লোকটা সাইকেল মাহাতোকে একটু তফাতে ডেকে নিয়ে গেল। যদিও বাইরে সে নিজেকে নিরুত্তাপ দেখানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। বুঝতেই পারছে, আজকের অভিযান বৃথা। টাকা তো পাবেই না, উপরন্তু এক বোতল বিলিতি মদ আর মাংসের চাটের এক্সট্রা উপরিটাও মায়ের ভোগে! ভয়ে বুকের ভিতরটা শুকিয়ে আসছে। অনেক বড় মুখ করে সে বলেছিল, “কাম ঠিক হয়ে যাবে, তু ভাবিস ক্যানে?”
সাইকেল মাহাতো বলেছিল, “আরে বানচোদ, এটা যে-সে নয়, বললাম না তুকে, এ হল নুনিয়া। বড্ড ঢ্যামনা শালি!”
“আরে কালাচ আর চন্দ্রবোড়া নিয়ে কত খেলা করছি, এ-তো ঢ্যামনা সাপের বাচ্চা! হয়ে যাবে দেখিস ক্যানে!”
সাইকেল মাহাতো তার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলেছিল, “এইজন্যই তুকে বলি। নিজের লোক, তুই ঠিক দরদটা বুঝবি!”
“বুঝি তো! বুঝি বলেই তো তুর কাম করে দিই। তুই একা হাতে আর কতদিক সামলাবি বল তো?”
“হ্যাঁ রে। ভাবছি ভালো একটা দাঁও পেলে ছেড়ে দেব। আর এ-সব ল্যাফড়াতে থাকব না!” সাইকেল মাথা নাড়ে, “কোনওদিন বেকায়দায় পড়ে যাবো শ্লা! থানাবাবু ফাটকে ঢুকিয়ে দেবে! এমনিতে এক-একটা ট্রিপ মারি আর বুকের ভিতরটা হাঁকুপাঁকু করতে থাকে, এই বুঝি ধরা পড়ে গেলাম, এই বুঝি ধরা পড়ে গেলাম! শ্লা, আমরা তো আর বড় মানুষ নই, আমাদের জন্য কেউ জামিনদার হবে না! নিজেদের ভাবনা নিজেদেরকেই ভাবতে হবে রে শ্লা!…”
“সে তো আমিও জানি বট্যে!” লোকটি প্রত্যুত্তর বলে।
“বেশি জেনে কাজ নেই তুর। কাজটা ঠিকভাবে কর যেমন বুলেছি। বললাম তো ভালো মাল্লু পাবি!”
সেই মতোই কাজটা করতে এসেছিল সে। কিন্তু পারল না। তার আগেই পাখি ভাগলবা! এত খচ্চর হবে শালি, সে কী করে জানবে? নিজের উপর থেকে বিশ্বাসই টলে গিয়েছে তার।
সাইকেল মাহাতো বলেছিল, “আরে বানচোদ, এটা যে-সে নয়, বললাম না তুকে, এ হল নুনিয়া। বড্ড ঢ্যামনা শালি!”
“আরে কালাচ আর চন্দ্রবোড়া নিয়ে কত খেলা করছি, এ-তো ঢ্যামনা সাপের বাচ্চা! হয়ে যাবে দেখিস ক্যানে!”
সাইকেল মাহাতো তার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলেছিল, “এইজন্যই তুকে বলি। নিজের লোক, তুই ঠিক দরদটা বুঝবি!”
“বুঝি তো! বুঝি বলেই তো তুর কাম করে দিই। তুই একা হাতে আর কতদিক সামলাবি বল তো?”
“হ্যাঁ রে। ভাবছি ভালো একটা দাঁও পেলে ছেড়ে দেব। আর এ-সব ল্যাফড়াতে থাকব না!” সাইকেল মাথা নাড়ে, “কোনওদিন বেকায়দায় পড়ে যাবো শ্লা! থানাবাবু ফাটকে ঢুকিয়ে দেবে! এমনিতে এক-একটা ট্রিপ মারি আর বুকের ভিতরটা হাঁকুপাঁকু করতে থাকে, এই বুঝি ধরা পড়ে গেলাম, এই বুঝি ধরা পড়ে গেলাম! শ্লা, আমরা তো আর বড় মানুষ নই, আমাদের জন্য কেউ জামিনদার হবে না! নিজেদের ভাবনা নিজেদেরকেই ভাবতে হবে রে শ্লা!…”
“সে তো আমিও জানি বট্যে!” লোকটি প্রত্যুত্তর বলে।
“বেশি জেনে কাজ নেই তুর। কাজটা ঠিকভাবে কর যেমন বুলেছি। বললাম তো ভালো মাল্লু পাবি!”
সেই মতোই কাজটা করতে এসেছিল সে। কিন্তু পারল না। তার আগেই পাখি ভাগলবা! এত খচ্চর হবে শালি, সে কী করে জানবে? নিজের উপর থেকে বিশ্বাসই টলে গিয়েছে তার।
সাইকেল গাড়ির কাছে ছিল। একটি গাড়ি সপ্তাহে দু’বার করে স্টেশনে গিয়ে চার্চের প্রয়োজনীয় জিনিস্পত্র নিয়ে আসে। পিশাচপাহাড়ের মার্কেট খুব ছোট। খুব কম দোকানপাট আর তার চেয়েও কম মাওলপত্তর পাঈয়া যায় এখানে। অতএব শহর থেকে অর্ডার দিয়ে আনাতে হয়। স্টেশন সঙ্গত কারণেই জেলাশহরে, অতএব সেখানে পাওয়া যায় না এমন জিনিস বলতে গেলে নেই-ই। তার উপর কলকাতা থেকে মালপত্র অর্ডার দেওয়া থাকলে তাও নিয়ে আসতে হয়। ওখানে লোক আছে, সেই অর্ডারি মাল নিয়ে নিজের কাছে রাখে, সাইকেল কেবল সপ্তাহে দু’দিন গিয়ে সেই মাল এবং আরও কিছু কেনাকাটার অর্ডার থাকলে তা নিয়ে আসে। হাসপাতাল আর পেশেন্ট যখন আছে, তখন ওষুধবিষুধ ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের চাহিদা লেগেই থাকে।
আজও সাইকেল গিয়েছিল সদরে। কিছু জিনিসপত্র কলকাতা থেকে এসে পড়েছিল, আর সেইসঙ্গেই চার্চের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও দরকার ছিল। সেই সকালে বেরিয়েছিল। মালপত্র কেনাকাটা করে, কলকাতা থেকে আসা মালপত্র লোড করে তারপর সে ফিরেছে। এখন আবার রাতের বেলায় তাকে রওনা হতে হবে পাশের রাজ্যে চার্চের যে-শাখাকেন্দ্র আছে, সেখানে। ওই শাখাটিতে হাসপাতাল পরে তৈরি হয়েছিল। আধুনিক যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ওইখানেই বেশি। ফলে এখানে চার্চের কারুর অবস্থা ক্রিটিক্যাল বলে মনে হলে কিংবা ট্রিটমেন্ট সম্ভব নয় বলে মনে হলে, সেখানে পাঠানো হয়। পেশেন্ট পার্টি সঙ্গে যাওয়ার পারমিশন পায়, কিন্তু তার জন্য এক্সট্রা চার্জ দিতে হয়। সে-চার্জ এতটাই বেশি যে, পেশেন্টপার্টি হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী চার্চের নির্দিষ্ট লোকজনের ভরসাতেই পেশেন্ট পাঠিয়ে দেয়। তাদের দিয়ে এই মর্মে একখানি ফর্মও ফিলআপ করানো হয়। যদিও অধিকাংশ স্থানীয় মানুষ, যাঁরা লিখতে-পড়তে জানেন না, তাঁরা টিপছাপ দিয়ে চার্চের সব শর্ত মেনে নিয়েছেন, তার মুচলেকা দিলে তবেই পেশেন্ট নিয়ে গাড়িগুলি রওনা হয়।
আজও সাইকেল গিয়েছিল সদরে। কিছু জিনিসপত্র কলকাতা থেকে এসে পড়েছিল, আর সেইসঙ্গেই চার্চের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও দরকার ছিল। সেই সকালে বেরিয়েছিল। মালপত্র কেনাকাটা করে, কলকাতা থেকে আসা মালপত্র লোড করে তারপর সে ফিরেছে। এখন আবার রাতের বেলায় তাকে রওনা হতে হবে পাশের রাজ্যে চার্চের যে-শাখাকেন্দ্র আছে, সেখানে। ওই শাখাটিতে হাসপাতাল পরে তৈরি হয়েছিল। আধুনিক যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ওইখানেই বেশি। ফলে এখানে চার্চের কারুর অবস্থা ক্রিটিক্যাল বলে মনে হলে কিংবা ট্রিটমেন্ট সম্ভব নয় বলে মনে হলে, সেখানে পাঠানো হয়। পেশেন্ট পার্টি সঙ্গে যাওয়ার পারমিশন পায়, কিন্তু তার জন্য এক্সট্রা চার্জ দিতে হয়। সে-চার্জ এতটাই বেশি যে, পেশেন্টপার্টি হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী চার্চের নির্দিষ্ট লোকজনের ভরসাতেই পেশেন্ট পাঠিয়ে দেয়। তাদের দিয়ে এই মর্মে একখানি ফর্মও ফিলআপ করানো হয়। যদিও অধিকাংশ স্থানীয় মানুষ, যাঁরা লিখতে-পড়তে জানেন না, তাঁরা টিপছাপ দিয়ে চার্চের সব শর্ত মেনে নিয়েছেন, তার মুচলেকা দিলে তবেই পেশেন্ট নিয়ে গাড়িগুলি রওনা হয়।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৯৮: কপোত-কপোতী
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮২: মা সারদার ভক্ত যোগেন মায়ের কথা
চার্চের নামে কোনও অভিযোগ আজ পর্যন্ত না-থাকায় এবং ক্রিটিক্যাল পেশেন্টরা থাকায়, অ্যাম্বুলেন্স কিংবা সঙ্গের অন্য গাড়িগুলিকে আর বর্ডারে তেমন নাকাচেকিং করা হয় না। জাস্ট উঁকি মেরে দেখে নেয় ফোর্স। তাছাড়া সাইকেল মাহাতোকে তারা সবাই চেনে। চার্চের প্রতিনিধি হিসাবে যারা পেশেন্টপার্টির অনুমতিক্রমে পেশেন্টদের সঙ্গে যায়, তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে নিয়েই যায়। তবে বেশিরভাগ সময়েই তা ফর্স চেকও করে না। চেনা লোককে চেক করবে কেন তারা ? নিয়ম আছে ঠিকই, কিন্তু কিছু-কিছু ক্ষেত্রে মানবিকতার খাতিরে সে-নিয়ম ভাঙতেও হয়।
সাইকেলের কাছে গেল না অবশ্য লোকটা। এই মুহূর্তে আপাদমস্তক কালো ট্র্যাকপ্যান্ট আর ফুলস্লিভ কালো টি’জ্ পরে আছে সে, এই পোশাকে তাকে দেখলে সকলে চমকে যাবে এবং সন্দেহ করবে। অন্যদিন হলে তাও না-হয় কথা ছিল, কিন্তু আগামীকাল যখন সকলে জানবে, নুনিয়া মিসিং—তখন তাকেই সন্দেহ করবে, এতে তার নিজের কোন সন্দেহ নেই। অতএব সে সাইকেলকে ফোনে দু’বার মিসড্ কল দিয়েছিল। সে জানে দু’বার মিসড্ কল দেখলে সাইকেল নিজের থেকেই ফোন করবে। আড়ালে সরে এসেই করবে, সব জায়গা থেকে তো আর ফোনে এই কথা বলা যাবে না। যারা পেশেন্ট নিয়ে চার্চের পক্ষ থেকে যায়, তারাও জানে না যে, যাদের তারা নিয়ে যাচ্ছে, তাদের তারা কোনওদিনই যে ফিরিয়ে আনছে না, সেটা তারা জানতে পারছে না। খেয়ালও করছে না। ওদের বলে দল তৈরি করা যেতো, কিন্তু তাতে লাভের গুড় পিঁপড়েতে খেয়ে যেত। তার চেয়ে এই ব্যবস্থাই ভালো। যতটুকু না-দিলেই নয়, ততটুকু তো চার্চের পক্ষ থেকেই পাওয়া যাবে, কিন্তু লাভের অঙ্কটা কম ভাগ হবে। ওটাতে তো আর চার্চের ভাগ নেই।
সাইকেলের কাছে গেল না অবশ্য লোকটা। এই মুহূর্তে আপাদমস্তক কালো ট্র্যাকপ্যান্ট আর ফুলস্লিভ কালো টি’জ্ পরে আছে সে, এই পোশাকে তাকে দেখলে সকলে চমকে যাবে এবং সন্দেহ করবে। অন্যদিন হলে তাও না-হয় কথা ছিল, কিন্তু আগামীকাল যখন সকলে জানবে, নুনিয়া মিসিং—তখন তাকেই সন্দেহ করবে, এতে তার নিজের কোন সন্দেহ নেই। অতএব সে সাইকেলকে ফোনে দু’বার মিসড্ কল দিয়েছিল। সে জানে দু’বার মিসড্ কল দেখলে সাইকেল নিজের থেকেই ফোন করবে। আড়ালে সরে এসেই করবে, সব জায়গা থেকে তো আর ফোনে এই কথা বলা যাবে না। যারা পেশেন্ট নিয়ে চার্চের পক্ষ থেকে যায়, তারাও জানে না যে, যাদের তারা নিয়ে যাচ্ছে, তাদের তারা কোনওদিনই যে ফিরিয়ে আনছে না, সেটা তারা জানতে পারছে না। খেয়ালও করছে না। ওদের বলে দল তৈরি করা যেতো, কিন্তু তাতে লাভের গুড় পিঁপড়েতে খেয়ে যেত। তার চেয়ে এই ব্যবস্থাই ভালো। যতটুকু না-দিলেই নয়, ততটুকু তো চার্চের পক্ষ থেকেই পাওয়া যাবে, কিন্তু লাভের অঙ্কটা কম ভাগ হবে। ওটাতে তো আর চার্চের ভাগ নেই।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৯৯: আলোকলতা তিলোত্তমারা যুগে যুগে পুরুষের উজ্জীবনী শক্তির আধার
গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-১৬: হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে
দু’বার মিসড্ কল আসার কথা ছিল না। কথা ছিল, ঘুমন্ত নুনিয়ার নাকে ক্লোরফর্ম-দেওয়া রুমাল চেপে ধরে তাকে প্রথমে অজ্ঞান করে নিয়ে কাঁধে তুলে সন্তর্পণে বেরিয়ে আসবে লোকটা, তারপর দুটি অ্যাম্বুলেন্সের একটিতে চালান করে দিতে হবে। হাসপাতালের আলাদা পোশাক আনা আছে। ক্লোরোফর্মের মাত্রাও ঠিক করে দেওয়া আছে, যাতে দীর্ঘ সময় নুনিয়ার জ্ঞান না ফেরে। অন্তত বর্ডার পার হয়ে যাক, তারপরে ও-পারে ব্যবস্থা আছে, ঠিক সামলে নেওয়া যাবে যা-ই হোক না কেন। নাকে স্যালাইনের নল থাকবে, যদিও সেটা ধোঁকার টাঁটি হিসেবেই থাকবে। বলা তো যায় না, সাবধানের মার নেই। কথা ছিল, সাইকেলের ঠিক করা লোকটি নুনিয়াকে তুলে নিয়ে চার্চের পিছনের জঙ্গলের পথে হাইরোডে যাবে। নুনিয়াকে সেখানে হস্তান্তর করতে হবে আর-এক-জনের হাতে। সেই লোকটি হাসপাতালের কর্মী এবং সাইকেলের দলের লোক। সে বাকি ব্যবস্থা করে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে তোলার ব্যবস্থা করে দেবে। ওই বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সের লোকও সাইকেলের দলের। আর সেই গাড়িতে সাইকেল নিজেও থাকবে। বাকি দুটি অ্যাম্বুলেন্স ও পিকআপ ভ্যান বেরিয়ে যাওয়ার পরে আর একজন পেশেন্টকে নিয়ে সাইকেল রওনা হবে এবং রাস্তায় তুলে নেবে নুনিয়াকে। নুনিয়া বলেই এত সাবধানতা, কারণ, চার্চের ভিতর নুনিয়াকে অপছন্দ করে, এমন লোকও যেমন আছে, তেমনই পছন্দ করে, এমন লোকও আছে। তারা কোনভাবে টের পেয়ে গেলে, কেলেঙ্কারি বাঁধতে দেরি হবে না।
আরও পড়ুন:
বল বীর, চির উন্নত মম শির!
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০৮: শিশুর মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলেছিলেন দ্বারকানাথ
ফোনে দু’বার মিসড্ কল দেখেই সাইকেলের ভ্রূ কুঁচকে গেল। এখন তো ফোন করার কথা নয়, তাহলে ? কোন গণ্ডগোল করল না তো লোকটা? সকলে জেনে যায়নি তো! মুখ শুকিয়ে গেল তার। জেনে গেলে তার নিজের ঘাড়ে মাথাটা আর আস্ত থাকবে না। এত সাধের প্রাণটা বেঘোরে হারাবে সে। পিকআপ ভ্যানে কিছু জিনিসপত্র যাবে। সেগুলি ঠিক করে লোড করতে বলে সে বাঁ হাতের কড়ে আঙুলটি তুলে দেখিয়ে সরে গেল। কিছুটা দূরে পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা। কিন্তু সেদিকে গেল না সে। হাঁটতে-হাঁটতে চার্চকে বাঁ-দিকে রেখে সে যেন জঙ্গলের দিকে যাচ্ছে জলবিয়োগ করতে এমনভাবে হেঁটে গেল। সেখানে পৌঁছে কানে ফোন লাগিয়ে চাপা গলায় বলল, ‘কি হল বে, এখন ফোন করছিস ক্যানে? কাজটো হয়ে গিইঞ্ছে ? তাহলে যেখানে দাঁড়ানোর কথা গিয়ে দাঁড়া। ঠিক সময়ে চলে যাবো। হয়ে এসেছে প্রায়!”
ওপাশ থেকে শোনা গেল লোকটার অপরাধবোধ, অনুশোচনা, সেইসঙ্গেই ভয়মিশ্রিত কন্ঠস্বর, “না রে, তুর কামটা করতে পারলাম নাই!”
“মানে?” মুখ দিয়ে ছাপার অযোগ্য কাঁচা খিস্তি বেরিয়ে গেল সাইকেলের, “কী বলছিস কী বে তুই? দিল্লাগি করছিস?”
“দিল্লাগি না। ঠিক কথাই বলছি। তুর কাম হবে কী করে, চিড়িয়া তো ঘরকে নেই!”
“নেই মানে? কী সব ফালতু কথা বলছিস? চিড়িয়া সন্ধ্যার সময় ঢুকে গিয়েছে হোস্টেলে, রাতের খাওয়াও খেয়েছে—সব খবর আমার কাছে আছে বট্যে। তুই আমাকে বুরবক্ পাইছু?”
“সে কে-কী বলেছে আমার দরকার নেই। চিড়িয়াকে আমি ঘরের মধ্যে পাই নি। বেডের উপর বালিশে চাদর ঢাকা দেওয়া! আর কেউ ছিল না ঘরে। আমি মোবাইলের টর্চ জ্বেলে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি!”
“শ্লা! হয়তো হিসিউসি করতে গিয়েছে! ঠাহর যা ক্যানে!”
“আরে আমি সেখানেও দেখেছি। ধরা পড়ার ভয় থাকা সত্ত্বেও। কেউ নেই। বিলকুল খালি। তারপর আবার ঘরকে গেলাম, কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না !”
“উয়ো কুত্তার বাচ্চাটো যাবে কোথায়? শালি মাঝেমধ্যে কীভাবে যেন পালায়, কিন্তু রাতের বেলা একবার হোমে ঢুকে গেলে আর কুথাও বেরোয় না, সে পাক্কা খবর আছে আমার কাছে। তুই উইয়ার ঘরকে যা, তারপর আধা ঘণ্টা দেখ ক্যানে!” সাইকেল বিরক্তিসূচক গলায় বলে।
ওপাশ থেকে শোনা গেল লোকটার অপরাধবোধ, অনুশোচনা, সেইসঙ্গেই ভয়মিশ্রিত কন্ঠস্বর, “না রে, তুর কামটা করতে পারলাম নাই!”
“মানে?” মুখ দিয়ে ছাপার অযোগ্য কাঁচা খিস্তি বেরিয়ে গেল সাইকেলের, “কী বলছিস কী বে তুই? দিল্লাগি করছিস?”
“দিল্লাগি না। ঠিক কথাই বলছি। তুর কাম হবে কী করে, চিড়িয়া তো ঘরকে নেই!”
“নেই মানে? কী সব ফালতু কথা বলছিস? চিড়িয়া সন্ধ্যার সময় ঢুকে গিয়েছে হোস্টেলে, রাতের খাওয়াও খেয়েছে—সব খবর আমার কাছে আছে বট্যে। তুই আমাকে বুরবক্ পাইছু?”
“সে কে-কী বলেছে আমার দরকার নেই। চিড়িয়াকে আমি ঘরের মধ্যে পাই নি। বেডের উপর বালিশে চাদর ঢাকা দেওয়া! আর কেউ ছিল না ঘরে। আমি মোবাইলের টর্চ জ্বেলে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি!”
“শ্লা! হয়তো হিসিউসি করতে গিয়েছে! ঠাহর যা ক্যানে!”
“আরে আমি সেখানেও দেখেছি। ধরা পড়ার ভয় থাকা সত্ত্বেও। কেউ নেই। বিলকুল খালি। তারপর আবার ঘরকে গেলাম, কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না !”
“উয়ো কুত্তার বাচ্চাটো যাবে কোথায়? শালি মাঝেমধ্যে কীভাবে যেন পালায়, কিন্তু রাতের বেলা একবার হোমে ঢুকে গেলে আর কুথাও বেরোয় না, সে পাক্কা খবর আছে আমার কাছে। তুই উইয়ার ঘরকে যা, তারপর আধা ঘণ্টা দেখ ক্যানে!” সাইকেল বিরক্তিসূচক গলায় বলে।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৯: হারিয়ে যাওয়ার ‘জীবন তৃষ্ণা’
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১২: ক্যাথরিন ম্যান্সফিল্ড ও মিডলটন মারে, এক ভালোবাসাহীন বিবাহ
“কুনো লাভ হবে না। মাঝের থেকে আমি ধরা পড়ে যাই আর সকলে আমাকে পুলিশে দিক। তাহলে কী অবস্থা হবে তুই ভাবতে পারছিস!” লোকটা যেন মনে-মনে ভবিষ্যেতের অনেককিছু কল্পনা করে নেয়। নিয়ে শিউরে ওঠে।
“তুকে দিয়ে যদি কুনো কাজ হয়? আজ কত কিছু ইন্তেজাম করা হল, আর তুই…! এরপর বসকে কী জবাব দেবো? আজ কাজটা হইঞ গেলে অনেকক’টা টাকা হাতে আসতো। তুইও পেতিস। কিন্তু আবার একদিন ইন্তেজাম করতে হলে তো মুশকিল। শালি গেল কোথায়?”
“জানি না। তবে বিছানায় কিছুক্ষণ শুয়ে ছিল নিশ্চিত। বিছানার চাদর ভাঁজ পড়া। কেবল চাদর দয়ে বালিশ ঢাকা থাকলে অমন হয় না !”
“থাক থাক, তোকে আর গোয়েন্দাগিরি করতে হবেক নাই। তুই যে-জাহান্নাম থেকে এসেছিলি, সেখানেই যা ! তুকে আর আমার দরকার লাই!”
“পরেরবার ঠিক পারবো। তুই দেখিস!”
“থাম তো বে। তুই এক্কেবারে পেরে উল্টে দিবি ! অনেক হয়েছে শ্লা!”
“দিনের বেলায়, মানে ঠিক দিনের বেলা নয়, দুপুরবেলায় শালিটোকে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরতে দেখেছি কতদিন। সেইখান থেকে তুলে আনলেই তো হয়। আমি দায়িত্ব নিচ্ছি, তুই বল একবার! এখানে হোস্টেল থেকে তুলে নিয়ে আসা খুব খতরনাক কাজ ছিল। তার চেয়ে জঙ্গল থেকে তোলা সহজ।”
“কোনটা সহজ আর কোনটা নয়, তা তুকে আর ভাবতে হবে না। এখন মানে-মানে কেটে পড়। আমাকে আর ফোন করবি না। একমাত্র আমি বললে তবেই করবি! যা ভাগ, শালা!” সাইকেলের গলায় তুচ্ছতার সুর।
কানে বাজল সেই সুর লোকটার, “ওভাবে আমার সঙ্গে কথা বুলিস না! তাহলে তুরই ক্ষতি। এই ধর এখন আমি যদি চিল্লাই, তাহলে আমি হয়তো ধরা পড়বো, কিন্তু তুর কী অবস্থা হবে ভেবে দেখেছিস?”
“তুই চেঁচাতেই পারিস। আমাকে পুলিশ ধরে নিয়েও যেতে পারে। কিন্তু তুর কী হবে? তুই কি তাতে বাঁচতে পারবি ভেবেছিস? তুই নিজে চোর হয়ে আমাকে ধরিয়ে দিবি তো? তুই নিজেও জিন্দা লাশ হয়ে থাকবি ওই ফাদারের মতো! মাথায় রাখিস!” ফোন কেটে দেয় সাইকেল। তার চোখে-মুখে দুর্ভাবনার ছাপ। নুনিয়া কোথায় গেল? পালাল তার অভ্যাস মতো? না-কি আর কেউ চোরের উপর বাটপাড়ি করল? বসকে জানাতেই হবে এ-কথা!—চলবে।
“তুকে দিয়ে যদি কুনো কাজ হয়? আজ কত কিছু ইন্তেজাম করা হল, আর তুই…! এরপর বসকে কী জবাব দেবো? আজ কাজটা হইঞ গেলে অনেকক’টা টাকা হাতে আসতো। তুইও পেতিস। কিন্তু আবার একদিন ইন্তেজাম করতে হলে তো মুশকিল। শালি গেল কোথায়?”
“জানি না। তবে বিছানায় কিছুক্ষণ শুয়ে ছিল নিশ্চিত। বিছানার চাদর ভাঁজ পড়া। কেবল চাদর দয়ে বালিশ ঢাকা থাকলে অমন হয় না !”
“থাক থাক, তোকে আর গোয়েন্দাগিরি করতে হবেক নাই। তুই যে-জাহান্নাম থেকে এসেছিলি, সেখানেই যা ! তুকে আর আমার দরকার লাই!”
“পরেরবার ঠিক পারবো। তুই দেখিস!”
“থাম তো বে। তুই এক্কেবারে পেরে উল্টে দিবি ! অনেক হয়েছে শ্লা!”
“দিনের বেলায়, মানে ঠিক দিনের বেলা নয়, দুপুরবেলায় শালিটোকে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরতে দেখেছি কতদিন। সেইখান থেকে তুলে আনলেই তো হয়। আমি দায়িত্ব নিচ্ছি, তুই বল একবার! এখানে হোস্টেল থেকে তুলে নিয়ে আসা খুব খতরনাক কাজ ছিল। তার চেয়ে জঙ্গল থেকে তোলা সহজ।”
“কোনটা সহজ আর কোনটা নয়, তা তুকে আর ভাবতে হবে না। এখন মানে-মানে কেটে পড়। আমাকে আর ফোন করবি না। একমাত্র আমি বললে তবেই করবি! যা ভাগ, শালা!” সাইকেলের গলায় তুচ্ছতার সুর।
কানে বাজল সেই সুর লোকটার, “ওভাবে আমার সঙ্গে কথা বুলিস না! তাহলে তুরই ক্ষতি। এই ধর এখন আমি যদি চিল্লাই, তাহলে আমি হয়তো ধরা পড়বো, কিন্তু তুর কী অবস্থা হবে ভেবে দেখেছিস?”
“তুই চেঁচাতেই পারিস। আমাকে পুলিশ ধরে নিয়েও যেতে পারে। কিন্তু তুর কী হবে? তুই কি তাতে বাঁচতে পারবি ভেবেছিস? তুই নিজে চোর হয়ে আমাকে ধরিয়ে দিবি তো? তুই নিজেও জিন্দা লাশ হয়ে থাকবি ওই ফাদারের মতো! মাথায় রাখিস!” ফোন কেটে দেয় সাইকেল। তার চোখে-মুখে দুর্ভাবনার ছাপ। নুনিয়া কোথায় গেল? পালাল তার অভ্যাস মতো? না-কি আর কেউ চোরের উপর বাটপাড়ি করল? বসকে জানাতেই হবে এ-কথা!—চলবে।
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel): পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।