শুক্রবার ৮ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি : প্রতীকী।

কৌশিকী দত্তগুপ্ত সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বাবা সুরঞ্জন দত্তগুপ্ত দূর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের কর্মী। কৌশিকীর স্কুলের পড়াশোনা দুর্গাপুরে ক্লাস টেনে পরীক্ষার পর বন্ধুদের সঙ্গে নিছক মজা করতে করতেই কলকাতার এক নামী সংস্থার মহিলাদের জনপ্রিয় পত্রিকার ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতায় ছবিসহ অ্যাপ্লিকেশন পাঠিয়ে দেয়! আর দুম করে কৌশিকী সিলেক্টেড হয়ে পুজোর বিজ্ঞাপনের মডেল হয়ে গেল! সেই পত্রিকায় তার ছবি ছাপা হল। এ বাবদ পাওয়া টাকা নিয়ে কৌশিকী বন্ধুদের সঙ্গে পুজোর চারটে দিন দেদার খাওয়াদাওয়া মজা করে এই ঘটনা প্রায় ভুলেই গিয়েছিল। ইলেভেন টুয়েলভে ভর্তি হয়ে ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে এমন সময় এক প্রযোজনা সংস্থার কাছ থেকে ফোন এল। বাবা তো সিরিয়াল শুনে প্রথমেই না করে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবরা শুনে বললেন সুরঞ্জন ভুল করেছেন। এটা নটী বিনোদিনী আমলের বিনোদন জগৎ নয়। পরীক্ষা দিয়ে পাস করে যা চাকরিবাকরি পাবে, তার জায়গায় একটা টেলিভিশন সিরিয়ালে জনপ্রিয়তা পেয়ে গেলে জীবনটাই বদলে যাবে। শুধু একা কৌশিকীর নয় সঙ্গে গোটা পরিবারের।
ট্যাক্সিতে ফিরতে ফিরতে ধৃতিমান এইসব কথা ভাবছিল। কৌশিকী আত্মহত্যা করেনি তাকে খুন করা হয়েছে এই সত্যটা এখন প্রমাণিত। কিন্তু সে, রণজয় রায় শ্রেয়া এবং ভৈরব চক্রবর্তীকে বিদেশে হোয়াটসঅ্যাপ করে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছে যাতে কোনওভাবেই এই লিড মিডিয়ার কাছে না পৌঁছে যায়। প্রেস স্টেটমেন্টে যেন এটুকুই বলা হয়, তদন্ত চলছে এখনও আমরা কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি তবে তদন্তের গোপনীয়তার স্বার্থে সব প্রমাণের কথা আমরা জনসমক্ষে আলোচনা করতে পারছি না কিন্তু আশা করছি প্রমান থেকে খুব তাড়াতাড়ি এই মৃত্যুরহস্য উদঘাটিত হবে।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮৬: ‘অরণ্যবার্তা’র অফিসে

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৯: হারিয়ে যাওয়ার ‘জীবন তৃষ্ণা’

ভিডিও ক্লিপিংস দেখেই মনে সন্দেহ হয়েছিল। নিউটাউনের এই হোটেলের কর্মীদের পোশাকের সঙ্গে মানানসই একটা টুপি রয়েছে। ক্রিকেট বা বেসবল ক্যাপের ধাঁচে মানানসই টুপি। যে বিশেষ কর্মী অর্ডার নিয়ে কৌশিকীর রুমে ঢুকেছিল এবং ঘর থেকে বেরিয়েছিল তার মুখটা ক্যামেরায় স্পষ্ট নয়। মাথার টুপির ঢাকাটা মুখের সামনে একটু বেশিই টানা ছিল। এই কর্মী চলে যাওয়ার ঠিক পরেই ৭ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের জন্য এই করিডরের দুটো ক্যামেরায় কিছু ছবি তুলতে পারে না। লেন্সের সামনে যেন একটা কোনও আড়াল এটা দেখেই রণজয় রায়ের অনুমতি নিয়ে এই অংশটার ভিডিও ক্লিপিংস মোবাইলে রেকর্ড করেছিল ধৃতিমান। আসল কারণটা অবশ্য তখন বলেনি।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮৫: সাফল্য কি বংশগত উত্তরাধিকার? না কি ব্যক্তিগত কৃতিত্বের প্রমাণ?

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৬৮: লক্ষ্মীস্বরূপিনী মা সারদা

রণজয়কে বলেছিল পুলিশ আসার আগে এই হোটেল কর্মী ভিকটিমের ঘরে ঢুকেছে এবং ঘর থেকে বেরিয়েছে। তাই এই অংশের ভিডিয়োটা সে বারবার দেখতে চায়। পুলিশ ওইদিনের সমস্ত ক্যামেরার সমস্ত ভিডিয়ো ক্লিপিং বাজেয়াপ্ত করেছে।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৭০: সুন্দরবনের পাখি: লাল কাঁক

হোটেল ড্রাইভওয়ে থেকে ছুটে রিসেপশনে পৌঁছে ধৃতিমান জানতে চেয়েছিল, খাবারের রুমসার্ভিস করেন কোন হোটেলকর্মীরা? রেস্তরাঁর কর্মীরা এই কাজ করেন জেনে ধৃতিমান ছুটে যায় রেস্টুরেন্টে।সমস্ত কর্মীদের ডেকে পাঠিয়ে জানতে চায় তাদের কোনও কর্মী সেইমুহূর্তে অনুপস্থিত কিনা। দেখা যায় রফিক নামে একজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সমস্ত কর্মীদের নিয়ে সারা হোটেল খুঁজে অবশেষে রেস্তরাঁর রান্নাঘরের পিছনের স্টোররুমে রফিককে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গেল তার পরণে হোটেল ইউনিফর্মের পোশাক বা টুপি কিছুই ছিল না। তার পরণের সে টুপি বা পোশাকআশাক তন্নতন্ন করে খুঁজেও হোটেলের কোত্থাও পাওয়া গেল না । তার মানে খুনি খুব সাবধানী ছেড়ে যাওয়া পোশাকের রেশটুকুও রাখতে চায় না।
আরও পড়ুন:

ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব ৩৩: বীরচন্দ্রের রাজকার্যে বাংলা

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

রণজয় রায়ের সঙ্গে কথা বলে রফিককে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ওই ঘরেই একটা ভাঙ্গা স্ক্রাবারের লম্বা হ্যান্ডেল অংশ পাওয়া যায়। স্ক্রাবারের অংশটা মুছড়ে ভাঙ্গা এবং সেই অংশটা ধারালো। সেটা দেখার পর আবার ধৃতিমান ছুটল রিসেপশন ডেস্কে।
— বার্থডে বা ম্যারেজ পার্টি এই হোটেলে কীভাবে সাজানো হয়?
প্রশ্ন শুনে ডেস্কে ডিউটিরতা সুন্দরী রিসেপশনিস্ট হতভম্ব।
— মানে? স্যর আসলে ক্লায়েন্টের যেমন পছন্দ সেভাবেই!
— নানা আমি বলতে চাইছি ক্লায়েণ্ট তো আর নিজে সাজান না,আপনারদেরই হোটেলের কোন কন্ট্রাক্টরসেটা করেন? রাইট?
— রাইট স্যর!
— আপনারা ক্লাইন্টকে ডেকোরেশনের কয়েকটা অপশন দেখান! ঠিক বলছি?
— রাইট স্যর!
— আমাকে দেখান তো
মনিটরে অপশন দেখতে দেখতে তিনটে ছবি দেখে চমকে উঠল ধৃতিমান।
— লাস্ট কবে এভাবে সিলিং-এ গ্যাস বেলুন দিয়ে এই ধরনে ডেকোরেশন হয়েছে?
রেকর্ড হাতড়ে মেয়েটি জানালেন, একদিন আগেই এই ডেকরেশন হয়েছিল।
— আর ডেকরেশনের এইসব মেটিরিয়ালস কোথায় রাখা থাকে?
— স্টোররুমের পেছনে একটা ঘরে এসব রাখা থাকে।
স্টোররুমের পিছনের অন্য একটা বন্ধ ঘুপচি ঘরে ধৃতিমান যা খুঁজছিল পেয়ে গেল। এ বার সিসিটিভি কন্ট্রোল রুমে একবার যাওয়া দরকার।
 

কৌশিকি দত্তগুপ্ত হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ৩১ অক্টোবর২০২৪

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content