শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


সূর্যদেব প্রতিদিন উদয়ের সময় আর অস্ত যাওয়ার মুহূর্তে পর্বতরাজ সুমেরুকে প্রদক্ষিণ করেন বলে প্রসিদ্ধি আছে। সেই দেখেশুনে বিন্ধ্যপর্বতের মনে হল, আমিই বা কম কিসে! সূর্যদেব কেনই বা আমার চতুর্দিকে পরিভ্রমণ করবেন না! রোজকার মতন সেদিনও সূর্য পরিক্রমণে বেরিয়েছেন। পথে বিন্ধ্যপর্বতের সঙ্গে সাক্ষাৎ হতে সূর্যদেবকে উদ্দেশ্য করে বিন্ধ্যপর্বত বলে ওঠেন ‘হে দেব! আপনি যেমন প্রতিদিন সুমেরুপর্বতে বিচরণ করেন, তাকে প্রদক্ষিণ করেন, তেমনি আমার চতুর্দিকেও বিচরণ করুন, এই আমার বড় সাধ।’ সে কথা শুনে সূর্যদেব বলে ওঠেন, ‘আমি যে প্রতিদিন সুমেরুপ্রদক্ষিণ করি, তা স্বেচ্ছায় নয়। বরং স্বয়ং জগত্স্রষ্টা এই দায়িত্বভার আমার ওপর সঁপেছেন।’

সূর্যদেবের সেই কথা শুনে বিন্ধ্যপর্বত রেগে আগুন হলেন আর ক্রমশঃ তাঁর কলেবর বৃদ্ধি পেতে লাগল। দেবতারা তো এই পরিস্থিতির কথা শুনে প্রমাদ গুনলেন। সকলে মিলে বিন্ধ্যপর্বতের কাছে গিয়ে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়েও তাঁর রাগ কমাতে পারলেন না। বিন্ধ্যপর্বত রাগে বাড়তেই লাগলেন। তখন দেবতারা সকলে মিলে অগস্ত্যমুনির কাছে গিয়ে বিন্ধ্যের এমন অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে নালিশ জানালেন। বললেন, ‘হে মুনিবর! আপনিই একমাত্র বিন্ধ্যপর্বতের দর্পচূর্ণ করতে পারেন।’
অগস্ত্যমুনি দেবতাদের অনুরোধে পত্নী লোপামুদ্রাকে সঙ্গে নিয়ে বিন্ধ্যপর্বতের কাছে গিয়ে বললেন, ‘হে পর্বতশ্রেষ্ঠ, আমি বিশেষ প্রয়োজনে দক্ষিণের পথে যেতে চাই। তাই, যদি তুমি আমার পথ ছেড়ে দাও, তবে আমার নির্বিঘ্নে যাত্রা সম্ভবপর হতে পারে।’ অগস্ত্যমুনিকে কে না সম্ভ্রম করত! বিন্ধ্যপর্বত অগস্ত্যমুনির অনুরোধ মেনে নিয়ে সরে দাঁড়ালেন। সস্ত্রীক অগস্ত্যমুনি সেপথে দক্ষিণের দিকে যাওয়ার আগে বলে গেলেন, ‘হে পর্বতরাজ, যতদিন না আমি ফিরে আসি, ততদিন তুমি নিজের কলেবর বৃদ্ধি করো না।’ বিন্ধ্যপর্বতকে এমন একটি প্রতিজ্ঞাপাশে বদ্ধ করে অগস্ত্যমুনি দক্ষিণদেশ আর ফিরে আসেননি। বিন্ধ্যপর্বতও তাই আর বাড়তে পারেননি।
আরও পড়ুন:

মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৪১: অবশেষে কালেয়দমন চিন্তায় অগস্ত্যমুনির শরণাপন্ন হলেন দেবতারা

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২৩: ‘বেদনায় ভরে গিয়েছে পেয়ালা…’

সব ভুলে কাছাকাছি আসছেন নাগা-সামান্থা! তারকা জুটিকে কোথায় দেখা যাবে?

ডায়েট টিপস: পেট ফাঁপা ও বদহজমের সমস্যায় ভুগছেন? এই ঘরোয়া উপায়গুলি ম্যাজিকের মতো কাজ করবে

অগস্ত্যের প্রভাব এতটাই ছিল যে, দেবতা মানুষ এমনকি পাহাড় পর্বতও সমীহ করে চলতেন এই মুনিকে। এই পর্যন্ত বলে লোমশ মুনি যুধিষ্ঠিরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হে রাজন! অগস্ত্যমুনি যে কতটা প্রভাবশালী ছিলেন, তার কিছুটা গল্প তোমাকে বললাম। এবার তোমায় সেই আখ্যান শোনাই, কীভাবে অগস্ত্যমুনির সহায়তায় দেবতারা কালেয়দানবদের বিনাশ করতে সমর্থ হয়েছিলেন।’ লোমশমুনির কথায় আখ্যান এগিয়ে চলে।

দেবতারা অগস্ত্যমুনির দ্বারস্থ হলেন। আর্জি জানালেন দুর্দান্ত কালেয়দানবদের কীভাবে বধ করা যায়, তার উপায় যদি অগস্ত্য বলে দেন। অগস্ত্যমুনি দেবতাদের সকলকে একজোটে তাঁর আশ্রমে উপস্থিত হয়ে এমন আর্জি জানাতে দেখে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনারাই বলুন, কী এমন উপায় আছে, যাতে এমন অসাধ্যসাধন হতে পারে?’ দেবতারা তার উত্তরে বলে ওঠেন, ‘আপনি যদি মহাসমুদ্রকে পান করেন, তবে সেই সমুদ্রে নিবাসকারী কালেয়দানবদের বিনাশ করতে পারব।’ এমন অসম্ভব কাজ অগস্ত্য ছাড়া আর কেই বা পারেন?
আরও পড়ুন:

সোনার বাংলার চিঠি, পর্ব-৪: পাঠক, লেখক ও শুভাকাক্ষীদের অনুপ্রেরণায় দেশের সর্বত্র পৌঁছে যাচ্ছে বইয়ের জাহাজ বাতিঘর সম্রাজ্যের দীপ্তি

দশভুজা: আমার উড়ান— এ পৃথিবীজুড়ে থাকে হৃদয়ের ঘর-বসত

স্বাদ-বাহারে: গরমে চাই স্পেশাল মেনু? তাহলে ঝটপট তৈরি করে ফেলুন রাজকীয় মালাই পনির

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৩৩: খালেবিলে, ধানখেতে, পুকুরে, নদীতে ঘুরে বেড়ানো ‘ম্যাজিশিয়ান’ জেব্রা ফিশ ভবিষ্যতে রোগ নিরাময়ে নতুন দিশা দেখাবে

অগস্ত্যের সেই সমুদ্রপানদৃশ্যের সাক্ষী হতে দক্ষিণের সমুদ্রতটে উপস্থিত হলেন দেবতা, মানুষ, গন্ধর্ব, যক্ষ আর নাগেরা। তারপর অগস্ত্যমুনি উপস্থিত হলেন সেই সমুদ্রতটে। নানারকম জলজন্তুতে পরিপূর্ণ সেই সমুদ্রেই আত্মগোপন করেছিল কালেয়দানবের দল। অগস্ত্যমুনি প্রবলক্রোধের সঞ্চার করলেন নিজের মধ্যে। তারপর সমুদ্রপান করা শুরু করলেন। সে অদ্ভুত অত্যাশ্চর্য দৃশ্যের সাক্ষী হলেন উপস্থিত সকলে। দেবতারা করজোড়ে তাঁর স্তব করতে শুরু করলেন। গন্ধর্বেরা সুমধুর বাদ্যে আকাশবাতাস ভরিয়ে তুললেন। আকাশ থেকে ফুলের বৃষ্টি হতে থাকল। তারপর সেই জলশূন্য সমুদ্রে দানবেরা আর লুকিয়ে থাকতে পারল না। দেবতারা তখন খুব সহজেই তাদের শায়েস্তা করলেন।

Skip to content