শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ছবি: সংগৃহীত।

 

বাবু দাদা

বাবু দাদা যে বাম রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়বে সেটা বাবা আন্দাজ করেছিলেন। তাই বাবুর কাছে সব শুনে তারক বললেন—
—সেই অস্তিত্বের সংকট। ছোটবেলা থেকে এটাই বাবুকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের নিজেদের বাড়ি চেতলাতে অথচ থাকে মামার বাড়িতে। বসুন্ধরা ভিলায়। বাবা কেমন হয় সেটা অন্যদের দেখে বাবু শিখেছে, তার নিজের বাবা নেই। মায়ের কাছে যখন কিছু চেয়েছে, তখনই শান্তিলতা তাকে বুঝিয়েছে এখন নয় পরে দেব বা দেখছি, দিদুকে বলব দাদুকে বলব।

আমার দিদি শান্তিলতা চিরটাকাল ভীতু! কোনওদিন মুখফুটে নিজের জন্য কিছু চায়নি। কোনও কিছুর প্রতিবাদ জানায়নি। ওর যে মন্তেসরি নিয়ে পড়াশোনা করে বাচ্চাদের স্কুলে পড়াবার ইচ্ছে ছিল সেটাও বলেছে অনেক পরে। বাড়ির থেকে বিয়ে ঠিক হয়েছে, বিয়ে করেছে। সংসার করেছে। মা হয়েছে। অন্যের ইচ্ছেপূরণ করেছে দিদি।
শুধু বসুন্ধরা ফ্যাশন থেকে ব্যবসার লগ্নীর বিনা সুদের মূলধন ফেরাতে পেরে নিজের সক্ষমতার প্রতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল। বাবুর ছোটভাই বুবুর তাগিদ ছিল নিজেকে প্রমাণ করার। ছোট্টবেলা থেকে সে জানতো, যে বসুন্ধরা ভিলার দাক্ষিণ্য ছাড়া কিছুতেই এগোতে পারবে না। তাই হাতিয়ার ছিল তার কেরিয়ার। এমন পরীক্ষার রেজাল্ট করা যাতে স্কলারশিপ পাওয়া যায়, টিউশন ফিস মকুব হয়ে যায়। বইপত্র কিছুর জন্য পয়সা না লাগে। বুবু জানতো যে তার দাদা বাবুর পড়াশোনা ভরণপোষণ মায়ের ব্যবসা সবকিছু বিনয়কান্তি দত্ত এবং বসুন্ধরা গ্রুপের রোজগার থেকে ভর্তুকি দেওয়া। তাই কোথাও হয়তো সে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিল তার নিজের পড়াশোনার জন্য বসুন্ধরা ভিলার কোন অর্থ সে নেবে না। স্কুল পাশ করার পর আজ পর্যন্ত কোনওদিন বুবু বসুন্ধরা ভিলায় রাত কাটায়নি। স্কুলে থাকাকালীন শুধু পুজোর ক’টাদিন।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., পর্ব-৩২: কালপুরুষ

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭৮: নির্দোষ প্রাণীহত্যা কী সমর্থনযোগ্য?

তখন তো অনলাইন পেমেন্টের ব্যবস্থা ছিল না। কোর ব্যাঙ্কিংও ছিল না। তাই কখনও সুরঙ্গমাকে নিয়ে বা কখনও বুবুর মা শান্তিলতাকে নিয়ে যখন কালিম্পঙে বুবুর স্কুলে যেতাম। তখন গিয়ে অফিসে পেমেন্ট কি বাকি আছে জানতে চাইতাম। সবকিছুই স্কলারশিপে চলছে। প্রিন্সিপালের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, পড়াশুনা নিয়ে বাবু ভয়ংকর সিরিয়াস ছিল। একটা যেন জেদ কাজ করতো তার মধ্যে। প্রথম হবার জেদ নয়। ক্রমাগত ভালো আরও ভালো হবার জেদ। নিজেকে নিজে হারিয়ে দেওয়ার জেদ। ক্লাসে অন্যান্য ছেলেদের চেয়ে ভীষণ হেল্প করত।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬৪: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—গিরা শাক ও যদু পালং

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৬:কোনও একটি দাবিতে বিরোধীরা জোট বাঁধুক কখনও চায় না শাসক

স্কুল হোস্টেলে ভীষণ পপুলার ছিল বুবু! অদ্ভুত ব্যাপার বাবুকে অনেকবার নিয়ে যেতে চাইলেও সে কখনও কালিম্পঙ এ বুবুর স্কুলে যেতে চায়নি। মানে যখন ও যোধপুর বয়েজে পড়তো। কলকাতায়। তারপর তো দেওঘর চলে গেল। ওখানেও যেতাম। দু’ ভাইকে খুব কাছ থেকে খুব মন দিয়ে দেখেছি তো, তাই দুজনের মানসিকতাটা আমি খুব ভালো করে বুঝতে পারি। মনের ভেতরের লুকানো হীনমন্যতাকে টপকানোর জন্যই বাবু পলিটিক্স জয়েন করেছে। তবে ওর পক্ষে রাজনীতিতে টিকে থাকা শক্ত। আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করেন কেউ কেউ সকলে নয়। সেরকম কারও আওতায় এলে অন্য কথা। না হলে বেশিরভাগই তো ধান্দাবাজ। সুতরাং সেই ধাক্কা আবার বাবু সামলাতে পারবে না। চিন্তা করবেন না।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-৮: যেথা আমি যাই নাকো / তুমি প্রকাশিত থাকো

বাবাকে কিছু বলার দরকার নেই। এমনিতেই মা চলে যাবার পর মানুষটা ভিতরে ভিতরে ভেঙ্গে গিয়েছেন। তারপর ঝকঝকে বসুন্ধরা ভিলার দেওয়ালের ভিতরে লুকিয়ে থাকা ফাঁকফোঁকর চিড় বা ফাটল তার নজরেও এসেছে। আমি আপনাকে মানা করতে পারি না বাবু, আপনি হলেন বসুন্ধরা ভিলার কালপুরুষ বাবাকে আগাম সতর্ক করাটা আপনার কর্তব্য। তাই শুধু অনুরোধটুকু করতে পারি।

—আমি দিকনির্দেশ করতে পারি কিনা জানি না কিন্তু আপনি কথা সাহিত্যিক। ঘটনা প্রবাহ গড়তে পারেনভাঙতে পারেন। তাই স্বাভাবিক পরিণতি আন্দাজ করার ক্ষমতা এই গোটা বসুন্ধরা ভিলায় আপনার প্রখর। ঠিক সেই কারণেই বিকেডিকে কিছু জানানোর আগে আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছি। আপনার অনুরোধ আমার কাছে সতর্কবার্তা। বিকেডির শরীর মন দুটোই যে ভালো নেই সেটা আমিও লক্ষ্য করেছি। তবে আরও একটা ব্যাপার আমার হয়তো ভুলও হতে পারে কিন্তু…
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

দশভুজা, পর্ব-৩৬: মৃণালিনী— রবি ঠাকুরের স্ত্রী-র লেখকসত্তা

অন্যদিকে আরও একটা সমস্যা যে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসছে, সেটা জানাবার জন্য তারকবাবু একটু সংকোচ বোধ করছিলেন।
—এত বছরেও আপনার কুণ্ঠা কাটলো না বাবু?
—না, মানে একেবারে পরিবারের অভ্যন্তরের ব্যাপারস্যাপার তো?
—পদবী দত্ত হলেই তিনি পরিবারের অভ্যন্তরের সমস্যায় সমব্যথী হবেন তার তো কোন মানে নেই? নিয়োগীবাবু এত বছর ধরে সব অভ্যন্তরীণ ব্যাপারেই তো আমাদের সাহায্য করে এসেছেন
—আসলে ইদানিং প্রণয়কান্তির সঙ্গে ডাক্তার অর্কপ্রভ দাসগুপ্তের ঘন
ঘন যোগাযোগ হচ্ছে।

কথাটা শুনে বাবা ক্ষনিকের জন্য চোখবন্ধ করে কিছু ভাবলেন। তারপর তার সামনের ‘হিজিবিজি’ প্যাডে পেন্সিল দিয়ে নানা আকারের জিজ্ঞাসা চিহ্ন বসাতে লাগলেন। স্ক্রিবল প্যাডের দিশি নাম দিয়েছিলেন বাবা। হিজিবিজি প্যাড। ডাঃ অর্কপ্রভ দাসগুপ্ত আমার বোন সানন্দার ভূতপূর্ব স্বামী। —চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content