রবিবার ২৭ এপ্রিল, ২০২৫


লোকটি ঘরে ঢুকতেই মঙ্গল ওঝা দরজা বন্ধ করে দিল হড়কো দিয়ে। তারপর দ্রুত এগিয়ে গিয়ে একটা চেয়ার টেনে লোকটিকে বসার ব্যবস্থা করে দিল। লোকটি যে এই প্রথম এখানে এসেছে, তা বোঝাই যাচ্ছিল। কারণ সে ঘরে ঢুকে এধার-ওধার তাকিয়ে দেখছিল, চেনা ঘর হলে এমনটি সে করত না। ঘরের মধ্যে এককোণে একটি ছোট চিমনি-ল্যাম্প জ্বলছিল। এই জাতীয় ল্যাম্প খুব ছোট, অনেকটা বড় সেজবাতির ছোট সংস্করণ। নিচে যেখানে তেল রাখার ব্যবস্থা, সেই অংশটি চওড়ায় বেশি বড় নয়, বাইরের দিকে খাঁজকাটা, যাতে তলার দিক থেকে ধরতে সুবিধা হয়, সেইরকম ব্যবস্থা করা আর-কি।

তবে এই ধরণের ল্যাম্পের বেশি ক্ষমতা নেই ফলে ঘরের অধিকাংশ অংশই অনালোকিত, তাতে আগন্তুক লোকটির অবয়ব যেমন স্পষ্ট নয়, তেমনই ঘরটির অবস্থাও তেমনভাবে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। তাও যতটুকু আলোকিত, তাতে ঘরটির অবস্থা মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে। ঘরটির একপাশে কয়েকটি বড়-বড় স্টিলের ট্রাঙ্ক সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা। সেগুলির ওপরে মোটা এবং লম্বা ঝুলের রং-বেরঙের শতরঞ্চি বিছানো। তারই গা-ঘেঁষে একখানি অলঙ্কৃত কাঠের চেয়ার। দেখেই মনে হয় অ্যান্টিক গুডস্।

চেয়ারটির রং এককালে কী ছিল তা বলা মুশকিল, তবে সেটা যে কখনই এখনকার মতো ফ্যাকাশে রঙের ছিল না, তা বলাই যায়। স্টিলের ট্র্যাঙ্কগুলি যেদিকে রাখা তার প্রায় বিপরীতদিকে একখানা ছোট তক্তোপোষে বিছানা-বালিশ টানটান করে পাতা। দেখেই মনে হচ্ছে কেউ শোয় না। এমনকি এই মঙ্গল ওঝাও নয়। তক্তোপোষের নিচে কিছু বাতিল জিনিসের সঙ্গে কিছু কার্ডবোর্ডের বাক্স রাখা, সম্ভবত জুতোর বাক্স। তবে সে-বাক্সতে জুতো আছে, না-কি খালি, তা সঠিকভাবে বলা যায় না। তবে বাতিল জিনিসগুলির উপর ধুলো জমলেও, জুতোর বাক্সগুলি তুলনায় পরিষ্কার। যদিও অন্ধকারে সেটা চোখে পড়ল না আগন্তুকের। এছাড়া ঘরের মধ্যে আর বিশেষ কিছু নেই, খালি ওই কাঠের চেয়ার আর একটা নড়বড়ে ছোট টেবিল ছাড়া। দেওয়ালে একখানি পুরানো ক্যালেণ্ডার আধামলিন অবস্থায় ঝুলছে।

টেবিলের উপর একখানি কালীর ছবি, তাতে ফুল, বেলপাতা দেওয়া। এখন শুকিয়ে গেলেও, আজকেই যে দেওয়া হয়েছিল, সেটা বোঝা যায়। তবে লক্ষণীয়ভাবে কালাদেওর পুরোহিতের ঘরে কালাদেওর কোনও ছবি বা চিহ্ন চোখে পড়ল না। আগন্তুক সেটা দেখে মৃদু হাসল। তারপর সোজাসুজি কাজের কথায় চলে এল, “এদিকের খবর ঠিক আছে ?”
মঙ্গল ওঝা বলল, “হ্যাঁ, এখনও ঠিক আছে। কোন সন্দেহভাজন কিছু তো চোখে পড়েনি আজ অবধি!”
“শিগগিরিই পড়তে পারে। হাওয়া ভালো না। কলকাতা থেকে বড় টিকটিকি এসে মাঠে নেমে পড়েছে। ঘাঘু লোক। সঙ্গে গোদের উপর বিষফোঁড়া হল ওই হারামজাদা ডাক্তারটা। ও ওদের এমনভাবে বোঝাচ্ছে যে, কালাদেওর ভয় আর কতদিন টেকে কে জানে!”
“কলকাতার টিকটিকির কথা কানে এসেছে আমারও। তবে ডাক্তার বলতে কী পিশাচপাহাড়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডাক্তার? চিন্তার বিষয় তো তাহলে?” মঙ্গল চিন্তিত মুখে বলল, “আমাদের কাজকারবারের তাতে অসুবিধে হয়ে যাবে খুব! তা ওই ডাক্তারটিকে সরিয়ে দিলে হয় না? কালাদেও তো আছেই!”
“এখন আর সম্ভব নয়। অনেক দেরি হয়ে গেছে। আগে হলে ভেবে দেখা যেত। ওই কলকাতার টিকটিকি আর থানার সেকেণ্ড অফিসার মালটা দু’জনে মিলে ডাক্তারের সঙ্গে গুজুর-গুজুর ফুসুর-ফুসুর করে এসেছে গতকাল, আমাদের কাছে খবর আছে। ডাক্তার যে কী বলেছে, তা তো জানা যাচ্ছে না। এখন ডাক্তারকে পট্কে দিলে ওই কলকাতার টিকটিকি সব বুঝে যাবে। একেবারে ফোর্স নিয়ে এসে পিছনে পড়ে না যায় ! ওই লাইনে ভাবা যাবে না। এখন মালপত্র যতদূরসম্ভব এদিক-ওদিক চালান করে কিছুদিন গা-ঢাকা দিতে হবে আমাদের সবাইকে। এলাকা শান্ত হলে তখন আবার শুরু করা যাবে, বসের এমনই ইচ্ছা।”
“সে তো বুঝলাম ! কিন্তু বস যে কেন ওই রাস্তা নিতে গেলেন? খামোকা লোকের চোখে পড়ল!”
“উপায় ছিল না। তুমি তো জানো সবই। কোটি-কোটি টাকার ডিল, সব ভেস্তে যেত। এ-তো তোমার খুচখাচ আনা-দেওয়া নয়! কালাদেওর ভয় না থাকলে রাস্তা ক্লিয়ার পেতে না তুমি। পুলিশগুলিও ভয়ে থানার ভিতর থেকে নড়তে চাইছে না দেখছ তো? রাস্তায় টহল দেওয়া উঠেই গিয়েছিল গত দেড় বছরে!”
“বেশি ভয় পেয়েই তো কাল হল! ওপরতলায় খবর গেল আর আমারা ফ্যাসাদে পড়লাম। তুমি কি জানো, লোকে আজকাল যখন-তখন কালাদেওর মন্দিরে পুজো দিতে আসছে?”
শুনে ভ্রূ কুঁচকে গেল আগন্তুকের, “মানে? বল কী?”
“যা শুনছ, সেটাই সত্যি। আজকাল অনেকে দুমদাম করে কালাদেওর মন্দির দেখতে চলে আসছে, গুহার মুখে উঁকিঝুঁকি মারছে, কেউ-কেউ মোবাইলের টর্চ জ্বেলে ভিতরে ফেলছে। যতই বলি, ওইরকম করবেন না, কালাদেও কো গুস্সা আয়া তো…! কিন্তু কথা শুনলে তো? পুরোহিতেরা চায়, মন্দিরে ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকুক, আমি যে উল্টোটাই চাই, সে-কথা লোককে বোঝাই কী করে?”
“এ-তো আচ্ছা উৎপাত! এই খবর রটে গেলে আরও পাবলিক আসবে, তখন মালটাল যা আছে, তা সরাতে আমাদের কালঘাম ছুটে যাবে!”
“কী ঘাম?” অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল মঙ্গল।
“ও কিছু না, তুমি বুঝবে না। পেটি কত আছে চেম্বারে?”
“মেন চেম্বারে?”
“হ্যাঁ।”
“ছয় পেটি বড় মাল আর তিন পেটি ছোট!”
“এত মাল সরানোই তো মুশকিল হয়ে যাবে এ-ভাবে চললে!”
“নাহলে আর বলছি কি? এভাবে কাজকারবার চললে বস তোমার উপরেও রাগবে, আমার উপরেও রাগবে! অতএব যাতে এই অবস্থা আটকানো যায়, সে-চেষ্টাই করতে বল বসকে। ওঁর কাছে গিয়ে বল, বোঝাও!”
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৯: যে-আঁধার আলোর অধিক

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯২: শ্রীমার সঙ্গে এক মেমসাহেবের কথোপকথন

“বসকে আমি বলবো? পাগল? আজ অবধি জানলামই না কে যে আসল বস, তো দেখা আর বলা! আর বস বুঝবেন বলে মনে হয় তোমার? ওঁর নিজস্ব কিছু যুক্তি আছে, তা দিয়েই উনি প্ল্যানমাফিক এগিয়ে যেতে চান। আমাদের একদিন ছোট সাহেবকে দিয়ে বলে পাঠিয়েছিলেন, এটা যেহেতু ব্যবসা, কেবল দিনের আলোয় করার মতো ব্যবসা নয়, কিন্তু ব্যবসা হল ব্যবসাই, অতএব এতে লাভ-লোকসান আছে, হার-জিত আছে, ওঠা-পড়া আছে। থেমে যে যায়, সে মূর্খ। পরিকল্পনায় ত্রুটি থাকতে পারে, কিন্তু লক্ষ্য যদি সঠিক হয়, তাহলে দুস্রা পরিকল্পনা ঠিক বেরিয়ে আসবে!”
“এত ভারি-ভারি কথা আমি বুঝি না ! তুমি কেবল দেখ, যাতে আমাদের এই গ্রামে না হানা দেয় পুলিশ ! না-হলে কিন্তু সব চাল চিত্তির হয়ে যেতে পারে!”
“পুলিশ পিশাচপাহাড়ের মন্দিরে হানা দেবে? পাগল হলে তুমি ? জনজাতির দেওতা বলে কথা। তারা যদি উত্তেজিত হয়ে ঘিরে ধরে তাহলে তীর-ধনুক দিয়েই কম্ম সাবাড় করে দেবে! অত সাহস কারুর নেই। এ-গ্রামে এসে যদি গুহার দিকে পুলিশ যাওয়ার চেষ্টা করে, গ্রামে কোনভাবে খবরটা পাঠিয়ে চুপ করে দেখবে কী হয়! একেবারে মারতে-মারতে মেরেই ফেলবে পাবলিক। তখন ওই তদন্ত-ফদন্ত সব অন্য দিকে ঘুরে যাবে!”
“সেটা কিন্তু খুব কাঁচা কাজ হয়ে যাবে। সেদিন না-হয় পুলিশ-ফুলিশকে মেরে তাড়ালাম আমরা, কিন্তু আরও বেশি ফোর্স নিয়ে এসে যদি ফিরে আসে, তাহলে কিন্তু অ্যারেস্ট হতে হবে তোমাকে-আমাকেও!”
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৮: গার্হস্থ্যজীবনে জ্যেষ্ঠ রামচন্দ্রের ভাবমূর্তি, তাঁর দেববিগ্রহে উত্তরণের একটি অন্যতম কারণ?

এপ্রিল ফুল

“ছোঃ ! আমাকে অ্যারেস্ট করবে, এমন সাধ্যি হয়নি এখনও। আর আমাকে পাবেই বা কোথায় এখানে ? তবে কথাটা তুমি মন্দ বলনি। তবে আমার বিশ্বাস পিশাচপাহাড়ের গুহায় যে ওদের আসা উচিৎ, সেটা ওরা এখনও বুঝতে পারেনি। আর ওদের বুঝতে-বুঝতে সব মাল ভ্যানিশ হয়ে যাবে। ডরো মৎ!”
“কী বলছ? ভয় পাব না? তোমার আর কী? তুমি তো থাকবে ধরাছোঁয়ার বাইরে, যত জ্বালা সব আমাদের মতো চুনোপুঁটিদের!” মঙ্গল কিঞ্চিৎ উষ্মার সঙ্গে বলে। গলাটাও চড়ে গিয়েছিল তার।
“গলা নামিয়ে কথা বল,” আগন্তুক বলল, “বস কিন্তু কোন বেয়াদবি পছন্দ করেন না। তুমি-আমি সবাই চুনোপুঁটি। আমাদের আদার ব্যাপারীদের খোঁজ না রাখলেও চলবে! তোমার আমার সবাই যারা আমরা এই লাইনে আছি, তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা তো ঠিকঠাক ঢুকে যায়। কখন সারা মাস তেমন কাজ না করলেও বস কি আমাদের টাকা কেটে নেন ? বরং ওঁর দয়াতেই আমরা সকলেই কিন্তু বেতনটা ঠিকঠাক পাচ্ছি। মনে রেখো!” আগন্তুকের গলায় স্পষ্ট রাগ এবং বিরক্তি ঝরে পড়ছিল।
আরও পড়ুন:

ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-৫৪: রবীন্দ্রনাথের ‘মুকুট’ ত্রিপুরার ইতিহাসাশ্রিত গল্প

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯৪: মৌটুসি

মঙ্গল বুঝতে পারছিল যে, আবেগের বশীভূত হয়ে সে একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। সে মিয়ানো গলায় বলল, “আরে রাগ করো না। আমি কথার কথা বললাম। আসলে সারাদিন এইসব উৎকট উৎপাত সামলাতে গিয়ে মাথার ঠিক নেই!”
“আমাদের এই সমস্ত কাজে মাথা ঠাণ্ডা না-রাখলে চলে না তুমি জানো !”
“হ্যাঁ। ভুল হয়ে গিয়েছে!” কড়জোড়ে বলে মঙ্গল।
“আর এমন ভুল করো না। এদিকটা ক’দিন সামলে রাখো। হয়ত দিন চারেকের মধ্যে সব সেটিং করে মালপত্তর হাওয়া করে দেবো। তখন তুমি বসে-বসে তোমার কালাদেওর এত ভক্তদের দক্ষিণা গোনো! রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাবে।”
মৃদু হাসল মঙ্গল। তবে তার সে-হাসিতে কোন প্রাণ ছিল না। যেন ভয় পেয়েছে সে !
আগন্তুক এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখল আবার। এই ঘর থেকে বাড়ির ভিতরে যাওয়ার দরজাটা এদিক থেকে বন্ধ। আচ্ছা, অন্দরের দিক থেকে কেউ যদি দরজায় কান পেতে তাদের কথোপকথন শোনে ? তাহলেই সব গড়বড় হয়ে যাবে। সে একবার মঙ্গল ওঝার দিকে তাকাল। তারপর বলল, “ভিতরের দিক থেকে কেউ আড়ি পেতে আমাদের কথা শুনছে না তো?”
“নিশ্চিন্ত্ থাকো। সকলেই মড়ার মতো ঘুমাচ্ছে। এত রাতে কে আর জাগবে? তুমি না এলে আমিও এখন ঘুমাতাম !” বলল মঙ্গল। তারপরেই কী যেন মনে পড়ায় সে চমকে উঠল এবং আগন্তুকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কিন্তু তুমি কি এইসব কথা বলার জন্যই এত কষ্ট করে এখানে এসেছে? এত রাতে ? আর এলেই বা কী করে?”
“যাক্ ! বুদ্ধি আছে তাহলে?”
“তোমার মতো বেশি না হলেও কিছুটা আছে। এখন বল, কী দরকারে এসেছ? আর কী করেই বা এলে?”
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫৩: আলাস্কার দক্ষিণে রয়েছে সেই মনোরম গ্লেন হাইওয়ে

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৭০: বিচারক

“তোমার দুই নাম্বার প্রশ্নটার উত্তর হল, জিপ চালিয়ে এসেছি। জিপটা গ্রামের ভিতরে ঢোকাইনি। জঙ্গলের কাছে রেখে এসেছি। লোক আছে জিপে। পুলিশ পেট্রোলিং দেখতে পেলেই সে গাড়ি চালিয়ে এগিয়ে যাবে, যেন যাচ্ছিল কোথাও। আর তা না-হলে অপেক্ষা করবে আমার ফিরে যাওয়ার। প্রথম প্রশ্নের উত্তর হল, জরুরি কাজ আছে, ফোনে বলা যেত না। কারণ, বসের সন্দেহ যে, ফোন ট্যাপ হচ্ছে। কিংবা হতেও পারে। ঘাঘু টিকটিকিটাকে বিশ্বাস নেই। সেক্ষেত্রে ওরা জেনে গেলে, আমাদের লোকসান হয়ে যাবে!”
“বুঝলাম। বলো তাহলে এবার, কী কাজ?”
“দু’দিন পরে তিনটি গাড়ি আসবে। মাল লোড করতে হবে। তার জন্য লোক জোগাড় তোমাকে করতে হবে না। গাড়িতে করে লোক নিজেই পৌঁছে যাবে। তিন জন লোক আসবে, ড্রাইভারেরা থাকবে, ওরাও হাত লাগাবে। তুমি প্যাসেজ ক্লিয়ার রাখার ব্যবস্থা করবে কেবল।”
“কীভাবে ?”
“কাল রটিয়ে দাও যে, কালাদেও কূপিত হয়ে তোমাকে আজ রাতে দেখা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, বিশেষ পূজার ব্যবস্থা করলে তবেই তিনি শান্ত হয়ে আগের অবস্থায় মানে আগের ভদ্রলোকের চুক্তিতে ফিরে যাবেন। বছরে একবার পাঁঠাবলি ভোগ পেলেই গুহার ভিতরেই থাকবেন। বাইরে বেরুবেন না এমন। কিন্তু তার আগে এক সপ্তাহ সন্ধ্যের পরে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত কেউ যেন বাড়ির বাইরে না বেরোয়। যদি বেরোয় তাহলে তার প্রাণের দায়িত্ব কালাদেও নিতে পারবেন না ! ব্যস্, দেখবে এমনিতেই কালাদেওর কবলে পড়লে সাক্ষাৎ মৃত্যু—মিথটা চারিয়ে গেছে বেশ ভালোরকমেই। এখন কালাদেওর পুরোহিত যদি এমন প্রত্যাদেশের কথা জানায়, তাহলে কালাদেওর অলৌকিক শক্তিকে বিশ্বাস করে যারা, সেই সমস্ত পাবলিক ঠিক শুনবে। কিন্তু তোমাকে কথাগুলি বিশ্বাসযোগ্যভাবে বলতে হবে ! দেখ, যত বেশি সংখ্যক মানুষকে তুমি আটকে রাখতে পারবে, তত আমরা বিপন্মুক্ত হবো। এই কাজটা ভালোভাবে করতে পারলে বস তোমার উপর খুশি হবেন। এখন আমাদের যেভাবেই হোক মালপত্তর সব সরিয়ে ফেলতে হবে। তা না হলে বুঝতেই পারছ…? আর কথাটা যেন পাঁচকান না হয়!”
মঙ্গল ওঝা আহত গলায় বলল, “আগে কখনও হয়েছে কি?”
“আগে হয়নি বলে কখন হবে না, সেটা বলা যায় না। যাক, তোমায় করতে হবে যে কাজ সেটা বুঝতে পেরেছ কি?”
“হ্যাঁ, পেরেছি। চিন্তা নেই এই কথাগুলি দেওয়ালের কানেও পোঁছাবে না। বসকে বলবে, কাজ কাল থেকেই শুরু করে দেবো আমি ! কেউ টের পাবে না। অন্ধকারের কান নেই মনে রাখবেন!”
কিন্তু না ! মঙ্গল ওঝা ভুল বলছিল। অন্ধকারেরও কান আছে। সবসময় সেই কান সে বন্ধ করে না। এখন যেমন, অন্ধকারে, বন্ধ জানালার সামনে কান পেতে চুপিসাড়ে সেই নীল অন্ধকার শুনছিল দু’জনের কথোপকথন। মঙ্গল ওঝা আর আগন্তুক সে-কথা জানতেও পারল না! —চলবে।
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel): পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content