
ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
বিয়ের পর প্রথম বেশ কয়েকটা মাস স্বপ্নের মতো কেটে গেল। দুটো অচেনা নারী-পুরুষ যে রোমাঞ্চ নিয়ে একে অপরকে ধীরে ধীরে চেনে জানে, একটু একটু করে বিশ্বাস, দাবি পছন্দ-অপছন্দ মিলিয়ে মিশিয়ে ভালবাসতে শুরু করে ঠিক সেই চেনাপথেই জীবন এগোলো। পূর্ব পরিচিত প্রেমঘটিত বিয়ে হলে ঠিক এভাবেই সব এগোয় কিনা অমলেন্দুর জানা নেই! তার বন্ধুর সংখ্যা কম! তবে তাদের মধ্যে যাদের প্রেম করে বিয়ে হয়েছে তাদের তো দেখে মনে হয় এখনো হানিমুন চলছে। মানে একসঙ্গে যখন তাদের কোথাও সস্ত্রীক দেখা যায়। অথচ লোকচক্ষুর আড়ালে আবডালে তাদের সম্পর্কের ভয়ংকর বিষাক্ত কথোপকথন আচমকাই কানে এসেছে!
পাড়ারই একটি বিয়েতে অমলেন্দু সস্ত্রীক গিয়েছিল। প্রায় বছর তিনেক প্রেম করার পর বছর দুয়েক আগে বিয়ে হওয়া রঞ্জু আর তার স্ত্রী কমলিনীও সেখানে নিমন্ত্রিত। পুরনো পাড়া অনেক বয়স্ক লোকেরা বিয়ে বাড়িতে রয়েছেন তাই নতুন বউকে মহিলামহলে ছেড়ে অমলেন্দু বাইরে এসেছিল সিগারেট খেতে। ল্যাম্পপোস্টের পিছনে যে একটা ঘোলাটে অন্ধকার হয় সেখানে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিল অমলেন্দু। হঠাৎ দেখল বেশ সেজেগুজে রঞ্জু আর কমলিনী আসছে কিন্তু দুজনের মধ্যে চাপাস্বরে তুমুল কাটাকাটি চলছে।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১১৬: রাম যৌথ পরিবারের আদর্শনিষ্ঠ জ্যেষ্ঠ, তাঁর যেন এক ঘরোয়া ভাবমূর্তি

হ্যালো বাবু! পর্ব-৮8: অনুসরণ/৫
দুজন দুজনের প্রতি যে সমস্ত কথাবার্তা বা বিশেষণ ব্যবহার করছে, তাতে মনে হয় না যে তাদের বিয়ে আগামী এক সপ্তাহ টিকবে! অথচ এদের দুজনকেই যখন একসঙ্গে বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে দেখা যায় তখন তাদের পরস্পরের প্রতি প্রেম ও সম্ভাষণ চমকে দেয়। মনে হয় এরা আদর্শ স্বামী-স্ত্রী। দাম্পত্য করতে হলে সংসার করতে হলে এমনই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হয়। যাতে ওদের কোনও অস্বস্তি না হয় তাই অমলেন্দু সিগারেটের আগুনটুকুও হাতের অন্ধকারের মধ্যে লুকিয়ে ফেলল।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-৬১: বাংলা গদ্য-পদ্যের ইতিহাসে ত্রিপুরা

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১০১: মা সারদার মায়িকবন্ধন ত্যাগ
এতদিন অফিসের টিকিটকাউন্টারে বসার জন্য টাকা-পয়সার সরাসরি হিসেব রাখতে হতো। আর সেখানে হিসেবের গরমিলের অকারণ ভাগিদার হয়ে অমলেন্দু নিজের যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। আজকাল সে আর আগে আগে অফিস ছেড়ে বেরোয় না। সইসাবুদ করার আগে কোথায় কেন সই করছে সেটা বারবার দেখে যাচিয়ে নেয় এজন্যে অনেক সহকর্মী তাকে সন্দেহবাতিক বলে ঠাট্টাতামাশা করে তাতে অমলেন্দুর কিছু যায় আসে না। কিন্তু এত সাবধানতা সত্ত্বেও একটা বড় ঝামেলায় জড়িয়ে পড়লো অমলেন্দু।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৮১: সুষ্ঠুভাবে শাসনকার্য চালাতে গেলে নিজের লোকেদের পিছনেও চর নিয়োগ করতে হয়

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১০২: কণ্ঠী ঘুঘু
কম্পিউটারের ল্যান কানেকশন-এর টেন্ডার ডকুমেন্ট ডেসপ্যাচ থেকে নির্দিষ্ট দিনে সমস্ত তালিকাভুক্ত কনট্রাক্টরদের কাছে গিয়েছে ডেসপ্যাচ থেকে পাঠানোর এবং ডাক মারফত ফেরত পাওয়া সেই কন্ট্রাক্টারদের টেন্ডারডকুমেন্ট হাতে পাবার নথিপত্র সামলে রাখতে হয়। সরকারি কাজকর্মে যেকোনও সময় তদন্ত হতে পারে। তাই সাবধানতা নিয়ে কাজ করতে হয়।তখনও এখনকার মতো ই-টেন্ডারের ব্যাপারটা শুরু হয়নি! আজকের দিনে সব নথিই ডিজিটাল! কিন্তু তখন তো তেমন ছিল না। আজকের মতই যাদের দরপত্র সবচেয়ে কম কাজের বরাত তারাই কাজ পেতো। তার থেকে যাদের কোটেশন বেশি নিচের দিক থেকে তারা দু’নম্বরে দু’নম্বরে থেকেও যাদের দর বেশি তারা তিন নম্বরে থাকবে। সমস্যা হল যারা টেন্ডার পেয়েছে নিচের দিক থেকে সেই এক নম্বর কোম্পানির বিরুদ্ধে একযোগে অভিযোগ আনলো, তালিকার দু’নম্বর আর তিন নম্বর কোম্পানি।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১৮: কবির ভালোবাসা, কবির জন্য ভালোবাসা

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১১৭: আপাতত পরিত্রাণ
ব্যাস, শুরু হল অনুসন্ধান খুঁটিনাটি এটা সেটা সইসাবুদ তারিখ ঘন্টা মিনিট ধরে টানাটানি শুরু হলো। আর কপাল এমনই খারাপ টেন্ডার পাওয়া সেই একনম্বর কোম্পানির ক্ষেত্রে টেন্ডার ডক্যুমেন্ট পাঠানোর নথি বা তাদের সেই ডক্যুমেন্ট পাওয়ার নথি কোনটাই ফাইলের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে না। এরকম অসম্ভব কি করে ঘটল সেটা অমলেন্দু কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না। কিন্তু এটা পরিষ্কার মনে আছে যে সাতটা কোম্পানির মধ্যে টেন্ডার হয়েছিল তাদের প্রত্যেকের ডক্যুমেন্ট মিলিয়ে মিলিয়ে ফাইলে রাখা ছিল। এদিকে এই গুরুত্বপূর্ণ ফাইল অমলেন্দুর হেফাজতে রাখা চাবি দেওয়া ফাইল ক্যাবিনেটে থাকে। সে যে তালিকা মিলিয়ে মিলিয়ে টিক চিহ্ন দিয়ে নথিপত্র গুছিয়ে রেখেছিল তার চিহ্ন রয়ে গিয়েছে কিন্তু প্রমাণটুকু নেই!—চলবে।
অমলেন্দু পাল মৃত্যুরহস্য। পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।