
রজতের এমন দূর্ভাগ্য সে স্যারের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে গেল, তবে তাঁর শ্রাদ্ধের দিন। সেদিনের সেই অসুস্থ ছাত্রী তার মাকে নিয়ে এসেছিল। অনেক ছাত্রছাত্রী তাদের অভিভাবকের মতো সকলের চোখই ভিজে। অমৃতলালের মৃত্যু অপঘাত না স্বাভাবিক সে নিয়ে ব্রাহ্মনেরা বিস্তর আলোচনা করলেন। দুলাল জানাল, ১২ দিন পর সে তার বাবার স্বাভাবিক পারিলৌকিক ক্রিয়াকর্ম করবে কারণ মৃত্যু হাসপাতালে হয়েছে, অপঘাতস্থলে নয়। তবে তেমনটা হলেও অবশ্য দুলাল এটাই করতো।
খুব স্বাভাবিক ভাবে দুলালের মাস্টার্স করা হল না এবং এই রজতের ক্রমাগত সক্রিয় তদ্বিরের ফলে টাইমঅফিসে ক্লার্ক হিসেবে দুলাল সেনের চাকরি হল। তবে ঘটনাটা এতটাও সহজে হয়নি, প্রথমে দুলালের মনে হল সে কি করবে? অমৃতস্যারের এতও ছাত্রছাত্রী, সকলে একসঙ্গে বিপদে পড়ে গিয়েছে। দুলাল প্রথমে খানিকটা পড়ানোর চেষ্টা করল। কিন্তু তার বাবা অমৃতস্যার যেভাবে অংক এবং ইংরেজিতে অক্লেশে ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজন মেটাতে পারতেন, দুলালের পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। দুলাল লেখাপড়া করেছে, মোটামুটি ঠিকঠাক নম্বর পেয়েই বিকম পর্যন্ত পাস করেছে। কিন্তু পড়ানো একটা অন্য দক্ষতা আর সে কোনও ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ নিয়ে মিথ্যাচার করতে পারবে না।
আরও পড়ুন:

উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা, পর্ব-৮: আকাশ এখনও মেঘলা

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৯: উদ্বোধনের ঠাকুরঘরে মা সারদার সঙ্গে স্বামী অরূপানন্দের কথোপকথন
বাবার কাছে যে ন্যায়-নীতি মূল্যবোধের কথা সে শিখেছে, তার থেকেই সরাসরি গিয়ে বাড়িতে বাড়িতে জানিয়ে এল যে অমৃতলাল সেনের বিকল্প তার ছেলে দুলাল সেন নয়। সুতরাং তারা যেন উপযুক্ত প্রাইভেট টিউটর খোঁজেন এবং ছেলেমেয়েদের পড়ানোর সঠিক ব্যবস্থা করেন। ক্রমাগত চাকরির চেষ্টা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল দুলাল। এরই মাঝে অমৃতলালের সেই পুরনো ছাত্র এক ছুটির দিন বাড়িতে এলো খোঁজখবর নিতে দুলাল নিজে থেকে কিছু বলেনি। তখন সে বাড়িতেও ছিল না। দুলালের মা অমৃতলাল সেনের বিধবা স্ত্রী ছেলেটিকে অভাব অনটনের কথা সবকিছু খুলে বললেন। রজত অফিসে নয় একেবারে সরাসরি মালিকের সঙ্গে কথা বলল। মালিকের কাছে জুট টেকনোলজি পাস করা রজতের যথেষ্ট গুরুত্ব ছিল। তিনি রাজি হলেন দুলাল সেনের চাকরি হয়ে গেল।
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫০: রোজই দেখি আলাস্কা পর্বতশৃঙ্গের বাঁ দিকের চূড়া থেকে সূর্য উঠতে

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৬: নীল রাত্রি, নীল অন্ধকার
কথায় বলে ঈশ্বর কোনও কোনও যোগাযোগ কিছু কিছু কাজ করিয়ে দেবার জন্যে ঘটান। এর কিছুদিন বাদে ওয়েলেস্লি মিলের মালিকানা বদল হল। এক সময় পাটকলের যে রমরমা ছিল সেটা কমে আসতে শুরু করল। সরকারি বরাত কমছে, আগের মতো অর্ডার নেই। কিন্তু দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে। মালিকপক্ষ বেতন বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। এরকম একটা অবস্থায় মুনাফা কম হতে শুরু করলে বুদ্ধিমান মালিক সে জুটমিল হাতে রাখবেন না। ওয়েলেস্লি মিলের যন্ত্রপাতির আধুনিকীকরণ সেভাবে কিছু হয়নি!
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯২: দুর্গা টুনটুনি

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৮: দুর্গম গিরি কান্তার ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’
মালিকরা এই জুটমিলের পিছনে যে টাকা খরচ করেছিল সেটা অনেকদিন আগেই উঠে গিয়েছে। এখন জুট মিল চালাতে যা খরচা তার থেকে বেশি রোজগার করাটা প্রয়োজন। তবেই লাভ হবে! কিন্তু লাভের পরিমাণ কম? পুরনো জুটমিল ফলে মেনটেনেন্স খরচ বাড়ছে, যন্ত্রপাতি দিনে দিনে বেতো ঘোড়া হয়ে যাচ্ছে। তাই পুরনো মালিকেরা সুযোগ বুঝে মিল বেচে দিল। মালিকানা হস্তান্তরের খবর রজতের কাছে অনেকদিন আগে থেকেই ছিল। সে রিজাইন করল। খবরটা শুনে দুলাল অবাক হয়ে গেল।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৯: বেশি ঘুম শরীরের পক্ষে ভালো?

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৫: বনবাসে অর্জুনের অসংযত জীবন, আশ্রয়দাতার বিশ্বাসভঙ্গ কি অনুসরণযোগ্য আচরণ?
দুলালের চাকরির জন্য ব্যবস্থা করলেও ব্যবসার এই গূঢ় গোপন খবরটুকু রজত কিছুতেই কাউকে জানাতে পারেনি। মালিকপক্ষের বারণ ছিল। রজত তাদেরই অন্য একটি জুট মিলে জয়েন করছে এটাও অত্যন্ত গোপনীয় খবর। রজত চাইলেই দুলালকে অন্য আরেকটা চাকরি দিতে পারত না। দুলালের এমন কিছু শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই যার জোরে আবার সে মালিকপক্ষকে বলবে দুলালকে অন্যত্র কাজে নেবার জন্য। এটা কি বিশ্বাসঘাতকতা? রজত সেটা মনে করে না! —চলবে।
উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা, পরের পর্ব আগামী রবিবার ২৩ মার্চ, ২০২৫
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।