অলঙ্করণ : সৌমি দাসমণ্ডল।
সত্যব্রতর কাছ থেকে ফেরার সময় গাড়িতে শাক্য বা সুদীপ্ত কেস নিয়ে কোন কথা বলছিল না। শাক্যই বারণ করেছিল। এখন সে কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। যাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বিভাগ লড়াই শুরু করেছে, তারা যে যথেষ্ট শক্রিশালী কোন গ্যাং, তাতে কোন সন্দেহ নেই। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে, পিশাচপাহাড় রিসর্টের মার্ডার। কালাদেও কেন যে পিশাচপাহাড় রিসর্টে ঢুকে মার্ডার করতে যাবে, এটা শাক্য বা সুদীপ্ত কারওই মাথায় আসেনি।
সুদীপ্ত বলল, “চলুন স্যার, আজ আমার বাসাতেই চলুন। ওখানেই ডিনার করে একেবারেই ফিরবেন। চাইলে থাকতেও পারেন এই অধমের কোয়াটার্সে। একাই থাকি এখানে। আমার ওয়াইফ চাকরির সূত্রে দূরে থাকেন, আমাকেই যেতে হয় ছুটিছাটা মিললে !” তার গলায় আক্ষেপ।
শাক্য হাসল, “এটাই তো ফ্যামিলি লাইফের আনন্দ বলে শুনেছি। এই প্রতীক্ষা এবং পুনর্মিলন!”
“স্যার, ও-সব শুনতে-পড়তেই ভালো লাগে। শুনেছি, কালিদাসের ‘মেঘদূত’ বলে একটি কাব্য আছে, সেখানে কাব্যের নায়ক কী-সব অপরাধে কোন এক পাহাড়ে একবছরের জন্য নির্বাসিত হয়েছিল। তা সেখান থেকে সে তার বউয়ের উদ্দেশে মেঘকে দূত করে তার মনের অবস্থা, বিরহ-টিরহ জানিয়েছিল। ভাবতে পারেন? যে-কোন বিবাহিত লোককে জিজ্ঞাসা করুন, তারা বলবে, ও-রকম যদি তাদের সঙ্গে ঘটত, তাহলে তারা ওই সময়টা চিল করত। আমার মনে হয়, লোকটি সদ্য সদ্য বিয়ে করেছিল, সেই জন্য সেক্সুয়্যাল আর্জ থেকে ও-রকম চিঠি পাঠানো। তা-না-হলে ওই একবছরের রিলিফ পেয়ে আনন্দে একেবারে উন্মাদ হয়ে যেত!”
হেসে ফেলল শাক্য, বলল, “আপনারও কোন-রকম অবস্থা চলছে?”
সুদীপ্তও হাসল এবার, বলল, “ও-দুইয়ের মাঝামাঝি!”
“এই কেসটা সলভ্ করে ফেলুন, তাহলে ওপরে বলে আপনার এক মাসের ছুটি মঞ্জুর করে দেবো। তখন এক মাসের মধুচন্দ্রিমা কাটিয়ে আসবেন!”
“মধুচন্দ্রিমার দরকার নেই স্যার। এক মাসের ছুটিরও না। কিন্তু এই কেসটা সলভ্ করতে হবে নিজের জন্য। এইরকম কেস তো সহজে পাওয়া যায় না। কেউ কেউ সারাজীবনেও পায় না। আর আমি পেয়েও যদি তা সলভ করতে না-পারি, এই আক্ষেপ আমাকে বাকি সার্ভিস-লাইফ কুরে-কুরে খাবে!”
“ভালো লাগলো কথা শুনে। এই আর্জটাই দরকার। খিদে না-থাকলে সফলতার দিকে এগুনো যায় না!” শাক্য বলল।
“আপনি কিন্তু আমার সঙ্গে আজ আমার ফ্ল্যাটে যাচ্ছেন স্যার। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা! আমি ফোন করে আমার হেল্পিং হ্যাণ্ডকে বলে দিচ্ছি আপনার জন্য স্পেশাল ব্যবস্থা করতে!”
“ঠিক আছে। জানিয়ে দিন। তবে স্পেশাল ব্যবস্থার দরকার নেই। আপনার জন্য যা হবে, সেটাই শেয়ার করবো। নো একস্ট্রা অ্যারেঞ্জমেন্ট!”
“আরে বোঝেন না কেন, আপনার খাতিরে আমার কপালেও জুটবে! জানেন তো, আমি এখানে থাকি, আর উনি অন্য জায়গায়, কিন্তু আমার দিন-রাতের মেনু ঠিক হয় অন্য জায়গা থেকেই!” বলে নিজের দুঃখপ্রকাশ করল সুদীপ্ত। তারপর ফোন করে কাউকে বলল, শাক্যর খাওয়ার ব্যাপারে।
সুদীপ্ত বলল, “চলুন স্যার, আজ আমার বাসাতেই চলুন। ওখানেই ডিনার করে একেবারেই ফিরবেন। চাইলে থাকতেও পারেন এই অধমের কোয়াটার্সে। একাই থাকি এখানে। আমার ওয়াইফ চাকরির সূত্রে দূরে থাকেন, আমাকেই যেতে হয় ছুটিছাটা মিললে !” তার গলায় আক্ষেপ।
শাক্য হাসল, “এটাই তো ফ্যামিলি লাইফের আনন্দ বলে শুনেছি। এই প্রতীক্ষা এবং পুনর্মিলন!”
“স্যার, ও-সব শুনতে-পড়তেই ভালো লাগে। শুনেছি, কালিদাসের ‘মেঘদূত’ বলে একটি কাব্য আছে, সেখানে কাব্যের নায়ক কী-সব অপরাধে কোন এক পাহাড়ে একবছরের জন্য নির্বাসিত হয়েছিল। তা সেখান থেকে সে তার বউয়ের উদ্দেশে মেঘকে দূত করে তার মনের অবস্থা, বিরহ-টিরহ জানিয়েছিল। ভাবতে পারেন? যে-কোন বিবাহিত লোককে জিজ্ঞাসা করুন, তারা বলবে, ও-রকম যদি তাদের সঙ্গে ঘটত, তাহলে তারা ওই সময়টা চিল করত। আমার মনে হয়, লোকটি সদ্য সদ্য বিয়ে করেছিল, সেই জন্য সেক্সুয়্যাল আর্জ থেকে ও-রকম চিঠি পাঠানো। তা-না-হলে ওই একবছরের রিলিফ পেয়ে আনন্দে একেবারে উন্মাদ হয়ে যেত!”
হেসে ফেলল শাক্য, বলল, “আপনারও কোন-রকম অবস্থা চলছে?”
সুদীপ্তও হাসল এবার, বলল, “ও-দুইয়ের মাঝামাঝি!”
“এই কেসটা সলভ্ করে ফেলুন, তাহলে ওপরে বলে আপনার এক মাসের ছুটি মঞ্জুর করে দেবো। তখন এক মাসের মধুচন্দ্রিমা কাটিয়ে আসবেন!”
“মধুচন্দ্রিমার দরকার নেই স্যার। এক মাসের ছুটিরও না। কিন্তু এই কেসটা সলভ্ করতে হবে নিজের জন্য। এইরকম কেস তো সহজে পাওয়া যায় না। কেউ কেউ সারাজীবনেও পায় না। আর আমি পেয়েও যদি তা সলভ করতে না-পারি, এই আক্ষেপ আমাকে বাকি সার্ভিস-লাইফ কুরে-কুরে খাবে!”
“ভালো লাগলো কথা শুনে। এই আর্জটাই দরকার। খিদে না-থাকলে সফলতার দিকে এগুনো যায় না!” শাক্য বলল।
“আপনি কিন্তু আমার সঙ্গে আজ আমার ফ্ল্যাটে যাচ্ছেন স্যার। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা! আমি ফোন করে আমার হেল্পিং হ্যাণ্ডকে বলে দিচ্ছি আপনার জন্য স্পেশাল ব্যবস্থা করতে!”
“ঠিক আছে। জানিয়ে দিন। তবে স্পেশাল ব্যবস্থার দরকার নেই। আপনার জন্য যা হবে, সেটাই শেয়ার করবো। নো একস্ট্রা অ্যারেঞ্জমেন্ট!”
“আরে বোঝেন না কেন, আপনার খাতিরে আমার কপালেও জুটবে! জানেন তো, আমি এখানে থাকি, আর উনি অন্য জায়গায়, কিন্তু আমার দিন-রাতের মেনু ঠিক হয় অন্য জায়গা থেকেই!” বলে নিজের দুঃখপ্রকাশ করল সুদীপ্ত। তারপর ফোন করে কাউকে বলল, শাক্যর খাওয়ার ব্যাপারে।
গাড়ি ছুটছিল। পাহাড়ি এলাকায় সুর্যাস্ত দেখতে ভালোই লাগছিল। জঙ্গল মাঝেমধ্যে টিলাকে ঢেকে দিচ্ছে, আবার যেখানে জঙ্গল পাতলা হয়ে এসেছে, সেখানে টিলাগুলি দৃশ্যমান। তার উপর অস্তগামী সুর্যের শেষ রশ্মি পড়ে মনে হচ্ছে যেন ক্যানভাসে আঁকা কোন পেইন্টিংস্!
এখানে সে উঠেছে ইরিগেশনের একটি বাংলোয়। ডিএম সাহেব নিজেই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। লালবাজার থেকে একেজি স্যার জানিয়েছিলেন, সে জানে। আপাতত, সে ভাবছিল, কাল অনেকগুলি কাজ তাকে করতে হবে। তার জন্য তাকে একবার জেলাসদরে যেতে হবে। ডিএম এবং জেলার পুলিশসুপারের সাহায্য না পেলে এরপর সে আর এগুতেই পারবে না। অনেকগুলি কাজ পেণ্ডিং হয়ে আছে, যা একে অপরের সঙ্গে রিলেটেড। তার মধ্যে প্রথম হল, পিশাচপাহাড়ের গুহায় একটি সাধারণ সার্ভে চালানো। কাজটা এমনিতে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার। কিন্তু সে করতে চাইছে পুলিশি তদন্তের দৃষ্টিকোণ থেকে। পিশাচপাহাড়ের কালাদেওর সঙ্গে সত্যিই কতটা যুক্ত আছে এই অপরাধ এবং অপরাধীরা, তা জানতে হলে আগে পিশাচপাহাড়ের টোপোগ্র্যাফিকে বুঝতে হবে। কথা বলতে হবে, কালাদেওর পূজার বাৎসরিক পুরোহিতের সঙ্গেও। আর তেমন হলে রাতের অন্ধকারে একটা এক্সপিডিশন চালাতে হবে গুহায়। যদিও তার পারমিশন সে পাবে কি-না, তা নিয়ে গভীর সন্দেহ আছে তার।
এখানে সে উঠেছে ইরিগেশনের একটি বাংলোয়। ডিএম সাহেব নিজেই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। লালবাজার থেকে একেজি স্যার জানিয়েছিলেন, সে জানে। আপাতত, সে ভাবছিল, কাল অনেকগুলি কাজ তাকে করতে হবে। তার জন্য তাকে একবার জেলাসদরে যেতে হবে। ডিএম এবং জেলার পুলিশসুপারের সাহায্য না পেলে এরপর সে আর এগুতেই পারবে না। অনেকগুলি কাজ পেণ্ডিং হয়ে আছে, যা একে অপরের সঙ্গে রিলেটেড। তার মধ্যে প্রথম হল, পিশাচপাহাড়ের গুহায় একটি সাধারণ সার্ভে চালানো। কাজটা এমনিতে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার। কিন্তু সে করতে চাইছে পুলিশি তদন্তের দৃষ্টিকোণ থেকে। পিশাচপাহাড়ের কালাদেওর সঙ্গে সত্যিই কতটা যুক্ত আছে এই অপরাধ এবং অপরাধীরা, তা জানতে হলে আগে পিশাচপাহাড়ের টোপোগ্র্যাফিকে বুঝতে হবে। কথা বলতে হবে, কালাদেওর পূজার বাৎসরিক পুরোহিতের সঙ্গেও। আর তেমন হলে রাতের অন্ধকারে একটা এক্সপিডিশন চালাতে হবে গুহায়। যদিও তার পারমিশন সে পাবে কি-না, তা নিয়ে গভীর সন্দেহ আছে তার।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৯৪: নুনিয়া কোথায়?
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৭৯: সুন্দরবনের পাখি: টুনটুনি
দ্বিতীয় কাজটি পুলিশসুপারের নিজের নেতৃত্বেই করা হোক, সে চায়। তবে এ-ক্ষেত্রে মিলিটারি না পাওয়া গেলেও, প্যারামিলিটারির সাহয্য নেওয়া যেতে পারে। স্থানীয় থানার কাজ সেটি নয়। তবে হ্যাঁ, সুদীপ্ত সেখানে উপস্থিত থাকুক, শাক্য নিজে তা চায়। মালাকর কোন কর্মের নয়। একেবারেই রদ্দি। আসলে কোন কৌতূহল নেই, ফলে কোন চেষ্টা বা উদ্যমও নেই। যাই হোক, মোদ্দা কথা হচ্ছে, যেভাবেই হোক, ওই জঙ্গলদুটিকে তন্নতন্ন করে দেখতে হবে। মনে হচ্ছে, অপরাধীদের কোনও-না-কোনও ডেন আছে ওই দুটির মধ্যেই। ছানবিন করলে কিছু-না-কিছু ক্ল্যু পাওয়া যাবেই যাবে বলে তার বিশ্বাস, যাতে পিশাচপাহাড়ের কালাদেও বা সেই সম্পর্কিত কোনও ইনফরমেশন তারা পাবে।
তৃতীয় কাজটি আজকে ডাক্তারের ওইখানেই সে বলে দিয়েছে সুদীপ্তকে, যেভাবেই হোক যত তাড়াতাড়ি নুনিয়াকে পুলিশ কাস্টডিতে নিতে হবে। তার সিক্সথ্ সেন্স বলছে, শি ইজ ইন ডিপ ডেঞ্জার! শি মে ডাই অ্যাট এনি মোমেন্টস্! মেয়েটির সঙ্গে সে নিজেও কথা বলতে চায়। সেদিন যে অবস্থায় তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়েছিল, সেটা কথা বলার মতো অবস্থা ছিল না।
তৃতীয় কাজটি আজকে ডাক্তারের ওইখানেই সে বলে দিয়েছে সুদীপ্তকে, যেভাবেই হোক যত তাড়াতাড়ি নুনিয়াকে পুলিশ কাস্টডিতে নিতে হবে। তার সিক্সথ্ সেন্স বলছে, শি ইজ ইন ডিপ ডেঞ্জার! শি মে ডাই অ্যাট এনি মোমেন্টস্! মেয়েটির সঙ্গে সে নিজেও কথা বলতে চায়। সেদিন যে অবস্থায় তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়েছিল, সেটা কথা বলার মতো অবস্থা ছিল না।
আরও পড়ুন:
ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব ৪২: রবীন্দ্রনাথকে ‘ভারত ভাস্কর’ উপাধি দিয়েছিলেন রাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০৪: আশ্রমের আনন্দময় পিকনিক
চতুর্থ কাজটি সত্যব্রত অনেকখানি করে রেখেছেন। এখন ডিএমকে বলে পাশের রাজ্যের সহযোগিতা নিয়ে ওই বেদের দলকে খুঁজে বের করা আর তারপর গোটা দলটাকেই তুলে আনা। ছেলেটি তো বটেই, সেই সঙ্গে তারাও, যারা গোটা ব্যাপারটা মূল চক্রীদের সঙ্গে ডিল করেছিল। টাকার বিনিময়েই কাজটা হয়েছে নিশ্চয়ই, সেক্ষেত্রে কারা কারা সেই টাকার ভাগ নিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে, তাদের ইন্টারোগেট করলেই, মূল চক্রীদের টিকির নাগাল পাওয়া সম্ভব হতে পারে। তবে যতদূরসম্ভব গোপনে কাজটি করতে হবে, তা-না-হলে অপরাধীরা সতর্ক হয়ে যাবে এবং কিছুদিনের জন্য আত্মগোপনও করতে পারে। তখন তাদের পাকড়াও করা মুশকিল হয়ে পড়বে।
পঞ্চম কাজ হল, স্যারকে একবার ফোন করে সত্যব্রত যে-তথ্যগুলি জানিয়েছেন, তা জানানো। পাভেলের খবর নেওয়া। সেইসঙ্গেই পরবর্তী গেমপ্ল্যান ঠিক করা।
“আপনি কিছু ভাবছেন স্যার? এনি প্রবলেম?” সুদীপ্ত জিজ্ঞাসা করল শাক্যকে চুপ করে থাকতে দেখে।
“না না, আসলে ভাবছিলাম, দু-সপ্তাহের ওপর হয়ে গেল এখানে পড়ে আছি, কিন্তু এক পা-ও তো এগুতে পারলাম না। কেবল হাত গুটিয়ে বসেই আছি বলে মনে হচ্ছে। এক পা এগুনো তো দূর-অস্ত। হেল্পলেস লাগছে। ডক্টর নিজের চেষ্টায় যা অসাধ্যসাধন করেছেন, অবাক হয়ে গেছি আমি! জাস্ট স্পিচলেস্!”
পঞ্চম কাজ হল, স্যারকে একবার ফোন করে সত্যব্রত যে-তথ্যগুলি জানিয়েছেন, তা জানানো। পাভেলের খবর নেওয়া। সেইসঙ্গেই পরবর্তী গেমপ্ল্যান ঠিক করা।
“আপনি কিছু ভাবছেন স্যার? এনি প্রবলেম?” সুদীপ্ত জিজ্ঞাসা করল শাক্যকে চুপ করে থাকতে দেখে।
“না না, আসলে ভাবছিলাম, দু-সপ্তাহের ওপর হয়ে গেল এখানে পড়ে আছি, কিন্তু এক পা-ও তো এগুতে পারলাম না। কেবল হাত গুটিয়ে বসেই আছি বলে মনে হচ্ছে। এক পা এগুনো তো দূর-অস্ত। হেল্পলেস লাগছে। ডক্টর নিজের চেষ্টায় যা অসাধ্যসাধন করেছেন, অবাক হয়ে গেছি আমি! জাস্ট স্পিচলেস্!”
আরও পড়ুন:
গল্পবৃক্ষ, পর্ব-১১: কাঁটার মুকুট
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৯: হারিয়ে যাওয়ার ‘জীবন তৃষ্ণা’
সুদীপ্ত বলল, “আপনি আসার পর তদন্ত সঠিকভাবে শুরু হয়েছে বলা যায়। এর আগে পথ দেখানোর মতো কেউই ছিল না মাথার উপর। তবে আমি স্যার আমার মতো করে চেষ্টা করে গেছি। কারণ, আমিও আপনার মতই বিশ্বাস করি না যে, কালাদেও বলে কিছু আছে এবং সে-ই এই একুশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে এত কিছু কাজ করে চলেছে!”
“আমি জানি সুদীপ্ত। তখন আমি আলাদা করে আপনাকে কিছু বলিনি। বিশেষ করে নেতৃত্বের দিকেই আঙুল তুলেছি। মাথা ঠিক না হলে অধস্তনদের কী-ই বা করার থাকে। আমি নিজেও তো একদিন আপনার মতো কোন-না-কোন থানায় কারুর আণ্ডারে কাজ করেছি, সুতরাং আমি বুঝি সমস্যাগুলি!”
“স্যার!”
“কাল একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে হবে আপনাকে। দেখুন যদি পারেন। ভাড়া গাড়ি হলেও হবে !”
“ভাড়া গাড়ি ? থানায় আমাদের তিন-চারটে গাড়ি থাকতে আপনি ভাড়ার গাড়িতে কেন যাবেন ? মালাকরবাবু বলেছেন, আপনি বললে একটা গাড়ি আপনার ব্যবহারের জন্যই আলাদা করে পাঠিয়ে দেবে। এই যে রোজ আপনাকে গাড়ি পাঠানোর কথা বলতে হচ্ছে ফোন করে, তা আর করতে হবে না !”
“আমি সদরে যেতে চাই সুদীপ্ত। কিছু কাজ আছে, কেনাকাটা আছে। সব কিছু তো আপনাদের এখানে পাওয়া যায় না!”
গাড়ি যে চালাচ্ছিল, সে কমবয়সী একজন যুবক। বয়স তিরিশের আশেপাশে। সে যে কান পেতে তাদের কথা শুনছিল, তা বোঝা গেল যখন সে বলল, “কিছু চাই স্যার? আমাদের এখানেও দু’চারটি দোকান আছে, যেখানে সব পাবেন। কলকাতা থেকে সপ্তাহে দু’বার করে মাল আনায়। আপনি যদি অর্ডার দেন, তাহলে এক দিন সময় দিলে বাড়িতে বসেই পেয়ে যাবেন। ওরাই ভরসা স্যার। এখানে স্যার ডেলিভারি অ্যাপস্গুলি কাজ করে না। সদরে আছে। তা-ও সার্ভিস ভালো না। আমাদের স্যার ওই দোকানগুলিই ভরসা!”
শাক্য চোখের ইঙ্গিত করল সুদীপ্তকে। অর্থ এই যে, আমাদের সব কথাই কান পেতে শুনেছে ছেলেটি। শাক্য বলল, “তুমি কী পার্মানেন্ট স্টাফ না-কি ভাই?”
“আজ্ঞে না স্যার। মালিকের গাড়ি, ডিপার্টমেন্ট ভাড়ায় নিয়েছে!”
“বেশ ভালো গাড়ি চালাও তো তুমি ?”
“ধন্যবাদ স্যার। আসলে গাড়ি চালাতে ভালো লাগে তো স্যার, তাই…” আত্মপ্রসাদের হাসি হাসল যুবকটি।
“তোমার নাম কী ভাই?”
“রাকিবুল স্যার!”
“তা রাকিবুল, আমাদের মধ্যে যে-কথা হল আর হবে, তা আবার বাইরে গিয়ে গল্প করো না বা কাউকে বলো না!”
জিভ কাটলো রাকিবুল, “না না স্যার। আমার ও অভ্যাস নেই। আমি কী দীনেন আর তোতন? ওরা ও-সব করে স্যার। থানার কথা বাইরে গিয়ে বলে ভাও খায়!”
“ওরা কারা?”
“সিভিক-পুলিশ স্যার। কাজের চেয়ে অকাজই করে বেশি!” রাকিবুল বলল। বোঝাই যাচ্ছিল, সে দীনেন আর তোতনকে পছন্দ করে না।
“বেশ। আমি দেখব তোমাকে যদি থানার পার্মানেন্ট ড্রাইভার হিসেবে নেওয়া যায়। সুপারিশ করব আমি। তারপর দেখা যাক্!” শাক্য আলগা প্রবোধ দিল।
“খুব ভালো হয় স্যার। আমি আপনার কেনা গোলাম হয়ে থাকবো স্যার। আল্লাহ্ কী কসম!”
“না না, আল্লাহর কসম খেতে হবে না। আপাতত, ক’দিন আমার একটু ডিউটি করো তো। আমি বিশ্বাসী কারুর গাড়ি নিতে চাই এই ক-দিন!”
“আমি আছি স্যার। যা বলবেন, যেখানে বলবেন নিয়ে যাব!”
“আমি জানি সুদীপ্ত। তখন আমি আলাদা করে আপনাকে কিছু বলিনি। বিশেষ করে নেতৃত্বের দিকেই আঙুল তুলেছি। মাথা ঠিক না হলে অধস্তনদের কী-ই বা করার থাকে। আমি নিজেও তো একদিন আপনার মতো কোন-না-কোন থানায় কারুর আণ্ডারে কাজ করেছি, সুতরাং আমি বুঝি সমস্যাগুলি!”
“স্যার!”
“কাল একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে হবে আপনাকে। দেখুন যদি পারেন। ভাড়া গাড়ি হলেও হবে !”
“ভাড়া গাড়ি ? থানায় আমাদের তিন-চারটে গাড়ি থাকতে আপনি ভাড়ার গাড়িতে কেন যাবেন ? মালাকরবাবু বলেছেন, আপনি বললে একটা গাড়ি আপনার ব্যবহারের জন্যই আলাদা করে পাঠিয়ে দেবে। এই যে রোজ আপনাকে গাড়ি পাঠানোর কথা বলতে হচ্ছে ফোন করে, তা আর করতে হবে না !”
“আমি সদরে যেতে চাই সুদীপ্ত। কিছু কাজ আছে, কেনাকাটা আছে। সব কিছু তো আপনাদের এখানে পাওয়া যায় না!”
গাড়ি যে চালাচ্ছিল, সে কমবয়সী একজন যুবক। বয়স তিরিশের আশেপাশে। সে যে কান পেতে তাদের কথা শুনছিল, তা বোঝা গেল যখন সে বলল, “কিছু চাই স্যার? আমাদের এখানেও দু’চারটি দোকান আছে, যেখানে সব পাবেন। কলকাতা থেকে সপ্তাহে দু’বার করে মাল আনায়। আপনি যদি অর্ডার দেন, তাহলে এক দিন সময় দিলে বাড়িতে বসেই পেয়ে যাবেন। ওরাই ভরসা স্যার। এখানে স্যার ডেলিভারি অ্যাপস্গুলি কাজ করে না। সদরে আছে। তা-ও সার্ভিস ভালো না। আমাদের স্যার ওই দোকানগুলিই ভরসা!”
শাক্য চোখের ইঙ্গিত করল সুদীপ্তকে। অর্থ এই যে, আমাদের সব কথাই কান পেতে শুনেছে ছেলেটি। শাক্য বলল, “তুমি কী পার্মানেন্ট স্টাফ না-কি ভাই?”
“আজ্ঞে না স্যার। মালিকের গাড়ি, ডিপার্টমেন্ট ভাড়ায় নিয়েছে!”
“বেশ ভালো গাড়ি চালাও তো তুমি ?”
“ধন্যবাদ স্যার। আসলে গাড়ি চালাতে ভালো লাগে তো স্যার, তাই…” আত্মপ্রসাদের হাসি হাসল যুবকটি।
“তোমার নাম কী ভাই?”
“রাকিবুল স্যার!”
“তা রাকিবুল, আমাদের মধ্যে যে-কথা হল আর হবে, তা আবার বাইরে গিয়ে গল্প করো না বা কাউকে বলো না!”
জিভ কাটলো রাকিবুল, “না না স্যার। আমার ও অভ্যাস নেই। আমি কী দীনেন আর তোতন? ওরা ও-সব করে স্যার। থানার কথা বাইরে গিয়ে বলে ভাও খায়!”
“ওরা কারা?”
“সিভিক-পুলিশ স্যার। কাজের চেয়ে অকাজই করে বেশি!” রাকিবুল বলল। বোঝাই যাচ্ছিল, সে দীনেন আর তোতনকে পছন্দ করে না।
“বেশ। আমি দেখব তোমাকে যদি থানার পার্মানেন্ট ড্রাইভার হিসেবে নেওয়া যায়। সুপারিশ করব আমি। তারপর দেখা যাক্!” শাক্য আলগা প্রবোধ দিল।
“খুব ভালো হয় স্যার। আমি আপনার কেনা গোলাম হয়ে থাকবো স্যার। আল্লাহ্ কী কসম!”
“না না, আল্লাহর কসম খেতে হবে না। আপাতত, ক’দিন আমার একটু ডিউটি করো তো। আমি বিশ্বাসী কারুর গাড়ি নিতে চাই এই ক-দিন!”
“আমি আছি স্যার। যা বলবেন, যেখানে বলবেন নিয়ে যাব!”
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৯৪: দশরথপুত্র ভরত, এক ব্যতিক্রমী চরিত্র, বর্তমানের নিরিখে এক বিরলতম প্রজাতি
মুলো খেতে আপত্তি নেই, তা হলে তার পাতার কী দোষ করল? এই শাকের কত পুষ্টিগুণ জানেন?
শাক্য সুদীপ্তর দিকে তাকিয়ে বলল, “তাহলে ঠিক হয়ে গেল। মালাকরবাবুকে বলবেন, আমি এই রাকিবুলভাইয়ের গাড়িটাই এখানে ব্যবহার করতে চাই।”
সুদীপ্তর ব্যাপারটি বুঝতে অসুবিধে হল না। কী অদ্ভুত অথচ সাধারণ কায়দায় শাক্যস্যার রাকিবুলকে নিজের দলে টেনে নিলেন ! এখন থেকে এই রাকিবুল পার্মানেন্ট হওয়ার স্বপ্নে বিশ্বাসভাজন হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবে ! ব্রেভো শাক্যস্যার, ব্রেভো! —চলবে।
সুদীপ্তর ব্যাপারটি বুঝতে অসুবিধে হল না। কী অদ্ভুত অথচ সাধারণ কায়দায় শাক্যস্যার রাকিবুলকে নিজের দলে টেনে নিলেন ! এখন থেকে এই রাকিবুল পার্মানেন্ট হওয়ার স্বপ্নে বিশ্বাসভাজন হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবে ! ব্রেভো শাক্যস্যার, ব্রেভো! —চলবে।
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel): পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।/strong>