
দ্বারকানাথ ঠাকুর।
প্রিন্স দ্বারকানাথের কর্মকাণ্ডের ভুল ব্যাখ্যা হয়ে চলেছে। সঠিক মূল্যায়নে কারও কারও কুণ্ঠা আছে। বুঝে না বুঝে তাঁর কর্মকাণ্ডের অপব্যাখ্যা হচ্ছে। ইংরেজ সরকারের সঙ্গে দ্বারকানাথের আপাত সখ্যকে কেউ ভেবেছেন প্রগাঢ় বন্ধুত্ব। সখ্য যদি কিছু থেকেও থাকে, ভিতরের নয়, বাইরের। একেবারেই প্রয়োজনভিত্তিক। ব্যবসা-বাণিজ্য চালানোর জন্য তার প্রয়োজন ছিল। কত রকমের, কত ধরনের ব্যবসা। ব্যাঙ্ক-ব্যবসা থেকে কয়লাখনি, এমনকি চা-বাগানও। অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছেন ব্যবসায়। অসাধারণ মেধা ও কর্মকুশলতা তাঁকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল। অনেক ভূসম্পত্তিও করেছিলেন। দিগবিদিকে বাড়িঘর কম ছিল না। ছিল বেশ ক’টা বাগানবাড়িও। ইংরেজ রাজত্বে বসবাস করে এভাবে ব্যবসা করা সহজ ছিল না।
পদস্থ সাহেবসুবোদের কাজে লাগানোর জন্যেই দ্বারকানাথ সখ্য করেছিলেন, মিশেছিলেন, প্রয়োজনে তাদের যথেচ্ছ ব্যবহার করেছিলেন। প্রয়োজন মতো সুযোগও নিয়েছেন। ইংরেজ তাঁকে দূরের মানুষ ভাবেননি। সম্পর্কের এই নৈকট্যের জন্যই অন্য কোনো ব্যবসায়ীর সঙ্গে যে জাতীয় আচরণ করতে ইংরেজ সরকার অভ্যস্ত ছিল, দ্বারকানাথের ক্ষেত্রে তেমনটি করেনি। সম্ভ্রমের আসন ছিল তাঁর। প্রবল প্রতাপশালী ইংরেজও তাঁকে মান্যিগণ্যি করত। পত্নী দিগম্বরীর সঙ্গে দ্বারকানাথের দাম্পত্য দূরত্ব নিয়ে আলোচনা হয়, ম্লেচ্ছ-সংসর্গের বা আমোদপ্রমোদের বাড়াবাড়ি নিয়ে প্রায়শই জল-মেশানো আলোচনা হয়, অথচ আলোচনার আলোয় আসে না তাঁর জনহিতকর কর্মকাণ্ড। সেসব আড়ালেই রয়ে যায়।
পদস্থ সাহেবসুবোদের কাজে লাগানোর জন্যেই দ্বারকানাথ সখ্য করেছিলেন, মিশেছিলেন, প্রয়োজনে তাদের যথেচ্ছ ব্যবহার করেছিলেন। প্রয়োজন মতো সুযোগও নিয়েছেন। ইংরেজ তাঁকে দূরের মানুষ ভাবেননি। সম্পর্কের এই নৈকট্যের জন্যই অন্য কোনো ব্যবসায়ীর সঙ্গে যে জাতীয় আচরণ করতে ইংরেজ সরকার অভ্যস্ত ছিল, দ্বারকানাথের ক্ষেত্রে তেমনটি করেনি। সম্ভ্রমের আসন ছিল তাঁর। প্রবল প্রতাপশালী ইংরেজও তাঁকে মান্যিগণ্যি করত। পত্নী দিগম্বরীর সঙ্গে দ্বারকানাথের দাম্পত্য দূরত্ব নিয়ে আলোচনা হয়, ম্লেচ্ছ-সংসর্গের বা আমোদপ্রমোদের বাড়াবাড়ি নিয়ে প্রায়শই জল-মেশানো আলোচনা হয়, অথচ আলোচনার আলোয় আসে না তাঁর জনহিতকর কর্মকাণ্ড। সেসব আড়ালেই রয়ে যায়।
সেভাবে লেখা হয়নি, দ্বারকানাথ যে শিক্ষাবিস্তারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সক্রিয় হয়েছিলেন। ইংরেজি ভাষার প্রতি কখনো বিষোদগার করেননি। অথচ চেয়েছিলেন, মাতৃভাষার চর্চা আরও বাড়ুক। একাধিক বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের জন্য ‘হিন্দু কলেজ পাঠশালা’ স্থাপিত হয়েছিল। স্থাপিত হয়েছিল আরও কয়েকটি বিদ্যালয়—হিন্দু বেনিভোলেন্ট ইনস্টিটিউশন, ডাফ বিদ্যালয় এবং হিন্দু ফ্রি স্কুল। মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের অঙ্গীকার করায় এইসব বিদ্যালয় পেয়েছিল দ্বারকানাথের অর্থসাহায্য। মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য শহরের ধনবান ব্যক্তিরা অর্থ সাহায্য করুন, এই মর্মে দ্বারকানাথ আবেদনও রেখেছিলেন। ছাত্রদের উৎসাহিত করার জন্য দ্বারকানাথ নিজে দু-হাজার টাকা বাৎসরিক স্কলারশিপ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। গোঁড়া হিন্দু ছাত্ররা ‘জাত’ যাওয়ার ভয়ে মেডিক্যাল কলেজে ভরতি হতে চাইত না। ডাক্তারি পড়তে গেলে শব-ব্যবচ্ছেদ করতে হয়। ঠাকুরবাড়ির ক্ষিতীন্দ্রনাথ দ্বারকানাথকে নিয়ে বই লিখেছিলেন। সে বই থেকে জানা যায়, দ্বারকানাথের উৎসাহেই মধুসূদন গুপ্ত প্রথম শব-ব্যবচ্ছেদ করেছিলেন। তারপরই মধুসূদনকে নিয়ে শুরু হয়েছিল কূটকাচালি। হিন্দু সমাজে এই শব-ব্যবচ্ছেদ নিয়ে হই হই বেঁধেছিল। দ্বারকানাথ নিজে সামাল দিয়েছিলেন। শব-ব্যবচ্ছেদকালে দ্বারকানাথ উপস্থিত থেকে ছাত্রদের উৎসাহিত করতেন। কতখানি সংস্কারমুক্ত ও বিজ্ঞানসচেতন হলে এমনটি সম্ভব, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৯৮: কপোত-কপোতী

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০৭: ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগে মহর্ষি পেলেন চরম দুঃসংবাদ
এ দেশের চিকিৎসা-ব্যবস্থা প্রায় কিছুই গড়ে ওঠেনি তখনও। বেঘোরে পীড়িত মানুষকে মরতে হয়েছে। দ্বারকানাথের কাছে তা অজানা ছিল না। বিলেতে যাওয়ার পর ও দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা দেখে আরও বেশি করে উপলব্ধি করেছেন। তাই বিদেশ থেকে ফিরে এদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে উন্নত করতে চেয়েছেন, অসুস্থ মুমূর্ষ মানুষকে কীভাবে বাঁচানো যায়, তা নিয়ে ভেবেছেন। শুরু হয়েছে সরকারিস্তরে তৎপরতা। দ্বারকানাথের কথা সরকারের উচ্চপদস্থ দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কখনোই অমান্য করতেন না, যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন। দ্বারকানাথের কথায় ইংল্যান্ডে গিয়ে দুই ছাত্রের ডাক্তারিবিদ্যা আয়ত্ত করার সুযোগ আসে। ঠিক হয় দুই ছাত্রের উচ্চশিক্ষার জন্য যাবতীয় ব্যয়-ভার সরকার বহন করবে। দ্বারকানাথ আরও দুজন ছাত্রের ব্যয়ভার স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে চারজন বাঙালি ছাত্র বিলেতে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করার জন্য গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৯৮: রামানুজ ভরত ও লক্ষ্মণ, আনুগত্যের প্রকাশে দু’জনেই অনন্য

গল্পবৃক্ষ, পর্ব-১২: দর্দরজাতক
কুষ্ঠ নিয়ে অনেক অপপ্রচার, বলা হতো ছোঁয়াচে রোগ। কুষ্ঠ হাসপাতালের সঙ্গেও দ্বারকানাথ যুক্ত ছিলেন। মানুষের কল্যাণ হবে, এমন অনেক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেই দ্বারকানাথ বরাবর নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন। অন্ধআশ্রম প্রতিষ্ঠা করার কাজে তৎপর হয়েছিলেন। ডিস্ট্রিক্ট চ্যারিটেবল সোসাইটি স্থাপনের ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। মতিলাল শীল জমি দিয়েছিলেন, অর্থ যুগিয়েছিলেন দ্বারকানাথ।
বিলেতে পড়াশোনার গতিপ্রকৃতি কেমন, তা দ্বারকানাথের অজানা ছিল না। ও দেশের চিকিৎসাবিদ্যা সংক্রান্ত পড়াশোনা সম্পর্কে যেমন খোঁজখবর রাখতেন, তেমনই খোঁজ রাখতেন যন্ত্রবিদ্যা সম্পর্কে। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে গিয়ে বুঝেছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনার কতখানি প্রয়োজন। তাই এদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাক্রম চালু করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ইংরেজ সরকার যাতে সহজেই রাজি হয়, সেজন্য অনুদান দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দ্বারকানাথের কালে এদেশে নারীশিক্ষার কথা ভাবাই যেত না, নারীশিক্ষার কথাও তিনি ভেবেছিলেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে তাঁর ভাবনা, গ্রন্থাগার নিয়ে তাঁর ভাবনা, সেসব তো আড়ালেই রয়ে গিয়েছে। ক্যালকাটা পাবলিক লাইব্রেরি, যা পরে ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে পরিণত হয়, তা স্থাপনের ক্ষেত্রে দ্বারকানাথের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর অর্থানুকূল্যে লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠা সুনিশ্চিত হয়েছিল।
বিলেতে পড়াশোনার গতিপ্রকৃতি কেমন, তা দ্বারকানাথের অজানা ছিল না। ও দেশের চিকিৎসাবিদ্যা সংক্রান্ত পড়াশোনা সম্পর্কে যেমন খোঁজখবর রাখতেন, তেমনই খোঁজ রাখতেন যন্ত্রবিদ্যা সম্পর্কে। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে গিয়ে বুঝেছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনার কতখানি প্রয়োজন। তাই এদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাক্রম চালু করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ইংরেজ সরকার যাতে সহজেই রাজি হয়, সেজন্য অনুদান দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দ্বারকানাথের কালে এদেশে নারীশিক্ষার কথা ভাবাই যেত না, নারীশিক্ষার কথাও তিনি ভেবেছিলেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে তাঁর ভাবনা, গ্রন্থাগার নিয়ে তাঁর ভাবনা, সেসব তো আড়ালেই রয়ে গিয়েছে। ক্যালকাটা পাবলিক লাইব্রেরি, যা পরে ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে পরিণত হয়, তা স্থাপনের ক্ষেত্রে দ্বারকানাথের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর অর্থানুকূল্যে লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠা সুনিশ্চিত হয়েছিল।

দ্বারকানাথ ঠাকুর।
দ্বারকানাথের নজর ছিল কত দিকে। সমাজের অগ্ৰগতি হোক, মানুষের মঙ্গল হোক — এই ভাবনা বাস্তবায়িত করার জন্য কম সময় দিতে হয়নি তাঁকে। রকমারি ব্যবসা, সেসব সামলানো, ব্যবসার শ্রীবৃদ্ধির জন্য সাহেব-মেমদের সন্তুষ্ট করা—এরপর যেটুকু সময় পেতেন, তাঁর সবটাই ব্যয় করতেন জনহিতকর কাজে।
উচ্চপদস্থ সাহেব-মেমদের সঙ্গে দৈনন্দিন এই মেলামেশার মধ্য দিয়ে সখ্যের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তাঁরাও দ্বারকানাথের কথার মান্যতা দিত। দ্বারকানাথ এই সম্পর্কটিকে কাজে লাগিয়েছেন। সতীদাহপ্রথা আইন করে বন্ধ করার ব্যাপারে লর্ড বেন্টিংকে তিনি প্রভাবিত করেছিলেন। বুঝিয়েছিলেন, এ প্রথা দূরভিসন্ধিমূলক। প্রয়াত ব্যক্তির সম্পত্তি করায়ত্ত করার অভিপ্রায়েই সদ্য স্বামীহারাকে চিতায় তোলা হয়। রামমোহন বয়সে অনেক বড় হলেও পরস্পরের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন ছিল। দ্বারকানাথই রামমোহনকে লর্ড বেন্টিংয়ের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। দ্বারকানাথ জানতেন উচ্চপদস্থ ইংরেজরা তাঁকে কতখানি গুরুত্ব দেয়। সেই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে বিচার-ব্যবস্থার প্রচলিত বৈষম্য দূর করতেও দ্বারকানাথ প্রয়াসী হয়েছিলেন।
উচ্চপদস্থ সাহেব-মেমদের সঙ্গে দৈনন্দিন এই মেলামেশার মধ্য দিয়ে সখ্যের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তাঁরাও দ্বারকানাথের কথার মান্যতা দিত। দ্বারকানাথ এই সম্পর্কটিকে কাজে লাগিয়েছেন। সতীদাহপ্রথা আইন করে বন্ধ করার ব্যাপারে লর্ড বেন্টিংকে তিনি প্রভাবিত করেছিলেন। বুঝিয়েছিলেন, এ প্রথা দূরভিসন্ধিমূলক। প্রয়াত ব্যক্তির সম্পত্তি করায়ত্ত করার অভিপ্রায়েই সদ্য স্বামীহারাকে চিতায় তোলা হয়। রামমোহন বয়সে অনেক বড় হলেও পরস্পরের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন ছিল। দ্বারকানাথই রামমোহনকে লর্ড বেন্টিংয়ের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। দ্বারকানাথ জানতেন উচ্চপদস্থ ইংরেজরা তাঁকে কতখানি গুরুত্ব দেয়। সেই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে বিচার-ব্যবস্থার প্রচলিত বৈষম্য দূর করতেও দ্বারকানাথ প্রয়াসী হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮১: ইষ্টদেবীরূপে মা সারদা

ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব ৪৬: ‘রাজর্ষি’ অবলম্বনে রবীন্দ্রনাথ রচনা করেছেন ‘বিসর্জন’ নাটক
দ্বারকানাথের এইসব কর্মকাণ্ডের কথা সেভাবে প্রচারিত হয়নি। মানুষটিকে চেনার জন্য তো জানা জরুরি। সেই জানার চেষ্টা আমরা সেভাবে করিনি। তাঁর বিলাসবৈভব, দাম্পত্য দূরত্ব নিয়ে রসালো আলোচনা অনবরত চলেছে। তাঁর মহানুভবতার কথা আড়ালেই রয়ে গিয়েছে। মানুষ হিসেবে তিনি কত উদার ছিলেন, মানুষের জন্য তাঁর কাতরতা কত গভীর ছিল, সেসব তাঁর একাধিক জীবনীতে বর্ণিত হয়েছে। ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে ভিতরের মানুষটিকে বোঝা যায়। প্রসঙ্গত একটি ঘটনার কথা বলা যেতে পারে, দ্বারকানাথের কাছে একজন কাজ করত। চাকরির টাকা বাঁচিয়ে, বেশ কষ্ট করেই কলকাতা-শহরে একটা বাড়ি বানিয়েছিল সে। বাড়ি বানিয়েছে শুনে হিংসুটে সহকর্মীরা ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে। দ্বারকানাথকে উত্তেজিত করার জন্য বোঝানো হয়, লোকটি সৎ নয়। অসদুপায়ে অর্থ উপার্জন করেছে। সেই টাকায় এই বাড়ি তৈরি করেছে।
দ্বারকানাথ সব শুনলেন। মুখে কিছুই বললেন না। সরোজমিনে দেখবেন বলে একদিন নিজে গিয়েই উপস্থিত হলেন সেই কর্মচারীর বাড়িতে। লোকটি তো দ্বারকানাথকে দেখে হতবাক। বিস্ময়ের ঘোর কাটতে সময় নেয়।
দ্বারকানাথ নিজের মতো করে গোটা বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখলেন। দেখার পর পাশে পাশে থাকা বিবর্ণ মুখের কর্মচারীটিকে একের পর এক প্রশ্ন করলেন। জমি কতটুকু ছিল? সব মিলিয়ে ক’টা ঘর হল? পরিবারের লোকজন কত? একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েই সে একের পর এক সব উত্তর দেয়। সব শুনে দ্বারকানাথ বললেন, এই অল্প জমিতে এতগুলো মানুষ তো কুলোবে না। কী করে থাকবে?
দ্বারকানাথ সব শুনলেন। মুখে কিছুই বললেন না। সরোজমিনে দেখবেন বলে একদিন নিজে গিয়েই উপস্থিত হলেন সেই কর্মচারীর বাড়িতে। লোকটি তো দ্বারকানাথকে দেখে হতবাক। বিস্ময়ের ঘোর কাটতে সময় নেয়।
দ্বারকানাথ নিজের মতো করে গোটা বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখলেন। দেখার পর পাশে পাশে থাকা বিবর্ণ মুখের কর্মচারীটিকে একের পর এক প্রশ্ন করলেন। জমি কতটুকু ছিল? সব মিলিয়ে ক’টা ঘর হল? পরিবারের লোকজন কত? একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েই সে একের পর এক সব উত্তর দেয়। সব শুনে দ্বারকানাথ বললেন, এই অল্প জমিতে এতগুলো মানুষ তো কুলোবে না। কী করে থাকবে?
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৩: বাবু ডাক্তার ও ‘ডাক্তারবাবু’

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮২: সুন্দরবনের পাখি—টিয়া
কর্মচারীটি কী আর উত্তর দেবে! জানালো তাঁর অক্ষমতার কথা। সে কথা শুনে দ্বারকানাথ যা করলেন, যে সিদ্ধান্ত নিলেন, তা অভাবনীয়। তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে ওই জমির পাশে যে খালি জমি ছিল, সেই জমি কিনে নিলেন। রাজমিস্ত্রিও পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন। সেই সঙ্গে সঙ্গে কর্মচারীটিকে বলে দিলেন, মস্ত এক বাড়ি উঠবে, কী করে তৈরি হবে, সে কথা যেন কেউ জানতে না পারে। বাড়ি তৈরি শেষ হওয়ার পর দ্বারকানাথ কর্মচারীটিকে বললেন, এবার গৃহপ্রবেশ করতে হবে। গৃহপ্রবেশে সবাইকে নেমন্তন্ন করো।
যথাসময়ে সবাই এল। দ্বারকানাথও উপস্থিত হলেন। যে কর্মচারীটি এই কর্মচারীর বিরুদ্ধে দ্বারকানাথকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, তাকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘দেখো, আজ আমার কী আনন্দের দিন। আমার কাছে কাজ করে সামান্য এক কর্মচারী এত বড়ো বাড়ি তৈরি করেছে। আমার সব কর্মচারীরই এইভাবে উন্নতি হোক।’
যথাসময়ে সবাই এল। দ্বারকানাথও উপস্থিত হলেন। যে কর্মচারীটি এই কর্মচারীর বিরুদ্ধে দ্বারকানাথকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, তাকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘দেখো, আজ আমার কী আনন্দের দিন। আমার কাছে কাজ করে সামান্য এক কর্মচারী এত বড়ো বাড়ি তৈরি করেছে। আমার সব কর্মচারীরই এইভাবে উন্নতি হোক।’

দ্বারকানাথ ঠাকুর।
যাকে উদ্দেশ করে এসব বলা, সে প্রথমে একটু আঁচ করতে পেরেছিল, শেষে তাঁর কাছে সবই স্পষ্ট হয়। নিজের ভুল বুঝতে পারে। এমনই বড় হৃদয়ের মানুষ ছিলেন দ্বারকানাথ। এসব নিয়ে কে আর চর্চা করেন!
এমন আরও একটি ঘটনার কথা বলা যেতে পারে। এক গৃহস্থ ঋণের দায়ে তার পৈতৃকবাড়ি বিক্রি করার তোড়জোড় শুরু করে। ক্রেতার সঙ্গে যে সময় কথাবার্তা চলছিল,সে সময় ধারে কাছেই ছিলেন দ্বারকানাথ। তাঁর কানে আসে, একটি শিশু তার মাকে প্রশ্ন করছে, মা এরা কারা? উত্তরের মা বলছে, এ বাড়ি এখন ওরা কিনবে। শিশুটি বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করে, আমরা তাহলে কোথায় থাকব? মা কান্না-ভেজা গলায় বলেন, ভগবান আছেন, আশ্রয় দেবেন।
দ্বারকানাথ এসব কথা শুনে এতটাই ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন যে, পাশে থাকা সঙ্গীকে ফুটফুটে ছোট্ট শিশুটিকে নিয়ে আসার জন্য বলেন। ঘাবড়ে যাওয়া ওই শিশুটিকে আশ্বস্ত করেন দ্বারকানাথ, তোমরা কোথাও যাবে না, এই বাড়িতেই থাকবে।
শিশুটির বাবাকে যাতে ঋণের দায়ে বাড়ি বিক্রি করতে না হয়, সে ব্যবস্থা করেন দ্বারকানাথ। এই দানশীলতার কোনও তুলনা হয় না। আমরা বানানো কেচ্ছা শুনতে অভ্যস্ত, দ্বারকানাথের মহত্ত্বের কথা সেভাবে প্রচারিত হয়নি। তাঁর জনহিতকর কর্মকাণ্ড, দানশীলতা সবই আড়ালে রয়ে গিয়েছে।
এমন আরও একটি ঘটনার কথা বলা যেতে পারে। এক গৃহস্থ ঋণের দায়ে তার পৈতৃকবাড়ি বিক্রি করার তোড়জোড় শুরু করে। ক্রেতার সঙ্গে যে সময় কথাবার্তা চলছিল,সে সময় ধারে কাছেই ছিলেন দ্বারকানাথ। তাঁর কানে আসে, একটি শিশু তার মাকে প্রশ্ন করছে, মা এরা কারা? উত্তরের মা বলছে, এ বাড়ি এখন ওরা কিনবে। শিশুটি বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করে, আমরা তাহলে কোথায় থাকব? মা কান্না-ভেজা গলায় বলেন, ভগবান আছেন, আশ্রয় দেবেন।
দ্বারকানাথ এসব কথা শুনে এতটাই ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন যে, পাশে থাকা সঙ্গীকে ফুটফুটে ছোট্ট শিশুটিকে নিয়ে আসার জন্য বলেন। ঘাবড়ে যাওয়া ওই শিশুটিকে আশ্বস্ত করেন দ্বারকানাথ, তোমরা কোথাও যাবে না, এই বাড়িতেই থাকবে।
শিশুটির বাবাকে যাতে ঋণের দায়ে বাড়ি বিক্রি করতে না হয়, সে ব্যবস্থা করেন দ্বারকানাথ। এই দানশীলতার কোনও তুলনা হয় না। আমরা বানানো কেচ্ছা শুনতে অভ্যস্ত, দ্বারকানাথের মহত্ত্বের কথা সেভাবে প্রচারিত হয়নি। তাঁর জনহিতকর কর্মকাণ্ড, দানশীলতা সবই আড়ালে রয়ে গিয়েছে।
* গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি (Tagore Stories – Rabindranath Tagore) : পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Parthajit Gangopadhyay) অবনীন্দ্রনাথের শিশুসাহিত্যে ডক্টরেট। বাংলা ছড়ার বিবর্তন নিয়ে গবেষণা, ডি-লিট অর্জন। শিশুসাহিত্য নিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে গবেষণা করে চলেছেন। বাংলা সাহিত্যের বহু হারানো সম্পদ পুনরুদ্ধার করেছেন। ছোটদের জন্য পঞ্চাশটিরও বেশি বই লিখেছেন। সম্পাদিত বই একশোরও বেশি।