রোজদিন সুস্থ থাকার অন্যতম সেরা উপায় হল পর্যাপ্ত পরিমাণে জলপান করা। আমাদের শরীর ভালো রাখাতে এর কোনও বিকল্প নেই। সঠিক পরিমাণে জলপান করলে বহু অসুখ-বিসুখ এড়ানো যায়। ওজনও থাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। সমস্যা হল, এই বর্ষার দিনে অনেকেই জল খাওয়ার কথা বেমালুম ভুলে যান। কারণ বৃষ্টির দিনে আমাদের জল তেষ্টা কমই পায়। গরম কম লাগে, কারণ আবহাওয়াও ঠান্ডা থাকে। তাই জল খাওয়ার চাহিদাও বেশ কম থাকে। তবে মনে রাখতে হবে, তেষ্টা কম পাওয়া মানে হল আমাদের শরীরে জলের ঘাটতি তৈরি হওয়া।
অনেকে হয়তো জানেন না, বর্ষার মরসুমেই বেশি পরিমাণ জল খাওয়া উচিত। কারণ বৃষ্টির দিনে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। নানা রকম ব্যাক্টেরিয়ার হানা দেয়। ফলে বার বার অসুস্থ হয়ে পড়তে হয়। জ্বর, সর্দি-কাশি, পেট খারাপ লেগে থাকে। মনে রাখতেই হবে, বর্ষার মরসুমে যদি তেষ্টা নাও পায়, তাহলেও সারা দিনে অন্তত তিন লিটার জলপান করতে হবে। এ সময় যেহেতু বাতাসে জলীয় বাষ্পের হার বেড়ে যায়, সেহেতু শরীরও তার আর্দ্রতা হারাতে শুরু করে। মুশকিল হয় বাইরে থেকে লক্ষণ প্রকাশ না।
অথচ গ্রীষ্মকালের মতো বর্ষাতেও আমাদের শরীরে জলের চাহিদা প্রায় একই রকম থাকে। তাই তেষ্টার অপেক্ষায় বসে না থেকে প্রতি ১৫-২০ মিনিট অন্তর জল খেতে থাকুন। অন্তত আট গ্লাস জল না খেলে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। এমন সময় সচেতন ভাবে চেষ্টা করুন তরল খাবার বেশি করে খাওয়ার। রোজদিন খাদ্যতালিকায় ফল রাখুন। তা হলেও শরীরে জলের অভাবের সমস্যা মিটবে।
বর্ষার মরসুমে শরীরে জলের ঘাটতির কিছু লক্ষণ
প্রস্রাবের রং
● সব সময়ই প্রস্রাবের রং খেয়াল করুন। প্রস্রাব হলুদ রং হলেই বুঝবে শরীরে জলের ঘাটতি হচ্ছে। দীর্ঘ দিন এমন চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বড় কোনও সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
বাড়ির তৈরি টিফিন
● যতটা সম্ভব বাইরের খাবার কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। কর্মক্ষেত্র বা অফিসেও বাড়ি থেকে তৈরি টিফিন নিয়ে যান।
শাকসব্জি
● পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসব্জি খান। পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসব্জি খাওয়া সত্ত্বেও পেটের গোলমাল কমছে না মানে প্রাথমিক ভাবে ভেবে নিতে হবে শরীরে জলের ঘাটতি কম হচ্ছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ জল খেলে পেট ঠিক থাকবে।
ক্লান্তিতে কাটছে না
● রাতে পর্যাপ্ত ঘুমোনোর পরেও দিনভর ক্লান্তিতে কাটছে? শরীরে জলের ঘাটতি হলেও এরকম হতে পারে। নিজেকে তরতাজা রাখতে জল খেতে হবে নিয়ম মেনে।
শুষ্ক ত্বক
● শরীরে জলের অভাব হলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। ঠোঁট ফাটতে শুরু করে। ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়। ত্বকে ব্রণ ও চুলকানির সমস্যা দেখা দিলেই বুঝতে হবে জলের ঘাটতি হচ্ছে।
শ্বাসকষ্ট-মুখে দুর্গন্ধ
● শরীরে জলের ঘাটতির জন্য শ্বাসকষ্টও হতে পারে। আবার মুখে দুর্গন্ধও হয়। জল আমাদের মুখে দরকার মতো লালা উৎপন্ন করতে সাহায্য করে। এই লালা নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের জন্য দায়ী ব্যাক্টেরিয়াকে নিয়ন্ত্রণে করে।
রক্তচাপ কমে যায়
● শরীরে জলের অভাবে কখনও কখনও রক্তচাপ কমে যায়। অনেক সময় অকারণেই মাথাব্যথাও হতে পারে। সারা ক্ষণ আলস্য ও ক্লান্তি বোধও হতে পারে।
ডিহাইড্রেশন
● কারও ডিহাইড্রেশন হলে বার বার জল তেষ্টা পায়। আবার ঘন ঘন জল খেলেও শরীরে জল থাকতে পারে না। এমন সময় জলের পরিবর্তে লেবু-জল বা ইলেক্ট্রল দ্রবণযুক্ত জল পান করলে ভালো হয়।
রক্তের পরিমাণ কমে যায়
● অনেকে হয়তো জানেন না, জলের অভাবে আমাদের শরীরে রক্তের পরিমাণ কমে যায়। সে কারণে দেহের সব অঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ রক্ত পৌঁছে দিতে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয় হৃদ্যন্ত্রকে। এতে স্বাভাবিক ভাবেই হৃদ্যন্ত্রের উপর চাপ বাড়ে। আচমকা হৃদ্স্পন্দন এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে যেতে পারে।
ঠান্ডা জল নয়
● অনেকে বৃষ্টির দিনেও ঠান্ডা জল খেতে পছন্দ করে। এতে কিন্তু হজমের সমস্যা বাড়তে পারে। পাশাপাশি, পেটে ব্যথা এবং ডায়েরিয়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে বেশি ঠান্ডা জল খাওয়ার ফলে। তাই স্বাভাবিক তাপমাত্রার জলপান করুন।