রবিবার ৮ জুন, ২০২৫


কলকাতায় বৃষ্টি
কাল রাতেই জায়গাটা পরীক্ষা করেছিল তারা দু’জনে। কিন্তু রাত্রে সব ভালো করে দেখা সম্ভব নয়, যতই আলো থাকুক না কেন। অতএব দিনের আলোয় জায়গাটা আরেকবার ভালো করে দেখা জরুরি ছিল। সেই কাজটিই করছিল শাক্য এবং সুদীপ্ত। দু’জনে এই ক-দিনে একেবারে হরিহরআত্মা হয়ে উঠেছে। তবে তদন্ত-চলাকালীন একজন বস, আর একজন তার সাবর্ডিনেট। এই সম্পর্কটা বজায় রাখা সিস্টেমের জন্যই উচিত বলে তারা মনে করে দু’জনেই।
কাপাডিয়া এখনও সুস্থ নন, তাও সঙ্গে আসবেন বলছিলেন। কিন্তু শাক্য জোর ধমক দেওয়ায় আপাতত ক্ষান্ত হয়েছেন। তবে সঙ্গে একজন লোক দিয়েছেন, জগন্নাথ সাউ। যদি কোন দরকার হয়, তাহলে সাহায্য করবে। সে কাছেই দাঁড়িয়ে আছে।
শাক্যর দরকার ছিল না। তাছাড়া তদন্তের সময় বাইরের কারও উপস্থিতি সে তেমন পছন্দ করে না। কে-যে শত্রুপক্ষের পার্টনার অফ ক্রাইম আর কে-যে তা নয়, তা কে বলতে পারে? সে-জন্য ধমকধামক দিয়ে বেশ দূরেই জগন্নাথকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে শাক্য। থানা থেকে দু’জন কনস্টেবলকে নিয়ে এসেছে সুদীপ্ত। ফোটোগ্রাফার ভদ্রলোকও আছেন। নির্দেশ অনুযায়ী ছবি তুলবেন বলে। সবাই তাঁরা পাশেই দাঁড়িয়ে।
কাল রাতের বেলায় শাক্য দেখেছিল, পিছনের গেটের একপাশে যেখানে ফুল ও আগাছার ঝোপ, তার পিছনের একটুখানি অংশের ঘাস অনেকটা থেঁতলে গিয়েছে, যা দেখে সে অনুমান করেছিল, এখানে কেউ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছিল, তা-না-হলে ঘাসগুলি এতখানি থেঁতলে যেতে পারে না। এখন সকালে ঘাসগুলি সামান্য সামলে নিয়েছে বটে কিন্তু থেঁতলানো অংশ তো রাতারাতি নতুন ঘাসে ছেয়ে যেতে পারে না, ফলে এখনও বেশ বোঝা যাচ্ছে। পকেট থেকে টেপ বার করে দৈর্ঘ্য মেপে শাক্য ফোটোগ্রাফার ভদ্রলোককে বলল, “ছবি তুলে রাখুন।”
সুদীপ্ত বলল, “এনি ফাইন্ডিংস্?”
শাক্য বলল, “পায়ের লেংথ মোটামুটি আট বা সাড়ে সাত। তবে আর-একটু বেশি অংশের ঘাস থেঁতলে রয়েছে। দেখে মনে হবে, নয় ফিটের কাছাকাছি পায়ের লেংথ। জুতোর মাপ অবশ্য নয় ফিটই। তবে পায়ের মাপ নয়!”
“কী করে বলছেন স্যার এ-কথা?” সুদীপ্ত শিখে নিতে চাইছিল তদন্তের পদ্ধতি। শাক্যর কাজ যতই দেখছিল, ততই মুগ্ধ হচ্ছিল সে। এত খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে দেখে শাক্যদা!
“সুদীপ্ত। আপনি ভালো করে নিজেই দেখুন। বসে পড়ুন। দাঁড়িয়ে থাকলে খুঁটিয়ে দেখবেন কী করে? বসুন। “সুদীপ্ত হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে সেই থেঁতলানো অংশের দিকে চোখ রাখলে শাক্য সেদিকে দেখিয়ে বলল, “দেখুন, মাপছি আবার। কী দেখছেন? ন’ ফিটের সামান্য বেশি অংশের ঘাস থেঁতলে গিয়েছে। তাই তো?”
“হ্যাঁ!”
“কিন্তু দেখুন, আততায়ী, সে কালাদেও হলে কালাদেও, না-হলে অন্য কেউ, সে জুতো পায়ে দেয়, কিন্তু নিজের পায়ের চেয়ে বড় সাইজের জুতো। সেইকারণে দেখুন আট ফিটের কাছাকাছি, সামান্য কমই হবে, যে- অংশের ঘাস বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তার কারণ, পা ছোট বলে জুতোর মাপের পিছনদিকের ঘাসের উপর শরীরের ভার তেমন করে পড়েনি, ফলে এক ফিটের কাছাকাছি অংশের ঘাস ততটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, যদিও জুতো চাপা পরার ফলে ঘাসের ডগার দিকগুলির কিছুটা ক্ষতি হয়েছে মাত্র। তা-না-হলে, পায়ের দৈর্ঘ্য যদি ন’ফিটই হত, তাহলে ন’ফিটের ঘাসই সমানভাবে থেঁতলে যেত।”
সুদীপ্ত দেখে চমৎকৃত হল। সত্যিই এভাবে তো সে ভাবেনি।
শাক্য বলল, “আততায়ীর ওজন কিন্তু ভালোই, প্রায় পঁচাত্তর। তা-না-হলে ঘাস এভাবে থেঁতলাতে পারত না। হালকা-পলকা মানুষের শরীরের চাপে এভাবে ঘাসের ক্ষতি হত না। সে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও।”
এই সময় সুদীপ্ত দেখল, হাত খানেক তফাতে একটা সদ্য-ব্যবহৃত বিয়ারের খালি বোতল পড়ে আছে। দামি বিয়ার নয়, সাধারণ বিয়ারের বোতল। সে শাক্যকে ডেকে বলল, “স্যার, ওদিকে দেখুন, একটা সদ্য-খালি হওয়া বিয়ারের বোতল পড়ে আছে। বোতলটা কাল রাতে আততায়ী ব্যবহার করলে আশ্চর্য হবো না!”
“বিয়ারের বোতল!” অবাক গলায় প্রশ্ন করল শাক্য।
“হ্যাঁ স্যার। বিয়ারের বোতল। ওইদিকে দেখুন না!” বলে সুদীপ্ত তার আঙুল তুলে দেখাল জায়গাটি।
সেদিকে তাকিয়ে শাক্য বলল, “স্ট্রেঞ্জ!”
“কেন স্যার, কেন? স্ট্রেঞ্জ বলছেন কেন?”
“তার কারণ, আমি কাল রাতে তন্নতন্ন করে আলো ফেলে দেখেছি, তখন ওখানে কোন বিয়ারের বোতল পড়ে ছিল না, এ-কথা নিঃসন্দেহে বলতে পারি। তাহলে আমরা চলে যাওয়ার পরে কেউ এখানে এসেছিল সেই বিয়ার খেয়েছে মনে করা যেতে পারে, নয়তো…” শাক্যর গলার স্বর কেমন সন্দিগ্ধ-সতর্ক হয়ে উঠল। সে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা জগন্নাথকে ডাকল।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১১৭: আপাতত পরিত্রাণ

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১১৬: রাম যৌথ পরিবারের আদর্শনিষ্ঠ জ্যেষ্ঠ, তাঁর যেন এক ঘরোয়া ভাবমূর্তি

জগন্নাথ কাছে আসতে শাক্য বলল “আচ্ছা জগন্নাথ, গতকাল তোমাদের ম্যানেজারবাবুর সঙ্গে ওইরকম মারাত্মক একটি ঘটনা ঘোতে যাওয়ার পর এখানে কেউ এসেছিলে তোমরা?”
জগন্নাথ আকাশ থেকে পড়ল যেন, “কই, না তো স্যার! আপনারাই তো বলে গেলেন, জায়গাটায় ওই কাণ্ড ঘটেছে, অনেক সূত্র লুকিয়ে আছে হয়তো, আজ সকালে আপনারা আবার আসবেন, তার আগে আমরা কেউই যেন ওদিকে না যাই! তার পরেও আমাদের ঘাড়ে ক’টা মাথা যে, এখানে পা রাখবো স্যার!”
“সে-তো বুঝলাম। কিন্তু এখানে যে কেউ-না-কেউ এসেছে আমরা চলে যাওয়ার পর…!”
“আজ্ঞে স্যার, আমি কিছু জানি না!” তটস্থ হয়ে বলল জগন্নাথ সাউ।
“কে বলতে পারবে?” সুদীপ্ত জিজ্ঞাসা করল, ‘নাইটগার্ডেরা?”
“আজ্ঞে স্যার। আমি যতদূর জানি, কাল ওই কাণ্ডের পর নাইটগার্ডেরা ভয় পেয়ে সামনের গেটের পাশে যে ওয়াচরুম আছে, তার মধ্যেই ছিল। রাতে কেউ বাইরে বেরোয়নি কাল। ম্যানেজারবাবুর ওইরকম হওয়ায় সকলে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। আগেও তো আমাদের একজন সহকর্মী কালাদেওর হাতে মারা পড়েছিলো। আবার সেইরকম যাতে না হয়, সেজন্য সকলেই বেশ ভয়ে-ভয়ে ছিলাম স্যার। কাল রাতে কেউ বাইরে বেরোনোর আর সাহস দেখায়নি!”
শাক্য অবস্থাটা বুঝল। সে জগন্নাথকে বলল, “আচ্ছা, এখানে বোর্ডারদের কেউ যদি ড্রিংকজস চায়, তাঁকে কি রুমসার্ভিস দেওয়া হয়?”
জগন্নাথ বলল, “আজ্ঞে স্যার, এখানে যাঁরা থাকতে আসেন, তাঁদের বেশিরভাগই নিজেদের রুমে বসেই ড্রিংক করেন। প্রকাশ্যে, মানে রিসর্টের ডাইনিং-রুমে খুব কমই কেউ ও-সব খান। আমরাও ফরমাশ মতো রুমে-রুমে পৌঁছে দিই খাবার-টাবার আর ওইসব!”
“তুমি নিজে খাও?” শাক্য জিজ্ঞাসা করল।
“প্রভু জগন্নাথের দিব্যি খেয়ে বলছি স্যার, ও-সব ছুঁয়েও দেখিনি কোনওদিন!”
“ভালো। আচ্ছা, কাল কেউ রুমসার্ভিসে এইরকম একেবারে সাধারণ বিয়ার নিয়েছিল কি-না, তা কে বলতে পারবে? তুমি? না-কি অন্য কেউ?”
“আজ্ঞে, এ-সমস্ত হিসেব ম্যানেজারবাবু রাখতেন আর রাখে চন্দন, চন্দন রাউত। ওই ডিপার্টমেন্ট চন্দনই দেখে। পরে ম্যানেজারবাবুকে কে কী নিয়েছে, তার হিসেব দেয়। ম্যানেজারবাবুও তাঁর কম্পিউটারে ও-সব তুলে রাখেন। চেক-আউট করার সময় বিলে ওই হিসেব যোগ করতে হয় কি-না!”
“চন্দন কোথায়?”
“স্টাফদের ব্যারাকে আছে স্যার। দুপুরের দিক থেকে ওর ডিউটি শুরু হয়। প্রায় মাঝরাত অবধি ওকে জেগে থাকতে হয় বলে ওর জন্য আলাদা ডিউটি-টাইম।”
“যাও ডেকে আনো তো তাকে!” বলেই শাক্য সুদীপ্তকে বলল, “না, থাক্‌। তোমাকে যেতে হবে না। সুদীপ্ত আপনি কনষ্টেবলদের কাউকে পাঠান। স্টাফ-ব্যারাক থেকে চন্দন রাউতকে ডেকে আনুক।”
“ঠিক আছে স্যার, এক্ষুনি পাঠাচ্ছি,” বলে সুদীপ্ত একজন কনষ্টেবলকে নির্দেশ দিল চন্দন রাউতকে ডেকে আনার।
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫৮: হেলিকপ্টারে সওয়ার হয়ে চূড়ার কাছাকাছি গিয়ে পাহাড় দেখার রোমাঞ্চটাই আলাদা

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১০১: মা সারদার মায়িকবন্ধন ত্যাগ

কিছুক্ষণের মধ্যেই চন্দন রাউত উঠে এল। বোঝা যাচ্ছিল, ঘুমাচ্ছিল বেলা অবধি। চোখমুখ ফোলা। বারমুডার ওপরে একটা টি-শার্ট গলিয়ে এসেছে কোনরকমে, শার্টটা উল্টো করে পরা। চন্দন এসে হাতজোড় করে দাঁড়াল, তার চোখে-মুখে সন্ত্রস্ত ভাব। সে ক্ষীণ স্বরে বলল, “স্যার…, আমায় ডেকেছিলেন? আমি কিছু জানি না স্যার। সত্যি বলছি। দরকার হলে সবাইকে ডেকে জিজ্ঞাসা করুন, যখন এখানে ম্যানেজারসাহেবের ওপরে আক্রমণ করে কালাদেও, আমি তখন বার-কাউণ্টার সামলাচ্ছিলাম। হই-চই হতে তবে স্যার গিয়েছি, সকলের সঙ্গে গিয়েছি স্যার। স্যার, দোহাই, আমি গরীব ঘরের ছেলে, ফেঁসে গেলে বিপদে পড়ে যাব স্যার!”
সুদীপ্ত ধমক দিল তাকে, “আগেভাগেই এত কথা বলছিস কেন? তোকে কি আমরা অ্যাকিউজ করেছি না-কি?”
চন্দন চোখে জল, মুখে ভয় নিয়ে বলল, “হাবিলদার-সাব তো বললেন, চল্‌ ব্যাটা, কী করেছিস, সাহেবদের কাছে স্বীকার করবি চল্!”
শাক্য হেসে বলল, “বুঝলাম, একেই বলে ধরে নিয়ে আসতে বললে বেঁধে নিয়ে আসা। যাই হোক, চন্দন তোমার ভয় পাওয়ার কারণ নেই। আমরা তোমাকে সন্দেহ বা গ্রেপ্তার—কিছুই করছি না। আমাদের জাস্ট কয়েকটি ইনফরমেশন দরকার ছিল, সে-জন্যই ডেকেছি।”
শাক্যর কথা শুনে চন্দন যেন একটু ধাতস্থ হল। বলল, “বলুন স্যার, আমার জানা থাকলে নিশ্চয়ই বলবো।”
শাক্য একজন কনষ্টেবলকে ডেকে বলল, “ভাই, আপনি হাতে রুমাল জড়িয়ে বিয়ারের বোতলটা তুলে ওকে দেখান তো…।”
উপস্থিত দু’জনের মধ্যে একজন রুমাল জড়িয়ে তুলে দেখাল চন্দনকে।
শাক্য বলল, “একটু ভালো করে দেখুন তো, আপনার সেলারে কি এই ব্র্যান্ড আছে?”
চন্দন দেখে সঙ্গে-সঙ্গে বলল, “আছে স্যার। এ-তো খুব কমন ব্র্যান্ড। সেলারে অনেক আছে।”
“এখানে আসা বোর্ডারেরা এই জাতীয় সস্তা ব্র্যাণ্ড পছন্দ করেন?”
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৮১: সুষ্ঠুভাবে শাসনকার্য চালাতে গেলে নিজের লোকেদের পিছনেও চর নিয়োগ করতে হয়

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১০২: কণ্ঠী ঘুঘু

“যাঁর যা টেস্ট স্যার। অনেকে তো এখানে এসে মহুয়া, পচাই ইত্যাদিও খেতে চান। আমাদের যতটা সম্ভব যা-পারা যায়, তার সাপ্লাই দিতে হয়। না থাকলে ব্যবস্থা করে আনাতে হয়। নাহলে এই ব্যবসায় টেকা যাবে না স্যার। যখন এখানে বছর দেড়েক আগে ব্যবসা চালু হয়, তখন এত কম্পিটিশন ছিল না। তখন এত কিছুর ব্যবস্থাও থাকত না। কিন্তু হালে পিশাচপাহাড় ট্যুরিস্ট-স্পট হিসাবে হঠাৎ নাম করায় আরও বেশ কয়েকটা হোটেল, রিসর্ট তৈরি হয়েছে। তারা সমস্ত রকম সার্ভিস দিচ্ছে। এখন বাজারে টিকে থাকতে গেলে সব রকমের ব্যবস্থা না রাখলে আমরাই শেষ হয়ে যাবো। বিজনেসে লাল বাতি জ্বলবে স্যার। মালিকের ইচ্ছে না থাকলেও, ম্যানেজারবাবু বাধ্য হয়ে সব ধরণের ব্র্যান্ড রাখার ব্যবস্থা করেছেন। যখন যে বোর্ডার যা চান, স্টকে থাকলে দিই। নাহলে আনিয়ে দিই যদি লোক্যালি মেলে…।”
“বাঃ! তুমি খুব সুন্দরভাবে বোঝাতে পারো তো!” শাক্য প্রশংসা করায় চন্দন একগাল হেসে বলল, “সবই আপনাদের আশীর্বাদ স্যার।”
“আচ্ছা চন্দন, গতকাল রাতে ঘটনা ঘটার আগে বা পরে কেউ বা কেউ-কেউ এই ব্র্যাণ্ডের বিয়ার অর্ডার করেছিল? যদি করে থাকে, কে বা কারা বলতে পারো?”
চন্দন একটু ভাবল, তারপর বলল, “নাহ্‌ স্যার। কাল যে-যে রুমে ড্রিংকস্‌-এর অর্ডার ছিল, সেখানে হোয়াইট রাম, ভদকার অর্ডার ছিল। বিয়ার তো কেউ অর্ডার দেয়নি। এটা হয়তো অনেক আগে কেউ খেয়ে ফেলেছে !”
“নাহ্‌ চন্দ, এটা অনেক আগের নয়। কালকেই খেয়ে ফেলা হয়েছে। তাহলে বলছ, কেউ কাল বিয়ারের অর্ডার দেয়নি?”
“নাহ্‌ স্যার।”
“কারা-কারা ড্রিংকসের অর্ডার দিয়েছিলেন তাঁদের নাম বলতে পারো? মানে রুম নাম্বার দেখলেই তো জানতে পারবে, কে অর্ডার দিয়েছিলেন।”
“স্যার মনে থাকলেও আমি খাতা দেখে কনফার্ম করছি। নাহলে বুঝতেই পারছেন তো স্যার, ভুলবশত কারও নাম নিয়ে ফেললে মানহানির মামলা ঠুকে দেবে আমার নামে। চাকরিটাই নট্‌ হয়ে যাবে।”
“বেশ। তাই বলো। তবে এক্ষুনি। আর তোমার খুব চাকরি হারানোর ভয় তাই না চন্দন?”
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১৮: কবির ভালোবাসা, কবির জন্য ভালোবাসা

এই দেশ এই মাটি, ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-৬১: বাংলা গদ্য-পদ্যের ইতিহাসে ত্রিপুরা

“হ্যাঁ স্যার। আগে সদরে যে হোটেলটায় ছিলাম, সেখানেও বারের দায়িত্ব আমার উপরে ছিল। তা সেখানে অন্যজন চুরি-চামারি করে বোতল সরায়, কিন্তু দোষ হয় আমার নামে। মানছি আমার সামান্য অসতর্কতায় সে-দিন সরাতে পেরেছিল কেউ, কিন্তু আমি জ্ঞানত কোন অন্যায় করিনি, নিজেও সরাইনি। কিন্তু সেই অভিযোগে তারা আমার নামে থানায় নালিশ করে এবং থানায় আমাকে প্রচন্ড মারধোর করা হয় স্যার। কিন্তু তার পরেও যা সত্যি আমি সেটাই বলেছিলাম। ওরা আমাকে চাকরি থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরে আসল চর ধরা পড়ে। তখন ওরা আমাকে নিজেরাই আবার ডাকতে এসেছিল এখানে। আমি যাইনি। কেন যাব বলবেন স্যার? যেখানে আমার সততার উপর বিশ্বাস নেই, সেখানে দ্বিতীয়বার যে একই কাণ্ড ঘটবে না, সেটার কেউ গ্যারান্টি দিতে পারে?”
“থানায় তোমাকে মারধোর করেছিল? অত্যন্ত অন্যায় করেছিল। আইনত কাজটা ঠিক হয়নি। যাক্‌ তুমি কিছুমাত্র ভয় পেয়ো না। আমাদের জাস্ট ওই ইনফরমেশনটা দাও কোন-কোন রুম থেকে কে অর্ডার করেছিল? আর একটা জিনিসও চেক্‌ করে দেখো, যতগুলি এই ব্র্যাণ্ডের বিয়ার স্টকে থাকার কথা, তা আছে না-কি মিসিং!”
“আচ্ছা স্যার। আমি দেখে এক্ষুনি জানাচ্ছি,” বলে চন্দন চলে গেল।
সুদীপ্ত সুযোগ পেয়ে জিজ্ঞাসা করল, “এই খালি বিয়ারের বোতলটা কি খুব গুরুত্বপূর্ণ স্যার?”
শাক্য অন্যমনস্ক গলায় বলল, “নিশ্চয়ই সুদীপ্ত। এটা ফরেনসিকে পাঠাতে তো হবেই। আমার জানা দরকার, কাল অত কাণ্ডের পরে কে এখানে এসেছিল এবং বিয়ার খেয়ে খালি বোতলটা এখানে সাজিয়ে রেখেছিলো। আগন্তুক যদি বোকা হয়, তাহলে আলাদা কথা, কিন্তু যদি চালাক হয়? তাহলে সে-কি ইচ্ছে করেই এই বিয়ারের বোতলটা সাজিয়ে রেখেছিল, যাতে এটা সকালে আমাদের চোখে পড়ে আর তদন্ত অন্যদিকে চালিয়ে দেওয়া যায়? কে সে?”
শাক্যর প্রশ্নগুলি শুনে সুদীপ্ত অবাক হয়ে গেল! —চলবে।
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel): পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content