বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

কী করে যে তারক নিয়োগীর কাছে বসুন্ধরা ভিলার বিপদ আপদের খবরাখবর পৌঁছে যেত জানি না। কিন্তু এবারও তিনি আগেভাগেই খবর পেয়ে গিয়েছেন। যে সময়কার এই ঘটনা সেই সময় মোবাইল কলকাতায় এসেছে। তবে আজকের মতো কারিগরি দক্ষতায় সিসিটিভির ছবি বা মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ধরে মানুষের গতিবিধি বুঝতে পারার মতো অবস্থায় পৌঁছয়নি। তাই তখনও পুলিশ সোর্সদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন এবং শতকরা ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে সফল হতেন। পুলিসের ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ ভীষণভাবে সক্রিয় ছিলেন। যার ফলে অপরাধীরা পার পেতো না। অনেক অসুবিধের মধ্যে কাজ করা সত্ত্বেও তখন কলকাতা পুলিশ অনেক কঠিনকেস অত্যন্ত পারদর্শীতার সঙ্গে সমাধান করে ফেলতেন। সেই দক্ষতায় তাঁরা অরুনাভ বসু অন্তর্ধান রহস্যের সূত্র খুঁজে বের করে ফেলবেন। রাস্তায় ঘাটে ক্লাবে হাসপাতালে ছড়িয়ে থাকা পুলিশের সোর্স, সমাজের নানাঅংশে মিশে থাকা স্পেশাল ব্রাঞ্চের সাদা পোশাকের কর্মীরা সেই সূত্র ধরে প্রায় আগরওয়াল-এর কাছাকাছি পৌঁছে গেলে আগরওয়ালের সঙ্গে সঙ্গে প্রণয়ের গ্রেপ্তারি প্রায় নিশ্চিত।

বসুন্ধরা গ্রুপ অফ কোম্পানিস-এর কর্মী সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পায়ে পাম্পসু বুকপকেটে ফাউন্টেন পেন নিয়ে চশমা পরা, মাঝেমধ্যে পকেটের কৌটো থেকে বড় এলাচের দানা মুখে ফেলা তারক নিয়োগী নামের ছোটখাট একজন মানুষ কীকরে যে এইসব খবর পেয়ে যান সেটা এতদিনকার জনপ্রিয় সাহিত্যিক অমলকান্তি দত্ত এখনও বুঝতে পারেন না। বোঝার অবশ্য চেষ্টাও করেননি। কারণ এ মানুষটির এই বিরল ক্ষমতার জন্য বারবার বসুন্ধরা ভিলা বিপদ থেকে বেঁচে গিয়েছে।
তারকবাবু তার ছোট্ট টেলিফোন কথোপকথনে অমলকান্তি দত্তকে জানিয়ে দিলেন যেকোন প্রকারে প্রণয়কে সাবধান করতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে যে, সে আগুন নিয়ে খেলছে এবং সেটা আর গোপন থাকবে না। বাঁচতে চাইলে এখুনি অরুণাভকে মুক্ত করে দিতে হবে। কারণ পূর্ণবয়স্ক কোন মানুষকে কোনরকম শারীরিক আঘাত না করেও শুধুমাত্র অপহরণ করে আটকে রাখা ভারতীয় দণ্ডবিধিতে গর্হিত অপরাধ এবং তখনকার আইপিসি ৩৬৮ ধারায় দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে ।

তখন ভারতীয় ন্যায়সংহিতা আসেনি। সেখানে ১৪০ ধারায় এই অপরাধ একই ভাবে শাস্তিযোগ্য। এখানে একটা কথা বলা জরুরী। আমি নিজে বসুন্ধরা ভিলার একজন সদস্য হয়েও এ কথা বিশ্বাস করি যে আমাদের দেশের সমাজব্যবস্থায় প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাবান মানুষেরা বাড়তি সুযোগসুবিধা পেয়ে থাকেন। একজন সাধারণ বাড়ির ছেলে হলে নকশাল আন্দোলনে নকশাল নেতা অমিতাভ ও মণীষা সেনের সঙ্গে ধরা পড়ার পর বাবুদাদা কিছুতেই ছাড়া পেতো না। আর একটাও কেস ডায়েরি বা রেকর্ডে কোনও নাম উল্লেখ ছাড়া বাবুদাদা ও তার সহপাঠী বন্ধুরা বাড়ি ফিরতে পারত না। আমার বোন সানন্দা তার স্বামী অর্কপ্রভর সঙ্গে তার নৈতিক লড়াইয়ে অর্কর বিরুদ্ধে মূল সাক্ষী নিলয় ও মনিকা সরকারের জন্য স্পেশাল পুলিশপ্রটেকশনের ব্যবস্থা করতে পারতো না।
আরও পড়ুন:

বসুন্ধরা এবং…, ৩য় খণ্ড, পর্ব-৪৩: কলঙ্ক

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৯: ভ্রমণে বেরিয়ে মহর্ষি পেয়েছিলেন পুত্রের মৃত্যু-সংবাদ

এমন কি বসুন্ধরা ভিলার মেয়ে হিসেবেই অর্কপ্রভর সম্ভাব্য আক্রমণের হাত থেকে সানন্দা রক্ষা পেয়েছে। ক্ষমতাবান প্রভাবশালী এবং ইংল্যান্ডের মাটিতে উপরতলায় যোগাযোগ না থাকলে ঋতুর জীবনের কলঙ্ক থেকে আরও সাংঘাতিক ঘটনা হতে পারতো। বসুন্ধরা গ্রুপ অফ কোম্পানিজের ব্যবসা, এত বিশাল আয়োজন করে দুর্গাপুজো কিছুই এমন বাধাহীন এতো নিখুঁতভাবে হতে পারতো না যদি না বসুন্ধরা ভিলা সমাজে এতটা ক্ষমতাবান বা প্রভাবশালী হতো। সেই প্রভাবের জোরেই অরুণাভকে শিক্ষা দেওয়ার নাম করে তাকে অপহরণ করার মূলচক্রী হিসেবে প্রণয় আগেভাগে পুলিশের পদক্ষেপও জানতে পারত না।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮৯: মাথার কান

দশভুজা, দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৪: আনন্দী—এক লড়াইয়ের নাম

বাবা সেদিন ফোন রেখেই বাবলিকে বললেন—
—প্রণয়কে এক্ষুনি বাড়িতে ডেকে পাঠা!
—আমি ডাকলে ও এখন আসবে না। তুমি তো ওকে জানো সেজ্জেঠু!
—তাহলে তুমি ফোন করে ডাকো!
মা হতভম্ব।
—আমি? কেন কী হয়েছে?
—সেটা পরে শুনবে। ফোন লাগাও এখন প্রত্যেকটা সেকেন্ড জরুরি।
—কিন্তু আমি।
—কানেক্ট করে আমায় দাও।
বাবা ফোনটা ধরে কোন ভণিতা না করে সরাসরি বললেন
—প্রণয়! সেজ্জেঠু বলছি। তোর খুব বড় বিপদ! বাঁচতে চাস তো যেখানে যে অবস্থায় আছিস সেখান থেকে এক্ষুনি বাড়িতে আয়! আমি লাইব্রেরি ঘরে অপেক্ষা করছি। হাতে সময় কম।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১০: ভার্জিনিয়া ও লিওনার্ড উলফ—উন্মাদনা ও সৃষ্টি /২

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’

নিজে লেখেন বলে বাবা জানতেন প্রণয়কে ধাক্কা দিয়ে ঘটনার গভীরতা না বোঝাতে পারলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। খানিকপরেই লাইব্রেরি ঘরের দরজায় টোকা পড়তেই বাবলি উঠে যাচ্ছিল দরজা খুলতে বাবা হাত তুলে বাবলিকে বসতে বলে মাকে ইশারা করলেন।

প্রণয়কে ফোন করার পর থেকে মা আর দুবার জানার চেষ্টা করেছিলেন তারকবাবু কী বিষয়ে ফোন করেছিলেন? কী হয়েছে আসলে? প্রতিবারই বাবা ছোট্ট করে হাত তুলে শান্ত হতে ইশারা করেছেন। আপনার লেখার পাতায় খসখস করে কিসব লিখে গিয়েছেন। মা, বুঝতে পেরেছেন এই লেখাটা তার সাহিত্য রচনা নয়। সমস্যাটা তৈরি হয়েছে তার সমাধানের কী কী উপায়? আরও নতুন কি কি আনকা সমস্যা হতে পারে? তাদের সমাধান কীভাবে করবে? বাবার মাথায় এ সবই ঘুরছে, কান এখন বন্ধ।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৬৪ : অকারণে কেউ অন্যের ভালো করতে যায় না

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭১: মা সারদার নলিনীর মানভঞ্জন

প্রণয় এসে বসার পর বাবা রুম সার্ভিস থেকে সকলের জন্যে জলদি কফি পাঠাতে বললেন। কফি এল। আবার দরজা বন্ধ। আবার প্রণয়কে কোনও আলোচনা শুরু করতে না দিয়ে বাবা সরাসরি বিষয়ে চলে এলেন।
—প্রণয় অরুণাভ বোসের অ্যাবডাক্সনের কেসটা পুলিশ সলভ করে ফেলবে এবং এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দশবছরের পানিশমেন্ট হবে।
—কী মুশকিল আমাকে এসব বলছো কেন?
—দেখ প্রণয়, কেন বলছি সেটা তুই সবচেয়ে ভালো জানিস! খুব সিরিয়াস কিছু না হলে তোকে ডেকে পাঠিয়ে আমি এসব বলতাম না! আজ তোকে আর আগরয়ালকে যদি পুলিশ এই কেসে অ্যারেস্ট করে যদি পানিশমেন্ট হয় সেটা দশ বছর।

কথাগুলো শোনার পর বাবলি মাথা নামিয়ে নিল। সুরঙ্গমা উৎকণ্ঠিত। বাবলি বা সুরঙ্গমার দিকে তাকিয়ে আচমকা ভেঙ্গে পড়ে প্রণয় অমলকান্তির দু’হাত জড়িয়ে বলে ফেলল, মাথা গরম করে একটা বিরাট ভুল হয়ে গিয়েছে।
—যা বলছি ঠিক তাই তাই করবি। তুই আর বাবলি এখনি লালবাজার যাবি।
বাবলি চমকে ওঠে। মা-ও খুব অবাক।
—সেজ্জেঠু আমি কেন?
মা বাবলিকে সমর্থন করে বললেন—
—কি আশ্চর্য থানা-পুলিশের মধ্যে মেয়েটাকে কেন যেতে বলছ?
—একমাত্র বাবলি গেলেই প্রণয় হয়তো এই ঝঞ্ঝাট থেকে মুক্তি পাবে
—কী ভাবে?—চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content