শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


"আমায় যদি দেয় তারা নৌকাটি/ আমি তবে একশোটা দাঁড় আঁটি"!

আমার নিদারুণ উল্টিপাল্টি শাড়ির খোঁয়াড় (ভদ্রসংজ্ঞায় আলমারি!) থেকে পেঁয়াজ রঙের শাড়িটি যখন ঝুপ করে কোলে এসে পড়ল, তখন ফের তাকে স্বস্থানে ফিরতের ঝামেলায় না ফেঁসে সাপটেই নিলাম। তখনও জানাই ছিল না আদিগন্ত পেঁয়াজ খেতের দিকেই ছুটে চলেছে আজকের ‘উঠল বাই’ যাত্রাপথ। বারাসতের নীলগঞ্জের হাট পেরিয়ে বাঁ দিগরে ঢুকলেই পুরো ‘নেচে নেচে আয় মা শ্যামা’—ইস্টাইলে চলল গাড়ি! পাশে পাশে চিলতে সুখের পলকা কুঁড়ের গা ঘেঁষেই সমত্থ সব ঢাউসপানা বাড়ি, টেংরু বিল্লি, উমনোঝুঁটি খুকু, নেন্টুপুটু খোকনকোলে বেড়ার বাড়ির মা-জননী আর বাঁকবদলে কালচেপানা শ্যাওলা ডোবায় একটি দুটি ইন্দির ঠাকরুন, একা এবং একক।
বাঁধাকপি, ওলকপি শিমের ধেইনাচনে মাঝে মাঝেই ঘাটের পাশের মাঠের উছলে ওঠা শহুরে-হাবা চোখের সামনে। এমত চলচ্চিত্তিরের অংশভাগী হয়ে, গাবগুবাগুব নাচন সেধে মোচার খোলের মতো আমাদের ছোট্ট চতুষ্পদটি, থুড়ি—চারচাকাটি বিল খুঁজতে বোকাড্ডিমের কিল খেয়ে অথই পেঁয়াজচারার দেশে এসে দাঁড়াল। হাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করা সেই একান্ত নির্জনে মাস্কদুরস্ত মুখগুলি আকুল হল,— ‘একটু জল পাই কোথায়?’!!
বটেই তো! বিল বলে কথা! ‘বর্তির বিল’!
সাইকেলধারী ক’টি আচমকা ভুঁইফোঁড় (এরকমই মনে হয়েছিল) কিশোর ধাঁ করে জলের ঠিকানা বাতলে এগিয়ে এল—’লৌকা চড়বেন? হুইইইই বিল নেই যাব৷’
ওরেদ্দাদা! কয় কী পোলাপান! যেখানে জলের ভয়, সেই পথই নৌকার হয়?!
কাঁচুমাচুমুখে তাদের নিরাশ করে হন্টনধর্ম গ্রহণ করা গেল। চলো মন মাঠের পানে। দুইধারে সোঁসোঁ রোদ্দুর ঝটাপটি খাচ্ছে আর মাঝে একদা নধর কচুরিপানার দেহাবশেষে অলংকৃত মাটিপথ কীসের টানে যেন হুড়কো দিচ্ছে—’আরো দূরে চলো যাই, ঘুরে আসি!’
খালের জলে পাম্প বসিয়ে পাইপযোগে জলযোগের আসর বসেছে মাঠের এধার থেকে ওধার। জল খাচ্ছে কচিধানের বীজতলা, কৃষ্ণকলি লংকাগাছের খেত, পেঁয়াজকলির সাম্রাজ্য আর চুটুকখানেক কপিখেত। শব্দ উঠেছে বত্রিশবিলের নাড়ির—চুপ আকাশের দিকে তাকিয়েই ফের চোখ চলে যাচ্ছে রাস্তার দুধারে, সেখানে যে খানদানি টাঙ্গাইল শাড়ির পাড় বোনা সর্ষেফুলের ‘বসন্তী রং দিয়া’!

"মা যে হয় মাটি তার/ ভালো লাগে আর বার/ পৃথিবীর কোণটি"!

গাংশালিখ, কোচরবক ওড়া নিঃসীম আকাশটাকে সাক্ষী মেনে ধুলার দুলাল দুলালীরা নিত্যদিনের হাসিখেলার সংসার সারে এ দিগরে, সঙ্গী কখনও পাটকিলে ছাগলের ঝুনুনঝুন কন্ঠী আবার কখনও বা নুলিবাছুরের উটকোনাচন।
ঠ্যালাগাড়িতে শহরভোগ্য লাল-চা আর গাঁঘরের কামরাঙামাখা খেয়ালি বিকেলের সাথী হয়ে আসে।
সুয্যি পাটে যেতে চাইলেই আঁধারের মকশো নামে মাঝমাঠের একটি দুটি খোড়ো টঙীঘরের আগায়।
ফের গাড়ির চৌখুপ্পিতে উঠে বসা, ফের মনের ভিতরের মনটাকে আটকানো প্রাণপণ—
বাংলার মুখে পৃথিবীর রূপ দেখে ফেলে আবারও বানিয়ে তোলা যন্তরের দুনিয়ার দিকে ছুটে চলা—
আসি তবে?
বর্তির বিল?
কোথায় পাব তারে?
কলকাতা থেকে ডানলপ হয়ে ব্যারাকপুর থেকে বারাসতের দিকে যেতে আমডাঙা বিধানসভার ছারুহাট। কলকাতা—৭০০১২১.
এরপর স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে এগোনো—
হুইইইই সুজ্জাআআআআ—বর্তির বিল!

ছবি ও ভিডিও ক্লিপ : লেখিকা

বাইরে দূরে

লেখা পাঠানোর নিয়ম : এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে বেশ কিছু ছবি ও ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ পাঠাতে হবে। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল : samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content