অডিয়ো ক্লিপ (পর্ব-৭)
হালে ১৬০ বছরের ঔপনিবেশিক আইনধারা ইন্ডিয়ান পেনাল কোড বদলে ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় চেনা পরিচিত বিখ্যাত সব ধারার নম্বর বদলে গিয়েছে, তাই চিটিংবাজির জনপ্রিয় ৪২০ এখন ৩১৮, কথায় কথায় ১৪৪ ধারা এখন ১৮৯(৪), ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ৫১১টি ধারা এখন একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে মোট ৩৫৭টি ধারা।
অ্যামাজন থেকে সদ্য আনানো ভারতীয় ন্যায়সংহিতার নতুন বই উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে ভাবছিল ধৃতিমান। নার্সিংহোমে সেদিন নীলাঞ্জনকে কোন উত্তর দিতে পারেনি। একটা অত্যন্ত সৎ ভদ্র ভালো মানুষের জীবনে কেন যে এরকম একটা দুর্ঘটনা নেমে এল সেটা ধৃতিমান জানে না। কিন্তু এটা বোঝে যে পৃথিবীতে কোনও ঘটনাই কারণ ছাড়া ঘটে না-হয়তো কোনও একটা ভয়ংকর সামাজিক অন্যায়ের অবসান ঘটাতে সুচেতার মতো একজন সপ্রতিভ যুবতীকে প্রাণ দিতে হল। নীলাঞ্জনের জীবনটা যে ছারখার হয়ে গেল সেটা বুঝতে কারও কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ধৃতিমান তাঁকে কথা দিয়েছে, সুচেতার আত্মা বা নীলাঞ্জনকে ন্যায়বিচার দেওয়ার চেষ্টা করবে। ঘাতক লরি দুটোকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি, তবে জোরালো তল্লাশি চলছে।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-৪০: দুর্ঘটনায় আহত নিউজ টিভির সঞ্চালক সুচেতার মৃত্যুর খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল
গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-৪: যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না?
বুবু আজকাল কম কথা বলে পালক খোঁটে বেশি সময় ধরে। এটা পাখিদের পালক-ওঠার সময় বুবুর ডাক্তার তাকে একটা ভিটামিন সিরাপ খাওয়াতে বলেছে। প্রথম দু’দিন খাইয়ে বাবু যদি ওষুধ খাওয়াতে ভুলে যায় তখন বুবু নিজেই বাবুকে মনে করিয়ে দেয়, “খেয়ে নে বুবু খেয়ে নে, ওষুধ খেয়ে নে।” এতেও কাজ না হলে একটা গম্ভীর চিৎকার দেয়, “কী করছিস বাবু! ওষুধ দে কি করছিস”!
হঠাৎ ফোন বাজল নামটা দেখে খারাপ লাগাটা আবার মনের ভিতরের ক্ষত থেকে চুঁইয়েপড়া রক্তের মতো গড়িয়ে নেমে আসছে। নীলাঞ্জন রায়!
—হ্যাঁ, বলুন!
—হ্যাঁ, মানে কথাটা সেদিন মাঝরাতে হাসপাতালে যাবার সময় মনে হয়েছিল। কিন্তু গিয়ে ঘটনার মুখোমুখি হবার পর সেসব আর মাথায় ছিল না। মনে হল হয়তো আপনার তদন্তে কাজে লাগতে পারে। তাই জানিয়ে রাখা উচিত। আসলে আমার সামনে ওই তদন্তটা ছাড়া মানে যদি শেষ পর্যন্ত দোষীকে খুঁজে পাওয়া যায় তার শাস্তি হয় সেটুকুই সুচেতাকে দেবার আছে আর কিচ্ছু নেই…
হঠাৎ ফোন বাজল নামটা দেখে খারাপ লাগাটা আবার মনের ভিতরের ক্ষত থেকে চুঁইয়েপড়া রক্তের মতো গড়িয়ে নেমে আসছে। নীলাঞ্জন রায়!
—হ্যাঁ, বলুন!
—হ্যাঁ, মানে কথাটা সেদিন মাঝরাতে হাসপাতালে যাবার সময় মনে হয়েছিল। কিন্তু গিয়ে ঘটনার মুখোমুখি হবার পর সেসব আর মাথায় ছিল না। মনে হল হয়তো আপনার তদন্তে কাজে লাগতে পারে। তাই জানিয়ে রাখা উচিত। আসলে আমার সামনে ওই তদন্তটা ছাড়া মানে যদি শেষ পর্যন্ত দোষীকে খুঁজে পাওয়া যায় তার শাস্তি হয় সেটুকুই সুচেতাকে দেবার আছে আর কিচ্ছু নেই…
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭৪: রাজা দশরথ, রাম, লক্ষ্মণ, সীতা সকলেই কি এক একটি জীবনবোধের প্রতীক?
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫২: হিতকারী মূর্খ বন্ধুর থেকে একজন পণ্ডিত শত্রু থাকা ভালো
কথাগুলো এতই তীব্র যন্ত্রণা থেকে বলা যে বলছে তার তো কষ্ট হয়ই কিন্তু যে শুনছে তার পক্ষেও সহ্য করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তবু কিছু তো বলা উচিত।
—আমি খুব চেষ্টা করব।
—নানা আপনাদের কাজের উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। আসলে আমি ঠিক করেছি যতদিন সুচেতার তদন্ত চলবে বা কেস চলবে ততদিন কলকাতায় থাকব। তারপর ভিআরএস নিয়ে বাড়িটা বেচে পণ্ডিচেরি চলে যাব। ওখানেই ছোট্ট বাড়ি নিয়ে থাকব। আসলে সুচেতা নিজে ভীষণভাবে মাকে মানত মানে পন্ডিচেরি শ্রীঅরবিন্দ আশ্রমের মা মিররা আলফাসসা, সুচেতা ওর মা, দিদি পারিবারিকভাবে ওরা আশ্রমে যুক্ত-পরে আমিও… আসলে কলকাতায় সুচেতা ছাড়া আমার পক্ষে থাকা অসম্ভব। সরি আমি বোধহয় আপনাকে কাজের সময়ে বিরক্ত করছি।
—প্রথমত আমার আলাদা করে ঘড়ি ধরে কোনও কাজের সময় নেই তাই আমার নিজস্ব সময় অঢেল। আর আজকের দিনে যখন কোনও মানুষই একবিন্দু সময় পান না সবসময় ব্যস্ত, আমি সেখানে একজন আদ্যোপান্ত বেকার মানুষ আক্ষরিক অর্থে আমার সেরকম কোনও ব্যস্ততা নেই। আপনি বলতে পারেন আমি শুনছি।
—আমি খুব চেষ্টা করব।
—নানা আপনাদের কাজের উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। আসলে আমি ঠিক করেছি যতদিন সুচেতার তদন্ত চলবে বা কেস চলবে ততদিন কলকাতায় থাকব। তারপর ভিআরএস নিয়ে বাড়িটা বেচে পণ্ডিচেরি চলে যাব। ওখানেই ছোট্ট বাড়ি নিয়ে থাকব। আসলে সুচেতা নিজে ভীষণভাবে মাকে মানত মানে পন্ডিচেরি শ্রীঅরবিন্দ আশ্রমের মা মিররা আলফাসসা, সুচেতা ওর মা, দিদি পারিবারিকভাবে ওরা আশ্রমে যুক্ত-পরে আমিও… আসলে কলকাতায় সুচেতা ছাড়া আমার পক্ষে থাকা অসম্ভব। সরি আমি বোধহয় আপনাকে কাজের সময়ে বিরক্ত করছি।
—প্রথমত আমার আলাদা করে ঘড়ি ধরে কোনও কাজের সময় নেই তাই আমার নিজস্ব সময় অঢেল। আর আজকের দিনে যখন কোনও মানুষই একবিন্দু সময় পান না সবসময় ব্যস্ত, আমি সেখানে একজন আদ্যোপান্ত বেকার মানুষ আক্ষরিক অর্থে আমার সেরকম কোনও ব্যস্ততা নেই। আপনি বলতে পারেন আমি শুনছি।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৯: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—কালি লতা ও পান লতা
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৫: বার্নার্ড শ ও শার্লটি—যদি প্রেম দিলে না প্রাণে/১
স্ত্রী সুচেতার অকালমৃত্যু যেন মানুষটার জেনেটিক বদল ঘটিয়ে দিয়ে গেল বুদ্ধিমান কর্মঠ মানুষটা এখন কথা বলতে বলতে থেমে যাচ্ছে কথা গুলিয়ে ফেলছে।
—হ্যাঁ, আসলে হয়েছে কি ওই যে বালিথানার সরখেলবাবু আছেন মানে মিস্টার সরখেল।
—হ্যাঁ, হ্যাঁ, শেখর সরখেল।
—ও তাই বুঝি, আসলে কথা প্রসঙ্গে খেয়াল নেই যে ওনার নামটাই জানা ছিল না। তা উনি সেদিন বলেছিলেন সুচেতার গাড়িটা ডানলপ থেকে বালি ব্রিজ ধরে বালিঘাট স্টেশনের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু ওর তো বাড়ি ফেরার কথা মানে আমাকে টেলিফোন করে আলাদাভাবে বলেওনি যে দেরি হবে সেদিন! সন্ধ্যেবেলার, “সাদা রাস্তা কালো গাড়ি’ তো দুপুরবেলায় রেকর্ড হয়। খুব বেশিকাজের চাপ না থাকলে সুজাতা মোটামুটি ওই সাড়ে ছটা সাতটায় বাড়ি ফিরে আসে, আমার একবার মনে হয়েছিল মিস্টার সরখেলকেই জিজ্ঞেস করব যে ওঁর বলতে কোথাও ভুল হয়েছিল কি না কিন্তু পরে আর সুযোগ হয়নি।
—উনি ঠিকই বলেছিলেন, গাড়িটা ডানলপ থেকে বালিঘাট স্টেশনের দিকেই যাচ্ছিল আমি নিজেও ভিডিও ক্লিপিং দেখেছি।
—বেশ তাহলে এখন প্রশ্ন হল সুচেতা ওই দিন ওই সময় কোথায় যাচ্ছিল কেন যাচ্ছিল?
—তার উত্তর আমরাও খুঁজছি। সবদিক থেকে চেষ্টা চলছে খুব দ্রুত একটা লিড পাব।
—ওহ! আরেকটা কথা এটা অবশ্য আপনাকে বলার মতো কিছু না মানে ভাববেন না যে আমার উদারতা দেখানোর জন্য কথাটা আমি বলছি, আসলে এটাও যদি তদন্তের স্বার্থে কোনও কাজে লাগে তাহলে—
—আপনার যা মনে হচ্ছে আপনি নিঃসন্দেহে বলতে পারেন।
—ও হ্যাঁ, তাঁর আগে বলি যে কারণে ফোনটা করলাম পরশু সুচেতার চতুর্থীর কাজ মানে অ্যাক্সিডেন্টে মৃত্যু তাই —
—হ্যাঁ, বুঝেছি।
—আসলে আমি কাউকে আসতে মানা করেছি, আমার যে দু’জন ঘনিষ্ঠবন্ধু মৃদুল আর ঋষভ বা ওদের ফ্যামিলিকেও মানা করেছি।
ওরা এসে এতবার আমাদের গোলপার্কের বাড়িতে হুল্লোড় করেছে যে ওরা এলে আমি হয়তো সুচেতার শ্রাদ্ধের পুজোটাই ঠিক করে…
—হ্যাঁ, আসলে হয়েছে কি ওই যে বালিথানার সরখেলবাবু আছেন মানে মিস্টার সরখেল।
—হ্যাঁ, হ্যাঁ, শেখর সরখেল।
—ও তাই বুঝি, আসলে কথা প্রসঙ্গে খেয়াল নেই যে ওনার নামটাই জানা ছিল না। তা উনি সেদিন বলেছিলেন সুচেতার গাড়িটা ডানলপ থেকে বালি ব্রিজ ধরে বালিঘাট স্টেশনের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু ওর তো বাড়ি ফেরার কথা মানে আমাকে টেলিফোন করে আলাদাভাবে বলেওনি যে দেরি হবে সেদিন! সন্ধ্যেবেলার, “সাদা রাস্তা কালো গাড়ি’ তো দুপুরবেলায় রেকর্ড হয়। খুব বেশিকাজের চাপ না থাকলে সুজাতা মোটামুটি ওই সাড়ে ছটা সাতটায় বাড়ি ফিরে আসে, আমার একবার মনে হয়েছিল মিস্টার সরখেলকেই জিজ্ঞেস করব যে ওঁর বলতে কোথাও ভুল হয়েছিল কি না কিন্তু পরে আর সুযোগ হয়নি।
—উনি ঠিকই বলেছিলেন, গাড়িটা ডানলপ থেকে বালিঘাট স্টেশনের দিকেই যাচ্ছিল আমি নিজেও ভিডিও ক্লিপিং দেখেছি।
—বেশ তাহলে এখন প্রশ্ন হল সুচেতা ওই দিন ওই সময় কোথায় যাচ্ছিল কেন যাচ্ছিল?
—তার উত্তর আমরাও খুঁজছি। সবদিক থেকে চেষ্টা চলছে খুব দ্রুত একটা লিড পাব।
—ওহ! আরেকটা কথা এটা অবশ্য আপনাকে বলার মতো কিছু না মানে ভাববেন না যে আমার উদারতা দেখানোর জন্য কথাটা আমি বলছি, আসলে এটাও যদি তদন্তের স্বার্থে কোনও কাজে লাগে তাহলে—
—আপনার যা মনে হচ্ছে আপনি নিঃসন্দেহে বলতে পারেন।
—ও হ্যাঁ, তাঁর আগে বলি যে কারণে ফোনটা করলাম পরশু সুচেতার চতুর্থীর কাজ মানে অ্যাক্সিডেন্টে মৃত্যু তাই —
—হ্যাঁ, বুঝেছি।
—আসলে আমি কাউকে আসতে মানা করেছি, আমার যে দু’জন ঘনিষ্ঠবন্ধু মৃদুল আর ঋষভ বা ওদের ফ্যামিলিকেও মানা করেছি।
ওরা এসে এতবার আমাদের গোলপার্কের বাড়িতে হুল্লোড় করেছে যে ওরা এলে আমি হয়তো সুচেতার শ্রাদ্ধের পুজোটাই ঠিক করে…
আরও পড়ুন:
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩৩: মিলাডা—বিদেশিনীর হরফ
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৬: স্রোতস্বিনী পদ্মায় লাফিয়ে কবির কটকি চটি-উদ্ধার
সুচেতার দিদি জামাইবাবু থাকবেন আর আপনি! হ্যাঁ, আমি জানি আপনার সঙ্গে আমার ঠিক দু’দিনের পরিচিতি কথা হয়েছে বার দুয়েক বা তিনবার তবু আপনাকে দেখলে বোধহয় সুচেতা শান্তি পাবে ওর কাছেই প্রথম আপনার কথা শুনি সুচেতা বলত ভেরি রেয়ার কম্বিনেশন-পেশায় চিত্র ও নাট্যপরিচালক নেশায় গোয়েন্দা।ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ করতে পারলে ভালোলাগবে।
এযাবৎকাল এমন কোনও তদন্তে ধৃতিমান হাত দেয়নি যাতে এরকমভাবে তাকেও মানবিক যন্ত্রণার শরিক হতে হয়েছে। তাই বাবু ছোট্ট জবাব দিল—
—পরশু আমি আসব! ঠিকানা আমার কাছে আছে। —চলবে।
এযাবৎকাল এমন কোনও তদন্তে ধৃতিমান হাত দেয়নি যাতে এরকমভাবে তাকেও মানবিক যন্ত্রণার শরিক হতে হয়েছে। তাই বাবু ছোট্ট জবাব দিল—
—পরশু আমি আসব! ঠিকানা আমার কাছে আছে। —চলবে।
সুচেতা মুখোপাধ্যায় হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ৮ আগস্ট, ২০২৪।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।