
ছবি : প্রতীকী। সংগৃহীত।
খাণ্ডববনদহনকে কেন্দ্র করে কৃষ্ণ ও অর্জুনের সঙ্গে, দেবরাজ ইন্দ্রের মহাযুদ্ধ শুরু হল। দুই পক্ষই শক্তিশালী। এ যেন সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি। অগ্নিদেবের পক্ষ নিয়ে, কৃষ্ণ ও অর্জুনের লড়াই। অগ্নিদেবের কাছে তাঁদের দু’জনের প্রতিশ্রুতিরক্ষার অঙ্গীকার। প্রতিপক্ষ দেবরাজ ইন্দ্র। কারণ ইন্দ্র ছিলেন খাণ্ডববনদহনের বিপক্ষে। তিনি, বিপন্ন প্রাণীকুলকে বাঁচাতে যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছেন। মহর্ষি বেদব্যাস সেই যুদ্ধের রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। বলাবাহুল্য ইন্দ্রপুত্র অর্জুন যেমন পিতা ইন্দ্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছেন যুদ্ধে, ইন্দ্রেরও পুত্রের প্রতি কোনওরকম বাৎসল্যের প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়নি। নির্ভীক অর্জুন, শরাঘাতে, প্রতিপক্ষের সমস্ত সশস্ত্র দেবতাদের কার্যত তাড়িয়ে দিলেন। পুত্রের কৃতিত্বে গর্বিত পিতা কিন্তু যুদ্ধ হতে বিরত হলেন না। দেবরাজ, শেষে অর্জুনবধে উদ্যোগী হলেন।বৃক্ষসহ মন্দর পর্বতের একটি বিশাল শৃঙ্গ উৎপাটিত করে, নিক্ষেপ করলেন। তত উৎপাট্য পাণিভ্যাং মন্দরাচ্ছিখরং মহৎ। সদ্রুমং ব্যসৃজচ্ছক্রো জিঘাংসুঃ পাণ্ডুনন্দন।।
অর্জুন তাঁর বাণপ্রয়োগের নিপুণতায় নিমেষে পর্বতশৃঙ্গটিকে খণ্ড বিখণ্ড করলেন। বিধ্বস্ত সেই পর্বতশৃঙ্গের ভারে, প্রাণীকুল ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে উঠল। চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে বহু প্রাণীর মৃত্যু হল। বহু প্রাণী সেই স্থান হতে সরে গেল বনের অন্য প্রান্তে। অস্ত্রের শব্দে সচকিত হয়ে, ভীত প্রাণীরা, কৃষ্ণ ও অর্জুনের দিকে বিহ্বল দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। একদিকে বনদহনের দৃশ্য ও অপরদিকে উদ্যতাস্ত্র কৃষ্ণ উৎকট শব্দে আর্তনাদ করে উঠলেন। সম্পূর্ণ গগনমণ্ডলে, সেই নিদারুণ আর্ত চিৎকার ও সঙ্গে অগ্নির ভয়ঙ্কর হুঙ্কার, সবমিলিয়ে যেন বিঘ্নসৃষ্টিকারী মেঘেদের গর্জন শুরু হল। মহাবাহু, কৃষ্ণ, তাঁদের বিনাশের জন্য, নিজের তেজে দীপ্যমান, বিধ্বংসী চক্র নিক্ষেপ করলেন। চক্রের আঘাতে, সেই মুহূর্তে, হরিণ প্রভৃতি ক্ষুদ্র প্রাণীরা,দানব ও নিশাচররা, শতচ্ছিন্ন অবস্থায়, আগুনে পড়তে লাগল।
দৈত্যরা বসা (শরীরস্থ ধাতুবিশেষ) ও রুধিরাপ্লুত অবস্থায় সান্ধ্য মেঘের মতো দৃশ্যমান হল। পিশাচ, পক্ষী, নাগ ও পশুদের বিনাশকারী কৃষ্ণ যেন সাক্ষাৎ যম হয়ে বিচরণ করতে লাগলেন। কৃষ্ণের নিক্ষিপ্ত চক্র বারংবার অনেক প্রাণীদের ছিন্নভিন্ন করে কৃষ্ণের হাতে ফিরে এল। তখন পিশাচ, নাগ, রাক্ষসদের নিধনরত সর্বপ্রাণীদের আত্মা যিনি, সেই কৃষ্ণের রূপ হল অতি উগ্র। উভয়ের বলের কারণে, উপস্থিত সকল দেবতারা দাবদহ নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম হলেন আবার কৃষ্ণ ও অর্জুনকে শান্ত করতেও পারলেন না। তখন দেবতারা যুদ্ধবিমুখ হলেন। ইন্দ্র, দেবতাদের যুদ্ধে অনীহা লক্ষ্য করলেন। কেশবও অর্জুনকে প্রশংসা করে আনন্দিত হলেন। দেবতারা যুদ্ধে বিরত হলে, ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে একটি অশরীরিপ্রযুক্তা দৈববাণী হল। তোমার বন্ধু নাগশ্রেষ্ঠ তক্ষক এখানে নেই। খাণ্ডবদহনের সময়ে তিনি কুরুক্ষেত্রে গিয়েছেন। ন তে সখা সন্নিহিতস্তক্ষকো ভুজগোত্তমঃ। দাহকালে খাণ্ডবস্য কুরুক্ষেত্রং গতো হ্যসৌ।।
অর্জুন তাঁর বাণপ্রয়োগের নিপুণতায় নিমেষে পর্বতশৃঙ্গটিকে খণ্ড বিখণ্ড করলেন। বিধ্বস্ত সেই পর্বতশৃঙ্গের ভারে, প্রাণীকুল ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে উঠল। চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে বহু প্রাণীর মৃত্যু হল। বহু প্রাণী সেই স্থান হতে সরে গেল বনের অন্য প্রান্তে। অস্ত্রের শব্দে সচকিত হয়ে, ভীত প্রাণীরা, কৃষ্ণ ও অর্জুনের দিকে বিহ্বল দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। একদিকে বনদহনের দৃশ্য ও অপরদিকে উদ্যতাস্ত্র কৃষ্ণ উৎকট শব্দে আর্তনাদ করে উঠলেন। সম্পূর্ণ গগনমণ্ডলে, সেই নিদারুণ আর্ত চিৎকার ও সঙ্গে অগ্নির ভয়ঙ্কর হুঙ্কার, সবমিলিয়ে যেন বিঘ্নসৃষ্টিকারী মেঘেদের গর্জন শুরু হল। মহাবাহু, কৃষ্ণ, তাঁদের বিনাশের জন্য, নিজের তেজে দীপ্যমান, বিধ্বংসী চক্র নিক্ষেপ করলেন। চক্রের আঘাতে, সেই মুহূর্তে, হরিণ প্রভৃতি ক্ষুদ্র প্রাণীরা,দানব ও নিশাচররা, শতচ্ছিন্ন অবস্থায়, আগুনে পড়তে লাগল।
দৈত্যরা বসা (শরীরস্থ ধাতুবিশেষ) ও রুধিরাপ্লুত অবস্থায় সান্ধ্য মেঘের মতো দৃশ্যমান হল। পিশাচ, পক্ষী, নাগ ও পশুদের বিনাশকারী কৃষ্ণ যেন সাক্ষাৎ যম হয়ে বিচরণ করতে লাগলেন। কৃষ্ণের নিক্ষিপ্ত চক্র বারংবার অনেক প্রাণীদের ছিন্নভিন্ন করে কৃষ্ণের হাতে ফিরে এল। তখন পিশাচ, নাগ, রাক্ষসদের নিধনরত সর্বপ্রাণীদের আত্মা যিনি, সেই কৃষ্ণের রূপ হল অতি উগ্র। উভয়ের বলের কারণে, উপস্থিত সকল দেবতারা দাবদহ নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম হলেন আবার কৃষ্ণ ও অর্জুনকে শান্ত করতেও পারলেন না। তখন দেবতারা যুদ্ধবিমুখ হলেন। ইন্দ্র, দেবতাদের যুদ্ধে অনীহা লক্ষ্য করলেন। কেশবও অর্জুনকে প্রশংসা করে আনন্দিত হলেন। দেবতারা যুদ্ধে বিরত হলে, ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে একটি অশরীরিপ্রযুক্তা দৈববাণী হল। তোমার বন্ধু নাগশ্রেষ্ঠ তক্ষক এখানে নেই। খাণ্ডবদহনের সময়ে তিনি কুরুক্ষেত্রে গিয়েছেন। ন তে সখা সন্নিহিতস্তক্ষকো ভুজগোত্তমঃ। দাহকালে খাণ্ডবস্য কুরুক্ষেত্রং গতো হ্যসৌ।।
দেবরাজ সেই দৈববাণীর মাধ্যমে আরও অবগত হলেন, এই দুই বীরকে কোনভাবেই পরাজিত করা সম্ভব নয়। এই বাসুদেব কৃষ্ণ ও অর্জুন পূর্বে সুরলোকে নরনারায়ণ নামে দুই দেবতারূপে পরিচিত ছিলেন। ইন্দ্র তাঁদের শৌর্য ও পরাক্রম বিষয়ে জানেন। সর্বলোকে যুদ্ধে দুর্জয়, পুরাণপ্রসিদ্ধ, এই শ্রেষ্ঠ ঋষিদ্বয়কে পরাজিত করা অসম্ভবপ্রায়। দেবদানব সকলের পূজনীয় এনারা যক্ষ, রাক্ষস, গন্ধর্ব, নর, কিন্নর ও নাগদেরও সম্মানীয়। এই খাণ্ডবদহন দৈবপ্রযুক্ত, তাই বাসব, আপনি দেবতাদের সঙ্গে নিয়ে প্রস্থান করতে পারেন। তস্মাদিতঃ সুরৈঃ সার্দ্ধং গন্তুমর্হসি বাসব।দিষ্টং চাপ্যনুপশ্যৈতৎ খাণ্ডবস্য বিনাশনম্।। ইন্দ্র সেই দৈবনির্দেশ শুনে, সেই তথ্য যথার্থ মনে করলেন। তৎক্ষণাৎ ক্রোধ ও অসহিষ্ণুতা ত্যাগ করে তিনি স্বর্গে প্রস্থান করলেন। অন্য দেবতারাও সসৈন্যে তাঁকে অনুসরণ করলেন। বাসুদেব ও অর্জুন প্রস্থানরত দেবতাদের উদ্দেশ্যে সিংহনাদ করে উঠলেন। আনন্দিত দুই বীর দেবরাজমুক্ত খাণ্ডববন নিঃশঙ্কমনে দগ্ধ করতে লাগলেন। বায়ু যেমন মেঘসমূহ সরিয়ে দেয় তেমনই অর্জুন যেন দেবতাদের প্রস্থানে বাধ্য করে, বাণাঘাতে খাণ্ডববাসী প্রাণীদের হত্যা করতে লাগলেন।
সব্যসাচী অর্জুনের বাণে ছিন্নভিন্ন কোনও প্রাণীই বন থেকে নির্গত হতে পারল না। যুদ্ধ করা তো দূরের কথা, সেই যুদ্ধে, বিশাল প্রাণীরা অব্যর্থাস্ত্র অর্জুনের প্রতি দৃষ্টি দিতে পর্যন্ত পারল না। অর্জুন একটি শরে একশ ক্ষুদ্র পাখি এবং শত শরবর্ষণে এক বিরাট বিহঙ্গকে বিদ্ধ করলেন। নিষ্প্রাণ বিহঙ্গেরা যেন সাক্ষাৎ কালগর্ভসম অগ্নিতে পড়তে লাগল। মোটকথা নদীতীরে,অসমানস্থানে, শ্মশানে, প্রাণীদের কোথাও শান্তি নেই, সর্বত্র তাঁদের অশান্তি ভোগ করতে হল। আর্ত প্রাণীরা তীব্রস্বরে চিৎকার করতে থাকল। হাতি, হরিণ, তরক্ষক অর্থাৎ ক্ষুদ্র বাঘ কেঁদে উঠল। সেই শব্দে, দূরবর্তী গঙ্গায় মীন এবং অরণ্যবাসী বিদ্যাধরগণ সন্ত্রস্ত হল। কেউ, কৃষ্ণ ও অর্জুনের পানে দৃষ্টি দিতেই পারল না, তাদের যুদ্ধ করার সামর্থ্য কোথায়? রাক্ষস, দানব, নাগ, এক শ্রেণিবদ্ধ হয়ে যারাই সেখানে উপস্থিত হল, কৃষ্ণ চক্রের সাহায্যে তাদের হত্যা করলেন। চক্রের বেগে, শির দেহ হতে বিচ্ছিন্ন অবস্থায়, নিষ্প্রাণ অন্য বিশালাকৃতি প্রাণীরা অগ্নিতে পড়তে লাগল। প্রাণীদের মাংস, রক্ত, চর্বিপানে পরিতৃপ্ত দীপ্তনয়ন, দীপ্তজিহ্ব, প্রদীপ্তবদন, ঊর্দ্ধেমুখে প্রদীপ্তকেশ, পিঙ্গলনেত্র অগ্নিদেব, ঊর্ধ্বাকাশে ধূমশূন্য হয়ে অবস্থান করতে লাগলেন। কৃষ্ণ ও অর্জুন যে অমৃততুল্য ভোজ্যের আয়োজন করলেন, সেই খাদ্য গ্রহণ করে, পরিতৃপ্ত অগ্নি পরমানন্দে সুস্থ হয়ে উঠলেন।কৃষ্ণ,সহসা তক্ষকের বাসস্থান থেকে পলায়নপর, ময় নামে দানবকে দেখতে পেলেন। তাকে, দগ্ধ করতে ইচ্ছুক,বায়ুর সারথি, জটাধারী মূর্তিমান অগ্নি, মেঘের মতো গুরুগর্জনে তাকে প্রার্থনা করলেন।
একদিকে বাসুদেব চক্র উদ্যত করে রয়েছেন এবং অপরদিকে দহনেচ্ছুক অগ্নি, দুজনকে দেখে, ময়দানব, ছুটে অর্জুনের কাছে গিয়ে বললেন, “ত্রাহীতি” বাঁচাও। সেই ভীতস্বর শুনে, ধনঞ্জয় অর্জুন, তাকে আশ্বস্ত করলেন, মা ভৈরিতি ভয় পেয় না। অর্জুনের প্রত্যুত্তরে ময়দানব যেন প্রাণ ফিরে পেল। দয়াপরবশ হয়ে অর্জুন, আবারও ময়কে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ন ভেতব্যমিতি” ভয় পেয় না। পার্থ, নমুচির ভাই ময়দানবকে অভয় দান করায়, কৃষ্ণ তাকে হত্যার ইচ্ছা ত্যাগ করলেন। অগ্নিও তাকে আর দগ্ধ করলেন না। কৃষ্ণ ও অর্জুন, ইন্দ্রের কবল থেকে সেই বনকে রক্ষা করতে থাকলেন, বুদ্ধিমান অগ্নিদেব পনের দিন ধরে বনটিকে দগ্ধ করতে লাগলেন। খাণ্ডববনদহনের সময়ে, ছয়জনকে অগ্নি দগ্ধ করেননি। তারা হল—তক্ষকপুত্র অশ্বসেন, ময়দানব এবং চারটি অঞ্জনপক্ষী।
সব্যসাচী অর্জুনের বাণে ছিন্নভিন্ন কোনও প্রাণীই বন থেকে নির্গত হতে পারল না। যুদ্ধ করা তো দূরের কথা, সেই যুদ্ধে, বিশাল প্রাণীরা অব্যর্থাস্ত্র অর্জুনের প্রতি দৃষ্টি দিতে পর্যন্ত পারল না। অর্জুন একটি শরে একশ ক্ষুদ্র পাখি এবং শত শরবর্ষণে এক বিরাট বিহঙ্গকে বিদ্ধ করলেন। নিষ্প্রাণ বিহঙ্গেরা যেন সাক্ষাৎ কালগর্ভসম অগ্নিতে পড়তে লাগল। মোটকথা নদীতীরে,অসমানস্থানে, শ্মশানে, প্রাণীদের কোথাও শান্তি নেই, সর্বত্র তাঁদের অশান্তি ভোগ করতে হল। আর্ত প্রাণীরা তীব্রস্বরে চিৎকার করতে থাকল। হাতি, হরিণ, তরক্ষক অর্থাৎ ক্ষুদ্র বাঘ কেঁদে উঠল। সেই শব্দে, দূরবর্তী গঙ্গায় মীন এবং অরণ্যবাসী বিদ্যাধরগণ সন্ত্রস্ত হল। কেউ, কৃষ্ণ ও অর্জুনের পানে দৃষ্টি দিতেই পারল না, তাদের যুদ্ধ করার সামর্থ্য কোথায়? রাক্ষস, দানব, নাগ, এক শ্রেণিবদ্ধ হয়ে যারাই সেখানে উপস্থিত হল, কৃষ্ণ চক্রের সাহায্যে তাদের হত্যা করলেন। চক্রের বেগে, শির দেহ হতে বিচ্ছিন্ন অবস্থায়, নিষ্প্রাণ অন্য বিশালাকৃতি প্রাণীরা অগ্নিতে পড়তে লাগল। প্রাণীদের মাংস, রক্ত, চর্বিপানে পরিতৃপ্ত দীপ্তনয়ন, দীপ্তজিহ্ব, প্রদীপ্তবদন, ঊর্দ্ধেমুখে প্রদীপ্তকেশ, পিঙ্গলনেত্র অগ্নিদেব, ঊর্ধ্বাকাশে ধূমশূন্য হয়ে অবস্থান করতে লাগলেন। কৃষ্ণ ও অর্জুন যে অমৃততুল্য ভোজ্যের আয়োজন করলেন, সেই খাদ্য গ্রহণ করে, পরিতৃপ্ত অগ্নি পরমানন্দে সুস্থ হয়ে উঠলেন।কৃষ্ণ,সহসা তক্ষকের বাসস্থান থেকে পলায়নপর, ময় নামে দানবকে দেখতে পেলেন। তাকে, দগ্ধ করতে ইচ্ছুক,বায়ুর সারথি, জটাধারী মূর্তিমান অগ্নি, মেঘের মতো গুরুগর্জনে তাকে প্রার্থনা করলেন।
একদিকে বাসুদেব চক্র উদ্যত করে রয়েছেন এবং অপরদিকে দহনেচ্ছুক অগ্নি, দুজনকে দেখে, ময়দানব, ছুটে অর্জুনের কাছে গিয়ে বললেন, “ত্রাহীতি” বাঁচাও। সেই ভীতস্বর শুনে, ধনঞ্জয় অর্জুন, তাকে আশ্বস্ত করলেন, মা ভৈরিতি ভয় পেয় না। অর্জুনের প্রত্যুত্তরে ময়দানব যেন প্রাণ ফিরে পেল। দয়াপরবশ হয়ে অর্জুন, আবারও ময়কে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ন ভেতব্যমিতি” ভয় পেয় না। পার্থ, নমুচির ভাই ময়দানবকে অভয় দান করায়, কৃষ্ণ তাকে হত্যার ইচ্ছা ত্যাগ করলেন। অগ্নিও তাকে আর দগ্ধ করলেন না। কৃষ্ণ ও অর্জুন, ইন্দ্রের কবল থেকে সেই বনকে রক্ষা করতে থাকলেন, বুদ্ধিমান অগ্নিদেব পনের দিন ধরে বনটিকে দগ্ধ করতে লাগলেন। খাণ্ডববনদহনের সময়ে, ছয়জনকে অগ্নি দগ্ধ করেননি। তারা হল—তক্ষকপুত্র অশ্বসেন, ময়দানব এবং চারটি অঞ্জনপক্ষী।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১১৪: জীবনের নশ্বরতা ও আত্মানুসন্ধান বিষয়ে রামের উপলব্ধি যেন এক চিরন্তন সত্যের উন্মোচন

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১৭: একাকিত্বের অন্ধকূপ/২: অন্ধকারের উৎস হতে
প্রশ্ন হল, খাণ্ডববনদহনের সময়ে কেন অগ্নি অঞ্জনপক্ষীদের রেহাই দিলেন? অশ্বসেন ও ময়দানবের নিষ্কৃতিলাভের কারণ জানা গিয়েছে, অঞ্জনপক্ষীদের নিস্তারের কারণ কী? অঞ্জনপক্ষীদের এই নিরুপদ্রব অবস্থা বিস্ময়কর বটে। অগ্নির সঙ্গে বিরোধিতায়,কেন তাদের ধ্বংস করা হল না?
মহাভারতের কথক ঠাকুর বৈশম্পায়ন, রাজা জনমেজয়ের প্রশ্নের উত্তরে, শার্ঙ্গকপাখি অর্থাৎ অঞ্জনপক্ষীদের অগ্নির গ্রাস হতে রক্ষা পাওয়ার কারণসহ বৃত্তান্ত বর্ণনা করলেন।
ধর্মজ্ঞদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, তপস্বী, ব্রতনিষ্ঠ এবং শাস্ত্রজ্ঞানী, মন্দপাল নামে এক মহর্ষি ছিলেন। বেদবিদ, ধর্মে নিরত, তপস্বী, জিতেন্দ্রিয় সেই মহর্ষি ঊর্দ্ধরেতা ঋষিদের রীতি অনুসরণ করতেন। মন্দপাল ঋষি তপস্যার প্রান্তদেশ পার হয়ে দেহত্যাগ করলেন। তিনি মৃত্যুর পরে পিতৃলোকে গমনকরেও তপস্যার ফললাভ করলেন না। তাঁর তপস্যালব্ধ পিতৃলোকে বসবাস বিফল হল। মহর্ষি, ধর্মরাজের সমীপস্থ দেবতাদের প্রশ্ন করলেন, মন্দপালের জন্যে তপস্যা-অর্জিত পিতৃলোকের দ্বার রুদ্ধ হয়েছে কেন? মহর্ষি এর জন্যে কি না করেছেন? আর সেই কর্মফল এমন হল? মর্ত্যলোকে তিনি সেই কাজ করবেন যার দরুণ তাঁর জন্যে এই দ্বার অবরুদ্ধ হয়েছে। হে দেবগণ এই তপস্যার ফল কী? বলুন। ফলমেতস্য তপসঃ কথয়ধ্বং দিবৌকসঃ!।
দেবগণ জানালেন, মহর্ষি মন্দপালের ঋণ পরিশোধ যে এখনও বাকি। জন্মমাত্রই মানুষ তিনটি ঋণে আবদ্ধ হয়। ক্রিয়া, ব্রহ্মচর্য্য ও প্রজা বা সন্তান,এই তিনটি ঋণ। দেবতাদের কাছে যজ্ঞক্রিয়াত্মক ঋণ, ঋষিদের কাছে ব্রহ্মচর্যাত্মক ঋণ, পিতৃপুরুষের ঋণ হল সন্তানোৎপাদনজনিত ঋণ। তিনটির মাধ্যমে মানুষ ঋণ পরিশোধ করে থাকে। দেবতারা জানালেন, মহর্ষি মন্দপাল, যজ্ঞ করে দেবঋণ, তপস্যা দ্বারা ঋষিঋণ পরিশোধ করেছেন কিন্তু তিনি পিতৃপুরুষের ঋণ পরিশোধ করেননি। কারণ তাঁর কোন সন্তান নেই। তদপাক্রিয়তে সর্ব্বং যজ্ঞেন তপসা সুতৈঃ। তপস্বী যজ্ঞকৃচ্চাসি ন চ তে বিদ্যতে প্রজাঃ।। তাই তাঁর জন্যে পিতৃলোকের দ্বার অবরুদ্ধ হয়েছে। তাই মহর্ষির প্রতি দেবতাদের উপদেশ, প্রজায়স্ব ততো লোকানুপভোক্ষ্যসি পুষ্কলান্।
অতএব সন্তানের পিতৃত্ব লাভ করুন এবং পিতৃলোকবাসের প্রভূত সুখ অনুভব করুন। কারণ পুন্নাম্নো নরকাৎ পুত্রস্ত্রায়তে পিতরং শ্রুতিঃ। তস্মাদপত্যসন্তানে যতস্ব ব্রহ্মসত্তম।। বেদবিহিত শ্রুতি হল, পুৎ নামের নরক থেকে উদ্ধার করে পুত্র। তাই অপত্য অর্থাৎ সন্তান উৎপাদন বিষয়ে যত্নশীল হন। মহর্ষি দ্রুত অনেকসন্তানের পিতৃত্বলাভের উপায়সম্বন্ধে বহু চিন্তা করলেন। বহু চিন্তা করে, বহু সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম, পাখিদের কাছে গেলেন।সেখানে পুরুষ অঞ্জনপাখি হয়ে জরিতা নামে এক পক্ষিণীর সঙ্গে মিলিত হলেন। জয়িতার গর্ভে বেদবিদ চার সন্তানের জন্ম হল। এর পরে, ডিমের ভিতরে স্থিত পুত্রসহ, জরিতাকে পরিত্যাগ করে মহর্ষি চললেন লপিতা নামে আর এক পক্ষিণীর কাছে। সন্তানস্নেহে আপ্লুত জরিতা বহু চিন্তা করে স্থির করলেন, তিনি সন্তানদের পরিত্যাগ করতে পারবেন না বরং খাণ্ডববনে নিজের জীবিকালব্ধ সংগৃহীত খুদকুঁড়ো যা কিছু, তাই দিয়েই সন্তান প্রতিপালন করবেন।পুত্রদের দুর্ভাগ্যের কারণে শোকার্তা, স্নেহাপ্লুতা জননী, সেই মতো সন্তান পরিপালন করতে লাগলেন। ন জহৌ পুত্রশোকার্তা জয়িতা খাণ্ডবে সুতান্। বভার চৈতান্ সঞ্জাতান্ স্ববৃত্ত্যা স্নেহবিক্লবা।। মহর্ষি মন্দপাল, লপিতার সঙ্গে অবস্থানকালীন দেখলেন, অগ্নি খাণ্ডববনদহনে অগ্রসর হয়েছেন।
মহাভারতের কথক ঠাকুর বৈশম্পায়ন, রাজা জনমেজয়ের প্রশ্নের উত্তরে, শার্ঙ্গকপাখি অর্থাৎ অঞ্জনপক্ষীদের অগ্নির গ্রাস হতে রক্ষা পাওয়ার কারণসহ বৃত্তান্ত বর্ণনা করলেন।
ধর্মজ্ঞদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, তপস্বী, ব্রতনিষ্ঠ এবং শাস্ত্রজ্ঞানী, মন্দপাল নামে এক মহর্ষি ছিলেন। বেদবিদ, ধর্মে নিরত, তপস্বী, জিতেন্দ্রিয় সেই মহর্ষি ঊর্দ্ধরেতা ঋষিদের রীতি অনুসরণ করতেন। মন্দপাল ঋষি তপস্যার প্রান্তদেশ পার হয়ে দেহত্যাগ করলেন। তিনি মৃত্যুর পরে পিতৃলোকে গমনকরেও তপস্যার ফললাভ করলেন না। তাঁর তপস্যালব্ধ পিতৃলোকে বসবাস বিফল হল। মহর্ষি, ধর্মরাজের সমীপস্থ দেবতাদের প্রশ্ন করলেন, মন্দপালের জন্যে তপস্যা-অর্জিত পিতৃলোকের দ্বার রুদ্ধ হয়েছে কেন? মহর্ষি এর জন্যে কি না করেছেন? আর সেই কর্মফল এমন হল? মর্ত্যলোকে তিনি সেই কাজ করবেন যার দরুণ তাঁর জন্যে এই দ্বার অবরুদ্ধ হয়েছে। হে দেবগণ এই তপস্যার ফল কী? বলুন। ফলমেতস্য তপসঃ কথয়ধ্বং দিবৌকসঃ!।
দেবগণ জানালেন, মহর্ষি মন্দপালের ঋণ পরিশোধ যে এখনও বাকি। জন্মমাত্রই মানুষ তিনটি ঋণে আবদ্ধ হয়। ক্রিয়া, ব্রহ্মচর্য্য ও প্রজা বা সন্তান,এই তিনটি ঋণ। দেবতাদের কাছে যজ্ঞক্রিয়াত্মক ঋণ, ঋষিদের কাছে ব্রহ্মচর্যাত্মক ঋণ, পিতৃপুরুষের ঋণ হল সন্তানোৎপাদনজনিত ঋণ। তিনটির মাধ্যমে মানুষ ঋণ পরিশোধ করে থাকে। দেবতারা জানালেন, মহর্ষি মন্দপাল, যজ্ঞ করে দেবঋণ, তপস্যা দ্বারা ঋষিঋণ পরিশোধ করেছেন কিন্তু তিনি পিতৃপুরুষের ঋণ পরিশোধ করেননি। কারণ তাঁর কোন সন্তান নেই। তদপাক্রিয়তে সর্ব্বং যজ্ঞেন তপসা সুতৈঃ। তপস্বী যজ্ঞকৃচ্চাসি ন চ তে বিদ্যতে প্রজাঃ।। তাই তাঁর জন্যে পিতৃলোকের দ্বার অবরুদ্ধ হয়েছে। তাই মহর্ষির প্রতি দেবতাদের উপদেশ, প্রজায়স্ব ততো লোকানুপভোক্ষ্যসি পুষ্কলান্।
অতএব সন্তানের পিতৃত্ব লাভ করুন এবং পিতৃলোকবাসের প্রভূত সুখ অনুভব করুন। কারণ পুন্নাম্নো নরকাৎ পুত্রস্ত্রায়তে পিতরং শ্রুতিঃ। তস্মাদপত্যসন্তানে যতস্ব ব্রহ্মসত্তম।। বেদবিহিত শ্রুতি হল, পুৎ নামের নরক থেকে উদ্ধার করে পুত্র। তাই অপত্য অর্থাৎ সন্তান উৎপাদন বিষয়ে যত্নশীল হন। মহর্ষি দ্রুত অনেকসন্তানের পিতৃত্বলাভের উপায়সম্বন্ধে বহু চিন্তা করলেন। বহু চিন্তা করে, বহু সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম, পাখিদের কাছে গেলেন।সেখানে পুরুষ অঞ্জনপাখি হয়ে জরিতা নামে এক পক্ষিণীর সঙ্গে মিলিত হলেন। জয়িতার গর্ভে বেদবিদ চার সন্তানের জন্ম হল। এর পরে, ডিমের ভিতরে স্থিত পুত্রসহ, জরিতাকে পরিত্যাগ করে মহর্ষি চললেন লপিতা নামে আর এক পক্ষিণীর কাছে। সন্তানস্নেহে আপ্লুত জরিতা বহু চিন্তা করে স্থির করলেন, তিনি সন্তানদের পরিত্যাগ করতে পারবেন না বরং খাণ্ডববনে নিজের জীবিকালব্ধ সংগৃহীত খুদকুঁড়ো যা কিছু, তাই দিয়েই সন্তান প্রতিপালন করবেন।পুত্রদের দুর্ভাগ্যের কারণে শোকার্তা, স্নেহাপ্লুতা জননী, সেই মতো সন্তান পরিপালন করতে লাগলেন। ন জহৌ পুত্রশোকার্তা জয়িতা খাণ্ডবে সুতান্। বভার চৈতান্ সঞ্জাতান্ স্ববৃত্ত্যা স্নেহবিক্লবা।। মহর্ষি মন্দপাল, লপিতার সঙ্গে অবস্থানকালীন দেখলেন, অগ্নি খাণ্ডববনদহনে অগ্রসর হয়েছেন।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯৮: মা সারদার জন্মতিথিতে তাঁর অপূর্ব অমানবীয় রূপ ফুটে উঠল

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১০০: নীল কটকটিয়া
মহর্ষি মন্দপাল, অগ্নির বিধ্বংসী সঙ্কল্পবিষয়ে অবগত হয়ে, বালক পুত্রদের অসহায় অবস্থার কথা চিন্তা করলেন। ভীত মহর্ষি, লোকপাল মহাতেজস্বী অগ্নির স্তব শুরু করলেন। মহর্ষি অগ্নির বন্দনা করলেন, অগ্নি, সকল লোকের মুখ। অগ্নি, যজ্ঞীয় হবি বহন করেন। তাই তিনি ‘হব্যবাট্।’ হে অগ্নি, তুমি সকল প্রাণীর হৃদয়ে প্রচ্ছন্নভাবে বিচরণ কর। কবি অর্থাৎ ক্রান্তদর্শীদের অনুভবে তুমি একাধারে এক আবার ত্রিবিধও। ত্বমন্তঃ সর্ব্বভূতানাং গূঢ়শ্চরসি পাবক!। ত্বামেকমাহুঃ কবয়স্ত্বামাহুস্ত্রিবিধং পুনঃ।। অগ্নির আটটি প্রকারভেদ কল্পনা করে মহর্ষিগণ, অগ্নিকে, যজ্ঞসম্পাদক বলে মনে করেন। এই বিশ্ব তোমার সৃষ্টি—মহর্ষিরা এমনটাই বলে থাকেন। ত্ত্বয়া বিশ্বমিদং সৃষ্টং বদন্তি পরমর্ষয়ঃ।। অগ্নির অভাবে সমস্ত জগৎ মুহূর্তে বিনষ্ট হবে। ব্রাহ্মণরা অগ্নিকে প্রণতি নিবেদন করে নিজেদের কর্মানুসারে স্ত্রী-পুত্রের সঙ্গে চিরন্তন স্বর্গাদিগতি লাভ করেন।হে অগ্নি,তোমায়,আকাশে সবিদ্যুৎ,জলদ মেঘ বলা হয়। ত্বামগ্নে!জলদানাহুঃ খে বিষক্তান্ সবিদ্যুতঃ। অগ্নি থেকে নির্গত জ্বালা, সকল প্রাণীদের দগ্ধ করে। মহর্ষি মন্দপালের বর্ণনায়—হে পরম দ্যুতিময় অগ্নি,তুমি এই বিশ্বের স্রষ্টা। জাতবেদস্ত্বয়ৈবেদং বিশ্বং সৃষ্টং মহাদ্যুতে!। বিশ্বচরাচর তোমার সৃষ্টি, প্রথমে জল, তাঁর পরে এই সমগ্র জগৎ। দেবতাদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ঘৃত প্রভৃতি হব্য পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে নিবেদিত অন্ন প্রভৃতি যথাস্থানে পৌঁছে দেন অগ্নি। অগ্নিই বহ্নি, তিনি ভোক্তা, ফলদাতাও তিনিই তাই তিনি বৃহস্পতি। অগ্নি একাধারে অশ্বিনীকুমারদ্বয়, যম, মিত্র, চন্দ্র ও বায়ু। মহর্ষি মন্দপালের এমন স্তুতিতে অগ্নিদেব সেই অসীম তেজস্বী মহর্ষির প্রতি সন্তুষ্টচিত্তে বললেন, কিমিষ্টং করবাণি তে আপনার কোন প্রার্থিত কাজ করব? হব্য বাহন যাঁর সেই অগ্নিদেবকে মহর্ষি বললেন, খাণ্ডববনদহনের সময়ে আমার পুত্রদের রেহাই দিন। প্রদহন্ খাণ্ডবং দাবং মম পুত্রান্ বিসর্জয়। অগ্নিদেব প্রতিশ্রুতি দিলেন, তথেতি। এই বলে, প্রাণীদের দহনে ইচ্ছুক, অগ্নি, সেই সময়ে খাণ্ডববনে জ্বলে উঠলেন।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১৬: শান্তিনিকেতনে কবির প্রথম জন্মোৎসব

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫৭: আলাস্কায় এমন অপরূপ দৃশ্যও দেখা যায়, যেখানে পাহাড়-সমুদ্র-হিমবাহ একসঙ্গে বিরাজমান
যুদ্ধ ভুলিয়ে দেয় আত্মিক মানবিক সম্পর্ক। যুদ্ধে,বাবা ও ছেলে যখন পরস্পরের প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠেন তখন তাঁদের কাছে হত্যা, মৃত্যু শব্দগুলি পরম পরিচিত হয়ে ওঠে। সেগুলিই তখন শেষ এবং চরম সমাধান হয়, শেষ পর্যন্ত আর কোন বিকল্প থাকে না। অর্জুন ও ইন্দ্রের যুদ্ধ এমনি এক হৃদয়বিদারক বাবা ও ছেলের যুদ্ধ। বাস্তবে এই উদাহরণটি বোধ হয় যুদ্ধের অমানবিক রূপ ফুটিয়ে তোলার একটি সার্থক উদাহরণ। যুদ্ধ—ক্ষমতাশীল দুই পক্ষের নিজেদের সামর্থ্য প্রদর্শনের জায়গা। ভুক্তভোগী, সমস্ত প্রাণীকুল। তৃতীয় শক্তির হস্তক্ষেপে এক পক্ষ সংযত হয়। রণে ভঙ্গ দিলেন দেবরাজ ইন্দ্র। খাণ্ডববনে, প্রাণী হত্যার বিবরণ আধুনিক যুগে,যে কোন নৃশংস হত্যালীলার নির্মমতা থেকে কম নয়। আর্ত প্রাণীদের বাঁচার আকুতি, তাঁদের তীব্র আর্তনাদ যেন মনুষ্যত্বের অবক্ষয়ের প্রতি গভীর ধিক্কার। এক প্রবল শক্তির প্রতি অঙ্গীকার বদ্ধ দুই শক্তিমানের প্রতিশ্রুতি রক্ষার বিধ্বংসী প্রয়াসে, রক্ত, মাংস, গলিত চর্বি পানে পরিতৃপ্ত হলেন অগ্নিদেব। এই পরিতৃপ্তি যুদ্ধজয়ের উন্মাদনায় মাতোয়ারা দুই বীরের মনে কী শান্তি এনেছিল? না অগ্নির বিভৎস দহনজ্বালায় জ্বলেছিল তাঁদের অন্তর্লোক? শত শত প্রাণের বিনিময়ে প্রাপ্য প্রতিশ্রুতিরক্ষার আনন্দ কী বেদনাবোধকে ছাপিয়ে উঠতে পারে? প্রত্যেক প্রাণ অমূল্য, মানুষ কিংবা প্রাণীর। তাই হয়তো খাণ্ডবদহনের নায়ক, দুই বীর, কৃষ্ণ ও অর্জুন সমালোচনার ঊর্দ্ধে নন।
অগ্নির লেলিহান গ্রাস হতে রক্ষা পেল, শার্ঙ্গকপক্ষী অর্থাৎ অঞ্জনপক্ষীশাবকরা। কেন? সেই সূত্র ধরে মহর্ষি মন্দপালের কাহিনির অবতারণা। মহর্ষির পিতৃলোকে প্রবেশের অবরুদ্ধ দ্বার উন্মোচনের চাবিকাঠি সেই পুত্রসন্তান। এই পুৎ নামক নরক থেকে অব্যাহতি পাওয়ার লক্ষ্য সেই পুত্র। এই পরম্পরাগত চিন্তা বৈদিক মনীষা থেকে আধুনিক যুগেও অব্যাহতগতিতে ভারতীয় মননে রাজত্ব করছে।কবে এর থেকে মুক্ত হবে আমরা? প্রকৃত শিক্ষার উদ্ভাস যখন ভাসিয়ে নিয়ে যাবে যুগান্তরের গোঁড়া চিন্তা, গোঁড়া পিতৃতান্ত্রিকতার বুনিয়াদের চিড় ধরবে তখন। আপামর ভারতবাসী তখন হয়তো এই ‘Obsession’-এর আগল ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসতে পারবেন। মন্দপাল ঋষির প্রতি দেবতাদের সদুপদেশে সেই পুরুষতন্ত্রের প্রাধান্য। সন্তানোৎপাদন শুধু পুরুষ সন্তান উৎপাদনে সীমাবদ্ধ, যদিও অনেকক্ষেত্রেই এই পৃথিবীতে মানুষের সৃষ্ট নরক থেকে উদ্ধারের মাধ্যম হয় কন্যাসন্তান।
অগ্নির লেলিহান গ্রাস হতে রক্ষা পেল, শার্ঙ্গকপক্ষী অর্থাৎ অঞ্জনপক্ষীশাবকরা। কেন? সেই সূত্র ধরে মহর্ষি মন্দপালের কাহিনির অবতারণা। মহর্ষির পিতৃলোকে প্রবেশের অবরুদ্ধ দ্বার উন্মোচনের চাবিকাঠি সেই পুত্রসন্তান। এই পুৎ নামক নরক থেকে অব্যাহতি পাওয়ার লক্ষ্য সেই পুত্র। এই পরম্পরাগত চিন্তা বৈদিক মনীষা থেকে আধুনিক যুগেও অব্যাহতগতিতে ভারতীয় মননে রাজত্ব করছে।কবে এর থেকে মুক্ত হবে আমরা? প্রকৃত শিক্ষার উদ্ভাস যখন ভাসিয়ে নিয়ে যাবে যুগান্তরের গোঁড়া চিন্তা, গোঁড়া পিতৃতান্ত্রিকতার বুনিয়াদের চিড় ধরবে তখন। আপামর ভারতবাসী তখন হয়তো এই ‘Obsession’-এর আগল ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসতে পারবেন। মন্দপাল ঋষির প্রতি দেবতাদের সদুপদেশে সেই পুরুষতন্ত্রের প্রাধান্য। সন্তানোৎপাদন শুধু পুরুষ সন্তান উৎপাদনে সীমাবদ্ধ, যদিও অনেকক্ষেত্রেই এই পৃথিবীতে মানুষের সৃষ্ট নরক থেকে উদ্ধারের মাধ্যম হয় কন্যাসন্তান।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭৯: সময় বুঝে প্রত্যাঘাতের জন্য রাজনীতিতে অনেক সময় পিছিয়েও দাঁড়াতে হয়

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১১৫: গেমপ্ল্যান
মহর্ষি মন্দপাল সেই পুরুষতন্ত্রের একজন প্রতিনিধি মাত্র। তাই চটজলদি প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী মহর্ষি, পুরুষ সন্তানের পিতৃত্বের আশায় পক্ষিণী জরিতার শরণাপন্ন হয়েছেন। কিন্তু উদ্দেশ্য সিদ্ধ হওয়ামাত্র অন্য এক পক্ষিণী লপিতার সঙ্গে রমণে মত্ত হয়েছেন। সন্তানের জীবনে পিতার গুরুত্ব থাকলেও তাদের ভরণপোষণ এবং সার্বিক পরিণতির ক্ষেত্রে মাতৃঋণ অপার। মাতৃঋণ পরিশোধ কী পিতৃলোকের রুদ্ধদ্বার মুক্ত করবার চাবি হতে পারে না? বেদ এবং বেদবিহিত শাস্ত্রগুলিও এ বিষয়ে নীরব। পিতৃপরিত্যক্ত পুত্রদের পরিত্রাতার ভূমিকায় রইলেন মা জরিতা। খাণ্ডববনে অগ্নির আগ্রাসী দহন থেকে সন্তানদের রক্ষায় পিতা মন্দপালের অগ্নিস্তুতিটি সন্তানদের প্রতি দায়বদ্ধতাপালনের একটি প্রচেষ্টা কিংবা হয়তো পুত্রহীন হলে পিতৃলোকের প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত হবে না, এই স্বার্থচিন্তা মহর্ষিকে প্রভাবিত করেছিল কি না,তা জানা নেই।
খাণ্ডববনদহনে অগ্নির আগ্রাসী বিধ্বংসী রূপ দেখেছি। কিন্তু অগ্নির শুভান্বিত, প্রাত্যহিক জীবনের জীবনদায়ী রূপটি অধরা ছিল। মহর্ষি মন্দপাল তাঁর কৃত অগ্নিস্তুতিতে, অগ্নিদেবের সদর্থক রূপটি তুলে ধরলেন। অগ্নি সকল লোকের মুখ। ক্ষিতি, অপ্, তেজ, মরুৎ, ব্যোম এই পঞ্চভৌতিক শরীরের অন্যতম উপাদান তেজ অগ্নিরই একটি রূপ। প্রাণিশরীরের অন্তর্নিহিত তেজ তাদের প্রাণরসে জারিত করে। বেদে আছে, অগ্নির্বৈ দেবানাং মুখম্ অগ্নি দেবতাদের মুখ। দেবতাদের ক্ষেত্রে যজ্ঞীয় আহুতি গ্রহণের মাধ্যম, অগ্নি। প্রাণীদের জীবরূপে ভোগের মাধ্যম, শরীরের অন্যতম অঙ্গ মুখ। প্রাণরস মুখের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত প্রাণসত্তায়। ক্রান্তদর্শীরা দূরদর্শী, তাই তাঁদের কল্পনায়, অগ্নি জীবসত্তায় প্রচ্ছন্ন পরমাত্মা, তাই তিনি অন্তর্লোকে গূঢ়চারী, সকলের অগোচরে তার অবস্থান। অগ্নির ত্রিবিধ রূপ, দিব্য, ভৌম ও ঔদর্য্য। দিব্য রূপ অনাবিষ্কৃত যে রূপ, রূপের মাঝে লুক্কায়িত যে অরূপ।পাক প্রভৃতির নিষ্পাদক অগ্নির ভৌমরূপ।উদরের জঠরানলে আছে অগ্নির ঔদর্য্য রূপ, যাকে অস্বীকার করবার সাধ্য কোনও প্রাণীর নেই। মহর্ষি গণ অগ্নির আট প্রকার রূপ, কল্পনা করেছেন। পঞ্চভৌতিক রূপ, সূর্য ও চন্দ্র এবং যজ্ঞের বাহক রূপ। বিশ্বসৃষ্টির আদিতে প্রলয়াগ্নিতে ছিল সৃষ্টির প্রারম্ভিক রূপ, সেই বহ্নি জঠরানলে জ্বলে উঠে যখন, তার দাহিকাশক্তি তখন ভোজ্য পরিপাকের মাধ্যম হয়ে প্রাণশক্তি যোগায়। অগ্নি বিনা জগতের প্রাণশক্তিকে চালিত করবে কে? তাই মহর্ষির অনুভব—ত্বদৃতে হি জগৎ কৃৎস্নং সদ্যো নশ্যেদ্ধুতাশন। তোমা বিনা যে সমস্ত জগতের বিনাশ, নিশ্চিত। এই অনুভব যেন জীবাত্মার আকুল আর্তি। বিশ্বচরাচরের প্রাণশক্তির প্রাণনা ও প্রেরণা, স্বয়ং অগ্নি। কর্মশক্তির আধার অগ্নি। আকাশের মেঘের বিদ্যুতের চকিত চমকে তাঁর অবস্থান ক্ষণিক হলেও তখন জীবনদায়ী জলের ভূমিকায় তাঁর অবস্থান। একসঙ্গে সৃষ্টি ও ধ্বংস উভয় অগ্নিতেই নিহিত। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির মূলে রয়েছেন প্রলয়ঙ্কর অগ্নির বহ্নিজ্বালা। চর এবং অচর অর্থাৎ স্থাবর ও জঙ্গম সবকিছুই অগ্নি সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টিসুখের উল্লাসে।
খাণ্ডববনদহনে অগ্নির আগ্রাসী বিধ্বংসী রূপ দেখেছি। কিন্তু অগ্নির শুভান্বিত, প্রাত্যহিক জীবনের জীবনদায়ী রূপটি অধরা ছিল। মহর্ষি মন্দপাল তাঁর কৃত অগ্নিস্তুতিতে, অগ্নিদেবের সদর্থক রূপটি তুলে ধরলেন। অগ্নি সকল লোকের মুখ। ক্ষিতি, অপ্, তেজ, মরুৎ, ব্যোম এই পঞ্চভৌতিক শরীরের অন্যতম উপাদান তেজ অগ্নিরই একটি রূপ। প্রাণিশরীরের অন্তর্নিহিত তেজ তাদের প্রাণরসে জারিত করে। বেদে আছে, অগ্নির্বৈ দেবানাং মুখম্ অগ্নি দেবতাদের মুখ। দেবতাদের ক্ষেত্রে যজ্ঞীয় আহুতি গ্রহণের মাধ্যম, অগ্নি। প্রাণীদের জীবরূপে ভোগের মাধ্যম, শরীরের অন্যতম অঙ্গ মুখ। প্রাণরস মুখের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত প্রাণসত্তায়। ক্রান্তদর্শীরা দূরদর্শী, তাই তাঁদের কল্পনায়, অগ্নি জীবসত্তায় প্রচ্ছন্ন পরমাত্মা, তাই তিনি অন্তর্লোকে গূঢ়চারী, সকলের অগোচরে তার অবস্থান। অগ্নির ত্রিবিধ রূপ, দিব্য, ভৌম ও ঔদর্য্য। দিব্য রূপ অনাবিষ্কৃত যে রূপ, রূপের মাঝে লুক্কায়িত যে অরূপ।পাক প্রভৃতির নিষ্পাদক অগ্নির ভৌমরূপ।উদরের জঠরানলে আছে অগ্নির ঔদর্য্য রূপ, যাকে অস্বীকার করবার সাধ্য কোনও প্রাণীর নেই। মহর্ষি গণ অগ্নির আট প্রকার রূপ, কল্পনা করেছেন। পঞ্চভৌতিক রূপ, সূর্য ও চন্দ্র এবং যজ্ঞের বাহক রূপ। বিশ্বসৃষ্টির আদিতে প্রলয়াগ্নিতে ছিল সৃষ্টির প্রারম্ভিক রূপ, সেই বহ্নি জঠরানলে জ্বলে উঠে যখন, তার দাহিকাশক্তি তখন ভোজ্য পরিপাকের মাধ্যম হয়ে প্রাণশক্তি যোগায়। অগ্নি বিনা জগতের প্রাণশক্তিকে চালিত করবে কে? তাই মহর্ষির অনুভব—ত্বদৃতে হি জগৎ কৃৎস্নং সদ্যো নশ্যেদ্ধুতাশন। তোমা বিনা যে সমস্ত জগতের বিনাশ, নিশ্চিত। এই অনুভব যেন জীবাত্মার আকুল আর্তি। বিশ্বচরাচরের প্রাণশক্তির প্রাণনা ও প্রেরণা, স্বয়ং অগ্নি। কর্মশক্তির আধার অগ্নি। আকাশের মেঘের বিদ্যুতের চকিত চমকে তাঁর অবস্থান ক্ষণিক হলেও তখন জীবনদায়ী জলের ভূমিকায় তাঁর অবস্থান। একসঙ্গে সৃষ্টি ও ধ্বংস উভয় অগ্নিতেই নিহিত। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির মূলে রয়েছেন প্রলয়ঙ্কর অগ্নির বহ্নিজ্বালা। চর এবং অচর অর্থাৎ স্থাবর ও জঙ্গম সবকিছুই অগ্নি সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টিসুখের উল্লাসে।

ছবি : প্রতীকী। সংগৃহীত।
বেদে রয়েছে, অগ্নেরাপঃ ইত্যাদি শ্রুতি। মহর্ষি অগ্নির প্রতি শ্রদ্ধায় আনত হয়ে ঘোষণা করেন, অগ্নিই জলের পূর্ববর্তী স্রষ্টা, অগ্নিতেই নিহিত সর্ব জগৎ। ত্বয্যাপো বিহিতাঃ পূর্ব্বং ত্বয়ি সর্ব্বামিদং জগৎ।
মহর্ষি মন্দপালের স্তুতিটিতে অগ্নির সদর্থক দিকটি প্রকট হয়েছে। খাণ্ডববনে অগ্নির জঠরাগ্নির দহনে জ্বলে উঠেছে প্রাণিকুল। অগ্নির এই প্রলয়ঙ্কর রূপটিই শেষ কথা নয়, ধ্বংসের আড়ালে রয়েছে তাঁর কল্যাণময় শুভ রূপটি। অগ্নি শাশ্বত চিরন্তন প্রাণশক্তি, জীবাত্মায় প্রচ্ছন্ন রয়েছে তাঁর প্রাণচৈতন্যস্বরূপ। জীবের জঠরাগ্নিতে রয়েছে প্রাণরসায়নের গূঢ় কার্যকারিতা। অগ্নি প্রাণশক্তির কেন্দ্রবিন্দু,আবার অগ্নির জঠরের লেলিহান শিখা মুছে দিতে পারে প্রাণের অস্তিত্ব। তাই অগ্নির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখাই সমীচীন। অগ্নি প্রাণসত্তায় মিলেমিশে একাকার হয়েও, সুদূরবর্তী প্রচ্ছন্ন গূঢ় এক শক্তি যিনি ব্যবহৃত হন মর্যাদা, সমীহবোধ ও সম্মানের সঙ্গে।অদ্যাবধি এই শক্তি সম্পূর্ণ ধরা দেয়নি, অগ্নির সেই অধরা মাধুরী ছড়িয়ে আছে বিশ্বচরাচরে।—চলবে।
মহর্ষি মন্দপালের স্তুতিটিতে অগ্নির সদর্থক দিকটি প্রকট হয়েছে। খাণ্ডববনে অগ্নির জঠরাগ্নির দহনে জ্বলে উঠেছে প্রাণিকুল। অগ্নির এই প্রলয়ঙ্কর রূপটিই শেষ কথা নয়, ধ্বংসের আড়ালে রয়েছে তাঁর কল্যাণময় শুভ রূপটি। অগ্নি শাশ্বত চিরন্তন প্রাণশক্তি, জীবাত্মায় প্রচ্ছন্ন রয়েছে তাঁর প্রাণচৈতন্যস্বরূপ। জীবের জঠরাগ্নিতে রয়েছে প্রাণরসায়নের গূঢ় কার্যকারিতা। অগ্নি প্রাণশক্তির কেন্দ্রবিন্দু,আবার অগ্নির জঠরের লেলিহান শিখা মুছে দিতে পারে প্রাণের অস্তিত্ব। তাই অগ্নির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখাই সমীচীন। অগ্নি প্রাণসত্তায় মিলেমিশে একাকার হয়েও, সুদূরবর্তী প্রচ্ছন্ন গূঢ় এক শক্তি যিনি ব্যবহৃত হন মর্যাদা, সমীহবোধ ও সম্মানের সঙ্গে।অদ্যাবধি এই শক্তি সম্পূর্ণ ধরা দেয়নি, অগ্নির সেই অধরা মাধুরী ছড়িয়ে আছে বিশ্বচরাচরে।—চলবে।
* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।