বুধবার ২৬ মার্চ, ২০২৫


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

‘রাজর্ষি’ পুস্তকাকারে প্রকাশের কয়েক বছর পর রবীন্দ্রনাথ ‘বিসর্জন’ নাটক লেখেন। ঠাকুর পরিবারের মাসিক পত্রিকা ‘বালক’-এর চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই একদিন ‘রাজর্ষি’ ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ হতে শুরু হয়েছিল। ব্যতিক্রম নয় বিসর্জনও। ঠাকুর পরিবারের বালকদের অভিনয়ের সূত্রেই সৃষ্টি হয়েছিল ‘বিসর্জন’। রবীন্দ্র জীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ভ্রাতুষ্পুত্র সুরেন্দ্রনাথ নতুন নাটকের জন্য বায়না দিয়েছেন।
রবীন্দ্রনাথ বোধ হয় ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দ মাণিক্যের কাহিনি নিয়ে নাটক রচনার উদ্দেশ্যেই ‘রাজর্ষি’ এক খণ্ড নিয়ে সাহাজাদপুর গিয়েছিলেন। রবীন্দ্র জীবনীকার আরও উল্লেখ করেছেন—”‘বালকে’ প্রকাশিত ‘রাজর্ষি’ উপন্যাসের প্রথম আঠারো পরিচ্ছেদ পর্যন্ত গল্পাংশ ‘বিসর্জনে’র বিষয়বস্তু। নক্ষত্ররায়ের বিদ্রোহ-কাহিনি সংযোজিত অংশের (৩২,৩৩,৩৬,৩৭ পরিচ্ছেদ) অন্তর্গত। রঘুপতি-কর্তৃক কালী প্রতিমার বিসর্জন ঘটিয়াছে ৪০ পরিচ্ছেদে। ‘রাজর্ষি’র অন্যান্য অংশের সহিত ইহার কোনো সম্পর্ক নাই। উহার অন্তর্গত হাসি, হাসির কাকা কেদারেশ্বর, ভিখারিনি অপর্ণার অন্ধ পিতা প্রভৃতি ‘বিসর্জনের’ প্রথম সংস্করণে ছিল। নাট্যোল্লিখিত ব্যক্তিগণের মধ্যে গুণবতী, অপর্ণা, নয়নরায়, চাঁদপাল প্রভৃতি ‘বিসর্জনের’ নতুন সৃষ্টি, ‘রাজর্ষি’তে ইহারা নাই। ‘বিসর্জনের’ পাঠে বহু পরিবর্তন হইয়াছে; ১৩০৩ সালের কাব্য গ্রন্হাবলী সম্পাদন কালেই উহার যথার্থ পরিবর্তন সাধিত হয়।অনেকগুলি দৃশ্য সংক্ষিপ্ত হয়,নূতন লিখিত কোনো কোনো অংশ সংযোজিত হয়,কোনো কোনো অংশ পরিবর্তিত হয় ও কয়েকটি দৃশ্য সম্পূর্ণ বর্জিত হয়।…”
আরও পড়ুন:

ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-৫১: রবীন্দ্রনাথ বীরচন্দ্রকে চিঠি দেওয়ার আগেই ‘বালক’-এ ‘রাজর্ষি’র ২৬টি অধ্যায় প্রকাশিত হয়

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯o: ছাতারে

‘রাজর্ষি’ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন যে, গল্পটা প্রেমের অহিংস পুজোর সঙ্গে হিংস্র শক্তি পুজোর বিরোধ। বস্তুত ‘বিসর্জন’ও যেন তাই। কাব্য-নাট্যের প্রয়োজনে চরিত্রের উপস্থাপনা হয়েছে তাতে।কিন্তু মূল ভাবধারা যেন অটুট। আসলে বলি প্রথার বিরুদ্ধেই যেন উচ্চারিত হয়েছে তীব্র ঘৃণা। জয় সিংহের আত্মবলিদানের পর রঘুপতির বিলাপ ও বোধোদয় যুগপৎ ধ্বনিত হচ্ছে: “মা বলিয়া ডাকে যত জীব, হাসে তত/ঘোরতর অট্টহাস্যে নির্দয় বিদ্রুপ/দে ফিরায়ে জয়সিংহে মোর! দে ফিরায়ে!/দে ফিরায়ে রাক্ষসী পিশাচী! /…এই শেষ পুণ্য রক্ত এ পাপ মন্দিরে।/জয় সিংহ নিবায়েছে নিজ রক্ত দিয়ে/হিংসা রক্তশিখা।”
আরও পড়ুন:

গল্পবৃক্ষ, পর্ব-১৯: নাগজাতক— অকৃতজ্ঞ সেই লোকটা

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৪: প্রকৃতির সান্নিধ্যে কি গ্লানিমুক্তি সম্ভব? লক্ষ্মণের আবেগ কি সাধারণের মধ্যে সহজলভ্য?

‘রাজর্ষি’র অন্তর্নিহিত ভাবধারাই বহন করছে ‘বিসর্জন’। ‘বিসর্জন’-এর ঐতিহাসিক উপাদান নিয়ে পৃথক খুব একটা আলোচনার অবকাশ নেই। কারণ, ‘রাজর্ষি’র যে অংশ নিয়ে ‘বিসর্জন’ রচিত হয়েছে মূলত তার পর থেকেই উপন্যাসকে ঐতিহাসিক উপাদান পুষ্ট করেছে।তবে ‘রাজর্ষি’তে রানি গুণবতীর কোনও ভূমিকা ছিল না। ‘বিসর্জন’-এ তিনি সন্তান কামনায় পশুবলি দিতে চান। রাজা গোবিন্দ মাণিক্য তা প্রতিরোধ করেন। রানি গুণবতী নিঃসন্তান ছিলেন-এমন কোনও তথ্য নেই ইতিহাসে। গোবিন্দ মাণিক্যের দুই পুত্র রামদেব আর দুর্গাদেব।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮৭: মা সারদার লিঙ্গপুজো

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৮: দুর্গম গিরি কান্তার ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’

রাজার মৃত্যুর পর জ্যেষ্ঠ পুত্র রামদেব বসেছিলেন সিংহাসনে। কাজেই ‘রাজর্ষি’ কিংবা ‘বিসর্জন’-এ যে ধ্রুব নক্ষত্ররায়ের মুকুট কেড়ে নিতে আসে-তা ইতিহাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। যাই হোক, ‘রাজর্ষি’ কিংবা ‘বিসর্জন’- ঐতিহাসিক উপাদানের চেয়েও উভয় গ্রন্হেই প্রাধান্য পেয়েছে মানবিক আবেদন। ইতিহাসকে ছাপিয়ে গেছে গোবিন্দ মাণিক্যের ঋষিতুল্য রাজার চরিত্র। তাই এ ক্ষেত্রে ইতিহাসের গোবিন্দ মাণিক্য নিয়ে বিতর্ক গৌণ বিষয়।—চলবে।
* ত্রিপুরা তথা উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাংলা ভাষার পাঠকদের কাছে পান্নালাল রায় এক সুপরিচিত নাম। ১৯৫৪ সালে ত্রিপুরার কৈলাসহরে জন্ম। প্রায় চার দশক যাবত তিনি নিয়মিত লেখালেখি করছেন। আগরতলা ও কলকাতার বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে ইতিমধ্যে তার ৪০টিরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ত্রিপুরা-সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের ইতিহাস ভিত্তিক তার বিভিন্ন গ্রন্থ মননশীল পাঠকদের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়ও সে-সব উচ্চ প্রশংসিত হয়েছে। রাজন্য ত্রিপুরার ইতিহাস, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ত্রিপুরার রাজ পরিবারের সম্পর্ক, লোকসংস্কৃতি বিষয়ক রচনা, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সঞ্জাত ব্যতিক্রমী রচনা আবার কখনও স্থানীয় রাজনৈতিক ইতিহাস ইত্যাদি তাঁর গ্রন্থ সমূহের বিষয়বস্তু। সহজ সরল গদ্যে জটিল বিষয়ের উপস্থাপনই তাঁর কলমের বৈশিষ্ট্য।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content