শনিবার ৩১ মে, ২০২৫


ছবি: লেখক।

আমরা গ্রিন হাউসে বসে দীর্ঘক্ষণ সময় কাটালাম। সেখানে আমাদের মতো দম্পতিদের জন্য সুন্দর বসার জায়গা করা রয়েছে। সেখানে বসে বসে আমরা বাইরে শিপ পর্বতমালার শোভা দেখতে দেখতে খাওয়া দাওয়া করছি অল্পস্বল্প। এরই মধ্যে একসময় আমি ওই রেস্তরাঁর মধ্যে গিয়ে এখানকার কর্মীদের বলে এসেছি আমাদের এসে পড়ার কথা। সহধর্মিণী তখনও জানে না।
ইতিমধ্যে, ওই গ্রিন হাউসের কাচের মধ্যে দিয়ে মাঝে মাঝে দুয়েকটা লাল হেলিকপ্টার ওঠা-নামা করতে দেখা যাচ্ছে পাহাড়গুলোর কাছ থেকে। আমার স্ত্রী খুব উৎসাহ নিয়ে তাদের ছবি তুলছে। আর মাঝে মাঝেই বলছে, ওই সব হেলিকপ্টারে উঠতে পারলে ভালো হতো, ওপর থেকে আলাস্কাকে বেশ দেখা যেত। কিন্তু ওঁর ওই সব হেলিকপ্টারে চড়ার খুব একটা সাহসও নেই। ওড়ার সময় ওগুলো এতটাই এদিক-ওদিক করছে যে, সেগুলো দেখেই নাকি ভয় লাগছে!
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫৭: আলাস্কায় এমন অপরূপ দৃশ্যও দেখা যায়, যেখানে পাহাড়-সমুদ্র-হিমবাহ একসঙ্গে বিরাজমান

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১৭: একাকিত্বের অন্ধকূপ/২: অন্ধকারের উৎস হতে

এমনই গল্প করছি। প্রথম বিবাহবার্ষিকীর প্রেম। তাই প্রচুর গল্প। তারই মধ্যে হঠাৎ দরজা ঠেলে হাজির হলেন পাইলট। তাঁকে আগে থেকেই বলা ছিল। তিনি সোজা এসে আমার স্ত্রীকে বললেন, তাঁর জন্য হেলিকপ্টার তৈরি রয়েছে, তাঁকে এখনই যেতে হবে। শুনেই আমার স্ত্রী একটু হকচকিয়ে গেল। খুব গম্ভীর ভাবে দু’দণ্ড কথা বলেই বুঝেছে, এটা তাকে চমক দেওয়ার জন্যই করা হয়েছে। তখন তার মুখে আনন্দ, চমক, আশঙ্কা সব কিছু একসঙ্গে এসে হাজির হয়েছে।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯৮: মা সারদার জন্মতিথিতে তাঁর অপূর্ব অমানবীয় রূপ ফুটে উঠল

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১০০: নীল কটকটিয়া

এই তিন ভুবনের পারে সমাজ, স্বজন-পরিজন সব ছেড়ে এসে এই ছোট ছোট আনন্দগুলোই আমাদের জীবন। কখনও সেই আনন্দ গিয়ে বাতাসে ভেসে ভেসে চলে যায় পাহাড়ের চূড়ায়, আবার কখনও বা মিশে যায় একটা হিমবাহে, আজকের মতো। তারপর সেখান থেকে নদী হয়ে চলে যায় দূরে সমুদ্রে। তারপর হয়তো সেখান থেকে ভাসতে ভাসতে চলে যায় দেশে আমাদের আপনজনদের কাছে; আমাদের মা, বাবা, দিদা, জেঠু, জেঠিমা সবার কাছে। তাঁরাও সেই আনন্দ ভাগ করে নেন এই বিশেষ দিনে। সমাজমাধ্যম আর প্রযুক্তির দৌলতে সবাই এখন সবার আনন্দ ভাগ করে নিতে পারে।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১৬: শান্তিনিকেতনে কবির প্রথম জন্মোৎসব

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১১৪: জীবনের নশ্বরতা ও আত্মানুসন্ধান বিষয়ে রামের উপলব্ধি যেন এক চিরন্তন সত্যের উন্মোচন

হেলিকপ্টারে বসে প্রায় পনের-কুড়ি মিনিট এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করা হল। চূড়ার কাছাকাছি গিয়ে পাহাড় দেখার রোমাঞ্চটাই অন্য রকম। যে সব জায়গা মাটিতে দাঁড়িয়ে মনে হত বহুদূর, সেই সব জায়গা চলে আসে হাতে ছোঁয়া দূরত্বে। আর চূড়াগুলোর একটু ওপর থেকে ঐ যে পরপর তিন কোণা পিরামিডের মতো ভূমিরূপ দেখা যাচ্ছে, তা না দেখলে কল্পনাই করা যায় না। তার মধ্যেই উড়ে গেলাম পাশের পাহাড় থেকে নেমে আসা একটা ঝর্ণার গা ঘেঁষে।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭৯: সময় বুঝে প্রত্যাঘাতের জন্য রাজনীতিতে অনেক সময় পিছিয়েও দাঁড়াতে হয়

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১১৫: গেমপ্ল্যান

ওই সব পাহাড় চূড়া পেরোতেই সামনে দেখা গেল বিরাট হিমবাহ। এটা ম্যাটানুস্কা হিমবাহ। ওপর থেকে দেখলে মনে হয় যেন একটা বিরাট চওড়া নদী ঢেউ তুলে যেতে গিয়ে হঠাৎ জমে বরফ হয়ে গিয়েছে। অথবা বলা যেতে পারে, একটা হালকা-নীল রঙের চাদর যেন মাইলের পর মাইল কেউ বিছিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছে। হিমবাহ এক অদ্ভুত সৃষ্টি। সে পাহাড়ের মতো স্থানু অথচ নদীর মতোই গতিময়।

ছবি : লেখক।

হিমবাহ আসলে জল জমে বরফ হয়ে যাওয়ারই চরম রূপ। জল যখন তরল অবস্থায় থাকে, তখন তার কণা একটু ছাড়া ছাড়া থাকে। বরফ হয়ে গেলে সেই কণাগুলো অনেকটা কাছাকাছি চলে এসে কঠিন হয়ে যায়। আর হিমবাহ হয়ে গেলে সেই সব কণা আরও অনেকটা কাছাকাছি চলে এসে আরও অনেক বেশি শক্ত হয়ে জমে যায়। সেটা এতো বেশি জমে যায় যে গরমেও পুরোপুরি গলে যায় না। অবশ্য বৈশ্বিক উষ্ণায়নের (গ্লোবাল ওয়ার্মিং) জন্য হিমবাহ খুব দ্রুত গলে যাচ্ছে। সাধারণ ভাবে হিমবাহ একদিক থেকে তৈরি হয় আর অন্য দিকে গলতে থাকে। এই হিমবাহ গলেই তৈরি হয়েছে পৃথিবীর যত সব বড় বড় নদীরা।—চলবে।
* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content