অযোধ্যা ত্যাগ করে আসার সময় রাম ছিলেন পঁচিশ বছরের পূর্ণ যুবা, আর সীতা নিজে ছিলেন অষ্টাদশী। জনকনন্দিনী বৈদেহী যুক্তিক্রম হারিয়ে ভুলে যান, অপরিচিতা নারীর দেহসৌন্দর্যের সকাম স্তুতি পরিব্রাজকের স্বভাব নয়।

অযোধ্যা ত্যাগ করে আসার সময় রাম ছিলেন পঁচিশ বছরের পূর্ণ যুবা, আর সীতা নিজে ছিলেন অষ্টাদশী। জনকনন্দিনী বৈদেহী যুক্তিক্রম হারিয়ে ভুলে যান, অপরিচিতা নারীর দেহসৌন্দর্যের সকাম স্তুতি পরিব্রাজকের স্বভাব নয়।
সোনার হরিণের মোহময় রূপ ভুলিয়েছিল সীতার মন। তার ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যে রাম একাই চললেন গভীর বনে। সঙ্গী তাঁর স্বর্ণভূষিত বিপুলকায় শরাসন, ধনু, তীক্ষ্ণ বাণ।
হিতাকাঙ্ক্ষী মারীচের এত কথা কিন্তু রাবণের কর্ণগোচর হল না। তার বহু চেষ্টা বিফলে গেল। সীতাহরণের বিষয়ে রাবণ নিজের সংকল্পে অবিচল থাকলেন। মারীচ নিজের আসন্ন মৃত্যুর চিন্তায় ডুব দিল এবারে।
রাতের অন্ধকারে যজ্ঞবেদীর চারপাশে মারীচ আর অন্যান্য রাক্ষসেরা যখন নিক্ষেপ করছে মাংসের টুকরো, রক্তে ভরে যাচ্ছে যজ্ঞবেদী, রামের হাতে জ্বলে উঠেছে তখন মানবাস্ত্র।
রামের সঙ্গে যুদ্ধে পরাস্ত, নিহত হল খর, দূষণ, ত্রিশিরা সহ জনস্থানবাসী চোদ্দ হাজার রাক্ষস। শূর্পণখা আশায় বুক বেঁধেছিল যে, খর-দূষণের পরাক্রমের কাছে পরাভূত হবে রাম। রামের উষ্ণ রক্ত সে পান করবে।
অযোধ্যার সিংহাসনের সুযোগ্য উত্তরাধিকারী দশরথপুত্র রামকে, রাজ্যে অধিষ্ঠিত করবার লক্ষ্যে ভরত এসেছেন অরণ্যে। রাম, ভরতের প্রস্তাব দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করলেন। যুক্তি ও পাল্টা যুক্তির অবতারণা করলেন দুই ভাই। মৃত পিতার কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রাম, সত্যপ্রতিজ্ঞারক্ষায় অটল। জীবনের অনিত্যতা, মৃত্যুর অবশ্যম্ভাবিতা অনুভব করে, পিতার আজ্ঞানুবর্তী রাম ভরতের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। ভরতেরও প্রচেষ্টার শেষ নেই। সেই মন্দাকিনীতীরে ধার্মিক ভরত, প্রজানুরঞ্জক ধর্মজ্ঞ রামকে অর্থপূর্ণ চিত্তাকর্ষক নানা কথা বলতে লাগলেন।
খাণ্ডববনদহনকে কেন্দ্র করে কৃষ্ণ ও অর্জুনের সঙ্গে, দেবরাজ ইন্দ্রের মহাযুদ্ধ শুরু হল। দুই পক্ষই শক্তিশালী। এ যেন সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি। অগ্নিদেবের পক্ষ নিয়ে, কৃষ্ণ ও অর্জুনের লড়াই। অগ্নিদেবের কাছে তাঁদের দু’জনের প্রতিশ্রুতিরক্ষার অঙ্গীকার। প্রতিপক্ষ দেবরাজ ইন্দ্র। কারণ ইন্দ্র ছিলেন খাণ্ডববনদহনের বিপক্ষে। তিনি, বিপন্ন প্রাণীকুলকে বাঁচাতে যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছেন। মহর্ষি বেদব্যাস সেই যুদ্ধের রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন।
রামের দর্শনাভিলাষী রাজপুরোহিত বশিষ্ঠ রাজা দশরথের পত্নীদের সম্মুখে নিয়ে রামের বাসস্থানের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হলেন। রানিরা মন্দাকিনীর দিকে ধীরে যেতে যেতে রামলক্ষ্মণের বিচরণভূমি, নদীতীর্থ দেখতে পেলেন। দেবী কৌশল্যা বিশীর্ণ অশ্রুপূর্ণ বদনে দুঃখিনী সুমিত্রা ও অন্যান্য রাজ্ঞীদের কাছে হয়তো দুঃখভার লাঘবের চেষ্টা করলেন, অরণ্যের পূর্বদিকের এই তীর্থে বিচরণ করত, প্রভুত্বহীন, অসহায়, দুর্ভাগারা যাঁদের কোনও দেশ নেই।
খাণ্ডববনদহনের উদ্যোগী হয়েছেন অগ্নিদেব। তাঁর পাশে আছেন দুই আপ্ত সহায়ক কৃষ্ণ ও অর্জুন। দেবরাজ ইন্দ্র, অগ্নিদেবের প্রতিপক্ষ। দেবরাজ, অগ্নির দহনকার্যে বাদ সাধলেন। দেবরাজ বার বার জল বর্ষণ করতে লাগলেন। অর্জুন তাঁর অস্ত্রপ্রয়োগকৌশলে সেই জলবর্ষণে প্রতিরোধ সৃষ্টি করলেন। কুয়াশাবৃত চন্দ্রের মতো অর্জুনের বাণে আচ্ছাদিত হল খাণ্ডববন। শরাচ্ছন্ন খাণ্ডববন হতে কোনও প্রাণী নির্গত হতে পারল না।
দীর্ঘ বিচ্ছেদের পরে সুদূর চিত্রকূট পর্বতে বনবাসী রামের সঙ্গে কৈকেয়ীপুত্র ভরতের সাক্ষাৎ হল। প্রাথমিক কুশল সংবাদ বিনিময়ের পরে, বিবর্ণ মুখ, শীর্ণকায়, চীরবসনধারী ভরতকে দেখে, রাম, পিতার সম্বন্ধে চিন্তান্বিত হলেন। পরবর্তী পর্যায়ে, রামের প্রতিক্রিয়া ছিল,রাজ্যসম্বন্ধে উদ্বেগবোধের প্রকাশ। ভরতের শাসনাধীন অযোধ্যায় প্রশাসনিক শৃঙ্খলা যথাযথভাবে রক্ষিত হচ্ছে তো?
চিরঞ্জীবী বললেন, হে দেব! এ পরিস্থিতিতে সন্ধি-বিগ্রহ প্রভৃতি কূটনীতির ছ’টি উপায়ের মধ্যে আমার মনে হয় ‘সংশ্রয়’ অবলম্বন করাই শ্রেয়। অন্য শক্তিশালী ও পরাক্রমী রাজার কাছে আশ্রয় নেওয়াকেই কূটনীতির পরিভাষায় বলা হয় ‘সংশ্রয়’। কারণ, অত্যন্ত তেজস্বী এবং পরাক্রমী হলেও সহায়হীন একলা ব্যক্তি শত্রুরাজার প্রবল প্রতিরোধের সামনে কিই বা করতে পারে?
পাশা খেলায় হেরে গিয়ে বাধ্য হয়ে পাণ্ডবরা দেশত্যাগ করে বারো বছরের বনবাসে চলে যান। পরে বিরাটরাজ্যে অজ্ঞাতবাসের শেষে তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন এবং বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণের ভোগিনী সুভদ্রার পুত্র অভিমণ্যূর সঙ্গে বিরাট রাজকন্যা উত্তরার বিবাহে ভারতবর্ষের সকল রাজাদের মিলিত সহায়তায় বলবান হয়ে তাঁরা রাজ্য লাভের জন্য কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গণে কৌরবদের মুখোমুখি হন। রাজনীতিতে জিততে গেলে মাঝে মাঝে পিছনেও হাঁটতে হয়।
কাকোলূকীযম্ উজ্জীবীর কথা শেষ হলে বায়সরাজ মেঘবর্ণ সঞ্জীবীকে ডেকে বললেন, “ভদ্র! তবাভিপ্রাযমপি শ্রোতুমিচ্ছামি”। হে ভদ্র! আপনার অভিমতও আমি শুনতে চাই। উজ্জীবী তখন বললেন, হে দেব! আমার মনে হয় শত্রুর সঙ্গে সন্ধি করাটা উচিত হবে না। শাস্ত্রে বলে, শত্রুর সঙ্গে সন্ধি করলেও তার সঙ্গে বেশি মেলামেশা করাটা একদম উচিত নয়। আগুনে তপ্ত হয়ে জল অত্যন্ত গরম হলেও সে কিন্তু আগুনের সঙ্গে সখ্যতা করে না, অনায়াসেই সে আগুনকে নিভিয়ে দিতে পারে। জলের সঙ্গে অগ্নির যেমন সহজাত বিরোধ তেমনই অর্থাৎ সন্ধি করলেও জাত শত্রু কখনই শত্রুতা ত্যাগ করে...
বায়সরাজ মেঘবর্ণের কথা শুনে সচিবেরা সকলে বললেন, হে রাজন্! আপনি যথার্থই প্রশ্ন করেছেন। শাস্ত্রে বলে, কিছু কিছু পরিস্থিতি আসে যখন রাজা পরমর্শ না চাইলেও মন্ত্রীদের যেচে পরামর্শ দেওয়া উচিত। এমনকি সেই পরামর্শ রাজার পছন্দও হতে পারে আবার অপছন্দও হতে পারে। তাও অপ্রিয় সত্যি মন্ত্রীদের বলা উচিত নিজের স্বার্থে এবং রাজ্যের স্বার্থে।
মানুষ জটিল প্রাণী। মনস্তাত্ত্বিকেরা বলেন, আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে বন্ধুসুলভ একজন মানুষ হতে পারেন, তবুও কিছু মানুষ থাকবেনই, যাই হোক না কেন, তারা আপনাকে অপছন্দ করবেন। হতেও পারে আপনাকে অপছন্দ করবার তাদের হয়তো যথেষ্ট কারণও পারে, আবার সব ক্ষেত্রে যে কারণ লাগে তাও নায়। তাই এটা স্বাভাবিক এই জগতে প্রত্যেক মানুষেরই শত্রু আছে। অজাতশত্রু এইটা একটা ধারণা মাত্র। বাস্তবে তা হয় না।
হনুমানকে দেখে ভীমসেন অত্যন্ত তৃপ্ত হন। আরও খুশি হন একথা শুনে যে, রামপত্নী সীতার কাছে এমনি বর পেয়েছিলেন হনুমান যে, যতদিন রামকথা পৃথিবীতে প্রচলিত থাকবে লোকমুখে ততদিনই হনুমানও রয়ে যাবেন এই পৃথিবীতে।
পাণ্ডবভাইয়েরা একের পর এক তীর্থ দর্শন করতে করতে এগিয়ে চলেছেন। সকলেই অধীর হয়ে উঠেছেন, অর্জুনের সঙ্গে দেখা করবার জন্য। কিন্তু অর্জুন যে দেবস্থানে গিয়েছেন। সে স্থান সাধারণের গম্য নয়। অতি কঠোর সে যাত্রাপথ।
ভরদ্বাজ পুত্রের এমন করুণ মৃত্যুসংবাদ শুনে অত্যন্ত শোকগ্রস্ত হলেন। নানাভাবে বিলাপ করতে করতে তিনি বলে উঠলেন, ‘হে পুত্র! না পড়েও ব্রাহ্মণদের হৃদয়ে বেদের ঠাঁই হোক, এমনটাই প্রয়াস ছিল তোমার।’
প্রাচীনকালে বালধি নামধারী এক মুনি ছিলেন। তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন। তাঁর কোনও পুত্র ছিল না। তাই তিনি একসময় অত্যন্ত অস্থিরচিত্ত হয়ে পড়েন। একটি অমর পুত্রের কামনায় তিনি তীব্র তপস্যা আরম্ভ করেন।
মুনি বলে চলেন, ‘হে পাণ্ডুপুত্র! স্থূলশিরা মুনির আশ্রমের পশেই এই রৈভ্যমুনির আশ্রম। এখানে ভরদ্বাজমুনির পুত্র যবক্রীত বিনষ্ট হয়েছিলেন। আজ তোমাদের আমি কবি যবক্রীতের কাহিনি শোনাবো।’
রবীন্দ্রনাথের তখন বছর উনিশ বয়েস। ‘প্রাণাধিক রবি’ তাঁর পিতৃদেবের কাছ থেকে একটি চিঠি পেলেন। সেই চিঠিতে পুত্রের ইচ্ছাকে স্বীকৃতি দিয়ে পিতা যা লিখেছিলেন, তা যদি সত্য হত, তাহলে যে বাঙালির, বাংলা ভাষার কতখানি ক্ষতি হত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নিজেকে নিবেদন করা, সঁপে দেওয়া অনেক দূরের কথা, ব্যস্ত ব্যারিস্টার কি সাহিত্যের জন্য সেভাবে সময় দিতে পারতেন, সে প্রশ্ন তো রয়েই যায়। ভাগ্যিস তিনি ব্যারিস্টার হননি!
ভাগ্নি সরলা রবীন্দ্রনাথের প্রথম জন্মদিন পালন করেছিলেন। কবি সেদিন ছিলেন মেজদা সত্যেন্দ্রনাথের পার্ক স্ট্রিটের বাড়িতে। সরলা নীরবে নিঃশব্দে নিভৃতে কবির ঘরে পৌঁছে পায়ের কাছে রেখেছিলেন মালা আর ফুল। মালাটি ছিল বেলফুলের। বেলফুলের মৃদু সৌরভে সেই গ্রীষ্ম-সকাল নিশ্চিত ভিন্নতর ব্যঞ্জনা পেয়েছিল। সরলা দেবীর ‘জীবনের ঝরাপাতা’ বইতে জানিয়েছেন, ‘সেই বছর থেকে পরিজনদের মধ্যে তাঁর জন্মদিনের উৎসব আরম্ভ হল।’
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আশুতোষ চৌধুরির সেই পরিচয় দ্রুত পূর্ণতার পথে যাত্রা করেছিল। ক্রমেই তৈরি হয় গভীর হৃদ্যতা। আশুতোষ বিলেতে যাচ্ছিলেন, কেমব্রিজে আইন পড়ার উদ্দেশ্যে, ব্যারিস্টার হয়ে ওঠার বাসনায়। বিলেতযাত্রার দীর্ঘপথে আশুতোষকে সঙ্গী হিসেবে পাননি রবীন্দ্রনাথ। পেয়েছিলেন মাদ্রাজ পর্যন্ত।
রবীন্দ্রনাথের লেখায় হাস্যরস আছে। কখনও নির্মল হাস্যরস, কখনও বা শাণিত ব্যঙ্গ। রবীন্দ্রসাহিত্যে হাস্যরস কখনও মুখ্য হয়ে ওঠেনি। ‘হাস্যকৌতুক’ ও ‘ব্যঙ্গকৌতুক’ নামে তিনি দুটি ছোট বইও লিখেছিলেন। বইয়ের নামে ‘কৌতুক’ থাকলেও রবীন্দ্রসাহিত্য কৌতুকময় নয়। হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো কোথাও কোথাও ঝলমলিয়ে উঠলেও তা গড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েনি। সে কৌতুকও ভারি বুদ্ধিদীপ্ত।
ঠাকুরবাড়ির শরৎকুমারীর কথা নানা কারণেই উচ্চারিত হয়। এই নামটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আরেক শরৎকুমারীর কথা মনে পড়ে যায়। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বন্ধু অক্ষয় চৌধুরীর পত্নী তিনি। ঠাকুরবাড়িতে ছিল তাঁর নিত্য-যাতায়াত। লাহোরে বাপের বাড়ি, তাই রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বলতেন ‘লাহোরিণী’। রবীন্দ্রনাথ এই শরৎকুমারীর বইয়ের ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন। বইটির নাম ‘শুভবিবাহ’।
মানুষ, সীমিত সত্ত্বা এবং ক্ষুদ্র অহংকার যুক্ত। যে কারণেই সে পৃথক ঈশ্বর থেকে। সংস্কারমুক্ত অখণ্ড জ্ঞানই ঈশ্বর, আর খণ্ডিত জ্ঞান কর্ম ও সংস্কারযুক্ত মানুষ। এই সীমা বা বন্ধনের বাইরে যাওয়াই উপাসনার লক্ষ্য। এ জগৎ, যা পরিব্যপ্ত হয়ে আছে তা জড়। যদি বলি তবে প্রশ্ন জড় থেকে জড় উৎপন্ন হতে পারে কী করে? না, তবে এর পিছনে নিশ্চয়ই কোনও সজীব সত্ত্বা রয়েছে।
মহাপুরুষের ধ্যান-ধারণা দ্বারা আমরা আধ্যাত্মিক ক্ষুধা বাড়াতে পারি। তাঁরা আজও বর্তমান, চৈতন্য ও শাশ্বত প্রকাশের দ্বারা। যাঁরা অপকট, আন্তরিক ভাবে তাদের চেতনার স্তরেকে উন্নীত করে সেই সব মহাপুরুষের ধ্যান ও ধারণা করার সমর্থ্য লাভ করে, তাঁরা তাঁদের উপস্থিতি অনুভব করতে পারবে।
আধ্যাত্মিক জীবন গঠনের মূল বিষয় বা নিয়মগুলির যে কয়েকটি আমাদের সাধারণ জীবনযাপনকে নিয়ন্ত্রিত করে তার মধ্যে একটি হল—সত্যের ধারণা ও পালন। যা কিছুকেই মানুষ সত্য বলে গ্রহণ করে। তাই তার সমগ্র সত্তা, চিন্তারাশি, অনুভূতি এবং তার আকাঙ্ক্ষাকে আকর্ষণ করে।
নারদীয় ভক্তির প্রকাশ হল ভক্তি প্রার্থনার মধ্যেই নিজেকে কৃত-কৃতার্থ অনুভব করা। ঈশ্বরীয় সুখে লীন হয়ে যাওয়া। এগোপিনীদের দুঃখ প্রকাশ না চির সুখের অনুভব!
বেদের মায়া ও তন্ত্রের মহামায়া সমার্থক না হলেও ব্রহ্ম ও মহামায়া মূলত এক। ঈশ্বর ও প্রকৃতি শক্তি যেমন অভেদ। সৃষ্টির আদিতে ব্রহ্মই একমাত্র ছিল। শক্তিকে আশ্রয় করে সৃষ্টি শুরু হলে এই জীবজগৎ প্রকাশ করে তার মধ্যে চৈতন্য রূপে প্রকাশিত হতে থাকল। বেদ ও তন্ত্রের পার্থক্য এই যে, বেদ সিদ্ধান্ত শাস্ত্র আর তন্ত্র সাধন শাস্ত্র। বেদ প্রাচীন অপৌরুষেয় হলেও শক্তিপুজোর উল্লেখ রয়েছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ জানতেন, এখন তাঁকে কেউ বুঝবে না। তাই বলেছেন “কালে বুঝবে। বাউলের দল এলো গেল, কত নাচলে গাইলে, কেউ চিনল না।”
রামকৃষ্ণ নামে এক ফেরিওয়ালা রাস্তায় ফেরি করতে বেরিয়েছে। অদ্ভুত লোক বটে! ঝুড়িতে তাঁর খাঁটি সোনার সব গহনা—জ্ঞান, ভক্তি, বিবেক, বৈরাগ্য, আনন্দ, সমাধি। সেই অমূল্য সব গহনা সে বিনা পয়সায় দিতে চায়। কিন্তু নেবার লোক নেই।
রবীন্দ্রনাথ সংসারী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মন, সব কাজের মধ্যেও সবসময়, উত্তর-মুখ কম্পাসের কাঁটার মতো, ঈশ্বরের দিকে ঘুরে আছে। একথা প্রমাণ হয় তাঁর প্রতিদিনের জীবনচর্যা অনুসরণ ও সংগীত সহ চিঠিপত্র, প্রবন্ধ ও বিবিধ রচনাবলী পড়লেই।
শ্রীরামকৃষ্ণ (কথামৃত : ১-১-৫) সব কাজ করবে কিন্তু মন ঈশ্বরেতে রাখবে। স্ত্রী, পুত্র, বাপ, মা, সকলকে নিয়ে থাকবে ও সেবা করবে। যেন কত আপনার লোক। কিন্তু মনে জানবে যে তারা তোমার কেউ নয়।
রবীন্দ্রসংগীত রবীন্দ্রনাথ সংসারে থেকেও ঈশ্বরের আনন্দ পেয়েছিলেন বলেই, যৌবনে মানুষ যখন সাংসারিক আনন্দে একেবারে মেতে থাকে, তখন তাঁর কলম থেকে বের হয়েছে এইসব কালজয়ী গান।
আপনার অনুরোধ করা পৃষ্ঠাটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনার অনুসন্ধান পরিমার্জিত করার চেষ্টা করুন অথবা ওয়েবসাইট মেনু থেকে পোস্টটি সনাক্ত করুন।
এত সব শান্তিপাঠ, স্বস্ত্যয়ন করা হলেও মা সারদার শারীরিক অবস্থার কোন উন্নতি হল না। তবে এই অসুস্থতার মধ্যেও পাহারায় নিযুক্ত সেবকদের বুঝতে না দিয়ে অথবা তাদের অনুরোধ না শুনে শ্রীমা ভক্ত-সন্তানদের মনস্কামনা পূর্ণ করেছেন। যেমন কাউকে তার ইষ্টদর্শন করিয়ে, কারওকে দীক্ষা দিয়ে, আবার কারও সেবা গ্রহণ করে ধন্য করেছেন। দুর্গেশ দাস চৈত্রমাসে তাঁর আত্মীয়া প্রিয়ংবদা মজুমদারকে সঙ্গে নিয়ে আসেন শ্রীমার কাছে। তখন সকলে নিষেধ করা সত্ত্বেও তিনি প্রিয়ংবদাকে মন্ত্রদান করেছিলেন।
শরৎ মহারাজ মা সারদাকে রোগমুক্ত করার কোন চেষ্টারই ত্রুটি রাখলেন না। কিছুদিন কবিরাজ রাজেন্দ্রনাথ সেন চিকিৎসা করেন। সেই সময় কবিরাজ কালীভূষণ সেনও শ্রীমাকে দেখতেন। তারপর কবিরাজ শ্যামাদাসকে আবার ডাকা হয়। তাঁর ছাত্র কবিরাজ রামচন্দ্র মল্লিক রোজ এসে শ্রীমাকে দেখে যেতেন আর নিজের হাতে ওষুধ তৈরি করে দিতেন। শেষ দুদিন ডাঃ কাঞ্জিলাল হোমিওপ্যাথি ওষুধ দিলেন।
১৩২৫ সালের চোদ্দোই শ্রাবণ ঠাকুরের অন্তরঙ্গ সহচর বাবুরাম মহারাজ পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। শ্রীমার জীবনে একটি বেদনার দিন। পূবর্বঙ্গে বেশ কয়েকবার ঠাকুরের ভাব প্রচার করতে গিয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রমে তাঁর শরীর ভেঙে যায়। তিনি কালাজ্বরে আক্রান্ত হন। এই ঘটনার দুদিন আগে বাবুরাম মহারাজের অন্যতম সেবক মহাদেবানন্দ শ্রীমার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, যাতে তিনি সেরে ওঠেন।
ভক্ত আর ভগবানের মধ্যে চিরকাল লীলা চলে। তবে ‘নরলীলা নরবৎ’ হয়ে থাকে। তাই বয়সের ধর্মে মা সারদার ভগ্নপ্রায় মানবদেহ ক্রমে কাজের চাপে ভেঙে পড়তে লাগল। তাঁর জীবনকালের শেষ কিছু বছর যেমন তিনি গভীরভাবে নিজেকে কর্মে আবদ্ধ রেখেছিলেন, তেমনই সকলের প্রতি তাঁর অবিরাম করুণাধারা বর্ষিত হয়েছিল।
ঠাকুরের মহিলা ভক্তদের মধ্যে প্রথম শিষ্যা ছিলেন যেমন গৌরীমা, তেমনই শ্রীমার প্রথম শিষ্যা হলেন দুর্গাপুরী। শ্রীমার কাছে বাল্যকাল থেকেই তাঁর অবাধ যাতায়াত। শ্রীমা স্বেচ্ছায় তাঁকে বাল্যবয়সেই দীক্ষা দেন। চোদ্দ পনেরো বছর বয়সেই একান্তভাবে তাঁর আগ্রহে তিনি দুর্গাদেবীকে সন্ন্যাসদীক্ষা দেন। দুর্গাদেবী ছিলেন গৌরীমার পালিত কন্যা। তিনি আবাল্য সন্ন্যাসিনী ছিলেন।
আপনার অনুরোধ করা পৃষ্ঠাটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনার অনুসন্ধান পরিমার্জিত করার চেষ্টা করুন অথবা ওয়েবসাইট মেনু থেকে পোস্টটি সনাক্ত করুন।
বরকর্তা হিসেবে একটা নিটোল বিয়ের সুচারু ব্যবস্থাপনার পর সবাই নিশ্চিন্ত হয়ে বিয়ের আসর ছেড়ে ভুরিভোজের ঠিকানায় পা বাড়িয়েছি, তখন কন্যাপক্ষের এক যুবক এসে বললেন—কাকু ট্রলিব্যাগটা দিয়ে দিন। গাড়িটা যাচ্ছে ব্যাগটা বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
শব্দবাজির কম্পাঙ্ক কমানোর জন্য আইনকানুন আলোচনা সবই হচ্ছে কিন্তু আখেরে কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। কানফাটানো শব্দের কোন বিরাম নেই। আর পাড়ার ভেতরে এতো কড়া আইনকানুন বলে কিছু নেই। মানা করতে গেলে বেশিরভাগ লোকই নাক কান চুলকে বলবেন——কালী পুজোর সময় বাজি পুড়বে না? এ কি হয় নাকি মশাই? কানে তুলে দিয়ে রাখুন, জোরসে মিউজিক চালিয়ে দিন।
আজকাল শিরদাঁড়া নিয়ে খুব আলোচনা চলছে। মাইতিবাবু নিশ্চিত তাঁর শিরদাঁড়া আর সোজা নেই। বাড়ি করা ছেলেমেয়ে মানুষ করা তাদের বিয়ে-থা এ সব সামলে সোজা শিরদাঁড়া বেঁকে গিয়েছে। এখন শোবার সময় পিঠের চালাটা একটু টিপে দেবার জন্য বৌকে সাধ্যসাধনা করতে হয়। তাই বোধহয় আজকাল সামান্য একটু ঝুঁকেও চলতে হয়।
শরৎ আলোর আঁচল টুটে কীসের ঝলক নেচে ওঠে কে জানে, ওই চরণমূলে মরণের নাচের তালে তালে হাহারবে নিখিল অশ্রুসাগরের কূলে পূজা সাঙ্গ হয়, প্রতিবার।
ঘরে সুবিনয় আর কবিতা। কারো মুখে কথা নেই। শুধু বারেবারে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে চারটি চোখ। এতদিন মনে মনে দু’জন দু’জনাকে কত কথাই বলেছে। কত অভিমান… কত ভালোবাসা… কিন্তু এখন সামনাসামনি একটা কথাও সরছে না কারো মুখ থেকে। মন চাইছে আঁকড়ে ধরে এতদিনের সব যন্ত্রণাকে বাঁধভাঙা মুক্তি দিতে। কিন্তু পা দুটোকে কে যেন শক্ত করে মাটির সঙ্গে চেপে ধরে রেখেছে। কিছুতেই এগোতে পারছে না।
ন্যুড ওয়ার্কআউট-সেক্স কাকে বলে জানো? ফুল ন্যুড হয়ে ওয়ার্কআউট করতে-করতে সেক্স করা। প্রচুর স্টামিনা আর এনার্জির দরকার হয় এতে। আজকাল এটাই ট্রেন্ড। এক-একটা সেশনে হিউজ মাল্লু পাওয়া যায়। ওইরকম অবস্থায় ক্লায়েন্টদের সঙ্গে সেক্স করতে সকলে পারে না। আমি করি। হ্যাঁ, এ-নিয়ে তোমার কাছে আমার রাখঢাক গুড়গুড় নেই। আমি তোমার বিবাহিত বর নই যে, তোমাকে এসব করে ডিচ্ করছি।
পিশাচপাহাড় রিসর্ট থেকে তদন্ত এবং ‘পুছ্তাছ্’ শেষ করে শাক্য এবং সুদীপ্ত যখন ফিরল, তখন মালাকার মুখ হাঁ করে চেয়ারে বসে সুখনিদ্রা দিচ্ছেন। শাক্যরা যে এসেছে, সেটা টের না পাওয়ায় অনেকক্ষণ সামনের টেবিলের উপরে ঠিক হিন্দি ফিল্মে দুষ্টু পুলিশ অফিসারেরা যেমনভাবে শুয়ে থাকেন, সেই ভাবে শুয়ে নাক ডাকাছিলেন। সুদীপ্ত বারদুই গলা খাঁকারি দিল।
সত্যব্রত শান্ত গলায় বললেন, “আমার প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল, তুমি আমায় বেশক্ ভালোবাসো। এখন বুঝলাম, কথাটা মিথ্যে নয়। তোমার ভালোবাসা পেয়ে আমি আপ্লুত। কিন্তু একটাই সমস্যা, এখানে কোন ওয়াশরুমের ব্যবস্থা রাখোনি, অথচ মানুষজনকে আটক্ করে রাখছো। এটা ভারি অন্যায়। খুব দুঃখ পেলাম। তোমার মতো নাজুক দিল ইনসানের কাছ থেকে এমনটা আশা করিনি!”
কাল শুতে-শুতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। বিচ্ছিরি ব্যাপারটা যদি না-ঘটত, তাহলে অন্যরকম প্ল্যান ছিল পূষণের। কিন্তু কাপাডিয়ার উপর কালাদেওর আক্রমণ সমস্ত প্ল্যানটাই চৌপাট করে দিয়েছিল। সে ততক্ষণে ঠিক করে নিয়েছিল আজ ভদকা উইথ জিঞ্জার বিয়ারের সঙ্গে চিজ-বল্ আর স্মোকড্ ফিস্ অর্ডার করবে, তারপর আফটার রঁদ্যেভ্যু একটা গ্রেট সেক্স-সেশন এনজয় করবে। প্রি-ম্যারেজ সেক্স-সেশনের মতো রোমাঞ্চকর ব্যাপার আর কিছুতেই নেই। হানিমুনেও না। কিন্তু অর্ডার করার আগেই কলকাতার অফিস থেকে ম্যানেজার মুখুটিবাবু ফোন করলেন। তাড়াতাড়ি কাজে জয়েন করতে না পারলে...
শেষ রাতের দিকে ঘুমটা লেগে গিয়েছিল সত্যব্রতর। গাঢ় ঘুম নয়। আজ রাতের উত্তেজনার পর গাঢ় ঘুম অসম্ভব। কিছুক্ষণ আগেও জেগেই ছিলেন পুরোপুরি। বিছানায় শুয়ে শুয়ে জানালার দিকে তাকিয়েছিলেন। প্রতি মুহূর্তেই অপেক্ষা করছিলেন, কারও আসার। মোবাইল ফোনটা হাতের কাছে রেখেছেন। নাইট মোডে আছে সেটা। একটা নাম্বার এসওএস হিসেবে মাথায় রেখেছেন। কিন্তু নিজেই জানেন না, সেটা কার্যক্ষেত্রে কাজে আসবে কি-না।
প্রতিমা থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। আশেপাশে অফিসফেরতা অনেক চেনা মুখ। প্রতিমাকে এ ভাবে ওভারব্রিজে কথা বলতে দেখলে অনেক মুখচেনা তথাকথিত ভদ্রলোক ভদ্রমহিলারা কৌতুহলী হয়ে পড়বেন। প্রতিমা উলটোপথে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের দিকটায় হাঁটা দিল। অমলেন্দু একটু অবাক হয়ে প্রতিমার পিছনে পিছনে গেল। অমলেন্দু কিন্তু ভাবার চেষ্টা করছে, চিঠিটা প্রতিমাকে দেবে নাকি মুখে বলবে সবটুকু।
চিঠিটা ৩-৪ বার পড়ার পর অমলেন্দু ঠিক কী করবে বুঝে উঠতে পারল না। এদিকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা একটা ভাঙচির চিঠি। হতে পারে সত্যি সত্যি কোনও ছেলের সঙ্গে প্রতিমার কোনও সম্পর্ক রয়েছে। আবার নাও হতে পারে। পারিবারিক আপত্তির জেরে অনেক সময় এই ধরনের চিঠিচাপাটি দিয়ে ক্ষতি করা হয়ে থাকে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অমলেন্দু এই চিঠিটাকে খুব হালকা ভাবে নিতে পারল না। তার সেজমামার বিয়ের সময় একই ঘটনা ঘটেছিল। তখন সময় আরও কম ছিল। শেষ মুহূর্তে এরকম একটা ভাঙচির চিঠি এসেছিল সেজমামার...
খুব স্বাভাবিকভাবে বৈদ্যবাটির সম্বন্ধটা ভেঙ্গে গেল! আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে যে সামান্য কয়েকজনের কথার গুরুত্ব অমলেন্দু দিত তাঁরাই বোঝালেন খোঁজখবর নেওয়াতে কোনও অন্যায় নেই। সম্বন্ধ করে বিয়ে দিতে গেলে মেয়ের বাড়ি থেকে ছেলের খোঁজ তো নেবেই! তাতে এতটা অসন্তুষ্ট হবার কোনও কারণ নেই।
অমলেন্দু’র মধ্যে একটা তুলনামূলক হিংসে কাজ করতো, শুদ্ধ আভিধানিক বাংলায় যাকে মাৎসর্য্য বলে এটা অন্যের ভালো দেখতে না পারা, অন্যের প্রাচুর্য সহ্য করতে না পারা। পাশের বাড়ির এক বন্ধু মাধ্যমিকের ফার্স্টডিভিশনে পাশ করেছিল অমলেন্দু সেকেন্ডডিভিশন। সেকেন্ডডিভিশনের দুঃখ নয়, লাগোয়া বাড়ির সেই ছেলেটির ফার্স্ট ডিভিশনের দুঃখে বুক ফেটে সারা রাত কেঁদেছিল অমলেন্দু।
মৃদুলের উপস্থিতি সত্বেও কৃষ্ণেন্দুর মধ্যে কোনও বিকার নেই! সে বম্বেতে চেষ্টা করল! খুব কষ্ট করে ছটা মাস চালানোর পর আবার কলকাতায় ফিরে আসতে বাধ্য হল। অভিনেতা অভিনেত্রী হিসেবে বোম্বেতে সুযোগটা পেলেও টেকনিশিয়ান হিসেবে বম্বেতে ঢুকতে পারা খুবই শক্ত। কৃষ্ণেন্দু পারলো না কলকাতায় ফিরে আসতে বাধ্য হল! শ্রেয়সীর সঙ্গে মৃদুলের সম্পর্কের কথা তার কানে এসেছে! কিন্তু কৃষ্ণেন্দু একেবারে অন্যধরনের মানুষ।
প্রত্যাখ্যাত পুরুষ কষ্ট পায়, একা একা যন্ত্রণা সহ্য করে। অনেকে হয়ত ডিপ্রেশনে চলে যায়। তারপর সময় যায়। আরও সময় যায়। বয়স বাড়ে, কমবয়সের প্রত্যাখ্যান একদিন সময়ের পলিতে চাপা পড়ে একটা পুরনো প্রায় ভুলে যাওয়া জীবনের গল্প হয়ে যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। রিসার্চ বলে নারী বা পুরুষ নির্বিশেষে শতকরা মাত্র কয়েক শতাংশ মানুষ এই যন্ত্রণা সহ্য না করে ভয়ংকর প্রতিশোধ নিতে চায়। রাগ প্রতিহিংসা প্রতিশোধ এগুলো মানবিক অনুভূতি।
তৃপ্তির বাবা-মা দুজনেই মারা গিয়েছেন। তৃপ্তি ছোটবেলা থেকে জ্যাঠামশায়ের সংসারে মানুষ। তৃপ্তি আর তার ছোট ভাই তাপস। জ্যাঠামশাই-জেঠিমার তিন মেয়ে-বড় দু’জন রমলা আর মৃদুলা তৃপ্তির চেয়ে বড় আর কমলা তৃপ্তির ছোট। সবার ছোট হল তাপস। কিন্তু মাত্র ১৭ বছর বয়সে তাপস নকশাল আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে পুলিশের গুলিতে জীবন দিল। প্রথমে বাবা-মা পরে ছোট ভাইকে হারিয়ে তৃপ্তি একেবারে বাকরহিত হয়ে গেল। বড় দুই মেয়ের বিয়ের পর জ্যাঠামশাই তৃপ্তির জন্যে মধ্যম আয়ের সুপাত্র খুঁজছিলেন। দুলালের বড় জামাইবাবুর এক সহকর্মীর সূত্রে যোগাযোগ হল। দুলাল শ্যামনগরের...
দুলালের বাবার চলে যাওয়াটা এতই আচমকা যে ব্যাপারটা হজম করতেই বছরখানেক কেটে গিয়েছিল। কিন্তু কি আশ্চর্য বড় দুই জামাই যে এতখানি দায়িত্ববান সেটা অমৃতলাল সেন বেঁচে থাকার সময় ততটা বোঝা যায়নি। যে সময় তার বাবা চলে গেল তখন দুলালের চাকরি নেই। বাবার ইচ্ছের সম্মান দিয়ে এমএ-তে ভর্তি হবার চেষ্টা চালাচ্ছে। সেই অবস্থায় জামাইরা দুলালের দু’পাশে দুই বড় দাদার মতো আগলে দাঁড়ালো!
সন্দেশ দুটো মুখে ফেলে জল খেতেই চারদিকে বিয়ের হুড়োহুড়ি। তখন আর কাকে বলবে এগিয়ে দিতে। আধুনিক নিয়ম মেনে স্নিগ্ধার মা ছন্দা সম্প্রদানে বসেছেন। একা একা বাড়ির বাইরে এসে দুলালের মা অবাক।
কি ভাগ্যি, স্নিগ্ধার বিয়ের আগেরদিন থেকেই পার্টির জেলা সম্মেলন স্থির হয়েছিল। জুটমিলের নেতা হিসেবে দুলালের কাছে এরকম আমন্ত্রণ প্রায়ই আসে। দুলাল এড়িয়ে যায়! ব্যারাকপুরে সম্মেলন হচ্ছে। এবার দুলাল রাজি হয়ে গেল। লোকাল পার্টি অফিসের সকলেই একটু আশ্চর্য কারণ দুলাল সচরাচর এসব এড়িয়ে চলে।
আফিফা চেয়েছিল আমি স্বচক্ষে এটা যেন দেখতে পাই। এবার মুক্তি পাবে ওরা। হয়ত আমিও। আমাকে ফিরে বুনিকে সব বলতে হবে। এ বার নিশ্চিন্তে কলকাতা ফিরবো।
ঠিক যেমন প্লাস্টিকের প্যাকেটে ঢাকা জিনিস দেখা যায়। তেমনি বাবার শরীর ভেদ করে দেখা যাচ্ছে আরও দূরে আমার লেখার টেবিলটা।
আমার অন্য লেখার ডট পেনের লাল রং নয়। আমার কাছে কোন লালকালির পেন নেই! আর এই লেখার অক্ষরগুলোতে লাল রংটা ক্রমশ শুকিয়ে খয়েরী হয়ে যাচ্ছে। তবে কি রক্ত!
ভয়ংকর শ্বাসকষ্ট, ঠিক মতো কথা বলতে পারছেন না। ছটফট করছেন। শরীরটা বেঁকে যাচ্ছে। তারপর একটা সময় আর পারলেন না।
…হঠাৎ ধপ করে সেই চাদরমোড়া এলিয়ে-পড়া শরীর দুটোতে আগুন ধরে গেল। পোড়া শরীরের চড়চড় শব্দ শুনতে পাচ্ছি।
আপনাদের সকলের কাছে আমার একটা সবিনয় প্রশ্ন আছে। আমার এই ব্যক্তিগত অনুভূতির কথা কি আমি আর বলব? আপনারা না বললে আমি কোনও দুঃখ পাবো না। তাহলে আমার পরবর্তী বক্তারা বলবার সুযোগ পাবেন, আপনাদের মতো আমিও তাদের কথাও শুনতে পারব।
ঈশ্বর পৃথিবীর সবকিছুতে সময়ের নিয়ম বেঁধে দিয়েছেন। বাড়ির দলিলের এই আইন মোতাবেক পরিবর্তনটা জরুরি ছিল। তাই বিনয়কান্তি দত্ত শারীরিকভাবে সজ্ঞানে ছিলেন। বসুন্ধরা ভিলায় এখন আর ছন্দ নেই সুর নেই। সর্বত্র যেন সুরতাল ছন্দহীন সময়ের ক্রমাগত ক্ষয়। বাড়িতে দু-দুজন অত্যন্ত সংকটজনক রোগী। ব্যবসায়ের আগের সময়কার রমরমা কমে আসছে। বসুন্ধরার স্বপ্নে দেখা সেই সকলকে নিয়ে ভরা সংসারের শিকড়ের মাটি আলগা হয়ে গিয়েছে।
এরমধ্যে সুরঙ্গমার কাছে বাবলির একটা চিঠি এল। সেই চিঠির সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপ অফ কোম্পানির কাছে পাঠানো আলাদা আলাদা করে প্রণয়কান্তি ও বাবলি’র ই-মেল মারফৎ আবেদনের ছাপা কপি রয়েছে। প্রণয়কান্তি জানিয়েছে, তার যদি কিছু কিছু অর্থকরী পাওনা হয়ে থাকে সেই টাকা স্টাফ ওয়েলফেয়ার ফান্ডে সে দান করে দিতে চায়।
সুজাতা চিৎকার করে উঠলেন। তাড়াহুড়ো করে প্রণয়কে বাধা দিতে গিয়ে হুইলচেয়ারের চাকায় পা জড়িয়ে গিয়ে মুখ থুবড়ে পুরো শরীরের ভার নিয়ে মেঝের ওপর পড়ে গেলেন। নাক-মুখ থেকে গলগল করে রক্ত বের হতে লাগলো। সুরঙ্গমা আর বাবলি ছুটে গিয়ে সুজাতাকে সোজা করে শোয়াতে গিয়ে দেখলেন সুজাতার জ্ঞান নেই।
দিল্লিতে সামরিক পরিমণ্ডলে বড় হয়েও ন’ কাকিমা তন্ত্রমন্ত্র বশীকরণ বাণ মারা, এসব কালা জাদু বা ব্ল্যাক ম্যাজিকে বিশ্বাস করতেন। দিল্লি কালীবাড়িতে নাকি একজন তান্ত্রিক আসতেন। তাঁর কাছেই অবিবাহিতার সুজাতা এবং তাঁর মা ঘন ঘন যেতেন। সেই তান্ত্রিক বাবাকে নিয়ে কি একটা সমস্যা হবার পর কালীবাড়ি কমিটি কালীবাড়ির মধ্যে তার বসার ওপর নিষেধ জারি করেন…
আপনার অনুরোধ করা পৃষ্ঠাটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনার অনুসন্ধান পরিমার্জিত করার চেষ্টা করুন অথবা ওয়েবসাইট মেনু থেকে পোস্টটি সনাক্ত করুন।