বভাবকে কখনও পরিবর্তন করা যায় না
মন্দবিসর্পিণীর কাছে শপথ করে সেই অগ্নিমুখ মত্কুণ বললে, হে দেবি! তাই হবে— “এবং করিষ্যামি”। যতক্ষণ না আপনি প্রথমে রাজরক্ত পান করে নিচ্ছেন ততক্ষণ আমি রক্তপান করবো না। দেবতা এবং গুরুর নামে শপথ করে আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি।
পর্ব-৩০: পছন্দের মানুষের মধ্যে অনেক দোষ থাকলেও, তার খারাপটা কখনোই চোখে পড়ে না
দমনকের যুক্তিগুলো শুনে পিঙ্গলক চঞ্চল হয়ে উঠল। দমনককে সে বললে, সঞ্জীবক আমার প্রাণাধিক প্রিয় একজন সেবক। আমার সঙ্গে কখনও কোনও বিষয়ে মতবৈপরিত্য হয়নি তার। তাহলে কেনই বা সে আমার বিরুদ্ধাচরণ করবে বা আমার প্রতি দ্রোহপূর্ণ মনোভাব পোষণ করবে?
পর্ব-২৯: রাজ্য পরিচালনার ভার একজন মন্ত্রীর উপর ন্যস্ত হলে, তাঁর মনে অহঙ্কার জন্মায় যা রাজদ্রোহের পথকে প্রশস্ত করে
মানুষ নিজের এবং তার শত্রুর ক্ষমতাকে বিচার বিশ্লেষণ না করেই আবেগের বশবর্তী হয়ে শত্রুর সম্মুখে বিরোধীতা করতে চলে যায় সে অগ্নিতে ঝাঁপিয়ে পড়া পতঙ্গের মতো সমূলে বিনষ্ট হয়ে যায়।