বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


অলঙ্করণ: লেখক।

পঁচিশে সেপ্টেম্বরে কী করা উচিত? ঘোষণা অনুযায়ী, ‘ওয়ার্ল্ড ড্রিম ডে’ এই দিনটা। স্বপ্ন দেখুন, স্বপ্ন দেখান। স্বপ্নালু যারা, অথবা যারা তেমন নয়, তাদের সকলের জন্য বিশ্ব স্বপ্ন দিবস। কেউ বলবেন, স্বপ্ন-ও এক চেতন অবস্থা, কেউ বলবেন আকাঙ্ক্ষার পরিতৃপ্তি যেখানে সেটাই স্বপ্ন, কেউ বলবেন ঘুমের ঘোরে যা আসে তা স্বপ্ন নয়, যা জাগিয়ে রাখে তা-ই স্বপ্ন।
দুষ্যন্ত একবার ভেবেছিলেন, “স্বপ্নো নু মায়া নু মতিভ্রমো নু”, শাস্ত্র দিবাস্বপ্নকে জুয়াখেলার মতোই অন্যায় বলতে চায়। তবে অনেকদিন আগে থেকেই পূর্ণিমার চাঁদকে ঝলসানো রুটি মনে হয়েছে, কাস্তেকে মনে হয়েছে বাঁকা চাঁদ। এই যেমন, সামনের গাছটা বা মানুষটা যদি স্বপ্নেও একইরকম হতো, তাহলে স্বপ্নের মাহাত্ম্য থাকতো কি? যেটা হয় না সেটা স্বপ্ন, যেটা হতে পারে সেটাও স্বপ্ন। দাবদাহে বৃষ্টি স্বপ্ন, শীতে উষ্ণতা স্বপ্ন, বর্ষায় গ্রীষ্ম স্বপ্ন।
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-১৫: আর যাহা খায় লোকে স্বদেশে ও বিদেশে / খুঁজে পেতে আনি খেতে-নয় বড় সিধে সে!…

প্রথম আলো, পর্ব-৭: বিশ্বে মার্শাল আর্ট কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল?

স্বপ্ন যেমন অলীক, অবাস্তব তেমনই আবার তেমনটাও নয়। মোট কথা, প্রত্যক্ষ, বাস্তব হয়তো স্বপ্ন নয়। ‘হয়তো’। কারণ কখনও কখনও তাকে স্বপ্ন বলে মনে হতে পারে। সত্য কি স্বপ্ন? হয় তো, বা হয় তো নয়। কিন্তু সেপ্টেম্বরে যখন এই স্বপ্নদিবসের উদযাপন তখন বঙ্গীয় মতে ভাবা যায় খানিক। বঙ্গীয় মতে, এখন আশ্বিন। বছরের ষষ্ঠ মাস। আর সেপ্টেম্বর নবম। নয়-ছয় অবস্থা যাকে বলে। যাহোক, নয় নয় করে এই নবম মাসটাকেই ধরা যাক। বিশ্বজনীন ব্যাপারে সাহেবী রীতি বলবত, তাতে বঙ্গীয় মোড়ক।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৩০: রামচন্দ্রের রাজ্যাভিষেক, আনন্দের আবহে রাজা দশরথের দুঃস্বপ্ন, কোন অশুভ সংকেত?

পালকিতে যেতে যেতে লেখা হয়েছিল ‘বর্ণপরিচয়’

অতয়েব, পঁচিশ নয় তেইশ তারিখেই এবছরের এই স্বপ্নের দিন। পঁচিশ তেইশ নয় সে তো সকলের জানা। আরও খানিক এগোলেই জানা যাবে পঁচিশ নয় পঁচিশ। এমনকী, এই ক’দিন আগেই তেইশ নয় তেইশ গেল। যদি তেইশ, পঁচিশ “নয়” হয়ে যায়, আমি-তুমিও, তাহলে কী দাঁড়ায়? আমি আমি নই, তুমি হয়ে উঠলেই আমি খুশি, আকাঙ্ক্ষার পরিতৃপ্তি, তুমিও সে হতে চাও। এটাই বুঝি স্বপ্ন। কেউ কেউ বলবেন, ওই ‘নয়’টাই নব, নবীন। নতুন নতুন আনন্দের, খুশির, মজার, দুঃখের, আতঙ্কের, হিমেল, দগদগে, রক্ত-জল, ইচ্ছার, অনিচ্ছার, পাওয়ার, না পাওয়ার, হারানোর, যুক্তিহীন, অনির্বচনীয়, রঙিন বা সাদাকালো স্বপ্ন দেখা যায়, কিন্তু তাকে মনে রাখা, তার ভার বহন করা সহজ নয়। বিশেষত এতো নয় নয়ের মধ্যে।
আরও পড়ুন:

ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-১২: স্বপ্নাদেশের দেবী ভবানী

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৫: সুন্দরবনের বিসূচিকা রোগের অধিষ্ঠাত্রী দেবী ওলাবিবি

কবিরা কখনও স্বপনদোলা নাচিয়ে খেয়ালে ভেসে আসতে বলেন, কখনও কেবলই স্বপন বপন করে যান, আধেক ঘুমে নয়ন চুমে স্বপ্ন নামে, তখন স্বপনপারের ডাক শোনা যায়, খুলে যায় স্বপ্নলোকের চাবি, অচিরেই স্বপনপ্রায় সব ফুরোতেও দেখা যায়। তারপর—
“স্বপ্ন হঠাৎ উঠল রাতে প্রাণ পেয়ে/ মৌন হতে ত্রাণ পেয়ে/ ইন্দ্রলোকের পাগলাগারদ/ খুলল তারই দ্বার/ পাগল ভুবন দুর্দাড়িয়া/ ছুটল চারিধার/ দারুণ ভয়ে মানুষগুলোর চক্ষে বারিধার/ বাঁচল আপন স্বপন হতে/ খাটের তলায় স্থান পেয়ে” [খাপছাড়া (১০৫): রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]

আমরা বুঝতে পারি কেন “নয় নয় এ মধুর খেলা!”
স্বপ্ন ও অস্তি-নাস্তির এই দ্বন্দ্বে কেউ কেউ বলবেন “স্বপন যদি মধুর এমন, হোক না মিছে কল্পনা জাগিও না আমায়, জাগিও না।”
অতয়েব, ঘুমিয়ে, জেগে, দিনে-রাতে যখনই স্বপ্ন দেখতে চান?
“এসো ভাই, তোলো হাই, শুয়ে পড়ো চিত,
অনিশ্চিত এ সংসারে এ কথা নিশ্চিত—
জগতে সকলি মিথ্যা সব মায়াময়,
স্বপ্ন শুধু সত্য আর সত্য কিছু নয়।
স্বপ্নমঙ্গলের কথা অমৃতসমান,
গৌড়ানন্দ কবি ভনে, শুনে পুণ্যবান।”
[হিং টিং ছট: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]
* হুঁকোমুখোর চিত্রকলা : লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

Skip to content