বৃহস্পতিবার ৯ জানুয়ারি, ২০২৫


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

ধৃতিমানের আশঙ্কা সত্যি হল। ভোররাতে গ্রেফতার করা হল ডাক্তার সুরজিৎ ব্যানার্জিকে। পরদিন কলকাতার প্রায় সমস্ত প্রথমসারির দৈনিক শেষরাতে পাওয়া এই গুরুত্বপূর্ণ খবর ছোট করে হলেও প্রথমপাতায় ছেপে দিলেন। তবে কোনও এক অজানা কারণে খবরওয়ালারা, কৌশিকী ও ডাক্তার সুরজিৎ ব্যানার্জির মধ্যের রগরগে রসায়নের খোঁজ এখনও পাননি। মনে হয় পুলিশ বিভাগের ছিদ্রগুলো দেরিতে হলেও সাবধানতার ‘এম-সিল’ দিয়ে আপাতত মেরামত করা গিয়েছে।
মাঝরাতে পুলিশ গিয়েছিল ডাক্তার সুরজিৎ ব্যানার্জির লাউডন স্ট্রিটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে। সেখানে তার স্ত্রী এবং একমাত্র ছেলে অঙ্কুশ থাকে। মিশন ইউটিউবানন্দের রাস্তায় রওনা দিয়ে শ্রেয়া বাসুর কাছে সবটা জানা গেল। এসিপি রণজয় রায় নিজে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন আমাদের পরিচিত চরিত্র কনস্টেবল দত্ত। সেই যে ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের জোড়া শিব। বড়কর্তা ডিসিডিডি ভৈরব চক্রবর্তী আর কনস্টেবল ভৈরব দত্ত। দু’জনেই ভৈরব বলে আমরা ছোটজনকে দত্ত বলে ডাকি। দত্তর কাছ থেকেই ভোরবেলায় শ্রেয়া পুরো খবরটা পেয়েছেন। দরজা খুলে ছিলেন ডাক্তার ব্যানার্জির ছেলে অঙ্কুশ ব্যানার্জি। পুলিশ দেখে ঘাবড়ে যান। তারপর জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলেন যে পুলিশ তার বাবা ডক্টর সুরজিৎ ব্যানার্জির সঙ্গে দেখা করতে চান।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-৬১: বাথটাব/১৩

শ্যাম বেনেগল সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে পারতেন

বেডরুম থেকে বাবাকে ডেকে দিয়ে ছেলে তার ঘরে ঢুকে যায়। খানিক পরেই ডক্টর ব্যানার্জি হলঘরে আসেন। না সঙ্গে তাঁর স্ত্রী আসেননি। ডাক্তার ব্যানার্জিকে এসিপি রণজয় রায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকেন। প্রায় সবটুকুই অভিনেত্রী কৌশিকী দত্তগুপ্তকে নিয়ে। বাড়ির মধ্যে এই ধরনের প্রশ্ন উত্তরে সম্ভবত ডাক্তার ব্যানার্জির অসুবিধা হচ্ছিল। নিউটাউনের হোটেলে তিনি গিয়ে কৌশিকীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোন জবাব দেননি। বরং তিনি বলেন যে তিনি পুলিশ ডিপার্টমেন্টে গিয়ে সব কথা জানাবেন।
আরও পড়ুন:

ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব ৪৩: বীরবিক্রম ত্রিপুরায় শিক্ষা সম্প্রসারণে বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছিলেন

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৭৯: সুন্দরবনের পাখি: টুনটুনি

—এত স্বেচ্ছামৃত্যুর মতো খানিকটা স্বেচ্ছাগ্রেফতার হয়ে গেল!
—হ্যাঁ, হয়তো বাড়িতে কৌশিকীর প্রসঙ্গ এড়াতে চেয়েছিলেন। তবে আজ সকালের আমাদের অফিসে ইন্টারোগেশনের সময় তিনি স্বীকার করেছেন যে কৌশিকী সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। এমনকি সিঙ্গাপুরে একসঙ্গে সময় কাটানোর কথা অস্বীকার করেননি। তবে খুনের কথা তিনি স্বীকার করেননি।
—মফিজুল একটা ইম্পরট্যান্ট খবর জানিয়েছে। ওয়াইনের গ্লাসে কারও হাতের ছাপ নেই।
—তার মানে গ্লাসটা ফোর্সড এভিডেন্স। কনফিউজ করার জন্য।
—হ্যাঁ, ডেথ প্ল্যানটা রিবিল্ট করার ক্রোনোলজিটা ডিস্টার্ব করে দিতেই ওটা করা। এভিডেন্স ট্যাম্পারিং এক জিনিস, কিন্তু এভিডেন্স অল্টার করলে ইনভেস্টিগেশনকে ডাইভার্ট করে দেওয়া যায়, মিসলিড করা যায়।
—কিন্তু গ্লাসে লিপস্টিকের মার্কটা?
—হ্যাঁ, ওটা কৌশিকীর। কিন্তু কৌশিকী স্নান করতে করতে ওয়াইনের গ্লাসটাতে শুধু ঠোঁটটুকু ছোঁয়াবে কীকরে? হাতের ছাপ লাগবে না? এত গ্লাসে গ্লাসে টুং করে ছোঁয়ানো চিয়ার্স করা নয়। বাই দ্য হয়ে, সিনেমাতে এই ধরনের দৃশ্য নিয়ে এলে মন্দ হবে না। ভিলেনের হয়তো স্বভাব সুন্দরী মহিলার লিপস্টিকরঞ্জিত ঠোঁটে নিজের মদের গ্লাস ছুঁইয়ে তারপর মদ্যপান করেন।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৯৫: বিরোধিতায় নয়, মৈত্রীবন্ধনেই রয়েছে পারিবারিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানসূত্র

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৬৯: এক লড়কি কো দেখা তো অ্যায়সা লগা

শ্রেয়া মিটিমিট হাসছে—
—আপনি তো এমন ছবি করেন না। এমন দৃশ্য লিখবেন কি করে?
—লিখতে পারলে মন্দ হতো না ম্যাডাম। এই বাজারে বেশ টাকাপয়সা করে নিয়ে একটা ঝাঁ চকচকে অফিসঘর করে নিয়ে বসতে পারতাম। জোকস অ্যাপার্ট। ডক্টর ব্যানার্জির ল’ইয়ার কে?
—জবরদস্ত ল’ইয়ার সুগত মল্লিক!
—বাপরে! ডাইরেক্ট এভিডেন্স প্রুফ করতে না পারলে কোর্টে তো উনি পুলিশকে ছেঁচে থেঁতো করে দেবেন।
—সেটা নিয়ে টেনশন তো আছেই।
গড়িয়ার কবি নজরুল মেট্রো স্টেশন টপকাতেই আমি শ্রেয়াকে জিজ্ঞেস করলাম জিজ্ঞেস করলাম—
—আমরা কি এসে গিয়েছি?
—হ্যাঁ! আর দু’ মিনিট। গড়িয়া ৫ নম্বর বাস স্ট্যান্ড ওয়াও মোমোর পাশে থার্ড বাড়ি!
—ইউটিউবার বাবাজি থাকবেন তো?
—সকালবেলা একজন সোর্স ওর কাছে চলে গিয়েছে। ও সেখানে বসে আছে। লোকেশন সোর্সই পাঠিয়েছেন।
এই জন্য শ্রেয়াকে ভৈরব চক্রবর্তী এত ভরসা করেন। যেকোনও দায়িত্ব একেবারে গুছিয়ে পালন করে। আঁটোসাঁটো ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৮: প্রতিভা দেবী—ঠাকুরবাড়ির সরস্বতী

গল্পবৃক্ষ, পর্ব-১১: কাঁটার মুকুট

কমবয়সী ছেলে। বছর সাতাশ বয়স হবে। মাথায় বড় বড় চুল, অবিন্যস্ত দাড়ি। শ্রেয়া শুরু করলেন!
—এটা আপনার কাজের জায়গা?
—হ্যাঁ, বাড়ির বাইরের ঘর ছিল। এখন ওদিক দিয়ে আর একটা দরজা করে নিয়েছি।
—কেমন রোজগার হয়?
—এখন তো খুবই সামান্য। ভিউয়ারশিপ বাড়লে পরে হয়তো বাড়বে।

শ্রেয়া চেয়ার টেনে ছেলেটির মুখোমুখি বসলেন। শ্রেয়ার সোর্স একজন মাঝবয়েসী মানুষ। দেখে ঘুণাক্ষরেও বোঝার উপায় নেই যে তিনি পুলিশের সঙ্গে যুক্ত। ঘরে গিয়ে ঢুকতেই তিনি বাইরে বেরিয়ে গিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। এখন বাইরে থেকে কেউ ছেলেটির কাছে এলে তাকে যাতে আটকে দেওয়া যায়। বাড়ির ভিতরে যাবার দরজাটা শ্রেয়া ছিটকিনি তুলে বন্ধ করে দিল। দেখে ছেলেটা ঘাবড়ে গিয়েছে মনে হল।—চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

কৌশিকি দত্তগুপ্ত হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪।


Skip to content