
সত্যব্রত গুম হয়ে বসেছিলেন। নুনিয়া কিছুক্ষণ আগেই শেষ করেছে তার কথা। আজ যদি সময় করে সে না পালিয়ে আসত, তাহলে এতক্ষণে তার কী দশা যে হত, তা সত্যব্রত আঁচ করতে পারছেন। কেউ বা কারা নুনিয়ার পিছনে হাত ধুয়ে লেগে পড়েছে। আসলে নুনিয়া বোধহয় যা-জানার নয়, তেমন অনেক কিছু জেনে ফেলেছে, ফলে সে এখন অনেকের কাছেই শত্রু হয়ে উঠেছে। অথচ নুনিয়া সে-ব্যাপারে যে খুব সচেতন এমনটি নয়। অন্তত সে এখন বুঝতে পারেনি যে, কতটা ভয় তাকে অন্যপক্ষ পাচ্ছে। একেবারে হোস্টেলের মধ্যে ঢুকে তাকে কিডন্যাপ করার পিছনে যে দুঃসাহসিকতা কাজ করছে, তা সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। সত্যব্রতর মনে একজনের ছবি ভেসে উঠছে, কিন্তু বিশ্বাস করতে তাঁর কষ্ট হচ্ছে যে, এত বড় দুঃসাহসিক কাজ লোকটি নিজের মাথা খাটিয়ে করেছে বলে।
সত্যব্রত বললেন, “নুনিয়া, তুই কি জানিস যে তোর এখন এই পিশাচপাহাড়ে অনেক শত্রু?”
“শত্রু! এনিমি? আমার তো কোন বন্ধু ছিল না, এক ওই ফাদার ছাড়া! কে যে আমাকে কেন তার এনিমি ভাবল, আমি কী করে জানবো ?” নুনিয়া মৃদুস্বরে জবাব দিল। দিয়ে একবার রান্নাঘরের বন্ধ জানালার দিকে তাকিয়ে নিল। যেন সে প্রতীক্ষা করে আছে, কেউ আসবে, কেউ আসবেই!
“আচ্ছা, যে তোর ঘরে আজ রাতে ঢুকেছিল, তাকে তুই চিনিস?”
“নাহ্! অন্ধকারে মুখ দেখতে পাইনি তো!”
“এমন কিছু যাতে লোকটাকে পরে চিহ্নিত করা যায়?”
“নাহ্। মনে পড়ছে না!” নুনিয়া ভাবছিল প্রাণপণে, তারপর মাথা নেড়ে বলে।
“তোর কাউকে সন্দেহ হয়?” সত্যব্রত জিজ্ঞাসা করলেন।
নুনিয়া কোন নাম নিল না। চুপ করে থাকল। তারপর দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল।
সত্যব্রত আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “কী হল?”
“কার নাম বলবো? থাক্!” নুনিয়া অসহায়ের মতো বলল, “ভালো করে না-জেনে কাউকে অপরাধী ভাবতে নেই, ফাদার বলেন!”
“তুই ফাদারকে খুব ভালোবাসিস বুঝি?”
“বাসি তো। সেইজন্যই তো ওরা আমাকে ফাদারের কাছে যেতে দেয় না। বলে আমি গেলে ফাদার অযথা উত্তেজিত হয়ে পড়বেন, ভুলভ্রান্তি কিছু ঘটিয়ে ফেলবেন! অথচ ফাদার আমাকে বলেছিলেন, আমার যদি কিছু খারাপ-ভালো হয়, তুই আমায় দেখতে আসিস নুনিয়া! কিন্তু ওরা তো কাছে ঘেঁষতেই দেয় না তো দেখব কাকে?” নুনিয়ার গলার স্বরে বিষণ্ণতা।
সত্যব্রত বললেন, “যদি দিন বদলায়, ঠিক দেখতে পাবি ফাদারকে আবার। আমি অনুমান করতে পারছি, চার্চের অভ্যন্তরীন কাজকর্মে কিছু গণ্ডগোল আছে। সেটা কী, তা বের করা খুব সহজ নয়, তবে যদি আমরা সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করি, তাহলে হয়তো ওরা নিজেরা সার্ভাইভ করতে পারবে না!”
নুনিয়া চুপ করে ছিল। তারপর মৃদু স্বরে বলল, “আচ্ছা, ওরা যদি টের পেয়ে যায় আমি এখানে আছি, তাহলে আমাকে ধরে নিয়ে যাবে বল?” তার গলায় আতঙ্কের পরিবর্তে এখন কৌতূহল।
সত্যব্রত বললেন, “নুনিয়া, তুই কি জানিস যে তোর এখন এই পিশাচপাহাড়ে অনেক শত্রু?”
“শত্রু! এনিমি? আমার তো কোন বন্ধু ছিল না, এক ওই ফাদার ছাড়া! কে যে আমাকে কেন তার এনিমি ভাবল, আমি কী করে জানবো ?” নুনিয়া মৃদুস্বরে জবাব দিল। দিয়ে একবার রান্নাঘরের বন্ধ জানালার দিকে তাকিয়ে নিল। যেন সে প্রতীক্ষা করে আছে, কেউ আসবে, কেউ আসবেই!
“আচ্ছা, যে তোর ঘরে আজ রাতে ঢুকেছিল, তাকে তুই চিনিস?”
“নাহ্! অন্ধকারে মুখ দেখতে পাইনি তো!”
“এমন কিছু যাতে লোকটাকে পরে চিহ্নিত করা যায়?”
“নাহ্। মনে পড়ছে না!” নুনিয়া ভাবছিল প্রাণপণে, তারপর মাথা নেড়ে বলে।
“তোর কাউকে সন্দেহ হয়?” সত্যব্রত জিজ্ঞাসা করলেন।
নুনিয়া কোন নাম নিল না। চুপ করে থাকল। তারপর দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল।
সত্যব্রত আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “কী হল?”
“কার নাম বলবো? থাক্!” নুনিয়া অসহায়ের মতো বলল, “ভালো করে না-জেনে কাউকে অপরাধী ভাবতে নেই, ফাদার বলেন!”
“তুই ফাদারকে খুব ভালোবাসিস বুঝি?”
“বাসি তো। সেইজন্যই তো ওরা আমাকে ফাদারের কাছে যেতে দেয় না। বলে আমি গেলে ফাদার অযথা উত্তেজিত হয়ে পড়বেন, ভুলভ্রান্তি কিছু ঘটিয়ে ফেলবেন! অথচ ফাদার আমাকে বলেছিলেন, আমার যদি কিছু খারাপ-ভালো হয়, তুই আমায় দেখতে আসিস নুনিয়া! কিন্তু ওরা তো কাছে ঘেঁষতেই দেয় না তো দেখব কাকে?” নুনিয়ার গলার স্বরে বিষণ্ণতা।
সত্যব্রত বললেন, “যদি দিন বদলায়, ঠিক দেখতে পাবি ফাদারকে আবার। আমি অনুমান করতে পারছি, চার্চের অভ্যন্তরীন কাজকর্মে কিছু গণ্ডগোল আছে। সেটা কী, তা বের করা খুব সহজ নয়, তবে যদি আমরা সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করি, তাহলে হয়তো ওরা নিজেরা সার্ভাইভ করতে পারবে না!”
নুনিয়া চুপ করে ছিল। তারপর মৃদু স্বরে বলল, “আচ্ছা, ওরা যদি টের পেয়ে যায় আমি এখানে আছি, তাহলে আমাকে ধরে নিয়ে যাবে বল?” তার গলায় আতঙ্কের পরিবর্তে এখন কৌতূহল।
সত্যব্রত তার কথা শুনে যেন সচেতন হলেন। নুনিয়া মিথ্যে আশঙ্কা করছে না। তাঁর নিজেরই মনে হচ্ছে প্রতিটা মুহূর্ত এখন মূল্যবান। চার্চের রহস্য পরে ভেদ করলেও চলবে। আপাতত নুনিয়াকে বাঁচাতে হবে। সে-জন্য যদি তাঁর তুচ্ছ প্রাণ তাঁকে উৎসর্গ করতে হয়, সে-ও ভি আচ্ছা!
কিন্তু বাঁচাবো বললেই তো আর বাঁচানো যায় না। কীভাবে নুনিয়াকে বাঁচাবেন তিনি? শারীরিক শক্তির দ্বারা তাঁর পক্ষে নুনিয়াকে বাঁচানো অসম্ভব। কিন্তু তা বলে কেবল ওই পথ সিল করে দিয়ে ভাবের ঘর সাজিয়ে বসে থাকলে চলে না। এদিকে নুনিয়াকে এখানে রাখাই যাবে না, যদি আততায়ীরা দুষ্টু হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে চালাক-চতুর হয়, তাহলে ঠিক গন্ধে-গন্ধে এখানে এসে পৌঁছাবে এবং বেডরুম, চেম্বার কাম ওয়েটিং রুম, কিচেন, ওয়াশরুম—সব দেখবে। আর নুনিয়াকে লুকানোর মতো এই জায়গাগুলিতে একটুও জায়গা নেই, সেই সত্যটি সত্যব্রতর চেয়ে আর বেশি কে জানে?
জায়গা নেই, কিন্তু সেই জায়গা খুব দ্রুতই ব্যবস্থা করতে হবে। একবার ওদের খপ্পর থেকে পালিয়ে আসার পর নুনিয়া যদি ধরা পড়ে, তাহলে ওরা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। কিন্তু এত রাতে নুনিয়াকে কোথায় লুকাবেন সত্যব্রত? একবার মনে হল, পুলিশের সেই অফিসার শাক্য সিংহকে ফোন করে বলেন। গোয়েন্দা অফিসারটি নিজের ফোন-নাম্বার দিয়ে গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু সেখানে নুনিয়াকে পাঠানোর ব্যবস্থা করাটা কি ঠিক হবে? সরষের মধ্যে ভূত নেই, তা-ই বা কে বলতে পারে ? তাছাড়া এত রাতে এখানে পুলিশের গাড়ি এসে নুনিয়াকে নিয়ে গেলে আড়ালে থেকে কেউ যদি লক্ষ্যও রাখে, তাহলে সব জানতে পারবে। থানার মধ্যে থেকে নুনিয়াকে অপহরণ করতে না পারলেও, মেরে তো ফেলাই যায়। অতএব পুলিশকে এখনই জানালে চলবে না। এমন কিছু করতে হবে যাতে নুনিয়াকে নিঃশব্দে এখান থেকে সরানো যায় নিশ্চিত কোন শেলটারে, কাকপক্ষীও যাতে টের না পায়!
কিন্তু বাঁচাবো বললেই তো আর বাঁচানো যায় না। কীভাবে নুনিয়াকে বাঁচাবেন তিনি? শারীরিক শক্তির দ্বারা তাঁর পক্ষে নুনিয়াকে বাঁচানো অসম্ভব। কিন্তু তা বলে কেবল ওই পথ সিল করে দিয়ে ভাবের ঘর সাজিয়ে বসে থাকলে চলে না। এদিকে নুনিয়াকে এখানে রাখাই যাবে না, যদি আততায়ীরা দুষ্টু হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে চালাক-চতুর হয়, তাহলে ঠিক গন্ধে-গন্ধে এখানে এসে পৌঁছাবে এবং বেডরুম, চেম্বার কাম ওয়েটিং রুম, কিচেন, ওয়াশরুম—সব দেখবে। আর নুনিয়াকে লুকানোর মতো এই জায়গাগুলিতে একটুও জায়গা নেই, সেই সত্যটি সত্যব্রতর চেয়ে আর বেশি কে জানে?
জায়গা নেই, কিন্তু সেই জায়গা খুব দ্রুতই ব্যবস্থা করতে হবে। একবার ওদের খপ্পর থেকে পালিয়ে আসার পর নুনিয়া যদি ধরা পড়ে, তাহলে ওরা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। কিন্তু এত রাতে নুনিয়াকে কোথায় লুকাবেন সত্যব্রত? একবার মনে হল, পুলিশের সেই অফিসার শাক্য সিংহকে ফোন করে বলেন। গোয়েন্দা অফিসারটি নিজের ফোন-নাম্বার দিয়ে গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু সেখানে নুনিয়াকে পাঠানোর ব্যবস্থা করাটা কি ঠিক হবে? সরষের মধ্যে ভূত নেই, তা-ই বা কে বলতে পারে ? তাছাড়া এত রাতে এখানে পুলিশের গাড়ি এসে নুনিয়াকে নিয়ে গেলে আড়ালে থেকে কেউ যদি লক্ষ্যও রাখে, তাহলে সব জানতে পারবে। থানার মধ্যে থেকে নুনিয়াকে অপহরণ করতে না পারলেও, মেরে তো ফেলাই যায়। অতএব পুলিশকে এখনই জানালে চলবে না। এমন কিছু করতে হবে যাতে নুনিয়াকে নিঃশব্দে এখান থেকে সরানো যায় নিশ্চিত কোন শেলটারে, কাকপক্ষীও যাতে টের না পায়!
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৬: নীল রাত্রি, নীল অন্ধকার

ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-৫৩: ‘বালক’ পত্রিকার প্রথম সংখ্যাতেই রবীন্দ্রনাথ ‘মুকুট’ লিখতে শুরু করেন
উঠে একবার পাশের ঘরে গেলেন সত্যব্রত। নুনিয়ার কথামতো ঘর অন্ধকার, খাটের উপর বালিশে চাদর বিছানো, যেন সত্যব্রত বা আর কেউ শুয়ে আছে চাদরমুড়ি দিয়ে। জানালার একটা পাল্লা খোলা। বসন্তকাল এখন। সারাদিন খুব গরম, সন্ধ্যের পরেও কিছুক্ষণ এই গরমের পর্বটা চলতে থাকে। তবে রাত যত বাড়তে থাকে আস্তে-আস্তে ঠাণ্ডা পড়ে। কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে রাতও চুপচাপ শুয়ে পড়ে যেন। খোলা জানালা দিয়ে ঠাণ্ডা বাতাস আসছে, কিন্তু ওই একটি পাল্লাই যদি আজ তিনি বন্ধ করে দেন, তাহলে শত্রুপক্ষের সন্দেহ তাতে বাড়বে। নাহ্, যেমন অর্ধেক পাল্লা খোলা আছে, তেমনই থাক। জানালার কাছে এগিয়ে গেলেন সত্যব্রত, তবে জানালায় গিয়ে দাঁড়ালেন না। আড়ালে থেকে এমনিই তাকালেন বাইরের ঘন তমিস্রার মধ্যে। গাছপালার ফাঁকে যে-টুকু আকাশ দেখা যাচ্ছে, তা তারায় ভরা। কলকাতায় থাকতে এত তারাভরা আকাশ কখনও চোখে দেখেননি সত্যব্রত। এই পিশাচপাহাড়ে পোস্টিং হওয়া ইস্তক দেখছেন। আজও দেখলেন, আর কোন অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করলেন না তিনি। কলাঝাড়গুলি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে গায়ে গা ঘেঁষে। আর কোন অস্বাভাবিকতা তো চোখে পড়ছে না। তাহলে কি ওরা ধরে নিয়েছে যে, নুনিয়া এখানে নেই? তা-না-হলে, সাইকেল মাহাতো হলে সে এদিকেই আসত আগে। কারণ, ডাক্তারকে সে সবচেয়ে ভয় পায়। সবার ঊর্দ্ধে গলা তুলে কথা বলতে সত্যব্রতই ফিটেস্ট ক্যান্ডিডেট। তাছাড়া নুনিয়াকে যে তিনি ভালোবাসেন, এটি তো মিথ্যে নয়। নুনিয়াও সেটা বোঝে, জানে। অতএব তার পক্ষেও এখানে ছুটে আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আর সে এলে স্নেহ-ভালোবাসার খাতিরে সত্যব্রত তাকে রক্ষা করার জন্য নিজের কাছেই লুকিয়ে রাখবেন, এটাই স্বাভাবিক। যারা নুনিয়াকে অপহরণ করে নিয়ে যেতে তৎপর, তারা নিশ্চয়ই এ-সব খবরও ভালোই রাখে।
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫০: রোজই দেখি আলাস্কা পর্বতশৃঙ্গের বাঁ দিকের চূড়া থেকে সূর্য উঠতে

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৯: উদ্বোধনের ঠাকুরঘরে মা সারদার সঙ্গে স্বামী অরূপানন্দের কথোপকথন
নুনিয়া ঠিকই বলেছে, এখানে ওদের আসার সম্ভাবনা ষোলো আনা। এবং সে-জন্য নিশ্চয়ই কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না তারা। কিন্তু সেটাই হয়েছে মুশকিল। দু’দিন সময় পাওয়া গেলে নাহয় ধীরেসুস্থে নুনিয়াকে অন্য কোথাও নিশ্চিত কোন শেলটারে রেখে আসার ব্যবস্থা করতে পারতেন তিনি। কিন্তু আজ রাতটুকুও তো নয়, আসলে তো সামান্য এক-আধ ঘণ্টা, যা করতে হবে এর মধ্যেই করতে হবে। কিন্তু করতে তো হবে কিছু একটা, নাহলে তো ওই মেয়েকে বাঁচানো মুশকিল হয়ে যাবে। তিনি নিজে ডাক্তারি করতে পারেন, সত্যসন্ধানের পিছনে ছুটতেও পারেন, কিন্তু গুণ্ডা-বদমাশের সঙ্গে লড়তে তো পারবেন না। সুতরাং নুনিয়াকে যদি তারা নিয়ে যেতে আসে, তিনি অসহায়ের মতো তাকিয়ে-তাকিয়ে দেখবেন হয়তো, আর কিছুই করতে পারবেন না!
হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে বাতাসে অক্ষমের ঘুষি মারেন তিনি। কিছু একটা করতে হবে। লুকাতে হবে নুনিয়াকে। কিন্তু কোথায় লুকাবেন তাকে ? মনে মনে পথ হাতড়াচ্ছিলেন সত্যব্রত। নুনিয়া ও-পাশের ঘরে বসে আছে। হয়তো ভয়ে সিঁটিয়ে আছে। যে মেয়েটি সারাদিন জঙ্গলের এপাশ ওপাশ করে ভয়ডরহীন ভাবে, তাকে যে ও-ভাবে বসে থাকতে হচ্ছে, সেটা দেখেই কষ্ট হচ্ছে সত্যব্রতর। কিন্তু কী করবেন তিনি এবার ? উদ্বেগে মাথার চুল ছিঁড়তে বাকি রাখেন তিনি। সময় বয়ে যাচ্ছে। যা করতে হবে দ্রুত করতে হবে। ভাবতে থাকেন সত্যব্রত। নিজেই একের পর এক পন্থা ভাবেন, আবার নিজেই তা বাতিল করে দেন। মাথা নাড়েন। নুনিয়া এরই মধ্যে একবার উঠে এসে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ভয়ে ভয়ে চাপা গলায় ডেকেছিল তাঁকে, “ডক্টর!”
সত্যব্রত জবাব দেননি। তিনি তখন চিন্তার গভীরে ডুব দিয়েছেন অরূপরতনের আশায়।
আবারও নুনিয়া ডেকেছে, “ডক্টর?”
এ বার সত্যব্রত পিছনে ঘুরে তাকিয়েছেন। তারপর নিজের ঠোঁটে আঙুল রেখে নুনিয়াকে কোন কথা বলতে নিষেধ করেছেন। নুনিয়া একবার মৃদু গলায় বলল, “ডক্টর, আমার মায়ের কথা মনে পড়ছে…!” বলে আবার ভিতরে চলে গেল।
হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে বাতাসে অক্ষমের ঘুষি মারেন তিনি। কিছু একটা করতে হবে। লুকাতে হবে নুনিয়াকে। কিন্তু কোথায় লুকাবেন তাকে ? মনে মনে পথ হাতড়াচ্ছিলেন সত্যব্রত। নুনিয়া ও-পাশের ঘরে বসে আছে। হয়তো ভয়ে সিঁটিয়ে আছে। যে মেয়েটি সারাদিন জঙ্গলের এপাশ ওপাশ করে ভয়ডরহীন ভাবে, তাকে যে ও-ভাবে বসে থাকতে হচ্ছে, সেটা দেখেই কষ্ট হচ্ছে সত্যব্রতর। কিন্তু কী করবেন তিনি এবার ? উদ্বেগে মাথার চুল ছিঁড়তে বাকি রাখেন তিনি। সময় বয়ে যাচ্ছে। যা করতে হবে দ্রুত করতে হবে। ভাবতে থাকেন সত্যব্রত। নিজেই একের পর এক পন্থা ভাবেন, আবার নিজেই তা বাতিল করে দেন। মাথা নাড়েন। নুনিয়া এরই মধ্যে একবার উঠে এসে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ভয়ে ভয়ে চাপা গলায় ডেকেছিল তাঁকে, “ডক্টর!”
সত্যব্রত জবাব দেননি। তিনি তখন চিন্তার গভীরে ডুব দিয়েছেন অরূপরতনের আশায়।
আবারও নুনিয়া ডেকেছে, “ডক্টর?”
এ বার সত্যব্রত পিছনে ঘুরে তাকিয়েছেন। তারপর নিজের ঠোঁটে আঙুল রেখে নুনিয়াকে কোন কথা বলতে নিষেধ করেছেন। নুনিয়া একবার মৃদু গলায় বলল, “ডক্টর, আমার মায়ের কথা মনে পড়ছে…!” বলে আবার ভিতরে চলে গেল।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯২: দুর্গা টুনটুনি

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৮: দুর্গম গিরি কান্তার ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’
সত্যব্রত অন্য কিছু উপায় বার করা যায় কি-না, সে-কথাই চিন্তা করছিলেন। নুনিয়ার শেষ কথায় হঠাৎ বিদ্যুৎচমকের মতো মনে পড়ে গেল তাঁর এক সহজ কিন্তু তুলনায় কম উদ্বেগের সমাধান। একটা ফোন করতে হবে একজনকে, যাকে সত্যব্রত ভরসা করেন, হয়তো এই মুহূর্তে একমাত্র তিনিই চাইলে রক্ষা করতে পারবেন নুনিয়াকে। ফোনটা তুলে সেজন্য নির্দিষ্ট নাম্বার ডায়াল করে তিনি। রাত যদিও এখন অনেক এবং এত রাতে কাউকে ফোন করাটা শোভনীয় নয়, বিশেষ করে সাধারণ মানুষকে, কিন্তু আজ তিনি নিরুপায়।
ডায়াল করলেও প্রথমে ফোনটা ধরল না কেউ। সত্যব্রত পাগলার মতো মাথা নাড়লেন। এত রাতে নিশ্চয়ই পরিশ্রান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। কিন্তু হতাশ হলে চলবে না। যতক্ষণ-না ফোন তুলছেন, ততক্ষণ ফোন করেই যাবেন তিনি। নাহ্, দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় ফোনটা তুলে নিলেন তিনি। তারপর এত রাতে সত্যব্রতর গলার আওয়াজ পেয়ে ঘাবড়ে গেলেন রীতিমতো। জিজ্ঞাসা করলেন, “কিছু হয়েছে আপনার? এত রাতে তো আপনি করেন না কোনওদিন। কোন এমার্জেন্সি না-কি?”
“নাহ্। একটা বিপদে পড়ে আপনার স্মরণাপন্ন হয়েছি। আপনাকে উদ্ধার করতে হবে!”
সত্যব্রতর গলার স্বরে আকুলতা দেখে এবং কথাগুলি শুনে ওপ্রান্তে যনি ফোন ধরেছেন, তিনি বললেন, “কী ব্যাপারে বলুন তো ডাক্তারবাবু? কিছু হয়েছে কি?”
কোনওরকম ভণিতা না করেই নুনিয়ার বিষয়টা অতি সংক্ষেপে বললেন তিনি। নুনিয়াকেও অপরপ্রান্ত ভালই চেনেন। যতদূর সংক্ষেপে বলা যায়, সেভাবেই বললেন সত্যব্রত। সময় বয়ে যাচ্ছে। যে-কোনও মুহূর্তেই দৃশ্যপট বদলে যেতে পারে।
ডায়াল করলেও প্রথমে ফোনটা ধরল না কেউ। সত্যব্রত পাগলার মতো মাথা নাড়লেন। এত রাতে নিশ্চয়ই পরিশ্রান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। কিন্তু হতাশ হলে চলবে না। যতক্ষণ-না ফোন তুলছেন, ততক্ষণ ফোন করেই যাবেন তিনি। নাহ্, দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় ফোনটা তুলে নিলেন তিনি। তারপর এত রাতে সত্যব্রতর গলার আওয়াজ পেয়ে ঘাবড়ে গেলেন রীতিমতো। জিজ্ঞাসা করলেন, “কিছু হয়েছে আপনার? এত রাতে তো আপনি করেন না কোনওদিন। কোন এমার্জেন্সি না-কি?”
“নাহ্। একটা বিপদে পড়ে আপনার স্মরণাপন্ন হয়েছি। আপনাকে উদ্ধার করতে হবে!”
সত্যব্রতর গলার স্বরে আকুলতা দেখে এবং কথাগুলি শুনে ওপ্রান্তে যনি ফোন ধরেছেন, তিনি বললেন, “কী ব্যাপারে বলুন তো ডাক্তারবাবু? কিছু হয়েছে কি?”
কোনওরকম ভণিতা না করেই নুনিয়ার বিষয়টা অতি সংক্ষেপে বললেন তিনি। নুনিয়াকেও অপরপ্রান্ত ভালই চেনেন। যতদূর সংক্ষেপে বলা যায়, সেভাবেই বললেন সত্যব্রত। সময় বয়ে যাচ্ছে। যে-কোনও মুহূর্তেই দৃশ্যপট বদলে যেতে পারে।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৯: বেশি ঘুম শরীরের পক্ষে ভালো?

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৫: বনবাসে অর্জুনের অসংযত জীবন, আশ্রয়দাতার বিশ্বাসভঙ্গ কি অনুসরণযোগ্য আচরণ?
ও-প্রান্ত কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। সত্যব্রত চিন্তিত হয়ে বললেন, “কী হল ? চুপ করে গেলেন কেন ? আপনি কি বিপদের কথা চিন্তা করে ভয় পাচ্ছেন ? আমার কিন্তু ধারণা, ওরা এখানে হানা দিলেও আপনার কথা ওদের মাথাতেও আসবে না। আপনি আমার সিনিয়র, আপনাকে ভরসা করি বলে আপনাকেই কেবল এই সাহায্য চাইছি। থানায় নিয়ে গিয়ে ওকে আজকের রাতের জন্য কোথাও রাখলেও ও সেফ নয়!”
ও-প্রান্ত বলল, “নাহ্ ডক্টর, আমি নিজের মৃত্যুভয় করি না। আমি ওই দুর্ভাগা মেয়েটির কথা ভাবছিলাম। মা-বাপ নেই, একটু খেয়ালি, কিন্তু কারুর সাতে-পাঁচে থাকে না, কারুর কোন ক্ষতি কোনদিন করেছে বলে শুনিনি, তাকে অপহরণ করে কার কী লাভ, সেটাই ভাবছিলাম। আমি ওকে ঠিক লুকিয়ে রাখবো। চিন্তা করবেন না। কিন্তু কীভাবে ওকে নিয়ে আসব, সেটাই বুঝতে পারছি না! সামনের দিক দিয়ে আনতে গেলে অনেকে জেনে যেতে পারে, আবার পিছনের দিক দিয়ে আনতে গেলে যদি ওদের চোখে পড়ে যায়?”
সত্যব্রত খুব তাড়াতাড়ি বিষয়টি ভাবলেন। তারপর বললেন, “আমি চাইছি পিছনের দত্রজা দিয়েই নুনিয়াকে নিয়ে যান। তার আগে আমি বাইরে বেরুবো। ওরা যদি ঝোপেঝাড়ে কোথাও লুকিয়ে থাকে, তাহলে সন্দেহের বশে আমাকে অ্যাটাক করবেই। আর যদি না-করে, তাহলে নুনিয়া বেরিয়ে আসব এবং আপনি নুনিয়াকে নিয়ে যাবেন!”
সত্যব্রতর পরিকল্পনাটি মনঃপূত হল না ও-প্রান্তের। বললেন, “আপনি কি নিজের কথা একবারও ভাবছেন না ডক্টর? ওরা যদি পিছনে কোথাও লুকিয়ে থাকে, তাহলে আক্রমণ করবেই করবে। এই শীতল বসন্তরাতে আপনি হাওয়া খেতে বেরিয়েছেন, এই তত্ত্ব ওরা কিছুতেই বিশ্বাস করবে না। সেক্ষেত্রে আপনার যদি কিছু হিওয়ে যায়…”
সত্যব্রত অস্থির হয়ে বললেন, “আমার কিছু হয় হোক। এই মেয়েটিকে বাঁচানো কর্তব্য আমাদের সকলের। নুনিয়া ওদের প্রধান মাথাব্যথা এখন। নুনিয়া বেঁচে থাকলে ওরা হয়তো গভীর গাড্ডায় পড়ে যাবে। অথচ নুনিয়া ইনোসেন্ট। ও জানেও না যে ও কী জানে! কিন্তু সে-কথা ওরা বিশ্বাস করলে হয়! যাক্ গে, আমি বেরুচ্ছি, আপনিও যত তাড়াতাড়ি আসুন। আশেপাশে একটু চোখ-কান খোলা রাখবেন। আপনাকেও সুস্থ থাকতে হবে। রাখছি। প্রতিটা মুহূর্ত এখন মূল্যবান। আসুন আপনি!” —চলবে।
ও-প্রান্ত বলল, “নাহ্ ডক্টর, আমি নিজের মৃত্যুভয় করি না। আমি ওই দুর্ভাগা মেয়েটির কথা ভাবছিলাম। মা-বাপ নেই, একটু খেয়ালি, কিন্তু কারুর সাতে-পাঁচে থাকে না, কারুর কোন ক্ষতি কোনদিন করেছে বলে শুনিনি, তাকে অপহরণ করে কার কী লাভ, সেটাই ভাবছিলাম। আমি ওকে ঠিক লুকিয়ে রাখবো। চিন্তা করবেন না। কিন্তু কীভাবে ওকে নিয়ে আসব, সেটাই বুঝতে পারছি না! সামনের দিক দিয়ে আনতে গেলে অনেকে জেনে যেতে পারে, আবার পিছনের দিক দিয়ে আনতে গেলে যদি ওদের চোখে পড়ে যায়?”
সত্যব্রত খুব তাড়াতাড়ি বিষয়টি ভাবলেন। তারপর বললেন, “আমি চাইছি পিছনের দত্রজা দিয়েই নুনিয়াকে নিয়ে যান। তার আগে আমি বাইরে বেরুবো। ওরা যদি ঝোপেঝাড়ে কোথাও লুকিয়ে থাকে, তাহলে সন্দেহের বশে আমাকে অ্যাটাক করবেই। আর যদি না-করে, তাহলে নুনিয়া বেরিয়ে আসব এবং আপনি নুনিয়াকে নিয়ে যাবেন!”
সত্যব্রতর পরিকল্পনাটি মনঃপূত হল না ও-প্রান্তের। বললেন, “আপনি কি নিজের কথা একবারও ভাবছেন না ডক্টর? ওরা যদি পিছনে কোথাও লুকিয়ে থাকে, তাহলে আক্রমণ করবেই করবে। এই শীতল বসন্তরাতে আপনি হাওয়া খেতে বেরিয়েছেন, এই তত্ত্ব ওরা কিছুতেই বিশ্বাস করবে না। সেক্ষেত্রে আপনার যদি কিছু হিওয়ে যায়…”
সত্যব্রত অস্থির হয়ে বললেন, “আমার কিছু হয় হোক। এই মেয়েটিকে বাঁচানো কর্তব্য আমাদের সকলের। নুনিয়া ওদের প্রধান মাথাব্যথা এখন। নুনিয়া বেঁচে থাকলে ওরা হয়তো গভীর গাড্ডায় পড়ে যাবে। অথচ নুনিয়া ইনোসেন্ট। ও জানেও না যে ও কী জানে! কিন্তু সে-কথা ওরা বিশ্বাস করলে হয়! যাক্ গে, আমি বেরুচ্ছি, আপনিও যত তাড়াতাড়ি আসুন। আশেপাশে একটু চোখ-কান খোলা রাখবেন। আপনাকেও সুস্থ থাকতে হবে। রাখছি। প্রতিটা মুহূর্ত এখন মূল্যবান। আসুন আপনি!” —চলবে।
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel): পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।