অলঙ্করণ: প্রচেতা।
তনিমা
বড়জ্যাঠামণি গগনকান্তি ও জেঠিমা আরতির ছোট মেয়ে তনিমা। সবার চেয়ে ছোট তাই খুব আদুরে। আমরা সমবয়সী। তনিমার ভীষণ ইচ্ছে ছিল সিনেমায় অভিনয় করার। ছোটবেলা থেকেই সাজগোজ চুলের কায়দা নানা রকমের ড্রেস এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকতো তনিমা। বসুন্ধরা ভিলার আওতায় মানুষ হয়েও তনিমার মধ্যে প্রগলভতার এই হাতছানি কারওই খুব একটা পছন্দ ছিল না। কিন্তু এ সবের ফলে তনিমা কিন্তু পড়াশোনায় খারাপ ছিল না। আমার বোন সানন্দা মতো বইয়ের পোকা না হলে তনিমা লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ থেকে ফিলোজফি অনার্স নিয়ে পাস করেছিল। পাত্র অনিরুদ্ধ সেনগুপ্ত চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। পৈত্রিক ফার্মেই প্র্যাকটিস করে। বাবা চন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত বিখ্যাত চার্টাড অ্যাকাউন্টেন্ট ছিলেন। তার মাথা থেকে সিনেমার ভূত ছাড়াতেই তড়িঘড়ি বিয়ে দেওয়া হল।
মা নিজেই দুই একবার তনিমাকে বুঝিয়েছেন। বলেছেন গ্ল্যামার-ওয়ার্ল্ডের পিচ্ছিল রাস্তা। প্রতিভা থাকলে অভিনয় ক্ষমতা থাকলে নিজের শর্তে কাজ করার অবস্থা তৈরি হয়। তা না হলে টেবিলের অন্যদিকে বসে থাকা লোকটার শর্ত মেনে এগোতে হবে। বাইরে থেকে দেখলে যতটা সোজা বলে মনে হয়। রূপোলি পর্দার জগৎটা অতটা সোজা নয়। কেউ কাউকে বিনা স্বার্থে এতটুকু জমি ছেড়ে দেবে না। কেউ একজন সফল হলে প্রতিমুহূর্তে তার আশপাশের লোকেই সেই সফল মানুষটার পিছনে চক্রান্ত শুরু করবে। এই সব কিছু সামলে ভালো অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করে আরো সামনে এগিয়ে চলাটা খুব কঠিন।
আরও পড়ুন:
দুই বাংলার উপন্যাস: ৩য় খণ্ড, পর্ব-১৭: দাহের জন্য স্বর্ণময়ীকে চুল্লিতে দিয়েই বিনয়কান্তি আর অপেক্ষা করেননি
শিলচরের ভাষা শহিদ দিবস: উনিশের ভাষা আন্দোলনে নকল আদালত
মা বারবার বলতেন, ছবি থেকে বাদ পড়ে যাওয়াটা ভয়ংকর। জগদীশ্বর করুনাময় বসুন্ধরা ভিলার কল্যাণে আমি সেই ঘটনা ঘটতে দিইনি। ছবিকেই আমার জীবন থেকে বাদ দিয়ে দিতে পেরেছি।
কিন্তু সে তারপরেও তনিমার বিয়ে সুখের হয়নি। অনিরুদ্ধ তারই পরিচিত নামী কোম্পানির এক সিইও মহিলার ঘনিষ্ট হয়ে পড়ে। চন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত সমাজে প্রতিষ্ঠিত একজন বিশিষ্ট মানুষ। তাঁর পরিবারেই এমন একটা স্ক্যান্ডেল তিনি সহ্য করতে পারলেন না। অনিরুদ্ধকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। তনিমা অবশ্য ঘটনা এতটা গড়িয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেনি, তার অনেক আগেই তার বিবেকানন্দ রোডের সুবিশাল শ্বশুরালয় ছেড়ে বসুন্ধরা ভিলায় চলে এসেছিল।
অভিনয় করতে না দিয়ে আচমকা বিয়ে দিয়ে দেওয়ার কারণে তনিমার মধ্যে বাড়ির বড়দের ওপর একটা ভয়ংকর রাগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তনিমার জন্যে অভিনয় প্রফেশনটা একেবারেই উপযুক্ত নয়। তনিমাকে দেখতে ভালো হলেও সে চোখেমুখে চটপটে নয়। চেহারায় বুদ্ধিমত্তার কোনও ছাপ নেই। বাবা তনিমাকে আদর করে তনুমা বলে ডাকতেন। অনেক পরে মানে আমরা একই বয়সী হলেও তনিমার বিয়ের অনেক পরে আমার বিয়ে হয়েছে। তা আমার বিয়ের পর একদিন সন্ধেবেলায় টেলিভিশন সিরিয়াল দেখতে দেখতে বাবা হঠাৎ বলে উঠলেন —
কিন্তু সে তারপরেও তনিমার বিয়ে সুখের হয়নি। অনিরুদ্ধ তারই পরিচিত নামী কোম্পানির এক সিইও মহিলার ঘনিষ্ট হয়ে পড়ে। চন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত সমাজে প্রতিষ্ঠিত একজন বিশিষ্ট মানুষ। তাঁর পরিবারেই এমন একটা স্ক্যান্ডেল তিনি সহ্য করতে পারলেন না। অনিরুদ্ধকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। তনিমা অবশ্য ঘটনা এতটা গড়িয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেনি, তার অনেক আগেই তার বিবেকানন্দ রোডের সুবিশাল শ্বশুরালয় ছেড়ে বসুন্ধরা ভিলায় চলে এসেছিল।
অভিনয় করতে না দিয়ে আচমকা বিয়ে দিয়ে দেওয়ার কারণে তনিমার মধ্যে বাড়ির বড়দের ওপর একটা ভয়ংকর রাগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তনিমার জন্যে অভিনয় প্রফেশনটা একেবারেই উপযুক্ত নয়। তনিমাকে দেখতে ভালো হলেও সে চোখেমুখে চটপটে নয়। চেহারায় বুদ্ধিমত্তার কোনও ছাপ নেই। বাবা তনিমাকে আদর করে তনুমা বলে ডাকতেন। অনেক পরে মানে আমরা একই বয়সী হলেও তনিমার বিয়ের অনেক পরে আমার বিয়ে হয়েছে। তা আমার বিয়ের পর একদিন সন্ধেবেলায় টেলিভিশন সিরিয়াল দেখতে দেখতে বাবা হঠাৎ বলে উঠলেন —
আরও পড়ুন:
বদলে দিয়েছিলেন স্বাধীনতা-উত্তর নাটক এবং চলচ্চিত্রের ভাষা
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪৬: শ্রীমায়ের দুই ভ্রাতৃবধূর কথা
— আমাদের তনুমার টাইমিংটা গণ্ডগোল হয়ে গিয়েছে। এখন যদি ওর কুড়ি বাইশ বছর বয়স হতো তাহলে বউ শাশুড়ি সিরিয়ালে ও দিব্যি মানিয়ে নিতে পারত। মোটামুটি মুখস্ত করে সংলাপ বলতে পারলেই সুযোগ পেত। রোজ রোজ বউশাশুড়ির এত ডেলিসোপ দেখতে শুনতে ভাল বৌমাদের অভাব তো একটা আছেই। তনুমার কাটা কাটা চোখমুখ ছিল ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলতে পারতো। কোন অসুবিধা হতো না চড়াচড়া সংলাপ আর ক্যামেরায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানান চরিত্রের ঝাঁঝাঁ রিঅ্যাকশন। একদম তাস খেলার মতো। এক চরিত্রের একটা প্রতিক্রিয়ার পর পরের প্রতিক্রিয়া আসতে আসতেই সিরিয়ালের বিজ্ঞাপনের বিরতি এসে যায়। দিব্যি টিভি সিরিয়ালের নায়িকা হতে পারতো আমাদের বাড়ির মেয়েটা। শুধুমধু বেচারির ধরেকরে বিয়ে দিয়ে সব গোলমাল হয়ে গেল।
এতদিন বাদে তনিমার কথা উঠে এল, কারণ আজ প্রায় ২০ বছর বাদে তনিমা ফিরল মালয়েশিয়া থেকে। কেন এতদিন আসেনি তার ইতিহাসের কিছুটা বলেছি। বেশ কিছুটা বাকি আছে।
এতদিন বাদে তনিমার কথা উঠে এল, কারণ আজ প্রায় ২০ বছর বাদে তনিমা ফিরল মালয়েশিয়া থেকে। কেন এতদিন আসেনি তার ইতিহাসের কিছুটা বলেছি। বেশ কিছুটা বাকি আছে।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৮: ছবি আঁকতে আঁকতে অবনীন্দ্রনাথ টান দিতেন গড়গড়ায়, চিবোতেন পান
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২৩: তরু দত্ত— এক আনন্দ বিষাদের তরুলতা
ফুলকাকার পর আমাদের প্রজন্মের তনিমা তার জীবনে এই দূর্ভাগ্যজনিত ঘটনার পর নিজের মতে একজন অবাঙালিকে বিয়ে করেছিল। রঘুরামণ রেড্ডি। তেলেগু। তনিমা লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে পড়ত। তার আগে বালিগঞ্জ শিক্ষাসদন। শ্রীরাধা রেড্ডির সঙ্গে সেই স্কুল থেকে গভীর বন্ধুত্ব। শ্রীরাধাদের বাড়ি হায়দরাবাদ। শ্রীরাধার মেসো হরিকৃষ্ণন ছিলেন দক্ষিণের তেলেগু ছবির ডান্স ডিরেক্টর। শ্রীরাধারা অবশ্য কলকাতায় লেক রোডে থাকতো। এই শ্রীরাধার থেকেই গল্প শুনে শুনে তনিমার মাথায় সিনেমা করার ভূত চেপেছিল।
শ্রীরাধার বাবা নাগেশ্বর রেড্ডি কলকাতায় এক তেল কোম্পানির বড়সড় পোস্টে চাকরি করতেন। ঢাকুরিয়ায় অফিস। শ্রীরাধার বাবা এর মধ্যে বেশ কয়েকবার দিল্লি বম্বেতে বদলি হয়েছেন। কিন্তু শ্রীরাধারা কলকাতাতে তাদের লেক রোডের ভাড়াবাড়িতেই থেকেছে। স্কুল বদলের অনেক সমস্যা হয়। মাঝের কয়েকটা বছর কাটিয়ে আবার শ্রীরাধার বাবা কলকাতায় শ্রীরাধা সবচেয়ে ছোট, তনিমার মতো। দু’জনে একই কলেজে ভর্তি হল। পরীক্ষার পর শ্রীরাধারা দিন পনেরোর জন্য হায়দরাবাদ যাবে।
আসলে কয়েকমাস বাদেই শ্রীরাধার বাবার রিটার্নমেন্ট। কলকাতার বসবাস পাকাপাকিভাবে শেষ করে তারা হায়দ্রাবাদে গিয়ে থাকবেন। তারই প্রাথমিক বন্দোব্যস্ত। শ্রীরাধা হায়দরাবাদেই মাস্টার পড়বে। ফলে আর দেখা হওয়ার সুযোগ নেই। শ্রীরাধা চাইল তনিমা তার সঙ্গে হায়দরাবাদ যাক। স্কুল থেকে কলেজের বন্ধু এরপর বিয়েথা হয়ে কে কোথায় চলে যাবে তাই বড় জেঠু জেঠিমার একটু আপত্তি থাকা সত্ত্বেও বড়ঠাকুমা বসুন্ধরা মত দিলেন। জগদীশ্বর পৃথিবীর কোথায় যে কার জন্য কোন চমৎকার করে রেখেছেন তা একমাত্র তিনিই জানেন।—চলবে।
শ্রীরাধার বাবা নাগেশ্বর রেড্ডি কলকাতায় এক তেল কোম্পানির বড়সড় পোস্টে চাকরি করতেন। ঢাকুরিয়ায় অফিস। শ্রীরাধার বাবা এর মধ্যে বেশ কয়েকবার দিল্লি বম্বেতে বদলি হয়েছেন। কিন্তু শ্রীরাধারা কলকাতাতে তাদের লেক রোডের ভাড়াবাড়িতেই থেকেছে। স্কুল বদলের অনেক সমস্যা হয়। মাঝের কয়েকটা বছর কাটিয়ে আবার শ্রীরাধার বাবা কলকাতায় শ্রীরাধা সবচেয়ে ছোট, তনিমার মতো। দু’জনে একই কলেজে ভর্তি হল। পরীক্ষার পর শ্রীরাধারা দিন পনেরোর জন্য হায়দরাবাদ যাবে।
আসলে কয়েকমাস বাদেই শ্রীরাধার বাবার রিটার্নমেন্ট। কলকাতার বসবাস পাকাপাকিভাবে শেষ করে তারা হায়দ্রাবাদে গিয়ে থাকবেন। তারই প্রাথমিক বন্দোব্যস্ত। শ্রীরাধা হায়দরাবাদেই মাস্টার পড়বে। ফলে আর দেখা হওয়ার সুযোগ নেই। শ্রীরাধা চাইল তনিমা তার সঙ্গে হায়দরাবাদ যাক। স্কুল থেকে কলেজের বন্ধু এরপর বিয়েথা হয়ে কে কোথায় চলে যাবে তাই বড় জেঠু জেঠিমার একটু আপত্তি থাকা সত্ত্বেও বড়ঠাকুমা বসুন্ধরা মত দিলেন। জগদীশ্বর পৃথিবীর কোথায় যে কার জন্য কোন চমৎকার করে রেখেছেন তা একমাত্র তিনিই জানেন।—চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।