শুক্রবার ৮ নভেম্বর, ২০২৪


ছবিটা দেখে বাবলি প্রথমে থতিয়ে গিয়েছিল। এতটা সাবধানতা নেবার পরেও এরকম কোনও ছবি উঠবে সেটা সে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। আর তার এই থতিয়ে যাওয়াতেই প্রণয় বাবলির সঙ্গে অরুণাভর সম্পর্কের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে গেল।
—কি হল জবাব দাও!! কী চলছে তোমাদের মধ্যে!
বাবলি চুপ। সে তার মুখটা ঘরের জানলার দিকে ঘুরিয়ে নেয়। প্রণয় বারবার হেরে যায়। বুবু মানে সৌরভের কাছে ছোটবেলায় স্কুল থেকে এই সেদিন পর্যন্ত হেরে এসেছে । সৌরভকে পারিবারিক ব্যবসাতে কোণঠাসা করতে গিয়ে নিজেই সবার কাছে ছোট হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে বা অফিসে কেউই প্রণয়ের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলে না। সৌরভ বসুন্ধরা গ্রুপের চাকরি এক কথায় ছেড়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় সিটি ব্যাংকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব নিয়ে সপরিবারে বিদেশে চলে গিয়েছে। সে বিদেশেই উচ্চপদে ছিল।
দাদুর অনুরোধ রাখতে সব প্রলোভন ছেড়ে দেশে ফিরে বসুন্ধরা গ্রুপ অফ কোম্পানিজে কাজ শুরু করেছিল একথা অফিসের বেয়ারা বা দারোয়ানরাও জানে। এটাও প্রত্যেকে জানে যে প্রণয়কান্তি দত্ত সৌরভ সেনগুপ্তকে অপমান করে বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে চলে যেতে বাধ্য করেছে। সৌরভের একটুও ক্ষতি হয়নি। সে বসুন্ধরা গ্রুপের থেকে কয়েকশো গুণ বড় কোম্পানিতে আরও আরও অনেক বড় পদে কর্মরত। তাঁর কর্মক্ষেত্র এখন গোটা পৃথিবী। প্রণয় ক্লাবে জুয়াতেও জিততে পারে না, আগরয়াল হয়ত এতক্ষণে এই ছবি আরও অনেককে দেখিয়ে এটা প্রমাণ করে দিয়েছে যে প্রণয় তার স্ত্রীকেও হারিয়েছে। ন’কাকা মানে প্রণয়ের বাবা তাঁর সবকিছু বাবলির নামে লিখে দিয়েছেন ব্যবসার লভ্যাংশ এখন প্রণয় পায় না। বসুন্ধরা গ্রুপের অন্যান্য অনেক কর্মচারীর মতোই প্রণয়কান্তি দত্ত উচ্চ বেতনভোগী কর্মচারী।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., বসুন্ধরা এবং…, ৩য় খণ্ড, পর্ব-৪০: ছোবল

গল্পবৃক্ষ, পর্ব-৩: ভাবিয়া করিও কাজ

বুবুর সঙ্গে ব্যক্তিগত বিদ্বেষ মেটাতে প্রণয়ের স্টাফ ওয়েলফেয়ারের ফাইল আটকে রাখা তারপর বুবুকে অপমান, তার চাকরী ছেড়ে বিদেশ যাবার পর বড় জ্যাঠামণি গগনকান্তি স্টাফ ওয়েলফেয়ারের দায়িত্ব থেকে প্রণয়কে সরিয়ে দিয়ে নিজের হাতে নিলেন। বেশ কিছুদিন তাকে বিনা দায়িত্বে রেখে মাইনে দেওয়া হল। মানে হালে আইটিতে ক্লায়েন্ট না নেওয়া কর্মীদের যে ভাবে বেঞ্চে বসিয়ে রাখা হয়। সেই সব কর্মীরা ভয়ঙ্কর আতঙ্কে দিন গোনেন, ছাঁটাই শুরু হলে প্রথম খাঁড়া তাঁদের ওপরেই আসবে। প্রণয়ের দাদুর কোম্পানি তাই ছাঁটাই হবার ভয় নেই কিন্তু কোন কাজও নেই। বড়জেঠামণি গগনকান্তি তাই প্রণয়কান্তির কোম্পানির গাড়ি পাবার সুবিধেও বন্ধ করে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন দাদুর বারণে সে সুযোগ বন্ধ হয়নি।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮৬: সুযোগ্য প্রশাসকের মৃত্যুর অভিঘাত

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৬৯: শ্রীমার সন্তানস্নেহ

আসলে দাদু নিয়ম করেছিলেন কোম্পানির গাড়ি পেতে গেলে ডিপার্টমেন্ট হেড করতে হবে। বসুন্ধরা ভিলার সদস্য হলেই সে কোম্পানির গাড়ি পাবে না। সু্যোগটা জন্মাধিকার নয় নিজস্ব কৃতিত্বে অর্জিত অধিকার। আমি নিজে বসুন্ধরা কন্সট্রাক্সনের দ্বায়িত্ব পাবার পরেই এই সুযোগ পেয়েছি। বুবু অনেক কমবয়েসে ফাইন্যান্স হেড করতো তাই কোম্পানি তার গাড়ির ব্যবস্থা করেছিল আর তারকবাবু ব্রড স্ট্রিটে চলে আসার পর প্রতিদিন গগনকান্তি বা বিকাশকান্তি তাঁকে গাড়িতে তুলে নিয়ে লাউডন স্ট্রিটের অফিসে যেতেন। যখন ক্লাইভ রোয়ে অফিস ছিল তখন বাবু তাঁর ক্রিক রো’র মেস থেকে বেরিয়ে মৌলালী থেকে ট্রামে চড়ে ডালহাউসি পৌঁছতেন। কিন্তু স্টাফ ওয়েলফেয়ার ফাণ্ড ফাইন্যান্সেরই অংশ। সেই যুক্তিতে প্রণয়ের এ সুযোগ পাবার কথা নয়। তবু সুযোগটা সে পেতো। কিন্তু প্রতিমূহুর্তে সে ভিতরে ভিতরে অপমানিত বোধ করতো। কোম্পানির কোনও সিদ্ধান্তে মতামত দূরের কথা।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৭১: সুন্দরবনের পাখি: সবুজ বক

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’

কোম্পানির কোনও কিছুতে তার কোনও যোগাযোগ নেই, সে কিছু জানতে পারছে না। এই অবস্থায় যেকোন মানুষ চাকরী ছেড়ে বেরিয়ে যাবে প্রণয়ের সে উপায় নেই, সে জানে তার যোগ্যতায় সে এমন কোন চাকরি পাবে না যাতে তার মান বজায় থাকবে। ক্লাবে বন্ধুমহলে পার্টিতে ইয়ারদোস্ত এখনও জানে প্রণয়কান্তি বসুন্ধরা গ্রুপের এক্সিকিউটিভ।

সেই সমস্ত জমে থাকা ক্ষোভ থেকে প্রণয় সেদিন ছবিতে অরুণাভ আর বাবলিকে রেস্তঁরায় একসঙ্গে দেখে উন্মত্ত হয়ে ওঠল। সে পাগলের মতো চিৎকার করতে লাগল—
— প্রেম করছ? অরুণাভ’র সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছ? বিজয়ার দিন বাড়ির পুজো ফেলে ডেটে গিয়েছিলে?
আরও পড়ুন:

দশভুজা, দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪২: যোগমায়া দেবী—এক প্রতিবাদী নারী

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

বাবলি জবাব দেয় না। যে কোনও মেয়ের মতো ও প্রতিবাদ করছে না, ভয় পাচ্ছে না, অপমানিত বোধ করছে না। বাবলি নিজেকে দেখে নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছে। বাবলির ভেতরে ভেতরে আনন্দ হচ্ছে মনে হচ্ছে এখনও এতদিন পরেও অরুণাভ’র সঙ্গে একটা ছবি দেখে সত্যিমিথ্যে না জেনেই প্রণয়ের রাগ হচ্ছে, হিংসে হচ্ছে। তার মানে প্রণয়ের ভেতরে ভেতরে বাবলির জন্যে এখনও এতটা গুরুত্ব আছে? এই ভাবনাটার জন্য বাবলির চোখে জল এল। প্রণয় বাবলির চোখে জল দেখে কী বুঝলো ? বাবলি দুঃখ পেয়েছে? মানবমনের এই বিচিত্র ছবি মানসিক গতির ভিন্ন অভিমুখ প্রতিনিয়ত আমাদের জীবনকে সরলরেখা বক্ররেখা বৃত্ত জ্যা ব্যাস ব্যাসার্ধ ত্রিভুজ চতুর্ভুজের জটিল জ্যামিতিতে ভাঙ্গছে গড়ছে আবার ভাঙ্গছে।

বহুদিন বাদে স্টাফ ওয়েলফেয়ারের কথা ওঠার সঙ্গে কাকতালীয় যোগাযোগ কিনা জানিনা কিন্তু টেলিগ্রামে একটা মন ভেঙ্গে দেওয়া খবর এল। প্রেরক মিসেস ডরোথি উইলিয়ামস, লন্ডন। তাতে পিটার উইলিয়ামসের দেহবসানের দুঃসংবাদ। বসুন্ধরা গ্রুপের সব শাখা সংস্থায় একদিন ছুটি দেওয়া হল। —চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম


‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com

Skip to content