রবিবার ১৭ নভেম্বর, ২০২৪


অলঙ্করণ : সৌমি দাসমণ্ডল।

কয়েকদিন পর পিশাচপাহাড় রিসর্টের বোর্ডাররা সকলে রাতের খাবারের জন্য রিসর্টের ডাইনংয়ে হাজির হয়েছিলেন। রিসর্টের তরফ থেকে আজকের ডিনারের আয়োজন। এই ডিনারের জন্য বোর্ডারদের কোনও পে করতে হবে না। দু’-দুটি মৃত্যুর পর পিশাচপাহাড় রিসর্টের রেপুটেশনের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করার জন্যই কাপাডিয়া এই বিশেষ কমপ্লিমেন্টারি ডিনারের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি চেয়েছিলেন, সকলেই আসুন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সকলে আসেননি। তৃণা আসেনি, আর্যও আসেনি। তাঁদের খাবার রুমে রুমে দিয়ে আসা হয়েছে। বাকিরা সকলেই রয়েছেন।

আজকের আয়োজন এলাহি নয়, কিন্তু সিলেক্টেড। মিক্সড্‌ ফ্রায়েড রাইস, মাটন রেজালা, চিকেন-বটিকাবাব, ইতালিয়ান স্যালাড এবং ফ্রুট-কাস্টার্ড। এতে রিসর্টের নিজস্ব তহবিলে সামান্যই প্রভাব পড়বে। তার কারণ, বোর্ডারের সংখ্যা অনেক কম এখন। তাছাড়া এই খরচ কীভাবে তুলে নিতে হয় অন্য দিক দিয়ে, তা তাঁর মাথার মধ্যে আগে থেকেই আছে। এখন আগে দরকার রিসর্টের সুনামটা ফিরিয়ে আনা। আর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ঠিক করেছেন রিসর্ট ছেড়ে চলে যাবেন। বাকি জীবন স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে কাটাবেন। যা জমিয়েছেন তাতে কোনওরকমে তাঁর জীবন কেটে যাবে। কর্মচারীদের অনেককেই তিনি বলেছেন সে-কথা।

সকলেই জেনে গিয়েছে, রিসর্টের মালিক রায়বাবু আর এই বিজনেস চালাতে চান না। তবে সকলকেই সুযোগ দেওয়া হবে। যদি নতুন মালিক তাদের রাখতে চায়, তাহলে তারা থাকতেও পারে। আবার কেউ যদি চায় নিজের ইচ্ছায় ছেড়ে চলে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কিছু অতিরিক্ত অর্থ তাকে দেওয়া হবে। সবই অবশ্য ভাবনাচিন্তার স্তরে। এখনও এ-ব্যাপারে কিছু সুনির্দিষ্ট ভাবনাচিন্তা করা হয় নি কিংবা ফাইনাল ডিসিশনও নেওয়া হয়নি।
কাপাডিয়া ঘুরে-ঘুরে সব টেবিলেই যাচ্ছেন। এই ক’দিন যে কষ্ট স্বীকার করেছেন বোর্ডারেরা, তার জন্য অ্যাপোলজি চাইছেন হাত জড়ো করে। মুখে কৃত্রিম হাসি। বোর্ডাররা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসেছেন। একটা টেবিলে বসেছেন অঞ্জন-উন্মেষা। তারা খুব মৃদু গলায় নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। আজ তারা দু’জনেই কালো পোশাকে সেজেছে। উন্মেষাকে এমনিতেই দেখতে সুন্দর, আজ আরও মোহময়ী বলে মনে হচ্ছে। কাপাডিয়া বার-দুয়েক তাঁদের টেবিলে ঘুরে এসেছেন। অরণ্য অনেকটা দূরে বসে মোবাইল ঘাঁটছে, ফিসফিস করে কথাও বলছে আর মাঝেমধ্যে প্লেট থেকে খাবার তুলে খাচ্ছে, তার কানে ইয়ার-বাড। সে পরেছে বুক-খোলা ভি-নেকের টিশার্ট আর ফুলছাপ হাফপ্যান্ট। নিজের লুকস্‌ সম্পর্কে সে একটু বেশি মাত্রায় সচেতন। তবে আজ তৃণার না-আসায় সে-যে আদৌ খুব চিন্তিত বা মুড-অফ্‌ করে বসে আছে, তাকে দেখে তেমনটা মনে হচ্ছে না।

পূষণ আর রিমিতাও বসেছিল। গ্লাস-দেওয়া জানালার পাশের টেবিলে। ওদের পরনে ক্যাজুয়াল ড্রেস। ওরা হেসে-হেসে পরস্পর-পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছিল। যেদিন থেকে কাপাডিয়া জেনেছেন, রিমিতার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় লালবাজারের একজন শীর্ষকর্তা, সেদিন থেকে তিনি একটু বেশিই খাতির যত্ন করে থাকেন তাদের। খুব হ্যাপি কাপল্‌। বিয়ে করেনি এখনও, তবে খুব শীঘ্রই বিয়ে করবে এমনটি নিজের থেকেই জানিয়েছে তারা। প্রথম দিন আসবার পথের ঘটনায় যতটা আপসেট ছিল, এখন আর তাদের দেখে তা মনে হচ্ছিল না।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮১: শাক্যর চ্যালেঞ্জ

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৬২: শ্রীমার দক্ষিণ ভারত থেকে প্রত্যাবর্তন

পূষণ টেবিলের তলা দিয়ে রিমিতার উরুতে হাত বোলাচ্ছিল। রিমিতা প্রথমে আপত্তি করেছিল। এটা পাবলিক প্লেস। ডাইনিংয়ে অনেকেই আছেন। কেউ দেখে ফেললে লজ্জার ব্যাপার হবে। যদিও পূষণ তাকে বুঝিয়েছিল, প্রতিটা টেবিলেই যেহেতু লং টেবিলক্লথ পাতা, অতএব কারও দেখে ফেলার চান্স খুব কম। তাছাড়া প্রেমে একটু এইরকম হলে ভালো, নিষিদ্ধ যে-কোন ব্যাপার প্রেমকে জমিয়ে ক্ষীর বানিয়ে দেয়। রিমিতার এত ওজর-আপত্তি না-করলেই ভালো। আজ বিকেলেও সে এমনটাই করছিল প্রথমে।

ভবানীবাবু চলে যাওয়ার পর তারা দুজনেই ছিল একা। বিকেলের সেই শেষ আলোর মুখোমুখি হয়ে রিমিতাকে মনে হচ্ছিল স্বর্গ থেকে নেমে আসা কোনও দেবদূতী। পূষণ আবেগভরে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার খোলা কাঁধে মুখ ঢুবিয়ে দিয়েছিল। তার হাত দুটি খেলা করছিল রিমিতার স্তনযুগলের উপর। রিমিতা এক ঝটকায় নিজেকে সরিয়ে নিতে গিয়ে টাল সামলাতে না-পেরে জড়িয়ে ধরেছিল পূষণকে। বার বার সে পূষণের অবাধ্য ঠোঁট এবং হাতের কাজকে বাধা দিয়ে বলছিল, “অ্যাই এখানে না, এখানে না, কেউ দেখে ফেলবে! কী যে করো না তুমি!” কিন্তু পূষণ শুনছিলই না কোনও কথা। রিমিতার লং স্কার্ট আর স্লিভলেস টিজ্‌-এর ঘেরাটোপ সে খুলে ফেলতে চাইছিল। খুলেও ফেলেছিল একসময়।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬৪: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—গিরা শাক ও যদু পালং

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৬:কোনও একটি দাবিতে বিরোধীরা জোট বাঁধুক কখনও চায় না শাসক

“আউচ!” স্তনবৃন্তে পূষণের হালকা দাঁতে কাটার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল সে। ততক্ষণে পূষণের ঠোঁট তার গভীর নাভিপ্রদেশ এক্সপ্লোর করতে কাজে নেমে পড়েছে। শেষ বিকেলে বুনো সূর্যমুখীর গালিচায় দু’টি নগ্ন নারী-পুরুষ জীবনের সব আনন্দকে চেটেপুটে খাচ্ছিল, হৃদয়ের যত ভালো লাগার অনুভূতি উজাড় করে দিয়ে ভালোবাসছিল একে-অপরকে।

এখন সে-সব গল্পই মৃদুস্বরে করছে তারা ডাইনিংয়ের এক কোণে বসে। খাচ্ছে কম, গল্প করছে বেশি। কী-একটা কথায় সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষা ধার করে বলা যায় রিমিতা, “আকাশ উদ্ভাসিত করে হাসল!” পূষণ ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলল, “আজ রাতে আর-এজ রাউন্ড হয়ে যাক্!” শুনে এমন জোরে চিমটি কাটল রিমিতা যে পূষণ টেবিল-ম্যানার্সকে চুলোয় দিয়ে “উফ্‌” করে উঠতে বাধ্য হল। অনেকেই সেই শব্দে তাদের দিকে তাকাচ্ছিল।
কাপাডিয়াও আরও অনেকের মতো তাকিয়েছিলেন পূষণের অমন পাড়া-কাঁপানো শব্দ শুনে। এ বার এগিয়ে এলেন। “কিছু হয়েছে কি স্যার?”
পূষণ অপ্রস্তুত। “না না, কী আবার হবে? কিছু হয়নি। সম্ভবত একটা মশা… ওই আর কী!”
তাকে অপ্রস্তুত হতে দেখে রিমিতা বেশ মজা পেল।
“ওহ্‌ তাই বলুন,” কাপাডিয়া বললেন, “আমি একেবারে চমকে উঠেছিলাম। এ-সব অঞ্চলে এই বসন্তকালে নানা ধরণের পোকামাকড় বেরোয়, অন্যদিকে সাপখোপেরও শেষ নেই। পোকা কামড়ালে তা হয়ত সাময়িক জ্বর-জ্বালার কারণ হবে, কিন্তু সাপে কাটলে? আর দেখতে হবে না। ওইদিনই না শেষদিন হয়ে যায়! ও আপনি যতই চেষ্টা করুন, সাফিসিয়েন্ট অ্যান্টিভেনাম এখানে হসপিটালগুলিতে থাকে না। ফলে সাপেকাটা রোগীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ওই ব্রিটানিয়া বিস্কিটের মতো—ফিফটি-ফিফটি! আমার গিন্নি তো ওই ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে!”
তাঁর কথা শুনে মৃদু হাসল উপস্থিত সকলে।
পূষণ বলল, “আমরা তো এখানে এসে সাপখোপ-পোকামাকড়ের চেয়েও ভয়ঙ্কর কোন কালদেওর ভয়ে সিঁটিয়ে আছি। আপনার ওয়াইফ তাঁকে ভয় পান না?”

কাপাডিয়া মুখে অস্ফুট শব্দ করে বলে উঠলেন, “পায় না আবার? রোজ ফোনে বলেই যাচ্ছে, এ বার সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে তুমি বাড়ি এসে বসে থাকো। ইত্‌নে উম্‌র মে কাম কে বাস্তে জান দোগে ক্যা? আমি তাঁকে বোঝাই। কিন্তু ছাড়ব বললেই তো হুট করে ছেড়ে দেওয়া যায় না। কত রকমের যে ফ্যাসাদ উপস্থিত হয়!”
রিমিতা বলল, “তা যা বলেছেন। এই ফ্যাসাদের গেরোতেই তো আটকে গেলাম আমরা!”
কাপাডিয়া বললেন, “আপনি চাইলে তো আপনার রিলেটিভকে ফোন করে ছুটকারা পেয়ে যেতে পারেন ম্যাডাম। বাকিদের অবস্থা, এই আমাদের অবস্থা দেখুন!”
রিমিতা বিরক্ত হল, যেখানে সেখানে তার মামাকে নিয়ে কথাবার্তা হোক, সে চায় না। পূষণ সেটা জানে। সে বিব্রত বোধ করল। রিমিতার মুড এত স্যুইং করে, এই কথাতে তার মেজাজ খিঁচড়ে গেলে রাতের রোমান্স কেন, সব কিছুই বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে সে প্রতিবাদ না-করে পারল না। “আঃ! কাপাডিয়া সাহেব! রিমিতা পছন্দ করে না যে, কেউ তার ওই কানেকশন নিয়ে পাবলিক্যালি কথা বলুন! আর তাছাড়া ওর রিলেটিভ অন্য ধাতুতে গড়া। তা-না-হলে অনেক আগেই আমরা দুজন এখান থেকে চলে যেতে পারতাম!”

আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-৮: যেথা আমি যাই নাকো / তুমি প্রকাশিত থাকো

কাপাডিয়া কেমন অপ্রস্তুত হয়ে অ্যাপোলজি চাইলেন, “ক্ষমা করবেন ম্যাডাম। আমি অত কিছু ভেবে বলিনি!”
রিমিতা কিছু বলল না। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রইল।
পূষণ বলল, “ঠিক আছে। কিছুক্ষণ পরেই ম্যাডাম স্বাভাবিক হয়ে যাবেন। ও নিয়ে আপনি আর চিন্তা করবেন না। তা ভবানীবাবু এসেছিলেন, তাঁকে কিছু খাইয়েছেন-টাইয়েছেন তো?”
“ভবানীবাবু! উয়ো কৌন?”
“ওই যে কোথাকার কোন্‌ স্কুলের যেন টিচার। লোকাল নিউজপেপারে ফিচার লেখেন। দোহারা চেহারা! চেনেন না?”
“আখবারওয়ালা মাষ্টার? ওহ, সমঝ গ্যায়া, সমঝ গ্যায়া! কিন্তু তিনি তো আসেননি!”
“আসেননি আবার কী? আমাদের সঙ্গে দেখা হল। কথাও হল। বললেন, রিসর্টের ইনসিডেন্ট নিয়ে স্টোরি লিখবেন বলে তার জন্য আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। এদিকেই তো এলেন!”
“কখন বলুন তো ?”
“আমরা দুজনে বিকেলে একটু সামনের রাস্তায় ঘুরে আসি বলে বেরোলাম না? তখন। আপনাকে বলেই তো বেরিয়েছিলাম।”
“হ্যাঁ। আমার মনে আছে। কিন্তু কোই নেহি আয়া!”
রিমিতা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে থাকলেও দু’জনের কথোপকথন শুনছিল। সে আর থাকতে পারল না। কাপাডিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি কি মজা করছেন না-কি? জলজ্যান্ত একজন মানুষ এইদিকে আসবেন বললেন, আমরা দেখলুমও তিনি এসেছেন, আর এখন আপনি বলছেন কেউ আসেননি?”
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩৮: নন্দিতা কৃপালনি— বিশ শতকের বিদুষী

“সত্যিই কেউ আসেননি ম্যাডাম! আপনি খামোকা রাগ করছেন। আপনি বাকি লোকদের জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন। কেউ আসেননি। হয়তো আপনাদের বলেছিলেন আসবেন, কিন্তু পরে মত পরিবর্তন করেন। হয় না এমন?”
পূষণ মাথা নাড়ল। হয়। সে স্বীকার করল। কিন্তু এখানে হঠাৎ করে মত পাল্টানোর কারণ কী? আর যদি না-ই আসার থাকে, তাহলে মিথ্যে কথা কেন বললেন ভবানীবাবু? আসলে তবে এদিকে কোন্‌ উদ্দেশ্যে আসছিলেন? সে কাপডিয়াকে জিজ্ঞাসা করল “আচ্ছা, এই ভবানীবাবু মানে আপনার আখজবারোয়ালা মাষ্টার কোথায় থাকেন বলতে পারেন?”
“কেন বলুন তো ? কোয়ি কামধান্দা?” কাপাডিয়া অবাক গলায় জিজ্ঞাসা করলেন।
“আপনি হ্যাঁ বা না-তে উত্তর দিন। চেনেন না-কি চেনেন না?”
“আমি চিনি না। আর রিসর্টের কেউ চেনে বলেও আমি জানি না!” বলে কেমন অপরাধীর মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলেন।
পূষণ আপনমনে ফিসফিস করে বলল, “কিন্তু আমাকে চিনতেই হবে। ওনার সঙ্গে দেখা করে জানতে হবে, কেন আমাদের মিথ্যে বলেছিলেন! না-কি অন্য কোন ব্যাপার? না হলে খট্‌কাটা কিছুতেই যাবে না! জানতেই হবে!” —চলবে।
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel): পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।

Skip to content