রবিবার ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


অপরূপা আলাস্কা।

আমার পিএইচডি-র পড়াশোনার প্রথম দিকে, মানে যখন আমি সবে সবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি, তখনও পর্যন্ত আমি ভাবতাম যে, আমার গন্তব্য সানফ্রান্সিসকো, প্রযুক্তির পীঠস্থান। আমি কম্পিউটার সায়েন্স-এর ছাত্র। কাজেই আর পাঁচজনের মতোই আমি চাইতাম সিলিকন ভ্যালিতে কোনও একটি বড় সংস্থায় চাকরি করতে। আমার পিএইচডি-র পড়াশোনার সময় দু’বার সে-দিকে গিয়ে কাজ করে এলাম দু’ একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে। আমার মামা সেখানে বহুদিনের বাসিন্দা। কাজেই তাঁর বাড়িতে থেকেই যাতায়াত করতাম। বেশ ভালোই লাগতো।
নতুন শহর। সুদৃশ্য গগনচুম্বি অট্টালিকার মাথায় একটা জায়গায় বসে আমি কাজ করছি। চারিদিকে লোকজন, ব্যস্ততা, আধুনিকতা। বেশ উপভোগ করতাম। সত্যি কথা বলতে কি, দেশেও যখন আমি তথ্য-প্রযুক্তিতে (আইটি সেক্টর) চাকরি করতাম হায়দরাবাদে, তখনও আমি এমন একটা জীবনেরই স্বপ্ন দেখতাম।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫০: পুত্রস্নেহে অন্ধ হলে পিতাকেও ধৃতরাষ্ট্রের মতো দুর্দশা ভোগ করতে হয়

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-২: অসীম রোদন জগৎ প্লাবিয়া দুলিছে যেন?

এই নির্জনতার সঙ্গে এই সোহাগ যে আমার ঠিক কবে থেকে শুরু, তা আমি সঠিক মনে করতে পারি না। কিন্তু যেকোনও নির্জন প্রান্তরে গেলেই আমি যেন আমার মনের কথা শুনতে পাই। যতদূর সম্ভব, এটা শুরু হয়েছিল যে দিন থেকে আমি দেশ-ভ্রমণ শুরু করলাম। এই ভ্রমণই আমার জীবনের অনেক কিছু পরিবর্তন করে দেয়। আমার দৃষ্টিভঙ্গি, আমার মানসিকতা, আমার ভালোলাগা-মন্দলাগা, সব কিছুতেই অনেক পরিবর্তন ঘটে এই ভ্রমণ শুরু করার পরে।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫৪: লোকশিক্ষক মা সারদা

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩১: হেমন্তবালা দেবী— রবি ঠাকুরের পত্রমিতা

২০১৬ সাল। পিএইচডি-র গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে বৃত্তি বা স্কলারশিপ পেতাম, তাতে থাকা খাওয়া হয়ে গিয়েও কিছুটা টাকা বাঁচতো। ২০১৬ সাল থেকে শুরু করে আমি সেই বেঁচে যাওয়া অর্থের পুরোটাই খরচ করতাম আমার অ্যাডভেঞ্চার-ভ্রমণ বা অ্যাডভেঞ্চার-স্পোর্টস এর জন্য। সবটাই একক ভ্রমণ বা সোলো ট্রাভেল। এমনই এক ভ্রমণের সময় টেক্সাসের পাথুরে মরুপ্রান্তরে দেখেছিলাম নির্জন বাড়িগুলো। কোথাও কেউ নেই। জনমানবহীন একটা প্রান্তর। অথচ সেখানেও কেউ আছে। আমার একটা অদ্ভুত কৌতূহল জেগেছিল। সেই কৌতূহল ধীরে ধীরে ভালোলাগায় পরিণত হয়, যখন আমি প্রথমবার আলাস্কায় আসি। সেটাও সম্ভবত ২০১৬ সালেই হবে।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৬: স্রোতস্বিনী পদ্মায় লাফিয়ে কবির কটকি চটি-উদ্ধার

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৬: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসাসা— নুনিয়া ও সিঙ্গরা

আলাস্কার নির্জন বনভূমির মধ্যে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে দেখি হঠাৎ করে একটা বাড়ি। মাইলের পর মাইল কোনও লোকজন নেই। অথচ একটা বাড়ি। পর্যটনের স্থানগুলো বাদ দিলে পুরোটাই ফাঁকা ফাঁকা। তার ওপরে আমি কাউকে যোগাযোগও করতে পারছি না। তার কারণটা বেশ মজার। আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে মানে যেখান থেকে আমি পিএইচডি করেছিলাম, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রে আমার অভিবাসন (ইমিগ্রেশন) সংক্রান্ত কিছু দরকারি কাজের মিথ্যে অজুহাত দিয়ে আলাস্কা ঘুরতে চলে এসেছিলাম। —চলবে।
* ড. মহুয়া দাশগুপ্ত, শিক্ষক এবং লেখক। রবীন্দ্রনাথের দেবলোক, জোড়াসাঁকোর জার্নাল, আমি নারী আমি মহীয়সী, কথানদীর কূলে, লেডিজ স্পেশাল, পথে পুরুষ বিবর্জিত, পরীক্ষায় আসবে না এবং ভুবনডাঙার বাউল তাঁর লেখা একক বই। বাংলা কথকতা নিয়ে একক ভাবে কাজ করছেন।

Skip to content