রবিবার ১৭ নভেম্বর, ২০২৪


ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে ঘুমের মধ্যেই মেয়ে শিবানী আর নাতনি ঈশানীকে ছেড়ে চলে গেলেন শুভ্রা সেন। শিবানীর বাবা মণিকান্ত আগেই মারা গিয়েছেন। চুঁচুড়া রেল স্টেশনের কাছে লেনিননগরের বাড়ি বিক্রি হয়ে গিয়েছে। শিবানীর ছোট বোন বনানী বহুদিন আগেই বিডিও অফিসের চাকরি ছেড়ে স্কুলের চাকরি করছিল। এখন সে অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেস। বনানীর একমাত্র ছেলে কৌশিক মাধ্যমিকে খুব ভালো রেজাল্ট করেছিল। এখন উচ্চ মাধ্যমিক পড়ছে। ক্লাস টেনের পর থেকেই সে জয়েন্ট এন্ট্রান্স এর প্রিপারেশন নিচ্ছে। বনানীর স্বপ্ন ছেলেকে ডাক্তারি পড়ানোর।
শিবানীর মেয়ে ঈশানী এখন সবে ক্লাস এইট। ও কসবার হালতুর অনেকটা ভিতরে একটা এককামরার ফ্ল্যাট কিনতে পেরেছে। লেনিননগরেরবাড়ি বিক্রির যে টাকা, তার সঙ্গেই শিবানীর এতদিনের জমানো টাকা মিলিয়ে বাড়িটা কেনা সম্ভব হয়েছে। ছোটকা কে.কে চেয়েছিলেন শিবানীকে সাহায্য করতে। শিবানী আর্থিক সাহায্য নিতে অস্বীকার করেছিল। বদলে বলেছিল—
—যদি সত্যি সাহায্য করতে চান তাহলে আমাকে একটা ব্যাংক লোন পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং…, ৩য় খণ্ড, পর্ব-৩৫: অরুণাভ-বাবলির যোগাযোগ প্রণয়ের মনে সন্দেহ বাড়াচ্ছে

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৬৩: বেলুড়মঠে শ্রীমায়ের অভিনন্দন

বসুন্ধরা ভিলার কমলকান্তি দত্ত গ্যারেন্টার হিসেবে সই করায় পরিচিত এক ব্যাংক ম্যানেজার শিবানী সেনকে অল্প টাকার ব্যাংক লোন করিয়ে দিয়েছিলেন। শিবানী কখনও মানা করেনি, কিন্তু শিবানীর মেয়ে বড় হয়ে যাবার পর, কে.কে নিয়মিত তাদের বাড়িতে আসা বন্ধ করে দিয়েছিল। ফোনে যোগাযোগ রাখত। আর বাকিটা প্রয়োজন হলে থিয়েটারে।

শিবানীর আর্থিক সহায়তার জন্যই ছোটকা চেয়েছিল তাকে ব্যবসার অংশীদার করে নেবে, কিন্তু সেই প্রস্তাব দিতে যাবার দিনেই এই অঘটন ঘটে গেল। ছোটকা তার পরিচিত লোকজনদের দিয়ে সব ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। বনানী এসেছিল। একাই। ছেলের ক্লাস টেস্ট চলছে। তাই তারা আসেনি। হালতুর এক কামরা ফ্ল্যাটেই দুই বোন চতুর্থীর কাজ সেরেছিল।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৯: শাসক বেকায়দায় পড়লেই প্রতিপক্ষকে সন্ধির প্রতিশ্রুতি দেয়, যদিও রাজনীতিতে সে সব মানা হয় না

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৬২: সত্যজিৎ রায় রুপটান শিল্পীকে বলেছিলেন, উত্তমকুমারের কোনও মেকআপ করার

সোমবার ভোররাতে মা চলে যাবার পর বৃহস্পতিবার সকালে চতুর্থীর কাজ সেরে সন্ধেবেলায় থিয়েটার কামাই করেনি শিবানী। মেয়ে মানা ও বোন মানা করেছিল। শিবানী বলেছিল—
—না গেলে মা কষ্ট পাবে। আমার থিয়েটারের জন্য মা অনেক কষ্ট করেছে। হিসেব করে এমন দিনে চলে গেল, যাতে শো না মিস করি।

এর মাঝে ছোটকা ফোনে কথা বলেছে। কিন্তু মুখোমুখি দেখা হয়নি। ছোটকা ঠিক করল পরের সপ্তাহে থিয়েটারে গিয়ে কথা বলবে। শনি-রবি ডাবল শো থাকে। শোয়ের ধকল থাকে। বৃহস্পতিবার থিয়েটারের শেষে ফেরার পথে নিশ্চিন্তে কথা বলা যায়।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩৯: ভারতের বিপ্লবী মেয়েরা এবং অন্তরে রবীন্দ্রনাথ

এর মধ্যে আরেকটা অসুস্থতার ঘটনা ঘটে গেল। কীরা কাকিমা আচমকা একটা অ্যাকসিডেন্টে পা ভাঙলেন। বাড়ির মধ্যেই একটি টুলের উপর উঠে ভারী কিছু নামাচ্ছিলেন। ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যান। বাঁ পায়ের অ্যাঙ্কেলের কাছটা ভেঙ্গে যায়। একেবারে শয্যাশায়ী। দু’ মেয়ের কেউ কাছে নেই। রোসিন আমেরিকায়। শ্যানন সাউথ আফ্রিকায়। একটা প্রজেক্টের কাজের মাঝপথে। কীরা কাকিমার হাসপাতাল থেকে তাঁর সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে, কিন্তু বাড়িতে তো ফিরতে হবে। মা ঠিক করল, বাবাকে নিয়ে মা গিয়ে থাকবে কীরা কাকিমার কাছে অন্তত যতদিন বিছানা ছেড়ে হুইলচেয়ারে বসতে পারছে। কিন্তু সেটা যে খুব একটা সুবিধের কিছু হবে না, এটাও মা বুঝতে পারছে। সব সমস্যার অবসান ঘটিয়ে ফুলকাকা বিমলকান্তি জানালেন, কারও ব্যস্ত হবার দরকার নেই। তিনি ব্রিস্টল ছেড়ে কীরার কাছে পৌঁছচ্ছেন।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮২: খটকা

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

টেলিফোনে খবরটা শোনার পর মা বাচ্চা মেয়ের মতো খুশি হয়েছিল। চারতলা ঠাকুর ঘরে ছুটে গিয়ে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করেছিল। কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিল, জগদীশ্বরকে। বিমলকান্তি এবং কীরার মধ্যে কোনও আইনি বিচ্ছেদ ঘটেনি। দুজনের তীব্র ব্যক্তিত্বের সংঘাত ঘটেছিল। এই দূরত্ব সত্ত্বেও রোসিন-এর বিয়ের ইনভিটেশন কার্ডে ফুলকাকা ও কীরা কাকিমার নাম প্রথামত একসঙ্গেই ছিল। ধুতি-পাঞ্জাবি পরে ডাক্তার বিমলকান্তি সেদিন বাবা হিসেবে সব দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠান মিটে যাবার পর মায়েরা থাকতে থাকতেই ফুলকাকা সুটকেস গুছিয়ে বিয়ের আমন্ত্রিত অতিথির মতোই ব্রিস্টল পাড়ি দিয়েছিল।

এ বার সেই ফুলকাকাই নিজে জানিয়েছেন, তিনি কীরার পাশে আছেন। কারও চিন্তার কোনও দরকার নেই। ঠাকুর ঘর থেকে নেমে মা সটান গিয়েছিল দাদুর ঘরে। এতটা সকালে সুরঙ্গমাকে দেখে বৃদ্ধ বিনয়কান্তি অবাক হয়েছিলেন। কিছুটা আশঙ্কিত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন —
—কী হয়েছে সেজ বৌমা?
—খারাপ নয় বাবা, একটা খুব ভালো খবর দিতে এসেছি।
—ও! আজকাল অকারণ অ্যাংজাইটিতে ভুগি তো! বলো। তার আগে বলো তো কীরা কেমন আছে? তাকে কি হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ
করা হয়েছে?
সুরঙ্গমা অবাক হয়ে ভাবতে থাকে একেই কি টেলিপ্যাথি বলে! —চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content