বুধবার ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪


ছবি: সংগৃহীত।

Out of the cloud-world sweeps thy awful form,
Vast frozen river, fostered by the storm….

Up on the drear peak’s snow-encumbered crest,
Thy sides deep grinding in the mountain’s breast….

I walked erstwhile upon thy frozen waves,
And heard the streams amid thy ice-locked caves…


চার্লস অগাস্টাস কিলারের লেখা এই কয়েকটা পংক্তি আমার মনে পড়ে যায় মাঝে মধ্যেই। কবি কিলার তাঁর আলাস্কা ভ্রমণের শেষে এই পংক্তিগুলি লিখেছিলেন হিমবাহের রূপ বর্ণনা করার জন্য। যদিও এই ফেয়ারব্যাঙ্কস শহরে বা শহরের কাছাকাছি কোনও জায়গাতেই কোনও হিমবাহ নেই একেবারেই। তবুও এই কবিতাটা আমার মনে পড়ে যায় থেকে থেকেই। জমাট বাঁধা হিমবাহের জমে যাওয়া ঢেউ না থাক, আমাদের আছে কবিগুরুর বই থেকে উঠে আসা একটা ছোট্ট নদী যেটা চলে আঁকেবাঁকে, আর শীতকাল পড়তে না পড়তেই সবকটা ঢেউ পুরো জমে গিয়ে মিশে যায় কবি কিলারের কবিতায়। তার নাম ‘চেনা’। আর তার ধারের এই অচেনা শহরের প্রেমেই আমি পড়েছিলাম তার প্রথম দর্শনেই, আমার চাকরির ইন্টারভিউয়ের দিনই।
এই পর্বে আমি সময়ের নিরিখে একটু পিছিয়ে যাবো। ফিরে যাব আমার ইন্টারভিউয়ের দিন। যেদিন আমি প্রথম ফেয়ারব্যাঙ্কসে এসেছিলাম। ২০২১ সালের মে মাস নাগাদ আমার প্রথম ডাক আসে ইউনিভার্সিটি অফ আলাস্কা-ফেয়ারব্যাঙ্কসে সহ-অধ্যাপকের ইন্টারভিউর জন্য। প্রথম ধাপের ফোন ইন্টারভিউতে সফল হলে দ্বিতীয় পর্যায়ের ইন্টারভিউর জন্য ডাক আসে। এই দ্বিতীয় পর্বের ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্যই আমাকে যেতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই যাতায়াতের সমস্ত খরচ বহন করে। যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যাপনার চাকরির এটাই নিয়ম।

আমার তো বেশ মজা। নিখরচায় আলাস্কায় আসার সুযোগ তো বড় একটা পাওয়া যায় না। আর তার ওপরে এই গ্রীষ্মকালে যখন মধ্যরাতের সূর্য জ্বলজ্বল করবে আকাশে। আমার তখন বেশ শিহরিত।
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৩০: এই রাত তোমার আমার…

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৮: ছবি আঁকতে আঁকতে অবনীন্দ্রনাথ টান দিতেন গড়গড়ায়, চিবোতেন পান

কিন্তু অন্যদিকে আবার এই গোটা দিনটাই বেশ ক্লান্তিকর। সারাদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকার মধ্যে ইন্টারভিউ চলবে বিভিন্ন গবেষক ও অধ্যাপকদের সঙ্গে। একবার এর সঙ্গে, একবার ওর সঙ্গে। এমন ভাবেই সারাদিন ধরে আমার গবেষণার খুঁটিনাটির ওপরে প্রশ্নত্তোর পর্ব চলতে থাকবে। সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে, এই প্রশ্নত্তোর চলবে প্রায় ১০ ঘণ্টার মতো। প্রায় সন্ধে ৬টা অবধি। তারপরে নিয়োগ-সমিতি বা ইন্টারভিউ-কমিটির সদস্যদের সঙ্গে নৈশভোজ সেরে শেষ হবে ইন্টারভিউ পর্ব।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৯: হারিয়ে যাওয়ার ‘জীবন তৃষ্ণা’

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২৩: তরু দত্ত— এক আনন্দ বিষাদের তরুলতা

একে তো অতক্ষণ ধরে সবার সঙ্গে প্রতিনিয়ত কথা বলতে হবে, তার ওপরে আবার ইন্টারভিউয়ের স্বার্থে সব কথাই বেশ সমঝে বলতে হবে। সব মিলিয়ে বেশ ক্লান্তিকর একটা ব্যাপার। তার মধ্যে আবার আমার নিয়োগ-সমিতির মধ্যে রয়েছেন আলাস্কা-নাসার অধিকর্তা বা ডিরেক্টর। সে আবার না জানি কি না কি প্রশ্ন করে। সেই সব ভেবে একটু উৎকণ্ঠাও লাগছে। মানে আনন্দ, শিহরণ, উৎকণ্ঠা, সব মিলিয়ে বেশ একটা রোমাঞ্চকর অনুভূতি।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬৩: মহাভারতে উল্লিখিত মিথ্যাশ্রয়ের প্রাসঙ্গিকতা কী আজও আছে?

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪৬: শ্রীমায়ের দুই ভ্রাতৃবধূর কথা

তো যাই হোক, ১৮ অগাস্ট সকাল থেকে ছিল আমার ইন্টারভিউ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৭ আগস্ট বিকেলবেলা আমি এসে পৌঁছলাম ফেয়ারব্যাঙ্কসে। শিকাগো থেকে প্রায় আট-দশ ঘণ্টা উড়ানের পরে যখন এখানে এসে নামলাম তখন প্রায় বিকেল ৪টে। একদমই ছোট্ট একটা বিমানবন্দর। এদিক থেকে ওদিক হেঁটে গেলে মিনিট পাঁচেকও মিনিটও লাগবে না। তারই মধ্যে যাত্রীদের আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবরা এসেছে তাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য। দু’ এক জনের সঙ্গে ওই খানেই দাঁড়িয়েই কথা হল খানিকক্ষণ। কথা বললেই বেশ একটা আত্মীয়তার স্পর্শ পাওয়া যায়। আসলে খুব ছোট জায়গা তো। তার ওপর জনসংখ্যা এতো কম। কথা বলার লোকের অভাব। কাজেই লোকজন সকলেই বেশ দিলখোলা। —চলবে।
* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।

Skip to content