অলঙ্করণ : সৌমি দাসমণ্ডল
শাক্য ঝুঁকে পড়ে দেখছিল। কাপাডিয়া একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছেন। সুদীপ্তও। থানায় খবর যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দু’জন হাবিলদারকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল আর দুজন সিভিক পুলিশকেও। তারা দুজন দুজন করে দুটি মার্ডার স্পটে পাহারা দিচ্ছিল। সুদীপ্ত উসখুশ করছিল। শাক্য একমনে চারপাশটা দেখছিল। সুদীপ্তর উচাটন ভাব অবশ্য তার নজর এড়ালো না। সে বলল, “আপনি কিছু বলবেন সুদীপ্ত?”
“বলছিলাম স্যার, আপনি যখন এই স্পটে আছেন, আমি অন্যটায় গিয়ে ছান্বিন্ এগিয়ে রাখি?”
শাক্য বুঝল, সুদীপ্ত নিজের বোধবুদ্ধি প্রমাণ করার জন্য একেবারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় বাধা দিলে সে পরে নানা অজুহাতে অসহযোগিতা করতে পারে। অতএব সে বলল, “নিশ্চয়ই। আপনি বরং ম্যানেজারবাবুকে নিয়ে ওই স্পটে যান। আমার এখানে তো দুজন আছেন, দরকার পড়লে আমি তাদের হেল্প নেবো। আপনি ওখানে গিয়ে দেখুন তত্ত্বতালাশ করে। আমি এদিকটা দেখে যাচ্ছি না হয়!”
“আচ্ছা স্যার”, বলে সুদীপ্ত এমন দৌড়ে চলে গেল যে, শাক্যকে সে আর কোনওভাবেই ওই স্পটে ছানবিনের সুযোগ দিতে রাজি নয়। শাক্য সেখানে যাওয়ার আগেই সে সেরে ফেলতে চায় সব তদন্ত। চাই কী আততায়ীকে গ্রেফতার করে ফেলতে পারলেও সে নিশ্চিন্ত হয়।
সেদিক থেকে মন সরিয়ে শাক্য অনিলের ডেডবডির দিকে তাকালো। পুলিশের ডাক্তার এখনো আসেন নি, তবে ফোটোগ্রাফার ভদ্রলোক ফোটো তুলছেন নানা দিক থেকে। এখানে ফোটো তুলে তিনি যাবেন দ্বিতীয় মার্ডার স্পটে।
“বলছিলাম স্যার, আপনি যখন এই স্পটে আছেন, আমি অন্যটায় গিয়ে ছান্বিন্ এগিয়ে রাখি?”
শাক্য বুঝল, সুদীপ্ত নিজের বোধবুদ্ধি প্রমাণ করার জন্য একেবারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় বাধা দিলে সে পরে নানা অজুহাতে অসহযোগিতা করতে পারে। অতএব সে বলল, “নিশ্চয়ই। আপনি বরং ম্যানেজারবাবুকে নিয়ে ওই স্পটে যান। আমার এখানে তো দুজন আছেন, দরকার পড়লে আমি তাদের হেল্প নেবো। আপনি ওখানে গিয়ে দেখুন তত্ত্বতালাশ করে। আমি এদিকটা দেখে যাচ্ছি না হয়!”
“আচ্ছা স্যার”, বলে সুদীপ্ত এমন দৌড়ে চলে গেল যে, শাক্যকে সে আর কোনওভাবেই ওই স্পটে ছানবিনের সুযোগ দিতে রাজি নয়। শাক্য সেখানে যাওয়ার আগেই সে সেরে ফেলতে চায় সব তদন্ত। চাই কী আততায়ীকে গ্রেফতার করে ফেলতে পারলেও সে নিশ্চিন্ত হয়।
সেদিক থেকে মন সরিয়ে শাক্য অনিলের ডেডবডির দিকে তাকালো। পুলিশের ডাক্তার এখনো আসেন নি, তবে ফোটোগ্রাফার ভদ্রলোক ফোটো তুলছেন নানা দিক থেকে। এখানে ফোটো তুলে তিনি যাবেন দ্বিতীয় মার্ডার স্পটে।
অনিলের বডিটা উপুড় হয়ে পড়েছে। পিছন থেকে কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে বডির যেমন পজিশন হওয়ার কথা তেমন কিন্তু নয়। সেক্ষেত্রে মৃত্যুর আগে যে স্পাজম্ হবে, তার দরুণ বডির পজিশন যেমনটি হওয়ার কথা তেমন নয়। এ যেন নিখুঁতভাবে পড়া। কেউ যেন বডিটা উপুড় করে শুইয়ে দিয়ে গিয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা হল, বারান্দা দিয়ে ধাক্কা মেরে নীচে ফেললে বারান্দার মোটামুটি নীচেই বডিতা পাওয়ার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে অনিলের বডি অনেকটাই দূরে ছিটকে পড়েছে। যদিও উপুড় হয়েই পড়েছে। কিন্তু তা কী করে সম্ভব? কালাদেও হোক কিংবা অন্য কেউ, এত ধৈর্য ধরে বডিকে শুইয়ে দেবে বলে তো মনে হয় না কারণ, তা তার পক্ষে রিস্ক ফ্যাক্টর হয়ে যেতে পারত! কেউ দেখে ফেললেই সর্বনাশ। কিন্তু এক্ষেত্রে তেমনটাই মনে হচ্ছে। আর লাশের মাথা সম্পূর্ণ থেঁতলানো। পড়ে গিয়ে মাথা থেঁতলে গেলে আশেপাশে রক্ত ও ঘিলুর যে স্পটস্ থাকত, তার কোন চিহ্নমাত্র দেখা যাচ্ছে না। হতে পারে, পড়ে গিয়ে নয়, আগেই খুন করে এখানে বডি ফেলে দেওয়া হয়েছে কিংবা রেখে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কী ভাবে?
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৩৯: ভালোবাসার ভোরে…
রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু! পর্ব-৪: উষ্মা প্রকাশ করে কালো ধোঁয়া উড়িয়ে চলে গেল বিপুল পালের জিপগাড়ি
এত শীতেও অনিলের পরনে একটা নামি কোম্পানির ইনারওয়্যার। সেটি ভিজে। সম্ভবত শিশির পড়ে ভিজে গিয়েছে। ভালো করে বডি পরীক্ষা করতে গিয়ে সে দেখল, ইনারের ঠিক উপরে পেত আর বুকের মাঝখানে একটা স্পট। অনেকসময় কোমরে বেল্ট কষে বাঁধলে যেমন দাগ পড়ে, তেমনই দাগ ! সে চিবুকে হাত রেখে চিন্তা করছিল, কী হতে পারে? দাগটা হাত দিয়ে ছুঁল। রক্ত, কাদা ইত্যাদি মিলেমিশে যেন দাগ পড়েছে। রক্তের দাগ হলে এইভাবে পড়বে কেন? বুঝতে চাইছিল সে। আশেপাশের ঘাসগাছ, কেয়ারি করা ফুলের গাছ একেবারে নিখুঁত। কোথাও কোন ধ্বস্তাধ্বস্তির চিহ্নমাত্র নেই। অতএব আততায়ী যে-ই হোক, শেষ লড়াইটা এখানে হয়নি।
শাক্যের সঙ্গে কাপাডিয়ার এসেই পরিচয় হয়েছিল। সে তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, “অনিলবাবুর রুম কোনটা?”
যেখানে ডেড বডি পড়েছিল, ঠিক তার উপরের দিকে দোতলার একটা বারান্দার দিকে হাত তুলে দেখিয়ে কাপাডিয়া বলল, “ঠিক উপরেরতাই স্যার!”
“আমাকে এক্ষুনি নিয়ে চলুন,” বলে হাবিলদারকে বলল, “এখানে যেন কেউ না ঢুকে পড়ে খেয়াল রাখো। তোমাদের ডাক্তারবাবু নিশ্চয়ই চলে আসবেন। তাঁকে বলো তিনি যেন একজামিন করেন, আমি আসছি ভিকটিমের রুমটা দেখে!”
কাপাডিয়া রুম খুলে দিয়েছিলেন। ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে এই প্রথম রুম খোলা হল। রুমের জানালা বন্ধ, বারান্দার দিকের দরজা লক্ নান হলেও আঁট করে বন্ধ করা। রুমে ঢুকতেই সে এক ধরণের মৃদু গন্ধ পেল। গন্ধটা খুব কড়া নয়, কিছুটা অন্যরকম। ঘরের মধ্যে বিছানায় কেউ শুয়েছিল, তার মানে অনিল পার্টি সেরে বিছানায় শুয়েছিলেন। বেডটা পরীক্ষা করল সে। সাদা চাদরের মাঝখানে একটা গোল দাগ। সিমেনের শুকিয়ে যাওয়া স্পট বলে মনে হল তার। ঘুমের মধ্যে ডিসচার্জ হয়েছিল না কি…! রুমের এক দিকে কাবার্ড, তার পাশেই টেবিল ও দুটি চেয়ার রাখা মুখোমুখি। টেবিলের উপর একখানি খালি হার্ড ড্রিংকের বটল্ রাখা, কিন্তু কোন গ্লাস চোখে পড়ল না। অ্যাসট্রেতে সিগারেটের ফিলটার প্রায় উপচে পড়ছে।
“উনি কী চেইন স্মোকার ছিলেন কাপাডিয়া, নোটিস করেছিলেন কী?”
যেখানে ডেড বডি পড়েছিল, ঠিক তার উপরের দিকে দোতলার একটা বারান্দার দিকে হাত তুলে দেখিয়ে কাপাডিয়া বলল, “ঠিক উপরেরতাই স্যার!”
“আমাকে এক্ষুনি নিয়ে চলুন,” বলে হাবিলদারকে বলল, “এখানে যেন কেউ না ঢুকে পড়ে খেয়াল রাখো। তোমাদের ডাক্তারবাবু নিশ্চয়ই চলে আসবেন। তাঁকে বলো তিনি যেন একজামিন করেন, আমি আসছি ভিকটিমের রুমটা দেখে!”
কাপাডিয়া রুম খুলে দিয়েছিলেন। ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে এই প্রথম রুম খোলা হল। রুমের জানালা বন্ধ, বারান্দার দিকের দরজা লক্ নান হলেও আঁট করে বন্ধ করা। রুমে ঢুকতেই সে এক ধরণের মৃদু গন্ধ পেল। গন্ধটা খুব কড়া নয়, কিছুটা অন্যরকম। ঘরের মধ্যে বিছানায় কেউ শুয়েছিল, তার মানে অনিল পার্টি সেরে বিছানায় শুয়েছিলেন। বেডটা পরীক্ষা করল সে। সাদা চাদরের মাঝখানে একটা গোল দাগ। সিমেনের শুকিয়ে যাওয়া স্পট বলে মনে হল তার। ঘুমের মধ্যে ডিসচার্জ হয়েছিল না কি…! রুমের এক দিকে কাবার্ড, তার পাশেই টেবিল ও দুটি চেয়ার রাখা মুখোমুখি। টেবিলের উপর একখানি খালি হার্ড ড্রিংকের বটল্ রাখা, কিন্তু কোন গ্লাস চোখে পড়ল না। অ্যাসট্রেতে সিগারেটের ফিলটার প্রায় উপচে পড়ছে।
“উনি কী চেইন স্মোকার ছিলেন কাপাডিয়া, নোটিস করেছিলেন কী?”
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৬: বুকে ব্যথা মানেই কি গ্যাসের ব্যথা? হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ না কি গ্যাসের ব্যথা, বুঝবেন কী ভাবে?
অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-১০: কী উপহার সাজিয়ে দিলে…
কাপাডিয়া বললেন, “ঠিক বলতে পারব না স্যার। অত খেয়াল করিনি। তবে কাল রাতে পার্টিতে চুরুট আছে কি না জিজ্ঞাসা করছিলেন একবার। আমি বললাম, আমি চুরুট খাই না। আমাদের ভাঁড়ারে সিগারেট আর হার্ড ড্রিংক থাকে, লাইসেন্স আছে স্যার হার্ড ড্রিংক রাখার, কিন্তু চুরুট ? নাহ্, ওটা থাকে না!”
“হূম!” শাক্য ভাবল, এই রুমটা সিল করতে হবে। আরো বড় পুলিশ ফোর্স নিয়ে আসা দরকার ছিল। ভুল হয়ে গিয়েছে তার। লোকাল ছোট থানা একই দিনে একই স্পটের দু’ জায়গায় দু’দুটো মার্ডার কেস সামলানোর মতো ফোর্স দিতে পারবে না—সেটা মাথায় আসে নি বলে আক্ষেপ হল নিজের উপরে। যাই হোক, আপাতত এই রুমে কাউকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না, সেটা কাপাডিয়াকে ভালো করে বুঝিয়ে দিতে হবে।
সে কাবার্ড খুলল। ভেজানো ছিল। কাবার্ডে অবশ্য সামান্য কয়েকটা জামাকাপড় হ্যাংগারে ঝুলছে, একটা চশমার কেস, একটা লেদারের দামি ব্যাগ রাখা। ব্যাগটায় কম্বিনেশন কী দেওয়া। এটা থানায় নিয়ে গিয়ে দেখতে হবে। কিন্তু তার আগে বারান্দাটা দেখা দরকার। কারণ, রুমের মধ্যে সে যা খুঁজছিল, তা পাচ্ছে না। রক্তের ছিটে! সঙ্গে ঘিলু। যদি মার্ডারটা এখানে হিওয়ে থাকে তাহলে…! হঠাৎ কী মনে হতে সে ওয়াশরুমের দরজাটা ওপেন করল। ঝকঝকে-তকতকে ওয়াশরুম। ওয়াশরুমে ফ্রেশনারের গন্ধ ভুরভুর করছে।
“আপনারা কোন্ ফ্রেশনার ব্যবহার করেন ম্যানেজারবাবু?”
“হূম!” শাক্য ভাবল, এই রুমটা সিল করতে হবে। আরো বড় পুলিশ ফোর্স নিয়ে আসা দরকার ছিল। ভুল হয়ে গিয়েছে তার। লোকাল ছোট থানা একই দিনে একই স্পটের দু’ জায়গায় দু’দুটো মার্ডার কেস সামলানোর মতো ফোর্স দিতে পারবে না—সেটা মাথায় আসে নি বলে আক্ষেপ হল নিজের উপরে। যাই হোক, আপাতত এই রুমে কাউকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না, সেটা কাপাডিয়াকে ভালো করে বুঝিয়ে দিতে হবে।
সে কাবার্ড খুলল। ভেজানো ছিল। কাবার্ডে অবশ্য সামান্য কয়েকটা জামাকাপড় হ্যাংগারে ঝুলছে, একটা চশমার কেস, একটা লেদারের দামি ব্যাগ রাখা। ব্যাগটায় কম্বিনেশন কী দেওয়া। এটা থানায় নিয়ে গিয়ে দেখতে হবে। কিন্তু তার আগে বারান্দাটা দেখা দরকার। কারণ, রুমের মধ্যে সে যা খুঁজছিল, তা পাচ্ছে না। রক্তের ছিটে! সঙ্গে ঘিলু। যদি মার্ডারটা এখানে হিওয়ে থাকে তাহলে…! হঠাৎ কী মনে হতে সে ওয়াশরুমের দরজাটা ওপেন করল। ঝকঝকে-তকতকে ওয়াশরুম। ওয়াশরুমে ফ্রেশনারের গন্ধ ভুরভুর করছে।
“আপনারা কোন্ ফ্রেশনার ব্যবহার করেন ম্যানেজারবাবু?”
কাপাডিয়া বললেন, “আজ্ঞে, সেটা তো রোজ করা হয় না। এমনিতে ওয়াশরুমে আমরা ফ্রেশনার হিসেবে জেলি ব্যবহার করি। তা রাখাই থাকে। মাসে একবার হয়তো বদলানো হয়। রোজ হয় না !”
তাহলে এই ফ্রেশনারটা নতুন। ইচ্ছে করে কেউ ছড়িয়েছে। কালাদেও অন্তত নয়। কারণ, এতটাও আপডেটেড সে হয়ে যায় নি যে, মার্ডার করতে বেরুবে রুম-ফ্রেশনার নিয়ে। কিন্তু কেন? গন্ধ ঢাকবার জন্য? কোন গন্ধ? আঁশটে গন্ধ কী? তার এক বন্ধু মাছ বাজার করতে পাঠালেই ফিরে এসে গায়ে পারফিউম লাগাত গাদা গাদা করে, বলত, নাহলে মাছের আঁশটে গন্ধ যাবে না! এখানেও কী…? মনে হতেই তার সারা শরীরে চমক লাগল। রক্ত আর ঘিলুর গন্ধ ঢাকতেও তো রুম-ফ্রেশনার ব্যবহার করা হতে পারে। আর যদি সে খুব ভুল না করে তাহলে মার্ডারটা এই ওয়াশরুমেই হয়েছে। সে পাতিপাতি করে দেখে অবশেষে দেওয়ালে এক জায়গায় রক্তের আর মজ্জার সূক্ষ্ম চিহ্ন আবিষ্কার করতে পারল। খুনি যতই ধুয়ে মুছে সাফ করুক না কেন, এই জায়গাটা তার নজর এড়িয়ে গিয়েছে। এই জন্যই নীচে অনিলের ইনারউইয়্যার ভেজা ছিল। সে ভাবছিল বোধহয়, শিশির পড়ে ভিজেছে।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সে দরজা খুলে বারান্দায় গেল। তার ইনটুইশন বলছে, বারান্দার রেলিং-এ কোন দাগ থাকবেই থাকবে। নীচে হাবিলদার আর সিভিক পুলিশকে চোখে পড়ল তার। তাকে বারান্দায় দেখে দু’জনেই তাকিয়েছিল মুখ তুলে তার দিকে। অথবা ওরা আগে থেকেই লক্ষ্য রাখছিল। শাক্য হাবিলদারকে হাতের ইশারায় ডাকল, উপরে আসতে বলল। তারপর রেলিং পরীক্ষা করতে লাগল সে। বেশিক্ষণ লাগল না, যা খুঁজছিল পেয়ে গিয়েছে সে, রেলিং-এর গোবরাটে স্পষ্টই দাগ আছে। পাশাপাশি দু’-দুটো দাগ। তার মানে সে যা ভাবছে তেমনটাই হয়েছিল। এখানে মার্ডার করে তারপর মার্ডারার একটা বড় দড়ির দুপ্রান্ত বেঁধে নিয়েছিল রেলিং-এর গোবরাটে। তারপর ঠিক যেমন দোলনায় মাঝামাঝি বসে আমরা দোল খাই, আর একটু জোরে দুললে ছিটকে পড়ি এবং সবসময়েই উপুড় হয়েই ছিটোকে পড়ি এক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে।
তাহলে এই ফ্রেশনারটা নতুন। ইচ্ছে করে কেউ ছড়িয়েছে। কালাদেও অন্তত নয়। কারণ, এতটাও আপডেটেড সে হয়ে যায় নি যে, মার্ডার করতে বেরুবে রুম-ফ্রেশনার নিয়ে। কিন্তু কেন? গন্ধ ঢাকবার জন্য? কোন গন্ধ? আঁশটে গন্ধ কী? তার এক বন্ধু মাছ বাজার করতে পাঠালেই ফিরে এসে গায়ে পারফিউম লাগাত গাদা গাদা করে, বলত, নাহলে মাছের আঁশটে গন্ধ যাবে না! এখানেও কী…? মনে হতেই তার সারা শরীরে চমক লাগল। রক্ত আর ঘিলুর গন্ধ ঢাকতেও তো রুম-ফ্রেশনার ব্যবহার করা হতে পারে। আর যদি সে খুব ভুল না করে তাহলে মার্ডারটা এই ওয়াশরুমেই হয়েছে। সে পাতিপাতি করে দেখে অবশেষে দেওয়ালে এক জায়গায় রক্তের আর মজ্জার সূক্ষ্ম চিহ্ন আবিষ্কার করতে পারল। খুনি যতই ধুয়ে মুছে সাফ করুক না কেন, এই জায়গাটা তার নজর এড়িয়ে গিয়েছে। এই জন্যই নীচে অনিলের ইনারউইয়্যার ভেজা ছিল। সে ভাবছিল বোধহয়, শিশির পড়ে ভিজেছে।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সে দরজা খুলে বারান্দায় গেল। তার ইনটুইশন বলছে, বারান্দার রেলিং-এ কোন দাগ থাকবেই থাকবে। নীচে হাবিলদার আর সিভিক পুলিশকে চোখে পড়ল তার। তাকে বারান্দায় দেখে দু’জনেই তাকিয়েছিল মুখ তুলে তার দিকে। অথবা ওরা আগে থেকেই লক্ষ্য রাখছিল। শাক্য হাবিলদারকে হাতের ইশারায় ডাকল, উপরে আসতে বলল। তারপর রেলিং পরীক্ষা করতে লাগল সে। বেশিক্ষণ লাগল না, যা খুঁজছিল পেয়ে গিয়েছে সে, রেলিং-এর গোবরাটে স্পষ্টই দাগ আছে। পাশাপাশি দু’-দুটো দাগ। তার মানে সে যা ভাবছে তেমনটাই হয়েছিল। এখানে মার্ডার করে তারপর মার্ডারার একটা বড় দড়ির দুপ্রান্ত বেঁধে নিয়েছিল রেলিং-এর গোবরাটে। তারপর ঠিক যেমন দোলনায় মাঝামাঝি বসে আমরা দোল খাই, আর একটু জোরে দুললে ছিটকে পড়ি এবং সবসময়েই উপুড় হয়েই ছিটোকে পড়ি এক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে।
আরও পড়ুন:
পরিযায়ী মন, পর্ব-১৫: তিনচুলে ও লেপচাজগৎ এর মেঘ-আলয়ে
কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-১৪: একটু হোক-ফোক!
সেই কারণেই বডি বারান্দার ঠিক নীচে না পড়ে একটু দূরে ছিটকে পড়েছে কিন্তু উপুড় হয়েই পড়েছে। তারপর কাজ মিটে গেলে দড়িটা খুলে নেওয়া হয়েছে সন্তর্পণে। আততায়ী যেই হোক, তার ধুরন্ধর বুদ্ধি। সে একা সম্পূর্ণ কাজটি করলে, তাকে যথেষ্ট শক্তিশালী বলতে হবে। একার পক্ষে অনিলের বডি তুলে আনা, বারান্দা দিয়ে ওইভাবে ফেলা মুখের কথা নয়। ওয়াশরুম নিশ্চয় তার আগেই পরিষ্কার করা হয়েছে। কারণ, নীচে বডি ফেলার পর এখানে থাকার রিস্ক আততায়ী নেবে না। অতএব কোনওরকমে দড়ি খুলে নিয়েই সে পালিয়ে গেছে রুম ছেড়ে। কিন্তু সেক্ষেত্রে বডির ব্লিডিং তো এত সহজে বন্ধ হওয়ার নয়। কোন টাওয়েল বা ওই জাতীয় কিছু জড়িয়ে রেখেছিল কী আততায়ী ? সেক্ষেত্রে রিসর্টের আশেপাশেই কোথাও ইতিমধ্যেই সেটা ফেলে দেওয়া হয়েছে। খুঁজে দেখতে বলতে হবে সুদীপ্তকে।
তবে খুনের সময় ভোর রাতই হবে, বা তার সামান্য কিছু আগে। কারণ, পার্টি থেকে সকলে দুটোর কাছাকাছি সময়ে বা তার সামান্য আগে রুমে চলে গিয়েছিল। অনিলও। তারপর কী ঘটেছিল সেটাই খুঁজে দেখার চেষ্টা করতে হবে। যে বলতে পারত, সে ধরাধামে নেই, অতএব অনুমান ও প্রমাণ—দুই ভরসা!—চলবে।
তবে খুনের সময় ভোর রাতই হবে, বা তার সামান্য কিছু আগে। কারণ, পার্টি থেকে সকলে দুটোর কাছাকাছি সময়ে বা তার সামান্য আগে রুমে চলে গিয়েছিল। অনিলও। তারপর কী ঘটেছিল সেটাই খুঁজে দেখার চেষ্টা করতে হবে। যে বলতে পারত, সে ধরাধামে নেই, অতএব অনুমান ও প্রমাণ—দুই ভরসা!—চলবে।
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel): পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।