বুধবার ২৬ মার্চ, ২০২৫


মা সারদা।

একদিন সকালে উদ্বোধনে শ্রীমায়ের ঘরে স্বামী অরূপানন্দ তাঁকে বলেছিলেন যে, শ্রীচৈতন্য নারায়ণীকে আশীর্বাদ করেছিলেন, ‘নারায়ণী, তোমার কৃষ্ণে ভক্তি হোক’। তখন তিন-চার বছরের নারায়ণী ‘হা কৃষ্ণ’ বলে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে লাগল। তিনি আরও বললেন যে, দেবর্ষি নারদের সিদ্ধিলাভের পর একটা পিঁপড়ে দেখে হঠাৎ কিরকম দয়া হল। তিনি ভাবলেন যে, তাঁর কত জন্মের তপস্যার পর সিদ্ধিলাভ হল আর এর তো মানুষ হতেই কত দেরি। দয়াপরবশ হয়ে তিনি পিঁপড়েটাকে আশীর্বাদ করলেন, ‘মুক্ত হয়ে যাও’।
অমনি পিঁপড়েটা পাখি, পশু প্রভৃতি ইতর জীবদেহ ধারণ করে ক্রমে মানুষ হল। এই সব অসংখ্য জন্মের খেলা দেবর্ষির চোখের সামনে মুহূর্তের মধ্যে হয়ে গেল। তা মহাপুরুষদের কৃপায় তো যখন তখন হয়। শুনে শ্রীমা বলেন যে, তা হয়। অরূপানন্দ বললেন, ‘তবে শুনেছি, অপরের পাপের বোঝা নিয়ে শরীর থাকে না’। তারপর ঠাকুরের কথা ভেবে বললেন, ‘যে শরীরের দ্বারা অনেকের উদ্ধার হতো, সেই শরীর হয়তো একজনের জন্যই ক্ষয় হয়’।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৯: উদ্বোধনের ঠাকুরঘরে মা সারদার সঙ্গে স্বামী অরূপানন্দের কথোপকথন

গল্পবৃক্ষ, পর্ব-২০: সঙ্কল্পজাতক

শ্রীমা বললেন, ‘হ্যাঁ, তাঁর শক্তিও কমে যায়। যে সাধন-তপস্যার শক্তির দ্বারা অনেকের উদ্ধার হতো তা একজনের জন্যই ক্ষয় হয়ে যায়। ঠাকুর বলতেন, গিরীশের পাপ নিয়ে আমার শরীরে এই ব্যাধি’। তা এখন গিরীশও তো অসুখে ভুগছে। অরূপানন্দ তাঁর দেখা স্বপ্নের কথা শ্রীমাকে বললেন যে, তিনি একদিন স্বপ্নে দেখেন, মাথায় ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া চুল একটা লোক শ্রীমাকে এসে খুব ধরেছে যাতে শ্রীমা তাকে তখনই কিছু করে দেন। সে আগে শ্রীমার কাছে মন্ত্র নিয়েছে। কিন্তু সে নিজে কোন সাধন, ভজন করবে না।
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫০: রোজই দেখি আলাস্কা পর্বতশৃঙ্গের বাঁ দিকের চূড়া থেকে সূর্য উঠতে

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৬: ভারতীয় পারিবারিক জীবনে স্নেহময় জ্যেষ্ঠর ভূমিকায় রামচন্দ্র কতটা আকর্ষণীয়?

শ্রীমা বলছেন, ‘একে যদি আমি এখনি কিছু করে দিই, তাহলে আমি আর বাঁচব না, আমার দেহ থাকবে না’। অরূপানন্দ দুহাত দিয়ে শ্রীমাকে নিষেধ করে বলছেন যে, ওকে কেন করে দেওয়া? ও নিজে করতে পারবে, সাধন ক’রে। সেই লোকটি বারবার বলাতে শ্রীমা অতিষ্ঠ হয়ে তার বুক ও ঘাড় ছুঁয়ে কিছু করে দিলেন। আর খানিক এইরকম করে কেবল বলতে লাগলেন যে, তাঁর দেহ থাকবে না। এই পর্যন্ত দেখেই মহারাজের স্বপ্ন ভেঙে যায়। তিনি শ্রীমার কাছে জানতে চান যে, দেহধারণ করলে কি শক্তি সীমিত হয়ে যায়? শ্রীমা বললেন, ‘হ্যাঁ, তা হয়। এক একটা লোকের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে অনেক সময় মনে হয়, এ দেহ তো যাবেই, তা থাক না, এক্ষুণি দিয়ে দিই। এই যে, রাধী রাধী করি, এ তো একটা মোহ নিয়ে আছি। আমার পাগলা-টাগলাকে ভয় করে। আবার সেইটে আসছে, না কি করে। তুমি মঠে চলে যাচ্ছ, ভয় হয়’।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯২: দুর্গা টুনটুনি

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৭: লুকাবো বলি, লুকাবো কোথায়?

অরূপানন্দ বললেন যে, ভগবানদর্শন মানে কি জ্ঞানচৈতন্যলাভ না আর কিছু? শ্রীমা বললেন, ‘জ্ঞানচৈতন্যলাভ না তো কি? নইলে কি দুটো শিং বেরোয়?’ অরূপানন্দ তখন বলেন যে, এখানকার অনেক ভক্তের কাছে ভগবানদর্শন মানে অন্যরকম, তাঁকে চোখে দেখা, কথা বলা। ‘আচ্ছা মা, কেউ চাচ্ছে কিন্তু পাচ্ছে না। আবার কেউ চাচ্ছে না, তাকে দিচ্ছেন, একথার মানে কি?’ শ্রীমা বললেন, ‘ঈশ্বর বালকস্বভাব কিনা। কেউ চাচ্ছে তাকে দিচ্ছেন না, আবার কেউ চায় না, তাকে সেধে দিচ্ছেন। হয়তো তার আগের জন্মে অনেক এগুনো ছিল। তাই তার উপর কৃপা হয়ে গেল’। শুনে মহারাজ বলেন যে, তাহলে কৃপাতেও বিচার আছে? শ্রীমা বলেন, ‘তা আছে বইকি। যার যেমন কর্ম করা থাকে। কর্ম শেষ হলেই ভগবানের দর্শন হয়। সেটি তার শেষ জন্ম’।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৯: বেশি ঘুম শরীরের পক্ষে ভালো?

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৯: সে এক স্বপ্নের ‘চাওয়া পাওয়া’

অরূপানন্দ জানতে চান যে, জ্ঞানচৈতন্যলাভ করতে হলে সাধন, কর্মক্ষয়, সময়, এসব দরকার ঠিকই। কিন্তু তিনি যদি আপনজন হন, তবে কি তিনি ইচ্ছা করলেই দেখা দিতে পারেন না? শ্রীমা শুনে বললেন, ‘ঠিক কথা, তবে এ সূক্ষ্মটি তুমি যেমন ধরে বসেছ তেমনটি আর কে ধরে বসেছে? সব্বাই ওটা একটা করতে হয় তাই করে যাচ্ছে, ঈশ্বরকে চায় কজনে?’ তখন অরূপানন্দ বললেন, ‘আমি তোমাকে আগে একদিন বলেছিলুম যে আপন মায়েরও যদি যত্ন, স্নেহ না পায় তবে ছেলে মাকেও মা বলে জানে না’। শ্রীমা সম্মতি জানিয়ে বলেন, ‘তা তো ঠিক কথাই। দেখা না পেলে কোথা থেকে ভালবাসা হয়? এই তোমার সঙ্গে দেখাটি হয়েছে, আমি তোমার মা, তুমি আমার ছেলে’।—চলবে।
* আলোকের ঝর্ণাধারায় (sarada-devi): ড. মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় (Dr. Mousumi Chattopadhyay), অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, বেথুন কলেজ।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content