অযোধ্যা ত্যাগ করে আসার সময় রাম ছিলেন পঁচিশ বছরের পূর্ণ যুবা, আর সীতা নিজে ছিলেন অষ্টাদশী। জনকনন্দিনী বৈদেহী যুক্তিক্রম হারিয়ে ভুলে যান, অপরিচিতা নারীর দেহসৌন্দর্যের সকাম স্তুতি পরিব্রাজকের স্বভাব নয়।

অযোধ্যা ত্যাগ করে আসার সময় রাম ছিলেন পঁচিশ বছরের পূর্ণ যুবা, আর সীতা নিজে ছিলেন অষ্টাদশী। জনকনন্দিনী বৈদেহী যুক্তিক্রম হারিয়ে ভুলে যান, অপরিচিতা নারীর দেহসৌন্দর্যের সকাম স্তুতি পরিব্রাজকের স্বভাব নয়।
সোনার হরিণের মোহময় রূপ ভুলিয়েছিল সীতার মন। তার ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যে রাম একাই চললেন গভীর বনে। সঙ্গী তাঁর স্বর্ণভূষিত বিপুলকায় শরাসন, ধনু, তীক্ষ্ণ বাণ।
হিতাকাঙ্ক্ষী মারীচের এত কথা কিন্তু রাবণের কর্ণগোচর হল না। তার বহু চেষ্টা বিফলে গেল। সীতাহরণের বিষয়ে রাবণ নিজের সংকল্পে অবিচল থাকলেন। মারীচ নিজের আসন্ন মৃত্যুর চিন্তায় ডুব দিল এবারে।
রাতের অন্ধকারে যজ্ঞবেদীর চারপাশে মারীচ আর অন্যান্য রাক্ষসেরা যখন নিক্ষেপ করছে মাংসের টুকরো, রক্তে ভরে যাচ্ছে যজ্ঞবেদী, রামের হাতে জ্বলে উঠেছে তখন মানবাস্ত্র।
রামের সঙ্গে যুদ্ধে পরাস্ত, নিহত হল খর, দূষণ, ত্রিশিরা সহ জনস্থানবাসী চোদ্দ হাজার রাক্ষস। শূর্পণখা আশায় বুক বেঁধেছিল যে, খর-দূষণের পরাক্রমের কাছে পরাভূত হবে রাম। রামের উষ্ণ রক্ত সে পান করবে।
দীর্ঘ বিচ্ছেদের পরে সুদূর চিত্রকূট পর্বতে বনবাসী রামের সঙ্গে কৈকেয়ীপুত্র ভরতের সাক্ষাৎ হল। প্রাথমিক কুশল সংবাদ বিনিময়ের পরে, বিবর্ণ মুখ, শীর্ণকায়, চীরবসনধারী ভরতকে দেখে, রাম, পিতার সম্বন্ধে চিন্তান্বিত হলেন। পরবর্তী পর্যায়ে, রামের প্রতিক্রিয়া ছিল,রাজ্যসম্বন্ধে উদ্বেগবোধের প্রকাশ। ভরতের শাসনাধীন অযোধ্যায় প্রশাসনিক শৃঙ্খলা যথাযথভাবে রক্ষিত হচ্ছে তো?
যমুনায় জলবিহারের উদ্দেশ্যে আগত কৃষ্ণ ও অর্জুন, যমুনাতীরবর্তী সন্নিহিত খাণ্ডববনে এসে উপস্থিত হয়েছেন। ঠিক সেই সময়ে এক তেজোদীপ্ত ব্রাহ্মণের সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাৎ হল। ব্রাহ্মণ পরিচয় দিলেন, পাবকং মাং নিবোধত আমায় অগ্নিদেব বলে চিনে নাও। অগ্নিদেব জানালেন, তিনি অপরিমিত ভোজনে অভ্যস্ত। বর্তমানে দেবরাজ ইন্দ্র যে খাণ্ডববন রক্ষা করছেন, সেই খাণ্ডববন তাঁর উদ্দিষ্ট ভোজ্য যা তিনি দগ্ধ করতে অসমর্থ হয়েছেন।
রামচন্দ্রের প্রতি যা কিছু অবিচার হয়েছে, তাঁর প্রতিকারে বদ্ধপরিকর কৈকেয়ীপুত্র ভরত। তিনি রামচন্দ্রের প্রাপ্য রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকার ফিরিয়ে দেবেন। রামকে অযোধ্যায় নিয়ে যাবেন ভরত। অনেক দুরূহ পথ পার করে অবশেষে জ্যেষ্ঠ রামের সম্মুখীন হলেন ভরত। সুদীর্ঘ বিচ্ছিন্নতার অবসান হল। ভরত, চিত্রকূটের মহারণ্যে প্রাণপ্রিয় জ্যেষ্ঠর সন্ধান পেলেন।
দাম্পত্যের শর্তভঙ্গকারী অর্জুন ফিরে এসেছেন ইন্দ্রপ্রস্থে। পাণ্ডবরা ইন্দ্রপ্রস্থে বাস করছেন। তাঁরা রাজা শান্তনুপুত্র ধৃতরাষ্ট্র ও পিতামহ ভীষ্মের আদেশানুসারে অন্যান্য রাজাদের জয় করলেন। পুণ্যকর্মকর্তা মানুষ যেমন নিজ দেহ ধারণ করে সুখে বাস করেন তেমনই সব জনসাধারণ ধার্মিক রাজা যুধিষ্ঠিরের আশ্রয়ে সুখে বাস করতে লাগলেন। নীতিবিদ যুধিষ্ঠির ধর্ম, অর্থ ও কামকে নিজের বন্ধুজ্ঞানে তাদের প্রতি সমভাবাপন্ন হয়ে সেবা করতে লাগলেন।
রামকে তাঁর প্রাপ্য রাজ্যাধিকার ফিরিয়ে দিতে ভরত এসেছেন চিত্রকূট পর্বতে। ভরতের উদ্দেশ্যে রামকে সঙ্গে নিয়ে অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন। তাঁর সঙ্গে রয়েছে বিপুল সৈন্যবল। অনেক অনুসন্ধানের পরে শ্বাপদসঙ্কুল নিবিড় অরণ্যে রামের আশ্রম হতে নির্গত ধূমশিখা দেখে, ভরত, রামের আশ্রয় সম্বন্ধে নিশ্চিত হলেন। রামের দর্শনলাভের জন্য উৎসুক ভরত, শত্রুঘ্নকে রামের বাসস্থানটি দেখালেন।
বায়সরাজ মেঘবর্ণের কথা শুনে সচিবেরা সকলে বললেন, হে রাজন্! আপনি যথার্থই প্রশ্ন করেছেন। শাস্ত্রে বলে, কিছু কিছু পরিস্থিতি আসে যখন রাজা পরমর্শ না চাইলেও মন্ত্রীদের যেচে পরামর্শ দেওয়া উচিত। এমনকি সেই পরামর্শ রাজার পছন্দও হতে পারে আবার অপছন্দও হতে পারে। তাও অপ্রিয় সত্যি মন্ত্রীদের বলা উচিত নিজের স্বার্থে এবং রাজ্যের স্বার্থে।
মানুষ জটিল প্রাণী। মনস্তাত্ত্বিকেরা বলেন, আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে বন্ধুসুলভ একজন মানুষ হতে পারেন, তবুও কিছু মানুষ থাকবেনই, যাই হোক না কেন, তারা আপনাকে অপছন্দ করবেন। হতেও পারে আপনাকে অপছন্দ করবার তাদের হয়তো যথেষ্ট কারণও পারে, আবার সব ক্ষেত্রে যে কারণ লাগে তাও নায়। তাই এটা স্বাভাবিক এই জগতে প্রত্যেক মানুষেরই শত্রু আছে। অজাতশত্রু এইটা একটা ধারণা মাত্র। বাস্তবে তা হয় না।
তারা চারজনে সেই সরোবরে ফিরে এসে সারাদিন নিজেদের মধ্যে গঠনমূলক কথাবার্তা চর্চা করতে করতে দিন কাটাতে লাগলো। মিত্রসম্প্রাপ্তির কাহিনীমালা সমাপ্ত করে বিষ্ণুশর্মা বললেন, এই কারণেই বুদ্ধিমান বিবেকী পুরুষেরা সব সময় মিত্র সংগ্রহ করেন। কারণ মিত্রশক্তি যাঁর যতো বেশি থাকে ততোই সেই রাজাই রাজমণ্ডলের মধ্যমণি হন। তাই মিত্রদের সঙ্গে কপটাচরণ করা কখনই উচিত হয়।
মন্থরককে এইভাবে বেঁধে ধনুকের ডগায় টাঙিয়ে নিয়ে যেতে দেখে হিরণ্যক অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে বিলাপ করতে শুরু করল। দুঃখ যেন তার কাছে ক্রমশ সাগরের মতন বিশাল হয়ে উঠছে। নিজের দেশ এবং আত্মীয়বর্গকে হারিয়ে সবে যখন সে নতুন দেশে এসে নতুন বন্ধুদের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখছে তখনই আবার নতুন বন্ধু মন্থরকের এই বিপদ। এক দুঃখের সমুদ্র পার হতে না হতেই দ্বিতীয় দুঃখ এখন তার সামনে। দুঃখের যেন শেষ নেই তার জীবনে।
হনুমানকে দেখে ভীমসেন অত্যন্ত তৃপ্ত হন। আরও খুশি হন একথা শুনে যে, রামপত্নী সীতার কাছে এমনি বর পেয়েছিলেন হনুমান যে, যতদিন রামকথা পৃথিবীতে প্রচলিত থাকবে লোকমুখে ততদিনই হনুমানও রয়ে যাবেন এই পৃথিবীতে।
পাণ্ডবভাইয়েরা একের পর এক তীর্থ দর্শন করতে করতে এগিয়ে চলেছেন। সকলেই অধীর হয়ে উঠেছেন, অর্জুনের সঙ্গে দেখা করবার জন্য। কিন্তু অর্জুন যে দেবস্থানে গিয়েছেন। সে স্থান সাধারণের গম্য নয়। অতি কঠোর সে যাত্রাপথ।
ভরদ্বাজ পুত্রের এমন করুণ মৃত্যুসংবাদ শুনে অত্যন্ত শোকগ্রস্ত হলেন। নানাভাবে বিলাপ করতে করতে তিনি বলে উঠলেন, ‘হে পুত্র! না পড়েও ব্রাহ্মণদের হৃদয়ে বেদের ঠাঁই হোক, এমনটাই প্রয়াস ছিল তোমার।’
প্রাচীনকালে বালধি নামধারী এক মুনি ছিলেন। তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন। তাঁর কোনও পুত্র ছিল না। তাই তিনি একসময় অত্যন্ত অস্থিরচিত্ত হয়ে পড়েন। একটি অমর পুত্রের কামনায় তিনি তীব্র তপস্যা আরম্ভ করেন।
মুনি বলে চলেন, ‘হে পাণ্ডুপুত্র! স্থূলশিরা মুনির আশ্রমের পশেই এই রৈভ্যমুনির আশ্রম। এখানে ভরদ্বাজমুনির পুত্র যবক্রীত বিনষ্ট হয়েছিলেন। আজ তোমাদের আমি কবি যবক্রীতের কাহিনি শোনাবো।’
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আশুতোষ চৌধুরির সেই পরিচয় দ্রুত পূর্ণতার পথে যাত্রা করেছিল। ক্রমেই তৈরি হয় গভীর হৃদ্যতা। আশুতোষ বিলেতে যাচ্ছিলেন, কেমব্রিজে আইন পড়ার উদ্দেশ্যে, ব্যারিস্টার হয়ে ওঠার বাসনায়। বিলেতযাত্রার দীর্ঘপথে আশুতোষকে সঙ্গী হিসেবে পাননি রবীন্দ্রনাথ। পেয়েছিলেন মাদ্রাজ পর্যন্ত।
রবীন্দ্রনাথের লেখায় হাস্যরস আছে। কখনও নির্মল হাস্যরস, কখনও বা শাণিত ব্যঙ্গ। রবীন্দ্রসাহিত্যে হাস্যরস কখনও মুখ্য হয়ে ওঠেনি। ‘হাস্যকৌতুক’ ও ‘ব্যঙ্গকৌতুক’ নামে তিনি দুটি ছোট বইও লিখেছিলেন। বইয়ের নামে ‘কৌতুক’ থাকলেও রবীন্দ্রসাহিত্য কৌতুকময় নয়। হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো কোথাও কোথাও ঝলমলিয়ে উঠলেও তা গড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েনি। সে কৌতুকও ভারি বুদ্ধিদীপ্ত।
ঠাকুরবাড়ির শরৎকুমারীর কথা নানা কারণেই উচ্চারিত হয়। এই নামটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আরেক শরৎকুমারীর কথা মনে পড়ে যায়। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বন্ধু অক্ষয় চৌধুরীর পত্নী তিনি। ঠাকুরবাড়িতে ছিল তাঁর নিত্য-যাতায়াত। লাহোরে বাপের বাড়ি, তাই রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বলতেন ‘লাহোরিণী’। রবীন্দ্রনাথ এই শরৎকুমারীর বইয়ের ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন। বইটির নাম ‘শুভবিবাহ’।
অবনীন্দ্রনাথের অগ্রজ গগনেন্দ্রনাথ। ছেলেবেলা থেকেই ছবি আঁকায় তাঁর ঝোঁক। বাবা গুণেন্দ্রনাথ ভালো ছবি আঁকতেন। ছেলেও ছবি আঁকা শিখুক, শিল্পী হোক, চেয়েছিলেন তিনি। তখন ‘ছোট্টটি’ অবনীন্দ্রনাথ। বাড়িতে পড়াশোনার জন্য মাস্টারমশায় যেমন আসতেন, তেমনই আসতেন ছবি-আঁকা শেখানোর মাস্টারমশায়। অল্প বয়সেই রপ্ত করেছিলেন ছবি-আঁকা।
রবীন্দ্রনাথ নিজেও মৃণালিনী দেবীকে পড়িয়েছেন। ভ্রাতুষ্পুত্র বলেন্দ্রনাথও বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। সরাসরি পড়ানো নয়, তিনি যখন যে বই পড়তেন, তা অবশ্যই শোনাতেন তাঁর ‘কাকিমা’কে। রথীন্দ্রনাথের লেখায় আছে, ‘বলুদাদার কাছ থেকে শুনে শুনে মায়ের এই তিন ভাষার সাহিত্যের সঙ্গে বেশ ভালো করেই পরিচয় হয়েছিল।’ বলা বাহুল্য, বাংলা, ইংরেজি ও সংস্কৃত ভাষার কথা বলেছেন কবিপুত্র।
আধ্যাত্মিক জীবন গঠনের মূল বিষয় বা নিয়মগুলির যে কয়েকটি আমাদের সাধারণ জীবনযাপনকে নিয়ন্ত্রিত করে তার মধ্যে একটি হল—সত্যের ধারণা ও পালন। যা কিছুকেই মানুষ সত্য বলে গ্রহণ করে। তাই তার সমগ্র সত্তা, চিন্তারাশি, অনুভূতি এবং তার আকাঙ্ক্ষাকে আকর্ষণ করে।
নারদীয় ভক্তির প্রকাশ হল ভক্তি প্রার্থনার মধ্যেই নিজেকে কৃত-কৃতার্থ অনুভব করা। ঈশ্বরীয় সুখে লীন হয়ে যাওয়া। এগোপিনীদের দুঃখ প্রকাশ না চির সুখের অনুভব!
বেদের মায়া ও তন্ত্রের মহামায়া সমার্থক না হলেও ব্রহ্ম ও মহামায়া মূলত এক। ঈশ্বর ও প্রকৃতি শক্তি যেমন অভেদ। সৃষ্টির আদিতে ব্রহ্মই একমাত্র ছিল। শক্তিকে আশ্রয় করে সৃষ্টি শুরু হলে এই জীবজগৎ প্রকাশ করে তার মধ্যে চৈতন্য রূপে প্রকাশিত হতে থাকল। বেদ ও তন্ত্রের পার্থক্য এই যে, বেদ সিদ্ধান্ত শাস্ত্র আর তন্ত্র সাধন শাস্ত্র। বেদ প্রাচীন অপৌরুষেয় হলেও শক্তিপুজোর উল্লেখ রয়েছে।
আধ্যাত্মিক জীবনে নির্জনতার প্রয়োজনীয়তা আছে। অনেকে নির্জন স্থানে গিয়ে হাঁপিয়ে যান একাকিত্বের জন্য। আবার কারও জন্য একাকিত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। জীবনে কখনও কখনও একাকিত্ব গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষকের কাজ করে।
জীবনের সুখ-দুঃখ উভয়কে শান্তভাবে নিজের ভালো-মন্দ কাজের ফল বলে মনে করে। ও নিজে যতটা সম্ভব ভালোভাবে জীবনযাপন করার চেষ্টা করে। অপর কেউ কেউ, সব ঈশ্বরের দান মনে করে যথাসম্ভব অনাসক্ত এবং সন্তুষ্ট থাকতে চেষ্টা করে। অন্য কেউ কেউ সুখ-দুঃখকে সংসারের অবিচ্ছেদ কর্মফল অনুযায়ী পুরস্কার হিসেবে গ্রহণ করে।
শ্রীরামকৃষ্ণ জানতেন, এখন তাঁকে কেউ বুঝবে না। তাই বলেছেন “কালে বুঝবে। বাউলের দল এলো গেল, কত নাচলে গাইলে, কেউ চিনল না।”
রামকৃষ্ণ নামে এক ফেরিওয়ালা রাস্তায় ফেরি করতে বেরিয়েছে। অদ্ভুত লোক বটে! ঝুড়িতে তাঁর খাঁটি সোনার সব গহনা—জ্ঞান, ভক্তি, বিবেক, বৈরাগ্য, আনন্দ, সমাধি। সেই অমূল্য সব গহনা সে বিনা পয়সায় দিতে চায়। কিন্তু নেবার লোক নেই।
রবীন্দ্রনাথ সংসারী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মন, সব কাজের মধ্যেও সবসময়, উত্তর-মুখ কম্পাসের কাঁটার মতো, ঈশ্বরের দিকে ঘুরে আছে। একথা প্রমাণ হয় তাঁর প্রতিদিনের জীবনচর্যা অনুসরণ ও সংগীত সহ চিঠিপত্র, প্রবন্ধ ও বিবিধ রচনাবলী পড়লেই।
শ্রীরামকৃষ্ণ (কথামৃত : ১-১-৫) সব কাজ করবে কিন্তু মন ঈশ্বরেতে রাখবে। স্ত্রী, পুত্র, বাপ, মা, সকলকে নিয়ে থাকবে ও সেবা করবে। যেন কত আপনার লোক। কিন্তু মনে জানবে যে তারা তোমার কেউ নয়।
রবীন্দ্রসংগীত রবীন্দ্রনাথ সংসারে থেকেও ঈশ্বরের আনন্দ পেয়েছিলেন বলেই, যৌবনে মানুষ যখন সাংসারিক আনন্দে একেবারে মেতে থাকে, তখন তাঁর কলম থেকে বের হয়েছে এইসব কালজয়ী গান।
আপনার অনুরোধ করা পৃষ্ঠাটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনার অনুসন্ধান পরিমার্জিত করার চেষ্টা করুন অথবা ওয়েবসাইট মেনু থেকে পোস্টটি সনাক্ত করুন।
ঠাকুরের মহিলা ভক্তদের মধ্যে প্রথম শিষ্যা ছিলেন যেমন গৌরীমা, তেমনই শ্রীমার প্রথম শিষ্যা হলেন দুর্গাপুরী। শ্রীমার কাছে বাল্যকাল থেকেই তাঁর অবাধ যাতায়াত। শ্রীমা স্বেচ্ছায় তাঁকে বাল্যবয়সেই দীক্ষা দেন। চোদ্দ পনেরো বছর বয়সেই একান্তভাবে তাঁর আগ্রহে তিনি দুর্গাদেবীকে সন্ন্যাসদীক্ষা দেন। দুর্গাদেবী ছিলেন গৌরীমার পালিত কন্যা। তিনি আবাল্য সন্ন্যাসিনী ছিলেন।
সরলাবালা যখন বোসপাড়া লেনে সিস্টার নিবেদিতার স্কুলে পড়তেন, তখন একদিন স্কুল ছুটির পর সুধীরাদিদি তাঁদের চার-পাঁচজনকে নিয়ে শ্রীমার বাড়িতে গেলেন। প্রসঙ্গত, সুধীরাদি নিবেদিতার সহকারিণী ছিলেন। তাঁর পাশে সবসময় থাকতেন। সুধীরাদি সরলাদের নিয়ে এলেন যখন, তখন সারদা মা ঠাকুরঘরে আসনে বসেছিলেন। আর কুসুমদি তাঁকে একটি বই পড়ে শোনাচ্ছেন। মেয়েরা তাঁকে প্রণাম করলে শ্রীমা তাদের বসতে বললেন।
শ্রীমার বাড়িতে সন্ধ্যের সময় ‘কাশীখণ্ড’ পাঠ হত। একবার পাঠের পর স্বামী অরূপানন্দ মা সারদার কাছে জানতে চান যে, কাশীতে মৃত্যু হলে সবারই কি মুক্তি হয়? শ্রীমা বলেন যে, শাস্ত্রে বলে ‘হয়’। অরূপানন্দ বলেন যে, ঠাকুর তো কাশীতে দেখেছিলেন, শিব তারকব্রহ্ম মন্ত্র দেন। তা শ্রীমা সেখানে কি দেখলেন। শুনে শ্রীমা বলেন, ‘কি জানি বাপু, আমি তো কিছু দেখিনি’।
বড়দিনের ছুটিতে মা সারদার কাছে থাকবেন বলে সুধীরাদি সরলাবালাদের নিয়ে কাশী যান। শ্রীমা তখন কাশীতে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তিনি যোগেনমা আসতে পারল না বলে আক্ষেপ করতে লাগলেন। যোগেনমার অসুখ হয়েছিল, তাই সরলাদেবীর বড় ভাবনা হয়েছিল। সুধীরাদি কিছুক্ষণ কথা বলে যে ভাড়াবাড়ি তাদের থাকার জন্য ঠিক করা হয়েছে, তা দেখতে গেলেন।
আপনার অনুরোধ করা পৃষ্ঠাটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনার অনুসন্ধান পরিমার্জিত করার চেষ্টা করুন অথবা ওয়েবসাইট মেনু থেকে পোস্টটি সনাক্ত করুন।
বরকর্তা হিসেবে একটা নিটোল বিয়ের সুচারু ব্যবস্থাপনার পর সবাই নিশ্চিন্ত হয়ে বিয়ের আসর ছেড়ে ভুরিভোজের ঠিকানায় পা বাড়িয়েছি, তখন কন্যাপক্ষের এক যুবক এসে বললেন—কাকু ট্রলিব্যাগটা দিয়ে দিন। গাড়িটা যাচ্ছে ব্যাগটা বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
শব্দবাজির কম্পাঙ্ক কমানোর জন্য আইনকানুন আলোচনা সবই হচ্ছে কিন্তু আখেরে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। কানফাটানো শব্দের কোন বিরাম নেই। আর পাড়ার ভেতরে এতো কড়া আইনকানুন বলে কিছু নেই। মানা করতে গেলে বেশিরভাগ লোকই নাক কান চুলকে বলবেন——কালী পুজোর সময় বাজি পুড়বে না? এ কি হয় নাকি মশাই? কানে তুলে দিয়ে রাখুন, জোরসে মিউজিক চালিয়ে দিন।
আজকাল শিরদাঁড়া নিয়ে খুব আলোচনা চলছে। মাইতিবাবু নিশ্চিত তাঁর শিরদাঁড়া আর সোজা নেই। বাড়ি করা ছেলেমেয়ে মানুষ করা তাদের বিয়ে-থা এ সব সামলে সোজা শিরদাঁড়া বেঁকে গিয়েছে। এখন শোবার সময় পিঠের চালাটা একটু টিপে দেবার জন্য বৌকে সাধ্যসাধনা করতে হয়। তাই বোধহয় আজকাল সামান্য একটু ঝুঁকেও চলতে হয়।
শরৎ আলোর আঁচল টুটে কীসের ঝলক নেচে ওঠে কে জানে, ওই চরণমূলে মরণের নাচের তালে তালে হাহারবে নিখিল অশ্রুসাগরের কূলে পূজা সাঙ্গ হয়, প্রতিবার।
ঘরে সুবিনয় আর কবিতা। কারো মুখে কথা নেই। শুধু বারেবারে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে চারটি চোখ। এতদিন মনে মনে দু’জন দু’জনাকে কত কথাই বলেছে। কত অভিমান… কত ভালোবাসা… কিন্তু এখন সামনাসামনি একটা কথাও সরছে না কারো মুখ থেকে। মন চাইছে আঁকড়ে ধরে এতদিনের সব যন্ত্রণাকে বাঁধভাঙা মুক্তি দিতে। কিন্তু পা দুটোকে কে যেন শক্ত করে মাটির সঙ্গে চেপে ধরে রেখেছে। কিছুতেই এগোতে পারছে না।
কাল শুতে-শুতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। বিচ্ছিরি ব্যাপারটা যদি না-ঘটত, তাহলে অন্যরকম প্ল্যান ছিল পূষণের। কিন্তু কাপাডিয়ার উপর কালাদেওর আক্রমণ সমস্ত প্ল্যানটাই চৌপাট করে দিয়েছিল। সে ততক্ষণে ঠিক করে নিয়েছিল আজ ভদকা উইথ জিঞ্জার বিয়ারের সঙ্গে চিজ-বল্ আর স্মোকড্ ফিস্ অর্ডার করবে, তারপর আফটার রঁদ্যেভ্যু একটা গ্রেট সেক্স-সেশন এনজয় করবে। প্রি-ম্যারেজ সেক্স-সেশনের মতো রোমাঞ্চকর ব্যাপার আর কিছুতেই নেই। হানিমুনেও না। কিন্তু অর্ডার করার আগেই কলকাতার অফিস থেকে ম্যানেজার মুখুটিবাবু ফোন করলেন। তাড়াতাড়ি কাজে জয়েন করতে না পারলে...
শেষ রাতের দিকে ঘুমটা লেগে গিয়েছিল সত্যব্রতর। গাঢ় ঘুম নয়। আজ রাতের উত্তেজনার পর গাঢ় ঘুম অসম্ভব। কিছুক্ষণ আগেও জেগেই ছিলেন পুরোপুরি। বিছানায় শুয়ে শুয়ে জানালার দিকে তাকিয়েছিলেন। প্রতি মুহূর্তেই অপেক্ষা করছিলেন, কারও আসার। মোবাইল ফোনটা হাতের কাছে রেখেছেন। নাইট মোডে আছে সেটা। একটা নাম্বার এসওএস হিসেবে মাথায় রেখেছেন। কিন্তু নিজেই জানেন না, সেটা কার্যক্ষেত্রে কাজে আসবে কি-না।
তৃধার উন্মুক্ত স্তনে মুখ ঘষছিল অরণ্য। আলতো করে তার বাম কাঁধ একহাতে চেপে ধরে তৃধার ডান স্তনবৃন্ত দুই ঠোঁটে চেপে ধরে জিভ নাড়াচ্ছিল কখন আস্তে-আস্তে, কখন বা দ্রুত। তৃধা মুখ দিয়ে ভালোলাগার অস্ফুট আওয়াজ তুলছিল, তবে শীৎকার নয়।
চেয়ারটির রং এককালে কী ছিল তা বলা মুশকিল, তবে সেটা যে কখনই এখনকার মতো ফ্যাকাশে রঙের ছিল না, তা বলাই যায়। স্টিলের ট্র্যাঙ্কগুলি যেদিকে রাখা তার প্রায় বিপরীতদিকে একখানা ছোট তক্তোপোষে বিছানা-বালিশ টানটান করে পাতা। দেখেই মনে হচ্ছে কেউ শোয় না। এমনকি এই মঙ্গল ওঝাও নয়। তক্তোপোষের নিচে কিছু বাতিল জিনিসের সঙ্গে কিছু কার্ডবোর্ডের বাক্স রাখা, সম্ভবত জুতোর বাক্স।
উন্মেষা একটু আনমনা হল অঞ্জনের কথা শুনে। তারপর মৃদু স্বরে বলল, “তুমি ওয়াশরুমে যাও। উত্তেজনা শান্ত করে এসো। না হলে সারারাত ঘুমাতে পারবে না! আমি একটু বারান্দায় যাবো। খোলা হাওয়ায় গিয়ে দাঁড়াতে ইচ্ছে করছে!”
অমলেন্দু’র মধ্যে একটা তুলনামূলক হিংসে কাজ করতো, শুদ্ধ আভিধানিক বাংলায় যাকে মাৎসর্য্য বলে এটা অন্যের ভালো দেখতে না পারা, অন্যের প্রাচুর্য সহ্য করতে না পারা। পাশের বাড়ির এক বন্ধু মাধ্যমিকের ফার্স্টডিভিশনে পাশ করেছিল অমলেন্দু সেকেন্ডডিভিশন। সেকেন্ডডিভিশনের দুঃখ নয়, লাগোয়া বাড়ির সেই ছেলেটির ফার্স্ট ডিভিশনের দুঃখে বুক ফেটে সারা রাত কেঁদেছিল অমলেন্দু।
মৃদুলের উপস্থিতি সত্বেও কৃষ্ণেন্দুর মধ্যে কোনও বিকার নেই! সে বম্বেতে চেষ্টা করল! খুব কষ্ট করে ছটা মাস চালানোর পর আবার কলকাতায় ফিরে আসতে বাধ্য হল। অভিনেতা অভিনেত্রী হিসেবে বোম্বেতে সুযোগটা পেলেও টেকনিশিয়ান হিসেবে বম্বেতে ঢুকতে পারা খুবই শক্ত। কৃষ্ণেন্দু পারলো না কলকাতায় ফিরে আসতে বাধ্য হল! শ্রেয়সীর সঙ্গে মৃদুলের সম্পর্কের কথা তার কানে এসেছে! কিন্তু কৃষ্ণেন্দু একেবারে অন্যধরনের মানুষ।
শ্রেয়সী গুপ্ত নামি মাল্টিন্যাশানালের দামি হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজার! যোগাযোগ করার আগে শ্রেয়সী গুপ্তর সোশ্যাল মিডিয়া স্টক করতে হল। চালাকচতুর মহিলা। পড়াশোনার ইতিহাস বেশ ভালো। কলকাতা ভালো স্কুল ভালো কলেজের থেকে গ্র্যাজুয়েশন। দিল্লি থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন। বিদেশের একটি ইউনিভার্সিটি থেকে ম্যানেজমেন্টের ডিপ্লোমা। ৩-৪টি নামী কোম্পানির সিঁড়ি পেরিয়ে এখন আপাতত এই মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে রয়েছেন।
ধৃতিমান কোন উত্তর দিল না। সে জানে পুলিশের নামে শবনম যথেষ্ট ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তাই সে এখন আপার হ্যান্ড নিতে চাইছে। পিছনের সিটে বসে ধৃতিমান মনে মনে ভাবছিল কত বয়স হবে মেয়েটার উনিশ কুড়ি বা বড় জোর বাইশ বছর? এই বয়সে রাত করে পার্টি করছে মদ খাচ্ছে। উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করছে! এই অনিয়ম এই ইন্দ্রিয়সর্বস্ব জীবনে কী পাবে এই মেয়েটি।
শুনেছি বায়োকেমিক ওষুধ ঠিক মতো ডায়াগনেসিস হলে রোগীর ম্যাজিকের মতো কাজ হয়। ধৃতিমানের মেসেজটাতেও ঠিক সেরকম কাজ হয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে না হলেও ঘণ্টা চারেক পরে একটা মেসেজ এসেছিল ইংরেজিতে। ‘Out of Town will call back soon’. তারপর কল আর আসে না… দিন ছয়েক বাদে হঠাৎ ভরসন্ধে বেলায় একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন।
সন্দেশ দুটো মুখে ফেলে জল খেতেই চারদিকে বিয়ের হুড়োহুড়ি। তখন আর কাকে বলবে এগিয়ে দিতে। আধুনিক নিয়ম মেনে স্নিগ্ধার মা ছন্দা সম্প্রদানে বসেছেন। একা একা বাড়ির বাইরে এসে দুলালের মা অবাক।
কি ভাগ্যি, স্নিগ্ধার বিয়ের আগেরদিন থেকেই পার্টির জেলা সম্মেলন স্থির হয়েছিল। জুটমিলের নেতা হিসেবে দুলালের কাছে এরকম আমন্ত্রণ প্রায়ই আসে। দুলাল এড়িয়ে যায়! ব্যারাকপুরে সম্মেলন হচ্ছে। এবার দুলাল রাজি হয়ে গেল। লোকাল পার্টি অফিসের সকলেই একটু আশ্চর্য কারণ দুলাল সচরাচর এসব এড়িয়ে চলে।
…চায়ের দাগটা হয়তো উঠে যাবে না উঠলে পাঞ্জাবিটা বাড়িতেই পরে নেবে। সাতসকালে স্নিগ্ধার মায়ের কাছে এরকম একটা অদ্ভুত প্রস্তাব পেয়ে মনের মধ্যে ওদের মা-মায়ের দুজনের সম্বন্ধেই একটা নোংরা দাগ লেগে গেল ! সেটা কি কোনদিন উঠবে?… কানাঘুষো একটা গুজগুজ ফুসফুস হচ্ছিল। দুলালের সামনে বলার সাহস কারো হয়নি! আজ মনে হচ্ছে এই গুজবটা রটানোর পিছনেও ছব্দা কাকিমার মাথা রয়েছে!
যাঁরা এসবে একেবারেই বিশ্বাস করেন না তাঁরা বলেছিলেন আচমকা পেশিতে খিঁচুনি হতে পারে! হার্টের পেইন হতে পারে। এটা কাকতালীয় ঘটনা। তালগাছে উড়ন্ত কাক এসে বসল পায়ের নখের খোঁচার ধাক্কায় বোঁটা থেকে আলগা হয়ে আসা পাকা তাল এসে ছেলের হাতে খসে পড়ল। গণক গুনে বলেছিলেন ফললাভ হবে, হল! গণকের নামে লোকে ধন্য ধন্য করল!
বাঁশদ্রোণীতে ছোট্ট বাড়ি! নীলিমার মাসি এবং মেসো দুজনেই চাকরি করেন। মাসি ক্যালকাটা কর্পোরেশনে আর মেসো রয়েছেন হাওড়ার একটি কারখানায় সকালবেলায় বাবা-মা ছেলে তিনজনেই খেয়ে টিফিন নিয়ে বেরিয়ে যান। ভোরবেলায় রান্নার লোক চলে আসে। সকালবেলাটা খুব হুড়োহুড়ি, সবাই খুব ভোরে উঠে পড়েন, তাড়াতাড়ি শুতে যান! শুধু শনিবারটা বেনিয়ম।
আফিফা চেয়েছিল আমি স্বচক্ষে এটা যেন দেখতে পাই। এবার মুক্তি পাবে ওরা। হয়ত আমিও। আমাকে ফিরে বুনিকে সব বলতে হবে। এ বার নিশ্চিন্তে কলকাতা ফিরবো।
ঠিক যেমন প্লাস্টিকের প্যাকেটে ঢাকা জিনিস দেখা যায়। তেমনি বাবার শরীর ভেদ করে দেখা যাচ্ছে আরও দূরে আমার লেখার টেবিলটা।
আমার অন্য লেখার ডট পেনের লাল রং নয়। আমার কাছে কোন লালকালির পেন নেই! আর এই লেখার অক্ষরগুলোতে লাল রংটা ক্রমশ শুকিয়ে খয়েরী হয়ে যাচ্ছে। তবে কি রক্ত!
ভয়ংকর শ্বাসকষ্ট, ঠিক মতো কথা বলতে পারছেন না। ছটফট করছেন। শরীরটা বেঁকে যাচ্ছে। তারপর একটা সময় আর পারলেন না।
…হঠাৎ ধপ করে সেই চাদরমোড়া এলিয়ে-পড়া শরীর দুটোতে আগুন ধরে গেল। পোড়া শরীরের চড়চড় শব্দ শুনতে পাচ্ছি।
আপনাদের সকলের কাছে আমার একটা সবিনয় প্রশ্ন আছে। আমার এই ব্যক্তিগত অনুভূতির কথা কি আমি আর বলব? আপনারা না বললে আমি কোনও দুঃখ পাবো না। তাহলে আমার পরবর্তী বক্তারা বলবার সুযোগ পাবেন, আপনাদের মতো আমিও তাদের কথাও শুনতে পারব।
ঈশ্বর পৃথিবীর সবকিছুতে সময়ের নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন। বাড়ির দলিলের এই আইন মোতাবেক পরিবর্তনটা জরুরি ছিল। তাই বিনয়কান্তি দত্ত শারীরিকভাবে সজ্ঞানে ছিলেন। বসুন্ধরা ভিলায় এখন আর ছন্দ নেই সুর নেই। সর্বত্র যেন সুরতাল ছন্দহীন সময়ের ক্রমাগত ক্ষয়। বাড়িতে দু-দুজন অত্যন্ত সংকটজনক রোগী। ব্যবসায়ের আগের সময়কার রমরমা কমে আসছে। বসুন্ধরার স্বপ্নে দেখা সেই সকলকে নিয়ে ভরা সংসারের শিকড়ের মাটি আলগা হয়ে গিয়েছে।
এরমধ্যে সুরঙ্গমার কাছে বাবলির একটা চিঠি এল। সেই চিঠির সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপ অফ কোম্পানির কাছে পাঠানো আলাদা আলাদা করে প্রণয়কান্তি ও বাবলি’র ই-মেল মারফৎ আবেদনের ছাপা কপি রয়েছে। প্রণয়কান্তি জানিয়েছে, তার যদি কিছু কিছু অর্থকরী পাওনা হয়ে থাকে সেই টাকা স্টাফ ওয়েলফেয়ার ফান্ডে সে দান করে দিতে চায়।
সুজাতা চিৎকার করে উঠলেন। তাড়াহুড়ো করে প্রণয়কে বাধা দিতে গিয়ে হুইলচেয়ারের চাকায় পা জড়িয়ে গিয়ে মুখ থুবড়ে পুরো শরীরের ভার নিয়ে মেঝের ওপর পড়ে গেলেন। নাক-মুখ থেকে গলগল করে রক্ত বের হতে লাগলো। সুরঙ্গমা আর বাবলি ছুটে গিয়ে সুজাতাকে সোজা করে শোয়াতে গিয়ে দেখলেন সুজাতার জ্ঞান নেই।
দিল্লিতে সামরিক পরিমণ্ডলে বড় হয়েও ন’ কাকিমা তন্ত্রমন্ত্র বশীকরণ বাণ মারা, এসব কালা জাদু বা ব্ল্যাক ম্যাজিকে বিশ্বাস করতেন। দিল্লি কালীবাড়িতে নাকি একজন তান্ত্রিক আসতেন। তাঁর কাছেই অবিবাহিতার সুজাতা এবং তাঁর মা ঘন ঘন যেতেন। সেই তান্ত্রিক বাবাকে নিয়ে কি একটা সমস্যা হবার পর কালীবাড়ি কমিটি কালীবাড়ির মধ্যে তার বসার ওপর নিষেধ জারি করেন…
আপনার অনুরোধ করা পৃষ্ঠাটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনার অনুসন্ধান পরিমার্জিত করার চেষ্টা করুন অথবা ওয়েবসাইট মেনু থেকে পোস্টটি সনাক্ত করুন।