অযোধ্যা ত্যাগ করে আসার সময় রাম ছিলেন পঁচিশ বছরের পূর্ণ যুবা, আর সীতা নিজে ছিলেন অষ্টাদশী। জনকনন্দিনী বৈদেহী যুক্তিক্রম হারিয়ে ভুলে যান, অপরিচিতা নারীর দেহসৌন্দর্যের সকাম স্তুতি পরিব্রাজকের স্বভাব নয়।

অযোধ্যা ত্যাগ করে আসার সময় রাম ছিলেন পঁচিশ বছরের পূর্ণ যুবা, আর সীতা নিজে ছিলেন অষ্টাদশী। জনকনন্দিনী বৈদেহী যুক্তিক্রম হারিয়ে ভুলে যান, অপরিচিতা নারীর দেহসৌন্দর্যের সকাম স্তুতি পরিব্রাজকের স্বভাব নয়।
সোনার হরিণের মোহময় রূপ ভুলিয়েছিল সীতার মন। তার ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যে রাম একাই চললেন গভীর বনে। সঙ্গী তাঁর স্বর্ণভূষিত বিপুলকায় শরাসন, ধনু, তীক্ষ্ণ বাণ।
হিতাকাঙ্ক্ষী মারীচের এত কথা কিন্তু রাবণের কর্ণগোচর হল না। তার বহু চেষ্টা বিফলে গেল। সীতাহরণের বিষয়ে রাবণ নিজের সংকল্পে অবিচল থাকলেন। মারীচ নিজের আসন্ন মৃত্যুর চিন্তায় ডুব দিল এবারে।
রাতের অন্ধকারে যজ্ঞবেদীর চারপাশে মারীচ আর অন্যান্য রাক্ষসেরা যখন নিক্ষেপ করছে মাংসের টুকরো, রক্তে ভরে যাচ্ছে যজ্ঞবেদী, রামের হাতে জ্বলে উঠেছে তখন মানবাস্ত্র।
রামের সঙ্গে যুদ্ধে পরাস্ত, নিহত হল খর, দূষণ, ত্রিশিরা সহ জনস্থানবাসী চোদ্দ হাজার রাক্ষস। শূর্পণখা আশায় বুক বেঁধেছিল যে, খর-দূষণের পরাক্রমের কাছে পরাভূত হবে রাম। রামের উষ্ণ রক্ত সে পান করবে।
কৈকেয়ীপুত্র ভরত, জ্যেষ্ঠ রামচন্দ্রের প্রাপ্য অযোধ্যার সিংহাসনের উত্তরাধিকার ফিরিয়ে দিয়ে, তাঁকে অযোধ্যায় সঙ্গে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে, চিত্রকূট পর্বতে উপস্থিত হয়েছেন। রামের সঙ্গে সহাবস্থানরত লক্ষ্মণ, ভরতের উদ্দেশ্যে সম্বন্ধে সন্দিহান। তাঁর ঘোর সন্দেহ কল্পিত প্রতিদ্বন্দ্বী রামকে হত্যা করে তাঁর পথের কাঁটা দূর করতেই ভরতের আগমন। লক্ষ্মণও ভরতকে তিনি সমূলে নিহত করতে প্রস্তুত।
অর্জুন প্রবাদপ্রতিম বীর, তাঁর আচরণ হয়তো ক্ষত্রধর্মবিরোধী নয়,তবে উদাহরণটি হয়তো গ্রহণযোগ্য নয়। ভাগ্যের ফেরে দূর প্রবাসে, ভরতবংশীয়দের এই অসংযম, এই কামনার তারণা এখনও হয়তো প্রভাবিত করে। মানুষ জৈবপ্রবৃত্তির বশে নিঃসঙ্গ অবস্থায় অসংযমী হয়ে পড়ে। তবে এর বিপরীত উদাহরণ বিরল নয়। অর্জুনের দ্বারকাবাসীদের প্রতি বিশ্বাসভঙ্গ হয়তো তার থেকেও সমালোচনার যোগ্য আচরণ। এমন উদাহরণ হয়তো অনুসরণীয় নয়।
রাম, চিত্রকূটে দীর্ঘদিন বাস করছিলেন। কারণ সীতার কাছে স্থানটি প্রিয় মনে হবে, এই কামনায় এবং নিজের সন্তুষ্টির জন্যও এই পাহাড় বন তাঁর প্রিয় হয়েছিল। রাম, সীতাকে চিত্রকূটের বিচিত্র সৌন্দর্য দেখাতে লাগলেন ঠিক যেমন ইন্দ্র, স্ত্রী শচীকে শোভা দর্শন করান তেমন। তিনি অকপটে তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করতে লাগলেন।
অর্জুনের গন্তব্য হিমালয় পর্বত। তিনি অগস্ত্যবট, বশিষ্ঠপর্বত এবং তুঙ্গনাথে উপস্থিত হয়ে পবিত্র হলেন। তিনি ব্রাহ্মণদের সহস্র গাভী এবং নিবাসনির্মাণের জন্যে বহু সামগ্রী দান করলেন। ঋষিগণ সেবিত হিরণ্যবিন্দু তীর্থোদকে স্নান করে, বহু পুণ্যস্থান দর্শন করলেন। এরপরে বহু তীর্থ দর্শনেচ্ছায় অর্জুন, পূর্বদিকে যাত্রা করলেন। নৈমিষারণ্যে উৎপলিনী নামের নদী, এ ছাড়া নন্দা, অপরনন্দা, কৌশিকী, মহানদী, গয়াতীর্থ ও গঙ্গা দর্শন করলেন। তীর্থস্থানে, নিজের শুদ্ধিকরণের লক্ষ্যে ব্রাহ্মণদের ধন দান করলেন। অঙ্গদেশ, বঙ্গ ও কলিঙ্গদেশে যত তীর্থ আছে...
মহর্ষি ভরদ্বাজের আশ্রমে রাত্রিবাস করলেন ভরত। মহর্ষির অগ্নিহোত্র যাগ সবেমাত্র সম্পন্ন হয়েছে। ভরতের সম্মুখে স্বয়ং ভরদ্বাজ ঋষি। অতিথি ভরতের সুখনিদ্রা হয়েছে কি না। অতিথি সৎকার মনোমত হয়েছে তো? মহর্ষি ভরদ্বাজের এমন সব উদগ্রীব প্রশ্ন।
মন্থরককে এইভাবে বেঁধে ধনুকের ডগায় টাঙিয়ে নিয়ে যেতে দেখে হিরণ্যক অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে বিলাপ করতে শুরু করল। দুঃখ যেন তার কাছে ক্রমশ সাগরের মতন বিশাল হয়ে উঠছে। নিজের দেশ এবং আত্মীয়বর্গকে হারিয়ে সবে যখন সে নতুন দেশে এসে নতুন বন্ধুদের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখছে তখনই আবার নতুন বন্ধু মন্থরকের এই বিপদ। এক দুঃখের সমুদ্র পার হতে না হতেই দ্বিতীয় দুঃখ এখন তার সামনে। দুঃখের যেন শেষ নেই তার জীবনে।
হিরণ্যকের কথা শুনে লঘুপতনক তখন উড়ল আকাশ পথে চিত্রাঙ্গকে খুঁজতে। কিছু পথ যেতেই একটা ছোট ডোবার ধারে ব্যাধের জালে আটকে পড়া চিত্রাঙ্গকে দেখতে পেল সে। তাকে দেখেই অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে তার কাছে এসে লঘুপতনক বলল, ভদ্র চিত্রাঙ্গ! এ কী অবস্থা তোমার? লঘুপতনককে দেখে চিত্রাঙ্গ কিছুই বলতে পারল না উল্টে আরও বিমর্শ হয়ে পড়ল।
মন্থরক একজন অভিজ্ঞ দার্শনিকের মতো হিরণ্যককে বোঝাচ্ছিলেন, যে সম্পদ ব্যবহার হয় না, তার থাকা না-থাকা সমান। ফলে তাই নিয়ে দুঃখ করবার কোনও কারণ নেই। মন্থরকের মতে, মানুষেরমানই হল শ্রেষ্ঠ সম্পদ।যেদিন সেই মানসম্মানটুকুও মানুষের থাকে না, তখনই তাকে দরিদ্র বলতে হয়। না হলে সামান্য একটা বৃষকে মাত্র সম্পদ করে দেবাদিদেব মহাদেব একজন ধনীব্যক্তির মতন নিশ্চিন্তেকি ঘুরে বেড়াতে পারতেন!
উপভুক্তধন সোমিলককে দেখে এবং তাঁর পরিচয় পেয়ে একেবারে উঠে এসে অভ্যর্থনা করে ঘরের মধ্যে নিয়ে গেল। উপভুক্তধন তাঁকে যথেষ্ট সমাদর করে অনেক ভোজ্যদ্রব্য দিলেন। রাত্রে বিশ্রামের জন্য কিছু বস্ত্র এবং মনোরম একটা বিছানাও দিলেন। সোমিলক সেই ভব্যশয্যায় বেশ আরামে নিদ্রা গেল। স্বপ্নে আবার সে ওই দু’জন পুরুষকে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে শুনল।
উন্নতিকামী যে কোনও পুরুষের মধ্যে উত্সাহ গুণ থাকাটা সর্বদা আবশ্যক। যেক্ষেত্রে আলস্য ত্যাগ করে উত্সাহের সঙ্গে কোনও কার্য করা হয় এবং ন্যায়নীতির সঙ্গে মানুষের পৌরুষও যেখানে মিলে থাকে, লক্ষ্মীশ্রী সেখানেই অচঞ্চল হয়ে অবস্থান করে। ব্যবসায় উন্নতি করতে গেলে যেকোনও ব্যবসায়ীর মানসিকতাটা ঠিক এইরকমই হওয়াটা বাঞ্ছনীয়। সব কিছুই হল ভাগ্যের খেলা।
হনুমানকে দেখে ভীমসেন অত্যন্ত তৃপ্ত হন। আরও খুশি হন একথা শুনে যে, রামপত্নী সীতার কাছে এমনি বর পেয়েছিলেন হনুমান যে, যতদিন রামকথা পৃথিবীতে প্রচলিত থাকবে লোকমুখে ততদিনই হনুমানও রয়ে যাবেন এই পৃথিবীতে।
পাণ্ডবভাইয়েরা একের পর এক তীর্থ দর্শন করতে করতে এগিয়ে চলেছেন। সকলেই অধীর হয়ে উঠেছেন, অর্জুনের সঙ্গে দেখা করবার জন্য। কিন্তু অর্জুন যে দেবস্থানে গিয়েছেন। সে স্থান সাধারণের গম্য নয়। অতি কঠোর সে যাত্রাপথ।
ভরদ্বাজ পুত্রের এমন করুণ মৃত্যুসংবাদ শুনে অত্যন্ত শোকগ্রস্ত হলেন। নানাভাবে বিলাপ করতে করতে তিনি বলে উঠলেন, ‘হে পুত্র! না পড়েও ব্রাহ্মণদের হৃদয়ে বেদের ঠাঁই হোক, এমনটাই প্রয়াস ছিল তোমার।’
প্রাচীনকালে বালধি নামধারী এক মুনি ছিলেন। তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন। তাঁর কোনও পুত্র ছিল না। তাই তিনি একসময় অত্যন্ত অস্থিরচিত্ত হয়ে পড়েন। একটি অমর পুত্রের কামনায় তিনি তীব্র তপস্যা আরম্ভ করেন।
মুনি বলে চলেন, ‘হে পাণ্ডুপুত্র! স্থূলশিরা মুনির আশ্রমের পশেই এই রৈভ্যমুনির আশ্রম। এখানে ভরদ্বাজমুনির পুত্র যবক্রীত বিনষ্ট হয়েছিলেন। আজ তোমাদের আমি কবি যবক্রীতের কাহিনি শোনাবো।’
ঠাকুরবাড়ির শরৎকুমারীর কথা নানা কারণেই উচ্চারিত হয়। এই নামটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আরেক শরৎকুমারীর কথা মনে পড়ে যায়। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বন্ধু অক্ষয় চৌধুরীর পত্নী তিনি। ঠাকুরবাড়িতে ছিল তাঁর নিত্য-যাতায়াত। লাহোরে বাপের বাড়ি, তাই রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বলতেন ‘লাহোরিণী’। রবীন্দ্রনাথ এই শরৎকুমারীর বইয়ের ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন। বইটির নাম ‘শুভবিবাহ’।
অবনীন্দ্রনাথের অগ্রজ গগনেন্দ্রনাথ। ছেলেবেলা থেকেই ছবি আঁকায় তাঁর ঝোঁক। বাবা গুণেন্দ্রনাথ ভালো ছবি আঁকতেন। ছেলেও ছবি আঁকা শিখুক, শিল্পী হোক, চেয়েছিলেন তিনি। তখন ‘ছোট্টটি’ অবনীন্দ্রনাথ। বাড়িতে পড়াশোনার জন্য মাস্টারমশায় যেমন আসতেন, তেমনই আসতেন ছবি-আঁকা শেখানোর মাস্টারমশায়। অল্প বয়সেই রপ্ত করেছিলেন ছবি-আঁকা।
রবীন্দ্রনাথ নিজেও মৃণালিনী দেবীকে পড়িয়েছেন। ভ্রাতুষ্পুত্র বলেন্দ্রনাথও বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। সরাসরি পড়ানো নয়, তিনি যখন যে বই পড়তেন, তা অবশ্যই শোনাতেন তাঁর ‘কাকিমা’কে। রথীন্দ্রনাথের লেখায় আছে, ‘বলুদাদার কাছ থেকে শুনে শুনে মায়ের এই তিন ভাষার সাহিত্যের সঙ্গে বেশ ভালো করেই পরিচয় হয়েছিল।’ বলা বাহুল্য, বাংলা, ইংরেজি ও সংস্কৃত ভাষার কথা বলেছেন কবিপুত্র।
মানুষের বিপন্নতা বরাবরই সৌম্যেন্দ্রনাথকে বিব্রত করত। সমস্ত বাধা প্রতিবন্ধকতা অগ্রাহ্য করে বেরিয়ে পড়তেন, বিপন্ন মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন। সাহায্য করতেন। উত্তরবঙ্গের এই বন্যাপীড়িত মানুষজনকে সাহায্য করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠনের ডাক দিয়েছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র। সেই ডাকে সৌম্যেন্দ্রনাথ ও তাঁর পিসেমশায় নগেন্দ্রনাথ দু’জনে বেরিয়ে পড়েছিলেন উত্তরবঙ্গের পথে।
রবীন্দ্রনাথ তখন খ্যাতির শিখরে। তাঁর চলা, বলা দেখে কে বলবে পৃথিবীর সেরা সাহিত্য-সম্মান পরাধীন দেশের এই কবি অর্জন করেছেন! খুবই সাদামাঠা জীবনযাপন। অহমিকা-দম্ভ কখনও স্পর্শ করেনি তাঁকে। কত সাধারণ মানুষ তাঁর কাছে আসত। সকলের সঙ্গেই কবি গল্পগাছা করতেন। এ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। এই আলাপচারিতায় কোনও বাধানিষেধ ছিল না। অবারিত দ্বার।
আধ্যাত্মিক জীবন গঠনের মূল বিষয় বা নিয়মগুলির যে কয়েকটি আমাদের সাধারণ জীবনযাপনকে নিয়ন্ত্রিত করে তার মধ্যে একটি হল—সত্যের ধারণা ও পালন। যা কিছুকেই মানুষ সত্য বলে গ্রহণ করে। তাই তার সমগ্র সত্তা, চিন্তারাশি, অনুভূতি এবং তার আকাঙ্ক্ষাকে আকর্ষণ করে।
নারদীয় ভক্তির প্রকাশ হল ভক্তি প্রার্থনার মধ্যেই নিজেকে কৃত-কৃতার্থ অনুভব করা। ঈশ্বরীয় সুখে লীন হয়ে যাওয়া। এগোপিনীদের দুঃখ প্রকাশ না চির সুখের অনুভব!
বেদের মায়া ও তন্ত্রের মহামায়া সমার্থক না হলেও ব্রহ্ম ও মহামায়া মূলত এক। ঈশ্বর ও প্রকৃতি শক্তি যেমন অভেদ। সৃষ্টির আদিতে ব্রহ্মই একমাত্র ছিল। শক্তিকে আশ্রয় করে সৃষ্টি শুরু হলে এই জীবজগৎ প্রকাশ করে তার মধ্যে চৈতন্য রূপে প্রকাশিত হতে থাকল। বেদ ও তন্ত্রের পার্থক্য এই যে, বেদ সিদ্ধান্ত শাস্ত্র আর তন্ত্র সাধন শাস্ত্র। বেদ প্রাচীন অপৌরুষেয় হলেও শক্তিপুজোর উল্লেখ রয়েছে।
আধ্যাত্মিক জীবনে নির্জনতার প্রয়োজনীয়তা আছে। অনেকে নির্জন স্থানে গিয়ে হাঁপিয়ে যান একাকিত্বের জন্য। আবার কারও জন্য একাকিত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। জীবনে কখনও কখনও একাকিত্ব গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষকের কাজ করে।
জীবনের সুখ-দুঃখ উভয়কে শান্তভাবে নিজের ভালো-মন্দ কাজের ফল বলে মনে করে। ও নিজে যতটা সম্ভব ভালোভাবে জীবনযাপন করার চেষ্টা করে। অপর কেউ কেউ, সব ঈশ্বরের দান মনে করে যথাসম্ভব অনাসক্ত এবং সন্তুষ্ট থাকতে চেষ্টা করে। অন্য কেউ কেউ সুখ-দুঃখকে সংসারের অবিচ্ছেদ কর্মফল অনুযায়ী পুরস্কার হিসেবে গ্রহণ করে।
শ্রীরামকৃষ্ণ জানতেন, এখন তাঁকে কেউ বুঝবে না। তাই বলেছেন “কালে বুঝবে। বাউলের দল এলো গেল, কত নাচলে গাইলে, কেউ চিনল না।”
রামকৃষ্ণ নামে এক ফেরিওয়ালা রাস্তায় ফেরি করতে বেরিয়েছে। অদ্ভুত লোক বটে! ঝুড়িতে তাঁর খাঁটি সোনার সব গহনা—জ্ঞান, ভক্তি, বিবেক, বৈরাগ্য, আনন্দ, সমাধি। সেই অমূল্য সব গহনা সে বিনা পয়সায় দিতে চায়। কিন্তু নেবার লোক নেই।
রবীন্দ্রনাথ সংসারী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মন, সব কাজের মধ্যেও সবসময়, উত্তর-মুখ কম্পাসের কাঁটার মতো, ঈশ্বরের দিকে ঘুরে আছে। একথা প্রমাণ হয় তাঁর প্রতিদিনের জীবনচর্যা অনুসরণ ও সংগীত সহ চিঠিপত্র, প্রবন্ধ ও বিবিধ রচনাবলী পড়লেই।
শ্রীরামকৃষ্ণ (কথামৃত : ১-১-৫) সব কাজ করবে কিন্তু মন ঈশ্বরেতে রাখবে। স্ত্রী, পুত্র, বাপ, মা, সকলকে নিয়ে থাকবে ও সেবা করবে। যেন কত আপনার লোক। কিন্তু মনে জানবে যে তারা তোমার কেউ নয়।
রবীন্দ্রসংগীত রবীন্দ্রনাথ সংসারে থেকেও ঈশ্বরের আনন্দ পেয়েছিলেন বলেই, যৌবনে মানুষ যখন সাংসারিক আনন্দে একেবারে মেতে থাকে, তখন তাঁর কলম থেকে বের হয়েছে এইসব কালজয়ী গান।
আপনার অনুরোধ করা পৃষ্ঠাটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনার অনুসন্ধান পরিমার্জিত করার চেষ্টা করুন অথবা ওয়েবসাইট মেনু থেকে পোস্টটি সনাক্ত করুন।
একদিন সকালে উদ্বোধনে শ্রীমায়ের ঘরে স্বামী অরূপানন্দ তাঁকে বলেছিলেন যে, শ্রীচৈতন্য নারায়ণীকে আশীর্বাদ করেছিলেন, ‘নারায়ণী, তোমার কৃষ্ণে ভক্তি হোক’। তখন তিন-চার বছরের নারায়ণী ‘হা কৃষ্ণ’ বলে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে লাগল। তিনি আরও বললেন যে, দেবর্ষি নারদের সিদ্ধিলাভের পর একটা পিঁপড়ে দেখে হঠাৎ কিরকম দয়া হল।
উদ্বোধনে একদিন সকালে পুজোর ঘরে স্বামী অরূপানন্দ মা সারদাকে বললেন, ‘মা, যদি ঈশ্বর বলে কেউ থাকেন তাহলে এই জগতে এতো দুঃখকষ্ট কেন? তিনি কি দেখছেন না? তাঁর কি এসব দূর করবার শক্তি নেই?’ তখন শ্রীমা বললেন, ‘সমস্ত সৃষ্টিই সুখদুঃখময়। দুঃখ না থাকলে সুখ কি বোঝা যায়? আর সকলের সুখ হওয়া কি করে সম্ভব?
সরযূদেবী রাধাষ্টমীর দিন মা সারদার সঙ্গে দেখা করতে এসে দেখেন যে, তিনি স্নানে যাবেন বলে তেল মাখছেন। এই সময়ে প্রণাম করতে নেই বলে তিনিও করেননি। লৌকিক জীবনে জগজ্জননীও লৌকিক মর্যাদা রক্ষা করে চলেন। মা সারদা গঙ্গাস্নান করে আসার পর তিনি তাঁর শ্রীচরণের পুজো করেন ফুলচন্দনাদি দিয়ে। শ্রীমা তাঁর পায়ে তুলসীপাতা দিতে নিষেধ করেন।
শ্রীমা তখন কাশীতে রয়েছেন। স্বামী শান্তানন্দ তাঁকে বললেন যে, তাঁর তো সাধন, ভজনের শক্তি নেই। শ্রীমার চরণাশ্রিত তিনি। তখন শ্রীমা বললেন, ‘তোমার ভয় কি? ঠাকুর তোমার সন্ন্যাস রক্ষা করুন। ঠাকুরের কাজ ঠাকুর করবে আর তোমার সাধনভজন করবে। কাশী তোমাদের স্থান। সাধন মানে তাঁর চরণে মন সর্বদা রেখে তাঁর চিন্তায় ডুবে থাকা। সাধনের সময় নানা প্রলোভনের জিনিস দেখে ঠাকুর জড়সড় হতেন আর সে সব চাইতেন না।
সরযূ সন্ধ্যার সময় শ্রীমাকে দেখতে এসেছে। মা সারদা একটা পাটিতে শুয়ে আছেন আর অন্য পাটিতে শুয়ে রাধু তাঁকে গল্প বলার জন্য পীড়াপীড়ি করছে। সরযূকে দেখে শ্রীমা বললেন, ‘একটা গল্প বলতো মা’। সরযূ এবার ভারি বিপদে পড়ে গেল, শ্রীমার কাছে সে কী গল্প বলবে ভেবে পেল না। সেদিন সে তার আগে পড়া মীরাবাঈয়ের গল্প বলল। মীরার একটি দোঁহা “বিন্ প্রেমসে নহি মিলে নন্দলালা” শুনে শ্রীমা বললেন, “আহা, আহা, তাই তো প্রেমভক্তি না হলে হয় না”। রাধুর কিন্তু এই গল্প ভালো লাগল না। শেষে সরলাবালা এসে তাকে দুয়ো আর সুয়োরানির গল্প বলতে রাধু খুশি হল।...
আপনার অনুরোধ করা পৃষ্ঠাটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনার অনুসন্ধান পরিমার্জিত করার চেষ্টা করুন অথবা ওয়েবসাইট মেনু থেকে পোস্টটি সনাক্ত করুন।
বরকর্তা হিসেবে একটা নিটোল বিয়ের সুচারু ব্যবস্থাপনার পর সবাই নিশ্চিন্ত হয়ে বিয়ের আসর ছেড়ে ভুরিভোজের ঠিকানায় পা বাড়িয়েছি, তখন কন্যাপক্ষের এক যুবক এসে বললেন—কাকু ট্রলিব্যাগটা দিয়ে দিন। গাড়িটা যাচ্ছে ব্যাগটা বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
শব্দবাজির কম্পাঙ্ক কমানোর জন্য আইনকানুন আলোচনা সবই হচ্ছে কিন্তু আখেরে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। কানফাটানো শব্দের কোন বিরাম নেই। আর পাড়ার ভেতরে এতো কড়া আইনকানুন বলে কিছু নেই। মানা করতে গেলে বেশিরভাগ লোকই নাক কান চুলকে বলবেন——কালী পুজোর সময় বাজি পুড়বে না? এ কি হয় নাকি মশাই? কানে তুলে দিয়ে রাখুন, জোরসে মিউজিক চালিয়ে দিন।
আজকাল শিরদাঁড়া নিয়ে খুব আলোচনা চলছে। মাইতিবাবু নিশ্চিত তাঁর শিরদাঁড়া আর সোজা নেই। বাড়ি করা ছেলেমেয়ে মানুষ করা তাদের বিয়ে-থা এ সব সামলে সোজা শিরদাঁড়া বেঁকে গিয়েছে। এখন শোবার সময় পিঠের চালাটা একটু টিপে দেবার জন্য বৌকে সাধ্যসাধনা করতে হয়। তাই বোধহয় আজকাল সামান্য একটু ঝুঁকেও চলতে হয়।
শরৎ আলোর আঁচল টুটে কীসের ঝলক নেচে ওঠে কে জানে, ওই চরণমূলে মরণের নাচের তালে তালে হাহারবে নিখিল অশ্রুসাগরের কূলে পূজা সাঙ্গ হয়, প্রতিবার।
ঘরে সুবিনয় আর কবিতা। কারো মুখে কথা নেই। শুধু বারেবারে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে চারটি চোখ। এতদিন মনে মনে দু’জন দু’জনাকে কত কথাই বলেছে। কত অভিমান… কত ভালোবাসা… কিন্তু এখন সামনাসামনি একটা কথাও সরছে না কারো মুখ থেকে। মন চাইছে আঁকড়ে ধরে এতদিনের সব যন্ত্রণাকে বাঁধভাঙা মুক্তি দিতে। কিন্তু পা দুটোকে কে যেন শক্ত করে মাটির সঙ্গে চেপে ধরে রেখেছে। কিছুতেই এগোতে পারছে না।
শাক্য কাপাডিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখছিল। ভদ্রলোক মাঝেমধ্যেই থরথর করে কাঁপছেন। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসলে সঙ্গে-সঙ্গে সে ট্রমা কাটিয়ে ওঠা কঠিন। এই কারণেই সে সময় দিচ্ছিল তঁকে। কাপাডিয়াকে এর আগেরদিন বৈশিষ্ট্যহীন একজন সাধারণ মানুষ বলে মনে হচ্ছিল। আজ ভালো করে খুঁটিয়ে দেখতে গিয়ে শাক্য দেখল, মানুষটির মুখে বহুকালের পোড়খাওয়া চিহ্ন খোদাই করা আছে।
সত্যব্রত গুম হয়ে বসেছিলেন। নুনিয়া কিছুক্ষণ আগেই শেষ করেছে তার কথা। আজ যদি সময় করে সে না পালিয়ে আসত, তাহলে এতক্ষণে তার কী দশা যে হত, তা সত্যব্রত আঁচ করতে পারছেন। কেউ বা কারা নুনিয়ার পিছনে হাত ধুয়ে লেগে পড়েছে। আসলে নুনিয়া বোধহয় যা-জানার নয়, তেমন অনেক কিছু জেনে ফেলেছে, ফলে সে এখন অনেকের কাছেই শত্রু হয়ে উঠেছে।
পিশাচপাহাড় নামক টিলাপাহাড়ের পিছনদিকেই পিঁধারহাটি গ্রাম। পিছনদিক এই কারণে বলা হচ্ছে, পিশাচপাহাড় নামক টিলার উপরের দিকে যেখানে কালাদেওর গুহা আছে, তার মুখটি যেদিকে, তার বিপরীত দিকে এই পিঁধারহাটি। পিশাচপাহাড়ের পূবদিকে পিশাচপাহাড় গ্রাম, পশ্চিমদিকে ধুঁন্ধুডাঙা, আর দক্ষিণে পিঁধারহাটি। উত্তরদিক অর্থাৎ যেদিকে গুহার মুখ, সেইদিকে কেবল কয়েক ক্রোশের মধ্যে কোনও গ্রাম নেই।
কাপাডিয়া ভয়ে জড়সড় হয়ে আছেন। চোখমুখের অবস্থা ভালো নয়। একজন ডাক্তারকে কল করা হয়েছিল। তিনি এই রিসর্টের এমার্জেন্সি সার্ভিসের সঙ্গেই যুক্ত, কখন কোন বোর্ডার অসুস্থ হয়ে পড়লে যাতে প্রাইমারি ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা না হয়, সেই জন্য অনেক রিসর্ট-হোটেলেই আজকাল এ-ধরণের ব্যবস্থা রাখা হয়। আর এক্ষেত্রে তো কোনও বোর্ডার নয়, রিসর্টের ম্যানেজার স্বয়ং আহত।
সাইকেল মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। এতদিন ধরে এত গুরুত্বপূর্ণ কাজ সাফল্যের সঙ্গে করে এসে শেষে যে এই পচা শামুকে পা কাটবে, তা সে কখন স্বপ্নেও ভাবেনি। আন্ডারএস্টিমেট করেছিল নুনিয়াকে। কিন্তু হারামজাদী মেয়েটি তার চেয়েও চালাক এবং খতরনাক।
লিলি মৃদুলকে ভুলতে পারেনি। বরং মৃদুলের প্রত্যাখান এখনও লিলিকে কষ্ট দেয়। প্রেমিকার মানসিক কষ্ট নয়, ছুঁড়ে ফেলার রাগ। লিলি চেয়েছিল মৃদুলের সঙ্গে যা চলছে যেমন চলছে চলুক আর পেশাদারি কারণে তাকে যাঁদের যাঁদের সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ বজায় রাখতে হয়। সে সেটা চালিয়ে যাবে। কিন্তু মৃদুল একেবারে বেদ উপনিষদ মেনেচলা খেলোয়াড় ঋকবেদের ঐতরেয় ব্রাহ্মণের ‘চরৈবেতি’ শব্দটাকে সে একেবারে আত্মস্থ করে নিয়েছে। মৃদুল সাহারা থেমে থাকতে জানে না!
লিলি নিয়মিত গান গাইত জলসায়। তারপর টেলিভিশনে প্রায় তার অনুষ্ঠান। মৃদুল আসলে খুব দ্রুত প্রেম জমাতে পারতো। বয়সের বাদ-বিচার খুব একটা ছিল না। আর যৌবন ফেলে আসা প্রেমিক মনের স্ত্রী বা পুরুষ নির্বিশেষে সকলে প্রায়শই ভুবনের চারপাশে পেতে রাখা প্রেমের ফাঁদে পড়তে চায়।
প্রতিমা দত্ত থেকে প্রফেসর বিশ্বদীপ চৌধুরীকে বিয়ে করে প্রতিমা চৌধুরী। দু’জনের কোনও সন্তানাদি ছিল না। বিশ্বদীপ চৌধুরী পড়াশোনার জগতের মানুষ। বিদেশের নানান বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব ভালো যোগাযোগ ছিল। মোটামুটি প্রতিমার সঙ্গে একটা রফা করে বিশ্বদীপ বছরের বেশির ভাগ সময়টা বিদেশেই থাকতেন।
বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে চক্রবর্তী সাহেবের কাছ থেকে আবার একটা জরুরি ফোন এসেছিল বাড়ির একতলার রাজ এসটিডিতে। মৃতদেহের ময়না তদন্তে ড্রাগ ওভারডোজ পাওয়া গিয়েছে। খেলোয়াড়দের শরীরে ডোপ টেস্ট করে দেখা হয় যে তারা শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কোনওরকম নিষিদ্ধ দ্রব্যের সাহায্য নিচ্ছে কিনা।
মাঝদুপুরে রাস্তা খালি। হুশ করে আকাশবাণী টপকে ইডেনগার্ডেনস ডান দিকে ফেলে ধৃতিমানের ট্যাক্সি ছেলেটিকে নিয়ে স্ট্র্যান্ড রোডে পড়ে বাঁদিকে ঘুরল। একটু এগিয়ে ফোর্ট উইলিয়ামসের উল্টোদিকে গোয়ালিয়র মনুমেন্ট আর স্কুপ রেস্তরাঁর মাঝে ট্যাক্সিটা ছেড়ে দিল। খুব জোরে গাড়ি যাতায়াত করছে। একটু সময় নিয়ে সাবধানে রাস্তা পার হয়ে গঙ্গার ধারে গিয়ে দাঁড়াল ছেলেটিকে নিয়ে।
নতুন মালিকপক্ষ নানা ধরনের কড়াকড়ি শুরু করল। প্রতিদিন নতুন নতুন ঝামেলা। এসবের মধ্যে মাথা দেবে না একেবারে নিশ্চিত করে ফেলেছিল দুলাল। কিন্তু এড়িয়ে থাকতে পারল না। নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওয়েলেস্লি মিলের শ্রমিকপক্ষের প্রতিবাদী মুখ হয়ে ওঠে উঠল দুলাল সেন।
বাবার কাছে যে ন্যায়-নীতি মূল্যবোধের কথা সে শিখেছে, তার থেকেই সরাসরি গিয়ে বাড়িতে বাড়িতে জানিয়ে এল যে অমৃতলাল সেনের বিকল্প তার ছেলে দুলাল সেন নয়। সুতরাং তারা যেন উপযুক্ত প্রাইভেট টিউটর খোঁজেন এবং ছেলেমেয়েদের পড়ানোর সঠিক ব্যবস্থা করেন। ক্রমাগত চাকরির চেষ্টা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল দুলাল।
সেই পুরনো সময়ে পাড়ায় পাড়ায় ছোটখাটো পত্রিকা বের হতো হাতে লিখে স্টেশনে বা বাসস্ট্যান্ডে দেয়াল পত্রিকার খুব চল ছিল। বাড়িতে বাড়িতে নিয়মিত গানবাজনার চর্চা ছিল। অনেক নাটকের দল নিয়মিত অভিনয় করত। পাড়ায় পাড়ায় একাঙ্ক নাটকের প্রতিযোগিতা হতো। দুর্গাপুজোর পরে লক্ষীপুজো থেকে কালীপুজোর মধ্যে বেশ কিছু জায়গায় নানা বয়সের সকলে মিলেমিশে সাড়ম্বরে নাট্য উদযাপন করতেন।
অমৃতলাল সেন। হাইস্কুলের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক। তিন মেয়ে দুইছেলে স্ত্রী বিধবামা আর নিজেকে নিয়ে মোট আটজনের পরিবার। স্কুলের মাইনেতে চলে না। তাই স্কুলের সময়টুকু বাদ দিয়ে একনাগাড়ে টিউশনি করতে হতো অমৃতস্যারকে। অঙ্কের ওপর ইনজেকশন নেবার মতই একটা সামাজিক ভয় আছে। খুব কমসংখ্যক ছাত্রছাত্রীরা এই ভয়টা কাটিয়ে উঠতে পারে।
ফাদার স্যামুয়েল জানেন এখন প্রায় দেড় ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে অতনু অজন্তা সিনেমার কাছে জেমস লং সরণিতে তার ফ্ল্যাটে পৌঁছবে। সারা সপ্তাহ উদয়াস্ত পরিশ্রম করবে, আবার পরে শনিবারে আসবে। ফাদার জানতে না চাইলেও তিনি জানেন, চুঁচুড়ার এই চার্চে আসার আগে অতনু কোথায় গিয়েছিল? আগামী শনিবার অফিস থেকে বেরিয়ে অতনু সেখানে যাবে খানিক সময় কাটিয়ে আবার আসবে চুঁচুড়ার চার্চে।
আফিফা চেয়েছিল আমি স্বচক্ষে এটা যেন দেখতে পাই। এবার মুক্তি পাবে ওরা। হয়ত আমিও। আমাকে ফিরে বুনিকে সব বলতে হবে। এ বার নিশ্চিন্তে কলকাতা ফিরবো।
ঠিক যেমন প্লাস্টিকের প্যাকেটে ঢাকা জিনিস দেখা যায়। তেমনি বাবার শরীর ভেদ করে দেখা যাচ্ছে আরও দূরে আমার লেখার টেবিলটা।
আমার অন্য লেখার ডট পেনের লাল রং নয়। আমার কাছে কোন লালকালির পেন নেই! আর এই লেখার অক্ষরগুলোতে লাল রংটা ক্রমশ শুকিয়ে খয়েরী হয়ে যাচ্ছে। তবে কি রক্ত!
ভয়ংকর শ্বাসকষ্ট, ঠিক মতো কথা বলতে পারছেন না। ছটফট করছেন। শরীরটা বেঁকে যাচ্ছে। তারপর একটা সময় আর পারলেন না।
…হঠাৎ ধপ করে সেই চাদরমোড়া এলিয়ে-পড়া শরীর দুটোতে আগুন ধরে গেল। পোড়া শরীরের চড়চড় শব্দ শুনতে পাচ্ছি।
আপনাদের সকলের কাছে আমার একটা সবিনয় প্রশ্ন আছে। আমার এই ব্যক্তিগত অনুভূতির কথা কি আমি আর বলব? আপনারা না বললে আমি কোনও দুঃখ পাবো না। তাহলে আমার পরবর্তী বক্তারা বলবার সুযোগ পাবেন, আপনাদের মতো আমিও তাদের কথাও শুনতে পারব।
ঈশ্বর পৃথিবীর সবকিছুতে সময়ের নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন। বাড়ির দলিলের এই আইন মোতাবেক পরিবর্তনটা জরুরি ছিল। তাই বিনয়কান্তি দত্ত শারীরিকভাবে সজ্ঞানে ছিলেন। বসুন্ধরা ভিলায় এখন আর ছন্দ নেই সুর নেই। সর্বত্র যেন সুরতাল ছন্দহীন সময়ের ক্রমাগত ক্ষয়। বাড়িতে দু-দুজন অত্যন্ত সংকটজনক রোগী। ব্যবসায়ের আগের সময়কার রমরমা কমে আসছে। বসুন্ধরার স্বপ্নে দেখা সেই সকলকে নিয়ে ভরা সংসারের শিকড়ের মাটি আলগা হয়ে গিয়েছে।
এরমধ্যে সুরঙ্গমার কাছে বাবলির একটা চিঠি এল। সেই চিঠির সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপ অফ কোম্পানির কাছে পাঠানো আলাদা আলাদা করে প্রণয়কান্তি ও বাবলি’র ই-মেল মারফৎ আবেদনের ছাপা কপি রয়েছে। প্রণয়কান্তি জানিয়েছে, তার যদি কিছু কিছু অর্থকরী পাওনা হয়ে থাকে সেই টাকা স্টাফ ওয়েলফেয়ার ফান্ডে সে দান করে দিতে চায়।
সুজাতা চিৎকার করে উঠলেন। তাড়াহুড়ো করে প্রণয়কে বাধা দিতে গিয়ে হুইলচেয়ারের চাকায় পা জড়িয়ে গিয়ে মুখ থুবড়ে পুরো শরীরের ভার নিয়ে মেঝের ওপর পড়ে গেলেন। নাক-মুখ থেকে গলগল করে রক্ত বের হতে লাগলো। সুরঙ্গমা আর বাবলি ছুটে গিয়ে সুজাতাকে সোজা করে শোয়াতে গিয়ে দেখলেন সুজাতার জ্ঞান নেই।
দিল্লিতে সামরিক পরিমণ্ডলে বড় হয়েও ন’ কাকিমা তন্ত্রমন্ত্র বশীকরণ বাণ মারা, এসব কালা জাদু বা ব্ল্যাক ম্যাজিকে বিশ্বাস করতেন। দিল্লি কালীবাড়িতে নাকি একজন তান্ত্রিক আসতেন। তাঁর কাছেই অবিবাহিতার সুজাতা এবং তাঁর মা ঘন ঘন যেতেন। সেই তান্ত্রিক বাবাকে নিয়ে কি একটা সমস্যা হবার পর কালীবাড়ি কমিটি কালীবাড়ির মধ্যে তার বসার ওপর নিষেধ জারি করেন…
আপনার অনুরোধ করা পৃষ্ঠাটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনার অনুসন্ধান পরিমার্জিত করার চেষ্টা করুন অথবা ওয়েবসাইট মেনু থেকে পোস্টটি সনাক্ত করুন।