মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪


ছবি: লেখক।

আগস্টের তেরো তারিখে চলে গিয়েছে একটি আন্তর্জাতিক দিবস। ইন্টারন্যাশনাল লেফট হ্যান্ডারস’ ডে। বাঁহাতিদের দিন। এরপর উনিশ আর কুড়িতে যথাক্রমে আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র দিবস আর, বিশ্ব মশা দিবস। সবগুলি বরণীয় না হলেও স্মরণীয় বটে।

এই যেমন, ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গির জন্য না চাইলেও মশার কথা মনে রাখতেই হয়। স্বপ্নে কিংবা দুঃস্বপ্নেও তাদের ভোলা যায় না। প্রাতঃস্মরণীয় ক্রান্তপ্রজ্ঞ মানুষরা এজন্যই বলে থাকেন, যা তোমাকে ঘুমোতে দেয় না তাই স্বপ্ন। মশার ক্ষেত্রে বলা ভালো, দুঃস্বপ্ন। হাতি ঘোড়া তল খুঁজে না পেলেও মশার কাছে এ সব জলভাত। মশারা অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, বায়োলজি জানে।
রক্তের কোনও বিশেষ গ্রুপে তাদের আসক্তি আছে কীনা বলা কঠিন, তবে এরা মনস্তত্ত্ব বোঝে, লুকোচুরি খেলতে পারে, অতিশয় ধূর্ত ও প্রতারণাকুশল। এরা শাস্ত্রীয় বিধিতে বরণে পারঙ্গম, হাতি কাদায় পড়লে প্রথম লাথি মারার দায়িত্ব এদেরই। ঈশ্বর ঠিক কী মনে করে এদের সৃষ্টি করেছিলেন তা এখনও জানা যায়নি।
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৪৯: হাতি মেরে সাথী

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬২: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— সুখদর্শন ও হুড়ো

তবে এরা সমদর্শী, কারুর প্রতি পক্ষপাতিত্ব নেই। ধনী, নির্ধন, ছোট, বড়, রাজা, প্রজা, মন্ত্রী, সান্ত্রী যাকেই পাবে তাকেই আপন করে নেবে। কোনও কিছুতেই এরা দমে যাওয়ার পাত্রী নয়। ধূপ, তেল, ধোঁয়া, কামান, বোমা, গুলি, তরঙ্গ, ভাইব্রেশন, রেডিয়েশন কিছুই এদের কাবু করতে পারে না। চলমান অশরীরীর মতো এরা এদের কাজে একনিষ্ঠ থাকে। ফলের আশা না করে নিষ্কাম কর্মের সার্থক রূপায়ণ যেন মশাদের দিবাদ্বিপ্রহরের কিংবা নৈশ অভিসারে। ফলের আশা নেই একথা অবশ্য বলা যাবে না। রক্তের জন্যই সবকিছু। পৃথিবীর ইতিহাস-ও তাই-ই বলে অবশ্য। তাহলে এদের নিয়ে কী করা যায়?
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৫: পতন আসন্ন হলেই সবার বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়

দশভুজা, পর্ব-৩৬: মৃণালিনী— রবি ঠাকুরের স্ত্রী-র লেখকসত্তা

এক হাত দেখে নেওয়া যায়। বাম হাত আছে তো! যেকোনও সমস্যাই যাদের কাছে বাম হাতের খেল্, তাদের বাম হাত-ই যথেষ্ট এদের কব্জা করতে। বাম হাত বললেই অকর্ম, অপকর্ম এসবের কথা যাদের মনে আসে তারা একদেশদর্শী, ছিদ্রান্বেষী। “হাত থাকতে পারে কারোর বুঝি” এই চিন্তাতেই তারা সংশয়কুটিল। বামহাত থাকলে তো কথাই নেই। বিধি বাম বুঝি! শিব মহাদেব বামরূপে খ্যাত। নারী বামা। দু’ হাত সমানভাবে ব্যবহার করে সব্যসাচীরা। তাদের একটা সময় পর্যন্ত বেশ প্রসিদ্ধি ছিল। কিন্তু বাম হাতের কাজ ডান হাত জানবে না এতেই চতুর্বর্গের সিদ্ধি।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫৯: শ্রীমায়ের ভক্তের গ্রামে তীর্থদর্শন

কবি বলেছেন, ডান হাতে তোর খড়্গ জ্বলে বাঁ হাত করে শঙ্কাহরণ। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান থেকে কলমধারী সকলেই স্পেশ্যাল। এমন অনেকে আছে, যারা ব্লেণ্ডেড মোডে কাজ চালায়। লেখে বাম হাতে, অথচ খাবার খায় কিংবা চড়চাপড় কিংবা ছুরি মারে ডান হাতে। সে যাই হোক, গোয়েন্দা গল্পে এইসব ‘ন্যাটা’রা এসে যতো অপকর্ম ঘটায়। বাঁ হাতি হলেই লোকে একটু অন্যচোখে, বিস্ময়ে বা ভয়ে কী কে জানে, দেখে বলেই তাদের জন্য একটা দিন উৎসর্গ করা হয়েছে। যারা একটু অন্যরকম, যা মনে রাখা বা মেনে চলার মতো কিছু, সেসবের জন্য কিছু স্পেশ্যাল আয়োজন হল এইসব বিশ্বব্যাপী দিবসের তাৎপর্য।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭৬: প্রশাসকের প্রাণঘাতী ভুল সিদ্ধান্তের প্রতিফল ও যুগান্তরেও রামায়ণের অমল মহিমা

মশারাও এমন স্পেশ্যাল, যেমন ন্যাটা-রা। তবে মশারা কি বাঁহাতি? কে জানে! মশারা অবশ্য শুধু দিনে নয়, রাতেও সমান কিংবা বেশি সক্রিয়। শিফটে শিফটে ঝাঁকে ঝাঁকে এসে ডিউটি জয়েন করে কর্পোরেট স্টাইলে কিংবা গেরিলা পদ্ধতিতে মন দিয়ে কাজ করে যাওয়াই এদের রীতি। তাই শুধু দিবস নয় একটি রাত্রি ঘোষণা করাও আশু প্রয়োজন। আর তাদের সঙ্গে লড়ার জন্য বামহাতের জাদু তো থাকলোই, শাস্ত্রে বলেছে বুনো ওল বাঘা তেঁতুলেই জব্দ হয়।

কিন্তু ‘কাল্টিভেট’ করার পর এই দ্বিবিধ রত্নদের নিয়ে কী করা যাবে?
* হুঁকোমুখোর চিত্রকলা : লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

Skip to content