অগস্ত্যের জলপান হল। কালেয়দমনও সম্ভবপর হল। দেবতারা জগতের স্থিতি যাতে বজায় থাকে, তার জন্য সর্বদাই সচেষ্ট থাকেন। তাঁরা অগস্ত্যকে গিয়ে বললেন, ‘হে অগস্ত্যদেব আপনি দয়া করে উদরস্থ জল দিয়ে আবার সমুদ্র পূরণ করুন।’ অগস্ত্য বলে ওঠেন, ‘হে দেবগণ! তা আর সম্ভব নয়। কারণ সেই জল আমি জীর্ণ করে ফেলেছি।’ দেবতারা এ বার অকুলপাথারে পড়লেন এই ভেবে যে কিভাবে সমুদ্রের জলপূর্তি সম্ভব? সকলে গিয়ে প্রজাপতি ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলেন। স্মিত হেসে ব্রহ্মা তাঁদের বললেন, ‘হে দেবগণ! তোমরা মিথ্যেই অমন চিন্তা করছ, যা গিয়েছে তা প্রকৃতির নিয়মেই আবার পূর্ণ হয়ে যাবে। দেবতারা জানতে চান, সেটা কিভাবে সম্ভব? ব্রহ্মা তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আজ থেকে অনেকবছর পর রাজা ভগীরথ তাঁর পূর্বপুরুষদের জন্য নিয়ে আসা গঙ্গাজল দিয়ে সমুদ্রকে পূর্ণ করবেন।’ ব্রহ্মার কথায় দেবতারা আশ্বস্ত হলেন।
এদিকে যুধিষ্ঠিরের আগ্রহ বাড়তে থাকে। তিনি লোমশমুনিকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন, ‘হে মুনিপ্রবর! ভগীরথ কোন বংশের রাজা ছিলেন? তাঁর পূর্বপুরুষ কারা ছিলেন? কীভাবেই বা ভগীরথ তাঁদের উদ্ধার করেন, আপনি আমাকে বিস্তারিত বলুন। লোমশমুনি তাঁকে শোনালেন সেই আশ্চর্যকাহিনী। রাজা সগর আর পুত্রদের কথা, ভগীরথের গঙ্গানয়নের কথা। যুধিষ্ঠির আশ্চর্য হয়ে শুনতে লাগলেন, সেইসব রাজাদের কথা যাঁরা পরের জন্য নিজের জীবনের একটা বড় অংশ ব্যয় করেছেন।
এদিকে যুধিষ্ঠিরের আগ্রহ বাড়তে থাকে। তিনি লোমশমুনিকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন, ‘হে মুনিপ্রবর! ভগীরথ কোন বংশের রাজা ছিলেন? তাঁর পূর্বপুরুষ কারা ছিলেন? কীভাবেই বা ভগীরথ তাঁদের উদ্ধার করেন, আপনি আমাকে বিস্তারিত বলুন। লোমশমুনি তাঁকে শোনালেন সেই আশ্চর্যকাহিনী। রাজা সগর আর পুত্রদের কথা, ভগীরথের গঙ্গানয়নের কথা। যুধিষ্ঠির আশ্চর্য হয়ে শুনতে লাগলেন, সেইসব রাজাদের কথা যাঁরা পরের জন্য নিজের জীবনের একটা বড় অংশ ব্যয় করেছেন।
ইক্ষ্বাকুবংশের রাজা ছিলেন সগর। তিনি অপুত্রক ছিলেন। পুত্রকামনায় পত্নীদের সঙ্গে করে তিনি মহাদেবের তপস্যায় ব্রতী হন। তাঁর কঠোর তপস্যায় সন্তুষ্ট মহাদেব তাঁকে বর দেন। মহাদেবের বরে সগররাজার পত্নী বৈদর্ভীর যে পুত্ররা জন্মগ্রহণ করে তাদের যেমন জন্মবৃত্তান্ত মহাভারতে শোনা যায়, তাতে মনে হয় তারা ছিল নলজাতক সন্তান। সগররাজার এই সন্তানেরা যেমন অহংকারী তেমনি অত্যাচারী ছিল। তারা সকলকে অবজ্ঞা করত। সকলেই তাদের অত্যাচারে অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। সগররাজার অপরপত্নী শৈব্যার গর্ভে জন্ম হল অসমঞ্জা। অসমঞ্জা ছিল অত্যন্ত সুপুরুষ।
আরও পড়ুন:
মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৪২: মহাসমুদ্রের জলপান করলেন অগস্ত্যমুনি
ধারাবাহিক উপন্যাস, পর্ব-৪৪: বসুন্ধরা এবং…
বাইরে দূরে: মোহনার দিকে…
এদিকে পুত্রেরা বড় হয়ে গেছে। আর তেমন ভাবনা নেই এই চিন্তা করে সগররাজা অশ্বমেধযজ্ঞ করবেন বলে মনস্থির করলেন। তিনি ভাবলেন বিপুল এই কর্মকাণ্ডে পুত্রেরা তাঁর সহায় হবেন। যথাসময়ে সগররাজার পুত্রেরা যজ্ঞের অশ্বকে সাথে নিয়ে দেশ পরিক্রমণে নির্গত হল। একদিন একসমুদ্রের তীরে অশ্বটিকে রেখে তারা যখন ইতস্ততঃ বিশ্রাম করছিল, তখন অশ্বটি আচম্বিতে উধাও হয়। হঠাৎ খেয়াল হতে তন্নতন্ন খুঁজেও অশ্বটির কোনও হদিশ না পেয়ে সগররাজার ছেলেরা হতাশ হয়ে পিতার কাছে ফিরে এসে সবটুকু জানায়। পিতা তাদের আবার পাঠালেন। বললেন, ‘যেভাবেই হোক না কেন সেই যজ্ঞের জন্য নির্দিষ্ট অশ্বকে তোমাদের খুঁজে বের করতেই হবে।’
আরও পড়ুন:
খাই খাই: চিতল মাছের তো খেয়েছেন, এবার চিংড়ির মুইঠ্যার স্বাদ নিন, রইল সহজ রেসিপি
ইংলিশ টিংলিশ: সবাই যদি বলে ‘very beautiful’, তুমি বলে দ্যাখো ‘ravishing’ বা ‘magnificent’!
দশভুজা: আমার উড়ান—স্বাতী মোহন: এক এবং অন্যতমার আখ্যান…
এদিকে সগররাজার পুত্রেরা অশ্বের খোঁজে দিকবিদিক ঘুরতে ঘুরতে কপিলমুনির আশ্রমে এসে উপস্থিত হয়ে সেখানে অশ্বটিকে দেখামাত্রই অত্যন্ত উল্লসিত হল। তারা কপিলমুনিকে অগ্রাহ্য করে অশ্বটিকে নেওয়ার জন্য ছুটে গেল। কপিলমুনিও যে সে পুরুষ ছিলেন না। স্বয়ং দেবতারাও তাঁকে সমীহ করে চলতেন। তিনি সগরপুত্রদের কথা আগেই শুনেছিলেন। এখন তাদের অহংকার চাক্ষুষ করলেন। কপিলমুনির অভিশাপে সগররাজার দুর্বিনীত পুত্রেরা শেষ হল।
এদিকে সগররাজার অপর যে পুত্র ছিল, যার নাম ছিল অসমঞ্জা, সে অতি সুপুরুষ আর বীর ছিল। কিন্তু তার অত্যাচারেও পুরবাসীরা অস্থির হতো। অসমঞ্জার একটি মস্ত দোষ ছিল এই যে, সে পড়শীদের ছোট দুর্বল ছেলেগুলোকে নদীতে ফেলে দিত। ছোটছেলেরা ভয়ে প্রবল আর্ত্তনাদ করত। তাদের ঐ আওয়াজ অসমঞ্জাকে অত্যন্ত সুখ দিত। অসমঞ্জার বিষয়ে পড়শীদের ক্রমাগত নালিশে বিপর্যস্ত রাজা তাকে ত্যজ্যপুত্র করেন।
এদিকে সগররাজার অপর যে পুত্র ছিল, যার নাম ছিল অসমঞ্জা, সে অতি সুপুরুষ আর বীর ছিল। কিন্তু তার অত্যাচারেও পুরবাসীরা অস্থির হতো। অসমঞ্জার একটি মস্ত দোষ ছিল এই যে, সে পড়শীদের ছোট দুর্বল ছেলেগুলোকে নদীতে ফেলে দিত। ছোটছেলেরা ভয়ে প্রবল আর্ত্তনাদ করত। তাদের ঐ আওয়াজ অসমঞ্জাকে অত্যন্ত সুখ দিত। অসমঞ্জার বিষয়ে পড়শীদের ক্রমাগত নালিশে বিপর্যস্ত রাজা তাকে ত্যজ্যপুত্র করেন।
আরও পড়ুন:
শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২৪: শোকবিহ্বল মা, ক্ষোভে উত্তাল ভাই — তবুও কি বনবাস?
অ্যালঝাইমার্সের যত্ন বেশ চ্যালেঞ্জের, সঠিক পরিচর্যায় ধৈর্যশীল, সহনশীল, সংবেদনশীল এবং কৌশলী হতে হবে
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৩৩: খালেবিলে, ধানখেতে, পুকুরে, নদীতে ঘুরে বেড়ানো ‘ম্যাজিশিয়ান’ জেব্রা ফিশ ভবিষ্যতে রোগ নিরাময়ে নতুন দিশা দেখাবে
অসমঞ্জার পুত্র অংশুমান কিন্তু পিতার বিপরীত স্বভাবের ছিলেন। সগররাজা পুত্রদের শোকে বিপর্যস্ত হয়ে পৌত্র অংশুমানকে একদিন ডেকে পাঠালেন। পিতামহের ডাকে সাড়া দিয়ে একদিনে অংশুমান বেরিয়ে পড়লেন সেই উধাও হওয়া যজ্ঞাশ্বের খোঁজে। কপিলমুনির আশ্রমে গিয়ে তাঁকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে সবিনয়ে নিবেদন করলেন, ‘মুনিপ্রবর! আমি আমার পিতামহের অসমাপ্ত যজ্ঞ যাতে সুষ্ঠুভাবে সমাপ্ত করা সম্ভব হয় সেইহেতু এই অশ্বটিকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি। আপনি যদি কৃপা করে এটি আমায় প্রত্যর্পণ করেন, তবে আমি এবং আমার পিতৃপুরুষেরা বাধিত থাকব।’ মুনি অংশুমানের বিনয়ে সন্তুষ্ট হলেন। যজ্ঞের জন্য শুভকামনা জানিয়ে ফিরিয়ে দিলেন যজ্ঞের অশ্বটিকে। আর বললেন, ‘হে বালক! তোমার প্রতি আমি তুষ্ট হয়েছি। বলো, কি বর প্রার্থনা করো!’
অংশুমান সেকথা শুনে জানালেন, ‘হে মুনিপ্রবর! আমার আর কিই বা চাওয়ার থাকতে পারে? আপনি যদি কৃপা করে আমার পিতৃপুরুষদের উদ্ধারের জন্য জল প্রদান করেন, তবে সেটুকুতেই আমি কৃতার্থ হব।’ মুনি সরলমতি অংশুমানের কথায় সন্তুষ্ট হলেন। তাঁকে প্রার্থনাপূরণের বর দিলেন।
তবে এটুকুতেই সবটা মেটেনি। অংশুমানের হাত ধরে সমুদ্র জলপূর্ণ হননি। সে অসাধ্যসাধন করেছিলেন অংশুমানের উত্তরপুরুষ ভগীরথ।
অংশুমান সেকথা শুনে জানালেন, ‘হে মুনিপ্রবর! আমার আর কিই বা চাওয়ার থাকতে পারে? আপনি যদি কৃপা করে আমার পিতৃপুরুষদের উদ্ধারের জন্য জল প্রদান করেন, তবে সেটুকুতেই আমি কৃতার্থ হব।’ মুনি সরলমতি অংশুমানের কথায় সন্তুষ্ট হলেন। তাঁকে প্রার্থনাপূরণের বর দিলেন।
তবে এটুকুতেই সবটা মেটেনি। অংশুমানের হাত ধরে সমুদ্র জলপূর্ণ হননি। সে অসাধ্যসাধন করেছিলেন অংশুমানের উত্তরপুরুষ ভগীরথ।