(২)
এরকম অফিস দিয়া দেখেনি রিসেপশনের দেয়ালটা টপকালেই পুরো অফিসফ্লোর খোলামেলা। ছোট ছোট ওয়র্কষ্টেশন। একটাই কেবিন। সেটা সিইও-র। দরজা নেই। অফিসের চারদিকেই সিসি ক্যামেরা আর মনিটর লাগানো।
দিয়া ঘরে ঢোকার পর অতনু সেন একটাও কথা বলেননি। ডান হাত দেখিয়ে চেয়ারে বসতে বলেছেন বাঁ হাত বাড়িয়ে ফাইল চেয়েছেন।
“অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাঊণ্ড তো ভালো ছিল, ডিপ্লোমা না করে ক্যাট (CAT) দিয়ে ভালো কোনও ইন্সটিটিউট থেকে ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি করতে পারতেন!
“অনেকগুলো ‘ifs and but’ ছিল। আর আমার ইন্সটিটিউট খুব একটা খারাপ নয়।
“আমি তো খারাপ বলিনি, তবে ডিস্টেন্স লার্নিং কোর্স এক বছরের ডিপ্লোমা। AIU Recognition বা UGC approval নেই। Expected opportunity বা salary hike কোনওটাই পাবেন না!”
দিয়া ঘরে ঢোকার পর অতনু সেন একটাও কথা বলেননি। ডান হাত দেখিয়ে চেয়ারে বসতে বলেছেন বাঁ হাত বাড়িয়ে ফাইল চেয়েছেন।
“অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাঊণ্ড তো ভালো ছিল, ডিপ্লোমা না করে ক্যাট (CAT) দিয়ে ভালো কোনও ইন্সটিটিউট থেকে ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি করতে পারতেন!
“অনেকগুলো ‘ifs and but’ ছিল। আর আমার ইন্সটিটিউট খুব একটা খারাপ নয়।
“আমি তো খারাপ বলিনি, তবে ডিস্টেন্স লার্নিং কোর্স এক বছরের ডিপ্লোমা। AIU Recognition বা UGC approval নেই। Expected opportunity বা salary hike কোনওটাই পাবেন না!”
“স্যার আমি এখানে আসার আগে খুব ভালো করে আপনাদের ওয়েবসাইট এবং আপনাদের এক্স এমপ্লয়িদের ফিডব্যাক ফলো করেছি। নর্থ আমেরিকা এবং ইউরোপের SMB’s আই মিন স্মল টু মিডিয়াম সাইজ বিজনেস আপনাদের টার্গেট ক্লায়েন্ট আপনারা রিমোট আইটি সাপোর্ট আর হেল্প ডেস্ক সার্ভিসেস অফার করেন। তারমানে ২৪X৭ হেল্পডেস্ক সাপোর্ট দিতে হয়। অড আওয়ার্স ডিউটিস থাকতে পারে। সফটওয়্যার ট্রাবল শুটিং, নেটওয়র্ক ম্যানেজমেন্ট এসব তো আছেই। আপনাদের সফটওয়্যার ডেভেলপার, UI/UX ডিজাইনার, QA এঞ্জিনিয়ার আই মিন টেষ্টার লাগে। ফাইন্যান্স তো একটা স্পেসিফিক এরিয়া তার জন্য ডেডিকেটেড লোক লাগবে। তবে স্টার্টআপের ইনিসিয়াল স্টেজে তো ওভাবে জব সেগ্রিকেশন হয় না। রেস্পন্সিবিলিটি ওভারল্যাপ হয়। তাই বিটেক করার পর এইচ আর-ম্যানেজমেন্টে এক বছরের ডিপ্লোমাটা করেছি। আমি বেসিক্যালি সফটওয়্যারের কাজ করে দিচ্ছি কিন্তু…”
আরও পড়ুন:
উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা, পর্ব-১: আকাশ এখনও মেঘলা
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৯৮: কপোত-কপোতী
দিয়া একটানা কথা বলে যাওয়ার পর হঠাৎ খেয়াল করল যে এই ইন্টারভিউ নিতে নয় ইন্টারভিউ দিতে এসেছে। আর উল্টোদিকের লোকটি এতক্ষণ একটানা দিয়ার কথা শুনে যাচ্ছেন। আর স্ক্রিবল প্যাডের উপরে তাঁর দামি পেনটা আঙ্গুলের হালকা ছোঁয়ায় একবার ক্লক-ওয়াইস পরের বার অ্যান্টি ক্লকওয়েজ ডিরেকশন এ ঘোরাচ্ছেন।
দিয়া কথা থামানোর সঙ্গে সঙ্গে একজন বেয়ারা গোছের কফি কাপ দিয়ে গেল। সামনে বসা অতনু সেন আবার ডান হাত তুলে কফি নিতে অনুরোধ করলেন।
দিয়া কথা থামানোর সঙ্গে সঙ্গে একজন বেয়ারা গোছের কফি কাপ দিয়ে গেল। সামনে বসা অতনু সেন আবার ডান হাত তুলে কফি নিতে অনুরোধ করলেন।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৯৯: আলোকলতা তিলোত্তমারা যুগে যুগে পুরুষের উজ্জীবনী শক্তির আধার
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৪: সুন্দরবনের পাখি—বাঁশপাতি
“ভালো তৈরি হয়েছেন।”
” থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।”
” কিন্তু আনফরচুনেটলি আমরা কোন মেয়েদের রিক্রুট করি না।”
কফিতে চুমুক দেওয়া থামিয়ে দিয়া প্রশ্ন করে উঠল।
“এরকম কেন? ”
“সেরকম কোন ডেফিনিট উত্তর নেই। এটাই আমাদের পলিসি।”
“তাহলে আমাকে ক্যাবিনে ডাকলেন কেন, রিসেপশন থেকেই তো চলে যেতে বলতে পারতেন।”
“হয়তো পারতাম কিন্তু তাতে আপনার আরও বেশি খারাপ লাগতো।”
“এখনও তো খারাপ না লাগার মত কিছু বললেন না, এত কথার পর।”
“কথা যা বলার আপনিই বলেছেন, আমি শুনেছি।”
” থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।”
” কিন্তু আনফরচুনেটলি আমরা কোন মেয়েদের রিক্রুট করি না।”
কফিতে চুমুক দেওয়া থামিয়ে দিয়া প্রশ্ন করে উঠল।
“এরকম কেন? ”
“সেরকম কোন ডেফিনিট উত্তর নেই। এটাই আমাদের পলিসি।”
“তাহলে আমাকে ক্যাবিনে ডাকলেন কেন, রিসেপশন থেকেই তো চলে যেতে বলতে পারতেন।”
“হয়তো পারতাম কিন্তু তাতে আপনার আরও বেশি খারাপ লাগতো।”
“এখনও তো খারাপ না লাগার মত কিছু বললেন না, এত কথার পর।”
“কথা যা বলার আপনিই বলেছেন, আমি শুনেছি।”
আরও পড়ুন:
বল বীর, চির উন্নত মম শির!
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০৮: শিশুর মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলেছিলেন দ্বারকানাথ
বাকি কফিটা কাপেই ফেলে রেখে দিয়া উঠে দাঁড়াল। চেয়ার ঠেলে ঘরের বাইরে যাবার সময় গতিটা কমিয়ে দিল দিয়া কিন্তু অপরদিক থেকে কোন কথা আসছে না।ঠিক যখন দিয়ার মনে হল এবার একবার মুখটা ফিরিয়ে দেখি তখনই কথাটা শোনা গেল।
“চয়েস ইজ ইয়োরস। আপনার আপত্তি না থাকলে আমি আপনাকে একটা রেফারেন্স দিতে পারি!
“আপনি আমাকে রেফার করতে পারেন কিন্তু আপনার অর্গানাইজেশানে আমাকে কাজ করার সুযোগ দিতে পারেন না?”
উত্তর না দিয়ে অতনু সেন একটা কাগজে কারো নাম ঠিকানা লিখে টেবিলের কাচের ওপরে নিঃশব্দে এগিয়ে দিলেন। অতনু টেবিলে ফোন বাজে।
“ওকে! পাঠিয়ে দিন” —ফোন রেখে অতনু দিয়ার দিকে তাকায়। দিয়া বোঝে অতনু ব্যস্ত লোক কাগজটা হাতে নিয়ে ‘থ্যাঙ্ক ইয়ু’ বলে বেরিয়ে যায়।
“চয়েস ইজ ইয়োরস। আপনার আপত্তি না থাকলে আমি আপনাকে একটা রেফারেন্স দিতে পারি!
“আপনি আমাকে রেফার করতে পারেন কিন্তু আপনার অর্গানাইজেশানে আমাকে কাজ করার সুযোগ দিতে পারেন না?”
উত্তর না দিয়ে অতনু সেন একটা কাগজে কারো নাম ঠিকানা লিখে টেবিলের কাচের ওপরে নিঃশব্দে এগিয়ে দিলেন। অতনু টেবিলে ফোন বাজে।
“ওকে! পাঠিয়ে দিন” —ফোন রেখে অতনু দিয়ার দিকে তাকায়। দিয়া বোঝে অতনু ব্যস্ত লোক কাগজটা হাতে নিয়ে ‘থ্যাঙ্ক ইয়ু’ বলে বেরিয়ে যায়।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৯: হারিয়ে যাওয়ার ‘জীবন তৃষ্ণা’
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১২: ক্যাথরিন ম্যান্সফিল্ড ও মিডলটন মারে, এক ভালোবাসাহীন বিবাহ
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে দিয়ার মনে হল অতনুর মধ্যে কোনও একটা অদ্ভুত অস্থিরতা একটা অস্বাভাবিকতা আছে। লোকটা তাঁর স্মার্টনেস তাঁর শিক্ষাদীক্ষা দিয়ে সেই জায়গাটাকে ঢাকা দিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু অতনুর জীবনে সেই অস্থির বিন্দুটা ঠিক কোথায়? —চলবে।
উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা, পরের পর্ব আগামী রবিবার ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।