
ছবি: প্রতীকী।
মধু ও বিষের প্রভেদ করতে না পারলে তা কীরকম প্রভাব রেখে যায় তা-ই এই কাহিনীর প্রতিপাদ্য।
পুরাকালে বারাণসীরাজ ব্রহ্মদত্তের শাসনকালে বোধিসত্ত্ব এক বণিককুলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা বংশানুক্রমে পণ্য আমদানী-রপ্তানির কাজ করতেন। প্রাপ্তবয়স্ক হলে বোধিসত্ত্ব পাঁচশো শকটে পণ্য নিয়ে যাত্রাকালে রাজপথের নিকটেই এক অরণ্যসমীপে উপস্থিত হলেন এবং অনুচরদের ডেকে বললেন যে, এই বনে বিষাক্ত পত্রপুষ্পফলাদি আছে, তোমরা আগে যা খাওনি তা খেতে ইচ্ছে হলে আমাকে জিজ্ঞাসা না করে খেও না। এই বনের যক্ষরা পথে মধুর ফলাদির উপর বিষ ছড়িয়ে রাখে, তা আমাকে জিজ্ঞাসা না করে স্পর্শ করও না কিন্তু। তিনি এগিয়ে চললেন অরণ্যপথে, তাঁর সহচরগণ-ও অরণ্যপথে চললেন।
পুরাকালে বারাণসীরাজ ব্রহ্মদত্তের শাসনকালে বোধিসত্ত্ব এক বণিককুলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা বংশানুক্রমে পণ্য আমদানী-রপ্তানির কাজ করতেন। প্রাপ্তবয়স্ক হলে বোধিসত্ত্ব পাঁচশো শকটে পণ্য নিয়ে যাত্রাকালে রাজপথের নিকটেই এক অরণ্যসমীপে উপস্থিত হলেন এবং অনুচরদের ডেকে বললেন যে, এই বনে বিষাক্ত পত্রপুষ্পফলাদি আছে, তোমরা আগে যা খাওনি তা খেতে ইচ্ছে হলে আমাকে জিজ্ঞাসা না করে খেও না। এই বনের যক্ষরা পথে মধুর ফলাদির উপর বিষ ছড়িয়ে রাখে, তা আমাকে জিজ্ঞাসা না করে স্পর্শ করও না কিন্তু। তিনি এগিয়ে চললেন অরণ্যপথে, তাঁর সহচরগণ-ও অরণ্যপথে চললেন।
সেই অরণ্যে গুল্মীক নামে এক যক্ষ বনের মধ্যভাগে প্রতারণার জন্য গাছের পাতার মধ্যে বিষমিশ্রিত মধু রেখে নিজে যেন মধু সংগ্রহ করছে এমন ছল করে আশেপাশের গাছগুলিতে টোকা দিতে দিতে সন্নিকটেই ঘুরেফিরে বেড়াতো। পথচারীরা ভাবতো, পুণ্যসঞ্চয়ের জন্য বুঝি কেউ পথের উপর আহারের জন্য মধু রেখেছে। সেই মধু তারা খেয়ে মারা পড়তো।এরপর যক্ষরা তাদের মাংস পরম সুখে ভক্ষণ করতো।
আরও পড়ুন:

গল্পবৃক্ষ, পর্ব-২৬: বর্ণারোহ জাতক— গুজবে কান দেবেন না

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১৮: কবির ভালোবাসা, কবির জন্য ভালোবাসা
বোধিসত্ত্বের অনুচররাও সেই মধু দেখতে পেল। তাদের মধ্যে যারা স্বভাবে লোভী তারা মধু খেয়ে ফেলল, যারা বুদ্ধিমান তারা ইতস্তত করল, জিজ্ঞাসা করে গ্রহণ করবে এমন মনে মনে ভেবে পাতা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। বোধিসত্ত্ব তাদের দেখতে পেয়ে সকলকেই সব পাতা ফেলে দিতে বললেন। যারা প্রথমেই খেয়েছিল, তারা মারা গেল। যারা অল্প খেয়েছিল, তাদের বমনকারক ঔষধ প্রয়োগের পর বমনান্তে ভেষজ ওষধি প্রয়োগে জীবনরক্ষা হল। এভাবেই বোধিসত্ত্বের অনুভাববলে তাদের প্রাণহানি ঘটল না।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১১৭: আপাতত পরিত্রাণ

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১০০: অসুস্থ শরীরেও ভক্তদের দীক্ষাদান শ্রীমার
এই কাহিনির প্রতিপাদ্য কী?
যা রসে, বর্ণে, গন্ধে মধুর মতোই, কিন্তু মধু নয় মোটেই, বরং ভয়ংকর বিষাক্ত হলাহল, সেই উগ্র বিষ নিশ্চিত প্রাণহানি করে, পদ্মপাতায় জলবিন্দুর মতোই জীবন খসে পড়ে। যারা সেই মধুর মাধুর্যের লোভটুকু অতিক্রম করতে পারে, তারা প্রকৃত বুদ্ধিমান।
যা রসে, বর্ণে, গন্ধে মধুর মতোই, কিন্তু মধু নয় মোটেই, বরং ভয়ংকর বিষাক্ত হলাহল, সেই উগ্র বিষ নিশ্চিত প্রাণহানি করে, পদ্মপাতায় জলবিন্দুর মতোই জীবন খসে পড়ে। যারা সেই মধুর মাধুর্যের লোভটুকু অতিক্রম করতে পারে, তারা প্রকৃত বুদ্ধিমান।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৮০: রাজনীতিতে সবাই চায় সবলের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে, দুর্বলরা সব সময়ই একা

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১০২: কণ্ঠী ঘুঘু
ওই অরণ্যপথ আসলে বাসনাসঙ্কুল জীবনপথ। পঞ্চেন্দ্রিয়জন্য কামক্রোধাদি গুহারূপ দেহে যমের মতো লুকিয়ে থাকে, প্রতারিত করতে চায় ওই যক্ষের মতোই। ধীমান মানুষ মৃত্যু ও জীবনের স্বরূপকে উপলব্ধি করে ওই পঞ্চকামাদিকে সাবধানে ত্যাগ করেন, পাপাদি অতিক্রম করে উত্তীর্ণ হন। এই কাহিনি সেই উত্তরণের পথটুকু দেখাতে চায়।—চলবে।
* ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।