ছবি: প্রতীকী।
মফিজুলের চারটে মিস কল। শেষে একটা ভয়েস মেসেজ। আসলে বুবুর পেয়ারা শেষ হয়ে গিয়েছিল। শক্ত ছোটছোট দানাওয়ালা দিশিপেয়ারা ছাড়া এখনকার দানাবিহীন শাঁসওয়ালা আপেল সাইজের নেটের জামাপরানো ফ্যাটেফ্যাটে ফরসা পেয়ারা বুবুর একেবারে পছন্দ নয়। পুজোর মুখে বাবুদের পাড়াটাকে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে যে সমস্ত বিক্রেতারা দিশি সবজিফলের পশরা নিয়ে রাস্তার দু’ধারে নিয়মিত বসতেন তারা এখন আর বসতে পারছেন না। তারপর এই কৌশিকীর কেস নিয়ে খানিকটা ঘেঁটে আছে ধৃতিমান। নিজের খাওয়াদাওয়ার ঠিকঠাক জোগান না থাকলেও বুবুর আপেল, পেয়ারা মুসাম্বি, বেদানা আগুন দাম হলেও অল্প একটু কড়াইশুঁটি আর অ্যামাজন থেকে নিয়মিত প্যাকেটে আনানো সাদা-হলুদ বাদামি গুঁড়িগুঁড়ি পাখির দানা আর কালোরঙের সূর্যমুখী বীজ বাবুর বাড়িতে এসবের ভাঁড়ার সবসময় পূর্ণ থাকে। কিন্তু সকালের খাবারের শেষ পেয়ারাটা কেটে দেওয়ার পর বাবু বাজারে ছুটলো পেয়ারা আনতে। কেজিখাদুয়েক পেয়ারা নিয়ে দাম দিতে গিয়ে বুঝলো মহাভুল হয়ে গিয়েছে। তাড়াহুড়োয় মোবাইল বাড়িতে ফেলে এসেছে।
ভারতের যে আর্থিক উন্নতি হয়েছে, সেটা দোকানবাজারে গেলে বোঝা যায় ছোট্ট পেয়ারাওয়ালা থেকে সুবিশাল মলের ঝাঁ চকাচক আধুনিক ব্রান্ডের পোশাক বিক্রেতা সকলকেই কিউআর কোডে পেমেন্ট করা যায়। পুরো বাজারটাই এখন ডিজিটাল পেমেন্টে চলছে। নোটের আসল নকল নতুন পুরনো তাপ্পিমারা, থুতু ঢেলে টাকাগোনার ঝঞ্ঝাট নেই। দোকানে ক্যাশবাক্সের হিসেব সামলানো নেই। ব্যাঙ্ক থেকে টাকা জমা দেওয়ার ঝামেলা নেই, মানিব্যাগ কাশবাক্স চুরি বাটপাড়ির সুযোগ নেই। দোকানে দোকানে সাইকেলে চা বিলি করা হাবুকেও রাস্তায় বসা ব্যবসায়ীরা আজকাল অনলাইনে চায়ের পয়সা চুকিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-৫৬: কৌশিকী তার তিন কুড়ি বয়সের ডাক্তারের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াল কেন?
অভিজ্ঞান-শকুন্তলের নাট্যকার কালিদাস/১
বাড়ি ফিরে মোবাইল খুলতেই কেলেঙ্কারি! পোস্টমর্টেম রিপোর্ট মফিজুল, আনঅফিসিয়ালি আগে ভাগে পেয়ে গিয়েছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী অবিবাহিতা অভিনেত্রী কৌশিকী দত্তগুপ্ত প্রেগন্যান্ট ছিলেন। এখন পুলিশ ডিপার্টমেন্টে খবরের কাগজ, নিউজ চ্যানেল আর সেই সঙ্গে ইউটিউবার তিনে মিলে ত্র্যহস্পর্শযোগ! একটা না একটা সূত্রে গুরুত্বপূর্ণ খবর লিক হয়ে যায়। পরীক্ষার খাতা চুরি হয়, ব্যাংকের ক্যাশ টাকা চুরি হয়, সোনার দোকানে সোনা চুরি হয়, আর খবরের খনি থেকে খবর চুরি হবে না সেটা কি হয়? আর খবরই যখন একটা রোজগারের রাস্তা। বেশি লোক যে চ্যানেল দেখবে সেই চ্যানেলে বিজ্ঞাপনের ভিড় বাড়বে। যে ইউটিউবার এর ভিডিও যত বেশি লোক দেখবে তার তত রোজগার বাড়বে। দুর্গাপূজোর মতো। যে পুজোয় যত ভিড় সেখানে বিজ্ঞাপনের তত দর বেশি এবং বিজ্ঞাপনের ভিড় আরও বেশি। মা দুর্গাও তো এখন রোজগারের রাস্তা। বাজার সংস্কৃতিতে মুখের কথা থেকে চোখের জল সবকিছুর বিক্রিবাটা আছে।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৯: ভ্রমণে বেরিয়ে মহর্ষি পেয়েছিলেন পুত্রের মৃত্যু-সংবাদ
দশভুজা, দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৪: আনন্দী—এক লড়াইয়ের নাম
মফিজুল আরও ভয়ংকর সব তথ্য জানিয়েছে। এক কৌশিকীর শরীরে কড়াডোজের ঘুমের ওষুধ পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু ওয়াইনের মধ্যে কোন ঘুমের ওষুধ পাওয়া যায়নি। কৌশিকীর সঙ্গে ব্যাগে স্যুটকেসে কোথাও কোনও ঘুমের ওষুধ পাওয়া যায়নি।
—এটা হতে পারে ঘুমের ওষুধ নিয়ে সে ফয়েলটা ফ্ল্যাশের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল!
—হতে পারে!
—সারাদিন শুটিংয়ের পর ক্লান্তি কাটাতে তরতাজা হতেই হয়ত ঘুমের ওষুধ নিয়েছিল।
—হ্যাঁ, এটাও হতে পারে।
—কিন্তু খটকাটা হল সন্ধেবেলায় কৌশিকীর সঙ্গে ডিজাইনারের মিটিং ছিল। পরের দিনের শুটিংয়ের পোশাক সিলেক্ট করার জন্য! ক্যারিয়ারের উঠতি সময়ে একজন পেশাদারী অভিনেত্রী বিশ্রাম নিতে রাতে ঘুমের আগে ওষুধ খাবেন। সন্ধেবেলা কেন?
—ব্র্যাভো! মফিজুল তুমি কি কোনওভাবে গোয়েন্দাগিরিটা শুরু করছ?
—ঠাট্টা করো না বস তোমার সঙ্গে থেকে একটু লজিক্যালি ভাবার চেষ্টা করছি!
—না, সে চেষ্টা তুমি করতেই পারো। ফিল্মের পিছনের সারির ডিরেক্টর হল না পাওয়া দল না পাওয়া নাট্যকার পরিচালক কলকে না পাওয়া ডকুমেন্টারিমেকার সত্যানুসন্ধানীর থেকে এই ফরেনসিক এক্সপার্ট ডিটেকটিভ খোদ পুলিশ ডিপার্টমেন্টই অনেক বেশি গুরুত্ব পাবেন।
—কেন আজ তো এসিপি রণজয় রায় তোমায় যথেষ্ট খাতির করছিলেন!
—সেটাও তোমার নজর এড়ায়নি? তোমার গোয়েন্দা হওয়া আর কেউ আটকাতে পারল না!
—ঠাট্টা নয়। সিরিয়াসলি বলো! ঘুমের ওষুধটা পেলাম কেন?
—ইনজেকশন!
—এটা হতে পারে ঘুমের ওষুধ নিয়ে সে ফয়েলটা ফ্ল্যাশের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল!
—হতে পারে!
—সারাদিন শুটিংয়ের পর ক্লান্তি কাটাতে তরতাজা হতেই হয়ত ঘুমের ওষুধ নিয়েছিল।
—হ্যাঁ, এটাও হতে পারে।
—কিন্তু খটকাটা হল সন্ধেবেলায় কৌশিকীর সঙ্গে ডিজাইনারের মিটিং ছিল। পরের দিনের শুটিংয়ের পোশাক সিলেক্ট করার জন্য! ক্যারিয়ারের উঠতি সময়ে একজন পেশাদারী অভিনেত্রী বিশ্রাম নিতে রাতে ঘুমের আগে ওষুধ খাবেন। সন্ধেবেলা কেন?
—ব্র্যাভো! মফিজুল তুমি কি কোনওভাবে গোয়েন্দাগিরিটা শুরু করছ?
—ঠাট্টা করো না বস তোমার সঙ্গে থেকে একটু লজিক্যালি ভাবার চেষ্টা করছি!
—না, সে চেষ্টা তুমি করতেই পারো। ফিল্মের পিছনের সারির ডিরেক্টর হল না পাওয়া দল না পাওয়া নাট্যকার পরিচালক কলকে না পাওয়া ডকুমেন্টারিমেকার সত্যানুসন্ধানীর থেকে এই ফরেনসিক এক্সপার্ট ডিটেকটিভ খোদ পুলিশ ডিপার্টমেন্টই অনেক বেশি গুরুত্ব পাবেন।
—কেন আজ তো এসিপি রণজয় রায় তোমায় যথেষ্ট খাতির করছিলেন!
—সেটাও তোমার নজর এড়ায়নি? তোমার গোয়েন্দা হওয়া আর কেউ আটকাতে পারল না!
—ঠাট্টা নয়। সিরিয়াসলি বলো! ঘুমের ওষুধটা পেলাম কেন?
—ইনজেকশন!
আরও পড়ুন:
ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব ৩৮: পুত্র বীরেন্দ্রর বিয়েতে রবীন্দ্রনাথকে আমন্ত্রণ জানান মহারাজ রাধাকিশোর
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’
—হোয়াট! কে দেবে ইনজেকশন? না নিজে নিয়েছে?
—নিজে নিয়েছে কিনা সেটা জানতে তো মর্গে গিয়ে ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলতে হবে জোক্স অ্যাপার্ট মনে হয় ড্রাগ অ্যাডিক্ট ছিলেন না। মানে ডান বা বাম হাত দিয়ে ক্রমাগত নিজে নিজে ইনজেকশন নেওয়ার ফলে এলবোর ভিতরে যে বাদামি স্পট মতো হয়ে যায় সেটা দেখিনি ! তার মানে নিশ্চয়ই ইনজেকশনটা কেউ দিয়েছে।
—সুপার্ব এই হল বিরাট কোহলির সিক্সার! দেখে দেখে এমন একটা হিট নিলে বস বল একেবারে ক্লাব হাউসে বসা অনুস্কার কোলে!
—একটা খুব ছোট্ট সূত্র পেয়েছিলাম। কিন্তু তখন কানেক্ট করতে পারেনি। একটা ছোট্ট তুলোর টুকরো ভিক্টিমের বিছানার কোণে তুমি যখন ওয়াশরুমে স্যাম্পল নিচ্ছিলে, রুমের মধ্যে আমি তখন সেটা দেখি, খুব মৃদু একটা স্পিরিটের গন্ধ ছিল এখন অভিনেত্রী মানুষ মেকআপ রিমুভার বা নেলপলিশ রিমুভার হতেই পারে তখন তাই আর গুরুত্ব দিইনি।
—তার মানে খুনি কি ডাক্তার?
—হঠাৎ ডাক্তার হতে যাবেন কেন কম্পাউন্ডারও তো হতে পারেন!
—না, আসলে সোশ্যাল মিডিয়া তো তুমি খুব একটা দেখো না। একটা ভাইরাল ভিডিয়ো তোমার কাছে পাঠাচ্ছি হঠাৎ করে ডাক্তার কেন বললাম সেটা বুঝতে পারবে।
—নিজে নিয়েছে কিনা সেটা জানতে তো মর্গে গিয়ে ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলতে হবে জোক্স অ্যাপার্ট মনে হয় ড্রাগ অ্যাডিক্ট ছিলেন না। মানে ডান বা বাম হাত দিয়ে ক্রমাগত নিজে নিজে ইনজেকশন নেওয়ার ফলে এলবোর ভিতরে যে বাদামি স্পট মতো হয়ে যায় সেটা দেখিনি ! তার মানে নিশ্চয়ই ইনজেকশনটা কেউ দিয়েছে।
—সুপার্ব এই হল বিরাট কোহলির সিক্সার! দেখে দেখে এমন একটা হিট নিলে বস বল একেবারে ক্লাব হাউসে বসা অনুস্কার কোলে!
—একটা খুব ছোট্ট সূত্র পেয়েছিলাম। কিন্তু তখন কানেক্ট করতে পারেনি। একটা ছোট্ট তুলোর টুকরো ভিক্টিমের বিছানার কোণে তুমি যখন ওয়াশরুমে স্যাম্পল নিচ্ছিলে, রুমের মধ্যে আমি তখন সেটা দেখি, খুব মৃদু একটা স্পিরিটের গন্ধ ছিল এখন অভিনেত্রী মানুষ মেকআপ রিমুভার বা নেলপলিশ রিমুভার হতেই পারে তখন তাই আর গুরুত্ব দিইনি।
—তার মানে খুনি কি ডাক্তার?
—হঠাৎ ডাক্তার হতে যাবেন কেন কম্পাউন্ডারও তো হতে পারেন!
—না, আসলে সোশ্যাল মিডিয়া তো তুমি খুব একটা দেখো না। একটা ভাইরাল ভিডিয়ো তোমার কাছে পাঠাচ্ছি হঠাৎ করে ডাক্তার কেন বললাম সেটা বুঝতে পারবে।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮৯: মাথার কান
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭১: মা সারদার নলিনীর মানভঞ্জন
মফিজুল ফোনটা কেটে দেওয়ার পর ধৃতিমান ভাবতে বসল এর মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল ভিডিও বেরিয়ে পড়ল! কিন্তু কি আছে সেই ভিডিয়োতে! সেদিন যে ভিডিয়োটা দেখেছিল শ্রেয়া সেই একই ভিডিয়ো পোষ্ট পাঠিয়েছিল যাতে নামছাড়া এক নায়িকার সঙ্গে এক ডাক্তারের একটা সম্পর্কের ইঙ্গিত ছিল! তাঁর সঙ্গে যোগসাজশ আছে কি? —চলবে।
কৌশিকি দত্তগুপ্ত হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।