রবিবার ৮ জুন, ২০২৫


কলকাতায় বৃষ্টি

ছবি: প্রতীকী।

মা সারদা তাঁর সময় হয়ে আসছে বুঝতে পেরে নিজের পরিবারের প্রতি বিশেষ করে রাধুর উপর থেকে মন তুলে নিলেন। রাধুকে কেবল একটা কথাই তিনি বলেছিলেন, ‘তুই আমার কী করবি, আমি কি মানুষ?’ পরে রাধু ব্রহ্মচারি অক্ষয়চৈতন্যকে বলেছিল, ‘আমি তো তাঁকে নিজের পিসিমা বলেই জানতুম। আমি কি জানতুম যে তিনি মানুষ নন, দেবতা?’ এই কথাক’টি বলে রাধু আর কিছু বলতে পারেনি, অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। এই অসুখের সময়ও শ্রীমাকে আত্মীয় বিয়োগের কারণে পর পর তিনটি আঘাত সহ্য করতে হয়।
১৩২৭ সালের এগারো বৈশাখ তাঁর দক্ষিণেশ্বরের সেবক লাটু মহারাজ কাশীধামে মহাসমাধি লাভ করেন। একত্রিশে বৈশাখ তাঁর মন্ত্রশিষ্য ও পরম ভক্ত রামকৃষ্ণ বসু কলকাতায় দেহরক্ষা করেন। আর ৬ ভাদ্র শ্রীমার নিজের ভাই বরদাপ্রসাদ নিউমোনিয়ার জ্বরে ভুগে জয়রামবাটিতে দেহত্যাগ করেন। এই তিনটে খবর শুনেই মা সারদা খুব কেঁদেছিলেন। তিনি শরৎ মহারাজকে ডেকে বলেছিলেন যে, তাঁর অদর্শনে যারা নিরাশ্রয় বোধ করবে, তাদের ভার তিনি শরৎ মহারাজের উপর ন্যস্ত করলেন।
আরও পড়ুন:

গল্পবৃক্ষ, পর্ব-২৬: বর্ণারোহ জাতক— গুজবে কান দেবেন না

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১৮: কবির ভালোবাসা, কবির জন্য ভালোবাসা

বিভূতিবাবু জানিয়েছেন যে, ‘দেহরক্ষার প্রায় সাতদিন আগে সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ শ্রীমা আমাকে বললেন, বিভূতি, শরৎকে ডেকে নিয়ে এস। আমি নিচে গিয়ে মহারাজকে বললাম যে, মা আপনাকে ডাকচেন’। মহারাজ সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন, ‘যাচ্চি’। আমি তাড়াতাড়ি ওপরে উঠে এসে দেখি, মা অপলক চোখে চেয়ে আচেন। দু’তিনদিন আগে তাঁকে মেঝেতে বিছানার উপর শোয়ানো হয়েছে। আমি বললাম, মা, মহারাজ আসচেন। মা বললেন, তুমি আমাকে জোরে হাওয়া কর। আমি বড় পাখাটা নিয়ে হাওয়া করতে লাগলাম। শরৎ মহারাজ এলেন। এসেই মার পায়ের তলায় বাঁদিকে হাঁটু গেড়ে বুক নীচু করে যেমনি মায়ের হাতের উপরে নিজের হাত বুলাতে যাবেন, মা অমনি মহারাজের ডান হাতটি নিজের বাঁ হাতের নীচে রেখে বললেন, শরৎ, এরা সব রইল। তখন মার মুখ খুব কাতর দেখালো। তিনি হাত সরিয়ে নিলেন আর মহারাজ আস্তে আস্তে দাঁড়িয়ে পেছন দিকে হেঁটে ঘর থেকে বাইরে চলে গেলেন’।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১১৭: আপাতত পরিত্রাণ

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১০০: অসুস্থ শরীরেও ভক্তদের দীক্ষাদান শ্রীমার

শ্রীমার দেহরক্ষার পাঁচদিন আগে অন্নপূর্ণার মা তাঁকে দেখতে আসেন। তিনি দ্বারে বসেছিলেন, হাতের ইশারায় শ্রীমা তাকে কাছে ডাকলেন। অন্নপূর্ণার মা কেঁদে বলল, ‘মা, আমাদের কি হবে?’ ক্ষীণস্বরে শ্রীমা বললেন, ‘তুমি ঠাকুরকে দেখেচ, তোমার আবার ভয় কি? তবে একটি কথা বলি, যদি শান্তি চাও, কারও দোষ দেখো না, দোষ দেখবে নিজের। জগৎকে আপনার করে নিতে শেখ। কেউ পর নয় মা, জগৎ আপনার’।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৮০: রাজনীতিতে সবাই চায় সবলের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে, দুর্বলরা সব সময়ই একা

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১০২: কণ্ঠী ঘুঘু

মা সারদার এই কথাটি বহুচর্চিত। কিন্তু আমরা কেউ খেয়াল করে দেখি না, বা জানিনা যে, এই কথাটির মধ্যে উপনিষদের সেই মহাবাক্যবাণী ‘সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম’ (এ জগতের সবকিছু ব্রহ্ম বৈ আর কিছু নয়) নিহিত রয়েছে। যা খুব সহজ, সরলভাবে শ্রীমা বলে গেছেন। প্রথমদিকে কেবল সরলাদেবী ও মন্দাকিনী শ্রীমার শুশ্রূষা করতেন। তবে যখন তাঁর শরীরের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে পড়ল, তখন সদা তাঁর কাছে থাকার লোকের আবশ্যকতা দেখা দিল। সেই সময় সুধীরার ব্যবস্থাপনায় নিবেদিতা বিদ্যালয়ের মেয়েরা পালাক্রমে শ্রীমার সেবার ভার গ্রহণ করে।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৮০: রাজনীতিতে সবাই চায় সবলের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে, দুর্বলরা সব সময়ই একা

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৮০: রাজনীতিতে সবাই চায় সবলের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে, দুর্বলরা সব সময়ই একা

সুধীরা আর মীরা সন্ধ্যে থেকে রাত ন’টা পর্যন্ত শ্রীমার কাছে থাকতেন। তারপর শ্রীমার শিষ্যা চপলাদেবী রাত দুটো অবধি আর প্রফুল্ল ভোর পাঁচটা পর্যন্ত থাকত। বাণী, মালতী প্রভৃতি কমবয়সী মেয়েরা দিনের বেলা থেকে মা সারদাকে বাতাস করত। স্বামী অসিতানন্দ ও ঈশানানন্দ প্রয়োজনীয় যে কোন কাজ করার জন্য দিন ও রাতের অধিকাংশ সময় কাছে থাকতেন।—চলবে।
* ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content