রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

 

অডিয়ো ক্লিপ (পর্ব-৯)

ধৃতিমান পারতপক্ষে কোথাও কখনও শ্রাদ্ধে যেতে চায় না একেবারে পারিবারিক সূত্রে কলকাতা শহরে যেগুলো সেখানে ইচ্ছে না থাকলেও যেতে হয়। কিন্তু কিছুতেই শ্রাদ্ধের পুজোআচ্চা যেখানে হয় তাঁর ত্রিসীমানায় থাকে না সে। দূরে দূরে এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করে। শ্রাদ্ধ বাসরে গেলেই তাঁর মায়ের কথা মনে পড়ে যায়। তখন সবে ক্লাস নাইন। পূর্ণনগর শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা মিশনারি স্কুলের ছাত্র। সুস্থ মানুষ সকালে বাবুর টিফিন গুছিয়ে দিয়েছেন। টিফিন খাওয়া শেষ হতেই মহারাজ এসে বললেন, ধৃতিমান বাছা তুমি এখন বাড়ি ফিরে যাও- তোমার মা বড় অসুস্থ, মহারাজ এ ভাবেই বাবা, বাছা করে বলতেন।

বাড়ি ফেরার আগেই মা ফিরে গিয়েছেন জগদীশ্বরের আশ্রয়ে। বাবা যেন বাকশূণ্য হয়ে দাওয়ায় বসেছিলেন পেশায় রেলকর্মী। রানাঘাট স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে বসতেন শেখর চৌধুরী কেউ তাঁকেও খবর দিয়ে ডেকে এনেছে। চাকরিতে সাধারণ হলে মানুষ হিসেবে অসাধারণ সৃষ্টিশীল ছিলেন ধৃতিমানের বাবা। যেমন ভালো ছবি আঁকতেন তেমন ভালো ছিল তাঁর ফটোগ্রাফির হাত। নিজেই ফোটো ডেভেলপ করতে জানতেন বাবার তোলা কত কত সাদাকালো ছবি আছে। মা মায়ের সঙ্গে কথা বলছে, বাবু বাবুর সঙ্গে খেলছে। ফিলম রোলের যুগে এসব ট্রিক ফটোগ্রাফির চল ছিল। মায়ের অজস্র ছবি ছিল। বাবা যখন চলে গেলেন তখন সে রবীন্দ্রভারতীতে নাটক নিয়ে মাস্টার্স করছে। কি অদ্ভুত বাবার একটাও ভাল ছবি পাওয়া যায়নি। কোনও একটা ফ্যামিলি ফোটো থেকে আলাদা করে বানানো হয়েছিল। বাবা চলে যাবার পর সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক দড়ি টানাটানি শুরু হল। তখন নাটক ছবিতে ব্যস্ত তাই শহরে থাকা জরুরি। এক বন্ধুর সাথে রুম শেয়ার করে কলকাতায় থাকে। একদিন গিয়ে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিল তার কোনও সম্পত্তির দাবি নেই। তবু জটিলতা এড়াতে পরিবারের ঝানু মাথার লোকজন তার হাতে একটা অকিঞ্চিৎকর অর্থ তুলে দিয়ে—”বুঝিয়া পাইলাম” লিখিয়ে নিল।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-৪২: নীলাঞ্জনের স্পষ্ট কথা, ক্ষতিপূরণ দিয়ে সুচেতার জীবনের মূল্য বিচার করা যাবে না

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬০: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— দুধি লতা ও পঞ্চরতি লতা

রানাঘাট হরচন্দ্রপুরের চৌধুরী বাড়ি পাকাপাকিভাবে ছেড়ে আসার দিনে বাবুর সম্বল ছিল বুবু, বুবুর খাঁচা, বুবুর খাবারদাবার ওষুধপত্রের ব্যাগ একটা সুটকেসে আরও কিছু পোশাক, বই, মা, বাবার ছবি তাদের পুরনো অ্যালবাম বাবার ফোটো ডেভেলপিং-এর যন্ত্রপাতি আর বাবার প্রিয় আগফা আইসোলেট টু ফিল্ম ক্যামেরা মেড ইন জার্মানি।
আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩৪: সরলাদেবী—নির্ভীক এক সরস্বতী

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৪: স্বার্থান্বেষীকেও চিনতে শেখায় এই গ্রন্থ

এরপর বহুদিন হরচন্দ্রপুরের চৌধুরী বাড়িতে পা রাখেনি বাবু কেউ কখনও বিয়ে ইত্যাদি পারিবারিক অনুষ্ঠানে আসতে বললে সযত্নে ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে এড়িয়ে গিয়েছে, বলেছে কাজ সেরে যেতে রাত হয়ে যাবে কলকাতায় বাড়ি ফিরতে না পারলে বুবুর খুব অসুবিধে হবে। কিন্তু কলকাতার আশেপাশে পারিবারিক কাজে গিয়ে একবার দেখা করে এসেছে। কোনও বয়স্ক গুরুজন হাসপাতালে ভর্তি হলে দেখতে গিয়েছে প্রয়োজনে বুবুকে খাইয়ে শুইয়ে হাসপাতালে গিয়ে রাত জেগেছে আবার ভোরবেলা বাড়ি ফিরে বুবুকে ঘুম থেকে তুলেছে ফল কেটে তার রোজগার ব্রেকফাস্ট সাজিয়ে দিয়েছে। হয়ত সকালের কাগজে চোখ বোলাতে বোলাতে ক্লান্তিতে চোখ লেগে একটু তন্দ্রাচ্ছন হয়ে পড়েছে। তৎক্ষনাৎ বুবু ধমক দিয়েছে!
—কী রে বাবু ঘুমোচ্চিস? বাবু ঘুমোচ্ছিস কেন?
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

এই দেশ এই মাটি, ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-২৩: রাজসভায় মিথিলার সঙ্গীতজ্ঞ

শ্রাদ্ধবাসর থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে সুচেতা-নীলাঞ্জনের বইয়ের কালেকশন দেখছিল ধৃতিমান। আশ্চর্য আজ মেয়েটার স্বর্গারোহণ ঘটে গেল তবু তার নামটা কিছুতেই মোছা যাচ্ছে না। সেই বই দেখতে গিয়ে পেস্ট ইট মেসেজেস দেখতে পেল। সেখান থেকেই নীলাঞ্জন নিয়ে গেল কনফিডেন্সিয়াল মেসেজ রাখার জায়গায় জুতোর র‍্যাক। যেখানে স্বপ্নেও কেউ এমন কিছু রাখবে না, কিন্তু সেখানে হেঁয়ালি!
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৭: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—ভালোবাসিবে বলে ভালোবাসিনে/২

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৯: বেশি ঘুম শরীরের পক্ষে ভালো?

জুতো র‍্যাকের পাঁচটার নিচের থেকে তিনটে র‍্যাকে জুতো রাখা চার নম্বর র‍্যাকেটা খালি আর ওপরের পাঁচ নম্বর র‍্যাকে দু’ তিনখানা পেস্ট ইট লাগানো।
—ইনফরমেশন পেয়ে কাজ হয়ে গেলে এখানে আর কাগজটা রাখেন না তাই তো?
—এক্সাক্টলি।
—আর চার নম্বর জুতোর র‍্যাকটা খালি কেন থাকে।
—ওটা আসলে।
—বুঝেছি ফ্রিজের কনসেপ্ট উপরে আমিষ নিচে নিরামিষ!
—লেখাপড়াটা সরস্বতী তো নিচে আবার জুতো!

তারিফ করার মত বুদ্ধি কিন্তু তারিফ করার আগে একটা কাগজের টুকরোতে চোখ আটকে গেল সেখানে লেখা “কোন কনফিডেন্সিয়াল ভয়েজ মেসেজ পেলে শুনে সেটা ডিলিট করে দিও ফোনে রেখো না।”
—নীলাঞ্জন এই মেসেজটা পড়েছেন।
—না তো এটা সুচেতা কবে লিখল!
—যেদিনই লিখুন তারপর কোনও ভয়েস মেসেজ কি পেয়েছেন?
—না আমার ফোনে তো কোনও?
—আপনার তো তিনটে ফোন?
—আঁজ্ঞে।
—আপনিই আমাকে বলেছিলেন দুটোর নম্বর দিয়েছিলেন আর অফিসেরটা দেননি।
—হ্যাঁ, গাড়িতে যে ফোনটা থাকে সেটার কোন চার্জ নেই ওটাতে হয়তো ভয়েস মেসেজ করেছে।—চলবে।
 

সুচেতা মুখোপাধ্যায় হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ২২ আগস্ট, ২০২৪

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content