শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


মুক্তির তারিখ: ০৬/০৮/১৯৫৪

প্রেক্ষাগৃহ: রাধা, পূর্ণ ও প্রাচী

উত্তম অভিনীত চরিত্র: বিশ্বেশ্বর

পাশাপাশি প্রেক্ষাগৃহে যখন সপ্তাহের পর সপ্তাহ হাউসফুল বোর্ড ঝুলছে তখন উত্তম অন্যভাবে নিজেকে গুছিয়ে তুলছেন। যে চিত্রজগতে পায়ের তলায় মাটি পেতে তাঁকে ক্ষতবিক্ষত হতে হয়েছে সেখানে সোনার ফসল ওঠার সময় সবার আগে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে এ ধরণের ভাবনা উত্তমকে সেসময় আচ্ছন্ন রাখত। গৌরী মনে আঘাত পাবে এমন কোনও কাজই সে করতে পারবে না। গৌরীর টানা টানা চোখে প্রাণখোলা হাসি যে উত্তমের স্বর্গসুখ। গৌরী হল ঘরের লক্ষ্মী। কাজেই তাঁর চোখের জল, উত্তমের জীবনে কোনও অংশেই শুভ হবে না। তাই সবার আগে মনের সঙ্গে হিসেব নিকেশ পাকা করে সাবু ওরফে সাবিত্রীর সঙ্গে ‘চুপকে চুপকে’ লোক ঠকানো ব্যবহার বন্ধ হওয়া উচিত।

উত্তম কুমার।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। কাজের শেষে কারণে অকারণে সাবু’র বাড়ি যাওয়া বন্ধ হল। থিয়েটারের পর দু’জনের কথা, মেলামেশা অনেক কমে গেল। সাবু দূর থেকে তার স্বপ্নের রাজকুমারকে দেখতে দেখতে বাড়ির পথ ধরত। আসলে উদ্বাস্তু হয়ে এদেশে আসার পর খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের সংস্থান করতে করতেই কিশোরীর দরজায় বসন্ত এসে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু সহায়সম্বলহীনের ভালোবাসা নাগরিক সমাজতত্ত্বে সিলেবাস বহির্ভূত।
সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের সারাজীবনের সালতামামিতে ১৯৫৪ সাল স্মরণীয় বছর। প্রাক ‘অগ্নিপরীক্ষা’ যুগের উত্তম তাঁর কাছে আলেয়ার মতো মিলিয়ে গিয়েছিল। আর এই অংশেই অভিভাবকেরা তাদের রোজগেরে মেয়ের পাশে এসে দাঁড়াননি। অপরিণত সাবু নিয়তিতাড়িত হয়েই সারাজীবন কাটিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৯: দেখতে দেখতে ‘সদানন্দের মেলা’

ইংলিশ টিংলিশঃ মাধ্যমিকে ইংরেজিতে ভালো নম্বর পাওয়ার উপায় কি? দেখে নাও আজকের বিষয়: Seen Comprehension

যাইহোক, ‘বউ ঠাকুরাণীর হাট’ সিনেমার সময় থেকে পরিচালক নরেশ মিত্র মহাশয় অনেক চেষ্টা করেছেন উত্তমকে নিয়ে আবার ছবি করার কিন্তু সম্ভব হয়নি। এ বার হালে পানি পাওয়া গিয়েছে।

নিরুপমা দেবীর কাহিনি অবলম্বনে চিত্রনাট্যের খসড়া রচনা করলেন নরেশ মিত্র স্বয়ং। বন্ধু গোবিন্দ রায় এগিয়ে এলেন পরিচালকের সঙ্গে সহ প্রযোজনার দায়িত্ব নিয়ে। সংগীত পরিচালনার দায়িত্বে তৎকালীন যুগের সকলের নয়নের মণি রবীন চট্টোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন:

খাই খাইঃ জিলিপি খেতে ভালোবাসেন? তাহলে আর দেরি কেন? ঝটপট বানিয়ে ফেলুন গরম গরম আনারসের জিলিপি

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-১: পৃথিবী খ্যাত ডালটন হাইওয়ে এই শহরকে ছুঁয়েছে আর্কটিক বৃত্ত তথা উত্তরমেরুর সঙ্গে

নরেশ মিত্র মহাশয় ছবির প্লেয়ার কাস্টিংয়ে বিশেষ মনোযোগ দিলেন। উত্তম কুমারের বিপরীতে সেই প্রথম এবং শেষ সুচিত্রা-সাবিত্রী একসঙ্গে। ‘শেষ’ কথাটা ব্যবহার করলাম এ কারণে যে পরবর্তীকালে কোনও পরিচালকই এ সাহস দেখাননি। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সুচিত্রা নিজেকে অন্যভাবে নিজেকে সেট করে নিয়েছেন। উত্তমের কথা তো আর নতুন করে বলার নেই। সাবিত্রীকে অসহায়, বঞ্চিত, নিপীড়িত রোলে মানাতও ভালো। বিশেষত, দায়িত্বপরায়ণ মহিলা হিসাবে। তাই তাঁর অবস্থা তথৈবচই রয়ে গেল। অবশ্য পরিচালকরা দরকারে তাকে ব্যবহার করতে কার্পণ্য করতেন না।

সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়।

এ বছর উত্তম কোনও ছবিই না করেনি। সকলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিজেকে চরম ব্য স্ত রেখেছে। কাজের মধ্যেই তাঁর চরম প্রশান্তি। ‘অন্নপূর্ণার মন্দির’ শুটিংয়ের সময় সবচেয়ে বিড়ম্বনার শিকার উত্তমই হয়েছিলেন। সাবিত্রীর সামনে সুচিত্রার সঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে সাবুর অভিমানভরা মুখ বড্ড বেশি করে উত্তমকে অসহায় করে দিত। একই সেটে অভিনয়ের আগে পরে উত্তম দু’জনের সঙ্গে খুব বেশি কথা বলতেন না।
সব মিলিয়ে ছবির কাজ শেষ হল। রিলিজ করার সময় কিছু বাধা বিপত্তি হয়েছিল বটে, কিন্তু পরিচালক মহাশয়ের তত্ত্বাবধানে ছবি রিলিজ করল।

ছবির একটি বিশেষ দৃশ্যে।

অকল্পনীয় জন সমাদর পেল ছবিটি। আজ ভাবতে অবাক লাগলেও সত্যছ, সুচিত্রা সেন-র ওই মেজাজি চোখের চাউনি, সঙ্গে সাবিত্রীর শান্ত সমাহিত গভীরতাপূর্ণ দৃষ্টির টিউনিং কী ভাবে পরিচালক সামলেছিলেন!

এত কিছুর নেপথ্যে ছিল, প্রত্যেতকের প্রস্তুতিপর্বকালীন ছবিগুলোর নির্মাণ। উত্তম-সুচিত্রা ও সাবিত্রী প্রত্যেকেই পায়ের তলায় মাটি খুঁজছেন। বাছাই করে ছবি করার হিম্মত কারওই হয়নি।
দ্বিতীয়ত, দুজন নায়িকা নিয়ে উত্তম কুমার ছবি করছেন এ প্রচার ছবিটিকে অনেক এগিয়ে রেখেছিল। দু’জন নায়িকা ছাড়া সহশিল্পীদের মধ্যে স্বয়ং নরেশ মিত্র মহাশয় বাবার রোলে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। এটাও ছবির পক্ষে কম নয়।
আরও পড়ুন:

কিছুতেই কমছে না গ্যাস, হজমের সমস্যা? খাবার সময়ে, আগে বা পরে এই সব ভুল করছেন না তো?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪৮: খোকা নয়, খুকি নয়

তৃতীয়ত, অসাধারণ চিত্রনাট্য। বাঙালির সেন্টিমেন্টকে মাথায় রেখে দুর্দান্ত খসড়া করেছিলেন নরেশ মিত্র। ছবিটিতে উত্তম জহর গাঙ্গুলির ঢঙে নিজেকে উপস্থাপন করেছিলেন যা, সেসময় খুবই জনপ্রিয় ছিল।

চতুর্থত, ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-র পর মলিনা দেবীর অসাধারন অভিব্যক্তিসমৃদ্ধ অভিনয়, ছবিটিকে সাফল্যের দরজায় পৌঁছে দিয়েছিল।

সবকিছুর মিলিত ফলে ছবি হিট।—চলবে
* উত্তম কথাচিত্র (Uttam Kumar – Mahanayak – Actor) : ড. সুশান্তকুমার বাগ (Sushanta Kumar Bag), অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, মহারানি কাশীশ্বরী কলেজ, কলকাতা।

Skip to content