
আজ অন্ধকার প্রগাঢ়। অদ্ভুত ব্যাপার এই যে, আজ যেন ঝিঁ-ঝিঁরা হরতাল ডেকেছে। ফলে অন্ধকার যেন আরও থমথম করছে। মনে হচ্ছে, জীবন্ত কোনও কিছুর জন্য আজকের রাত নয়। পৃথিবীর সমস্ত শব্দ বুঝি আজ থেমে গেছে। গাছের পাতা পড়ার শব্দও যেন শোনা যাবে। জানালা দিয়ে যতখানি রাতের আকাশ দেখা যায়, সেখানে নীরবে জ্বলে পুড়ে মরছে নক্ষত্রেরা। আকাশের আইনও কঠোর-কঠিন, সেখানেও এই পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। বড় নক্ষত্র ছোট-ছোট নক্ষত্রদের গিলে খায়। ধ্বংস আর সৃষ্টি, লয় আর পুনর্জন্মের ধারাবাহিক মেগাসিরিয়াল অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে যেন আদি-অনাদিকাল ধরে। ছোটর কোনও প্রতিবাদ সেখানে পাত্তাই পায় না। জন্ম মুহূর্তেই যেন স্থির হয়ে গিয়েছে যে, তুমি ছোট, অতএব তোমাকে বড়র কাছে আত্মসমর্পণ করতেই হবে। সে যখনই চাইবে তার জঠরের আগুন নেভানোর জন্য তোমাকে তার খাদ্য হতেই হবে।
সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে আসলে এই খাদ্য-খাদক শৃঙ্খল ছড়িয়ে। এই পৃথিবীতে মানুষ যেমন রাগে-ক্ষোভে-লোভে-স্বভাবে মৃত্যু, ধ্বংস, অপরাহ কিংবা পাপ করে চলে, কোনও সভ্যতা-কোনও মনীষীর বাণী তাদের সেই পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে না, তেমনই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডেও একই নিয়ম। সৃষ্টি কখন চিরন্তন নয়, কিন্তু ধ্বংস চিরন্তন। কিংবা হয়তো সৃষ্টির জন্ম নেয় ধ্বংসের বীজ গর্ভে নিয়েই। আলোর গর্ভেই থাকে অন্ধকারের গোপন অঙ্কুর। নিরঙ্কুশ শুদ্ধতা বলে আদতেই কিছু হয় না। মানুষ সেই কারণেই সম্পূর্ণ ভালো কিংবা সম্পূর্ণ মন্দ হয় না। তার চরিত্রের মধ্যেও সৃষ্টির সেই আদিসত্য নিহিত। অতএব তাকে গ্রহণ করেই টিকে থাকার লড়াই করে চলি আমরা। ভয় পেয়েছ কী মরেছ! সত্যব্রত অতএব ভয় না পেয়ে জানালার দিকে এগিয়ে গেলেন এবং চেঁচিয়ে উঠলেন আবার, “কে, কে ওখানে?”
সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে আসলে এই খাদ্য-খাদক শৃঙ্খল ছড়িয়ে। এই পৃথিবীতে মানুষ যেমন রাগে-ক্ষোভে-লোভে-স্বভাবে মৃত্যু, ধ্বংস, অপরাহ কিংবা পাপ করে চলে, কোনও সভ্যতা-কোনও মনীষীর বাণী তাদের সেই পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে না, তেমনই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডেও একই নিয়ম। সৃষ্টি কখন চিরন্তন নয়, কিন্তু ধ্বংস চিরন্তন। কিংবা হয়তো সৃষ্টির জন্ম নেয় ধ্বংসের বীজ গর্ভে নিয়েই। আলোর গর্ভেই থাকে অন্ধকারের গোপন অঙ্কুর। নিরঙ্কুশ শুদ্ধতা বলে আদতেই কিছু হয় না। মানুষ সেই কারণেই সম্পূর্ণ ভালো কিংবা সম্পূর্ণ মন্দ হয় না। তার চরিত্রের মধ্যেও সৃষ্টির সেই আদিসত্য নিহিত। অতএব তাকে গ্রহণ করেই টিকে থাকার লড়াই করে চলি আমরা। ভয় পেয়েছ কী মরেছ! সত্যব্রত অতএব ভয় না পেয়ে জানালার দিকে এগিয়ে গেলেন এবং চেঁচিয়ে উঠলেন আবার, “কে, কে ওখানে?”
কেউ উত্তর দিল না। অল্পদূরের কলাগাছগুলি স্থির-নিষ্পন্দ হয়ে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তার কিছুটা দূরেই সেই পেয়ারাগাছ। তার সাদাটে গুঁড়ি অন্ধকারেও চোখে পড়ছে স্পষ্টভাবে। একটু আগেই কিছু একটা যেন বাউন্ডারিওয়ালের ওপর থেকে ঝাঁপ মেরে প্রথমে কলাগাছের ঝোপের আড়ালে, তারপর সেখান থেকে পেয়ারাগাছের পিছনে গিয়ে লুকিয়েছিল। একটু আগেও পেয়ারাগাছের গুঁড়ির পিছনে যেন একটি অবয়বের আভাস দেখতে পাচ্ছিলেন সত্যব্রত। কিন্তু এখন আর কিছু চোখে পড়ছে না।
এমনিতে হেলথসেন্টারের বাউণ্ডারিওয়ালের চারপাশে নিয়নআলো না হোক, বাল্ব থাকার কথা। কিন্তু অনেককাল হল বাল্ব খারাপ হয়ে গিয়েছে। প্রশাসনকে বলে কিছুই হয়নি। আসলে উঁচু ল্যাম্পপোস্টের উপরে উঠে বাল্ব লাগানোর জন্য যে সরঞ্জাম চাই, সেই ল্যাডার বা মই নেই হেলথসেন্টারে। থাকলে কবেই সত্যব্রত লাগিয়ে নিতেন নিজেই। সামান্য একটা বাল্ব কেনার জন্য নিশ্চয়ই বিডিওকে বা পিডব্লিউডিকে বলতেন না। কিন্তু প্রশাসনের আঠারো মাসে বছরের ধারণাটি এখন একই আছে। অতএব যেখানে আলো থাকার কথা, সেখানে এখন হাঁ করে আছে অন্ধকার। আগন্তুক কালাদেও, দুষ্কৃতিচক্রের পাঠানো খুনি কিংবা আর যে-ই হোক না কেন, এই সুযোগটা নিয়েছে।
এমনিতে হেলথসেন্টারের বাউণ্ডারিওয়ালের চারপাশে নিয়নআলো না হোক, বাল্ব থাকার কথা। কিন্তু অনেককাল হল বাল্ব খারাপ হয়ে গিয়েছে। প্রশাসনকে বলে কিছুই হয়নি। আসলে উঁচু ল্যাম্পপোস্টের উপরে উঠে বাল্ব লাগানোর জন্য যে সরঞ্জাম চাই, সেই ল্যাডার বা মই নেই হেলথসেন্টারে। থাকলে কবেই সত্যব্রত লাগিয়ে নিতেন নিজেই। সামান্য একটা বাল্ব কেনার জন্য নিশ্চয়ই বিডিওকে বা পিডব্লিউডিকে বলতেন না। কিন্তু প্রশাসনের আঠারো মাসে বছরের ধারণাটি এখন একই আছে। অতএব যেখানে আলো থাকার কথা, সেখানে এখন হাঁ করে আছে অন্ধকার। আগন্তুক কালাদেও, দুষ্কৃতিচক্রের পাঠানো খুনি কিংবা আর যে-ই হোক না কেন, এই সুযোগটা নিয়েছে।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০১: সরষের মধ্যে ভূত

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-১৯: আপনামাঝে শক্তি ধরো নিজেরে করো জয়
তিনি কি অন্ধকারে টর্চ নিয়ে বেরোবেন? না-কি কাউকে ডাকবেন? সত্যব্রত ভাবছিলেন মনে মনে, তাঁর ঠিক কী করা উচিত। যদি কেউ তাঁর ক্ষতি করার জন্য এসে থাকে, তাহলে তিনি বাইরে বেরোন কিংবা না-বেরোন, তাতে তার কিছু যায় আসে-যাবে না। সে আক্রমণের চেষ্টা করবেই করবে। অতএব ঘরের মধ্যে থেকে সেই অজানা আততায়ীর হাত থেকে আত্মরক্ষা করা সম্ভব না-ও হতে পারে। আবার বাইরে বেরোনো মানেই যে হঠকারিতা হয়ে যাবে, সে-কথাও সত্যব্রত জানেন ভালো করেই। আততায়ী নিশ্চয়ই খালি হাতে আসেনি।
এখানে হত্যার পর হত্যার যে প্যাটার্ন তিনি দেখেছেন, তাতে আততায়ীর হাতে গুলি-বন্ধুকের বদলে মাংসকাটা চপার থাকলে তিনি অবাক হবেন না। চপার দিয়ে আক্রমণ করে প্রথমে শিকারকে ঘায়েল করে দাও, তারপর তার মাথাটা কেটে নাও। তারপর উধাও হয়ে যাও। লোকে ভয়েই আর অন্য কিছু ভাবতে পারবে না, এমনকি পুলিশও না। সকলেই ভাববে, কালাদেওই বুঝি এই হত্যার পিছনে। কিন্তু কেউই একবার ভাবছে না, কালাদেও দেবতা হোক বা দানব, তার পক্ষে এইভাবে সমান মাপে গলাটা কেটে খেয়ে নেওয়া অসম্ভব ব্যাপার। তাছাড়া সেক্ষেত্রে তাকে নিশ্চয়ই মাথাটা ভেঙে খেতে হয়েছে। তা করতে গেলে স্পটে মাথার ঘিলু ইত্যাদির কিছু ট্রেস থাকা অনিবার্য।
কিন্তু সত্যব্রত নিজে যতদূর খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, কোথাও তেমন কিছুই ছিল না। হেলথ্সেন্টারের প্রাথমিক রিপোর্টে তিনি গলা কেটে খুন করার সম্ভাবনার কথা লিখলেও, পুলিশ থেকে স্থানীয় প্রশাসন কেউ-ই সে-কথায় আমল দেয় নি। সকলের এক কথা, কালাদেও আবার জেগে উঠেছেন এবং কোন কারণে ক্রুদ্ধ হয়েছেন বলেই এইরকম ঘটনা দিনের পর দিন বাড়ছে। কেউ একবারও ভাবছে না, এই শতাব্দীর পর শতাব্দী কালাদেও চুপ করে থাকলেও, হঠাৎ তার এই জেগে ওঠার পিছনে কোন সঙ্গত কারণ নেই। এখানেই খটকা লাগছে যে, এর পিছনে দৈবী বা আধিভৌতিক কোন কিছু নেই, আছে বিশুদ্ধ এক বা একাধিক মানুষের শয়তানি বা কারসাজি।
সত্যব্রত জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ভালো করে দেখবার চেষ্টা করলেন। জানালায় গরাদের সঙ্গে নেট লাগানো। মশা এবং তার চেয়েও বেশি বিড়াল ইত্যাদিকে আটকানোর জন্য। মনোরমা লাগিয়েছিলেন। যদিও জানালায় এ-সমস্ত নেট ইত্যাদি লাগাতে সত্যব্রত নিজে তেমন পছন্দ করেন না। যে-জানালার জন্মই হয়েছে আলো-বাতাস ঢোকার পথ হিসেবে, সেই পথকে রুদ্ধ করে এমন-কিছুই সত্যব্রতর পছন্দ নয়। কিন্তু পারিবারিক শান্তির কথা ভেবেই মনোরমাকে তিনি বাধা দেননি। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এল তাঁর ভিতর থেকে। এত কিছু কম্প্রোমাইজ করেও কি মনোরমাকে তিনি ধরে রাখতে পারলেন?
এখানে হত্যার পর হত্যার যে প্যাটার্ন তিনি দেখেছেন, তাতে আততায়ীর হাতে গুলি-বন্ধুকের বদলে মাংসকাটা চপার থাকলে তিনি অবাক হবেন না। চপার দিয়ে আক্রমণ করে প্রথমে শিকারকে ঘায়েল করে দাও, তারপর তার মাথাটা কেটে নাও। তারপর উধাও হয়ে যাও। লোকে ভয়েই আর অন্য কিছু ভাবতে পারবে না, এমনকি পুলিশও না। সকলেই ভাববে, কালাদেওই বুঝি এই হত্যার পিছনে। কিন্তু কেউই একবার ভাবছে না, কালাদেও দেবতা হোক বা দানব, তার পক্ষে এইভাবে সমান মাপে গলাটা কেটে খেয়ে নেওয়া অসম্ভব ব্যাপার। তাছাড়া সেক্ষেত্রে তাকে নিশ্চয়ই মাথাটা ভেঙে খেতে হয়েছে। তা করতে গেলে স্পটে মাথার ঘিলু ইত্যাদির কিছু ট্রেস থাকা অনিবার্য।
কিন্তু সত্যব্রত নিজে যতদূর খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, কোথাও তেমন কিছুই ছিল না। হেলথ্সেন্টারের প্রাথমিক রিপোর্টে তিনি গলা কেটে খুন করার সম্ভাবনার কথা লিখলেও, পুলিশ থেকে স্থানীয় প্রশাসন কেউ-ই সে-কথায় আমল দেয় নি। সকলের এক কথা, কালাদেও আবার জেগে উঠেছেন এবং কোন কারণে ক্রুদ্ধ হয়েছেন বলেই এইরকম ঘটনা দিনের পর দিন বাড়ছে। কেউ একবারও ভাবছে না, এই শতাব্দীর পর শতাব্দী কালাদেও চুপ করে থাকলেও, হঠাৎ তার এই জেগে ওঠার পিছনে কোন সঙ্গত কারণ নেই। এখানেই খটকা লাগছে যে, এর পিছনে দৈবী বা আধিভৌতিক কোন কিছু নেই, আছে বিশুদ্ধ এক বা একাধিক মানুষের শয়তানি বা কারসাজি।
সত্যব্রত জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ভালো করে দেখবার চেষ্টা করলেন। জানালায় গরাদের সঙ্গে নেট লাগানো। মশা এবং তার চেয়েও বেশি বিড়াল ইত্যাদিকে আটকানোর জন্য। মনোরমা লাগিয়েছিলেন। যদিও জানালায় এ-সমস্ত নেট ইত্যাদি লাগাতে সত্যব্রত নিজে তেমন পছন্দ করেন না। যে-জানালার জন্মই হয়েছে আলো-বাতাস ঢোকার পথ হিসেবে, সেই পথকে রুদ্ধ করে এমন-কিছুই সত্যব্রতর পছন্দ নয়। কিন্তু পারিবারিক শান্তির কথা ভেবেই মনোরমাকে তিনি বাধা দেননি। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এল তাঁর ভিতর থেকে। এত কিছু কম্প্রোমাইজ করেও কি মনোরমাকে তিনি ধরে রাখতে পারলেন?
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১০: মানুষের পাশে, মানুষের কাছে

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১৪: ‘…জীবন খুঁজে পাবি ছুটে ছুটে আয়’, লরেন্স ও ফ্রিডা/২
জানালার নেটে প্রায় মুখ ঠেকিয়ে দেখেও কিছু দেখতে পেলেন না তিনি। মোবাইলটা হাতে ছিল। সেটার টর্চ জ্বেলে এদিক-ওদিক ফেললেন, কিন্তু কিছুই নেই। তবে কি মনের ভুল? আসলে হয়তো কোনও গাছের ডাল বা আর কিছু পড়েছিল ওপর থেকে কলাগাছের ঝাড়ের উপরে। সেই শব্দ শুনেই তাঁর মনে হয়েছিল, কেউ যেন লাফিয়ে পড়ল। আর বাকিটুকু ধারাবাহিকভাবে তাঁর মন কল্পনা করে নিয়েছে। মনের দেখাকেই তিনি বাস্তবের দেখা বলে মনে করছেন।
সত্যব্রত ভাবলেন, মনের ভুল না হলে এই যে কিছুক্ষণ তিনি জানালায় মুখ ঠেকিয়ে দেখবার চেষ্টা করছিলেন, সেই সুযোগেই তো আততায়ী কেউ উপস্থিত থাকলে, সে টার্গেট করতে পারতো। কিন্তু তা যখন হয়নি, তখন আগাগোড়াই মনের কল্পনা। আসলে লালবাজারের গোয়েন্দা অফিসার আর সুদীপ্তবাবুর সঙ্গে আজকের কথাবলার ফলে মনের মধ্যে সর্বদাই ঘুরপাক খাচ্ছে কালাদেও-রহস্য আর বুধনের মৃত্যুর পিছনের রহস্যের কথা। সেই কারণেই এই রজ্জুতে সর্পভ্রম। নিজেকেই হেসে উড়িয়ে দিয়ে সত্যব্রত সবে ঘুরেছেন, এমনসময় জানালায় একটা শব্দ হল। কেউ ডাকল যেন তাঁকে। ফ্যাঁসফেঁসে গলায়, “ডাক্তার!” চকিতে ঘুরে তাকালেন তিনি। বিস্ফারিত চোখে চেয়ে দেখলেন, জানালার নেটে মুখ ঠেকিয়ে অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাঁফাচ্ছে নুনিয়া।
“নুনিয়া তুই? এত রাতে? এভাবে? কী করছিস ওখানে? এখন বসন্তকাল। সাপেরা বেরিয়ে আসছে শীতঘুম ছেড়ে। হেলথ্সেন্টারের বাগান বলে তারা এড়িয়ে চলবে, এমন ভাবার কোন কারণ নেই। আর তুই কি-না…!”
“আমাকে বাঁচাও!” নুনিয়া কেবল এইটুকু বলতে পারল। মারাত্মক হাঁফাচ্ছিল সে।
“কী হয়েছে?” বলতে গিয়েও সত্যব্রত থেমে গেলেন। আগে মেয়েটিকে ঘরের মধ্যে নিয়ে আসা প্রয়োজন। যারা নুনিয়ার ক্ষতি করতে চায়, যাদের জন্য নুনিয়া এখন জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে প্রাণ বাঁচানোর আর্জি জানাচ্ছে, তারা যে নুনিয়ার পিছু-পিছু এখানে এক্ষুনি এসে পড়বে না, তা কে বলতে পারে? সুতরাং সবার আগে নুনিয়া যাতে ঘরের ভিতর ঢুকতে পারে, সেই কাজটিই তাঁকে করতে হবে।
“তুই ঘুরে সামনের দরজা দিয়ে আয়!” সত্যব্রত ফিসফিস করে বললেন।
নুনিয়া কোন প্রত্যুত্তর না দিয়ে জানালা থেকে সরে গেল।
ঘরে ঢোকার পর সে সতর্ক চোখে চারদিকে তাকাল। যেন এখানে শত্রুরা লুকিয়ে আছে ঘরের ভিতর কোথাও।
সত্যব্রত তার মনোভাব বুঝতে পেরে তাকে আশ্বস্ত করলেন, “ভয় নেই তোর। তোর বিপদ ঘটাবে এমন কেউ এই ঘরের মধ্যে লুকিয়ে বসে নেই!”
সত্যব্রত ভাবলেন, মনের ভুল না হলে এই যে কিছুক্ষণ তিনি জানালায় মুখ ঠেকিয়ে দেখবার চেষ্টা করছিলেন, সেই সুযোগেই তো আততায়ী কেউ উপস্থিত থাকলে, সে টার্গেট করতে পারতো। কিন্তু তা যখন হয়নি, তখন আগাগোড়াই মনের কল্পনা। আসলে লালবাজারের গোয়েন্দা অফিসার আর সুদীপ্তবাবুর সঙ্গে আজকের কথাবলার ফলে মনের মধ্যে সর্বদাই ঘুরপাক খাচ্ছে কালাদেও-রহস্য আর বুধনের মৃত্যুর পিছনের রহস্যের কথা। সেই কারণেই এই রজ্জুতে সর্পভ্রম। নিজেকেই হেসে উড়িয়ে দিয়ে সত্যব্রত সবে ঘুরেছেন, এমনসময় জানালায় একটা শব্দ হল। কেউ ডাকল যেন তাঁকে। ফ্যাঁসফেঁসে গলায়, “ডাক্তার!” চকিতে ঘুরে তাকালেন তিনি। বিস্ফারিত চোখে চেয়ে দেখলেন, জানালার নেটে মুখ ঠেকিয়ে অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাঁফাচ্ছে নুনিয়া।
“নুনিয়া তুই? এত রাতে? এভাবে? কী করছিস ওখানে? এখন বসন্তকাল। সাপেরা বেরিয়ে আসছে শীতঘুম ছেড়ে। হেলথ্সেন্টারের বাগান বলে তারা এড়িয়ে চলবে, এমন ভাবার কোন কারণ নেই। আর তুই কি-না…!”
“আমাকে বাঁচাও!” নুনিয়া কেবল এইটুকু বলতে পারল। মারাত্মক হাঁফাচ্ছিল সে।
“কী হয়েছে?” বলতে গিয়েও সত্যব্রত থেমে গেলেন। আগে মেয়েটিকে ঘরের মধ্যে নিয়ে আসা প্রয়োজন। যারা নুনিয়ার ক্ষতি করতে চায়, যাদের জন্য নুনিয়া এখন জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে প্রাণ বাঁচানোর আর্জি জানাচ্ছে, তারা যে নুনিয়ার পিছু-পিছু এখানে এক্ষুনি এসে পড়বে না, তা কে বলতে পারে? সুতরাং সবার আগে নুনিয়া যাতে ঘরের ভিতর ঢুকতে পারে, সেই কাজটিই তাঁকে করতে হবে।
“তুই ঘুরে সামনের দরজা দিয়ে আয়!” সত্যব্রত ফিসফিস করে বললেন।
নুনিয়া কোন প্রত্যুত্তর না দিয়ে জানালা থেকে সরে গেল।
ঘরে ঢোকার পর সে সতর্ক চোখে চারদিকে তাকাল। যেন এখানে শত্রুরা লুকিয়ে আছে ঘরের ভিতর কোথাও।
সত্যব্রত তার মনোভাব বুঝতে পেরে তাকে আশ্বস্ত করলেন, “ভয় নেই তোর। তোর বিপদ ঘটাবে এমন কেউ এই ঘরের মধ্যে লুকিয়ে বসে নেই!”
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৬: সুন্দরবনের পাখি — কুবো

যে গান যায়নি ভোলা— প্রাক জন্মদিনে তাঁর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য…/১
নুনিয়া চেয়ারে বসে-বসে হাঁফাতে লাগল। তারপর কোনরকমে বলল, “জল…”
সত্যব্রত লজ্জিত হলেন। নুনিয়া ঘরে ঢোকার পরেই তাকে জল দেওয়া উচিত ছিল তাঁর। এর জন্য ডাক্তার হওয়ার দরকার পড়ে না। মা-ঠাকুমারা অনেক আগে থেকেই এইসমস্ত ম্যানারস্গুলি জেনে এসেছেন এবং পালনও করে এসেছেন। একালেই আমরা ভুলে গেছি এ-সব। কিচেনে গিয়ে কাঁচের গ্লাস এনে, তাতে ওয়াটারপিউরিফায়ার থেকে জল ভরে এগিয়ে দিতেই নুনিয়া নিঃশেষে সেই জল শেষ করে দিল।
“আর দেবো?”
“না,” মাথা নেড়ে বলল নুনিয়া। তারপরেই চকিতে তাকাল খোলা জানালার দিকে।
সত্যব্রতও তাকে অনুসরণ করে তাকালেন জানালার দিকে। কেউ নেই। নুনিয়ার ভয় সঙ্গত। তিনি তাকে আশ্বস্ত করার জন্য বললেন, “তুই ভয় পাচ্ছিস তো, কেউ তোকে ওই জানালা দিয়ে দেখে ফেলবে। দাঁড়া, জানালাটা বন্ধ করে দিই।” বলে জানালার দিকে এগুতেই নুনিয়া তাঁর হাত চেপে ধরল।
“কী হল রে ?” অবাক গলায় সত্যব্রত জিজ্ঞাসা করলেন।
“জানালা বন্ধ করো না। ওরা সন্দেহ করবে!” নুনিয়া ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় চাপা সুরে বলল।
“মানে?”
“এখানে এই সময় যতই ঠান্ডা থাকুক না কেন রাতের দিকে, সকলেই এক-আধটা জানালা খুলে রাখে। তুমিও নিশ্চয়ই রাখো। ওদের নেটওয়ার্ক কিন্তু খুব ভালো। সবার সব খবর রাখে। এখন আজ তুমি সেই জানালা না খুলে, পুরোই বন্ধ করে রেখেছ দেখলে, ওদের আর বুঝতে বাকি থাকবে না যে কিছু একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার ঘটেছে। ওরা তখন দরজা ভেঙে ফেলতেও দ্বিধা করবে না!” নুনিয়ার কথাবার্তা যুক্তিসঙ্গত এবং মার্জিত। ভাবাই যায় না, এই মেয়েকে সবাই গেছো, জংলি, দুর্বিনীত এবং কেউ-কেউ ডাইনি ভাবে!
সত্যব্রত বলল, “তারা কারা?”
নুনিয়া বলল, “জানি না। সাইকেল মাহাতো আছে, এটুকু জানি। আর কে-কে আছে, তা খুঁজবে লালবাজারের পুলিশ-দাদা। আমি তো আর পুলিশ নই যে খুঁজবো?”
“কী হয়েছে বল তো? কিছু খাবি?”
“না, আমাদের হোস্টেলে ডিনার খেয়েছিলাম তো। এখনও খিদে পাওয়ার মতো কিছুই হয়নি। তুমি খেতে চাইলে খাও। ভয় নেই, আমি লোভ দেবো না। আমাকে অনেকে ডাইনি বলে আমি জানি আর ডাইনিদের নজর পড়লে সেই খাবার না-কি পয়জনাস হয়ে যায়, তা-ও জানি আমি। কিন্তু আমি যা ভাবছ, তা নই, সুতরাং তোমার কোন ক্ষতি হবে না।”
সত্যব্রত লজ্জিত হলেন। নুনিয়া ঘরে ঢোকার পরেই তাকে জল দেওয়া উচিত ছিল তাঁর। এর জন্য ডাক্তার হওয়ার দরকার পড়ে না। মা-ঠাকুমারা অনেক আগে থেকেই এইসমস্ত ম্যানারস্গুলি জেনে এসেছেন এবং পালনও করে এসেছেন। একালেই আমরা ভুলে গেছি এ-সব। কিচেনে গিয়ে কাঁচের গ্লাস এনে, তাতে ওয়াটারপিউরিফায়ার থেকে জল ভরে এগিয়ে দিতেই নুনিয়া নিঃশেষে সেই জল শেষ করে দিল।
“আর দেবো?”
“না,” মাথা নেড়ে বলল নুনিয়া। তারপরেই চকিতে তাকাল খোলা জানালার দিকে।
সত্যব্রতও তাকে অনুসরণ করে তাকালেন জানালার দিকে। কেউ নেই। নুনিয়ার ভয় সঙ্গত। তিনি তাকে আশ্বস্ত করার জন্য বললেন, “তুই ভয় পাচ্ছিস তো, কেউ তোকে ওই জানালা দিয়ে দেখে ফেলবে। দাঁড়া, জানালাটা বন্ধ করে দিই।” বলে জানালার দিকে এগুতেই নুনিয়া তাঁর হাত চেপে ধরল।
“কী হল রে ?” অবাক গলায় সত্যব্রত জিজ্ঞাসা করলেন।
“জানালা বন্ধ করো না। ওরা সন্দেহ করবে!” নুনিয়া ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় চাপা সুরে বলল।
“মানে?”
“এখানে এই সময় যতই ঠান্ডা থাকুক না কেন রাতের দিকে, সকলেই এক-আধটা জানালা খুলে রাখে। তুমিও নিশ্চয়ই রাখো। ওদের নেটওয়ার্ক কিন্তু খুব ভালো। সবার সব খবর রাখে। এখন আজ তুমি সেই জানালা না খুলে, পুরোই বন্ধ করে রেখেছ দেখলে, ওদের আর বুঝতে বাকি থাকবে না যে কিছু একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার ঘটেছে। ওরা তখন দরজা ভেঙে ফেলতেও দ্বিধা করবে না!” নুনিয়ার কথাবার্তা যুক্তিসঙ্গত এবং মার্জিত। ভাবাই যায় না, এই মেয়েকে সবাই গেছো, জংলি, দুর্বিনীত এবং কেউ-কেউ ডাইনি ভাবে!
সত্যব্রত বলল, “তারা কারা?”
নুনিয়া বলল, “জানি না। সাইকেল মাহাতো আছে, এটুকু জানি। আর কে-কে আছে, তা খুঁজবে লালবাজারের পুলিশ-দাদা। আমি তো আর পুলিশ নই যে খুঁজবো?”
“কী হয়েছে বল তো? কিছু খাবি?”
“না, আমাদের হোস্টেলে ডিনার খেয়েছিলাম তো। এখনও খিদে পাওয়ার মতো কিছুই হয়নি। তুমি খেতে চাইলে খাও। ভয় নেই, আমি লোভ দেবো না। আমাকে অনেকে ডাইনি বলে আমি জানি আর ডাইনিদের নজর পড়লে সেই খাবার না-কি পয়জনাস হয়ে যায়, তা-ও জানি আমি। কিন্তু আমি যা ভাবছ, তা নই, সুতরাং তোমার কোন ক্ষতি হবে না।”
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০১: অর্জুন প্রমাণ করলেন, রাজধর্ম পালনের ক্ষেত্রে মিথ্যাচারের কোনও স্থান নেই

হ্যালো বাবু!, পর্ব-৬৭: গুগলি/২
নুনিয়ার কথা শুনে সত্যব্রত হাসলেন, “দূর পাগলি। আমি তোকে ওইসব ডাইনি ভাবতে যাব কেন? তাছাড়া ডাইনি-টাইনি আমি বিশ্বাসও করি না। তুই একটা ডানপিটে মেয়ে, যেমন মেয়ে দেশের এখন দরকার, তুই ঠিক তেমনই। আর আমার খাওয়া হয়ে গেছে, সুতরাং তুই চাইলেও নজর দিতে পারবি না। কোন ডাইনি যদি কোথাও থেকেও থাকে, তার পক্ষে আজ রাতে আর খাবারে নজর দেওয়া সম্ভব নয়। এখন বল, কী হয়েছে?”
নুনিয়া কেঁপে উঠল কি? ফ্যাঁসফেঁসে গলায় বলল, “বলছি, তার আগে তুমি আলো নিভিয়ে দাও!”
“কেন?”
“যাতে ওরা পিছু নিয়ে এলেও তোমার ঘর অন্ধকার দেখে। আলোয় ঘরের ভিতরে আমাকে দেখতে পেলে হয়তো তোমাকেও ছাড়বে না!”
“অন্ধকারে তুই ভয় পাবি না তো?”
“অন্ধকারে জঙ্গল, বনবাদাড় ঠেঙিয়ে এতদূর ছুটে এলাম, তখন যখন ভয় করেনি, এখন এই ঘরের মধ্যে খামোকা ভয় পেতে যাব কেন?”
“একটা জিনিস মনে রাখবি। জঙ্গল বনবাদাড়ের চেয়েও ঘরের মধ্যে ভয় বেশি। মানুষের মতো কুটিল-জটিল ক্রিচার আর হয় না। মানুষ যা পারে, জঙ্গলের সবচেয়ে হিংস্রতম প্রাণিও তা পারবে না!” বলে সত্যব্রত স্যুইচবোর্ডের দিকে এগিয়ে গিয়ে আলো নিভিয়ে দিলেন। নুনিয়ার মাথায় বুদ্ধি আছে। সত্যিই জানালা বন্ধ দেখলে তারা সন্দেহ করতে পারে। সেইরকম আলো জ্বেলে রাখলে নুনিয়াকে স্পষ্ট দেখতে পাবে তারা দূর থেকেই। তখন অ্যাটাক্ করতে দেরি করবে না। তাঁর এত ক্ষমতা নেই যে, নুনিয়াকে তিনি রক্ষা করতে পারবেন, এমন কথা জর দিয়ে বলেন। তার চেয়ে আগে থেকে সতর্ক থাকা ভালো।
অন্ধকার সয়ে যেতেই সত্যব্রত এগিয়ে এসে নুনিয়ার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললেন, “নুনিয়া কিচেনে চল। ওইখানে শুনবো তোর কথা। কারণ, অন্ধকার ঘর দেখলেও অদের সন্দেহ হতে পারে এবং তখন টর্চ বা মোবাইল জ্বেলে ভিতরে ফেললেই তোকে-আমাকে দুজনকেই দেখতে পাবে।”
“কিন্তু অন্ধকার ঘরে আলো ফেলে ওরা তো তোমার বেডটাও খালি দেখতে পাবে!” নুনিয়া চিন্তিত গলায় বলল।
“আরে, সন্দেহ করবে না। আমাদের ডাক্তারদের অনেকসময়েই হেলথ্ সেন্টারের রুমের মধ্যেই রাত জাগতে হয়। ওটাই নিয়ম!”
“ওরা সেখানে গিয়েও তোমাকে খুঁজতে পারে আর না-পেয়ে ঠিক ধরে ফেলবে যে, ইচ্ছে করেই তুমি আলো নিভিয়ে রেখে লুকিয়ে আছো। তুমি হেলথ্সেন্টারের রুমেও নেই, এখানেও নেই…! না না, তুমি একটা কাজ কর। একটা বালিশকে চাদর চাপা দিয়ে শুইয়ে দাও, তারপর কিচেনে চলো।”
নুনিয়ার কথায় যুক্তি আছে। সত্যব্রত তার কথামতো কাজ করে নুনিয়াকে নিয়ে কিচেনে এল। কিচেনের যেখানে রান্না হয়, সেখানের জানালা রাতের বেলায় বন্ধ থাকে। এ-অঞ্চলে খুব লোডশেডিং হয় বলে, হাতের কাছে মোমবাতি সবার বাড়িতেই থাকে। সেইরকম একটা মোমবাতি জ্বেলে কিচেনের মেঝের উপর বসিয়ে সত্যব্রত জিজ্ঞাসা করলেন, “যাক্, এবার বল তো নুনিয়া, কী হয়েছে?” —চলবে।
নুনিয়া কেঁপে উঠল কি? ফ্যাঁসফেঁসে গলায় বলল, “বলছি, তার আগে তুমি আলো নিভিয়ে দাও!”
“কেন?”
“যাতে ওরা পিছু নিয়ে এলেও তোমার ঘর অন্ধকার দেখে। আলোয় ঘরের ভিতরে আমাকে দেখতে পেলে হয়তো তোমাকেও ছাড়বে না!”
“অন্ধকারে তুই ভয় পাবি না তো?”
“অন্ধকারে জঙ্গল, বনবাদাড় ঠেঙিয়ে এতদূর ছুটে এলাম, তখন যখন ভয় করেনি, এখন এই ঘরের মধ্যে খামোকা ভয় পেতে যাব কেন?”
“একটা জিনিস মনে রাখবি। জঙ্গল বনবাদাড়ের চেয়েও ঘরের মধ্যে ভয় বেশি। মানুষের মতো কুটিল-জটিল ক্রিচার আর হয় না। মানুষ যা পারে, জঙ্গলের সবচেয়ে হিংস্রতম প্রাণিও তা পারবে না!” বলে সত্যব্রত স্যুইচবোর্ডের দিকে এগিয়ে গিয়ে আলো নিভিয়ে দিলেন। নুনিয়ার মাথায় বুদ্ধি আছে। সত্যিই জানালা বন্ধ দেখলে তারা সন্দেহ করতে পারে। সেইরকম আলো জ্বেলে রাখলে নুনিয়াকে স্পষ্ট দেখতে পাবে তারা দূর থেকেই। তখন অ্যাটাক্ করতে দেরি করবে না। তাঁর এত ক্ষমতা নেই যে, নুনিয়াকে তিনি রক্ষা করতে পারবেন, এমন কথা জর দিয়ে বলেন। তার চেয়ে আগে থেকে সতর্ক থাকা ভালো।
অন্ধকার সয়ে যেতেই সত্যব্রত এগিয়ে এসে নুনিয়ার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললেন, “নুনিয়া কিচেনে চল। ওইখানে শুনবো তোর কথা। কারণ, অন্ধকার ঘর দেখলেও অদের সন্দেহ হতে পারে এবং তখন টর্চ বা মোবাইল জ্বেলে ভিতরে ফেললেই তোকে-আমাকে দুজনকেই দেখতে পাবে।”
“কিন্তু অন্ধকার ঘরে আলো ফেলে ওরা তো তোমার বেডটাও খালি দেখতে পাবে!” নুনিয়া চিন্তিত গলায় বলল।
“আরে, সন্দেহ করবে না। আমাদের ডাক্তারদের অনেকসময়েই হেলথ্ সেন্টারের রুমের মধ্যেই রাত জাগতে হয়। ওটাই নিয়ম!”
“ওরা সেখানে গিয়েও তোমাকে খুঁজতে পারে আর না-পেয়ে ঠিক ধরে ফেলবে যে, ইচ্ছে করেই তুমি আলো নিভিয়ে রেখে লুকিয়ে আছো। তুমি হেলথ্সেন্টারের রুমেও নেই, এখানেও নেই…! না না, তুমি একটা কাজ কর। একটা বালিশকে চাদর চাপা দিয়ে শুইয়ে দাও, তারপর কিচেনে চলো।”
নুনিয়ার কথায় যুক্তি আছে। সত্যব্রত তার কথামতো কাজ করে নুনিয়াকে নিয়ে কিচেনে এল। কিচেনের যেখানে রান্না হয়, সেখানের জানালা রাতের বেলায় বন্ধ থাকে। এ-অঞ্চলে খুব লোডশেডিং হয় বলে, হাতের কাছে মোমবাতি সবার বাড়িতেই থাকে। সেইরকম একটা মোমবাতি জ্বেলে কিচেনের মেঝের উপর বসিয়ে সত্যব্রত জিজ্ঞাসা করলেন, “যাক্, এবার বল তো নুনিয়া, কী হয়েছে?” —চলবে।
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel): পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।