শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

 

অডিয়ো ক্লিপ (পর্ব-১২)

শ্রেয়ার একটা ডুয়াল চ্যানেল ওয়্যারলেস মাইক্রোফোন আছে। প্রায় ৯০-৯৫ ফুট দূর থেকে মোবাইলে কোনওরকম নয়েজ ছাড়া অডিয়ো রেকর্ড করতে পারে। ডুয়াল চ্যানেল বলে একজোড়া মাইক্রোফোন। অ্যামাজন নয়, বিদেশ থেকে আনানো ভালো কোম্পানির। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়ের এক সহপাঠিনীর উপহার। সে এখন বিদেশে। আজকাল আইটিতে চাকরি করার সুবাদে অনেক ছেলেমেয়েরই বিদেশে চাকরি করার সুযোগ আসে। আইটি কোম্পানিতে বিদেশের ক্লায়েন্ট প্রচুর। নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেয়ে গেলে অনেকের ভবিষ্যৎ বদলে যায়। বান্ধবী ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের অফিসার। তাই তার জন্মদিনে বিদেশে কর্মরতা সেই সহপাঠিনী এই উপহার পাঠিয়েছিল। এটা শ্রেয়ার সঙ্গেই থাকে। তবে ব্যবহারের এরকম সুবর্ণ সুযোগ তো সহজে মেলে না।
দুবেজি যেখানে এসে বসতে পারেন সেই সোফার দু’দিকেই একটা একটা করে মাইক্রোফোন গোঁজা আছে। আমি যখন শ্রেয়ার অতীতের কথা ভাবছিলাম, তখন সে এই কাজটা সেরে রেখেছে। নীলাঞ্জনকে বিভিন্ন চেয়ারে বসিয়ে কথা বলিয়ে রেকর্ডিং দেখেও রেখেছে।

ব্যালকনি লাগানো বেডরুমে, আমি আর শ্রেয়া। দরজাটা পুরোপুরি বন্ধ না করে একটু খুলে রাখা। দুবেজি এসে ঠিক কী করবেন সেটা তো আমরা জানি না।

—আসুন দুবেজি।
ঘর তখন ফাঁকা। পুজোর জিনিসপত্র ফুল ইত্যাদি সরিয়ে নিয়ে লোকজন চলে গিয়েছেন।

—পুজো ঠিকঠাক মিটে গেল?
শব্দ উচ্চারণে অল্প অবাঙালি টান ছাড়া বাংলাটা ঠিকঠাকই বলেন দুবেজি। বহুবছর কলকাতায় আছেন।
—হ্যাঁ।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-৪৫: শ্রেয়ারও একটা রক্তাক্ত যন্ত্রণার ইতিহাস রয়েছে

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৬২: শ্রীমার দক্ষিণ ভারত থেকে প্রত্যাবর্তন

আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি নীলাঞ্জনের আজকে কারও সঙ্গে কথাবলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই। সে আর যেটা করছে সেটা প্রথমত বাধ্য হয়ে এবং দ্বিতীয়ত তাঁর ভদ্রতা। আসলে সে মনে-প্রাণে চাইছে কলকাতা ছেড়ে চলে যেতে। অঙ্ক ভুল হলে যেমন স্লেট মুছে আবার নতুন করে শুরু করার ইচ্ছে করে ঠিক তেমনি। স্লেট মুছে ফেলা যায়। একান্ত আপনজনের সময়ের পরতে পরতে জমানো স্মৃতিদের মোছা যায় কি? এই শহর ছেড়ে গেলেও সুচেতা আজীবন নীলাঞ্জনের সঙ্গে সঙ্গে থেকে যাবে।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬৪: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—গিরা শাক ও যদু পালং

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৬:কোনও একটি দাবিতে বিরোধীরা জোট বাঁধুক কখনও চায় না শাসক

যেভাবে রানাঘাটের হরচন্দ্রপুরের চৌধুরী বাড়ি ছেড়ে আসার এতদিন পরেও মা-বাবা ধৃতিমানের সঙ্গে থেকে গিয়েছেন। কাজের ব্যস্ততা সেরে নিজেকে নিয়ে একা একা বসলেই সেই সব পুরনো স্মৃতিরা মনের মধ্যে ছুঁচ ফোটায়।
—ভেরি স্যাড আফেয়ার! ভেরি ভেরি স্যাড! ইন ফ্যাক্ট এখনও বিসওয়াস হচ্ছে না।
বহু অবাঙালির ক্ষেত্রে এটা বাবু লক্ষ্য করেছে। স্পষ্ট বাংলায় কথা বলেন কিন্তু কয়েকটা শব্দে তাদের মাতৃভাষার উচ্চারণ ঠোঁটের আগায় চলে আসে। নীলাঞ্জন কথা বলছিল না। তাই নিজের বক্তব্যটা শুরু করার আগে একটা ভূমিকা করার চেষ্টা করছেন দুবেজি।
—কিছু ফুল মিষ্টি এনেছিলাম কিন্তু পুজো তো হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-৮: যেথা আমি যাই নাকো / তুমি প্রকাশিত থাকো

—দেখুন চিরাচরিত পদ্ধতি মেনে সুচেতার ছবি রেখে ফুলমালা দিয়ে তার শ্রাদ্ধ করিনি। সুচেতার প্রিয় বইগুলো রেখেছিলাম তার ওপর ছিল কিছু লাল গোলাপ। আর ছিল সুচেতার প্রিয় পারফিউম। ফুলগুলো আমার বেডরুমে সরিয়ে নিয়েছি পারফিউমটা আলমারিতে বইগুলো বইয়ের তাকে। ব্রাহ্মণ এবং সুচেতার দিদি ছাড়া আর কাউকে ডাকেনি আমি, আমার চেনা পরিচিত কাউকে নয়। সুতরাং ওই ফুল আপনি নিয়ে যান। আমার বাড়ি থেকে নেমেই একটু ঘুরে গেলে লেক কালীবাড়ি। সুচেতা মাঝেমধ্যে লেক কালীবাড়ি যেত পুজো দিতে নয় ওই কালী প্রতিমা দেখলে ওর খুব ভালো লাগতো। তাই দেখতে যেত।

চেনা আত্মীয়ের মত ওই ঘোমটা পরা মাকালীর মূর্তি দেখলে ওর খুবভালো লাগতো। মনে শান্তি হতো বোধ হয়। সুচেতা পুজো না দিলেও বাক্স ভরে মিষ্টি নিয়ে যেত। ওখানে অনেক বাচ্চা ছেলে মেয়ে নিয়ে নিরন্ন মানুষ বসে থাকেন ওদের মধ্যে সেই মিষ্টি বিলিয়ে দিত। ফুল মিষ্টি যা এনেছেন ওখানে দিয়ে দেবেন। সুচেতার আত্মা শান্তি পাবে।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩৮: নন্দিতা কৃপালনি— বিশ শতকের বিদুষী

নীলাঞ্জন মানুষটা পাল্টে যাচ্ছে। এক ভাবে কথাগুলো বলে গেল কোথাও একটু আটকালো না হোঁচট খেলো না কোথাও কোনও কিছু ভাবতে হল না তাকে। গড়গড় করে বলে গেল দুবেজি না বলার কোনো সুযোগ পেলেন না। দেখতে পাচ্ছি না কিন্তু এটা বুঝতে পারছি তার সঙ্গে বড় বাক্সে মিষ্টি প্যাকেট করা ফুল এসব রয়েছে। কিন্তু আমার এতদিনকার অভিজ্ঞতা বলছে দুবেজি আজ শুধু ফুলমিষ্টি নিয়ে কর্তব্য সারতে আসেননি। তার আসার কোনও উদ্দেশ্য আছে। আমার অনুমান সত্যি হল।—চলবে।
 

সুচেতা মুখোপাধ্যায় হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content