বুধবার ১২ মার্চ, ২০২৫


গভীর রাত। মফস্‌সলে এমনিতেই তাড়াতাড়ি রাত্রি নামে, তার উপর পাহাড়ি এলাকা হলে তো কথাই নেই। সারাদিন ধরে জঙ্গলে-কলে-কারখানায় পরিশ্রম সেরে ফিরে এসে চাট্টি খেয়ে না-খেয়ে গলায় চোলাই কিংবা মহুয়া উপুড় করে দিয়ে সন্ধে না হতেই ঘরে গিয়ে সেঁধোয় মানুষজন। কিছুজন থাকেই চিরকাল ব্যতিক্রম, কিংবা তাদের হয়তো আফটারনুন শিফট্‌ শেষ হয় সাতটা কিংবা আটটায়। তবে তারা বেশিরভাগই শহরের কাছে বস্তিতে থাকে, এতদূরের গ্রামের কেউ রোজ যাতায়াত করে না কলে-কারখানায় কাজ করার জন্য। অন্তত এই পিঁধারহাটি গ্রামের কেউ তো নয়ই। সারা গ্রাম সন্ধে হতে না-হতেই মূল্যবান ‘কেরাচিন’তেলে জ্বলা কুপি নিভিয়ে শুয়ে পড়ে, ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে সুদিনের স্বপ্ন দেখে।

আজও পড়েছিল। সারা গ্রামে সব মিলিয়ে একশোটি পরিবারের বাস। পঞ্চায়েত অফিস আর বিডিও অফিসের এলাকায় নিয়ন আলো কিছু জ্বললেও বাকি গ্রাম অন্ধকারে ডুবে থাকে। আগে এলাকায় যখন খুব শেয়াল ছিল, তাদের ডাকে মুখরিত থাকত রাত, ইদানীং মানুষ শেয়াল মেরে মেরে তাদের এমন অবস্থা করেছে যে, তারা ডাকতেও ভুলে গিয়েছে যেন। ফলে নিকষ কালো রাতে ঝিঁঝিঁর ডাক ছাড়া আর কিছু শোনা যায় না এখন। আর একেবারে গ্রামের মাঝেমাঝে শুয়ে থাকা নেড়ি কুকুরের দল খিদের চোটে কখনও কখনও উচ্চৈঃস্বরে প্রতিবাদ জানালে, তার আওয়াজে বোঝা যায়, এই গ্রাম কোন প্রেতের আলয় নয়, এখানেও জীবন আছে। হোক্‌ না তা কোন জীবিত সারমেয়ের আওয়াজ, কিন্তু জীবিত তো! আজ কিন্তু কোণ ঝিঁঝিঁ ডাকছিল না। কোন পথকুকুরের ডাকও শোনা যাচ্ছিল না আজ। অন্ধকার আজ পুরোপুরি কালোও নয়, রাতের আকাশ থেকে যেন কোনও নীল রং এসে ঘন কালো রাতটার গায়ে তার পোঁচ মাখিয়ে দিয়েছে। ক্ষয়াটে চাঁদের আলোয় সেই নীল রাতকে কেমন যেন দুর্বোধ্য আর ভয়াবহ বলে মনে হচ্ছিল।
পিশাচপাহাড় নামক টিলাপাহাড়ের পিছনদিকেই পিঁধারহাটি গ্রাম। পিছনদিক এই কারণে বলা হচ্ছে, পিশাচপাহাড় নামক টিলার উপরের দিকে যেখানে কালাদেওর গুহা আছে, তার মুখটি যেদিকে, তার বিপরীত দিকে এই পিঁধারহাটি। পিশাচপাহাড়ের পূবদিকে পিশাচপাহাড় গ্রাম, পশ্চিমদিকে ধুঁন্ধুডাঙা, আর দক্ষিণে পিঁধারহাটি। উত্তরদিক অর্থাৎ যেদিকে গুহার মুখ, সেইদিকে কেবল কয়েক ক্রোশের মধ্যে কোনও গ্রাম নেই। লোকে বলে, কালাদেওর দৃষ্টি সরাসরি যতদূর যায়, ততদূর কেউ ঘরবাড়ি বানিয়ে শান্তিতে বাস করতে পারে না। সেজন্যই উত্তরদিকে কোন গ্রাম এখন কেউ বসানোর সাহস পায়নি। তবে আসল কারণ মনে হয়, উত্তরদিকে ঘন জঙ্গল। এই জঙ্গল একটানা চলতে চলতে গিয়ে শেষ হয়েছে একেবারে পিশাচপাহাড় রিসর্টের পিছনদিকটায়। মাঝেমাঝে অবশ্য ছোটখাট টিলা আছে, ফাঁকা দু’-দশহাত জমি আছে, কিন্তু কেউ যায় না সেসমস্ত জায়গায়। ছোট্ট একমাত্র ঝোরাটি এই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েই কোথায় হারিয়ে গিয়েছে।

এ-অঞ্চলে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন এই ক’এক বছরে হলেও মানুষজন এখনও দারিদ্র্যসীমার নীচেই থেকে গিয়েছে। লেখাপড়ার হালও ভালো নয়। গ্রামপিছু এক-একখানা প্রাইমারি স্কুল টিমটিম করে চলে, যদিও সেখানে পড়ুয়া প্রায় নেই বললেই হয়। ছোটরা স্কুলে যাওয়ার চেয়ে বাবা-মার সঙ্গে জঙ্গলে যেতে, পাতা কুড়াতে, বাঁশের তীর-ধনুক দিয়ে খরগোশ শিকার করতে অনেক বেশি আগ্রহী। হাইস্কুল এখানে অবশ্য নেই। তা আছে আরও মাইল চারেক গেলে। সেখানে যাওয়ার সৌভাগ্য খুব কম জনেরই হয়েছে। তিনটি গ্রামের জন্য দু’টি হেলথ সেন্টারের উদ্বোধন হয়েছিল ঘটা করে, খাতায়-কলমে এখন সে-দুটির অস্তিত্ব থাকলেও সেখানে কোন ডাক্তার বা নিদেনপক্ষে কম্পাউন্ডারের দেখা মেলে না। একজন করে নার্স এবং একজন মেল অ্যাটেনডেন্ট আছেন, তাঁদের দিয়েই কাজ চলে না-চলার মতো।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৫: সরজমিনে

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৪৮: এখানে দিন-রাত-শীত-গ্রীষ্ম-আলো-অন্ধকার, সব কিছুরই হিসেব আলাদা

গ্রামগুলির অধিকাংশ পুরুষই শহরে, কেউ পাশের রাজ্যে কাজের জন্য চলে গেছে। যারা পরিবার নিয়ে গিয়েছে, তারা আর কেউ গ্রামে ফিরে আসেনি। তাদের বাড়িঘরগুলিতে বছরের পর বছর বৃদ্ধ বাবা-মা পড়ে থাকেন, তাঁরা গত হলে বাড়িঘরগুলি খণ্ডহর হয়ে পড়ে। ওই অবস্থাতেই পড়েই থাকে। কে আর কার বসতভিটে দখল করবে? করে লাভই বা কী? এখানে যে কেউ সে বসতভিটে কিংবা জায়গা কিনতে আসবে, সে-গুড়ে বালি। যারা গ্রামেই থাকে, কাছাকাছি জায়গায় কাজকর্ম করে, সপ্তাহান্তে ফেরে, তাদের বাড়িগুলির কোন-কোনটিতে ক্ষীণ আলো জ্বলে। তবে সাতটা বাজতে না-বাজতেই তা নিভে যায়। এখানে কেবল নেই, টিভি নেই, আগে মোবাইল টাওয়ারও ছিল না, হালে একটা মোবাইল টাওয়ার বসেছে। অপেক্ষাকৃত কমবয়সীরা কেউ-কেউ মোবাইল কিনে সেটাতেই বুঁদ হয়ে থাকে। এ-বিষয়ে শহর আর প্রত্যন্ত গ্রামের কোনও পার্থক্য নেই। তবে সবাই যে স্মার্টফোন কিনে ডেটাপ্যাক ভরে আনন্দস্ফূর্তি করে তা নয়। অধিকাংশ মানুষ, যাদের ফোন আছে, তা নিছক কি-প্যাডওয়ালা ফোন, তাতে না দেখা যায় ছবি, না খেলা যায় গেম। দু’চারজন যারা শহরের দিকে কাজ করে স্মার্টফোন ইত্যাদির মোহে পড়ে কিনেছে, তাদেরই কেবলমাত্র রাতগুলি অন্যরকম কাটে। যদিও মহুয়ার ঘোর কাটিয়ে তাদের মধ্যেও বেশিরভাগের পক্ষেই আর নেটের মোহে পড়ার হুঁশ থাকে না।

পিঁধারহাটি গ্রামের বিডিও অফিসের গায়েই বলতে গেলে পঞ্চায়েত অফিস, সেখানেই বছর চারেক হল মোবাইল টাওয়ার বসেছে। আজকাল কম্পিউটার, স্মার্ট ফোন, নেট কানেকশন ইত্যাদি না থাকলে প্রশাসন চালানো সম্ভব নয়। গরীবদের অবস্থার উন্নয়ন না হলে নাই হতে পারে, কিন্তু অন্য উপকরণগুলি না থাকলে অফিস চালানো অসম্ভব। আজকাল মোবাইলের বিশেষ গ্রুপে অর্ডার আসে, মেইলে ডক্যুমেন্টস আদানপ্রদান করতে হয়, বিশেষ অ্যাপ্‌সে ভার্চুয়াল মিটিং হয়, আরও অনেক কিছুই হয়, অতএব বাকি গ্রাম অন্ধকারে পড়ে থাকলেও বিডিও এবং পঞ্চায়েত অফিসের চৌহদ্দি অন্ধকার রাতেও তাই ঝলমল করে। বিডিও অফিসের পিছনদিকে একখানি বড় পুকুর, তার চারপাশে ফুলের কেয়ারি, বড় বড় আম-জামের গাছ, আর তারই ধার ঘেঁষে বিডিও সাহেবের দোতলা বাংলো।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯o: ছাতারে

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৪: প্রকৃতির সান্নিধ্যে কি গ্লানিমুক্তি সম্ভব? লক্ষ্মণের আবেগ কি সাধারণের মধ্যে সহজলভ্য?

বিডিও থাকেন দোতলায়, একতলায় রান্নাবান্নার ব্যবস্থা, দারোয়ান থাকেন সপরিবারে। তাঁর স্ত্রীই রোজ রান্নার কাজ করে দেন। একজন বাইরে থেকে আসে ঠিকে কাজের জন্য। বিডিও সাহেবের এটাই প্রথম পোস্টিং। নিজে মালদার ছেলে। এখন বিয়ে-থা হয়নি। তবে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কোর্টশিপ চলছে ভার্চুয়াল এবং ছুটিছাটায় কলকাতা কিংবা মালদা গেলে রিয়্যাল মোডে। অবসর সময়ে যেদিন এখানেই পড়ে থাকতে হয় শ্রাদ্ধশান্তি করেন ওপরওয়ালার। এখানে তিন বছর হয়ে গেল, এখনও ট্রান্সফার হল না।

এদিকে ট্রান্সফার না হলে কোনও পাত্রীই রাজি হচ্ছে না বিবাহের জন্য। কেউ এই পাণ্ডববর্জিত জায়গায় এসে থাকতে চাইছে না। বাড়ি থেকে একটা সম্বন্ধ প্রায় ফাইনাল হয়ে গিয়েছিল, বিডিও সাহেবের বেশ পছন্দও হয়েছিল পাত্রীকে, কিন্তু পাত্রের কর্মস্থলে পাত্রীর মামা দেখতে এসে সেই-যে “বাড়ি ফিরেই জানাচ্ছি” বলে গেলেন, আজ অবধি আর জানানোর সময় পেলেন না। নাম্বারও ব্লক করে দিয়েছেন। তবে বিশ্বস্তসূত্রে খবর পেয়েছেন বিডিও সাহেব যে, পাত্রীটি বিবাহ করে সুখে ঘর-সংসার করছে। হতাশার মধ্যে একমাত্র আশার আলো এই স্মার্টফোন আর কয়েকটি বিশেষ সাইট। তারই একটিতে আজ রাতে একটু আনন্দ স্ফূর্তি করছিলেন তিনি। ঘর অন্ধকার। স্মার্টফোনের নীলচে আলোয় ওপ্রান্তের ভার্চুয়াল প্রেমিকা শীৎকার করছিল। বিডিও সাহেবের চোখ বিশেষ অঙ্গের দিকে। ফরমায়েশ অনুযায়ী বিশেষ বিশেষ অঙ্গ দেখানোর শর্তেই অনলাইনে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। এখন শর্ত মাফিক ভার্চুয়াল সেক্স চলছে। গোপন এই নীল অভিসার বড় পছন্দের বিডিও সাহেবের। ঠিক এইসময়েই পাশে রাখা আর-একটি ফোনের রিং-টোন বেজে উঠল। কেউ ফোন করছে।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৭: মা সারদার লিঙ্গপুজো

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৮: দুর্গম গিরি কান্তার ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’

আর একজনও এত রাতে গোপন অভিসারে চলেছিল বুঝি। আপাদমস্তক কালো কম্বলমুড়ি দিয়ে অতি দ্রুত সে এগিয়ে চলেছিল জনহীন অন্ধকার পথে বিশেষ বাড়ির দিকে। দু’ধারে গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা চিত্রিত দেওয়ালের মাটির বাড়িগুলি ঘুম-ঘুম চোখে দেখছিল, দেখেই আবার ঘুমিয়ে পড়ছিল। বড় একখানি আসান গাছের তলায় আসতেই দু’একটি পাতা খসে পড়ল লোকটির উপর। লোকটি অবশ্য সে-সব ভ্রূক্ষেপই করল না। এগিয়ে যাচ্ছিল গ্রামের শেষ প্রান্তে, পিশাচ পাহাড়ের গা-ঘেঁষে থাকা একটি বাড়ির দিকে।

সেই বাড়িটি গ্রামের অন্যান্য বাড়ির থেকে একটু আলাদা, কারণ পঞ্চায়েত প্রধান এবং তার সদস্যদের কয়েকটি বাড়ি ছাড়া সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ির মধ্যে এই একটি বাড়িই পাকা। দেড়তলা বাড়িটা অনেকখানি জায়গা জুড়ে। অর্থাৎ উচ্চতায় না বাড়লেও, দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে বাড়িটি বেশ বড়সড়। চারপাশে বাগান আছে। ফুলের এবং ফলের। আর আছে একখানি মন্দির। মন্দির থাকাটা আবশ্যক, কারণ, এই গ্রামে বাড়ির মালিক একজন গণ্যমান্য বলে চিহ্নিত, কারণ তিনি পিশাচপাহাড়ে যে কালাদেওর বাস, তাঁর পুরোহিত।

পিশাচ পাহাড় গ্রাম থাকা সত্ত্বেও পিঁধারহাটি গ্রামে কালাদেওর পুরোহিত থাকেন শুনে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আগে পিশাচপাহাড় গ্রামের পুরোহিত-রোজা যিনি ছিলেন, তিনি বেঘোরে মারা যাওয়ার পরেই এই ব্যবস্থা। তাঁর বিবাহ হলেও সন্তানাদি ছিল না কোন, ফলে তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁরই পরিবারের কেউ যে পুরোহিতগিরি করবেন, এমনটা সম্ভব ছিল না। তখন তিন গ্রামের পঞ্চায়েত, সাধারণ মানুষ প্রমুখেরা বসে আলোচনা করে, শেষে গণভোট নিয়ে পিঁধারহাটি গ্রামের পুরোহিত মঙ্গল ওঝাকেই কালাদেওর বাৎসরিক পূজার পুরোহিত বলে ঠিক করেন। এ-ব্যাপারে অবশ্য পিঁধারহাটির পঞ্চায়েত প্রধানের হাত ছিল সবচেয়ে বেশি। আগেই তিনি বাকি গ্রামের পঞ্চায়েত সমিতির প্রধান ও মেম্বারদের খুশি করার ব্যবস্থা করে গণভোটে জেতার পথ সুগম করে রেখেছিলেন।
আরও পড়ুন:

গল্পবৃক্ষ, পর্ব-১৯: নাগজাতক— অকৃতজ্ঞ সেই লোকটা

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১৩: শরৎকুমারী স্নানাগারের সামনে বসে সারাক্ষণই সাজতেন

অতঃপর যেমন চাষ, তেমন ফল। পিঁধারহাটি গ্রামের প্রধানের কত ক্ষমতা সেটা পার্টির কেন্দ্রিয় নেতৃত্বকে দেখানোই ছিল আসল উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য যে সফল হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। এই রকম চলতে থাকলে একদিন বিধায়কের টিকিট পাওয়াটা আর চাপের হবে না। তার উপর পিঁধারহাটি গ্রামের পুরোহিত তাঁর আপন জামাতা। মেয়ে-জামাইয়ের উন্নতির কথাও তো বাপ হিসেবে তাঁকে ভাবতে হবে! সবার উপরে অবশ্য গ্রামের মর্যাদা! যেমনটি তিনি আলোচনাসভায় বলেছিলেন। তাতেই বাজিমাত হয়ে গিয়েছে। নিজেদের গ্রামের উপস্থিত সদস্য এবং সাধারণের ভোট সম্পূর্ণই তাঁর মতের পক্ষে গেছে। বাকি গ্রামের দু’চারজনের বিরোধিতা ধোপে টেকেনি। তিনি একেবারে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। কালাদেওর গুহার মালিকানা তাঁর দরকার ছিল। সাধে কী আর আগের পুরোহিত বেঘোরে টিলার ওপর থেকে পড়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন? প্রথমে আকন্ঠ বিলিতি গেলানো, তারপর কিনারায় নিয়ে গিয়ে ছোট্ট একটা ধাক্কা। এখানকার লোকজন মহুয়া খেয়েই অভ্যস্ত, বিলিতি তাদের কাছে অসম্ভব স্বপ্নের মতো ব্যাপার। আগের পুরোহিতও অতএব বিলিতি পেয়ে নিজেকে সামলাতে পারবেন না, এ-তো জানা কথাই। মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় টিলা থেকে পড়ে মৃত্যুর রিপোর্ট যখন শুনছিলেন তিনি, মনে-মনে বেদম হাসছিলেন। শ্লা, এইরকম কত খুন-কত অপরাধ যে চিরকালের মতো হারিয়ে যায় অসত্যের আবরণে!

কালো কম্বলমোড়া লোকটি অতি দ্রুত পা চালিয়ে পৌঁছে গেল তার গন্তব্যে। আপাতভাবে মঙ্গল ওঝার বাড়ি সুনসান-নিস্তব্ধ বলে বলে হচ্ছে। সামনে বাড়ির চৌহদ্দিতে প্রবেশের গেট বন্ধ থাকলেও লোকটি তাতে ভ্রুক্ষেপও করল না। সে বাড়ির দান দিক ঘুরে চলে গেল পিছনদিকে। সেখানে আর একটি ছোট্ট গেট, সেটি যদিও বিশেষ কারণে খোলাই ছিল। আর সেখানে পৌঁছাতেই লোকটি দেখতে পেল, পিছনদিকের এ কোণের ঘরটির ভেজানো জানালা দিয়ে ক্ষীণ আলোর রেখা বাইরে এসে পড়েছে। নীল আলো। বাল্বের উজ্জ্বল আলো নয়। এই ধরণের স্পেশাল অভিসারের দিন কোনও উজ্জ্বল বা চড়া আলো জ্বালানো নিষেধ। মঙ্গল মনে রেখেছে দেখে খুশি হল লোকটি। কোনরকম শব্দ না করে সে এগিয়ে গেল ভেজানো জানালার দিকে। শব্দ করল তিনবার। খুব জোরে নয়, আস্তে করে। ভেজানো জানালা অল্প খুলে গেল। ভিতর থেকে কেউ চাপা গলায় জিজ্ঞাসা করল, “জাড় লাগছে বহুত?”

বাইরে দাঁড়ানো লোকটি জবাব দিল চাপা গলায়, “বহুত জাড়!”
অমনি জানালা বন্ধ হয়ে গেল। তার মূহূর্তমাত্র পরে পিছনের দিকের একটি দরজা খুলে গেল। বাইরে অপেক্ষমান লোকটি সেই দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল। উত্তেজনায় খেয়াল করল না, বাড়ির পিছনদিকের একটি বড় খিরিশ গাছের গুঁড়ির আড়ালে একজন কেউ দাঁড়িয়ে ছিল। নীল অন্ধকার যেন। লোকটির হাতে নাইট ভিশন ক্যামেরা। নীল রাত্রির এই গোপন অভিসারের মুহূর্তকাল বন্দি হয়ে গেল সেই ক্যামেরায়। —চলবে।
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel): পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content