বরফের মাঝে একটি বড়সড় কাক।
এই মুঠোফোনের ব্যাটারি চলে যাওয়ার ব্যাপারে একটা মজার অভিজ্ঞতা হল। আসার দু’দিন পর একদিন গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছি। নতুন এসেছি বলে তেমন কিছুই চিনি না। গুগল ম্যাপ ধরে চালাচ্ছি। যেখানে থামতে পারছি একটা দুটো ছবি তুলছি। এরকম করতে করতে হঠাৎ এক জায়গায় ছবি তুলতে গিয়ে দেখি ফোনটা বন্ধ হয়ে গেল। আমার সঙ্গে চার্জ দেওয়ার তার থাকে সবসময়। আমি তাড়াতাড়ি গাড়িতে এসে ফোনটা চার্জে বসাতে গিয়ে দেখি তাতে সেই পুরোনো যুগের বন্দোবস্ত শুধু।
গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা থাকলে ব্যাপারটা বুঝতে অসুবিধা হবে না। গাড়ির ভিতরে চালকের বসার জায়গার সামনে বিদ্যুৎ নির্গমনের একটা ছোট গর্ত থাকে। তাতে একটা আলাদা যন্ত্র লাগাতে হয় মুঠোফোনে চার্জ দেওয়ার জন্য। সেটা আর নেই এখন আমার কাছে। আমার তখন নিজের হয়রানিতে নিজেরই হাসি পাচ্ছে। সব কিছু পরপর। এই দু’ দিন আগে গাড়ি জঙ্গলের মধ্যে বরফে আটকে গেল। আজ আবার এই অবস্থা।
আরও পড়ুন:
রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-১১: কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দু’ একটি ছবি তুলতে না তুলতেই হাত অসাড় হয়ে যাচ্ছিল
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৪: কাওয়ার্ধা পরিভ্রমণ
জ্যোতির্লিঙ্গ যাত্রাপথে, পর্ব-৩: বাবা বিশ্বনাথের দরবারে
কিন্তু হঠাৎ মনে পড়লো যে আমি তো এখন আলাস্কায়। এখানে গাড়ি দাঁড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট করা যেকোনও জায়গাতেই চার্জ দেওয়ার বন্দোবস্ত থাকে। কাজেই সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি চালিয়ে কিছুদূর গিয়ে ঢুকে গেলাম নিকটবর্তী একটা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে। সেখানকার ভাড়াটেদের গাড়ি দাঁড় করানোর জায়গাতেই পাওয়া গেল সারে সারে চার্জ দেওয়ার জায়গা। ঠিক যেমন আমার বাড়ির সামনেও আছে। তারই মধ্যে একটায় ঢুকিয়ে দিলাম। সে যাত্রায় রক্ষা পাওয়া গেল। এরপর থেকে যখনই বাড়ি থেকে বেরোই ফোন পুরো চার্জ করে তারপরেই বেরোই।
আরও পড়ুন:
দশভুজা: ‘পুরুষ মানুষের কাজে হাত দিলে এমনই হবে, মহিলাদের এসব সাজে না’
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৯: নুনিয়া
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫০: ‘ফিশ পাস’ পুরোদমে চালু হলে ইলিশের প্রজনন বাধাহীনভাবে সম্ভবপর হবে
সে যাই হোক, শেষ করার আগে আরও কিছু মজার অভিজ্ঞতা দিয়ে শেষ করি। যদিও সেগুলোও বেশ অসুবিধাজনক কিন্তু তবুও বেশ মজার। যেমন জিনিসপত্র কেনাকাটি করার পরে মাল বোঝাই শপিংকার্ট ঠেলাতে যে কি কষ্ট সে ওই এবড়োখেবড়ো বরফের ওপর ছাড়া বোঝা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৪: গরম পড়েছে, যত পারুন ঠান্ডা খান! কী হচ্ছে এর ফলে?
হেলদি ডায়েট: সর্দি-কাশিতে ভুগছেন? জেনে নিন কোন ঘরোয়া টোটকায় মিলবে আরাম
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৮: রবীন্দ্রনাথ সাঁতার কাটতেন, সাঁতার শেখাতেন
আমি দ্বিতীয় দিন সকালে ওই তীব্র বরফের মধ্যেই সমস্ত সতর্কতাবাণী উপেক্ষা করে আবার ৩ মাইল মতো গাড়ি চালিয়ে গিয়েছি ওয়ালমার্ট (বিগবাজারের মতো একটি সংস্থা) সব জিনিস কেনার জন্য। নতুন বাড়ি, শপিংকার্টে বোঝাই করে সব জিনিস কিনেছি। গাড়িটা রাখা ছিল একটু দূরে। ব্যাস, জিনিস কিনে বেরিয়ে সেই বরফ ঢাকা রাস্তার ওপর দিয়ে সেটা আর ঠেলে নিয়ে যেতে পারি না।
একদিকে আলো, অন্যদিকে অন্ধকার। মেরুর উচ্চ অক্ষাংশের অবস্থান। এখানে সূর্যের অপতন কোণের জন্য খুব কাছাকাছি জায়গাতেই দিন-রাতের পার্থক্য বোঝা যায়।
একদিকে ওই এবড়োখেবড়ো বরফে ঠেলাগাড়ি নড়াতে হলে জোরে ঠেলতেই হবে আর অন্যদিকে বেশি জোরে ঠেলতে গেলে নিজেরই পা পিছলে পড়ে যাওয়ার জোগাড়। নিজের হয়রানিতে নিজেরই হাসি পাচ্ছিল। আবার বাড়ি আসার পরে সব জিনিস একটা বড় বাক্সে ভরে যখন ওই রকমই বরফের ওপর দিয়ে টেনে নিয়ে আসছি সেটা আবার বেশ সুবিধা জনক। বাক্স বোঝাই মালের চাপে নিচের বরফ গলে বাক্স পিছলে সুন্দর চলে আসছে স্লেজ গাড়ির মতো।—চলবে
<ছবি: লেখক>
<ছবি: লেখক>
* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।