
কাল শুতে-শুতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। বিচ্ছিরি ব্যাপারটা যদি না-ঘটত, তাহলে অন্যরকম প্ল্যান ছিল পূষণের। কিন্তু কাপাডিয়ার উপর কালাদেওর আক্রমণ সমস্ত প্ল্যানটাই চৌপাট করে দিয়েছিল। সে ততক্ষণে ঠিক করে নিয়েছিল আজ ভদকা উইথ জিঞ্জার বিয়ারের সঙ্গে চিজ-বল্ আর স্মোকড্ ফিস্ অর্ডার করবে, তারপর আফটার রঁদ্যেভ্যু একটা গ্রেট সেক্স-সেশন এনজয় করবে। প্রি-ম্যারেজ সেক্স-সেশনের মতো রোমাঞ্চকর ব্যাপার আর কিছুতেই নেই। হানিমুনেও না। কিন্তু অর্ডার করার আগেই কলকাতার অফিস থেকে ম্যানেজার মুখুটিবাবু ফোন করলেন। তাড়াতাড়ি কাজে জয়েন করতে না পারলে ম্যানেজমেন্ট ডিসিশন নিয়েছেন যে, তাদের দু’জনকেই চাকরি থেকে নট্ করে দেবে। বিষয়টা পূষনের কাছে এত বিরক্তিকর। সে জানে, রিমিতার মামার ব্যাপারটা ম্যানেজমেন্ট জানে এবং সমঝেও চলে, অতএব যতই মুখে বলুক-নে-কেন, রিমিতাকে কাজ থেকে ছাঁটাই করার সাহস দেখাবে না। আর তার সঙ্গে রিমিতার কানেকশনও যেহেতু সকলেই মোটামুটি জানে, অতএব সরাসরি কিছু করবে না তাকেও। তবে নানা টার্গেট চাপিয়ে দিয়ে দিনের-পর-দিন হেনস্থা করার সুযোগটা ছাড়বে না। সমস্যাটা হচ্ছে রিমিতাকে নিয়ে। সে তার মামার কানেকশন কখনই ব্যবহার করতে চায় না। বিষয়টিকে সে ‘আনএথিক্যাল’ বলে। তার বক্তব্য হচ্ছে, “আমি যখন এই চাকরিটা পাই, তখন মামার নাম বা পদ ব্যবহার না করেই পাই। কেউ জানতও না মামার ব্যাপারটা। তাহলে এখন চাকরি বাঁচাতে আমাকে মামার পদাধিকার কেন ব্যবহার করতে হবে ? এতে তো নিজেকেই ছোট করা হয়ে যায়!” এবারেও সে একই কথা বলেছে। ফোনটা আসার পর দাঁত কিড়মিড় করতে করতে রেগে একেবারে ‘চটিতং’ হয়ে ছিল।
ভদকার কথাটি তুলতেই একেবারে এমনভাবে খ্যাঁক্ করে উঠেছিল যে, তক্ষুনি সে প্ল্যান ক্যানসেল। পূষণ ভয় পেয়েছিল, কামড়ে না দেয়। তবে ‘লাভ বাইট’ হলে সে আপত্তি করত না। ‘লাভ বাইটে’র একটা আলাদাই আনন্দ আছে। কাঁধে-পিঠে কিংবা গোপন জায়গায় লাভ-বাইট যে-কোন পুরুষেরই পরম প্রার্থীত। সে ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু তখন তেমন মুহূর্ত ছিল না। রিমিতা খুব একচোট চেঁচামেচি করার পর কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকল, তারপর পায়চারি করল খানিক, মা-কে ফোন করে অযথা ঝাড়ল, যেন—মা-ই বলে দিয়েছেন ম্যানেজমেন্টকে যে, তাদের দুজনের চাকরি ‘নট্’ করে দিতে। তারপর বারান্দায় বসে রইল একা। পূষণের মনেও দুর্ভাবনা হচ্ছিল ঠিকই, তবুও সে রিমিতার দুর্ভাবনাকে খানিকটা হালকা করতেই বারান্দায় উপস্থিত হয়ে লাভ-মেকিং করতে চেয়েছিল। দারুণ দুর্ভাবনার সময় সেক্স করলে সে দেখেছে, তার ভাবনার মাত্রাটা কমে আসে। কিন্তু এখানেও ব্যর্থ হল। রিমিতা কুকুর-বিড়ালের মতো দূর-দূর করে তাড়িয়ে দিল তাকে। যদিও রিমিতা নিজে খুব ডগ্ লাভার। অতএব কুকুর-বেড়ালের অধম যদি কিছু থাকে তো তার মতোই তাড়াল তাকে। সে সুড়সুড় করে ঘরে এসে বেডের উপর লম্বমান হয়ে মোবাইলে রাশিয়ান বেব্স দেখতে লাগল।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১১২: অপারেশন অপহরণ

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-৪৮: রান্নার জ্বালানি নারী স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ?
কিছুক্ষণ পরে রিমিতা ফিরে এসে বলল, “শোন, মেইল করে কালকেই চাকরি ছেড়ে দাও। আমিও দেবো। ওরা আমাদের বিরুদ্ধে কোন স্টেপ নেওয়ার আগে আমরাই নেবো!”
আড়চোখে রিমিতাকে দেখে পূষণ মিনমিন করে বলল, “পাগল না-কি? এই বাজারে আগে থেকে কোন জব না পেয়ে কেউ চাকরি ছাড়ে? আরে সংসার চলবে কী করে? খাবটা কী?”
“আমি খাওয়াব তোমায়! তুমি-আমি দুজনেই চাকরি ছেড়ে দেবো!” রিমিতা রুক্ষ গলায় বলল।
পূষণ ইয়ার্কি করার চেষ্টা করল, “তোমারটা তো আমি সবসময়েই খেতে চাই। সে চাকরি করলেও, না-করলেও। কিন্তু আমি সাধারণ খাবারদাবারের কথা বলছি আর-কি!” বলে কী একটা বাহাদুরি করেছে ভেবে নিয়ে একচোট হেসে নিল।
রিমিতা পূষণের পিঠে বিরাশি সিক্কা ওজনের একখানা চাপড় মেরে বলল, “তোমার সবসময়েই ইয়ার্কি তাই না? এই যে এখানে কালাদেও নামের এক রহস্যের জালে আমরা জড়িয়ে গিয়েছি, হোটেলে বেড়াতে এসে বন্দি হয়ে রয়েছি, কলকাতা থেকে আপিসের লোক সুযোগ বুঝে আমাদের অপমান করছে, কার্যত ভয় দেখাচ্ছে, তোমার কিছুতেই কি কিছু এসে যায়? গেলে এতটা ইয়ার্কি মারতে পারতে না!”
আড়চোখে রিমিতাকে দেখে পূষণ মিনমিন করে বলল, “পাগল না-কি? এই বাজারে আগে থেকে কোন জব না পেয়ে কেউ চাকরি ছাড়ে? আরে সংসার চলবে কী করে? খাবটা কী?”
“আমি খাওয়াব তোমায়! তুমি-আমি দুজনেই চাকরি ছেড়ে দেবো!” রিমিতা রুক্ষ গলায় বলল।
পূষণ ইয়ার্কি করার চেষ্টা করল, “তোমারটা তো আমি সবসময়েই খেতে চাই। সে চাকরি করলেও, না-করলেও। কিন্তু আমি সাধারণ খাবারদাবারের কথা বলছি আর-কি!” বলে কী একটা বাহাদুরি করেছে ভেবে নিয়ে একচোট হেসে নিল।
রিমিতা পূষণের পিঠে বিরাশি সিক্কা ওজনের একখানা চাপড় মেরে বলল, “তোমার সবসময়েই ইয়ার্কি তাই না? এই যে এখানে কালাদেও নামের এক রহস্যের জালে আমরা জড়িয়ে গিয়েছি, হোটেলে বেড়াতে এসে বন্দি হয়ে রয়েছি, কলকাতা থেকে আপিসের লোক সুযোগ বুঝে আমাদের অপমান করছে, কার্যত ভয় দেখাচ্ছে, তোমার কিছুতেই কি কিছু এসে যায়? গেলে এতটা ইয়ার্কি মারতে পারতে না!”
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১৫: এ কেমন রঙ্গ জাদু, এ কেমন রঙ্গ…/৩

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯৬: মা সারদার প্রথম মন্ত্রশিষ্যা ছিলেন দুর্গাপুরীদেবী
পূষণ মনে-মনে জিভ কাটল, কোথায় সে ভাবছিল, রাশিয়ান এক বেবসের ফোটো দেখিয়ে তার ল্যঁজেরির মতো একটা ল্যঁজেরি রিমিতা পরলে দারুণ লাগবে, সেই কথাটা পাড়বে, রিমিতা এতটাই সিরিয়াস মুখ করে কথাগুলি বলল যে, তার আর নিজের কথাটাই পাড়া হল না। সে বুঝল, আজ অন্যরকম মুড আশা করাটাই বৃথা। ভালোবাসা কোনও-কোনওদিন শুরু না হতে-হতেই এমনিভাবে চটকে যায়, আজও তেমনই একটা দিন। সে উঠে বসেছিল। তারপর রিমিতার কাঁথে হাত দিয়ে বলেছিল, “রিমি, কুল কুল!”
“কী কুল হবো?” পূষণের হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে বলেছিল রিমিতা, “এখানে বেমক্কা ফেঁসে গিয়েছি। আমরা সাতেও ছিলাম না, পাঁচেও ছিলাম না, ঘটনা-দুর্ঘটনা কোনওটাই আমাদের নিয়ে ঘটেনি, অথচ আমাদেরকেও আটকে পড়ে থাকতে হচ্ছে অন্যদের সঙ্গে, এটা কি মেনে নেওয়া যায়? আজ চাকরিটা যদি সত্যিই চলে যায় তাহলে নতুন চাকরি এখানকার থানার অফিসারেরা খুঁজে দেবেন?”
পূষণ বলল, “দেখো, ওঁদেরও কিছু করার নেই। যা নিয়ম সেটাই ফলো করছেন। আবার এটাও সত্যি যে, আমরাও বেকায়দায় পড়ে গিয়েছি। কিছু একটা ব্যবস্থা তো করতেই হবে!”
“সে তো করতেই হবে। আমি তোমাকে জানিয়ে দিচ্ছি, কলকাতায় ফিরে ওরা চাকরিতে জয়েন করতে দেয় ভালো কথা, তা হলেও নতুন জব আমি সার্চ করবো। ওইখানে আর থাকবো না। যারা এমপ্লয়িজদের সুবিধা-অসুবিধা বুঝতে চায় না, তাদের কাছে কাজ করা মানে নিজেকেই ছোট করা। আজ না-হয় ওরা মেনে নেবে, কিন্তু এরপর যে আবার কোনদিন এমন হবে না কে বলতে পারে?”
পূষণ বলল, “রক্ষে করো। আর এমন অভিজ্ঞতায় কোনদিনও পড়তে চাই না। যতই চিন্তা করছি, ততই যেন গোলোকধাঁধায় ঢুকে পড়ছি। কখন মনে হচ্ছে এ-সব অলৌকিক ব্যাপার, কখন মনে হচ্ছে অলক্ষ্যে থেকে কোন বদমাশ্ গ্যাং-এর কাজ। কিন্তু কী জানো, মেলাতে পারছি না ঠিক!”
“কী মেলাতে পারছ না?” একটু আগের চিন্তার ধারা থেকে সরে এসে রিমিতা প্রশ্ন করল। যদিও তার ভ্রু-ভঙ্গি বঙ্কিমই রইল।
“কালাদেও যদি থাকেন, তিনি স্থানীয় মানুষদের উপর কোন কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে আক্রমণ করতেই পারেন। যতদূর জানা যাচ্ছে তেমনটাই করছিলেন। কিন্তু এখানে বেড়াতে আসা ট্যুরিস্ট পার্টির উপরে তাঁর কী আক্রোশ থাকতে পারে? তাছাড়া লক্ষ্য করে দেখো, বেছে-বেছে তাঁর আক্রোশ ‘পিশাচ-পাহাড় রিসর্ট’-এর উপরেই। এখানেই এসে তিনি দু’-দু’জনকে মার্ডার করলেন। যদিও তাদের একজন আধা-স্থানীয় বলতে পারো, বাড়ি দূরে হলেও এই রিসর্টেই কাজ করতো, কিন্তু বহিরাগত তো। পেটের ধান্ধায় কাজ করতো। করতে বাধ্য হয়েছিল। তাকে হত্যা করে কালাদেও কী প্রমাণ করতে চাইছেন?”
“কী কুল হবো?” পূষণের হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে বলেছিল রিমিতা, “এখানে বেমক্কা ফেঁসে গিয়েছি। আমরা সাতেও ছিলাম না, পাঁচেও ছিলাম না, ঘটনা-দুর্ঘটনা কোনওটাই আমাদের নিয়ে ঘটেনি, অথচ আমাদেরকেও আটকে পড়ে থাকতে হচ্ছে অন্যদের সঙ্গে, এটা কি মেনে নেওয়া যায়? আজ চাকরিটা যদি সত্যিই চলে যায় তাহলে নতুন চাকরি এখানকার থানার অফিসারেরা খুঁজে দেবেন?”
পূষণ বলল, “দেখো, ওঁদেরও কিছু করার নেই। যা নিয়ম সেটাই ফলো করছেন। আবার এটাও সত্যি যে, আমরাও বেকায়দায় পড়ে গিয়েছি। কিছু একটা ব্যবস্থা তো করতেই হবে!”
“সে তো করতেই হবে। আমি তোমাকে জানিয়ে দিচ্ছি, কলকাতায় ফিরে ওরা চাকরিতে জয়েন করতে দেয় ভালো কথা, তা হলেও নতুন জব আমি সার্চ করবো। ওইখানে আর থাকবো না। যারা এমপ্লয়িজদের সুবিধা-অসুবিধা বুঝতে চায় না, তাদের কাছে কাজ করা মানে নিজেকেই ছোট করা। আজ না-হয় ওরা মেনে নেবে, কিন্তু এরপর যে আবার কোনদিন এমন হবে না কে বলতে পারে?”
পূষণ বলল, “রক্ষে করো। আর এমন অভিজ্ঞতায় কোনদিনও পড়তে চাই না। যতই চিন্তা করছি, ততই যেন গোলোকধাঁধায় ঢুকে পড়ছি। কখন মনে হচ্ছে এ-সব অলৌকিক ব্যাপার, কখন মনে হচ্ছে অলক্ষ্যে থেকে কোন বদমাশ্ গ্যাং-এর কাজ। কিন্তু কী জানো, মেলাতে পারছি না ঠিক!”
“কী মেলাতে পারছ না?” একটু আগের চিন্তার ধারা থেকে সরে এসে রিমিতা প্রশ্ন করল। যদিও তার ভ্রু-ভঙ্গি বঙ্কিমই রইল।
“কালাদেও যদি থাকেন, তিনি স্থানীয় মানুষদের উপর কোন কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে আক্রমণ করতেই পারেন। যতদূর জানা যাচ্ছে তেমনটাই করছিলেন। কিন্তু এখানে বেড়াতে আসা ট্যুরিস্ট পার্টির উপরে তাঁর কী আক্রোশ থাকতে পারে? তাছাড়া লক্ষ্য করে দেখো, বেছে-বেছে তাঁর আক্রোশ ‘পিশাচ-পাহাড় রিসর্ট’-এর উপরেই। এখানেই এসে তিনি দু’-দু’জনকে মার্ডার করলেন। যদিও তাদের একজন আধা-স্থানীয় বলতে পারো, বাড়ি দূরে হলেও এই রিসর্টেই কাজ করতো, কিন্তু বহিরাগত তো। পেটের ধান্ধায় কাজ করতো। করতে বাধ্য হয়েছিল। তাকে হত্যা করে কালাদেও কী প্রমাণ করতে চাইছেন?”
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১১২: প্রশাসক রামচন্দ্রের সাফল্য কী আধুনিক কর্মব্যস্ত জীবনে সফল প্রশাসকদের আলোর দিশা হতে পারে?

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫৫: সর্বত্র বরফ, কোত্থাও কেউ নেই, একেবারে গা ছমছম করা পরিবেশ
রিমিতা বলল, “কালাদেও হয়তো এত ট্যুরিস্ট-পার্টির আনাগোনা পছন্দ করছেন না। তাঁর শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে। সত্যি বলতে কী, কয়েকবছর আগেও এই স্পটের কথা লোকে জানতও না, শোনা তো দূরের কথা। অথচ তখনও এই পাহাড়টি এই নামেই ছিল, এই কালাদেও নামক সত্যি কিংবা মিথ্যে দেবতাটিও ছিলেন। কিন্তু তখন যেহেতু এখানে এত ভিড়-ভাট্টা, সারাবছর ধরে আই আমাদের এত হই-হুল্লোড় হয়তো ছিল না। ফলে দেবতা ক্রুদ্ধও হননি। এখন হচ্ছেন, কারণ, এখন আমরা এসে ভিড় করে সারাবছরই তাঁকে বিরক্ত করছি!”
পূষণ বলল, “মাই ডিয়ার রিমি, যদি তেমনটাই হয়, তাহলে পিশাচপাহাড় রিসর্ট বাদ দিয়েও এখানে খান পাঁচ-ছয় আরও যে রিসর্ট আছে, সেগুলিতেও হামলা হতো। আর যে-রিসর্টগুলি তৈরি হচ্ছে, সেগুলি তৈরিতেও বাধা দিতেন তোমার দেবতা থুড়ি অপদেবতাটি। তা কেন করছেন না তিনি? যত রাগ এই রিসর্টে ওঠা কিংবা কাজ করা মানুষগুলির প্রতিই? কেন?”
“এটা একটা পয়েন্ট বটে। তোমার পুলিশের চাকরিতে চেষ্টা করা উচিত!” রিমিতা খানিকটা ঠাট্টার সুরে বলল শেষের কথাটি।
“আমিও জানি উচিত। তা কলকাতায় ফিরে তোমার মামাকে বলো না, ওঁর উমেদারিতে যদি পুলিশ-ফোর্সে জয়েন করতে পারি, তাহলে কথা দিচ্ছি মায়ামিতে বিচ-সেক্স করবো তোমার সঙ্গে!” বলে ফিচেল হাসি হাসল পূষণ। রিমিতা হাসল না। সে কিছু যেন ভাবছিল। অন্যমনস্ক লাগছিল তাকে। পূষণ ভাবল, রিমিতা আবার হয়তো ফিরে গিয়েছে তার আগের চিন্তায়। চিন্তা তারও যে হচ্ছে না, তা নয়। ম্যানেজারকে কোনভাবে বুঝিয়েছে সে। এই সপ্তাহতেই তারা ফিরে যাবে এবং আগামী সোমবার অফিস আলো করে কাজ শুরু করবে। কিন্তু ভিতরে-ভিতরে দুশ্চিন্তা হচ্ছে। কাল পুলিশকে রিকোয়েস্ট করবে সে, কিন্তু যদি রাজি না হয় তাঁরা?
কিন্তু এখন দরকার রিমিতার মেজাজ ভালো করা। সে আলতো স্বরে ডাকল, “রিমি, অ্যাই রিমি, কী ভাবছ? আবার চুপ করে গেলে কেন কথা বলতে বলতে?”
রিমিতা প্রথমে সাড়া দিল না। বার-দুয়েক ডাকার পরে হঠাৎ যেন ঘুম থেকে জেগে উঠল, এমনভাবে বলল, “আচ্ছা জানো, একটু আগে আমি যখন বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলাম, তখন পাশের ব্যালকনি থেকে কেউ একটা পিছনের গেটের উপর আলো ফেলছিল!”
“মানে?” অবাক হয়ে গেল পূষণ, “কে আলো ফেলবে? কেনই বা ফেলবে?”
“আমিও তো সেটাই ভাবছি। পাশের রুমে তো ওই ট্যুরিস্ট পার্টির কেউ উঠেছে বলেই মনে হয়, যদিও আমি কাউকে দেখিনি, তবে তাদের মধ্যেই কেউ হবে। কিন্তু কেন?”
“আরে হয়তো বারান্দায় তারাও কেউ দাঁড়িয়েছিল। এমনই কোন কারণ ছাড়াই মনের খেয়ালে আলো ফেলে মজা করছিলেন। ছাড় তো!” পূষণ হেসে উড়িয়ে দেয়।
“ওঁরা কেউ বাচ্চা নন কিন্তু পূষণ। এত রাতে পিছনের গেটে আলো ফেলে মজা করবেন এ-আবার কেমন কথা? তার উপর আলোটা বৃত্তাকারে ঘোরাচ্ছিলেন। ঠিক যেমন কোন সংকেত দিতে গেলে করে না মানুষ, ঠিক তেমন!”
পূষণ অবাক হল। আলো ফেলে সংকেত দিচ্ছিল। কিন্তু কেন? দিচ্ছিলই বা কে?
পূষণ বলল, “মাই ডিয়ার রিমি, যদি তেমনটাই হয়, তাহলে পিশাচপাহাড় রিসর্ট বাদ দিয়েও এখানে খান পাঁচ-ছয় আরও যে রিসর্ট আছে, সেগুলিতেও হামলা হতো। আর যে-রিসর্টগুলি তৈরি হচ্ছে, সেগুলি তৈরিতেও বাধা দিতেন তোমার দেবতা থুড়ি অপদেবতাটি। তা কেন করছেন না তিনি? যত রাগ এই রিসর্টে ওঠা কিংবা কাজ করা মানুষগুলির প্রতিই? কেন?”
“এটা একটা পয়েন্ট বটে। তোমার পুলিশের চাকরিতে চেষ্টা করা উচিত!” রিমিতা খানিকটা ঠাট্টার সুরে বলল শেষের কথাটি।
“আমিও জানি উচিত। তা কলকাতায় ফিরে তোমার মামাকে বলো না, ওঁর উমেদারিতে যদি পুলিশ-ফোর্সে জয়েন করতে পারি, তাহলে কথা দিচ্ছি মায়ামিতে বিচ-সেক্স করবো তোমার সঙ্গে!” বলে ফিচেল হাসি হাসল পূষণ। রিমিতা হাসল না। সে কিছু যেন ভাবছিল। অন্যমনস্ক লাগছিল তাকে। পূষণ ভাবল, রিমিতা আবার হয়তো ফিরে গিয়েছে তার আগের চিন্তায়। চিন্তা তারও যে হচ্ছে না, তা নয়। ম্যানেজারকে কোনভাবে বুঝিয়েছে সে। এই সপ্তাহতেই তারা ফিরে যাবে এবং আগামী সোমবার অফিস আলো করে কাজ শুরু করবে। কিন্তু ভিতরে-ভিতরে দুশ্চিন্তা হচ্ছে। কাল পুলিশকে রিকোয়েস্ট করবে সে, কিন্তু যদি রাজি না হয় তাঁরা?
কিন্তু এখন দরকার রিমিতার মেজাজ ভালো করা। সে আলতো স্বরে ডাকল, “রিমি, অ্যাই রিমি, কী ভাবছ? আবার চুপ করে গেলে কেন কথা বলতে বলতে?”
রিমিতা প্রথমে সাড়া দিল না। বার-দুয়েক ডাকার পরে হঠাৎ যেন ঘুম থেকে জেগে উঠল, এমনভাবে বলল, “আচ্ছা জানো, একটু আগে আমি যখন বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলাম, তখন পাশের ব্যালকনি থেকে কেউ একটা পিছনের গেটের উপর আলো ফেলছিল!”
“মানে?” অবাক হয়ে গেল পূষণ, “কে আলো ফেলবে? কেনই বা ফেলবে?”
“আমিও তো সেটাই ভাবছি। পাশের রুমে তো ওই ট্যুরিস্ট পার্টির কেউ উঠেছে বলেই মনে হয়, যদিও আমি কাউকে দেখিনি, তবে তাদের মধ্যেই কেউ হবে। কিন্তু কেন?”
“আরে হয়তো বারান্দায় তারাও কেউ দাঁড়িয়েছিল। এমনই কোন কারণ ছাড়াই মনের খেয়ালে আলো ফেলে মজা করছিলেন। ছাড় তো!” পূষণ হেসে উড়িয়ে দেয়।
“ওঁরা কেউ বাচ্চা নন কিন্তু পূষণ। এত রাতে পিছনের গেটে আলো ফেলে মজা করবেন এ-আবার কেমন কথা? তার উপর আলোটা বৃত্তাকারে ঘোরাচ্ছিলেন। ঠিক যেমন কোন সংকেত দিতে গেলে করে না মানুষ, ঠিক তেমন!”
পূষণ অবাক হল। আলো ফেলে সংকেত দিচ্ছিল। কিন্তু কেন? দিচ্ছিলই বা কে?
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯৭: পাতি সরালি

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭৭: পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যাঁর জীবনের আকাশে কখনও শত্রুতার মেঘ জমেনি
এমন সময় নিচে চিৎকার-চেঁচামেচির আওয়াজ শোনা গেল। আর তারপরেই জানা গেল, কাপাডিয়ার উপর আক্রমণ করেছে কালাদেও। তারপর পুলিশ এল। তদন্ত-জিজ্ঞাসাবাদ—সারারাত্রি পুরো মাটি। অনেক রাতে শুতে গিয়েছিল তারা। উঠতেও দেরি হল সেইজন্য। ঘুম ভাঙতেই প্রথমে আধো-আলোছায়াতে রিসর্টের রুমখানা দেখে কেমন অচেনা লাগছিল। মাথার পাশে মোবাইল রাখা আছে, সেখানে সময় দেখল পূষণ, সাড়ে দশটা। অন্য পাশে শুয়ে থাকা রিমিতাকে ডাকবার জন্য হাত বাড়িয়ে সে দেখল, বেড খালি। কেউ নেই। রিমিতা ঘুম ভেঙে উঠে পড়েছে। ওয়াশরুমে গেছে না-কি ? উঠে পড়ে ওয়াশরুমের সামনে গিয়ে দেখল, এ-পাশ থেকে ওয়াশরুমের দরজা লক করা। রিমিতা তাহলে ওয়াশরুমে নেই। বারান্দায় উঁকি দিল, কিন্তু বারান্দাও শূন্য ছিল। কোথায় গেল তবে ? তার দেরি দেখে ব্রেকফাস্ট করতে নিচে গেল ? কিন্তু আজ অবধি রিমিতা তো তেমনটা করেনি। তাহলে ? মুখে-চোখে জলের ঝাপটা দিয়ে রাতপোশাক বক্সার শর্টস আর রাউণ্ডনেক্ টি’ পরেই সে রুমের বাইরে বেরিয়ে এল, আর তখনই দেখতে পেল, পাশের রুমের দরজার সামনে রিমিতা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“রিমিতা?” ডাকল পূষণ, “কী করছ এখানে?”
তার ডাকে ঘাড় ঘোরাল রিমিতা, তারপর আঙুল তুলে দেখাল রুমের দিকে। রুমের দরজায় এত বড় একখানা তালা ঝুলছে, আর দরজার মাথায় লেখা ক্লোক-রুম্! —চলবে।
“রিমিতা?” ডাকল পূষণ, “কী করছ এখানে?”
তার ডাকে ঘাড় ঘোরাল রিমিতা, তারপর আঙুল তুলে দেখাল রুমের দিকে। রুমের দরজায় এত বড় একখানা তালা ঝুলছে, আর দরজার মাথায় লেখা ক্লোক-রুম্! —চলবে।
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel): পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।