ফরেনসিক পরীক্ষা। ছবি: প্রতীকী।
বাবুকে চেনেন? না, না সন্দীপ রায় নন। তবে বাবুও ছবি বানিয়েছে। মানে চিত্রপরিচালক। নাম বললেই ফস করে চিনে ফেলার মতো বিখ্যাত সে নয়। নাম ধৃতিমান। না, চ্যাটার্জিও নয়। চৌধুরী। ধৃতিমান চৌধুরী। বাবু সাড়ে ছ-ফুট লম্বা নয়। কব্জির জোর সাংঘাতিক এমন কিছু না। রিভলবারই নেই তো চালাবার কোনও প্রশ্ন ওঠে না। আধার কার্ড, প্যান কার্ড আছে। কিন্তু পাসপোর্ট নেই। অপরাধী বিদেশে পালিয়ে গেলে তাকে ধাওয়া করার ক্ষমতা নেই।
২১ নম্বর রজনী সেন রোড কলকাতা- ২৯ এর বাসিন্দা প্রদোষবাবুর মতো অত ক্ষুরধার না হলেও আমাদের বাবুর হালকা গোছের একটা মগজাস্ত্র আছে। আরে মশাই মিত্তির! প্রদোষ মিত্র। ফেলুদার কথা বললাম। হ্যারিসন রোড ছেড়ে পরে কেয়াতলা চলে আসা বক্সিবাবুর মতো বাবুর কোনও সত্যবতী নেই। পরাশর বর্মার মতো অবাঙ্গালি কৃষ্ণা মেহেতা? না তা-ও নেই। বাবুর স্ত্রী প্রেমিকা কেউ নেই। ফেলুদার তপসে, ব্যোমকেশের অজিত, কিরীটীর সুব্রত’র মতো কোনও সহকারিও নেই। বাবু একা। তবে ঠিক একা নয়। বাড়িতে তার সর্বক্ষণের সঙ্গী হল বুবু। বাবুর জীবনসঙ্গী বুবু ছোটবেলার পোষ্য একটি পূর্ণবয়স্ক কথাবলা কাকাতুয়া, যে বাবুকে আশ্চর্যভাবে রহস্য সমাধানে সাহায্য করে। বলা হয়নি, আমাদের বাবু মানে ধৃতিমান চৌধুরী একজন গোয়েন্দা।
আরও পড়ুন:
দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং…২য় খণ্ড, পর্ব-৪০: ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নের মতো, সেলিব্রিটির ফ্যানেরা যদি উবে যায়?
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৩৬: ছবিঘর অন্ধকার
নিজের গড়া একটা নাটকের দল আছে। নাম ‘বাবু কালচার’। আছে বলাটা হয়তো ভুলই হল। ছিল। এখন আর নেই। নিজের পয়সায় দল চলত না। সরকারি গ্রান্ট পেতে যে কর্মকাণ্ড করতে হয়, যে ঝকমারি পোয়াতে হয় বাবুর ওসব পোষায় না।তাই সে-সব পাট চুকেছে। গোটা কয়েক ডকুমেন্টারি করেছিল। দুখানার পুরো পয়সা পেয়েছে বাকিগুলোর কিছু কিছু টাকা পাওনা আছে। দুটো ফিচার ছবি করেছিল। প্রথমটা চলেনি। দ্বিতীয় ছবি প্রফিট না করলেও প্রোডিউসারকে লগ্নি ফিরিয়ে দিয়েছে। অল্প হলেও মানুষ মন দিয়ে ছবিটা দেখেছে। তাই সংখ্যায় কম হলেও কিছু মানুষ ধৃতিমান চৌধুরীর নাম জানে।
ধৃতিমানকে পরিচালক হিসেবে শ্রদ্ধা করে। না, তবে এমন মনে হবার কোনও কারণ নেই যে অন্যরকম ছবি বা অ্যাওয়ার্ড পাবার ছবি তৈরির আগে কোনও প্রযোজকেরা ধৃতিমানের কথা ভাবেন। বা ধৃতিমানের গুণমুগ্ধের সংখ্যা রোজ ফেসবুক টুইটারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ধৃতিমানের ওসবের বালাই নেই। ফেসবুক নেই ট্যুইটার নেই ইনস্টাগ্রাম নেই। জিজ্ঞেস করলে বলে সত্যজিৎ রায় আজ বেঁচে থাকলে তিনিও এইসব ঝামেলা রাখতেন না। তাঁর পড়ার বা ভাবার সময়ে টান পড়তো। তাঁকে তো ছবি পাবার জন্যে তদ্বির করতে হোত না বা নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে ‘সোশ্যালি রেলিভেন্ট’ থাকার কোন দায় তাঁর কোনওদিন ছিল না। তাই এসব ঝঞ্ঝাটে তাঁর ক্ষতি বই কোনও লাভ হোত না।
তবে নিজের কাজের সুবিধের জন্যেই হোয়াটসঅ্যাপটা রেখেছে। বাবুর গোয়েন্দাগিরির একটা গুণমুগ্ধ ফ্যানবেস আছে। সেখানে আছেন তিনজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তাঁদের সুবাদেই বাবু কেস পায়। এঁরা হলেন ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের অভিজ্ঞ পুলিশকর্তা ভৈরব চক্রবর্তী। একজন আদ্যন্ত সিনেমাপাগল মানুষ। সিনেমাসূত্রেই প্রথম ধৃতিমান মানে বাবুর সঙ্গে আলাপ। রয়েছেন ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের এক কমবয়সী মহিলা অফিসার। শ্রেয়া বাসু।
তবে নিজের কাজের সুবিধের জন্যেই হোয়াটসঅ্যাপটা রেখেছে। বাবুর গোয়েন্দাগিরির একটা গুণমুগ্ধ ফ্যানবেস আছে। সেখানে আছেন তিনজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তাঁদের সুবাদেই বাবু কেস পায়। এঁরা হলেন ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের অভিজ্ঞ পুলিশকর্তা ভৈরব চক্রবর্তী। একজন আদ্যন্ত সিনেমাপাগল মানুষ। সিনেমাসূত্রেই প্রথম ধৃতিমান মানে বাবুর সঙ্গে আলাপ। রয়েছেন ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের এক কমবয়সী মহিলা অফিসার। শ্রেয়া বাসু।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৯: সুন্দরবনের জঙ্গল-জননী বিশালাক্ষী
পরিযায়ী মন, পর্ব-৯: সাসারামের ঝর্ণাধারা
শ্রেয়া যথেষ্ট বুদ্ধিমতী। কিন্তু মুশকিল হল চট করে মাথা গরম করে ফেলে। ব্লাডপ্রেশার চড়চড় করে বাড়ে। তখন শ্রেয়া ভুতে-পাওয়া মানুষের মতো থম মেরে বসে থাকে। মজার ব্যাপার তারপরেই তার মাথায় ক্লু আসে। আর আছেন সাব ইন্সপেক্টর দত্ত। মাঝবয়সী, বারবার গুলিয়ে ভুল করে ফেলা মানুষটি কিন্তু আদতে ভালো মানুষ। রান্না করাটা হবি। রান্না নিয়ে অনর্গল কথা বলতে পারেন। ইনিও ভৈরব। তবে দত্ত তাই সকলে আলাদা করতে শুধু ‘দত্ত’ বলে ডাকে। আড়ালে বলে, আমাদের ডিপার্টমেন্টে জোড়া শিব। বড় আর ছোট। বয়সে হয়ত দু’জনের উনিশ-বিশ তফাত। পদে একজন বড় অন্যজন মাপে একটু ছোট।
সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ বুবু শুয়ে পড়ে। তাই কাজ থাকলে বুবু-বাবুর আলোচনা দিনের বেলা। কেস না থাকলে সন্ধেবেলাবাবু তখন গোয়েন্দা গল্প পড়ে, না হলে ইন্টারনেটে ক্রাইম সিরিজ দেখে। তাও ভালো না লাগলে গুগুল হাতড়ে নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করে। তাও ভালো না লাগলে নিজের সংগ্রহ থেকে সত্যজিতের বহুবার দেখা সিনেমা আবার নতুন করে দেখে। এটা তার একটা নেশা। এই করে রাত বাড়ে। শুতে শুতে মাঝরাত। বেশ বেলায় ভোর হয় বাবুর। না, ঘড়ির অ্যালার্ম শুনে নয়। বুবুর খিদে পায় সে চিৎকার শুরু করে—“হ্যালো বাবু! বাবু ওঠ! বাবু ওঠ! কিরে? কিরে? শুনতে পাচ্চিস? খেতে দিবি?” বুবুর সঙ্গে আলাপ না হলে তার কর্মকাণ্ড বিশ্বাস হবে না।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৩: এক্সপায়ারি ডেটের ওষুধ খাবেন?
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২১: ওঠো ওঠো রে! বিফলে প্রভাত বহে যায় যে!
বুবু একা থাকলে বাড়িতে টিভি চলে। ডিসকভারি চ্যানেল দেখে বুবু। বাবু টিভি প্রায় দেখেই না। খবরের সময়ে ভলিউম মিউট করে এ চ্যানেলে ও চ্যানেলে ঘুরে বেড়ায়। থমকে যাওয়ার মত কিছু দেখলে দাঁড়ায়। ঠিক সেদিন যেমন হল। বেলা বারোটায় প্রথম চা’য়ে চুমুক দিতে দিতে টিভির ভিসুয়াল দেখে খুব চেনা লাগলো। কি আশ্চর্য এটা তো তাদেরই পাড়ার পাশের গলি। টিভির ভলিউমটা একটুখানি বাড়ালো। জানা গেল এক বৃদ্ধার রহস্যময় মৃত্যুর খবর। বৃদ্ধার নাম সুষমা কর। আজই ভোরবেলার ঘটনা। মিডিয়া পোঁছে গিয়েছে, ভিড়ভাট্টা প্রচুর। পেয়ারা ঠোকরানো থমিয়ে বুবু গলা বাড়িয়ে জানতে চাইল—
—কিরে বাবু? কোথায় যাচ্চিস?
বাবু চটিতে পা গলাতে গলাতে বলে
—আসছি বুবু! এক্ষুণি আসছি!
একেবারে হাত বাড়ালেই রহস্য। তাই ধৃতিমান বাড়ি ছেড়ে ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে গেল। —চলবে।* সুষমা কর হত্যারহস্য: পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর ২০২৩
—কিরে বাবু? কোথায় যাচ্চিস?
বাবু চটিতে পা গলাতে গলাতে বলে
—আসছি বুবু! এক্ষুণি আসছি!
একেবারে হাত বাড়ালেই রহস্য। তাই ধৃতিমান বাড়ি ছেড়ে ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে গেল। —চলবে।
* হ্যালো বাবু! (Hello Babu) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ২য় খণ্ড।