উইকেন্ড এসকর্ট (অন্তিম পর্ব)
এই ফোনটা নেওয়া হয়েছিল সংযুক্তা দেব এই নামে। তার মানে মিতুল দে নামটা ভুয়ো। বাড়ি হালতু পোস্ট অফিসের কাছে। সংযুক্তার বাবা হলেন সেই মানুষটি, নিরঞ্জন দেব। যিনি গোলপার্কের কাছে গড়িয়াহাট রোডের ওপর গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছিলেন। এতটা জানবার পর বাবুর ভীষণ ইচ্ছে হল সংযুক্তাকে দেখবার। দেখা করার জন্য হালতু যাবার দরকার পড়েনি। হোয়াটসঅ্যাপে ছবি দেখেই ডাঃ কর গুপ্ত জানিয়েছিলেন, “এইচএমবিএস” এই হলোগ্রাফিক স্টিকার স্টেথোস্কোপের ব্র্যান্ড। বহু পুরনো বাঙালি প্রতিষ্ঠান ‘এইচ মুখার্জি অ্যান্ড ব্যানার্জি সার্জিক্যাল প্রাইভেট লিমিটেড’। এইচএমবিএস ব্র্যান্ড। ৩৯/১ কলেজ স্ট্রিট কলকাতা ৭০০০৭৩। ১৯০৫-এর মেডিকেল ইকুইপমেন্ট তৈরির প্রতিষ্ঠান। মাঝারি দামের টেকশই ডাবল টিউব স্টেথোস্কোপ তৈরি করেন।
রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-২০: আসল নাম মিতুল হলে ওই ফোন নম্বরটা কার?
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৫৬: তোমার আছে তো হাতখানি
—কথা বলে লাভ কী? যিনি সেদিন গাড়ি চালিয়েছিলেন আর যিনি তাকে শাস্তির হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন তাদের দু’ জনের শাস্তি তো স্বয়ং ঈশ্বর দিয়েছেন।
—আমি সেই ঈশ্বরকেই খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। সেই ঈশ্বরই আপনাকে কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
কফি হাউসের তুমুল তর্কাতর্কি, কবিতাপাঠ, হাসি, হুল্লোড়ের মধ্যে সংযুক্তা বড় বড় চোখে ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে ছিল।
—অনেক কষ্ট করে বাবা আমাকে ডাক্তারি পড়াচ্ছিলেন। জয়েন্ট ক্র্যাক করে যে আমি মেডিকেল কলেজে সুযোগ পাবো সেটা আমি বা-বাবা কেউই ভাবিনি। কিন্তু পেলাম যখন, তখন বাবা দাঁতে দাঁত দিয়ে লড়াই করতে রাজি হল। এই স্টেথোটা বাবার কিনে দেওয়া। বাবা যে নার্সিংহোমে কাজ করতেন, তার ডাক্তারবাবুরা অনেকে টাকাপয়সা দিয়ে আমার পড়ার বই কিনে দিয়েছেন। তাঁরা নানাভাবে সাহায্য করেছেন। আমার বাবার স্বপ্ন ছিল এত বছর ধরে নার্সিংহোমে ডাক্তারবাবুদের পিছনে পিছনে তাঁকে কাজ করতে হয়েছে। তাঁর মেয়ে ডাক্তার হয়ে তাঁকে গর্বিত করবে। বাবার স্বপ্নের শেষটা আর দেখে যেতে পারলেন না। আপনার সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে স্বপ্নটা শেষ পর্যন্ত পৌঁছবে না।
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৫: রবি ঠাকুরের বড় মেয়ে— যিনি লেখক হতে চেয়েছিলেন!
এই দেশ এই মাটি: ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-২: রাজমালা অনুসারে রত্ন মাণিক্যের পিতা হলেন ডাঙ্গর ফা, তিনিই ধর্ম মাণিক্য
—আপনি কি শ্রুতি ম্যাডামের?
—হ্যাঁ, তোমার বাবার ওই নার্সিংহোম থেকে ডাক্তারবাবুদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, কেউ একজন এখন তোমার পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন। শ্রুতি ম্যাডামের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চেক করে তোমার ব্যাংক একাউন্টের টাকা পাঠানোর ট্রেস পেয়েছি। শ্রুতি ম্যাডামের কথা রাখতেই তুমি এই ভয়ংকর ঝুঁকি নিয়েছিলে সেটা আন্দাজ করতে পারি। এমন ভাবে পুরো ঘটনাটাকে সাজানো হয়েছিল যাতে নিখিল সেনের রাত্রিযাপনের সব প্রমাণ থাকে। খাবার জলের মধ্যে অ্যালকোহলের মধ্যে খুব অল্প ডোজের সিডেটিভ বা ঘুমের ওষুধ মেশানো ছিল। কিন্তু সেটা ওখানে থাকা মদের গ্লাসে বা জলের গ্লাসে ছিল না। কারণ, পরে মদ বা জল পাল্টে দেওয়া হয়। যার ফলে নিখিল সেনকে ডেইরিফাইলিন ডেকাড্রন ইনজেকশন দেওয়াটা খুব অসুবিধে হয়নি। ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাতে না থাকে সে ব্যবস্থা ছিল। সেদিন ওই রিসর্টে শ্রুতি সেন নিজেই ছিলেন। যেটা রিসেপশনের লোকটির সঙ্গে কথা বলার সময় সে একবার বলে ফেলেছিল। নিখিল চোখটা আই মাস্ক দিয়ে ঢেকে কনডমের মধ্যে নিখিল সেনের সীমেন রেখে দেওয়ার কাজটা সম্ভবত শ্রুতি ম্যাডাম করেছিলেন। তোমার যাতে কোন শারীরিক লাঞ্ছনা না হয় সেটা নিশ্চিত করতেই তিনি নিজে গিয়েছিলেন। তার গাড়িতেই তোমরা মাঝরাতে ফিরে এসেছিলে। এমনকি আমার সঙ্গে কথোপকথন রেকর্ড করার কারণ একটাই, যাতে আমি কোনওভাবে তোমার কাছে পৌঁছে গেলে আমার সঙ্গে ওঁর ঠিক কী কী কথা হয়েছে সেটা যাতে তুমি সেটা জানতে পারো।
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৪৮: পুরীতে ‘নির্জন সৈকতে’র শুটিংয়ে একসঙ্গে চার চারটি শাড়ি পরে হাজির হয়েছিলেন ছায়া দেবী
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫৪: রাজনীতিতে, যুগান্তরেও স্বার্থচিন্তার আবহমান প্রভাব
—আমি চাই তোমার বাবা যেখানেই থাকুন তিনি যেন তোমার স্বপ্নপূরণের আনন্দটা উপলব্ধি করেন। যে লোকটা একটার পর একটা অপরাধীকে আইনের চোরাপথে খালাস করে দিয়েছে, নিজের খুশিমতো বেপরোয়া জীবনযাপন করেছে, সেই লোকটা তো নিজেকে ঈশ্বর ভাবতে শুরু করেছিল। তাকে শয়তানের শাস্তি দিলেন যাঁরা তাদের স্বয়ং ঈশ্বর সাহায্য করেছেন।
—আপনিও তো অপরাধীদের সাহায্য করছেন, আপনিও দোষী।
—নিশ্চয়ই দোষী। তবে আমরা আজ কফিহাউসের ফিশ ফ্রাই আর কফি খেয়ে দোষের খন্ডন করব। কারণ সৎ উদ্দেশ্যে করা দোষ, দোষ নয়। কলিযুগে বজ্জাতকে হারানোটা জরুরি। এ যুগে সামাজিক দুষ্কৃতীদের শাস্তি দেওয়াটাই পরম পুণ্য।
—আসুন ম্যাডাম।
সংযুক্তা চমকে দেখল কফি হাউসের দরজা দিয়ে ভিতরে আসছেন শ্রুতি সেন।—চলবে।