শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪


অলঙ্করণ : সৌমি দাসমণ্ডল।

শাক্যরা রিসর্ট থেকে বেরোতেই সাংবাদিকরা একেবারে ছেঁকে ধরবে বলে অপেক্ষা করছিল। এখন অবশ্য শাক্য একা নয়, পাভেলও আছে। সঙ্গে সুদীপ্ত তো আছেই। শাক্য আগেই আশঙ্কা করেছিল যে, এমনটা হবেই। পিশাচপাহাড় হালে ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন হিসেবে গুরুত্ব পেলেও আদতে ছোট্ট গঞ্জ। এখানে সচরাচর জীবন বৈচিত্রহীন। সেখানে যদি একই দিনে তিন-তিনটে আনন্যাচারাল ডেথ-কেস ঘটে, তাহলে হই-চই তো পড়বেই।

জিজ্ঞাসাবাদ করতে করতেই শাক্যর ফোনে একেজি-র মেসেজ ঢুকেছিল, “হোপ ইউ আর ভেরি নিয়ার টু কনক্লুশন। হ্যান্ডেল মিডিয়া প্রপারলি। দে আর রেডি টু চপ পুলিশ ডিপার্টমেন্ট!” তখনই বুঝেছিল শাক্য যে, নির্ঘাৎ মিডিয়াওয়ালাদের হেড অফিস থেকে একেজি-র কাছে গায়ে নুন-মরিচের ছিটে দেওয়া ফোন গিয়েছে। তা না হলে এই দুপুর বেলায় একেজি সে লাঞ্চ করেছে কি না—তা না-জিজ্ঞাসা করে এমন মেসেজ পাঠাতেন না। এইসব অখ্যাত জায়গায় তো আলাদা করে কোন লোকাল রিপোর্টার থাকে না। কারণ, এখানে সদা সর্বদা তেমন কিছু ঘটে না। ফলে রিপোর্টার আলাদা করে রাখার কোনও অর্থ হয় না।

সচরাচর একটি জেলাকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জোনে ভাগ করে প্রতি ভাগে একজন রিপোর্টার রাখাই নিয়ম। পিশাচপাহাড় সেইরকম যে জোনের অন্তর্ভুক্ত, নিশ্চয়ই সেখান থেকেই রিপোর্টারেরা হেড অফিসে ফোন করে আগে জেনে নিয়েছে যে, ঘটনা তিনটিকে একসঙ্গে জুড়ে কোন স্কুপ নিউজ বানাবে কি না। এই সব খবর পাঠক-দর্শক খায় ভালো।

এই কারণে সাংবাদিকেরাও তক্কে তক্কে থাকে। তেমন তেমন নিউজ হলে মাসিক স্যালারিতে কিছু ইনসেনটিভ যোগ হলেও হতে পারে। আর এক্ষেত্রে জোড়া মৃত্যু রহস্য হলেও বাঁচোয়া ছিল, কিন্তু এখানে তিন-তিনটে রহস্যময় মৃত্যুর ঘটনা একই দিনে ঘটে যাওয়ায় বেশ মশালাদার স্কুপ নিউজ করার সম্ভাবনা ষোল আনা। অতএব কলকাতার হেড অফিসও বেশ অ্যাক্টিভ হয়ে উঠেছে। তাও প্রিন্ট মিডিয়ার একটা চরিত্র আছে, যা সে ধরে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু টেলিমিডিয়ার চরিত্র সম্পূর্ণ আলাদা।

মুখরোচক সংবাদ করে তোলা, মুচমুচে কিন্তু অন্তঃসারশূন্য আগমার্কা নিজস্ব তদন্ত, হাস্যকর কয়েক ঘণ্টা নামক প্রোগ্রামে একই কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলা আর থেকে থেকেই নীচে ক্যাপশন দেওয়া—ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি আমাদের চ্যানেলেই সর্বপ্রথম দেখানো হচ্ছে জাতীয় বিজ্ঞাপন! আজ রাতেই হয়তো সব চ্যানেলে চ্যানেলে পাঁচ-ছয় জন বিশেষজ্ঞ বুদ্ধিজীবীর ক্লান্তিকর কথাবার্তার মাঝে উপস্থাপকের ফোড়ন-সহ অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হবে। বাংলায় মেরে-কেটে হাতে গোনা কয়েকজন বুদ্ধিজীবী আছেন। তাঁদের একটাই কাজ, আজ এই চ্যানেল, কাল ওই চ্যানেলে কফি কিংবা চা খেতে খেতে অন্তঃসারশূন্য কথাবার্তা বলে চলা। দু’-চারজন বাদ দিয়ে বাকিরা যে কেন আসেন, কেন সবজান্তা বৃহস্পতি সেজে ফুটেজ খান—শাক্য বুঝতে পারে না। তবে একেজি বলেন, অন্তঃসারশূন্য কথাবার্তাও শুনতে হয় পুলিশকে। অনেক সময় নির্বোধের দৃষ্টিকোণ থেকেও সত্যের সিঁড়িটা খুঁজে পাওয়া যায়।
সাংবাদিকেরা সব সামনের বাগানের যেখানে গতকাল পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে অপেক্ষা করছিল। কাপাডিয়া সেখানেই গার্ডেন চেয়ার পেতে তাঁদের বসার ব্যবস্থা করেছিলেন। তাঁর এখন শ্যাম রাখি না, কুল রাখি অবস্থা। পুলিশকে চটালেও চলবে না, সাংবাদিকদের চটালেও না। নতুন ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে পিশাচপাহাড় রিসর্টের এখন চাই বিজ্ঞাপন। কোনও সাংবাদিক যদি ভুল করে হলেও পিশাচপাহাড় রিসর্টের নামে দু’ চার কলম লেখে, তাহলে যা প্রচার হবে তা এক হাজার বার কাগজের শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপন দিয়েও হবে না।

শাক্য পাভেলের দিকে তাকাল। তারা ঘরের মধ্যে থেকেই দেখছিল তখনও। সুদীপ্ত বেরিয়ে সামনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের একজনের দিকে তাকিয়ে হাসল, প্রত্যুত্তরে সাংবাদিকটিও হাসি ফিরিয়ে দিলেন। আর এক জন সাংবাদিকের হাত নাড়া দেখে নিজেও হাত নাড়ল। শাক্য ও পাভেলের চোখে চোখে কথা হয়ে গেল। এই রকম সময়ে লোকাল থানার পুলিশ বিষয়টিকে যেভাবে হ্যান্ডেল করতে পারে, বাইরে থেকে আসা শাক্য বা পাভেল তা পারবে না। যদিও পাভেল ছদ্মবেশে প্রায় মাস দেড়েক এখানে কাটিয়ে দিয়েছে, তা সত্ত্বেও তার পক্ষে এই কাজটি করা অসম্ভব। তাছাড়া এক্ষেত্রে শাক্য যদি মিথ্যে করে হলেও, সাংবাদিকদের ফেস করার ব্যাপারে তাদের অপারগতার কথা জানিয়ে সুদীপ্তকে অনুরোধ করে, তাহলে সুদীপ্ত মনে মনে যে খুশি হবে, তা বোঝার জন্য বেশি বুদ্ধি লাগে না।

এমনিতেও ইন্টারোগেশনের সময় সুদীপ্ত পদে পদে বুঝতে পারছিল, তার সাক্ষ্যগ্রহণ যথাযথ হয়নি। লালাবাজারের গোয়েন্দাবাবুটি সুদীপ্তর নেওয়া সাক্ষ্য থেকে অনেক ফাঁকফোকর খুঁজে পেয়েছে জেনে তার মন তেতো হয়ে আছে। এই অবস্থায় ছোট্ট একটি চাল আবার সুদীপ্তকে তার নিজস্ব মেজাজে ফিরিয়ে আনতে পারে, একইসঙ্গে এই ক্লান্তিকর সাংবাদিক সম্মেলনের হাত থেকে আপাতত তাদের দু’ জনকে উদ্ধার করতে পারে। এমনিতেও তার তাড়া আছে। বেলা ফুরিয়ে আসার আগেই দু’-জায়গায় যেতে হবে-যেখানে কাল বাসরাস্তায় রহস্যময় ইন্সিডেন্টটা ঘটেছিল, সেখানে এবং যেখানে অঞ্জনের বাইকটা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে সেই পুরানা মোকামের জঙ্গলে।
শাক্য বলল, “সুদীপ্ত, এই ব্যাপারটা তো আমার আসে না একেবারেই। কী করা যায় বলুন তো?”
সুদীপ্ত বুঝেও না-বোঝার ভান করল, “কী ব্যাপার আসে না স্যার?”
“এই সাংবাদিক সম্মেলন ব্যাপারটা। ওদের দেখলে কেন জানি না, আমার হাত-পা বুকের মধ্যে সেঁধিয়ে যায়। পাভেলে স্যারেরও একই অবস্থা। কিন্তু ওরা তো দেখছি একেবারে দলবল নিয়ে এসে চড়াও হয়েছে!”
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক,পর্ব-৫৬: তোমার আছে তো হাতখানি

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-২১: সংযুক্তা হঠাৎ চমকে দেখল ভিতরে ঢুকছেন শ্রুতি সেন

সুদীপ্ত তুচ্ছতার হাসি হাসল, “ওদের দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই স্যার। এ-সব আমাদের দেওয়া-নেওয়ার কেস। আমরা ওদের কিছু ঘটলে নিউজ সাপ্লাই দিই, বিনিময়ে ওরা আমাদের অপদার্থতার বা আনসলভ্‌ড্‌ কেসগুলি নিয়ে তেমন হই-চই নাড়াঘাঁটা করে না। আজকের ব্যাপারটা স্বতন্ত্র, এটুকু যন্ত্রণা আমাদের মেনে নিতেই হবে। কিন্তু আপনারা কলকাতার অফিসার হয়েও যদি সাংবাদিক দেখে ভয় পান, তাহলে আমাদের কী হবে?”
পাভেল সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, “কে বলল ভয় পাই?”
শাক্য তাড়াতাড়ি সুদীপ্তর চোখের আড়ালে পাভেলকে এক ধাক্কা মেরে সতর্ক করে দিয়ে বলল, “আসলে এটা স্বাভাবিক সুদীপ্ত। কলকাতায় আমাদের বিভাগে যাবতীয় সাংবাদিক-সামলানোর ভার একেজি স্যার নিজে তুলে নেন। আমাদের এই ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামাতেই হয় না!”
“বুঝলাম। ঠিক আছে, আপনারা যদি চান, তাহলে আমি ওদের হ্যান্ডেল করে নিচ্ছি। ডোন্ট ওয়ারি, আমি আছি তো!”
সুদীপ্তর বলার ভঙ্গিতে শাক্যর হাসি পেলেও সে আরো গম্ভীর হয়ে গেল। সুদীপ্তর বলার ভঙ্গি এমন যেন সে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কিংবা রাজ্যের প্রধান।
শাক্য বলল, “আপনি যতক্ষণ এদিকটা সামলাবেন, আমরা যদি ততক্ষণ কালকের ইনসিডেন্ট এবং পুরানা মোকামের জঙ্গলের দিকটা ঘুরে আসি, আপনার আপত্তি আছে?”
“না না, আপত্তি কিসের? তবে পুরানা মোকামের জঙ্গলে আগে ঘুরে আসুন। কাছে যদিও তবে সন্ধ্যার দিকে ওদিকে যেতে ড্রাইভারও ভয় পায়। আপনাদেরও অসুবিধে হবে। জানেনই তো সন্ধ্যার পরে কোন কোন জঙ্গল জেগে ওঠে?”

শাক্য মাথা নাড়ে। সেই সুপারস্টিশাস ধারণা! সুদীপ্তকে সে যতটা দেখেছে, তার মনে হয়েছে, চেষ্টা আছে, বুদ্ধি আছে, সম্ভাবনা আছে, কিন্তু এত কিছু থাকলেও আগে থেকে ঠিক করে নেওয়া যুক্তি দিয়ে তদন্ত করতে চাওয়ার বদ-অভ্যাস তার প্রধান ত্রুটি, যা বাকি গুণগুলিকে ঢেকে দিয়েছে। এই রকম করলে প্রতি পদে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। কিন্তু এখন সে-ব্যাপারে সুদীপ্তকে কিছু বলা মানে সাংবাদিক সম্মেলনের বাঁশটি যেচে নেওয়া। অতএব সে সায় দিল, বলল, ‘আপনি একটু ফোন করে দিন যাতে ড্রাইভার পিছনের কোনও গেট থাকলে সেখানে এসে দাঁড়ায়। আমরা সামনের গেট দিয়ে বেরোতে গেলেই নাছোড়বান্দা সাংবাদিকেরা আমাদের পিছু ছাড়বে না। আমাদের হাতে সময় কম। অনেক দেরি হয়েছে, অনেকদিন ধরে দেরি হয়েছে, যত দেরি হবে তত হয়তো সাক্ষ্য-প্রমাণ দু’-এক টুকরো কিছু থেকে থাকে, তাও হারিয়ে যাবে!”
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৭: শ্যামাসুন্দরী দেবীর লোকান্তর গমন

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৮: বাবা, ‘পিতা নোহসি’ বলো — এই কথাটি ঘুরেফিরেই কবির কানে বেজে উঠত

সুদীপ্ত শাক্যর কথা শুনে এক মুহূর্ত থমকালো, তারপর ফোন তুলে ড্রাইভারকে কল করলো। কথা বলে শাক্যদের বলল, “আমি কাপাডিয়াকে বলছি, উনি আপনাদের পিছনের গেটে নিয়ে যাবেন। আমি এদিকটা সামলাচ্ছি। তবে বাসরুটে যেখানে ইনসিডেন্টটা গতকাল ঘটেছিল, সেটা সামান্য দূরে। আপনাদের ছানবিন করে ফিরতে দেরি হয়ে যাবে। আজ তাহলে আর লাঞ্চ করা হবে না!”
“লাঞ্চের কথা আমি ভাবছি না সুদীপ্ত। আমি-আপনি সবাই একই দলের লোক, অতএব আমরা জানি, পুলিশদের কাজে নেমে খিদে পেতে নেই। পেলেও ভুলে থাকতে হয়। আমাদের সকলের অভ্যাস আছে। সুতরাং ওটা কোন ম্যাটার নয়। আমি ভাবছি, আমরা গাড়ি নিয়ে চলে গেলে আপনি থানায় ফিরবেন কী করে? আমরা কী পুরানা মোকামের জঙ্গলে গিয়ে গাড়ি ছেড়ে দেব। সে আপনাকে থানায় পৌঁছে দিয়ে আবার না হয় চলে যাবে আমাদের নিতে?”
“ও নিয়ে আপনি ভাববেন না। এখানে সাংবাদিকদের অনেকের বাইক আছে, তাছাড়া দৈনিক হাটেবাজারে পত্রিকার সাংবাদিক তরুণ ব্যানার্জিকেও দেখলাম এসেছেন, ওঁর নিজের গাড়ি আছে। অনেকবার আমাকে প্রয়োজনে লিফট দিয়েছেন, অতএব অসুবিধে হবে না। আমি বললে যে কেউ আমাকে স্বচ্ছন্দে থানায় ড্রপ করে দেবে। অবশ্য আসলে স্বার্থ হল এই সুযোগে যদি কিছু বেশি খবর পাওয়া যায় আমার মুখ থেকে, বুঝলেন কি না! সবই প্রোফেশনাল ব্যাপার। দেওয়া-নেওয়া কেস!”
“বেশ! নিশ্চিন্ত হলাম। নাহলে গিয়েও শান্তি পেতাম না। আর একটা কথা!”
“বলুন!”
“যে দুটি জায়গায় আমাদের যাওয়ার কথা সেখানে কি পুলিশ কোনও পাহারা বসিয়েছে?”
“দেখুন আগেই বলেছি, পুরানা মোকামের জঙ্গলে পাহারা বসানো মুশকিল। জঙ্গলটাকে সকলে ভয় পায় এবং এড়িয়ে চলে। সেখানে যদি আমরা কাউকে পাহারায় মোতায়েন করিও, সে যে কতটা নজর রাখবে, সে-বিষয়ে আমাদের সন্দেহ আছে। আর এমনিতেও দেখবার কিছু নেই। আমরা বাইকটাকে তুলে থানায় আনার ব্যবস্থা করে এসেছিলাম, এতক্ষণে হয়তো এসেও গেছে থানায়। চারপাশের কিছু ফোটো তুলে রেখেছি। ব্যাস। আপনাকে পরে সেন্ট করে দেবো। আর রইল গিয়ে কালকের ইন্সিডেন্টের প্লেসের কথা। ওটা মেইন রুট নয়। শর্টকার্ট। রুটের শেষ বাসগুলি কখনও কখনও ওই রাস্তা ধরে, সামান্য দশ-পনেরো মিনিট কম লাগে আর কিছু নয়। কালকের বাসটিও সেই রুটই ধরেছিল। তখন দিনের আলো মরে আসছিল। কাল ট্রেন অনেকটাই লেট করেছিল বলে তাড়া ছিল ওদের হয়তো। নাহলে এই ঘটনার কথা হয়তো পরে জানা যেতো। ওই বুধন মাহাতোর কেসের মতো। যাই হোক, ওই রুটটা আমরা আপাতত টেপ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছি। এখানে তো গার্ড রেল তেমন নেই থানার, থাকলে তার দু-চারটে দিয়ে রাস্তাটা ব্লক করে দিতাম।”
“বেশ। কিন্তু বুধন মাহাতোর কেসটা কী?”
আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৫: রবি ঠাকুরের বড় মেয়ে— যিনি লেখক হতে চেয়েছিলেন!

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৫০: অর্ধশতাব্দী ছুঁলো ‘অমানুষ’

“সে এক বিচিত্র কেস। হপ্তাখানেক আগের ঘটনা। তার লাশ আবিষ্কার হয় জঙ্গলের মধ্যে। পুরানা মোকামের জঙ্গলে নয়, অন্য জঙ্গলে। মাথাটাই অবিকৃত ছিল, বাকিটা কেউ খেয়ে গিয়েছিল। অন্তত তার এক হপ্তা আগে তার মৃত্যু হয়েছে বলে পোস্টমর্টেমে জানা যায়। অথচ আশ্চর্যের বিষয়, তার দিন তিন-চার আগে বুধন মাহাতোর বাবা-মা বুধনের শরীর খারাপ বলে লোক্যাল হেলথ সেন্টারে ভর্তি করে। অথচ তার আগেই বুধন মারা গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সেই দ্বিতীয় বুধন কিংবা বুধনের প্রেত অবশ্য উধাও হয়ে যায় হেলথ সেন্টার থেকে যে দিন ভর্তি করা হয়েছিল, সেদিন রাতেই। আর তার কোনও ট্রেস পাওয়া যায়নি। সকলের অনুমান, বুধনের অতৃপ্ত আত্মাই এসেছিল সেদিন!”
“পিশাচপাহাড়ে অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে দেখা যাচ্ছে! পাভেল, এই ঘটনার কথা তুমি জানতে না?”
পাভেল বলল, “শুনেছিলাম। গাঁজাখুরি বলে উড়িয়ে দিয়েছি। লোক্যাল লোক কত কিছু নিয়ে যে গল্প বানায় তার কোনও ধারণা নেই তোমার!”
শাক্য চিন্তিত মুখে বলল, “ভুল করেছ। আমাদের ওখানে যেতে হবে। বুধন মাহাতোর কেসটা আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং বলে মনে হচ্ছে!”
“কিন্তু ওই কেস নিয়ে তদন্ত করতে তো আমরা এখানে আসিনি। ভূতের পিছনে ছুটে আমার গাত্রে হল ব্যথা—এমনটা না দাঁড়ায়!”
“সে দেখা যাবে। তোমাকে তো আগেই বলেছি পাভেল, আমার মন বলছে, অনেকগুলি আলাদা আলাদা সুতো জট পাকিয়ে আছে এই কেসটায়, তাড়াহুড়ো না করে আস্তে আস্তে ছারাতে হবে সব জট। হয়তো তখন দেখা যাবে, সব জটই একটি সুতোর কারণে! সুদীপ্ত, আমরা কাল সকালে বুধন মাহাতোর বাড়িতে যাব, একটূ ব্যবস্থা করবেন!”
সুদীপ্ত ঘাড় নাড়ল। সে ব্যবস্থা করে রাখবে। —চলবে।
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel): পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।

Skip to content