
তরল অন্ধকারে ঘরটা ভেসে যাচ্ছিল যেন। অন্তত চোখ খুলে সত্যব্রতর তেমনটাই মনে হল। মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছিল তাঁর। জ্ঞান ফিরে আসার মুহূর্তে যেমন বিভ্রান্ত লাগে নিজেকে, আমি কে, আমি কোথায়, আমি এখানে কেন—এইসব প্রশ্ন জাগতে থাকে একের পর এক, সেই ভাবেই জাগছিল অনেক কিছু। আস্তে-আস্তে সংজ্ঞা ফিরে আসছিল তাঁর। মনে পড়ছিল কাল রাতের কথা। নুনিয়ার আসা, তার পিছনে শ্বাপদের হানা, তার আগেই তাকে নিরাপদ আশ্রয়ে লুকিয়ে ফেলা, নুনিয়াকে না পেয়ে তাঁর উপর আক্রমণ এবং তাঁকে জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া, রাস্তার মাঝে তাঁর মাথায় আঘাত…! আঘাতের কথা ভাবতেই মাথার শিরাটা দপ্দপ্ করে উঠল তাঁর। যন্ত্রণাটা টের পেলেন। সংজ্ঞাহীন হয়ে লুটিয়ে পড়ার আগে মনে হচ্ছিল, মাথা ফেটে গিয়েছে প্রবল আঘাতে।
এক মুহূর্তে মনে হয়েছিল, খুলি ফেটে চুরমার করে দিয়েছে ওরা। আর কোনওদিন তিনি জাগবেন না। কিন্তু এখন দেখছেন যে, বেঁচে আছেন। মাথায় হাত দিয়ে অনুভব করলেন, সেখানে ব্যাণ্ডেজ জড়ানো। তার মানে ওরা এখানে নিয়ে আসার পর ওঁর প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাটা অন্তত করেছে। যতখানি নির্দয় ভাবছিলেন, ততখানি নয় তাহলে? তারপরেই মনে হল, নুনিয়াকে সহজে খুঁজে পাওয়া মুশকিল বলেই হয়তো তাঁকে আপাতত বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন। সেই কারণেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে তারা। ওরা যে ফাঁদ পেতেছিল, সেটা যদি আগে বুঝতে পারতেন, তাহলে এমন অসতর্ক হতেন না। গোবিন্দ সঙ্গে আসবে বলেছিল, সে এলে ওদের প্ল্যানটা কিছুটা হলেও ধাক্কা খেতো। কিন্তু তখন কী করে জানবেন, ওই যুবকটি আসলে হিংস্র শ্বাপদ-দলেরই একজন? কিন্তু এখন সে-কথা বুঝেও লাভ নেই। সিংহের গুহায় আটক আছেন তিনি। আদৌ এখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারবেন কি-না সেটাই বড় প্রশ্ন। তবে না-লড়ে মরতে তিনি রাজি নন কোনভাবেই। হয়তো বাঁচবেন না, কিন্তু তা বলে চেষ্টা ছাড়বেন কেন?
এক মুহূর্তে মনে হয়েছিল, খুলি ফেটে চুরমার করে দিয়েছে ওরা। আর কোনওদিন তিনি জাগবেন না। কিন্তু এখন দেখছেন যে, বেঁচে আছেন। মাথায় হাত দিয়ে অনুভব করলেন, সেখানে ব্যাণ্ডেজ জড়ানো। তার মানে ওরা এখানে নিয়ে আসার পর ওঁর প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাটা অন্তত করেছে। যতখানি নির্দয় ভাবছিলেন, ততখানি নয় তাহলে? তারপরেই মনে হল, নুনিয়াকে সহজে খুঁজে পাওয়া মুশকিল বলেই হয়তো তাঁকে আপাতত বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন। সেই কারণেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে তারা। ওরা যে ফাঁদ পেতেছিল, সেটা যদি আগে বুঝতে পারতেন, তাহলে এমন অসতর্ক হতেন না। গোবিন্দ সঙ্গে আসবে বলেছিল, সে এলে ওদের প্ল্যানটা কিছুটা হলেও ধাক্কা খেতো। কিন্তু তখন কী করে জানবেন, ওই যুবকটি আসলে হিংস্র শ্বাপদ-দলেরই একজন? কিন্তু এখন সে-কথা বুঝেও লাভ নেই। সিংহের গুহায় আটক আছেন তিনি। আদৌ এখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারবেন কি-না সেটাই বড় প্রশ্ন। তবে না-লড়ে মরতে তিনি রাজি নন কোনভাবেই। হয়তো বাঁচবেন না, কিন্তু তা বলে চেষ্টা ছাড়বেন কেন?
আস্তে-আস্তে উঠে বসলেন তিনি। শত্রুকে দমন করার প্ল্যান ভাবার আগে শত্রুর যে-দুর্গে আপাতত বন্দি আছেন তিনি, সেখানকার হাল-হকিকত্ বুঝে নেওয়া প্রয়োজন। তিনি নিজে শুয়ে ছিলেন একটা বেডের উপর, হাসপাতালে যেমন বেড হয়, তেমন। তাহলে কি এটা কোন হাসপাতাল? না-কি তাঁর আঘাত লেগেছিল বলে এখানে এনে সাময়িকভাবে রাখা হয়েছে? ওরা তাঁর হাত-পা বাঁধেনি দেখে বুঝলেন, যেখানেই রাখুক, এখান থেকে পালানো কঠিন বলেই ওরা হাত-পা বাঁধার প্রয়োজন মনে করেনি।
ঘরটা বেশি বড় নয়। দুটো জানালা আছে, কাঠের পাল্লা দেওয়া। যদিও সে-দুটি এখন বন্ধ। বন্ধ মানে সিল করা। তার অর্থ দাঁড়ায়, হঠাৎ করে এখানে এনে ফেলেনি তাঁকে, হয়তো তাঁর মতো আরও অনেককেই আনা হয় দরকার পড়লে, রাখা হয় এখানে। তা-না-হলে সহসা কিছুর ব্যবস্থা করতে হলে জানালা দুটি সিল করা থাকত না। আর তাঁর জন্য কাল রাতেই সিল করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। যে কাঠের টুকরো দুটি আড়াআড়িভাবে রেখে জানালা সিল করা হয়েছে, তাদের চেহারা এবং জমে থাকা ধুলো, মরচে পড়া পেরেকই বলে দিচ্ছে, এই ডেরাটি আগে থেকেই ছিল। আপাতত তিনি এর বোর্ডার। ঘরের এক কোন ঘেঁষে, জানালার বিপরীত দিকের দেওয়াল ঘেঁষে তার ওই বেড। বেডের মাথার কাছে একটা নড়বড়ে টেবিলে কিছু ওষুধপত্রের সঙ্গে একটা বিচ্ছিরি ময়লা জগে জল ভরে রাখা আছে। পাশে উপড় করে রাখা একটি স্টিলের গ্লাস। আর কিছু ওষুধপত্র, হাতে নিয়ে দেখলেন ব্যথা কমানোর পেইন কিলার জাতীয় ওষুধ রাখা। ঘা শুকানোর ওয়েন্টমেন্টও সেই সঙ্গে রাখা। আর তাঁকে অবাক করে দিয়ে দুটি বিস্কিটের প্যাকেটও রাখা। সম্ভবত তাঁর হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে খিদে পেলে, যাতে কিছু মুখে দিতে পারেন, তারই ব্যবস্থা। নাহ্, এরা লোক মন্দ নয়। মানুষকে মেরে-ধরে অপহরণও করে, আবার জল-বিস্কিটও খেতে দেয়।
ঘরটা বেশি বড় নয়। দুটো জানালা আছে, কাঠের পাল্লা দেওয়া। যদিও সে-দুটি এখন বন্ধ। বন্ধ মানে সিল করা। তার অর্থ দাঁড়ায়, হঠাৎ করে এখানে এনে ফেলেনি তাঁকে, হয়তো তাঁর মতো আরও অনেককেই আনা হয় দরকার পড়লে, রাখা হয় এখানে। তা-না-হলে সহসা কিছুর ব্যবস্থা করতে হলে জানালা দুটি সিল করা থাকত না। আর তাঁর জন্য কাল রাতেই সিল করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। যে কাঠের টুকরো দুটি আড়াআড়িভাবে রেখে জানালা সিল করা হয়েছে, তাদের চেহারা এবং জমে থাকা ধুলো, মরচে পড়া পেরেকই বলে দিচ্ছে, এই ডেরাটি আগে থেকেই ছিল। আপাতত তিনি এর বোর্ডার। ঘরের এক কোন ঘেঁষে, জানালার বিপরীত দিকের দেওয়াল ঘেঁষে তার ওই বেড। বেডের মাথার কাছে একটা নড়বড়ে টেবিলে কিছু ওষুধপত্রের সঙ্গে একটা বিচ্ছিরি ময়লা জগে জল ভরে রাখা আছে। পাশে উপড় করে রাখা একটি স্টিলের গ্লাস। আর কিছু ওষুধপত্র, হাতে নিয়ে দেখলেন ব্যথা কমানোর পেইন কিলার জাতীয় ওষুধ রাখা। ঘা শুকানোর ওয়েন্টমেন্টও সেই সঙ্গে রাখা। আর তাঁকে অবাক করে দিয়ে দুটি বিস্কিটের প্যাকেটও রাখা। সম্ভবত তাঁর হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে খিদে পেলে, যাতে কিছু মুখে দিতে পারেন, তারই ব্যবস্থা। নাহ্, এরা লোক মন্দ নয়। মানুষকে মেরে-ধরে অপহরণও করে, আবার জল-বিস্কিটও খেতে দেয়।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১১৩: ভাবনা উইদাউট ভদ্কা

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১৭: একাকিত্বের অন্ধকূপ/২: অন্ধকারের উৎস হতে
ঘরের আর একদিকে একখানা কাঠের আলমারি, যদিও তার একদিকের পাল্লা নেই। সেখানেই দেখতে পেলেন তাঁড় ডাক্তারিব্যাগটা রাখা। আলমারির গা-ঘেঁষে একখানা হাতলবিহীন চেয়ার রাখা আছে। ঘর থেকে বেরুনোর দরজাও তার পাশেই। বলা বাহুল্য, দরজাটি ও-দিক থেকে বন্ধ। একটা ব্যাপার দেখে অবাক হলেন, ঘরটিতে কোন লাগোয়া ওয়াশরুম নেই। সেক্ষেত্রে বন্দির যদি প্রাকৃতিক কারণে ওয়াশরুমে যাওয়ার দরকার হয়, তাহলে ওদের কাউকে ডাকা ছাড়া গতি নেই। তাছাড়া চোখেমুখে জল দিতে হলেও তো ওয়াশরুমে যাওয়া দরকার। জগের জলে চোখমুখ ধোওয়া যায়, কিন্তু জলটা ফেলবেন কোথায়? ঘরের মধ্যে একটা বেসিনও যদি থাকত!
আশেপাশে কোন আওয়াজ নেই। মোবাইলটাও নেই। নিশ্চয়ই ওরা সেটা সরিয়ে ফেলেছে। যদিও ফেসলক করা আছে। খোলা সম্ভব নয়। ডাক্তারিব্যাগটা খুলে দেখলেন তিনি। নাহ্, আশাও করেননি যে, ওরা এখানে মোবাইলটা রাখবে, রাখেও নি। খুব দুর্বল লাগছিল। কাল কতটা রক্তপাত হয়েছে, তা জানেন না সত্যব্রত। তবে যতটাই হোক, তার পরে পেটেও কিছু পড়েনি বলে দুর্বল লাগাটা স্বাভাবিক। কটা বেজেছে যদি জানা যেত, তাহলে বুঝতে পারতেন, কতক্ষণ অজ্ঞান ছিলেন। ওরা কি তাঁকে কোন অ্যানাস্থেশিয়া দিয়েছিল? তা না হলে সাধারণ মাথায় আঘাত থেকে বেশিক্ষণ অজ্ঞান হয়ে থাকা তো সম্ভব নয়! হয়তো দিয়েছিল। ড্রেসিং করার সময় তারা নিশ্চয়ই চায়নি যে, পেশেন্ট জ্ঞান ফিরে উঠে চিৎকার-চেঁচামেচি জুড়ে দিক? গলাটা যে-ভাবে শুকিয়ে গিয়েছে, তাতে আরও বেশি করে মনে হচ্ছে, এ-সব অ্যানাস্থেশিয়া দেওয়ার ফল। গা-গুলিয়ে উঠলেও নোংরা জগ থেকেই গ্লাসে গড়িয়ে জল খেলেন খানিকটা। মুখটা বিস্বাদ লাগছে। বন্ধ জানালার ফাঁক-ফোকর দিয়ে ক্ষীণ আলো আসছে। কিন্তু আলোর তেজ বেশি নয়। বিকেল কিংবা সন্ধ্যে হতে পারে। কিছু দেখা যায় কি-না এই ভেবে জানালার ফাঁকফোকরে চোখ রাখলেন। হালকা চোখে পড়ল, গাছ আর গাছের পাতা। আচ্ছা, এটা চার্চের হাসপাতালের পিছন দিকটা নয় তো, যেখানে সেই রান্না করা লোকটি দেখা করেছিল? নুনিয়া ধরা না-পড়লে চার্চের কোন গোপন কথা বাইরে বেরিয়ে আসবে এবং বিপদ হবে, এই কি তাঁদের ভয়? কিন্তু কী সেই গোপন কথা? এখানে বন্দি হয়ে আছেন বলে আফসোস হল তাঁর। এভাবে ধরা না পড়লে ভেবেছিলেন আজ একবার থানায় যাবেন। নুনিয়ার কথা গোপন রেখেই লালবাজার থেকে আসা সেই অফিসার শাক্য সিংহের সঙ্গে কথা বলবেন। মানুষটিকে দেখে তাঁর বড় স্বচ্ছ এবং উপযুক্ত বলে মনে হয়েছে। আবার দেখা হলে ভালোই লাগতো। কিন্তু আর কোনদিন কি সেই সুযোগ হবে ? জানেন না তিনি।
আশেপাশে কোন আওয়াজ নেই। মোবাইলটাও নেই। নিশ্চয়ই ওরা সেটা সরিয়ে ফেলেছে। যদিও ফেসলক করা আছে। খোলা সম্ভব নয়। ডাক্তারিব্যাগটা খুলে দেখলেন তিনি। নাহ্, আশাও করেননি যে, ওরা এখানে মোবাইলটা রাখবে, রাখেও নি। খুব দুর্বল লাগছিল। কাল কতটা রক্তপাত হয়েছে, তা জানেন না সত্যব্রত। তবে যতটাই হোক, তার পরে পেটেও কিছু পড়েনি বলে দুর্বল লাগাটা স্বাভাবিক। কটা বেজেছে যদি জানা যেত, তাহলে বুঝতে পারতেন, কতক্ষণ অজ্ঞান ছিলেন। ওরা কি তাঁকে কোন অ্যানাস্থেশিয়া দিয়েছিল? তা না হলে সাধারণ মাথায় আঘাত থেকে বেশিক্ষণ অজ্ঞান হয়ে থাকা তো সম্ভব নয়! হয়তো দিয়েছিল। ড্রেসিং করার সময় তারা নিশ্চয়ই চায়নি যে, পেশেন্ট জ্ঞান ফিরে উঠে চিৎকার-চেঁচামেচি জুড়ে দিক? গলাটা যে-ভাবে শুকিয়ে গিয়েছে, তাতে আরও বেশি করে মনে হচ্ছে, এ-সব অ্যানাস্থেশিয়া দেওয়ার ফল। গা-গুলিয়ে উঠলেও নোংরা জগ থেকেই গ্লাসে গড়িয়ে জল খেলেন খানিকটা। মুখটা বিস্বাদ লাগছে। বন্ধ জানালার ফাঁক-ফোকর দিয়ে ক্ষীণ আলো আসছে। কিন্তু আলোর তেজ বেশি নয়। বিকেল কিংবা সন্ধ্যে হতে পারে। কিছু দেখা যায় কি-না এই ভেবে জানালার ফাঁকফোকরে চোখ রাখলেন। হালকা চোখে পড়ল, গাছ আর গাছের পাতা। আচ্ছা, এটা চার্চের হাসপাতালের পিছন দিকটা নয় তো, যেখানে সেই রান্না করা লোকটি দেখা করেছিল? নুনিয়া ধরা না-পড়লে চার্চের কোন গোপন কথা বাইরে বেরিয়ে আসবে এবং বিপদ হবে, এই কি তাঁদের ভয়? কিন্তু কী সেই গোপন কথা? এখানে বন্দি হয়ে আছেন বলে আফসোস হল তাঁর। এভাবে ধরা না পড়লে ভেবেছিলেন আজ একবার থানায় যাবেন। নুনিয়ার কথা গোপন রেখেই লালবাজার থেকে আসা সেই অফিসার শাক্য সিংহের সঙ্গে কথা বলবেন। মানুষটিকে দেখে তাঁর বড় স্বচ্ছ এবং উপযুক্ত বলে মনে হয়েছে। আবার দেখা হলে ভালোই লাগতো। কিন্তু আর কোনদিন কি সেই সুযোগ হবে ? জানেন না তিনি।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭৮: রক্তে ভেজা মাটিতে গড়ে ওঠে সত্যিকার প্রাপ্তি

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১১৩: একটি হিংসা অনেক প্রতিহিংসা, জিঘাংসা, হত্যা এবং মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠে সর্বত্র
নিজের বিছানার উপর এসে বসলেন তিনি। ওদিকে তিনি না ফেরায় হেলথসেন্টারে কী হচ্ছে কে জানে? শেফালিকাদি কিংবা রেশমা নিশ্চয়ই সকালের দিকে তাঁকে দেখতে না পেয়ে খোঁজখবর করে জেনেছিলেন যে, তিনি কলে গিয়েছেন। গোবিন্দও সেটাই জানে। কিন্তু যদি সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়ে থাকে এখন, তাহলে ওঁরা তাঁর খঁজ করবেনই। গোবিন্দও করবে। তার অনেক সোর্স। নিশ্চয়ই ভালো-মন্দ কিছু একটা খবর পেলেও পেতে পারে সে। তবে একজন সন্দেহ করবেই। নুনিয়াকে যার কাছে লুকিয়ে রেখে এসেছেন, তিনি দু’য়ে দু’য়ে চার করতে দেরি করবেন না। বুদ্ধি করে যদি লোকাল থানায় যোগাযোগ করেন, তাহলে উচিৎ কাজ হতো। কিন্তু অন্যদিক দিয়ে দেখলে কাজটা উচিৎ হতো না। কারণ, এরা টের পেয়ে যেত, নুনিয়া কোথায় আছে। তাহলে মেয়েটিকে বাঁচানো সম্ভব হতো না। তাঁর কিছু হয় তো হোক, কিন্তু নুনিয়ার যেন কিছু না হয়। কিন্তু এরা কেন কেউ আসছে না? এরা কি ভুলে গেল তাঁর কথা? তাই বা কেমন করে হয়? এত কষ্ট করে যাকে তারা ধরে নিয়ে এসেছে, তাকে তো এ-ভাবে ভুলে যাওয়া অসম্ভব! অস্থিরভাবে সত্যব্রত তাকালেন দরজার দিকে। কেউ আসুক, মনে-প্রাণে চাইছিলেন তিনি।
এ-জীবনে আমাদের দীর্ঘকালের কোন-কোন চাওয়া-পাওয়া মেটে না, আবার কখন-কখন ছোট-খাটো কোন চাওয়া মিটে যায় তক্ষুনি। এবারেও সেই মিরাকেলই ঘটলো। দরজা খোলার আওয়াজ পাওয়া গেলো। সত্যব্রত ভিত্রে-ভিতরে সামান্য কৌতূহলী হয়ে উঠলেন, উত্তেজিতও, কিন্তু মুখে সেই ভাব ফুটে উঠতে দিলেন না। আসলে এই সুযোগে শ্বাপদ-কুলের কোন-কোন পাণ্ডার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়ে যাবে, এটা কম পাওয়া নয়। সেইজন্যই দুর্বল ভঙ্গিতে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তিনি দরজার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।
দরজা খুলে যে-দু’জন ঢুকল, তাদের একজন সেই যুবকটি, যে তাঁকে মিথ্যে কথা বলে এখানে ধরে এনেছে, তবে সে সম্ভবত চুনোপুঁটি, কারণ, তার সামনে যে ব্যক্তি প্রথম ঢুকল, তাকে তিনি বিলক্ষণ চেনেন, সাইকেল মাহাতো।
সাইকেল তাঁকে দেখে কান এঁটো করা হাসি হেসে বলল, “আরে ডাগ্দারবাবু, উঠে পড়েছেন যে! তা ভালোই ঘুমালেন। গোটা দিনটা ঘুমিয়েই কাটল। এদিকে মাথাফাতা ফাটিয়ে এসে আমদের মিছিমিছি হ্যারাস করা। আমি ভয় পাচ্ছি, কিছু যেন না হয়, কিছু যেন না-হয়। ডাগদারবাবু, আমি মানুষটি বড় নাজুক দিল আছি, কারুর দুঃখ এক্কেবারে দেখতে পারি না! মানুষের সেবাযত্ন না করতে পারলে ঘুম হয় না আমার। সেই জন্যই তো আপনাকে একটু নিয়ে এলাম। মেহেমান করে। এমনিতে তো হেলথ্সেন্টারে গিয়ে আপনার সেবা করার মওকা মিলবে না, সেই জন্যই গরীবের মোকামে নিয়ে এসে একটু খাতির-খিদমত করবো। সুযোগ দেবেন আশা করি?”
এ-জীবনে আমাদের দীর্ঘকালের কোন-কোন চাওয়া-পাওয়া মেটে না, আবার কখন-কখন ছোট-খাটো কোন চাওয়া মিটে যায় তক্ষুনি। এবারেও সেই মিরাকেলই ঘটলো। দরজা খোলার আওয়াজ পাওয়া গেলো। সত্যব্রত ভিত্রে-ভিতরে সামান্য কৌতূহলী হয়ে উঠলেন, উত্তেজিতও, কিন্তু মুখে সেই ভাব ফুটে উঠতে দিলেন না। আসলে এই সুযোগে শ্বাপদ-কুলের কোন-কোন পাণ্ডার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়ে যাবে, এটা কম পাওয়া নয়। সেইজন্যই দুর্বল ভঙ্গিতে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তিনি দরজার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।
দরজা খুলে যে-দু’জন ঢুকল, তাদের একজন সেই যুবকটি, যে তাঁকে মিথ্যে কথা বলে এখানে ধরে এনেছে, তবে সে সম্ভবত চুনোপুঁটি, কারণ, তার সামনে যে ব্যক্তি প্রথম ঢুকল, তাকে তিনি বিলক্ষণ চেনেন, সাইকেল মাহাতো।
সাইকেল তাঁকে দেখে কান এঁটো করা হাসি হেসে বলল, “আরে ডাগ্দারবাবু, উঠে পড়েছেন যে! তা ভালোই ঘুমালেন। গোটা দিনটা ঘুমিয়েই কাটল। এদিকে মাথাফাতা ফাটিয়ে এসে আমদের মিছিমিছি হ্যারাস করা। আমি ভয় পাচ্ছি, কিছু যেন না হয়, কিছু যেন না-হয়। ডাগদারবাবু, আমি মানুষটি বড় নাজুক দিল আছি, কারুর দুঃখ এক্কেবারে দেখতে পারি না! মানুষের সেবাযত্ন না করতে পারলে ঘুম হয় না আমার। সেই জন্যই তো আপনাকে একটু নিয়ে এলাম। মেহেমান করে। এমনিতে তো হেলথ্সেন্টারে গিয়ে আপনার সেবা করার মওকা মিলবে না, সেই জন্যই গরীবের মোকামে নিয়ে এসে একটু খাতির-খিদমত করবো। সুযোগ দেবেন আশা করি?”
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯৭: শ্রীমার কথায় ‘ঠাকুরের দয়া পেয়েচ বলেই এখানে এসেচ’

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫৫: সর্বত্র বরফ, কোত্থাও কেউ নেই, একেবারে গা ছমছম করা পরিবেশ
সত্যব্রত শান্ত গলায় বললেন, “আমার প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল, তুমি আমায় বেশক্ ভালোবাসো। এখন বুঝলাম, কথাটা মিথ্যে নয়। তোমার ভালোবাসা পেয়ে আমি আপ্লুত। কিন্তু একটাই সমস্যা, এখানে কোন ওয়াশরুমের ব্যবস্থা রাখোনি, অথচ মানুষজনকে আটক্ করে রাখছো। এটা ভারি অন্যায়। খুব দুঃখ পেলাম। তোমার মতো নাজুক দিল ইনসানের কাছ থেকে এমনটা আশা করিনি!”
সাইকেল ভিতরে ভিতরে জ্বলে উঠল, তার চোখে সেই ক্রোধ একবার দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেল। সে বলল, “ওহ্, আপনি টয়লেটের কথা বলছেন। তা যাবেন বৈকি। এই গণপতই নিয়ে যাবে”, বলে সেই যুবকটিকে দেখিয়ে দিল।
যুবকটির নাম তাহলে গণপৎ! সত্যব্রত ভালো করে দেখলেন তাকে। যুবকটি একহাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে ভাবলেশহীন মুখে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। সত্যব্রত বুঝতে পারলেন, যুবকটির যে হাত প্যান্টের পকেটের মধ্যে, সেখানেই লোডেড পিস্তল ইত্যাদি থাকা বিচিত্র নয়। সশস্ত্র হয়ে আসাটাই এদের দস্তুর।
সত্যব্রত বললেন, “এখন না-হয় তোমরা এসেছ, কিন্তু তোমরা না থাকার সময় যদি আমার টয়লেটে যেতে হয়, তখন আমি কী করব?”
“কেন, আমাদের ডাকবেন!” এত সহজ রাস্তা থাকা সত্ত্বেও সত্যব্রত তা না জানায়, সাইকেল যেন অবাক হল।
“তোমাদের ডাকব কীভাবে ? আমার মোবাইলটাও তোমরা নিয়ে নিয়েছ, তোমাদের নাম্বারটাও দাওনি! তাহলে?”
“ইল্লি আর কী?” তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠল যেন সাইকেল, “আপনার মোবাইল দিই আর আপনি পুলিশে কল করে আমাদের ছেরাদ্দ করার ব্যবস্থা করুন ! মারব এক ঝাপড়…!” বলে সে রাগে ফুঁসতে লাগল।
“এ কী কথা ? এইমাত্র বললে যে, তুমি নাজুক দিল! আর এখনই আমার উপরে গোঁসা করছো?”
“গুস্সা করি নি ডাগদারবাবু। অভিমান করেছি। আমরা আপনার কোন ক্ষতি করিনি, আপনি বিলকুল আপনারটা করে খাচ্ছিলেন, আমরা আমাদেরটা। তাহলে হঠাৎ আমাদের রাস্তায় ঢুকে পড়লেন কেন ? নুনিয়ার সঙ্গে এত পিরীতটাই বা কীসের?”
“এই তো পথে এসেছ সাইকেল! আসল কারণটা বলেছো। আচ্ছা, তোমাদের কীভাবে মনে হল যে আমি তোমাদের রাস্তায় ঢুকে পড়েছি? আমি কিন্তু মোটেও তা ঢুকিনি। আমি কেবল বুধনের রহস্য জানতে চেয়েছি। সবাই যতই ওই ব্যাপারটিকে ভুতুড়ে বলুক না কেন, তুমি-আমি দু’জনেই জানি, ওর মধ্যে আর যাই থাক ভূত-ফুত এক ছটাকও ছিল না। ঠিক কি না?”
সাইকেলের মুখ থমথমে হয়ে উঠল। সে সত্যব্রতর কথার জবাব না দিয়ে বলল, “নুনিয়াকে কোথায় রেখেছেন ডাগদারবাবু?”
সাইকেল ভিতরে ভিতরে জ্বলে উঠল, তার চোখে সেই ক্রোধ একবার দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেল। সে বলল, “ওহ্, আপনি টয়লেটের কথা বলছেন। তা যাবেন বৈকি। এই গণপতই নিয়ে যাবে”, বলে সেই যুবকটিকে দেখিয়ে দিল।
যুবকটির নাম তাহলে গণপৎ! সত্যব্রত ভালো করে দেখলেন তাকে। যুবকটি একহাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে ভাবলেশহীন মুখে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। সত্যব্রত বুঝতে পারলেন, যুবকটির যে হাত প্যান্টের পকেটের মধ্যে, সেখানেই লোডেড পিস্তল ইত্যাদি থাকা বিচিত্র নয়। সশস্ত্র হয়ে আসাটাই এদের দস্তুর।
সত্যব্রত বললেন, “এখন না-হয় তোমরা এসেছ, কিন্তু তোমরা না থাকার সময় যদি আমার টয়লেটে যেতে হয়, তখন আমি কী করব?”
“কেন, আমাদের ডাকবেন!” এত সহজ রাস্তা থাকা সত্ত্বেও সত্যব্রত তা না জানায়, সাইকেল যেন অবাক হল।
“তোমাদের ডাকব কীভাবে ? আমার মোবাইলটাও তোমরা নিয়ে নিয়েছ, তোমাদের নাম্বারটাও দাওনি! তাহলে?”
“ইল্লি আর কী?” তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠল যেন সাইকেল, “আপনার মোবাইল দিই আর আপনি পুলিশে কল করে আমাদের ছেরাদ্দ করার ব্যবস্থা করুন ! মারব এক ঝাপড়…!” বলে সে রাগে ফুঁসতে লাগল।
“এ কী কথা ? এইমাত্র বললে যে, তুমি নাজুক দিল! আর এখনই আমার উপরে গোঁসা করছো?”
“গুস্সা করি নি ডাগদারবাবু। অভিমান করেছি। আমরা আপনার কোন ক্ষতি করিনি, আপনি বিলকুল আপনারটা করে খাচ্ছিলেন, আমরা আমাদেরটা। তাহলে হঠাৎ আমাদের রাস্তায় ঢুকে পড়লেন কেন ? নুনিয়ার সঙ্গে এত পিরীতটাই বা কীসের?”
“এই তো পথে এসেছ সাইকেল! আসল কারণটা বলেছো। আচ্ছা, তোমাদের কীভাবে মনে হল যে আমি তোমাদের রাস্তায় ঢুকে পড়েছি? আমি কিন্তু মোটেও তা ঢুকিনি। আমি কেবল বুধনের রহস্য জানতে চেয়েছি। সবাই যতই ওই ব্যাপারটিকে ভুতুড়ে বলুক না কেন, তুমি-আমি দু’জনেই জানি, ওর মধ্যে আর যাই থাক ভূত-ফুত এক ছটাকও ছিল না। ঠিক কি না?”
সাইকেলের মুখ থমথমে হয়ে উঠল। সে সত্যব্রতর কথার জবাব না দিয়ে বলল, “নুনিয়াকে কোথায় রেখেছেন ডাগদারবাবু?”
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯৭: পাতি সরালি

পঁচিশে বৈশাখ
“নুনিয়া?” সত্যব্রত চট্ করে ভেবে নিলেন, এদের কাছে নুনিয়ার কথা একেবারে অস্বীকার করে লাভ নেই, তবে সত্যিটাও বলা যাবে না। তিনি চট্ করে বললেন, “নুনিয়া কোথায় আমি জানবো কী করে? নুনিয়া রাতে একবার এসেছিল, আমি অবাক হয়েছিলাম, তা সে আমার কাছে এক রাতের জন্য আশ্রয় চেয়েছিল। কিন্তু যতই হোক, আমি একজন বয়স্ক মানুষ আমার কোয়ার্টারে একা থাকি এখন, নুনিয়াকে এক রাতের জন্য আশ্রয় দিলেও লোকজন বদনাম করতে ছাড়বে না। সেই কারণে আমি তাকে ফিরিয়ে দিই। আমি তাকে বলি, হেলথ্ হোমে অনেক লোক আসে, এখানে সে থাকলে তার পিছনে যারা হাত ধুয়ে পড়েছে, যদিও জানি না কেন পড়েছে, তা তারা সহজেই টের পেয়ে যাবে যে, নুনিয়া এখানে আছে। তবে যাওয়ার আগে সে আমাকে বলছিল, পরের দিন দুপুর নাগাদ সে আসবে। আমাকে সে কিছু বলতে চায়। আর আমি না থাকলে সে থানায় যাবে। সেখানেই যা বলার বলবে। কারা না-কি তাকে দিনের পর দিন টর্চার করছিল! কারা তুমি জানো সাইকেল?” শেষের কথাটা ইচ্ছে করেই ন্যাকা-ন্যাকা করে বললেন সত্যব্রত।
সাইকেল রাগত গলায় বলল, “আমরা কী করে জানবো? আমাদের কি আর কোন কাজকাম নেই যে, ধান্দাবাটি ছেড়ে ওই পাগল মেয়েছেলের পিছনে পড়ে থাকবো?”
“মেয়েছেলে শব্দটি খুভ খারাপ সাইকেল! ওটা বলো না। নুনিয়াকে নুনিয়া বলেই ডাকো না। আর তোমাদের যদি মনে হয়, নুনিয়া পাগল, তাহলে সে কী বলছে না-বলছে, তা নিয়ে মিথ্যে কেন মাথা ঘামাচ্ছো?”
“ডাগ্দারবাবু, অনেকসময় মিথ্যে কথা শুনতে শুনতে লোকে তাকে সত্যি বলে ভেবে নেয়। সেইকারণেই তো আমরা নুনিয়াকে খুঁজছি, যাতে তাকে সত্যি কথাটা বলা যায়, শেখানো যায়!”
“বেশ, মেনে নিলাম। কিন্তু মাঝরাতে একটি মেয়েকে সত্য কথা বোঝানোর চেষ্টা না-করে, সবার সামনে, দিনের বেলায় বললেই যে ভালো দেখায় সাইকেল!”
“দিনের বেলায় সময় কোথায়? আমাদের তো কামধান্দা আছে না কি? সেখানে যাব না নুনিয়াকে বোঝাবো? সংসার চলবে?”
“তাহলে বাদ দাও না। নুনিয়া আপনভোলা মেয়ে। ওর কথাকে অত গুরুত্ব দিও না। আমিও দিই না। দিলে তো থানায় যেতে হতো!” বেফাঁস কথা বলে ফেলে সত্যব্রত প্রমাদ গুণলেন। সাইকেল না প্রশ্ন করে বসে, কেন, নুনিয়া এমন কী বলেছে যে তাঁকে থানায় যেতে হতো? মনে-মনে চাইছিলেন যেন এই প্রশ্নটি না করে সাইকেল। কিন্তু সবসময়েই যা চাওয়া হয় তা পাওয়া যায় না। এবারেও পেলেন না।
সাইকেল সুতীক্ষ্ণ গলায় বলে উঠল, “কেন? নুনিয়া এমন কী বলেছে এর আগে যে আপনাকে থানায় যেতে হতো?”—চলবে।
সাইকেল রাগত গলায় বলল, “আমরা কী করে জানবো? আমাদের কি আর কোন কাজকাম নেই যে, ধান্দাবাটি ছেড়ে ওই পাগল মেয়েছেলের পিছনে পড়ে থাকবো?”
“মেয়েছেলে শব্দটি খুভ খারাপ সাইকেল! ওটা বলো না। নুনিয়াকে নুনিয়া বলেই ডাকো না। আর তোমাদের যদি মনে হয়, নুনিয়া পাগল, তাহলে সে কী বলছে না-বলছে, তা নিয়ে মিথ্যে কেন মাথা ঘামাচ্ছো?”
“ডাগ্দারবাবু, অনেকসময় মিথ্যে কথা শুনতে শুনতে লোকে তাকে সত্যি বলে ভেবে নেয়। সেইকারণেই তো আমরা নুনিয়াকে খুঁজছি, যাতে তাকে সত্যি কথাটা বলা যায়, শেখানো যায়!”
“বেশ, মেনে নিলাম। কিন্তু মাঝরাতে একটি মেয়েকে সত্য কথা বোঝানোর চেষ্টা না-করে, সবার সামনে, দিনের বেলায় বললেই যে ভালো দেখায় সাইকেল!”
“দিনের বেলায় সময় কোথায়? আমাদের তো কামধান্দা আছে না কি? সেখানে যাব না নুনিয়াকে বোঝাবো? সংসার চলবে?”
“তাহলে বাদ দাও না। নুনিয়া আপনভোলা মেয়ে। ওর কথাকে অত গুরুত্ব দিও না। আমিও দিই না। দিলে তো থানায় যেতে হতো!” বেফাঁস কথা বলে ফেলে সত্যব্রত প্রমাদ গুণলেন। সাইকেল না প্রশ্ন করে বসে, কেন, নুনিয়া এমন কী বলেছে যে তাঁকে থানায় যেতে হতো? মনে-মনে চাইছিলেন যেন এই প্রশ্নটি না করে সাইকেল। কিন্তু সবসময়েই যা চাওয়া হয় তা পাওয়া যায় না। এবারেও পেলেন না।
সাইকেল সুতীক্ষ্ণ গলায় বলে উঠল, “কেন? নুনিয়া এমন কী বলেছে এর আগে যে আপনাকে থানায় যেতে হতো?”—চলবে।
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel): পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।