অলঙ্করণ : সৌমি দাসমণ্ডল।
পূষণ এবং রিমিতা এখন বসে ‘অরণ্যবার্তা’র প্রেস কাম অফিসে। একখানা কাগজের স্তুপে প্রায় ঢাকা পড়া কাঠের টেবিলের উল্টোদিকে বসেছিলেন যিনি, তিনিই ‘অরণ্যবার্তা’র সম্পাদক, এই প্রেসের মালিক সুধাবিন্দু সাঁতরা। ঘরটি সম্ভবত ভাড়া নেওয়ার পর থেকে আজ অবধি কোনদিন ঝাড়পোঁচ হয়নি, ফলে চারিদিকে মাকড়শার জাল, স্তরের পর স্তর জমে ওঠা ধুলো, সব অংশ আরশুলার অবাধ বিচরণ। রিমিতা এর সঙ্গের এমনিতেই আরশোলায় মারাত্মক ভয়। তার উপর ঘরের ভিতরের যা অবস্থা, তাতে ইঁদুর কিংবা বাঘও থাকতে পারে ভেবে হয়ত বার-বার নীচের দিকে দেখছিল, সুধাবিন্দু বুঝতে পেরে দাঁত বার করে হেসে বললেন, “ভয় পাবেন না ম্যাডাম, ইঁদুর বা ছুঁচো খুঁজলেও পাবেন না। ইঁদুর থাকলে আর প্রেস চালিয়ে খতে হতো না। কাগজ কেটেকুটে কেমন একশা করে জানেন তো!”
সুধাবিন্দু খুব পান খান। তাঁর দাঁতই সে-কথার সাক্ষ্য দিচ্ছিল। মানুষটির বয়স পঞ্চাশের আশেপাশে। মাথায় কাঁচা-পাকা চুল, তবে দূর থেকে বোঝা যায় না। এমনিতে স্মার্ট। পরনে একখানা রঙচটা জিনস এবং হাতাওয়ালা জামা। জামাটি অবশ্য রংচঙে। দেখলেই মনে হবে লাল-নীল-সবুজের মেলা বসেছে। হাতের আঙুলে গোটা আটেক আংটি। তার মানে দৈবে খুব বেশি আস্থাশীল মানুষ। যদিও, অফিসের দেওয়ালে ঝুলতে থাকা লক্ষ্মী-গণেশের ফোটোতে মান্ধাতার আমলের বাসি মালা ঝুলছে। পূষণ চারিদিকে তাকিয়ে কোথাও সরস্বতীকে খুঁজে পেল না। তার মানে সরস্বতীকে বাদ দিয়েই, লক্ষ্মী-গণেশের ভরসায় আজকাল স্থানীয় কাগজগুলি চলছে।
সুধাবিন্দু খুব পান খান। তাঁর দাঁতই সে-কথার সাক্ষ্য দিচ্ছিল। মানুষটির বয়স পঞ্চাশের আশেপাশে। মাথায় কাঁচা-পাকা চুল, তবে দূর থেকে বোঝা যায় না। এমনিতে স্মার্ট। পরনে একখানা রঙচটা জিনস এবং হাতাওয়ালা জামা। জামাটি অবশ্য রংচঙে। দেখলেই মনে হবে লাল-নীল-সবুজের মেলা বসেছে। হাতের আঙুলে গোটা আটেক আংটি। তার মানে দৈবে খুব বেশি আস্থাশীল মানুষ। যদিও, অফিসের দেওয়ালে ঝুলতে থাকা লক্ষ্মী-গণেশের ফোটোতে মান্ধাতার আমলের বাসি মালা ঝুলছে। পূষণ চারিদিকে তাকিয়ে কোথাও সরস্বতীকে খুঁজে পেল না। তার মানে সরস্বতীকে বাদ দিয়েই, লক্ষ্মী-গণেশের ভরসায় আজকাল স্থানীয় কাগজগুলি চলছে।
সুধাবিন্দুর কথায় অবশ্য রিমিতা যে বিশেষ আস্বস্ত হল, তা মনে হল না। তার একটা হাত পূষণকে ছুঁয়ে ছিল। সেই অবস্থাতেই সে কোনওরকমে বলল, “বুঝলাম। ঠিক আছে!” বলে পূষণকে আঙুলের খোঁচা দিল। অর্থটা বুঝতে অসুবিধা হল না পূষণের। রিমিতা চায়, যত দ্রুত সম্ভব কথা শেষ করে এখান থেকে বেরুতে। ফলে সেও আর দেরি করল না।
সুধাবিন্দু বললেন, “যাই হোক, বলুন, আপনাদের কী জানবার আছে? আমি তো ভাবতেই পারছি না, লোক্যাল কাগজপত্র নিয়ে আপনারা ব্লগ লিখবেন আর সেখানে আমার এই ‘অরণ্যবার্তা’র স্থান হবে!”
পূষণ বলল, “আপনার এই কাগজ কতদিন হল বেরুচ্ছে?”
সুধাবিন্দু বললেন, “তা মাঝে দু-একবার কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে পড়েছিল, তবে সে-সব ধরে এই বলতে পারেন, বছর পনেরো বেরুচ্ছে।”
“কিন্তু আমরা রিসর্টের লবিতে সাম্প্রতিক যে সংখ্যা দেখেছি, তাতে দেখলাম লেখা আছে, বাইশ বর্ষ চলছে?” রিমিতা প্রশ্ন করল।
“আজ্ঞে ম্যাডাম কোন রিসর্ট?”
“পিশাচপাহাড়! প্রশ্নের জবাবটা দিন।” পূষণ বলল।
“আজ্ঞে, ওটা একটু ব্যবসায়িক কৌশল আর-কি? পনেরো বছর বললে লোকে তেমন পাত্তা দেবে না। কিন্তু বাইশ বললে দেবে। কারণ বাইশের ইমপ্যাক্টটা পঁচিশের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায়। লোকে ভাবে, পঁচিশ বছর ধরে একটা লোক্যাল কাগজ চলছে, তুচ্ছ ঘটনা নয়। তাহলে কাগজটা একবার পড়েই দেখা যাক! বুঝলেন কি-না, ছোট কাগজগুলি যদি এইভাবে নিজেদের পাঠকসংখ্যা না বাড়ায়, তাহলে সে-কাগজ বন্ধ হতে আর কতক্ষণ!”
“তার মানে পাঠকসংখ্যা বাড়ানোর জন্য আপনি লোক ঠকান ?” পূষণ কিছুটা বাঁকা সুরে বলল।
“এ-বাবা, না না, কী যে বলেন স্যার !” দাঁত দিয়ে জিভ কেটে দুই হাত কানে ছোঁয়ালেন সুধাবিন্দু, “লোক-ঠকানো নয়। বললাম যে, ব্যবসায়িক কৌশল। না করে উপায় কী বলুন ? ছোট কাগজগুলি কি আর বিজ্ঞাপন পায় যে নিশ্চিন্ত হবে ? এ-সপ্তাহে কাগজ বেরুলো তো পরের সপ্তাহে বার করতে পারব কি-না সেই চিন্তায় রাতের ঘুম উড়ে যায়!”
সুধাবিন্দু বললেন, “যাই হোক, বলুন, আপনাদের কী জানবার আছে? আমি তো ভাবতেই পারছি না, লোক্যাল কাগজপত্র নিয়ে আপনারা ব্লগ লিখবেন আর সেখানে আমার এই ‘অরণ্যবার্তা’র স্থান হবে!”
পূষণ বলল, “আপনার এই কাগজ কতদিন হল বেরুচ্ছে?”
সুধাবিন্দু বললেন, “তা মাঝে দু-একবার কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে পড়েছিল, তবে সে-সব ধরে এই বলতে পারেন, বছর পনেরো বেরুচ্ছে।”
“কিন্তু আমরা রিসর্টের লবিতে সাম্প্রতিক যে সংখ্যা দেখেছি, তাতে দেখলাম লেখা আছে, বাইশ বর্ষ চলছে?” রিমিতা প্রশ্ন করল।
“আজ্ঞে ম্যাডাম কোন রিসর্ট?”
“পিশাচপাহাড়! প্রশ্নের জবাবটা দিন।” পূষণ বলল।
“আজ্ঞে, ওটা একটু ব্যবসায়িক কৌশল আর-কি? পনেরো বছর বললে লোকে তেমন পাত্তা দেবে না। কিন্তু বাইশ বললে দেবে। কারণ বাইশের ইমপ্যাক্টটা পঁচিশের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায়। লোকে ভাবে, পঁচিশ বছর ধরে একটা লোক্যাল কাগজ চলছে, তুচ্ছ ঘটনা নয়। তাহলে কাগজটা একবার পড়েই দেখা যাক! বুঝলেন কি-না, ছোট কাগজগুলি যদি এইভাবে নিজেদের পাঠকসংখ্যা না বাড়ায়, তাহলে সে-কাগজ বন্ধ হতে আর কতক্ষণ!”
“তার মানে পাঠকসংখ্যা বাড়ানোর জন্য আপনি লোক ঠকান ?” পূষণ কিছুটা বাঁকা সুরে বলল।
“এ-বাবা, না না, কী যে বলেন স্যার !” দাঁত দিয়ে জিভ কেটে দুই হাত কানে ছোঁয়ালেন সুধাবিন্দু, “লোক-ঠকানো নয়। বললাম যে, ব্যবসায়িক কৌশল। না করে উপায় কী বলুন ? ছোট কাগজগুলি কি আর বিজ্ঞাপন পায় যে নিশ্চিন্ত হবে ? এ-সপ্তাহে কাগজ বেরুলো তো পরের সপ্তাহে বার করতে পারব কি-না সেই চিন্তায় রাতের ঘুম উড়ে যায়!”
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮৯: মাথার কান
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৯: ভ্রমণে বেরিয়ে মহর্ষি পেয়েছিলেন পুত্রের মৃত্যু-সংবাদ
“তাহলে বন্ধ করে দিলেই তো পারেন ?” রিমিতা বলল, “মিছিমিছি এত কষ্ট করে লাভ কী?”
“কী যে বলেন ম্যাডাম ‘অরণ্যবার্তা’ আমার স্বপন নয় শুধু, আমার সন্তানও। ইচ্ছে ছিল, কোন বড় কাগজের সম্পাদক হবো। কিন্তু আমাকে আর কে পাত্তা দেবে ? কিছুকাল কলকাতার একটি বড় কাগজে ফ্রিল্যান্স করতাম, তারপর তারাও দেখলাম মুখ ফিরিয়ে নিল। অনেকরকম ভিতরের ব্যাপার থাকে তো! তখন এই কাগজটি বার করলাম। এই প্রেস ছিল আমার বাবার। তবে যে জায়গায় ছিল, সেখান থেকে উঠিয়ে এখানে নিয়ে আসি আমিই। নিজের প্রেস, নিজের কাগজ, নিজেই বেশিরভাগ জায়গায় ছুটে যাই খবর সংগ্রহের জন্য। দু’-একজন সাংবাদিক আছে, তারা খবর দিলে সামান্য টাকা পায়। রেজিস্টার্ড কাগজ বলে এখানে কাজ করার অভিজ্ঞতা পরে বড় কোনও কাগজের ক্ষেত্রে কাজে লাগলেও লাগতে পারে। এই ভাবেই কোনমতে চলছে। তবে হয়তো আগামীদিনে এটা পাক্ষিক হয়ে যাবে। মাসে দুটি করে সংখ্যা বার হবে। ছয় পেজের জায়গায় আট পেজ হবে এক-একটি সংখ্যা। কিন্তু যতদিন পারবো, চালিয়ে যেতে চাই। এর জন্য অনেক ধারদেনা করতে হয়, ‘অরণ্যবার্তা’ বার করে মুনাফা করা আমার উদ্দেশ্য নয়, প্রেসের অন্যান্য কাজ করে যা আয় হয় তাতেই বউ-বাচ্চা-মা আর আমার চলে যায়। কিন্তু কী জানেন, যে-কোন মূল্যেই নিজের ভালোবাসাটাকে বাঁচিয়ে রাখার নামই তো জীবন!” সুধাবিন্দু একটানা বলে থামলেন।
“কী যে বলেন ম্যাডাম ‘অরণ্যবার্তা’ আমার স্বপন নয় শুধু, আমার সন্তানও। ইচ্ছে ছিল, কোন বড় কাগজের সম্পাদক হবো। কিন্তু আমাকে আর কে পাত্তা দেবে ? কিছুকাল কলকাতার একটি বড় কাগজে ফ্রিল্যান্স করতাম, তারপর তারাও দেখলাম মুখ ফিরিয়ে নিল। অনেকরকম ভিতরের ব্যাপার থাকে তো! তখন এই কাগজটি বার করলাম। এই প্রেস ছিল আমার বাবার। তবে যে জায়গায় ছিল, সেখান থেকে উঠিয়ে এখানে নিয়ে আসি আমিই। নিজের প্রেস, নিজের কাগজ, নিজেই বেশিরভাগ জায়গায় ছুটে যাই খবর সংগ্রহের জন্য। দু’-একজন সাংবাদিক আছে, তারা খবর দিলে সামান্য টাকা পায়। রেজিস্টার্ড কাগজ বলে এখানে কাজ করার অভিজ্ঞতা পরে বড় কোনও কাগজের ক্ষেত্রে কাজে লাগলেও লাগতে পারে। এই ভাবেই কোনমতে চলছে। তবে হয়তো আগামীদিনে এটা পাক্ষিক হয়ে যাবে। মাসে দুটি করে সংখ্যা বার হবে। ছয় পেজের জায়গায় আট পেজ হবে এক-একটি সংখ্যা। কিন্তু যতদিন পারবো, চালিয়ে যেতে চাই। এর জন্য অনেক ধারদেনা করতে হয়, ‘অরণ্যবার্তা’ বার করে মুনাফা করা আমার উদ্দেশ্য নয়, প্রেসের অন্যান্য কাজ করে যা আয় হয় তাতেই বউ-বাচ্চা-মা আর আমার চলে যায়। কিন্তু কী জানেন, যে-কোন মূল্যেই নিজের ভালোবাসাটাকে বাঁচিয়ে রাখার নামই তো জীবন!” সুধাবিন্দু একটানা বলে থামলেন।
আরও পড়ুন:
অভিজ্ঞান-শকুন্তলের নাট্যকার কালিদাস/১
দশভুজা, দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৪: আনন্দী—এক লড়াইয়ের নাম
পূষণ ও রিমিতা দুজনেই অবাক হয়ে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়েছিল। ‘অরণ্যবার্তা’ যত ছোট কাগজই হোক না কেন, তাকে ঘিরে এই মানুষটির স্বপ্ন যে অনেক বড় আর খাঁটি, তাতে কোন সন্দেহ নেই। ভিতরে-ভিতরে তাদের মনটা ভিজে গেল।
পূষণ বলল, “ঠিক আছে, আমরা কলকাতায় ফিরে দেখব যাতে আপনার কাগজ সম্পর্কে ভালো কিছু লেখা যায়। তাতে যদি কিছু ফিন্যান্সিয়াল হেল্প আসে!”
“খুব ভালো হয় স্যার। তাহলে আর পাক্ষিক করতে হবে না, সপ্তাহে যেমন দু’বার করে বার করি, সেটাই করতে পারবো!” সুধাবিন্দু হাত কচলে বলেন।
“বাই দ্য ওয়ে, এখানে আসার সময়ে একজনের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল, তিনি আপনাদের কাগজে লেখেন বলেছিলেন। বলতে কী, তাঁর মুখেই আসবার সময় আপনার কাগজের কথা শুনি। রিসর্টে এসে সেই চেনা নাম দেখেই ‘অরণ্যবার্তা’ হাতে তুলে নিয়েছিলাম। দেখলাম, সেই সংখ্যায় অবশ্য তাঁর লেখা নেই!”
“কে বলুন তো? সমর?”
পূষণ বলল, “ঠিক আছে, আমরা কলকাতায় ফিরে দেখব যাতে আপনার কাগজ সম্পর্কে ভালো কিছু লেখা যায়। তাতে যদি কিছু ফিন্যান্সিয়াল হেল্প আসে!”
“খুব ভালো হয় স্যার। তাহলে আর পাক্ষিক করতে হবে না, সপ্তাহে যেমন দু’বার করে বার করি, সেটাই করতে পারবো!” সুধাবিন্দু হাত কচলে বলেন।
“বাই দ্য ওয়ে, এখানে আসার সময়ে একজনের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল, তিনি আপনাদের কাগজে লেখেন বলেছিলেন। বলতে কী, তাঁর মুখেই আসবার সময় আপনার কাগজের কথা শুনি। রিসর্টে এসে সেই চেনা নাম দেখেই ‘অরণ্যবার্তা’ হাতে তুলে নিয়েছিলাম। দেখলাম, সেই সংখ্যায় অবশ্য তাঁর লেখা নেই!”
“কে বলুন তো? সমর?”
আরও পড়ুন:
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১০: ভার্জিনিয়া ও লিওনার্ড উলফ—উন্মাদনা ও সৃষ্টি /২
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’
“আরে না না। স্কুলে ইতিহাস পড়ান বলেছিলেন। ভবানীবাবু। ভবানীপ্রসাদ রায়। আপনাদের কাগজে কালাদেও নিয়ে ধারাবাহিক ফিচার লিখেছেন বলছিলেন।” পূষণ বলল।
“ভবানীবাবু, মানে টিচার ভবানীবাবু এ-কথা আপনাদের বলেছেন?”
“হ্যাঁ।”
“মিথ্যে বলেছেন। ওনার স্বভাবটাই এইরকম। আরও অনেককেই বলেছেন বলে শুনেছি, কিন্তু আসল ব্যাপার অন্য!”
“আসল ব্যাপারটা কী ? আমরা কিন্তু পুরানো কাগজের ফাইলে দেখতে পেয়েছি ভবানীপ্রসাদ রায় ‘কালাদেওর কিস্সা’ নামের ফিচার লিখেছেন অন্তত দু’টি সংখ্যা ধরে। সেটা ভুল দেখেছি বলছেন?”
“মোটেই না। মোটেই না। এ-কথা ঠিক যে ভবানীপ্রসাদ রায় আমাদের বিগত দু’টি সংখ্যায় কালাদেও নিয়ে ফিচার লিখেছেন।”
“তাহলে এক্ষুনি যে বললেন, ভবানীবাবু লেখেননি?”
“আরে কথাটা শেষ করতে দিন স্যার। যিনি ফিচার লিখেছেন, তাঁর নাম ভবানীপ্রসাদ রায় সত্যিই, কিন্তু তিনি টিচার ভবানীপ্রসাদ রায় নয়, অন্য লোক!”
“মানে?” অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল রিমিতা।
“ভবানীবাবু, মানে টিচার ভবানীবাবু এ-কথা আপনাদের বলেছেন?”
“হ্যাঁ।”
“মিথ্যে বলেছেন। ওনার স্বভাবটাই এইরকম। আরও অনেককেই বলেছেন বলে শুনেছি, কিন্তু আসল ব্যাপার অন্য!”
“আসল ব্যাপারটা কী ? আমরা কিন্তু পুরানো কাগজের ফাইলে দেখতে পেয়েছি ভবানীপ্রসাদ রায় ‘কালাদেওর কিস্সা’ নামের ফিচার লিখেছেন অন্তত দু’টি সংখ্যা ধরে। সেটা ভুল দেখেছি বলছেন?”
“মোটেই না। মোটেই না। এ-কথা ঠিক যে ভবানীপ্রসাদ রায় আমাদের বিগত দু’টি সংখ্যায় কালাদেও নিয়ে ফিচার লিখেছেন।”
“তাহলে এক্ষুনি যে বললেন, ভবানীবাবু লেখেননি?”
“আরে কথাটা শেষ করতে দিন স্যার। যিনি ফিচার লিখেছেন, তাঁর নাম ভবানীপ্রসাদ রায় সত্যিই, কিন্তু তিনি টিচার ভবানীপ্রসাদ রায় নয়, অন্য লোক!”
“মানে?” অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল রিমিতা।
আরও পড়ুন:
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৬৪ : অকারণে কেউ অন্যের ভালো করতে যায় না
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭১: মা সারদার নলিনীর মানভঞ্জন
“মানে টিচার ভবানীবাবু আর যাঁর লেখা বেরিয়েছে, সেই ভবানীবাবুর নাম-সারনেম একই। কিন্তু দুজনে আলাদা ব্যক্তি। যাঁর লেখা বেরিয়েছে, তিনি ওই নামেই লেখা পাঠিয়েছিলেন পত্রিকাদপ্তরে। ভালো লাগায় আর এই অঞ্চলে সাম্প্রতিককালে কালাদেওর আক্রমণ শুরু হওয়ায় আমি দেরি না করে ছেপেও দিই। বড় লেখা বলে দুই সংখ্যায় ছাপি, তার জন্য কিছুটা কলম চালিয়ে দুটি সংখ্যার লেখায় কিছু লাইন আমাকে বসিয়ে নিতে হয়। কিন্তু লেখাটি বাই-পোস্ট এসেছিল। টাইপ করা লেখা। আজকাল সবাই যেমন লেখেন আর-কি ! সঙ্গে যদিও কোন ফোন-নাম্বার কিংবা যোগাযোগের কোন ঠিকানা দেওয়া ছিল না। একটা ছোট্ট দু-লাইনের নিবেদন ছিল লেখার শেষে, যে, “প্রাসঙ্গিক বলে মনে হলে ছাপতে পারেন। লেখার ভুলত্রুটি নিজগুণে সংশোধন করে নেবেন, এই বিনীত অনুরোধ জানাই” বলে। লেখাটির মান ভালো ছিল, অতএব ছাপতে দ্বিধা করিনি। তবে লেখাটি ছাপার অক্ষরে দেখে লেখকের কোন প্রতিক্রিয়া অবশ্য আসেনি।”
“এইরকম ডাকে আসা লেখা আপনারা ছাপান?”
“ভালো লেখা পেলে ছাপাই। অন্যান্য ক্ষেত্রে নাম-ঠিকানা থাকে। তেমন হলে আবার লেখার জন্য অনুরোধ জানাই। এক্ষেত্রে তো যোগাযোগের কোন উপায়ই ছিল না! অনেকে নামের কাঙাল হয় না। আবার অনেকে নাম কেনার জন্য যা-খুশি তাই করতে পারেন!”
“স্কুলটিচার ভবানীবাবু এই নামসাদৃশ্য দেখে এই লেখার ক্রেডিট নিতে চাইছেন, এ-কথা বলতে চাইছেন তো?”
“তবেই বুঝুন ! এক লাইন লেখার ক্ষমতা নেই, উনি লিখবেন ফিচার!”
“আচ্ছা, আপনি বলছেন, লেখক ভবানীপ্রসাদ ডাকযোগে লেখাটি পাঠিয়েছেন। লেখার শেষে ফোন নাম্বার-ঠিকানা না-থাকলেও, যে খামে পাঠিয়েছেন, সেখানে তো পোস্টঅফিসের শিলমোহর থাকার কথা, যা দেখা বোঝা যাবে, কোথা থেকে পাঠানো হয়েছে! আছে কি সেই খাম?”
“সে কী আর আমি রেখে দিয়েছি? সে তো ফেলে দিই। তবে আমার নিজের কৌতূহল হয়েছিল বলে আমি চেক করেছিলাম, দেখলাম, কলকাতার কোন একটা জায়গায় স্ট্যাম্প। নামটা পড়া যাচ্ছে না, আর কলকাতা কত তা মনে নেই!”
পূষণ আর রিমিতা দুজনেই অবাক হয়ে গেল। কলকাতার কেউ এই অখ্যাত পিশাচপাহাড়ের কালাদেও সম্পর্কে গবেষণা করছে আর বাই পোস্ট সেই লেখা পাঠাচ্ছে স্থানীয় ছোট কাগজ ‘অরণ্যবার্তা’য়! স্ট্রেঞ্জ! কী বলবে ভেবে না পেয়ে দুজনে হাঁ করে বসে রইল। —চলবে।
“এইরকম ডাকে আসা লেখা আপনারা ছাপান?”
“ভালো লেখা পেলে ছাপাই। অন্যান্য ক্ষেত্রে নাম-ঠিকানা থাকে। তেমন হলে আবার লেখার জন্য অনুরোধ জানাই। এক্ষেত্রে তো যোগাযোগের কোন উপায়ই ছিল না! অনেকে নামের কাঙাল হয় না। আবার অনেকে নাম কেনার জন্য যা-খুশি তাই করতে পারেন!”
“স্কুলটিচার ভবানীবাবু এই নামসাদৃশ্য দেখে এই লেখার ক্রেডিট নিতে চাইছেন, এ-কথা বলতে চাইছেন তো?”
“তবেই বুঝুন ! এক লাইন লেখার ক্ষমতা নেই, উনি লিখবেন ফিচার!”
“আচ্ছা, আপনি বলছেন, লেখক ভবানীপ্রসাদ ডাকযোগে লেখাটি পাঠিয়েছেন। লেখার শেষে ফোন নাম্বার-ঠিকানা না-থাকলেও, যে খামে পাঠিয়েছেন, সেখানে তো পোস্টঅফিসের শিলমোহর থাকার কথা, যা দেখা বোঝা যাবে, কোথা থেকে পাঠানো হয়েছে! আছে কি সেই খাম?”
“সে কী আর আমি রেখে দিয়েছি? সে তো ফেলে দিই। তবে আমার নিজের কৌতূহল হয়েছিল বলে আমি চেক করেছিলাম, দেখলাম, কলকাতার কোন একটা জায়গায় স্ট্যাম্প। নামটা পড়া যাচ্ছে না, আর কলকাতা কত তা মনে নেই!”
পূষণ আর রিমিতা দুজনেই অবাক হয়ে গেল। কলকাতার কেউ এই অখ্যাত পিশাচপাহাড়ের কালাদেও সম্পর্কে গবেষণা করছে আর বাই পোস্ট সেই লেখা পাঠাচ্ছে স্থানীয় ছোট কাগজ ‘অরণ্যবার্তা’য়! স্ট্রেঞ্জ! কী বলবে ভেবে না পেয়ে দুজনে হাঁ করে বসে রইল। —চলবে।
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel): পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।।