ছবি: সংগৃহীত।
সিন্নি: পর্ব-৩
জানা গেল সেদিন ঘোষভিলায় সত্যনারায়ণ পুজো ছিল। পুজো হয়েছিল দোতালার ঠাকুর ঘরে। সেখানে সত্যনারায়ণের আসন থেকে পুজোর সামগ্রী যেমনকার তেমনই পড়ে আছে। মানে এটা স্পষ্ট, পুজোর পর কোন একটা কারণে পরিবারের কেউই পুজোর সামগ্রী গুছিয়ে তুলে উঠতে পারেননি। কেন পারেননি?
তবে একটা আশ্চর্যের ব্যাপার যে, গামলাতে সিন্নি মাখা হয়েছিল সেটি ধুয়ে মুছে চকচকে করে রাখা আছে। বাড়ির সকলে তো সত্যনারায়ণের সিন্নি খেলেন। কিসে খেলেন? সেই পাত্রগুলো কোথায়? আচ্ছা বাড়িতে এই ধরনের পুজো হলে তো প্রতিবেশীদের একটু ফল সিন্নি এ সব বিতরণ করা হয়। এক্ষেত্রে কি হয়েছিল? আশেপাশে খোঁজ নিয়ে বিদ্যুৎ সাঁপুই জেনেছে, এ বাড়িতে পুজো হয়েছিল, শাঁখঘণ্টা বাজিয়ে আরতির আওয়াজও পেয়েছেন সকলে। কিন্তু ওঁরা কাউকে আসতেও বলেননি বা প্রসাদ সিন্নি নিয়ে কেউ যাননি।
তবে একটা আশ্চর্যের ব্যাপার যে, গামলাতে সিন্নি মাখা হয়েছিল সেটি ধুয়ে মুছে চকচকে করে রাখা আছে। বাড়ির সকলে তো সত্যনারায়ণের সিন্নি খেলেন। কিসে খেলেন? সেই পাত্রগুলো কোথায়? আচ্ছা বাড়িতে এই ধরনের পুজো হলে তো প্রতিবেশীদের একটু ফল সিন্নি এ সব বিতরণ করা হয়। এক্ষেত্রে কি হয়েছিল? আশেপাশে খোঁজ নিয়ে বিদ্যুৎ সাঁপুই জেনেছে, এ বাড়িতে পুজো হয়েছিল, শাঁখঘণ্টা বাজিয়ে আরতির আওয়াজও পেয়েছেন সকলে। কিন্তু ওঁরা কাউকে আসতেও বলেননি বা প্রসাদ সিন্নি নিয়ে কেউ যাননি।
এর আগে? না এর আগে সত্যনারায়ণ পুজোতে বাড়িতে কাউকে না ডাকলেও প্রসাদ নিয়ে রীনা আর তৃণা দুই বোন আশপাশের বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসে, এ বারেই আসেনি। কেন আসেনি এ বার? এই খবরগুলোও সংগ্রহ করেছে লোকাল থানার সেই উৎসাহী তরুণ অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর বিদ্যুৎ সাঁপুই। আর প্রশ্নগুলো ধৃতিমান চৌধুরীর মস্তিষ্কপ্রসূত। কাউকে তিনি প্রশ্নগুলো করেনি। গুরুত্বপূর্ণ কোনও বইপড়ার সময় আমরা যেমন লাল সবুজ হলুদ রংয়ের আঠা-লাগানো স্টিকার বইয়ের পাতায় লাগিয়ে দিই বা কখনও কখনও স্টিকারে লিখেও রাখি কি আছে সেই পাতায় বা অধ্যায়ে। আমাদের সত্যানুসন্ধানী ধৃতিমান চৌধুরী বা বাবু ঠিক ঠিক তার মস্তিষ্কভাবনায় এই ধরনের প্রশ্ন স্টিকার দিয়ে রাখে।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-২৩: এ বার মৃতদেহ পরীক্ষার পালা
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪২: সুন্দরবনের বাঘের ভবিতব্য
পরে যখন ধীরস্থির ভাবে তার বসার ঘরে রাখা দুই দেবতার মুখোমুখি বসবে তখন এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজবে ধৃতিমান। যে পাঠকেরা ধৃতিমানকে প্রথম থেকে জানেন তাঁরা এই অংশটি পড়ার পরই বুঝতে পেরে গিয়েছেন—ধৃতিমানের আরাধ্য দুইদেবতা কে কে? আর নতুন বা যাঁরা পুরনোউল্লেখ এই মুহূর্তে মনে করতে পারছেন না তাদের জন্য জানাই ধৃতিমানের বসার ঘরে যে দুটি ছবি রয়েছে তাঁদের একজন ঠাকুর আরেকজনকে ধৃতিমান দেবতার আসনে বসিয়ে রেখেছেন। রবীন্দ্রনাথ ও সত্যজিৎ রায়।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬২: ধনময়ী জ্ঞানময়ী-র পাশে ‘মানময়ী গার্লস স্কুল’
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৮: মোহিতকুমারী এক মহিলা আত্মজীবনীকার
অপরাধ বিজ্ঞানে এটা বলা হয় যে, অপরাধ যতই নিখুঁত হোক না কেন কোথাও না কোথাও অপরাধী নিজের অজান্তেই প্রমাণ ছেড়ে যান। ঠিক তেমনভাবেই অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল ঠাকুরঘরে। সত্যনারায়ণ পুজোর সময় অনেকে পুরো সিন্নিটাই পুজোর নৈবেদ্যে দেন। কিন্তু ঘোষবাবুদের ঠাকুরের আসন খুব বড় নয় বলে ছোট একটি শালপাতার বাটিতে সিন্নি বাতাসা দিয়ে পুজো দেওয়া হয়েছিল। তার মানে ধরে নেওয়া যায় বাড়ির সকলে ওই রকমের ছোট শালপাতার বাটিতেই সিন্নি খেয়েছিলেন এবং সেই সমস্ত বাটি ম্যাজিক করে ভ্যানিশ করে দেওয়া হয়েছে। রান্নাঘরে কিচেনট্রলির ড্রয়ার-র্যাক টানতে টানতে একটার মধ্যে বেশ কিছু থেকে যাওয়া একই ধরনের শালপাতার বাটি এই অনুমানকে আরও শক্তিশালী করল।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪০: মা সারদার নিজবাটি
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৪: নোবেল পাওয়ায় বন্ধু দিয়েছিলেন লজ্জাবতীর চারা
খুব সাবধানে সিন্নি বোঝাই ফুল বাতাসা দেওয়া শালপাতার বাটিটা গ্লাভস পরে পলিথিনের জ্যাকেটের মধ্যে ঢোকাতে ঢোকাতে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ মফিজুল ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে একটা অর্থপূর্ণ হাসি হাসল। বাটিটা আবার দেখতে দেখতে ধৃতিমানের মনে হল, ছোট্ট বাটিটার মুখে বাতাসা আর ফুল বেল পাতা তুলসীপাতা এত বেশি পরিমাণে দেওয়া হয়েছে যে ওর মধ্যে যে সিন্নি ছিল শেষ মূহুর্তে এটা অপরাধীর চোখে পড়েনি।
সত্যনারায়ণ পুজোর পরেই তাদের ওপরে নৃশংস আক্রমণ হয়েছে। ঘোষবাবুর পরনে সাদা পাজামা পাঞ্জাবি রক্তাক্ত। শিউলিদেবীর লালপাড় সাদাগরদের শাড়িতে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগে তখনও কোথাও কোথাও ভেজাভাব। রীনা সেদিন শাড়ি পরেছিল শাড়ির আঁচলটা গলায় পেঁচানো। তৃণার পরনে ছিল সালোয়ার কামিজ। প্রত্যেকের গলা পেঁচিয়ে নলি কেটে দেওয়া হয়েছে। গলা থেকে চুঁইয়ে-পড়া রক্তে প্রত্যেকের পোশাক রক্তাক্ত। আক্রমণের ধরন দেখে মনে হচ্ছে একটা ভয়ঙ্কর ক্রোধ কাজ করেছে অপরাধীর মনে। কিন্তু এত জনকে আক্রমণ করা কি একজনের পক্ষে সম্ভব নাকি অপরাধীরা সংখ্যায় একের বেশি ছিল? —চলবে।
সত্যনারায়ণ পুজোর পরেই তাদের ওপরে নৃশংস আক্রমণ হয়েছে। ঘোষবাবুর পরনে সাদা পাজামা পাঞ্জাবি রক্তাক্ত। শিউলিদেবীর লালপাড় সাদাগরদের শাড়িতে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগে তখনও কোথাও কোথাও ভেজাভাব। রীনা সেদিন শাড়ি পরেছিল শাড়ির আঁচলটা গলায় পেঁচানো। তৃণার পরনে ছিল সালোয়ার কামিজ। প্রত্যেকের গলা পেঁচিয়ে নলি কেটে দেওয়া হয়েছে। গলা থেকে চুঁইয়ে-পড়া রক্তে প্রত্যেকের পোশাক রক্তাক্ত। আক্রমণের ধরন দেখে মনে হচ্ছে একটা ভয়ঙ্কর ক্রোধ কাজ করেছে অপরাধীর মনে। কিন্তু এত জনকে আক্রমণ করা কি একজনের পক্ষে সম্ভব নাকি অপরাধীরা সংখ্যায় একের বেশি ছিল? —চলবে।
ঘোষ পরিবার হত্যারহস্য: পরবর্তী পর্ব আগামী ১১ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার
>* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।